Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica তার ছিঁড়ে গেছে কবে
(৩৯)


মোহ-মেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না




অনুষ্ঠানের দিন দুপুর গড়াতেই বিপত্তি। মেঘ জমল আকাশে। ঘন মেঘ। যখন তখন বৃষ্টি নামবে। তবে স্টেজে তো সমস্যা হবেই না, দর্শকদেরও তত সমস্যা হবে না। বড় করে ত্রিপল টাঙ্গানো থাকায় বহু লোক একসঙ্গে অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন বলে আগেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পৌষের বৃষ্টিতে ভেজার ভয়ে ততক্ষণে বহু লোক জড়ো হয়েছে ত্রিপলের নীচে। বেশির ভাগই কলকাত্তাইয়া ছেলেমেয়ে। এছাড়া আরও বহু লোক, যাঁরা প্রায় প্রতি বছরই আসেন। ঈশিতার পরিচিত বেশ কয়েক জন প্রাক্তনীও এসেছে। তবে তারা অনুষ্ঠান করবে না, নতুন কনসেপ্ট কেমন হয় দেখবে শুধু। এদিকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে স্টেজ ছেড়ে দিতে হবে, সন্ধ্যায় ওখানে অন্য অনুষ্ঠান আছে। ঈশিতা বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। মনে হচ্ছে মানসম্মান ডুববে এ বার। কী করা যায় ভাবতে ভাবতেই নামল অঝোর বৃষ্টি। সূর্য ডোবার আগেই যেন অকাল সন্ধ্যা! ও কোনও উপায় না দেখে ‘মুকুট্টি’র ছেলেটিকে ফোন করে একটু অসহিষ্ণু গলায় বলল, ‘‘তোমরা ঘন্টাখানেক সময় পাবে এখন থেকে। পারবে?’’ ছেলেটি খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নরম গলায় বলল, ‘‘পাঁচ মিনিটে পিছন দিক থেকে স্টেজে উঠব, আপনি ঘোষণা করে দিন ম্যাডাম।’’ ঈশিতা নিজের মতো করে মাইক হাতে জানিয়ে দিল, ‘মুকুট্টি’ নামের একটি গ্রুপ এবার পারফর্ম করবে। নতুন গ্রুপ, আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে। একটু ওদের উৎসাহ দেবেন।’’ ও এর মধ্যে ভিতরে ঢুকে নিজে পরীক্ষা করে দেখে নিয়েছে, মাইক এবং অন্যান্য সব ব্যবস্থা করা আছে ঠিকঠাক মতো। ওর ঘোষণা শুনে উপস্থিত দর্শকদের অনেকেই হাততালি দিল। কয়েকজন সিটিও মেরে দিল! প্রচন্ড বিরক্ত হলেও ঈশিতা কিছু বলল না। দেখল, ত্রিপলের নিচটা লোকে ঠাসাঠাসি। বেশির ভাগই বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ঢুকে পড়েছে, বুঝতে পারল। প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে শুধু চেনাজানা, প্রাক্তনী, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা-সহ বিশিষ্টদের জন্য সামনের চেয়ারগুলোর চারপাশে ভিড়টা একটু কম। চেয়ারে অন্যদের মধ্যেই আলো করে বসে গুঞ্জা, ওর বর, মেয়ে এমনকি শুভমও!

এর মধ্যেই মোবাইলে ফোন করে মুকুট্টির ছেলেটি বলল, ‘‘স্টেজের আলো নিভিয়ে দিন, তবে ড্রপটা তুলতে বলবেন না এখনই। একটু পরে আমি মেসেজ দিলে তুলতে বলবেন ধীরে ধীরে।’’ ও সেই রকমই নির্দেশ পাঠিয়ে দিল। স্টেজের আলো নিভে গেল। একটা সুরেলা মেয়ের গলা ভেসে এল, ‘‘নমস্কার, পৌষমেলায় সবাইকে স্বাগত। ভেবেছিলাম ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে বলে’ গানটা দিয়ে শুরু করব, কিন্তু এমন বৃষ্টিতে সেই আমেজটাই আসবে না কারও মধ্যে। তার বদলে রবীন্দ্রনাথেরই অন্য একটা গান করি, কেমন?’’ বলে খালি গলাতেই গোটা মঞ্চ, গোটা মাঠ যেন আর একবার বৃষ্টিতে ভিজিয়ে মার্জিত এবং সুরেলা গলায় গেয়ে উঠল,

‘‘দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার--
জগতে কেহ যেন নাহি আর॥
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব--
আঁধারে মিশে গেছে আর সব॥

তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার।
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু’কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।’’

এতক্ষণের সব গুঞ্জন, কোলাহল থেমে গেল। মেয়েটির গলায় যেন জাদু আছে! নিখুঁত সুর, উচ্চারণ। শুধু কয়েক সেকেন্ডের একটা বিরতি দিয়ে আবার আগের মতোই একই ভঙ্গিতে গেয়ে উঠল, তবে এবার গানের শুরুটায় ফিরে গেল—

‘‘এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়--
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়॥
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।’’


মেলার মাঠের গুঞ্জন, বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ত্রিপলের মধ্যে আশ্রয় নেওয়া লোকেদের ফিসফাস, সব থেমে তখন চারদিকে এক আশ্চর্য মুগ্ধতা। ঈশিতা নিজেও যেন কেমন হয়ে গেছে। ওর কেমন যেন লাগছে। এর মধ্যেই মোবাইলে একটা মেসেজ দেখে ঈশিতার ইশারায় আস্তে আস্তে উঠতে শুরু করে দিয়েছে ড্রপ। পর্দা পুরো উঠে গেলে মঞ্চের জোরালো আলোয় দেখা গেল, লালপাড় সাদা শাড়ি পরা একটি মেয়ে মাইক হাতে দাঁড়িয়ে গাইছে আর তার পাশে একটি ছেলে পিছন ফিরে বসে পাশাপাপাশি দুটো বিরাট ক্যানভ্যাসে কী যেন আঁকছে। হাত চলছে যেন মেশিনের মতো!

মেয়েটির গান শেষ হওয়ার একটু আগেই ছেলেটি ওই অবস্থায় একটা ক্যানভাস একা একাই তুলে দর্শকদের দিকে ঘুরিয়ে দিল। সবাই অবাক হয়ে দেখল ক্যানভাস জুড়ে বিরাট একটা জলছবি। তুলির টানে স্পষ্ট সে ছবির বিষয়বস্তু — আকাশে ঘন মেঘ, বৃষ্টিতে প্রায় সাদা চারদিক, প্রচুর বড়ছোট গাছপালা আর সে সবের মধ্যে একটা নারী অবয়ব যেন বৃ্ষ্টিতে ভিজছে একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে। ততক্ষণে মেয়েটির গান শেষ। সে মাইকটা বাড়িয়ে দিল ছেলেটির দিকে। ছেলেটি তার হাতের তুলিটি বাড়িয়ে দিল মেয়েটির দিকে। তার পরে হাতের ইশারায় স্টেজের আলো কমিয়ে দিতে বলল। ততক্ষণে মেয়েটি অন্য ক্যানভাসটিতে একটু টাচ দিয়ে সেটাকে ঘুরিয়ে আগের ক্যানভাসটির পাশে দাঁড় করিয়ে দিল। সেখানে বৃষ্টির ধারার মধ্যে একটা লোকের অবয়ব শুধু, যেন হেঁটে আসছে। এই বারে পাশাপাশি দুটো ক্যানভাস দেখে বোঝা যাচ্ছে, একটা লোক অসীম শূন্যতার দিকে আসতে আসতে যেন দাঁড়িয়ে পড়েছে। তার থেকে একটু দূরে গাছপালার মধ্যে সেই মেয়েটি একটি গাছের নীচে বৃষ্টিতে ভিজছে।

এ কেমন ছবি? ভাবতে ভাবতেই আলো অনেকটা কমে গেল স্টেজে। কোনও রকম আনুষ্ঠানিকতার পরোয়া না করে মায়াবী এবং ভরাট গলায় ছেলেটির ভরাট গলা থেকে বেরিয়ে এল—  

‘‘বৃষ্টি নামলো যখন আমি উঠোন-পানে একা
দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম তোমার পাবো দেখা
হয়তো মেঘে-বৃষ্টিতে বা শিউলিগাছের তলে
আজানুকেশ ভিজিয়ে নিচ্ছো আকাশ-ছেঁচা জলে
কিন্তু তুমি নেই বাহিরে- অন্তরে মেঘ করে
ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে!’’

তার পরে ওই রকম নরম গলাতেই বলল, ‘‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার প্রথম অংশটুকু এমনিই আর বললাম না, আপনারা সবাই জানেন নিশ্চয়ই।’’ বলে নমস্কার করল সামনের দিকে তাকিয়ে। তার পর মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার হাতে নিজের মাইকটা ধরিয়ে আর একটা হ্যান্ডমাইক টেনে নিল স্ট্যান্ড থেকে

সবাই মন্ত্রমুগ্ধ। ঈশিতার ভিতরে একটা যেন তোলপাড় হচ্ছে। বাকিরা সবাই হাততালি দিতেও যেন ভুলে গেছে। সে সবের পরোয়া না করে এবার ছেলেটি এবং মেয়েটি একসঙ্গে মাইক হাতে নিল। ছেলেটি একই রকম ভরাট গলায় বলল, ‘‘রবীন্দ্রনাথের একাধিক গানের দুটো করে ভার্সান আছে। কোনওটা ছোট, কোনওটি আবার একটু বড়। সেগুলির স্বরলিপিও সেই রকম ভাবেই করা। সেই রকমই একটা গান এ বারে গাইব।’’ বলে খালি গলাতেই দু’জনে গেয়ে উঠল এবং সেটাও মাঝখান থেকে,

‘‘ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে
তোমায় যবে পাই দেখিতে,
ওহে হারাই হারাই সদা হয় ভয়
হারাই হারাই সদা হয় ভয়,
হারাইয়া ফেলি চকিতে

আশ না মিটিতে হারাইয়া
পলক না পড়িতে হারাইয়া,
হৃদয় না জুড়াতে হারাইয়া,
ফেলি চকিতে।

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,
চিরদিন কেন পাই না,
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন পাই না।।’’

দু’জনেরই ভরাট, উদাত্ত এবং অসম্ভব সুরেলা গলা, স্পষ্ট উচ্চারণ আর সেই সঙ্গে পরিমিত আবেগ। হাজারখানেক লোকের শ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিচ্ছু শোনা যাচ্ছে না তখন। সবাই যেন মন্ত্রমুগ্ধ। তার মধ্যেই গানের ফাঁকে হাতের ইশারায় স্টেজের ড্রপ ফেলে দিতে বলল ছেলেটি। ঈশিতা উঁকি মেরে শুধু দেখতে পেল, শেষ প্যারাটা গেয়ে হাতের মাইক দুটো নামিয়ে সবাইকে নমস্কার করে ক্যানভাস দুটো বগলে তুলে হাতে হাত ধরে স্টেজ থেকে নেমে গেল ছেলেমেয়ে দুটি। নিজেদের নাম, নিজেদের গ্রুপের নাম— কোনওটা নিয়ে একটা শব্দও খরচ করল না। এক ঘন্টাও হয়নি, তাতেই কয়েক মিনিটের গান, কবিতা, ছবিতে আবিষ্ট করে ফেলল হাজার খানেক লোককে। কয়েক বছর আগে এই শান্তিনিকেতনের সবার প্রিয় বিক্রম সিং মারা গেছে অতি অল্প বয়সে। তার কথা, তার গায়কী এখনও রবীন্দ্র সঙ্গীতপ্রেমীদের মুখে মুখে ফেরে। বিক্রমের গলায় এই গানটা একটা অন্য মাত্রা পেয়েছে, সেটা সবাই এককথায় মেনে নেয়। এই দুই ছেলেমেয়ের গলায় যেন বিক্রম সিং আবার জীবিত হয়ে ফিরে এল পৌষমেলার মাঠে, ওই গানটার মধ্যে দিয়ে। ওইটুকু শুনেই অনেকের চোখে জল এসে গেল। সম্বিত ফিরতেই হাততালিতে যেন ফেটে পড়ল চারদিক। সামনের সারিতে বসে থাকা প্রাক্তনী, ইউনিভার্সিটির অনেক সিনিয়র স্যার-ম্যাডাম, এমনকি ভিআইপিরা পর্যন্ত প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন ঈশিতাকে। যে ‘মুকুট্টি’কে সুযোগ দেবে কি না, সেটা নিয়েই দু’দিন আগে পর্যন্ত ধন্দে ছিল ঈশিতা, তারাই আজ ওকে শুধু উদ্ধার করল না, বহু বহু বছর পরে শান্তিনিকেতনে একটা অন্য আবেশ এনে দিল। ও প্রায় কেঁদে ফেলল সবার প্রশংসায়। মন্ত্রমুগ্ধের মতো গুঞ্জা এসে ওকে জড়িয়ে ধরল।

সফল অনুষ্ঠানের আনন্দে ঈশিতা তখন আত্মহারা। গুঞ্জা, তার বর এমনকি শুভমকেও নিয়ে গেল একটা দোকানে। সেখানে কফি আর পকোড়া খেতে খেতে গুঞ্জাকে গল্পটা বলল। গুঞ্জা বলল, ‘‘ভাগ্যিস ওরা যেচে নিজেরা এসে এটা করল। না হলে আজ তোর দুঃখ ছিল। এবার এটাকে ভাঙিয়ে ওরা অনেক জায়গায় ডাক পাবে, দেখিস।’’ ঈশিতা কিছু বলল না। শুভম বলল, ও আগে কখনও আসেনি পৌষমেলায়, এমনকি শান্তিনিকেতনেও। খুব ভাল লেগেছে ওর। পরের বার ঈশিতাকে নিয়ে আবার আসবে এই রকম অনুষ্ঠান দেখতে। তার পরেই ঈশিতার কানে কানে বলল, ‘‘আপনাকে নিয়ে শান্তিনিকেতন ছাড়ার আগে একটা সারপ্রাইজ দেব’’, বলে একটু হেসে ওর বন্ধুদের নিয়ে অন্য দিকে ঘোরাতে চলে গেল। ঈশিতা-গুঞ্জা মিলে খুশি মনে মেলায় অনেক রাত অবধি ঘুরে বাড়ির পথ ধরল। বাড়ি ফেরার পথে দেখল একটা মারামারি হচ্ছে। জনাতিনেক ছেলে মাতাল অবস্থায় একটা মেয়ের হাত ধরে টানছে। এই সব পার্বনে শান্তিনিকেতনে যেন এসব নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে গেছে, বিরক্তিকর। একটা বাইক পাশে পড়ে আছে। দেখেই বিরক্ত লাগল ওদের। হঠাৎ চোখে পড়ল, মেয়েটাকে বাঁচাতে একটা ছেলে শুধু আপ্রাণ লড়ছে নয়, দুটোকে মেরে শুইয়েও দিয়েছে ততক্ষণে। তিন নম্বরটাকে কলার ধরে অন্ধের মতো মেরে চলেছে। দেখেই মাথায় রাগ উঠে গেল ওদের। দৌড়ে গিয়ে ছেলেটার কলার ধরে ধমক দিতে গিয়ে দেখল, আরে ‘মুকুট্টি’ গ্রুপের সেই দুটো ছেলেমেয়ে না? যা শুনল, ওরা অনুষ্ঠান শেষে নিজেদের মতো একটু ঘুরে খাওয়াদাওয়া সেরে হোটেলে ফিরছিল, তার মধ্যেই এই বিপত্তি। মেয়েটির শাড়ি বেশ কয়েক জায়গায় ছিঁড়ে গেছে। তার কাঁধের ব্যাগটা মাটিতে পড়ে আছে। সেই ক্যানভাস দুটোও। ছেলেটির বেশ কয়েক জায়গায় কেটেছড়ে গেছে। মাথাও বোধহয় ফেটেছে। রক্ত বেরোচ্ছে, তবে অল্প। ঈশিতা গলায় প্রবল গাম্ভীর্য নিয়ে রীতিমতো ধমক দিয়ে বলল, ‘‘এত রাতে হোটেলে ফিরতে হবে না, সামনেই আমার বাড়ি। রাতে সেখানে থেকে কাল যেও।’’ ছেলেটি কিছুতেই রাজি হল না, ওর বাড়ির ঠিকানা নিয়ে নিজের হোটেলেই চলে গেল। মেয়েটিকে নিয়ে ঈশিতা বাড়ি ফিরল। গুঞ্জা ওর বরের বাইকে চলে গেল। কাজের বউটি আগেই মেয়েকি নিয়ে চলে গেছে, তাই ও আর দেরি করল না। এই ওয়েদারে বরকে ছাড়া.....উফফফফ। ও ভাবতেই পারে না।

ঘরে ঢুকে ঈশিতা মেয়েটিকে দোতলার ঘরটা দেখিয়ে বলল, ‘‘তুমি ড্রেসটা চেঞ্জ করে নাও।’’ বলে কাজের দিদিকে ডেকে একটু চা করতে বলল আর জানিয়ে দিল, ডিনার পরে করবে। কিছুক্ষণ পরে মেয়েটি একটা টিশার্ট আর স্কার্ট পরে চোখেমুখে জল দিয়ে এসে নীচে বসার ঘরে সোফায় বসল। এই বার ওকে ভাল করে দেখল ঈশিতা। কী সুন্দর দেখতে! পাকা গমের মতো গায়ের রং, একঢাল চুল কোমর অবধি, টানা চোখ, পাতলা ঠোঁট। শরীরের গড়নটাও অসাধারণ। সব মিলিয়ে সত্যিকারের সুন্দরী। শুধু চোখদুটোয় যেন একটু হাল্কা বিষন্নতা। হতে পারে একটু আগের ঘটনাটার ধাক্কা লেগেছে। এই সব ভাবতে ভাবতে মেয়েটিকে নাম জিজ্ঞাসা করল ঈশিতা। মেয়েটি মুচকি হেসে বলল, ‘‘আমার নাম মৃত্তিকা।’’ ছেলেটির কথা জিজ্ঞাসা করায় একই রকম ভঙ্গিতে বলল, ‘‘ওর নাম অরণ্য। আমার দাদা।’’ এরা দু’জন ভাইবোন! ইশশশ! এতক্ষণ ওদের প্রেমিক-প্রেমিকা ভাবছিল ঈশিতা। নিজের ভাবনার নিজেরই লজ্জা লাগল। টুকটাক কথার মধ্যে কোথায় থাকে জানতে চাইলে মেয়েটি বলল, আমরা নিউটাউনে থাকি। তার পরে একথা সেকথা পরে ঈশিতাকে একটু ইতস্তত করে বলল, ‘‘আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, অনেক ভোরে উঠি তো, তাই। যদি বলেন, আমি শুয়ে পড়ি আজকে।’’ ঈশিতা ওকে খাওয়ার কথা বলতেই বলল, একটু আগেই ডিনার করে নিয়েছি। ফলে এখন আর কিছু খাব না।’’ বলে শুতে গেলে চায়ের কাপ নিয়ে বসল। উফ সারাদিন যা টেনশন গেল! কাজের দিদি ততক্ষণে খাবার গুছিয়ে রেখে চলে গেছেন। কাল আবার সাতসকালে আসবেন তিনি।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: তার ছিঁড়ে গেছে কবে - by Choton - 09-05-2025, 04:07 AM



Users browsing this thread: