Thread Rating:
  • 178 Vote(s) - 2.83 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery স্বামীর কল্পনা স্ত্রীয়ের যন্ত্রণা
মানালী, আপনার লেখনী অসাধারণ। ইরোটিক স্টোরি দিয়ে মানুষকে হাসানো বা কাঁদানো যায়, তা এই প্রথম দেখলাম। আপনি আমাকে কাঁদিয়েছেন। হ্যাঁ, ঠিক বলছি। বিশেষ করে রাকিব যখন কাঁদতে কাঁদতে মল্লিক বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো সেই সময়ে নিজের অজান্তে আমার চোখ থেকে দু ফোটা জল বেরিয়েছিল। কারণ এই গল্পের কিছু অংশ আমার জীবনের সাথে মিলে গেছে। আমার জীবনের গল্পে আমিই রাকিব ছিলাম।

তখন আমি আইন বিভাগে স্নাতক করছি। দুচোখে অনেক স্বপ্ন যে একদিন একজন তুখোড় আইনজীবী হবো। ঠিক এই সময়ে আমার জীবনে এক "অনুরিমার" আবির্ভাব হয়। না, তার সমীর কাকোল্ড ছিল না। ছিল না সুচরিতার মতো বন্ধুর বেশধারী শত্রু, ছিল না কোনও আদিত্য বা রাজীব। তবে আমার অনুরিমার স্বামী ছিল অসম্ভব রকমের পজেসিভ আর এবিউসিভ। বয়সে আমি আর আমার অনুরিমা সমান হলেও উচ্চ মাধ্যমিকের পর পড়াশোনার ইতি টানতে হয়েছিলো বিয়ের পর। ভালো ছাত্রী হবার পরেও তার শ্বশুরবাড়ি তাঁকে আর পড়াশোনা করা এলাও করে নি। তাঁর সমীরের কাছে সে ছিল কেবলই তাঁর স্ত্রী আর তাঁর মেয়ের মা। তাঁকে কখনোই ভালবাসতে পারে নি। তাঁদের সম্পর্কটি কেবলই লোক দেখানো, স্রেফ সামাজিক বন্ধন।

কেউ একজন বলেছে যে সম্পর্কের ফাটল গলে রাকিবরা ঢুকে পড়ে। কথাটা কিঞ্চিৎ সত্য। অপর্ণার (আমার অনুরিমা) জীবনে আমার আবির্ভাব অনেকটা সেই ফাটল থেকেই হয়েছিলো। অসীম সুন্দরী অপর্ণার প্রতি আমার আকর্ষণ দৈহিক হলেও সেটা হৃদয় পর্যন্ত গড়ায়। অপর্ণা ফোনে প্রায়ই কাঁদত আমার কাছে আর তুলে ধরত ওর প্রতি ওর স্বামীর অবজ্ঞার কথা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা। অপর্ণাকে সে খুব সন্দেহ করতো কারণ আমাদের বাঙালি সমাজে, সেটা বাংলাদেশ হোক বা পশ্চিম বঙ্গ হোক, নারীর সৌন্দর্য তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু। অথচ অপর্ণা তাঁর স্বামীর প্রতি লয়াল ছিল।

অপর্ণার সাথে আমার সম্পর্ক শারীরিক পর্যায়ে পৌঁছায় এক বৃষ্টি ভেজা বিকেলে, অনেকটা আদিত্যের মতোই। আমি ছিলাম একেবারেই আনকোরা আর আমাকে হাসিমুখে সব শিখিয়ে নিয়েছিলো। আমিও আমার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিলাম ওকে তৃপ্তি দিতে। শেষে আমার বুকে সে মাথা গুঁজে বলেছিল "আমাকে কেউ এভাবে কখনো ভালোবেসে আদর করে নি। আমি সব ছেড়ে তোমার সাথে দূরে কোথাও চলে যেতে চাই"। বিশ্বাস করুন মানালী, আমিও প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু বাঁধ হয়ে দাঁড়ায় সমাজ ও ধর্ম। অপর্ণা একদিন আমায় জানায় যে সে সন্তানসম্ভবা আর ওর পেটে বেড়ে উঠছে আমাদের ভালোবাসার ফুল।

আমার বাবা, যিনি একজন অসম্ভব রকমের উদার মনের মানুষ ছিলেন, তাঁকে আমি বিষয়টি খুলে বলি। প্রদুত্তরে আব্বু বলেছিলেন "বাবা মেয়েটি ', ঘরের বউ। ধর্মের কথা বাদই দিলাম, কিন্তু সে বিবাহিত। তুই কি পারবি তোর ভালোবাসার জন্য একটি সংসারকে ভাঙতে? পারবি মেয়েটাকে মা ছাড়া করতে?" আমি বলেছিলাম "আব্বু ঐ বাচ্চাটিকে আমি নিজের সন্তানের মতো মানুষ করবো"। আব্বু হেঁসে প্রদুত্তরে বলেছিলেন "তাহলে চাইছিস মেয়েটিকে তাঁর জন্মদাতা বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে?" একটু থেমে বাবা বলেছিলেন "দেখ বাবা, ভালোবাসা পবিত্র জিনিস। একে অভিশাপের ছোবলে অপবিত্র করিস না। হ্যাঁ, একটি সংসার ভাঙলে অভিশাপ ছাড়া কিছুই জোটে না"।

হেরে যাচ্ছিলাম এই সমাজের কাছে, ধর্মের দায়বদ্ধতার কাছে। মানতে না পেরে ছুটে গিয়েছিলাম অপর্ণার বাড়ি। না, ওর শাশুড়ি আমাকে '. বলে তাড়িয়ে দেন নি। চা-নাশতা খাইয়ে বিদায় করেছিলেন। আমি ওর বাড়ি থেকে বের হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বহুবার কল দিয়েছি, কিন্তু অপর্ণা আর ফোন ধরে নি। কিছুক্ষন পর আমার কাছে ওর থেকে একটি এসএমএস আসে ইমন চক্রবর্তীর সেই গানের কিছু পঙক্তিঃ

"কথার ওপর কেবল কথা
সিলিং ছুঁতে চায়
নিজের মুখের আয়না আদল
লাগছে অসহায়
তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান"

অপর্ণা আর আমার ফোন ধরে নি। হয়তো আমার নম্বর ব্লক করে দিয়েছিলো। মনে হচ্ছিল দৌড়ে গিয়ে ওর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সবাইকে সবকিছু বলে দিয়ে ওর হাত ধরে ওকে নিয়ে বের হয়ে যাই। কিন্তু ঐ যে সমাজ...... ধর্ম...

দেখতে দেখতে ১ দশকের বেশী পার হয়ে গেছে। শুনেছি অপর্ণা তাঁর স্বামীর সাথে আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। ওর একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়েছিলো, হ্যাঁ, অপর্ণা আর আমার সন্তান। ওর মুখ কখনোই দেখি নি আমি। আজ আমি একজন প্রতিষ্ঠিত কর্পোরেট আইনজীবী। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দাপিয়ে বেড়াই। অপর্ণার সাথে সম্পর্ক যদি এখন হতো, সমাজের মুখে চুনকালি দিয়ে হয়তো ওকে নিয়ে নতুন সংসার গড়তাম। হয়তো করতাম না, ঐ যে, আমার আব্বু তো বলেছেনই যে সংসার ভাঙলে অভিশাপ কুড়াতে হয়।

জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। সময়ের সাথে আমার জীবনে নতুন এক মেয়ের আগমন ঘটে। আমার মতোই আইনজীবী। তাঁর সাথে সুখেই সংসার করছি। কিছুর কমতি রাখি নি। সে আমাকে সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসে আর আমিও তাঁকে একই ভাবে ভালোবাসি। কিন্তু অপর্ণা আমার প্রথম ভালোবাসা। আর প্রথম ভালোবাসা সব সময়েই একটি দাগ রেখে যায়।

অনেকে রাকিবের দোষ ধরছে এই গল্পে। আমি তো দেখি এই মর্মান্তিক গল্পে অনুরিমার পর সবচেয়ে বড় ভিক্টিম হচ্ছে রাকিব। কি ছিল দোষ ওর? হ্যাঁ, টাকা নিয়ে হয়তো একটি মিশনে এসেছিলো। কিন্তু অনুরিমার প্রতি ওর ভালোবাসার মধ্যে কোন খুঁত ছিল না। সমীর, সুচরিতা, আদিত্য বা রাজীবের মতো অনুরিমাকে সে ইউজ করতে চায় নি। সমীরের কার্যকলাপই অনুরিমাকে ঠেলে দিয়েছিলো আদিত্য আর পরে রাকিবের দিকে। রাকিবের দোষ কি? তাঁর পুরুষাঙ্গ আমার মতোই খৎনা করা? আর দ্বিতীয়ত, সুচরিতা এক ভয়াবহ মহিলা যার জিঘাংসার বলি হয়েছিলো অনুরিমা আর সমীর দুজনেই, কেউ ওর দোষ কেন দেখছে না?

মানালী, আপনার কাছে অনুরোধ, আপনি মানুষের কথায় কলম ছাড়বেন না। আপনার প্রতিটি লেখনীতে জীবনের নির্মম কিছু বাস্তবতা ফুটে ওঠে যা একজন প্রতিভাবান লেখক/লেখিকার দ্বারাই সম্ভব। আপনার জন্য অসীম শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ।
[+] 1 user Likes zigzag_1984's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: স্বামীর কল্পনা স্ত্রীয়ের যন্ত্রণা - by zigzag_1984 - 05-05-2025, 05:12 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)