06-05-2025, 03:32 AM
(২৯)
নিভৃত প্রাণের দেবতা
ঘন্টাদুয়েক পরে জয়তী ফিরল, হাসিমুখেই। ঢুকেই সুভদ্রাকে বলল, বাচ্চাদুটোকে খাইয়ে তুইও খেয়ে নে। আমি একটু পরে খাব, কেমন? বলে সৌমাভর হাতে চিঠিটা দিয়ে প্রণাম করতে যেতেই সৌমাভ ওর হাত ধরে বলল, একি করছ? জয়তী একটুও দ্বিধা না করে বলল, ‘‘তোমার জন্য এত তাড়াতাড়ি কাজটা পেলাম। এই প্রণামটা তোমার প্রাপ্য।’’ তবু সৌমাভ ওকে প্রণাম করতে দিল না। তার পর খাবার টেবিলেই চিঠিটা নিয়ে দু’জনে আলোচনায় বসল। সুভদ্রা যতক্ষণ খেল, ততক্ষণ দুই খুদের একজন সৌমাভর কোলে, একজন জয়তীর কোলে রইল। চিঠিটা ভাল করে পড়ে সৌমাভ বলল, ‘‘তোমাকে খুব দ্রুত জয়েন করতে বলেছে। মনে হচ্ছে, অন্তত তিন বছর এখানে কাজ করতে হবে। তবে মাইনের যা স্কেল, তা জয়ন্তর প্রায় অর্ধেক। তবে একার পক্ষে খারাপ না। তিন বছর পরে সাধারণত ট্রান্সফার হয়। সেটা আমি দেখছি, যদি তোমাকে খুব তাড়াতাড়িই কলকাতায় ফেরানো যায়। কারণ, যতই হোক, ওটা তোমার নিজের শহর। এখানে একা থাকার তুলনায় ওখানে থাকা তোমার পক্ষে নিরাপদ। বিষয়গুলো আবেগের নয়, যুক্তির। আর একটা জিনিস, এটা এখানকার অফিস তোমায় জয়েন করার পরপরই জানিয়ে দেবে, এই বাড়িটা জয়ন্তর নামে অ্যালট ছিল। জয়েন করার পরেই এটা কিন্তু তোমায় ছেড়ে দিতে হবে। এখানে যতদিন চাকরি করবে, কোনও মেস বা বাসাবাড়ী নিয়ে থাকতে হবে। কলকাতায় গেলে নিজের মতো থাকতে পারবে। আর সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার, তোমাকে একটা অন্তত প্রোমোশন পেতে হবে ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা দিয়ে। সেটা পাশ করতে না পারলে কিন্তু পাতি কেরানির দিন কাটাতে হবে।’’
মন দিয়ে সৌমাভর কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে জয়তী বলল, ‘‘আমাকে তো বলেছে, ৩১ ডিসেম্বর অবধি এই বাড়িতে থাকতে পারব। আর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই জয়েন করলে ভাল। তুমি বলো, কী করব?’’ সৌমাভ বলল, দ্রুত জয়েন করে যাও। কিন্তু বাড়িটা পারলে ৮-১০ তারিখের মধ্যে ছেড়ে দাও। তা হলে ডিপার্টমেন্টের লোকেরা অন্তত এটা প্রথম থেকেই বুঝবে, যে তুমি অকারণ সুযোগ নাও না। তুমি চাইলে সরকারের কাছে আবেদন করে আরও ৬ মাস এই বাড়িতে থাকতেই পারো, কিন্তু সেটা সুযোগ নিচ্ছ বলে মনে করবে ডিপার্টমেন্ট। তোমার সম্মান নষ্ট হবে। ফলে যা করার তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেবে।’’ জয়তী বুঝল, নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হওয়ায় সৌমাভ এই বিষয়গুলো কত ভাল বোঝে এবং যা বলল, সবই ওর ভালর কথা ভেবেই বলল। সৌমাভর উপরে ওর শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। ও বলল, ‘‘ঠিক আছে, তাই করব। আপাতত কোনও মেসে থাকব, তার পর বাড়ি দেখব না হয়।’’ জয়ন্ত কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে উঠে গিয়ে দিল্লিতে একটা ফোন করল। তবে এ বার মাথুর স্যারকে নয়, জয়রাজন স্যারকে। জয়তীর সমস্যাটা খুলে বলে অনুরোধ করল, যাতে ওকে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কলকাতায় হাজরা অফিসে ট্রান্সফার করানো যায়, ওখানে বেশ কয়েকটা পোস্ট খালি আছে। জয়রাজন ওকে বললেন, ‘‘তুই চারটে নাগাদ একটা ফোন কর। দেখছি।’’ এই সব কথার ফাঁকেই ওদের কোলে থাকা দুই খুদের মুখে সুভদ্রা দুধের বোতল গুঁজে দিল। ওদের খাওয়া হতে হতেই ওর নিজেরও খাওয়া শেষ হলে টেবিল গুছিয়ে ওদের কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে গেল।
ফোনটা রেখে সৌমাভ জয়তীকে বলল, ‘‘চট করে স্নান খাওয়া সেরে নিতে হবে। আমি চারটে নাগাদ দিল্লিতে ফোন করি, তার পরে দেখছি। এদিকে আমাকে আর এক-দু দিনের মধ্যে ভদ্রায় যেতে হবে। কাল গিয়ে টিকিট কাটতেই হবে। ফলে আজ অনেক কাজ।’’ স্নান-খাওয়া সেরে বসার ঘরের সোফাতেই জয়তীর পাশে বসল সৌমাভ। তার পর বলল, ৪টে নাগাদ ফোন করে যদি কাজটা হয়, তার পর তোমাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিতে হবে। জয়তীও মাথা নাড়ল। আগে কখনও চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকায় ও জানে, এখন এই সব কথাগুলো শুনে রাখলে পরে সমস্যা কম হবে বা হবেই না হয়তো।
চারটে নাগাদ জয়রাজনকে ফোন করে অবাক হয়ে গেল সৌমাভ নিজেও। জয়তীর সমস্যা বুঝে ওকে সরাসরি কলকাতা অফিসে জয়েন করার ব্যবস্থা তিনি করে ফেলেছেন বলে জানালেন। সেই মতো চিঠি আজই ফ্যাক্স করে দেওয়া হয়েছে ডিএম অফিসে। পয়লা জানুয়ারি থেকে জয়তীকে কলকাতায় জয়েন করতে হবে। সিসিএ (সিটি কম্পেনসেটারি অ্যালায়েন্স) বাবদ মাইনেও কিছুটা বেশি পাবে ও। বলে সৌমাভকে দ্রুত ভদ্রায় জয়েনের কথাটা মনে করিয়ে ফোন রাখলেন তিনি।
নিভৃত প্রাণের দেবতা
ঘন্টাদুয়েক পরে জয়তী ফিরল, হাসিমুখেই। ঢুকেই সুভদ্রাকে বলল, বাচ্চাদুটোকে খাইয়ে তুইও খেয়ে নে। আমি একটু পরে খাব, কেমন? বলে সৌমাভর হাতে চিঠিটা দিয়ে প্রণাম করতে যেতেই সৌমাভ ওর হাত ধরে বলল, একি করছ? জয়তী একটুও দ্বিধা না করে বলল, ‘‘তোমার জন্য এত তাড়াতাড়ি কাজটা পেলাম। এই প্রণামটা তোমার প্রাপ্য।’’ তবু সৌমাভ ওকে প্রণাম করতে দিল না। তার পর খাবার টেবিলেই চিঠিটা নিয়ে দু’জনে আলোচনায় বসল। সুভদ্রা যতক্ষণ খেল, ততক্ষণ দুই খুদের একজন সৌমাভর কোলে, একজন জয়তীর কোলে রইল। চিঠিটা ভাল করে পড়ে সৌমাভ বলল, ‘‘তোমাকে খুব দ্রুত জয়েন করতে বলেছে। মনে হচ্ছে, অন্তত তিন বছর এখানে কাজ করতে হবে। তবে মাইনের যা স্কেল, তা জয়ন্তর প্রায় অর্ধেক। তবে একার পক্ষে খারাপ না। তিন বছর পরে সাধারণত ট্রান্সফার হয়। সেটা আমি দেখছি, যদি তোমাকে খুব তাড়াতাড়িই কলকাতায় ফেরানো যায়। কারণ, যতই হোক, ওটা তোমার নিজের শহর। এখানে একা থাকার তুলনায় ওখানে থাকা তোমার পক্ষে নিরাপদ। বিষয়গুলো আবেগের নয়, যুক্তির। আর একটা জিনিস, এটা এখানকার অফিস তোমায় জয়েন করার পরপরই জানিয়ে দেবে, এই বাড়িটা জয়ন্তর নামে অ্যালট ছিল। জয়েন করার পরেই এটা কিন্তু তোমায় ছেড়ে দিতে হবে। এখানে যতদিন চাকরি করবে, কোনও মেস বা বাসাবাড়ী নিয়ে থাকতে হবে। কলকাতায় গেলে নিজের মতো থাকতে পারবে। আর সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার, তোমাকে একটা অন্তত প্রোমোশন পেতে হবে ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা দিয়ে। সেটা পাশ করতে না পারলে কিন্তু পাতি কেরানির দিন কাটাতে হবে।’’
মন দিয়ে সৌমাভর কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে জয়তী বলল, ‘‘আমাকে তো বলেছে, ৩১ ডিসেম্বর অবধি এই বাড়িতে থাকতে পারব। আর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই জয়েন করলে ভাল। তুমি বলো, কী করব?’’ সৌমাভ বলল, দ্রুত জয়েন করে যাও। কিন্তু বাড়িটা পারলে ৮-১০ তারিখের মধ্যে ছেড়ে দাও। তা হলে ডিপার্টমেন্টের লোকেরা অন্তত এটা প্রথম থেকেই বুঝবে, যে তুমি অকারণ সুযোগ নাও না। তুমি চাইলে সরকারের কাছে আবেদন করে আরও ৬ মাস এই বাড়িতে থাকতেই পারো, কিন্তু সেটা সুযোগ নিচ্ছ বলে মনে করবে ডিপার্টমেন্ট। তোমার সম্মান নষ্ট হবে। ফলে যা করার তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেবে।’’ জয়তী বুঝল, নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হওয়ায় সৌমাভ এই বিষয়গুলো কত ভাল বোঝে এবং যা বলল, সবই ওর ভালর কথা ভেবেই বলল। সৌমাভর উপরে ওর শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। ও বলল, ‘‘ঠিক আছে, তাই করব। আপাতত কোনও মেসে থাকব, তার পর বাড়ি দেখব না হয়।’’ জয়ন্ত কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে উঠে গিয়ে দিল্লিতে একটা ফোন করল। তবে এ বার মাথুর স্যারকে নয়, জয়রাজন স্যারকে। জয়তীর সমস্যাটা খুলে বলে অনুরোধ করল, যাতে ওকে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কলকাতায় হাজরা অফিসে ট্রান্সফার করানো যায়, ওখানে বেশ কয়েকটা পোস্ট খালি আছে। জয়রাজন ওকে বললেন, ‘‘তুই চারটে নাগাদ একটা ফোন কর। দেখছি।’’ এই সব কথার ফাঁকেই ওদের কোলে থাকা দুই খুদের মুখে সুভদ্রা দুধের বোতল গুঁজে দিল। ওদের খাওয়া হতে হতেই ওর নিজেরও খাওয়া শেষ হলে টেবিল গুছিয়ে ওদের কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে গেল।
ফোনটা রেখে সৌমাভ জয়তীকে বলল, ‘‘চট করে স্নান খাওয়া সেরে নিতে হবে। আমি চারটে নাগাদ দিল্লিতে ফোন করি, তার পরে দেখছি। এদিকে আমাকে আর এক-দু দিনের মধ্যে ভদ্রায় যেতে হবে। কাল গিয়ে টিকিট কাটতেই হবে। ফলে আজ অনেক কাজ।’’ স্নান-খাওয়া সেরে বসার ঘরের সোফাতেই জয়তীর পাশে বসল সৌমাভ। তার পর বলল, ৪টে নাগাদ ফোন করে যদি কাজটা হয়, তার পর তোমাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিতে হবে। জয়তীও মাথা নাড়ল। আগে কখনও চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকায় ও জানে, এখন এই সব কথাগুলো শুনে রাখলে পরে সমস্যা কম হবে বা হবেই না হয়তো।
চারটে নাগাদ জয়রাজনকে ফোন করে অবাক হয়ে গেল সৌমাভ নিজেও। জয়তীর সমস্যা বুঝে ওকে সরাসরি কলকাতা অফিসে জয়েন করার ব্যবস্থা তিনি করে ফেলেছেন বলে জানালেন। সেই মতো চিঠি আজই ফ্যাক্স করে দেওয়া হয়েছে ডিএম অফিসে। পয়লা জানুয়ারি থেকে জয়তীকে কলকাতায় জয়েন করতে হবে। সিসিএ (সিটি কম্পেনসেটারি অ্যালায়েন্স) বাবদ মাইনেও কিছুটা বেশি পাবে ও। বলে সৌমাভকে দ্রুত ভদ্রায় জয়েনের কথাটা মনে করিয়ে ফোন রাখলেন তিনি।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)