Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica তার ছিঁড়ে গেছে কবে
#97
(৩৩)


মাঝের কিছু কথা



জয়তী ডিসেম্বরের এক তারিখ রাতেই কলকাতায় পৌঁছে প্রথমে নিজের বাড়িতে যায়। কিন্তু পরদিন সকালে দাদা-বৌদির গোমড়া মুখ আর মা-বাবার মুখে বারবার অলুক্ষুণে শব্দটা শুনে বুঝে যায়, এই বাড়িতে ওর আসা তো বটেই আগামী দিনে থাকাও কঠিন হবে। তবে মুখে কিছু না বলে ফ্রেস হয়ে কিছু না খেয়েই ব্যাগে রাখা প্রায় সব টাকাই সঙ্গে নিয়ে অফিসে এসে নিজের চিঠিটা দেখায়। ওকে জানানো হয়, ১ জানুয়ারি থেকে জয়েনিং। ফলে এই ক’টা দিন ওর কোনও কাজ নেই। তবে ও যেন ২৫ তারিখের আগেআগে একদিন এসে দেখা করে যায়। সেদিন ওর কয়েকটা ডকুমেন্টের কপি দিয়ে গেলে ভাল। তা হলে ১ তারিখেই আইকার্ড থেকে শুরু করে সব হাতে পেয়ে যাবে। ও অনেক অনুরোধ করে সে দিনই সব ডকুমেন্ট জমা করে দিল দুপুরের মধ্যে। তার পরে নিচে এসে একটা দোকানে ঢুকল খেতে। ওর মাথা তখন নানা চিন্তায় জর্জরিত। এখনও ২০-২২ দিন বাপের বাড়িতে থাকতে গেলে মা-বাবা তো বটেই, দাদা-বৌদির আচরণ কী হবে, ভেবেই শিউড়ে উঠল। ও যে চাকরি নিয়ে ফিরে এসেছে, সেটা ওরা জানে না। ভেবে নিয়েছে ঘাড়ের বোঝা হয়ে ফিরে এসেছে। ও ঠিক করল, এই ক’টা দিন ভদ্রায় থেকে আসবে। তার আগে সৌমাভর ভদ্রার অফিসের ঠিকানাটা দরকার, ফোন নম্বরও। আবার সেই অফিসে গিয়ে খোঁজ করতেই পেয়ে গেল। সেই সঙ্গে এক জনকে অনুরোধ করল, যদি ওর থাকার মতো অফিসের কাছাকাছি কোনও ফ্ল্যাট বা বাসা ভাড়া পাওয়া যায়, ও এসে সেখানেই উঠবে। তার পর একটু খোঁজখবর করে একটা ট্রাভেল অফিসে গিয়ে পরদিন ভোরের ফ্লাইটের টিকিট কাটল। সে রাতে ঘরে ফিরেও কিছু খেল না, বরং নিজের জিনিষপত্র গুছিয়ে নিল। এমনকি সব ডকুমেন্টসও। সকালে উঠে কাউকে কিছু বলল না, শুধু নিজের অল্প কিছু জামাকাপড় একটা ব্যাগে ভরে রেখে দিল খাটের নীচে। ভোরে উঠে রওনা দিল।

সে বার টানা ২০ দিন ভদ্রায় ছিল জয়তী। ও বেলার দিকে ব্যাঙ্গালোরে নেমে ভদ্রার অফিসে ফোন করে কপালজোড়ে সৌমাভকে পেয়েও যায়। সৌমাভ একটু অবাক হলেও সব শুনে ওকে বলল, তুমি ওখান থেকেই সোজা গাড়ি ভাড়া করে চলে এসো। কারণ এখন আমি যেতে গেলে পাঁচ ঘন্টা অন্তত অপেক্ষা করতে হবে। তার পর ফিরতে আরও পাঁচ ঘন্টা। তার থেকে তুমি এখনই রওনা দিলে বিকেলের মধ্যে চলে আসতে পারবে। যুক্তিটা মনে ধরল জয়তীর। ও সেই মতো এয়ারপোর্ট থেকেই সোজা ভদ্রার গাড়ি বুক করে নিল। এবং দেখল, বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ও পৌঁছে গেছে ভদ্রায়। সৌমাভ আগেই বলেছিল, কোথায় গাড়ি দাঁড় করাতে হবে, সেখানেই নিজে দাঁড়িয়ে দিল। ও গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে সোজা দৌড়ে এসে সৌমাভকে জড়িয়ে বলল, ‘‘আমার কোনও উপায় ছিল না, বিশ্বাস কর।’’ সৌমাভ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ব্যাগটা নিজে নিয়ে বলল, আগে ঘরে চল, ফ্রেস হও। তার পর সব শুনব।

ঘরে এসে ব্যাগটা রাখতেই ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল সুভদ্রা। সৌমাভ আগেই জানিয়েছিল, আজ ওর দিদিমণি আসবে। ও খুব খুশি। জয়তী দ্রুত বাথরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে আসতে না আসতেই ওর জন্য চা এবং একগাদা খাবার এনে হাজির করল সুভদ্রা। দুটো খুদে তখন বিছানায় শুয়ে নিজেদের মতো কুস্তি করে চলেছে। জয়তী সোজা দুটোকে জাপ্টে ধরে বেশ কিছুক্ষণ উমমমমম করে আদর করল, চুমু খেল। ওরাও খিলখিলিয়ে উঠল আদরে। তার পরে ধীরেসুস্থে চা-খাবার খেল। সেই কোন সকালে বেড়িয়েছে। তার পরেই খেয়াল করল, সৌমাভ ওকে নামিয়ে কোথায় গেল? সুভদ্রাকে প্রশ্ন করায় জানতে পারল, সৌমাভর অফিসে খুব চাপ চলছে, রোজই অনেক রাত করে ফিরছে।  

সেদিন অবশ্য সৌমাভ বেশি রাত করল না। ফিরে স্নান সেরে ফ্রেস হয়ে এসে সবাইকে নিয়ে কেতে বসে গেল। খেতে খেতেই জয়তীর ঘটনা সব শুনল। ও যে আলাদা বাড়ি ভাড়া করে থাকার কথা ভেবেছে, তাতে ওর সেফটি নিয়ে একটু আপত্তি করলেও অবশ্য সব কথা শুনে বিষয়টা মেনে নিল। খেয়ে উঠে বাইরের বারান্দায় চেয়ার টেনে বসে একটা সিগারেট ধরাল। সুভদ্রা আগেই বাচ্চাদুটোকে ঘুম পাড়াতে পাঠিয়ে দিয়েছে। ও জানে, এখন দু’জনে গল্প করবে অনেকক্ষণ।

খেয়ে উঠে জয়তীর শরীর তখন ছেড়ে দিচ্ছে। খুব ঘুম পাচ্ছে। তবু বাইরে এসে সৌমাভর পাশে বসল। টুকটাক কথার পরে সৌমাভ ওকে শুতে যেতে বলে বলল, কাল সকালে একটা দরকারি কথা আছে। একটু অবাক হল জয়তী, কী এমন কথা যা, এখন বলা যাবে না। ও চাপাচাপি করতে সৌমাভ বলল, এই ক’দিনে ও সুভদ্রার সঙ্গে কথা বলেছে। ওর ইচ্ছে, স্থানীয় একটা চার্চের কলেজে ওকে ভর্তি করে দেবে একেবারে ক্লাস ইলেভেনে। তা হলে পরের বছর ও হায়ার সেকেন্ডারি দিতে পারবে। চার্চের কলেজটা সরকারি অ্যাফিলিয়েটেড। ফলে পাশ করলে পরে কলেজে ভর্তি হতেও সমস্যা হবে না। তবে এ সবের জন্য একটু মোটা টাকা ডোনেশন দিতে হয়েছে ওকে। এখন জয়তী যে কটা দিন থাকবে, ওকে যদি একটু পড়াশোনার অভ্যাসটা ফিরিয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে ইংরেজি বলা ও লেখা। এবং তার সঙ্গে অবশ্যই হিন্দি। বাংলা ও নিজে শেখাবে, তবে সেটা পরে। সৌমাভ জানাল, কাজের চাপে ও একদমই সময় দিতে পারছে না। চার্চের কলেজ শুরু হয়ে যাবে জানুয়ারি থেকেই। ফলে যতটা এগিয়ে রাখা যায়, আর কি। সুভদ্রার জন্য অনেক বইও কিনে এনেছে, সেগুলো কলেজই বলে দিয়েছিল। ফলে জয়তী একটু হেল্প করলে ভাল হয়। তা ছাড়া জানুয়ারি থেকে সব সাবজেক্টের টিচারও দিয়ে দেবে যাতে সমস্যা না হয়। জয়তী এতে খুশিই হল। ও বুঝতে পারল, সুভদ্রার জীবনেও দিনবদল হতে চলেছে। সৌমাভ ওকে শক্ত পায়ে দাঁড় করানোর জন্যই এসব করছে। যদিও সুভদ্রার প্রতি সৌমাভর কোনও শারিরীক আকর্ষণ তৈরি হয়েছে কি না, ও জানে না। এখন সেটা নিয়ে প্রশ্ন করতেও ওর ইচ্ছে করছে না। ও বসে বসে হাই তুলছে দেখে সৌমাভ একরকম জোর করেই ওকে শুতে পাঠিয়ে দিল। পরদিন ভোরে ঘুম ভেঙে জয়তী দেখল, সৌমাভ বাইরের ঘরে সোফায় ঘুমিয়ে। ওকে ডেকে তুলে কারণ জিজ্ঞাসা করে জানল, রাতে কিছু কাজ ছিল। তখন সে সব সেরে সোফাতেই শুয়ে পড়েছে। উঠেই তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে শুধু একটু চা খেয়ে বেড়িয়ে গেল। জয়তীকে বলল, সুভদ্রার বিষয়টা দেখতে আর আজ রাত থেকে সুভদ্রা, জয়তী এবং দুটো বাচ্চা বড় খাটে শোবে, ও ছোট খাটেই কটা দিন ঘুমোবে।

পরের কুড়ি দিন যেন নিমেষে কেটে গেল জয়তীর। বহু দিন পড়াশোনার বাইরে থাকা সুভদ্রাকে সংসারের সব দিক সামলে পড়াতে বসানোটা প্রথম দিকে বেশ সমস্যা হলেও সপ্তাখানেক পর থেকে নিজের আগ্রহেই সুভদ্রা দ্রুত শিখতে শুরু করল। এবং সবাইকে অবাক করে ইলেভেনের পড়া বেশ কিছুটা এগিয়েও নিল। জয়তী দেখল, পড়া শেষ করার জন্য দরকারে অনেক রাত অবধি বইখাতা নিয়ে বসছে সুভদ্রা। এবং লেখা বা পড়া মুখস্ত শেষ করে তবেই শুতে যাচ্ছে। ওর এই আগ্রহটা ভাল লাগল জয়তীর। টানা ওকে পড়িয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে দিল। এদিকে সৌমাভ রোজই প্রায় ভোরে বেড়িয়ে যায়, ফেরে বিধ্বস্ত অবস্থায় রাতে। দু’জনে কথা প্রায় হয়ই না। একদিন তার মধ্যেই একটু তাড়াতাড়ি ফেরার পরে দু’জনে গল্প করতে বসল পাশাপাশি। জয়তী জানল, ভদ্রার যে এলাকাটা রিজার্ভ ফরেস্ট করার জন্য সরকার চাপ দিচ্ছে, সেটা বিরাট এলাকা। তার জোন ভাগ করা, সীমানা নিয়ে সরকার এবং গ্রামবাসীদের জট কাটানোর মত অনেক ঝামেলা চলছে। সেদিন দু’জনে অনেক রাত অবধি জেগে গল্প করল, গানও গাইল একসঙ্গে। তবে সৌমাভর একটা কথা ওকে নাড়া দিল। সৌমাভ বলল, ‘‘তোমার বয়স অনেক কম। আবেগে না ভেসে এ বারে কাউকে পছন্দ হলে ভেবেচিন্তে একটা বিয়ে করার কথা ভাব। আমি তোমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু হয়েই থাকব। কিন্তু তুমি তো জান, আমার পক্ষে আর কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। এমন নয় যে আমি ঈশিতার কাছে ফিরে যাব। আমি আর কাউকে স্ত্রী হিসেবে মানতেই পারব না। ও সুখী হোক, এটাই চাই। কিন্তু ছেলেমেয়েদের বড় করতে হবে তো আমাকেই। সুভদ্রাকেও ওর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সংসার ছেড়েও সংসারে জড়িয়ে গেছি, ভুল বুঝো না।’’

আর পারল না জয়তী। লোকটা কতটা সৎ এবং খাঁটি, সেটা ও আগেই বুঝেছে। লোকটার দায়িত্ববোধও নিজে দেখেছে। সবচেয়ে বেশি ভাল যাকে বেসেছিল, যাকে সবচেয়ে বেশি কাছে টানতে চেয়েছিল, তার কাছ থেকেই দিনের পর দিন উপেক্ষা এবং শেষে অতবড় প্রতারণার আঘাত নীরবে সহ্য করেও সব দিকে খেয়াল রেখে চলেছে। এবং সবটাই জয়তীর চেয়ে বেশি কেউ জানে না। তা ছাড়া জয়তীর ব্যাপারে যা করেছে, তাতে ওর কাছে কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। প্রচন্ড আবেগে সৌমাভকে বুকে টেনে বিছানায় ফেলে ওর উপরে উঠে বলল, ‘‘তোমার সব কথা রাখার চেষ্টা করব। বিয়ে কাউকে করব কি না, জানি না। করলেও তোমার মত ছাড়া করব না। আর একটা কথা, আমাকে ভুলে যেও না প্লিজ’’, বলে কেঁদে ফেলল। সৌমাভ ওকে অনেক আদর করে শান্ত করে শুতে পাঠাল।

ডিসেম্বরের ২৪ তারিখে কলকাতায় ফিরল জয়তী। এই ক’দিনে ও সুভদ্রাকে অনেকটা এগিয়ে দিতে পেরেছে। মেয়েটাও যেন কিসের তাগিদে জীবন বাজি রেখে প্রায় পড়াশোনা করতে মরিয়া। কলকাতায় ফিরে অফিসের একজনকে ফোন করে নতুন বাড়ির খোঁজ নিতে গিয়ে জানল, বাড়ি মিলেছে, অফিসের থেকে দূরেও নয়। ও যে কোনও দিন শিফট করতে পারে। জয়তী ঠিক করল, দেরি করবে না। তখনই একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি গিয়ে নিজের যেটুকু মালপত্র ছিল নিয়ে নতুন বাড়িতে চলে এল। ঠিক করল, পরের ক’দিনে সংসার গুছিয়ে নেবে।

পরের দু’মাসে নিজের সংসার গোছানো, ফ্ল্যাটে বাড়তি সিকিউরিটি হিসেবে কোলাপসিবল লাগানো, ডাবল ইয়েল লক লাগানোর বুদ্ধিটা ওকে সৌমাভই দিয়েছিল। সেই সঙ্গে একটা আইহোলও লাগাল। যোগাযোগ করে বারিপদার ফ্ল্যাট থেকে নিজের সেই খাট এবং অন্যান্য আসবাব এনে সব সাজিয়ে ফেলল। এদিকে নতুন অফিস, চাপও প্রচুর। তা ছাড়া ও আগে কখনও চাকরি করেনি। তাই সৌমাভর সঙ্গে রোজ কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শিখতে লাগল। সৌমাভর কথা অফিসের লোকেদের তাড়া দিয়ে বাড়িতে ফোনের কানেকশনও পেয়ে গেল ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে। এর মাঝে জানুয়ারিতে দু’দিনের জন্য ভদ্রায় গেছিল জয়তী। তবে এবারে ওর টিকিট কেটে পাঠিয়েছিল সৌমাভ। ফোন করে কারণ জানতে চাইলে বলেছিল, ‘‘এখন সংসার গোছাতে হবে, তোমার অনেক কাজ। টাকা নষ্ট করো না।’’ জয়তী বুঝেছিল, লোকটার দায়িত্ববোধ কত প্রবল।
[+] 11 users Like Choton's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: তার ছিঁড়ে গেছে কবে - by Choton - 07-05-2025, 03:24 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)