07-05-2025, 06:50 PM
অতৃপ্ত :- চতুর্থ পর্ব
বাড়ি পৌঁছেই আমি নিচের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দরজা বন্ধই আছে। জানলা ফাঁক করে দেখলাম গেঁড়ে বামন তার রমনী কঙ্কালখানি নিয়ে শান্তভাবে পড়ে আছেন। বুঝলাম সারারাত ঘুরে শেষে এই ঘরেই এসে একটু বিশ্রাম নেন। এই ঘরটা যেন ওনার নিজের হয়ে গেছে।
সেদিন সকালবেলায় পাড়ার মুদির দোকান থেকে চাল-ডাল কিনতে গেলাম। দেখি কয়েকজন বসে গম্ভীরভাবে কি নিয়ে আলোচনা করছে। আমায় দেখে মুদির দোকানের মালিক রাজেন বক্সি বললে, এই যে মশাই, খবর সব শুনেছেন তো?
বুঝতে পারলাম কি বলতে চাইছে। তবু না বোঝার ভান করে বললাম, কী খবর?
সে কি মশাই, গোটা গায়ে হৈ-চৈ পড়ে গেছে, লোকে ভয়ে কাঁপছে আর আপনি কিছুই জানেন না?
আমতা আমতা করে বললাম, ও হা, শুনেছি বটে কোথা থেকে একটা পিশাচী দেখা দিয়েছে।
শুধু পিশাচী ? ওটা না পুরোপুরি পিশাচী , না পেত্নী ,না ভূত। পশু-পাখি, জীবজন্তু যা পাচ্ছে তাই খাচ্ছে। এমনকি মড়া পর্যন্ত। এবার জ্যান্ত মানুষ ধরে ধরে খাবে।
আমি চুপ করে শুনে গেলাম। বেশি কথা বলতে সাহস পেলাম না। কিন্তু মারাত্মক খবরটা দিল র্যাশনের দোকানের বিধান গরাই। বললে তার স্ত্রী নাকি অনেক রাতে আমার বাড়ির কাছে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিল স্রেফ হাত দুয়েক লম্বা একটা জ্যান্ত কঙ্কালকে। মাথাটা তার ইয়া বড়।
আশ্চর্য হয়ে বললাম, আমার বাড়ির কাছে?
হ্যাঁ। আপনি একটু সাবধানে থাকবেন।
চাল-ডাল কিনে চুপচাপ বাড়ি চলে এলাম।
একদিন বিকেলে আকাশ ছেয়ে মেঘ করেছে। সেই সঙ্গে শুরু হলো ঝড়। জানলা বন্ধ করতে গিয়ে দেখি, ছাদের আলসেতে আমার কাপড় শুকোতে দিয়েছিলাম, সেটা উড়ে যাচ্ছে।
কী আশ্চর্য! আমি কাপড়টা গিঁট বেঁধে দিইনি?
কাপড়টা দিব্যি বাতাসে ঢেউ খেলিয়ে উড়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি নিচে নেমে কাপড়টা উদ্ধার করতে ছুটলাম। কাপড়টা গিয়ে একটা আমগাছের ডালে আটকে গেল। কোনোরকমে ডিঙি মেরে একটা কঞ্চির সাহায্যে ওটা পেড়ে নিলাম।
প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে বাড়ি ফিরে দোতলায় উঠতে যাচ্ছি–খট খট শব্দ। তাড়াতাড়ি থামের আড়ালে লুকোলাম। দেখলাম কঙ্কালটা সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে। ভাগ্যি আমি ওপরে ছিলাম না।
অদ্ভুত আকৃতির কঙ্কালটা তার দেহটা টানতে টানতে আর বিরাট মাথাটা নাড়তে নাড়তে নির্দিষ্ট ঘরের দিকে চলে গেল। হয়তো এবার ও নিজেই শেকল খুলে ঘরে ঢুকবে।
ও তাহলে দোতলাতেও উঠতে আরম্ভ করেছে। এইটে আরও ভয়ের ব্যাপার। ও আমাকে খুঁজছে। কেন? নিশ্চয় আমার সঙ্গে গল্প করার জন্যে নয়।
আমার হাত-পা হিম হয়ে গেল। এরপর একা বাড়িতে এই মূর্তিমান আতকংটির সঙ্গে থাকব কি করে? না থেকেই বা যাব কোথায়? চিরকালই তো আমি লোকালয় থেকে দূরে থেকেছি। কিন্তু একটা কথা ভেবে পাচ্ছি না–কঙ্কালটা এমন হিংস্র হয়ে উঠল কেন? এর পেছনে কি কোনো ইতিহাস আছে?
যার কাছ থেকে এটা কিনেছিলাম সে বলেছিল এটা নাকি এককালের সাংঘাতিক দস্যু দৌলত খাঁর মেয়ে নুরজাহানের কঙ্কাল।
সে কতকাল আগের? কী এমন সাংঘাতিক কাজ করেছিল দৌলত খাঁ বা তার মেয়েই ?
ভাবলাম ওর ইতিহাস আমায় জানতেই হবে। আর এটা জানাতে পারে সেই ব্যবসায়ীটিই।
সেইদিনই আমি ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করতে অনেক দূরে এক অখ্যাত গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম।
ব্যবসায়ীর নাম বশির আলি। ওর দোকানে গিয়ে দেখলাম বাইরে থেকে তালা মারা, বেকার এতটা পথ এসে ঘুরে যেতে হবে ভাবছি দোকানের ভিতর থেকে অস্পষ্ট আওয়াজ ভেসে এলো। কৌতুহল সামলাতে না পেরে দোকানের দরজার ফাঁকে চোখ লাগালাম, অস্পষ্ট কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আগের দিন দোকানের লাগোয়া পিছনে গুদাম ঘর দেখেছিলাম, ওদিকেই গেলাম। আধো আলো অন্ধকারে চোখটা সয়ে আসতেই দেখলাম একটা তরুনী, বয়স বোধহয় আঠারো হবে, পাতলা ছিপছিপে, ঘরের ভিতর একটা টেবিলের উপর শুয়ে আছে, দুপা দুদিকে বশির ধরে কোমর নাড়িয়ে চলেছে। প্রত্যেক ঠাপে ঠাপে পাতলা ছিপছিপে তরুনীর মুখ ব্যাথাতে কুঁকড়ে যাচ্ছে, পুরোনো টেবিলের কচর মচর শব্দ বাইরে থেকে ভালোভাবেই শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সংযম ফিরে পেয়ে আবার দোকানের সামনের দিকে এসে একটা বেঙ্চিতে বসলাম।
মিনিট পাঁচেক পর ঘর্মাক্ত বশির বেরিয়ে এলো, আমাকে বাইরে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে আবার কি কারণে যেনো দোকানের ভিতরে ঢুকে গেলো।
চিনতে পারেনি বোধহয়, মিনিট দুই পরে এসে সামনে একটা কাঠের চৌকিতে বসে আমার দিকে তাকাল।
বলুন স্যার।
আমার পরিচয় দেবার পর ও মনে করতে পারল। সঙ্গে সঙ্গে গলার স্বর বদলে ফিস ফিস করে বলল, জিনিসটা ভালোই দিয়েছিলাম কি বলুন? আপনার ডাক্তারি শেখা হচ্ছে তো?
প্রকৃত ঘটনা চেপে গিয়ে বললাম, এ তো সাংঘাতিক জিনিস ভাই। ওটা মাঝে মাঝে নড়ছে।
বশির চমকে উঠল। বলেন কী?
বললাম, হ্যাঁ, সত্যি। নইলে এতদূর ছুটে আসব কেন?
বশির অবাক হয়ে বললে, কিন্তু আমার কাছে এতদিন ছিল, কখনও তো নড়তে দেখিনি।
তারপর বলল, যাই হোক সাবধান, ওটা শুনেছি দৌলত খাঁর মেয়ের কঙ্কাল। গেঁড়া বামন বাবা মেয়ে দুজনেই । কত যে খুন করেছিল তার হিসেব নেই। ওটা কিন্তু আর ফেরত নিতে পারব না।
বললাম, ফেরত দেবার কথা ভাবছি না। আমি এসেছিলাম ঐ দৌলত খাঁর মেয়ের কথা জানতে। খুব কৌতূহল হচ্ছে। আপনি কি কিছু জানাতে পারেন?
বশির বললো, ঐ যতটুকু বললাম তার চেয়ে বেশি জানি না। জানবার ইচ্ছেও নেই। আমি গোপন ব্যবসা করি এই পর্যন্ত। তাছাড়া দৌলত খাঁর ব্যাপার তো বহুকাল আগের।
বললাম, ওর সম্বন্ধে আর কেউ বলতে পারেন কি?
বশির একটু ভেবে বললে, যার কাছ থেকে এটা পেয়েছিলাম হয়তো একমাত্র সেইই বলতে পারে।
তার ঠিকানাটা আমায় দেবেন? বলেই পাঁচটা একশো টাকার নোট ওর হাতে গুঁজে দিলাম।
বশির যে খুশি হলো তা ওর চোখ-মুখ দেখেই বুঝতে পারলাম।
ও বললে, তা না হয় দিচ্ছি। কিন্তু সে তো অনেক দূর। সেই জম্মু-কাশ্মীর ছাড়িয়ে পহেলগাম। আপনাকে অবশ্য প্রথমে জম্মুতেই নামতে হবে। তারপর..
বললাম, যত দূরই হোক দৌলত খার মেয়ের ইতিহাসটা আমায় জানতেই হবে।
বশির ঠিকানা লিখে দিল। ঠিকানাটা নিয়ে আমি চলে আসছিলাম, বশির পিছু ডাকল, আরে ও মশাই! শুধু ঠিকানা পেলেই হবে? যারা কবর খুঁড়ে পুরনো কঙ্কাল বের করে তারা যে কী সাংঘাতিক তা ভাবতে পারবেন না। পুলিশের স্পাই মনে করে ওরা হয়তো জ্যান্ত পুঁতে ফেলে আপনাকেই কঙ্কাল বানিয়ে দেবে।
আমি হতাশ হয়ে বললাম, তা হলে উপায়?
দাঁড়ান, একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি, বলে আমার সামনে বসেই উর্দুতে একটা চিঠি লিখে দিল। তারপর খামের ওপর একটা লাল ছাপ মেরে দিল।
এবার নিশ্চিন্ত মনে যান। দেখবেন চিঠিটা যেন না হারায়। তবু যদি বিপদে পড়েন তাহলে বলবেন, বশিরের নিচের বালে একগাদা উকুন হয়েছে, মনে থাকবে?
হেসে বললাম, হাঁ ধন্যবাদ।
বুঝলাম কথাটা সাংকেতিক।
বশির ফের ডেকে বলল, আর শুনুন, এইভাবে ধুতি-পাঞ্জাবি-পরা বাবু সেজে গেলে সন্দেহ এড়াতে পারবেন না। ফকির সেজে যাবেন। বলবেন দেশভ্রমণ করেন। নানা জায়গার কবরের উপর কেতাব লিখবেন।
আমি বললাম, তাই করব। কিন্তু ফকির কেতাব লিখবে।
কেন? ফকির হলে বুঝি পড়া-লেখা জানতে নেই?
তা বটে। ধন্যবাদ জানিয়ে চলে এলাম।
.
ফকির, সন্ন্যাসী সাজা আমার পক্ষে কোনো ব্যাপার নয়। জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তো আমি সাধু-সন্ন্যাসী সেজে ঘুরে বেড়িয়েছি, এবার না হয় ফকির সাজলাম। বড়ো বড়ো চুল তো ছিলই। অল্প দাড়ি, একটু ছেটে কেটে ঠিক করে নিলাম। কালো একটা আলখাল্লা পরলাম। কালো একটা বড়ো ঝুলি, চোখে সুর্মা, গলায় কাচ-পাথরের মালা। ব্যস, একেবারে নির্ভেজাল ফকির বনে গেলাম। তারপর একদিন শেয়ালদা থেকে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেসে চড়ে বসলাম। মনে বেশ আনন্দ। কত দিন পর দেশভ্রমণে চলেছি। তা ছাড়া ঐ হতভাগা কঙ্কালটার হাত থেকেও কিছুদিন রেহাই পাব।
পাক্কা দুরাত্তির কাটিয়ে জম্মু। সেখানে সকালে বাসে উঠে শ্রীনগর। রাত্তিরটা একটা ছোটোখাটো হোটেলে কাটিয়ে পরের দিন পহেলগা।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ী রাস্তা। মাঝে মাঝে ঝর্ণা। গোড়ালি ডোবা সরু নদী। কখনও কখনও ছোট ছোট ঘরবাড়ি। এখানেই রয়েছে মোগল বাগান। কাছের ভৃঙ্গী নদীর জলধারা পাহাড় ভেঙে এখানে ঝর্ণা হয়েছে। আর এখানেই ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহান-কন্যা মোগল উদ্যান তৈরি করলেন যার সুন্দর সবুজ লনে কেয়ারি করা অজস্র রঙ-বেরঙের ফুলের মাধুর্য ছড়িয়ে আছে, স্বপ্নের মতো।
কিন্তু প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো মনের অবস্থা তখন আমার ছিল না। জালালুদ্দিনের ঠিকানা খুঁজে বের করতেই হবে। জানতে হবে বামন দৌলত খাঁ আর তার মেয়ের ইতিহাস। এটা খুব সহজ কাজ নয়।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর জালালুদ্দিনের সন্ধান পেলাম। এখানে ছোটো একটা সরাইখানা চালায়। যেমন লোক দেখানো রাজমিস্ত্রির কাজ বশিরের ।
একটা ছোটো ঘরে বসে ছিল তিনজন। লম্বা-চওড়া চেহারা। চোয়াল শক্ত। চোখগুলো সাপের মতো। এরা যে শুধু পুরনো কবর খুঁড়ে কঙ্কাল চুরি করে তা নয়, বোধ হয় আরও কিছু ভয়ানক কাজটাজ করে। ঘরের দোরের কাছে একজন মধ্যবয়সী মহিলা দাড়িয়ে আছে, দেখে বুঝলাম এটা জালালুদ্দিনের বৌ হবে মনেহয়।
চিঠিটা একজনের হাতে দিয়েই খামের ওপর নাম পড়ে সে আর একজনকে দিল। তার একটা চোখ কানা। সম্ভবত সেই জালালুদ্দিন, কেননা চিঠিটা সেই খুলে পড়ল।
চিঠিটা পড়ে সে প্রথমে একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। তারপর চিঠিটা অন্যদের হাতে দিল। চিঠিটা তিনজনেই পড়ল। এবার আমাদের কথাবার্তা শুরু হলো। ওরা উর্দু-হিন্দি মিশিয়ে কথা বলছিল। ভাঙা ভাঙা বাংলাও জানে। ওদের প্রশ্ন করার ভঙ্গি থেকে বুঝলাম, আমি যে কেতাব লেখার জন্যে দৌলত খাঁর মেয়ের ইতিহাস জানতে চাইছি তা ওরা বিশ্বাস করছে না। শুধু অবিশ্বাস করাই নয় আমি যে একটা প্রতারক এমন সন্দেহও করছিল। আমি ওদের বোঝাতে চাইলাম, চিঠিটি বশির আলি নিজে লিখেছে। হাতের লেখা মিলিয়ে দ্যাখো।
সে কথার উত্তরে একজন বলতে চাইল, চিঠিটা জাল হতে পারে।
বললাম, কিন্তু লাল ছাপটা?
ওটা বশিরের বলেই মনে হয়।
তা হলে?
ওরা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। সন্দেহ তবু ঘোচে না। আমাকে পুলিশের লোক ভেবেছে। আমি যে পুলিশের লোক নই তা প্রমাণ করতে না পারলে আমায় মরতে হবেই। আমি করুণ চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আচ্ছা ফকিরসাহেব, বশির কি আর কিছু বলেছে আপনাকে?
কই না তো। বলেছে এই চিঠিখানা দিলেই তুমি যা জানতে চাইছ তা জানতে পারবে।
ওদের একজন খেঁকিয়ে উঠে বলল, ব্যস। আর কিছু বলেনি ?
না, আবার কী বলবে?
ওরা তিনজন চোখে চোখে কথা বলে নিল। বুঝলাম বিপদ আসন্ন।
ওরা বলল, চলুন ফকিরসাহেব, বিশ্রাম করবেন। বলে আমায় পাশের একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিল।
আমি প্রমাদ গুণলাম। বুঝলাম আমার আর মুক্তি নেই। আমায় ওরা বিশ্বাস করছে না।
একটা পুরো দিন কেটে গেল বন্দী অবস্থায়।
জালালুদ্দিনের বৌ খাবার দিতে এসে করুন চোখে তাকাতো, ওই অবস্থায়তেও ওই মহিলার পাছার খাঁজ দেখে আমার লিঙ্গ ফুঁসিয়ে উঠছে। আমার কেবলই মাথায় ঘুরছিল বশির কি আর কিছু বলেছিল?
না। আর কি বলবে?
ও হাঁ, বলেছিল ফকিরের বেশ ধরতে হবে। তা তো আমি ধরেছি। কিন্তু আর তো কিছু বলেনি।
সেদিন দুপুরবেলায় ওদের একজন ঘরে ঢুকে উর্দু-হিন্দি মিশিয়ে যে কথাটা বললে, বাংলা করলে তা দাঁড়ায় এইরকম–
কি ফকিরসাহেব, কি মতলবে পহেলগাও এসেছ খোলাখুলি বলো তো।
বললাম, বশিরের চিঠিতেই তা লেখা আছে।
ও চিঠি জাল।
না, জাল নয়।
জাল যদি নাই হয় তা হলে বশির আর কি বলেছে বলো।
না, ও আর কিছু বলেনি।
লোকটা হা হা করে হেসে উঠল। বলল, তা হলে তুই ধাপ্পাবাজ। আর ধাপ্পাবাজের শাস্তি কি জানলা দিয়ে তাকিয়ে দ্যাখ মাদারচোদ ।
দেখলাম দুজন লোক একটা জায়গায় কোদাল দিয়ে মাটি কোপাচ্ছে।
হায় ভগবান! ওরা আমার কবর খুঁড়ছে।
লোকটা দরজায় তালা বন্ধ করে চলে গেল। আর আমি আসন্ন মৃত্যুর কথা ভেবে গুম হয়ে রইলাম। কী কুক্ষণে ঐ নুরজাহানের কঙ্কালটার ইতিহাস জানতে এসেছিলাম! এর চেয়ে ওটার হাতে মরণ ভালো ছিল। তবু নিজের বাড়িতে মরতে পারতাম। কিন্তু.. বশির যেন আরও কি বলেছিল। ইস্! মনে পড়ছে না তো। হ্যাঁ, বলেছিল চিঠি পড়েও যদি ওরা বিশ্বাস না করে তা হলে বলো..
কী যেন বলতে বলেছিল….বশিরের কি একটা রোগ হয়েছিল? উদরি? ভিরমি? মাথার গণ্ডগোল? না–না, রোগটোগ নয়, তা হলে? তা হলে যে কী তা কিছুতেই মনে পড়ল না–একটা সাংঘাতিক কথা….
সামান্য একটা কথা ঠিক সময়ে কিছুতেই মনে না পড়লে তার যে কী অপরিসীম যন্ত্রণা, মাঝে মাঝেই জালালুদ্দিনের বৌ এর রসালো ডবকা শরীর আর কামুক চাহনি মাথায় আসছে, ছিঁ ছিঁ।
এমনি সময়ে দরজা খুলে তিনজনই ঢুকল। হাতে ছোরা।
ফকিরসাহেব!
হা হা, মনে পড়েছে বশির কিছু একটা বলেছিল, কিন্তু আমি মনে করতে পারছি না। আমায় একটু সময় দাও।
না। তুই শালা মিথ্যেবাদী! বলে একজন আমার চুলের মুঠি ধরতেই আমার স্মৃতির দরজা হাট করে খুলে গেল। অমি চিৎকার করে বলে উঠলাম, মনে পড়েছে ….মনে পড়েছে– বশির বলেছিল ওর নিচের বালে একগাদা উকুন হয়েছে।
চলবে..