07-05-2025, 03:19 AM
(৩০)
এবার ভাসিয়ে দিতে হবে
সৌমাভর মুখে সব শুনে প্রায় আল্হাদে আটখানা হয়ে গেল জয়তী। ও স্থান-কাল ভুলে সৌমাভকে পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে লজ্জা পেয়ে গেল। তার পর একটু সামলে নিয়ে বলল, এবার বলো, কী করব? সৌমাভ বলল, ‘‘চলো একসঙ্গেই বেরোই। তমি ডিএম অফিসে যাও, আমি প্লেনের টিকিটটা দেখি। তার আগে একটা কথা তোমাকে বলি। তুমি কলকাতায় চলে যাবে। এ বারে তোমার সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের চাকরি হয়ে যাওয়ায় হয়তো তোমার মা-বাবাও আগের মনোভাব বদলে তোমাকে আবার সংসারে থাকতে বলবেন। না হলেও নিজের শহরেই নিজের মতো ফ্ল্যাট বা বাসা ভাড়া করে থাকতে পারবে। কিন্তু সুভদ্রার কী হবে? দেখো, আমি এবারে স্বার্থপরের মতো নিজের কথা বলি। কলকাতা ছাড়ার পরে এখানে এসে অবধি সুভদ্রাই ওদের মায়ের কাজটা করছে, মায়ের যত্নে রেখেছে। ওরাও দুই ভাইবোন ওর কাছেই বেশি থাকছে, সবই করছে। আমি যদি ওকে আমার সঙ্গে ভদ্রায় নিয়ে যাই, তোমার আপত্তি আছে? আমার কাছে লুকিয়ো না, মনের কথা বলো। আর আমি ওকে অযত্নে রাখব না, নিজের ছেলেমেয়ের সঙ্গেই বড় করব, পড়াশোনাও শেখাব। ভয় নেই, আমি রেপিস্ট নই। ওর কোনও ক্ষতি করব না, এটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো।’’
সৌমাভর কথাটা শেষ হল না, জয়তী ওর মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, ‘‘তুমি কেমন, তা আমাকে বোঝাতে এসো না। তুমি যে রেপিস্ট নও, বিকৃত মানসিকতার নও, তুমি যে কাউকে ঠকাতে পারো না, সেটা গত তিনদিনে বুঝে গেছি। সুভদ্রার কথাটা বলে তুমি আমাকেও অনেকটা ভারমুক্ত করলে। কলকাতার বাড়িতে ফিরলেও আমার বাবা-মা ওকে মেনে নেবেন না। তখন বিপদে পড়বে ওই মেয়েটাই। বরং ও তোমার কাছে ভাল থাকবে। কুট্টি-মুট্টিও ওর খাছে ভাল থাকবে। তুমি নিশ্চিন্তে অফিসের কাজ করতে পারবে, ছেলেমেয়েকে নিয়ে চিন্তায় নিজের কাজের ক্ষতি করবে না। আমি আজ ওকে বুঝিয়ে বলব, মনে হয় ও রাজি হবে। ওরও মায়া পড়ে গেছে কুট্টি-মুট্টির উপরে।’’ এই সব কথা বলতে বলতেই দু’জনে রেডি হয়ে বাইরে এসে একটা রিক্সা নিল। ডিএম অফিস যেতে অন্তত মিনিট দশেক লাগবে। কাছেই একটা ট্রাভেলের অফিসও আছে। সেটা গত কালই সৌমাভ দেখে নিয়েছে।
ডিএম অফিসে পৌঁছে নামার আগে সৌমাভ ওকে বলল, ‘‘ফ্যাক্সের কথাটা জেনে সেটার কপি সঙ্গে করে তবে বেরোবে। আমি টিকিটটা দেখছি। মিনিট কুড়ি পরে একসঙ্গে তিনটে টিকিট কাটল ব্যাঙ্গালোরের। আরও দু’দিন পরের টিকিট পেল। তার মানে পরশুই ভুবনেশ্বরে চলে যেতে হবে। ব্যাঙ্গালোর থেকে ভদ্রা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। ও ঠিক করল, নেমে একটা গাড়ি ভাড়া করবে। ট্রাভেল অফিসটায় রিকোয়েস্ট করতে তাঁরা পরশু সকালে বারিপদা থেকে ভুবনেশ্বর অবধি একটা গাড়ি ভাড়া দিতে রাজি হল। সামান্য কিছু এডভান্স করতে হল তার জন্য।
টিকিট কেটে বেরিয়ে দেখল জয়তীর মুখের হাসিটা আরও চওড়া। হাতে এক টুকরো কাগজ। দেখিয়ে বলল, ‘‘ওরা এরকম ফ্যাক্স পেয়ে অবাক হয়ে গেছে! ভাবছে মহিলার খুব ক্ষমতা। ওরা তো সত্যিটা জানে না। যাক তোমার কী হল?টিকিট পেলে?’’ সৌমাভ জানাল, পরশুর পরের দিন ওদের ফ্লাইট, ও পরশু ভুবনেশ্বরে চলে যাবে, সেখান থেকেই পরের দিন ভোরের ফ্লাইট। গাড়িভাড়ার কথাটাও বলল। এই বারে জয়তীর মুখের সমস্ত হাসি যেন কেউ কেড়ে নিল। মুহূর্তের মধ্যে চোখটা জলে টলটল করে উঠল। সৌমাভ বুঝল, তার পর নিচু গলায় বলল, বাড়ি চলো, ওখানে কথা হবে। এখানে রাস্তার মধ্যে কাঁদলে লোকে হাসবে।
জয়তী কথা না বাড়িয়ে আবার একটা রিক্সায় উঠে সৌমাভর হাতটা জড়িয়ে বসে রইল চুপচাপ। সৌমাভ বুঝেও কিছু বলল না। বাড়ি ফিরে বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরাল। জয়তী ঘরে ঢুকল শাড়ি বদলাতে। সব সেরে ম্যাক্সি পরে দুকাপ চা নিয়ে এসে পাশে বসে বলল, ‘‘তুমি পরশু চলে যাবে, কুট্টি-মুট্টি এমনকি সুভদ্রাও। আমি একদম একা হয়ে যাব’’, বলেই কেঁদে ফেলল ঝরঝর করে। সৌমাভর ওকে কাঁদতে দিল। ও বুঝতে পারছে, জয়তীর মধ্যে একটা ঝড় উঠেছে। কিন্তু ওর কিছু করার নেই। ও কিছুক্ষণ পরে জয়তীর মুখটা তুলে বলল, ‘‘পরশু তুমিও যাবে আমাদের সঙ্গে ভুবনেশ্বরে। সেখান থেকে ট্রেনে বা বাসে কলকাতা ফিরবে। আপাতত কিছু জিনিস-ডকুমেন্ট নিয়ে যাও। পরে কাউকে নিয়ে এসে এখান থেকে সব নিয়ে যেও। আজ রাতে বা কাল সকালে বাবা-মাকে জানিয়ে দাও। তাঁরাও খুশি হবেন।’’ এই প্রস্তাবটা মনে ধরল জয়তীর। ও সৌমাভকে আদর করে বলল, ‘‘তাই করব। তুমি সবদিক থেকেই আমার লাইটহাউস।’’ বলে সৌমাভর কাঁধে মাথা রেখে বলল, ‘‘আমার কথাগুলো শোনো। ভুল বললে ঠিক করে দেবে। কাল সকালে আমি সুভদ্রাকে সবটা বলব, মনে হয় না আপত্তি করবে। তার পরে দেখছি কী করা যায়। আর তোমার জিনিসপত্র, ওর জিনিসপত্র কাল দুপুরে আমি সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে গোছাব। আমার নিজের গোছগাছ খুব কিছু নেই। কিছু গয়না, জামা-শাড়ি আর ডকুমেন্ট, ব্যাঙ্কের বই, পলিসির কাগজ— এই সব। ফলে ওটায় বেশি সময় লাগবে না। জয়ন্তর জামাকাপড় এখানে কোনও আশ্রমে দিয়ে দেব। আর এই সব আসবাবের মধ্যে শুধু আমার ঘরের খাটবিছানা আমি কলকাতায় নিয়ে যাব। এটা একেবারে আমার নিজের, জয়ন্ত এতে কোনওদিন শোয়ওনি। বাকি বেশিরভাগই তোমাদের অফিস থেকে দেওয়া, সেগুলো ওদের নিয়ে যেতে বলে দেব। তুমি চিঠিটা ড্রাফট করে দিও, আমি সই করে দেব। ফলে আমার লাগেজ বলতে একটা বড় সুটকেস আর বড়জোর দুটো বড়ব্যাগ হবে। বাকি শাড়ি এবং অন্যান্য যা আছে দিয়ে দেব। কিছু সুভদ্রাকেও দেব। আর ওর নিজস্ব যা কিছু লাগবে, সে সব কাল আমি সুভদ্রাকে কিনে দেব। আর একটা কথা, আমি কলকাতায় জয়েন করে একটু কাজ বুঝেই কিন্তু মাসে অন্তত একবার ভদ্রায় যাব। তোমাদের সংসারটা একটু গুছিয়ে দেব, আমার কাজ নিয়ে জেনে নেব। তোমার থেকে ভাল মাস্টার পাব না আমি।’’ বলে হেসে ফেলে আবার বলল, ‘‘তোমার ওখানকার ঠিকানা-ফোন নম্বর কলকাতা অফিসে আমার নামে চিঠি লিখে পাঠাবে। মনে থাকবে?’’ জয়ন্ত একমনে শুনতে শুনতে বলল, ‘‘একদম ঠিকঠাক প্ল্যান। পরশু খেয়েদেয়ে বেরোব, তা হলে ভুবনেশ্বর ঢুকতে বেশি রাত হবে না। রাতে বিশ্রামও হবে সবার।’’ তার পরেই ঝট করে হাতটা বের করে উঠে বলল, ‘‘ওই ট্রাভেল অফিসটা দেখি খোলা কি না, তা হলে তোমার টিকিটটা যদি ওরা কালই করে দেয়, তা হলে চিন্তা থাকবে না। আমরা ভোরে প্লেন ধরব, তার এক-দেড় ঘন্টার মধ্যে তুমি ট্রেনে চেপে বসবে। আমি এখনই তোমাকে হাজরা অফিসের নম্বর দিয়ে দিচ্ছি, তুমি বরং তোমার বাড়ির নম্বরটা আমাকে দাও। আমি ওখানে পৌঁছে সুভদ্রাকে দিয়ে ফোন করাব। তা হলে সব দিক সামলানো যাবে।’’ বলেই উঠে ফোনটা নিয়ে পড়ল। জয়তী এই ফাঁকে ওর বাড়ির নম্বরটা লিখে দিল একটা কাগজে। ফোনে কথা বলতে বলতেই সৌমাভও কলকাতা অফিসের নম্বর ওকে লিখে দিল। ফোন রেখে হাসিমুখে জয়তীকে বলল, ‘‘ওরা কাল দেখবে, ফার্স্টক্লাসে যদি হয় সবচেয়ে ভাল।’’
এবার ভাসিয়ে দিতে হবে
সৌমাভর মুখে সব শুনে প্রায় আল্হাদে আটখানা হয়ে গেল জয়তী। ও স্থান-কাল ভুলে সৌমাভকে পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে লজ্জা পেয়ে গেল। তার পর একটু সামলে নিয়ে বলল, এবার বলো, কী করব? সৌমাভ বলল, ‘‘চলো একসঙ্গেই বেরোই। তমি ডিএম অফিসে যাও, আমি প্লেনের টিকিটটা দেখি। তার আগে একটা কথা তোমাকে বলি। তুমি কলকাতায় চলে যাবে। এ বারে তোমার সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের চাকরি হয়ে যাওয়ায় হয়তো তোমার মা-বাবাও আগের মনোভাব বদলে তোমাকে আবার সংসারে থাকতে বলবেন। না হলেও নিজের শহরেই নিজের মতো ফ্ল্যাট বা বাসা ভাড়া করে থাকতে পারবে। কিন্তু সুভদ্রার কী হবে? দেখো, আমি এবারে স্বার্থপরের মতো নিজের কথা বলি। কলকাতা ছাড়ার পরে এখানে এসে অবধি সুভদ্রাই ওদের মায়ের কাজটা করছে, মায়ের যত্নে রেখেছে। ওরাও দুই ভাইবোন ওর কাছেই বেশি থাকছে, সবই করছে। আমি যদি ওকে আমার সঙ্গে ভদ্রায় নিয়ে যাই, তোমার আপত্তি আছে? আমার কাছে লুকিয়ো না, মনের কথা বলো। আর আমি ওকে অযত্নে রাখব না, নিজের ছেলেমেয়ের সঙ্গেই বড় করব, পড়াশোনাও শেখাব। ভয় নেই, আমি রেপিস্ট নই। ওর কোনও ক্ষতি করব না, এটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো।’’
সৌমাভর কথাটা শেষ হল না, জয়তী ওর মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, ‘‘তুমি কেমন, তা আমাকে বোঝাতে এসো না। তুমি যে রেপিস্ট নও, বিকৃত মানসিকতার নও, তুমি যে কাউকে ঠকাতে পারো না, সেটা গত তিনদিনে বুঝে গেছি। সুভদ্রার কথাটা বলে তুমি আমাকেও অনেকটা ভারমুক্ত করলে। কলকাতার বাড়িতে ফিরলেও আমার বাবা-মা ওকে মেনে নেবেন না। তখন বিপদে পড়বে ওই মেয়েটাই। বরং ও তোমার কাছে ভাল থাকবে। কুট্টি-মুট্টিও ওর খাছে ভাল থাকবে। তুমি নিশ্চিন্তে অফিসের কাজ করতে পারবে, ছেলেমেয়েকে নিয়ে চিন্তায় নিজের কাজের ক্ষতি করবে না। আমি আজ ওকে বুঝিয়ে বলব, মনে হয় ও রাজি হবে। ওরও মায়া পড়ে গেছে কুট্টি-মুট্টির উপরে।’’ এই সব কথা বলতে বলতেই দু’জনে রেডি হয়ে বাইরে এসে একটা রিক্সা নিল। ডিএম অফিস যেতে অন্তত মিনিট দশেক লাগবে। কাছেই একটা ট্রাভেলের অফিসও আছে। সেটা গত কালই সৌমাভ দেখে নিয়েছে।
ডিএম অফিসে পৌঁছে নামার আগে সৌমাভ ওকে বলল, ‘‘ফ্যাক্সের কথাটা জেনে সেটার কপি সঙ্গে করে তবে বেরোবে। আমি টিকিটটা দেখছি। মিনিট কুড়ি পরে একসঙ্গে তিনটে টিকিট কাটল ব্যাঙ্গালোরের। আরও দু’দিন পরের টিকিট পেল। তার মানে পরশুই ভুবনেশ্বরে চলে যেতে হবে। ব্যাঙ্গালোর থেকে ভদ্রা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। ও ঠিক করল, নেমে একটা গাড়ি ভাড়া করবে। ট্রাভেল অফিসটায় রিকোয়েস্ট করতে তাঁরা পরশু সকালে বারিপদা থেকে ভুবনেশ্বর অবধি একটা গাড়ি ভাড়া দিতে রাজি হল। সামান্য কিছু এডভান্স করতে হল তার জন্য।
টিকিট কেটে বেরিয়ে দেখল জয়তীর মুখের হাসিটা আরও চওড়া। হাতে এক টুকরো কাগজ। দেখিয়ে বলল, ‘‘ওরা এরকম ফ্যাক্স পেয়ে অবাক হয়ে গেছে! ভাবছে মহিলার খুব ক্ষমতা। ওরা তো সত্যিটা জানে না। যাক তোমার কী হল?টিকিট পেলে?’’ সৌমাভ জানাল, পরশুর পরের দিন ওদের ফ্লাইট, ও পরশু ভুবনেশ্বরে চলে যাবে, সেখান থেকেই পরের দিন ভোরের ফ্লাইট। গাড়িভাড়ার কথাটাও বলল। এই বারে জয়তীর মুখের সমস্ত হাসি যেন কেউ কেড়ে নিল। মুহূর্তের মধ্যে চোখটা জলে টলটল করে উঠল। সৌমাভ বুঝল, তার পর নিচু গলায় বলল, বাড়ি চলো, ওখানে কথা হবে। এখানে রাস্তার মধ্যে কাঁদলে লোকে হাসবে।
জয়তী কথা না বাড়িয়ে আবার একটা রিক্সায় উঠে সৌমাভর হাতটা জড়িয়ে বসে রইল চুপচাপ। সৌমাভ বুঝেও কিছু বলল না। বাড়ি ফিরে বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরাল। জয়তী ঘরে ঢুকল শাড়ি বদলাতে। সব সেরে ম্যাক্সি পরে দুকাপ চা নিয়ে এসে পাশে বসে বলল, ‘‘তুমি পরশু চলে যাবে, কুট্টি-মুট্টি এমনকি সুভদ্রাও। আমি একদম একা হয়ে যাব’’, বলেই কেঁদে ফেলল ঝরঝর করে। সৌমাভর ওকে কাঁদতে দিল। ও বুঝতে পারছে, জয়তীর মধ্যে একটা ঝড় উঠেছে। কিন্তু ওর কিছু করার নেই। ও কিছুক্ষণ পরে জয়তীর মুখটা তুলে বলল, ‘‘পরশু তুমিও যাবে আমাদের সঙ্গে ভুবনেশ্বরে। সেখান থেকে ট্রেনে বা বাসে কলকাতা ফিরবে। আপাতত কিছু জিনিস-ডকুমেন্ট নিয়ে যাও। পরে কাউকে নিয়ে এসে এখান থেকে সব নিয়ে যেও। আজ রাতে বা কাল সকালে বাবা-মাকে জানিয়ে দাও। তাঁরাও খুশি হবেন।’’ এই প্রস্তাবটা মনে ধরল জয়তীর। ও সৌমাভকে আদর করে বলল, ‘‘তাই করব। তুমি সবদিক থেকেই আমার লাইটহাউস।’’ বলে সৌমাভর কাঁধে মাথা রেখে বলল, ‘‘আমার কথাগুলো শোনো। ভুল বললে ঠিক করে দেবে। কাল সকালে আমি সুভদ্রাকে সবটা বলব, মনে হয় না আপত্তি করবে। তার পরে দেখছি কী করা যায়। আর তোমার জিনিসপত্র, ওর জিনিসপত্র কাল দুপুরে আমি সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে গোছাব। আমার নিজের গোছগাছ খুব কিছু নেই। কিছু গয়না, জামা-শাড়ি আর ডকুমেন্ট, ব্যাঙ্কের বই, পলিসির কাগজ— এই সব। ফলে ওটায় বেশি সময় লাগবে না। জয়ন্তর জামাকাপড় এখানে কোনও আশ্রমে দিয়ে দেব। আর এই সব আসবাবের মধ্যে শুধু আমার ঘরের খাটবিছানা আমি কলকাতায় নিয়ে যাব। এটা একেবারে আমার নিজের, জয়ন্ত এতে কোনওদিন শোয়ওনি। বাকি বেশিরভাগই তোমাদের অফিস থেকে দেওয়া, সেগুলো ওদের নিয়ে যেতে বলে দেব। তুমি চিঠিটা ড্রাফট করে দিও, আমি সই করে দেব। ফলে আমার লাগেজ বলতে একটা বড় সুটকেস আর বড়জোর দুটো বড়ব্যাগ হবে। বাকি শাড়ি এবং অন্যান্য যা আছে দিয়ে দেব। কিছু সুভদ্রাকেও দেব। আর ওর নিজস্ব যা কিছু লাগবে, সে সব কাল আমি সুভদ্রাকে কিনে দেব। আর একটা কথা, আমি কলকাতায় জয়েন করে একটু কাজ বুঝেই কিন্তু মাসে অন্তত একবার ভদ্রায় যাব। তোমাদের সংসারটা একটু গুছিয়ে দেব, আমার কাজ নিয়ে জেনে নেব। তোমার থেকে ভাল মাস্টার পাব না আমি।’’ বলে হেসে ফেলে আবার বলল, ‘‘তোমার ওখানকার ঠিকানা-ফোন নম্বর কলকাতা অফিসে আমার নামে চিঠি লিখে পাঠাবে। মনে থাকবে?’’ জয়ন্ত একমনে শুনতে শুনতে বলল, ‘‘একদম ঠিকঠাক প্ল্যান। পরশু খেয়েদেয়ে বেরোব, তা হলে ভুবনেশ্বর ঢুকতে বেশি রাত হবে না। রাতে বিশ্রামও হবে সবার।’’ তার পরেই ঝট করে হাতটা বের করে উঠে বলল, ‘‘ওই ট্রাভেল অফিসটা দেখি খোলা কি না, তা হলে তোমার টিকিটটা যদি ওরা কালই করে দেয়, তা হলে চিন্তা থাকবে না। আমরা ভোরে প্লেন ধরব, তার এক-দেড় ঘন্টার মধ্যে তুমি ট্রেনে চেপে বসবে। আমি এখনই তোমাকে হাজরা অফিসের নম্বর দিয়ে দিচ্ছি, তুমি বরং তোমার বাড়ির নম্বরটা আমাকে দাও। আমি ওখানে পৌঁছে সুভদ্রাকে দিয়ে ফোন করাব। তা হলে সব দিক সামলানো যাবে।’’ বলেই উঠে ফোনটা নিয়ে পড়ল। জয়তী এই ফাঁকে ওর বাড়ির নম্বরটা লিখে দিল একটা কাগজে। ফোনে কথা বলতে বলতেই সৌমাভও কলকাতা অফিসের নম্বর ওকে লিখে দিল। ফোন রেখে হাসিমুখে জয়তীকে বলল, ‘‘ওরা কাল দেখবে, ফার্স্টক্লাসে যদি হয় সবচেয়ে ভাল।’’


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)