Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica তার ছিঁড়ে গেছে কবে
#71
(২২)

ভুবন তো আজ হল কাঙাল


কী বলবে ও? ওর সব কথা আজ শেষ হয়ে গেছে। এই ঘরে, কয়েক ঘন্টা আগে নিজের সংসার, স্বামী, সন্তান— সব খুইয়ে আজ ও নিজেই নিজেকে সর্বস্বান্ত শেষ করে ফেলেছে। বরাবরের মতো। আর কখনও কিছু ফেরত পাবে কি না, জানে না। নিজের গত এগারো মাসের ব্যবহারে একটা বাধার পাহাড় নিজেই তৈরি করেছিল। তার পরে আজ কয়েক ঘন্টা আগে নিজের লোভ, রাহুলের প্রতি পুরনো টান আর শরীরের প্রচন্ড চোদার খিদেয় আজ ও নিজেই সব হারিয়েছে। জলটা খেয়ে আবার হাউহাউ করে কেঁদে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে খেয়াল হল, দুমড়ে গেলেও এখনও ওর হাতে সেই খামটা। কিছু পাওয়ার আশায় পাগলের মতো খামটা খুলতে যেতেই মেজদি ওর হাত থেকে ছিনিয়ে নিল সেটা। তার পর সবার চোখের সামনে খুলল। একতাড়া কাগজ। তার মধ্যে থেকেই সঙ্গে একটা ছোট্ট কাগজ গড়িয়ে পড়ল। মেজদিই তুলে পড়ল সেটা। গুঞ্জাকে লেখা কয়েক লাইন — ‘‘গুঞ্জারানী, তুই-ই আমাকে সবচেয়ে বেশি বুঝতিস। এ ভাবে চলে যেতে হল বলে তোকে জানিয়ে যেতে পারলাম না, সরি। হয়তো আবার কোনও দিন তোর সঙ্গে কোথাও না কোথাও দেখা হবে। হয়তো হবে না। ভাল করে পড়াশোনা করিস। আমি সব খবর পাব, সব জানতে পারব, মনে রাখিস। গানটা মন দিয়ে করিস। আর নিজের যত্ন নিস। ভাল থাকিস। তোকে কয়েক মাস আগে একবার বলেছিলাম না, ‘‘আমারে যে বাঁধবে ধরে, এই হবে যার সাধন, সে কি অমনি হবে?’’ মিলল তো? যাক, ভাল থাকিস। তোর সৌমদা।’’ ওকে লেখা চিঠিটা মেজদির হাত থেকে প্রায় কেড়ে নিল গুঞ্জা। আর অন্য কাগজের তাড়াটা কম করেও ১৫-২০ পাতার। দ্রুত সেটার প্রথম পাতায় চোখ বুলিয়ে গলায় রীতিমতো কর্তৃত্ব এনে স্বামী, জামাইবাবু এবং বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘তোমরা গুঞ্জাকে নিয়ে আজ ও বাড়িতে চলে যাও। যা হোক কিছু কিনে এনে খেয়ো রাতে। আমি, দিদি, মা আজ রাতে এখানেই থাকব। আর বাড়িতে ফোন করলে যেন পাই।’’ ওর গলার স্বরে এমন কিছু ছিল, কেউ একটাও কথা বলল না। গুঞ্জা একটাও কথা না বলে বাবার হাত ধরে নীচে নেমে গেল দুই জামাইবাবুর পিছনে পিছনে। মেজদি উঠে দরজা বন্ধ করে দিল। তার পর চিঠিটা হাতে নিয়েই গনগনে গলায় ঈশিতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘এবার বল! সব সত্যি কথা বলবি। একটাও মিথ্যে বললে বা ফালতু ন্যাকামো করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে করলে আজ তোকে এখানেই পুঁতে দেব!’’ মেজদির এই গলা ঈশিতার অচেনা। বরাবরের বন্ধুসুলভ, হাসিখুশি মেজদির এমন গলা শুনে ভয় পেল ও। মা, বড়দির দিকে তাকিয়ে দেখল, তারা মাটির দিকে তাকিয়ে।

কী বলবে ঈশিতা? মনে মনে সব সত্যি কথা বলবে বলে মুখ খুলতে গেল। কিন্তু চোখ তুলতেই দেখল, মেজদির দুচোখে যেন আগুন জ্বলছে। ও কিছু বলার আগেই গলায় তীব্র ব্যঙ্গ ঢেলে মেজদি বলে উঠল, ‘‘ওহ, সৌমাভর বার্থডে উপলক্ষে আজ তুই যে মস্ত বড় অনুষ্ঠান করেছিস, তার জন্য মা যে পায়েসটা বানিয়ে এনেছে, সেটা খাবি না? বরং ওটা আগে তুই খা, পরে না হয় সৌমাভকে খাওয়াস। আর বার্থডে এবং অ্যানিভার্সারি মিলিয়ে যে কেকটা অর্ডার করেছিলি আজ সকালে, সেটা এনেছি তো। ওটা কাটবি কখন? এই সব ভুলে যাস কী করে রে তুই?’’

ঈশিতা বুঝতে পারছে এই কথাগুলো কেন বলছে মেজদি। ওকে তীব্র আঘাত করে ভেঙে সব সত্যি শুনে চায় আজ মেজদি। কিন্তু ওর কি আর কিছু ভাঙার আছে? ও নিজেই একটা ভাঙাচোরা কাঠামোয় পরিণত হয়ে গেছে গত কয়েক ঘন্টায়। ও চোখ তুলে তাকাতেই দেখল এ বার বড়দি উঠে দাঁড়িয়েছে। প্রায় সৌমাভর সমবয়সী এই বড়দিকে ও বরাবরই একটু ভয় পায়। ও কিছু একটা বলার জন্য মুখ খোলার আগেই গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারল বড়দি। সেই থাপ্পডের ধাক্কায় ওর মাথাটা ঠুকে গেল সোফার কোনের কাঠে। কিন্তু ওর এখন এসব অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছে। চড়টা মেরে খাবার টেবিলের একটা চেয়ার টেনে বসে মেজদির দিকে তাকিয়ে বড়দি বলল, ‘‘পড় শুনি, কী লেখা আছে ওটায়?’’






তার ছিঁড়ে গেছে কবে....



মেজদি পড়তে শুরু করল।

‘‘সুচরিতাসু ঈশিতা (দুবে) রায়চৌধুরী ম্যাডাম,

বেশ কয়েক মাস আগে একবার আপনার সঙ্গে সৌমাভ সরকার নামে এক ব্যক্তির বিয়ের রেজিস্ট্রির কথা হলেও নোটিসটাই শেষ অবধি আর দেওয়া হয়ে ওঠেনি আপনাদের পরিবারের তরফে। সইসাবুদও হয়নি স্বাভাবিক ভাবেই। তাই আপনাকে আপনার প্রকৃত নামেই সম্বোধন করলাম। গত বছর নভেম্বরে আন্দামানে সপরিবারে গিয়ে বিয়ের নামে আসলে যে একটা প্রচন্ড প্রহসন এবং ছেলেখেলা করেছিলেন আপনারা সবাই মিলে (গুঞ্জা বাদে, কারণ ওর মতামত নেওয়ার প্রশ্নই ছিল না, তা ছাড়া ও যায়ওনি), সেটা আপনি এবং আপনার পরিবারের লোকেরা ভাল করেই জানেন। আপনারা ওটা ইচ্ছে করেই করেছিলেন। আমি তখন বুঝতেই পারিনি আপনাদের চালটা, এত বোকা আমি! আশা করি ওই পর্বটা আপনি এবং আপনারা দ্রুত ভুলে যাবেন।

অফিসের যে কাজ নিয়ে গত প্রায় সাত দিন ধরে প্রবল ব্যস্ত ছিলাম, কাল অনেক রাতে সেটা শেষ করে সব ফাইল গুছিয়ে রেখেছিলাম। আজ জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে পুরনো এক সহকর্মীর মৃত্যুসংবাদে মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ায়, একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল না নিয়েই অফিসে রওনা হয়ে গিয়েছিলাম। বেশ কিছুটা যাওয়ার পরে মনে পড়ায় সেটা নিতেই এসেছিলাম। আমার পকেটেও দরজার একসেট চাবি থাকত। আপনি বোধহয় সেটা ভুলে গিয়েছিলেন।

ভাগ্যিস পকেটেই চাবির গোছাটা ছিল আর ভাগ্যিস ফাইলটাও ফেলে গিয়েছিলাম! না হলে অনেক কিছুই আমার বহু দিন, হয়তো সারা জীবনই অজানা থেকে যেত, জানেন ম্যাডাম! আপনি যে আপনার প্রকৃত প্রেমিক রাহুল দুবেকে এত বেশি নিজের করে পাওয়ার জন্য মরিয়া ছিলেন, জানতাম না। আন্দামানে থাকাকালীন আমার প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এই রাহুলের কথা একবার হেলাফেলার ঢঙে বললেও তার সঙ্গে আপনার প্রেম কতদূর অবধি ছিল, সেই সত্যিটা সে দিন আমাকে বলেননি। আজ বুঝলাম, বলতেনও না কোনওদিনই। বরং আমার আড়ালেই লীলাখেলা চালিয়ে যেতেন আপনারা। এমনিতেই ছোট্টবেলায় মাকে হারানো এবং তার পরে দীর্ঘ হোস্টেল লাইফ ও চাকরি পাওয়ার পরপরই বাবার মৃত্যুর পরে আমি এই বিরাট পৃথিবীতে বরাবরই একা। শুধু তাই নয়, আমার বাস্তববোধও বড় কম ছিল। সে কারণেই আন্দামানে বলা আপনার এত বড় মিথ্যেটা ধরতে পারিনি এতদিন। জানেন ম্যাডাম, আজ আমার সাড়ে ৯টায় বেরিয়ে বিকেলে পাঁচটা নাগাদ ফেরার কথা ছিল। আপনাকে সেটা বারবার বলেওছিলাম। কিন্তু বেরোতেই দশটা বেজে গিয়েছিল। যদি আজ আমি ফাইলটা ভুলে ফেলে না যেতাম, তা হলে হয়তো আপনার প্রেমিক রাহুল আরও আগেই আপনার কাছে চলে আসতে পারত। আপনারা হয়তো আরও খানিকক্ষণ একান্তে সময় কাটাতে পারতেন। আজ তো বটেই, আগামী আরও অনেক অনেক মাস, বছর ধরে। যেমন কাটাচ্ছিলেন তখন। ইসসস! আমারই ভুল, আমি সরি ম্যাডাম। আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি গাড়ি ঘুরিয়ে যখন ১১টা নাগাদ ফাইলটা নিতে ঢুকেছিলাম, তখন আপনাদের চূড়ান্ত আদরের সবে বোধহয় ফার্স্ট রাউন্ড শেষ হল। কারণ প্রায় তখনই আপনার প্রেমিক রাহুল আপনার ভিতরেই আপনাদের যুগল ও উদ্দাম ভালবাসার জীবনরস ঢেলে দিয়েছিল। তা নিয়ে আপনি মৃদু বকাবকি করলেও সেকেন্ড রাউন্ডের আদরের উত্তেজনায় ও সব ফালতু ব্যাপার নিয়ে আর মাথা ঘামাননি। আমি তখন ফাইলগুলো গুছিয়ে বেরোচ্ছিলাম। ওহ, আপনাকে বলা হয়নি, ফাইলগুলো নিতে ১১টা নাগাদ দরজা খুলে ভিতরে ঢোকার পরপরই আপনার গলা শুনে শোওয়ার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বুঝেছিলাম, একটা কারো সঙ্গে আপনি নিবিড় ভাবে ‘কাজে’ ব্যস্ত। তিনি আপনার কে এবং আপনি তাঁর সঙ্গে কতটা ‘ব্যস্ত’, সেটা বুঝেছিলাম যখন এ বছরই আপনার ‘নকল বরের’ পুজোর সময় আপনার জন্য কেনা নতুন একটা ম্যাক্সি আপনার ‘আসল স্বামী’ ফড়ফড় করে টেনে ছিঁড়ে দিল, সেই আওয়াজে! জানেন ম্যাডাম, সেই ছেঁড়া ম্যাক্সিটা আপনার ‘নকল বরের’ পায়ের কাছেই এসে পড়েছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, পরপর কাজ গোছাতে থাকি। তার মধ্যেই আপনার তীব্র চিৎকার তখন বোধহয় ঘরের দরজার বাইরেও শোনা যাচ্ছিল! বিশেষ করে আপনার ‘আসল স্বামী’ রাহুলের কথায় আপনি যখন ওর উপরে উঠে ‘বিশেষ আদর’ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন! এমনকি আন্দামানে আপনার মুখ থেকে রাতের বিশেষ মুহূর্তে শোনা অনেকগুলো শব্দ কী অবলীলায় আপনি দিনের বেলাতেও বলছিলেন প্রকৃত প্রেমিক তথা ‘আসল স্বামীর’ বুকে মিশে যেতে যেতে! আগে জানতাম, ওই শব্দগুলো আমার জন্য, আজ বুঝলাম, আমি তো ‘নকল বর’, আপনার কাছে বিশেষ করে একটা খেলার পুতুল ছিলাম মাত্র। আপনি আগেও ওই সব কথা বলতেন আপনার প্রেমিক রাহুলের সঙ্গে শোওয়ার সময়, তাই না? আপনার তো বটেই, আপনাদের সবারই খেলার পুতুল ছিলাম আমি। আপনাদের সেই মিলিত শরীরি মিলনের আওয়াজ এবং তার পরে দু’জনের মিলিত ভালবাসার দান আপনার শরীরের ভিতরে ফেলা নিয়ে আপনার মৃদু অনুযোগও কানে আসছিল। এমনকি আপনার আসল স্বামী যে আপনার দুই সন্তানের খাবারও খেয়ে নিয়েছে, সেটা আপনিই বলার পরে রান্নাঘর থেকে ওদের জন্য বানানো দুধটা একটা বোতলে ভরে নিই। সকালে কেনা দুধে কৌটোটাও নিয়ে গেলাম। চার মাস বয়স মোটে ওদের, কী খাবে ওরা বলুন? ওহ, ভাল কথা, আপনাদের ওই উদ্দাম ভালবাসার সাক্ষ্য ওখানেই একটা টেপ রেকর্ডারে ফাঁকা ক্যাসেটে ধরা আছে। দেখুন একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবেন। ওটার কথা গুঞ্জা ছাড়া কেউ জানে না। অবশ্য কারও জানার দরকারও পড়েনি। ভেবেছিলাম, আপনাকে চমক দেব আজ, কিন্তু তার আগেই আপনি যে এতবড় চমক দেবেন, সেটা বুঝিনি ম্যাডাম। ওই টেপে ধরা আওয়াজ শুনলেই বুঝতে পারবেন, আপনার গলার স্বর তখন বোধহয় দোতলাতেও শোনা যাচ্ছিল! সে কী চিৎকার! নাকি শীৎকার, আপনিই জানেন ম্যাডাম।

জানি না, আপনার বা আপনার পরিবারের কী ক্ষতি আমি করেছিলাম! আমি তো সেভাবে কোনও দিন কলকাতার বাসিন্দাই নই ম্যাডাম। তা হলে আমার সঙ্গে এই ভয়ঙ্কর প্রতারণা কেন করলেন আপনারা? বিশেষ করে আপনি? আন্দামানে থাকাকালীনই আমি আপনাকে বলেছিলাম, যদি আমাকে কখনও ভাল না লাগে, আমাকে বলবেন, আমি নিজে আপনাকে আপনার প্রিয়জনের হাতে তুলে দেব। সেটা করলেই তো পারতেন ম্যাডাম? কেন ঠকালেন এ ভাবে আমাকে? আপনার পরিবারে আমি যে একেবারেই বাইরের লোক, সেটা বারবার বুঝেছি নানা ব্যবহারে। তার একটা কারণ নিশ্চয়ই আমি আপনাদের জাতের নই, তুলনায় নিচু জাতের, তাই না? আপনারা রায়চৌধুরী, আমি সরকার। যাক, আজ আর এ সব কথা অবান্তর। তখন নিজেদের সম্মান বাঁচাতে আপনার পরিবার আমাকে বলির পাঁঠা হিসেবে খুঁজে পেয়েছিল। আপনিও সাময়িক ভাবে তাদের কোপ থেকে বাঁচতে একটা ভালই নাটক করেছিলেন ওই কটা দিন। তার জন্য অনেক অভিনন্দন আপনাদের।

তবে এটুকুর মধ্যেই দুটো প্রাপ্তি আমার। এক, দুই সন্তান। তার জন্য আপনার এবং আপনাদের পরিবারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। যদিও এখনও জানি না, ওরা আপনার এবং আপনার পুরনো প্রেমিক রাহুলের শরীরের মিলিত রসের ফসল কি না। হয়তো আন্দামানে নাটক করতে যাওয়ার আগে ওর সঙ্গে শুয়েছিলেন। তবে আমি নিজের সন্তানের মতো করেই ওদের রাখব, বড় করব। আর একটা নাম, গুঞ্জা। ও আপনাদের মধ্যে থেকেও আপনাদের সবার থেকে আলাদা। গুঞ্জা আমার কাছে আপনাদের সবার চেয়ে আলাদা। ও-ই একদিন আমার জন্মদিনটা জানতে চেয়েছিল। আমার আরও অনেক কথা, অনেক অনুভূতি ও জানে। সেগুলো আপনার জানার কথা থাকলেও আপনি তো নিজের প্রকৃত প্রেমিককে খুঁজে পেতেই ব্যস্ত ছিলেন। তাই জানার দরকারই মনে করেননি। ও কিন্তু সেই স্রোতে ভাসেনি। সে কারণেই ও বাকিদের থেকে অনেক আলাদা।

আজ বুঝলাম, কেন কলকাতায় পা দেওয়ার পর থেকে আপনি নিজেকে এত দ্রুত বদলে নিতে শুরু করেছিলেন। এই শহরে পা দিয়েই নিজের প্রকৃত প্রেমিকের কথা মনে করেই আপনি অত দ্রুত বদলে নিচ্ছিলেন নিজেকে, তাই না? এমনকি বিছানাতেও আপনি নিজেকে যত দ্রুত বদলে ফেলেছিলেন, সেটা গিরগিটিকেও লজ্জায় ফেলার মতো! আপনি নিজেই জানেন কী করেছেন। নিজের বুকে হাত দিয়ে দেখুন, মনকে প্রশ্ন করে দেখুন, কলকাতায় আসার পরে আমরা কতদিন ঘনিষ্ঠ হয়েছি? মাত্র আড়াই দিন। তার মধ্যে একদিন ছিল আমার কাছে একটা বিশেষ দিন। বাবা হতে চলেছি, এই খবরের পাশাপাশি প্রথমবার আপনাদের বাড়ি গিয়েছিলাম সেদিন আপনার সঙ্গে। সেদিন ডাক্তারের কথাগুলো নিশ্চয়ই মনে আছে আপনার? আমি কিন্তু আপনার সঙ্গে আরও অন্তত পাঁচ মাস শোেওয়ার লোভে নয়, আপনার শরীরের কথা ভেবেই পরীক্ষাটা পরের বছর দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। সে দিন রাতে বিছানায় আপনার ওই শীতল ব্যবহার, আমাকে ঠকানোর জন্য মুখে কিছু কৃত্রিম শব্দ এবং বাপের বাড়ি ফেরা নিয়ে এত জেদাজেদির কারণটা বুঝতে আমার অনেক মাস সময় লেগে গেল ম্যাডাম। এই বছর পরীক্ষা না দিলে হয়তো নকল বরকে ছেড়ে আসল স্বামীর বুকে মিশে যেতে আরও সময় লেগে যেত, তাই এত তাড়া ছিল আপনার। সে কারণে কলেজে ভর্তি হয়ে তার পরে খবরটা আমাকে দায়সারা ভাবে দিয়েছিলেন আপনি। তাও আমি ফোন করেছিলাম বলেই। অথচ, আমার অফিসের নম্বর কলকাতায় আসার পরের দিন থেকেই আপনার কাছে রয়েছে। আপনার বাপের বাড়িতে সেই রাতে আপনার অত্যন্ত শীতল ব্যবহারে খটকা লাগলেও কিছু বলিনি। আজ বুঝেছি, জানেন ম্যাডাম। নিজের আসল স্বামীর কাছে নিজেকে শুদ্ধরূপে নিবেদন করার জন্যই আমার স্পর্শ এ ভাবে এড়াতে চাইছিলেন আপনি। এমনকি বেশ কিছু দিন আগে এ বাড়িতে ফিরলেও রোজই নানা ব্যস্ততা আর ক্লান্তির অজুহাত দিয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তেন, যাতে আমি (আপনার নকল স্বামী) কিছু করে না বসি! ভাল চালটা চেলেছিলেন, আজ কাজে লেগে গেল। নিজেকে যতটা সম্ভব শুদ্ধভাবেই উপহার দিতে পেরেছেন ‘আসল বরের’ কাছে, শরীরে শরীর মিলিয়ে। এত কিছু না করে আমাকে সোজাসুজি বলে দিতেই তো পারতেন আপনি। এত প্রতারণার দরকারই ছিল না। তবে বয়সে এত বড় একটা লোকের সঙ্গে থাকার চেয়ে অনেক কম বয়সী, বিছানায় অনেক বেশি শক্তিশালী লোকের সঙ্গে শোওয়াই তো ভাল, তাই না ম্যাডাম? অনেক আরাম মেলে, সেটা তো আপনি জানেনই।

আর না। আপনার অনেক সময় নষ্ট করলাম, ক্ষমা করে দেবেন ম্যাডাম। ওহ, একটা কথা বলা হয়নি, আমি আমার দুই সন্তানকে নিয়ে নিরুদ্দেশের পথে যাত্রা শুরু করেছি। যেটুকু বিদ্যে পেটে আছে, আশা করি, ওদের খাওয়া-পরা এবং পড়ার কোনও সুবিধা হতে দেব না। আমাকে খোঁজার নাটক দয়া করে করবেন না। আপনার মনে আছে কি না জানি না, আপনাকে আন্দামানে থাকতে থাকতেই একদিন বলেছিলাম, ভালবাসা শব্দটাই টিকে থাকে বিশ্বাসের উপরে। ভালবাসা বড় ভঙ্গুর, কাঁচের চেয়েও বেশি। একবার তাতে ফাটল ধরলে আর জোড়া লাগে না। আজ বুঝি, আপনার তরফে ভালবাসাটা অন্তত ছিল না। যেটা ছিল, সেটা নিখুঁত একটা অভিনয় আর লোকদেখানো একটা আবরণ। তাই সেটা ভঙ্গুর কি না, সে প্রশ্ন অবান্তর। শুধু মনে রাখবেন, ‘‘সে জন ফেরে না আর যে গেছে চলে।’’

আগামী ৫-৭ দিনের মধ্যে আপনার নামের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু টাকা চলে যাবে। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে আমার নাম সরিয়ে নিয়েছি। ফলে সব টাকারই মালিক এখন আপনি। আপনার নামে নতুন চেকবইও পেয়ে যাবেন কয়েক দিনের মধ্যে। তবে আপনার আসল টাইটেলটাই থাকবে তাতে। পরে না হয় টাইটেলটা পাল্টে দুবে করে নেবেন, কেমন? কলকাতা ছাড়ার আগে সে ব্যবস্থা করে এসেছি। আপনি আপনার প্রকৃত এবং আসল স্বামী রাহুলকে নিয়ে হয়তো শীঘ্রই নতুন জীবন শুরু করবেন। সে কারণে আর সব কিছুর সঙ্গে ছেলেমেয়ের ছবির পুরো অ্যালবামটাও নিয়ে এসেছি। ওই সব পুরনো স্মৃতি আপনার কাছে তো বটেই, আপনার প্রকৃত ভালবাসা তথা আসল স্বামীর কাছেও বিষবৎ লাগবে। তবে আপনার একক কয়েকটা ছবি অ্যালবামে আছে, সেগুলো আলাদা করে আপনার বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়ে দেব। আপনার আরও কিছু ডকুমেন্টও চলে এসেছে ওই ফাইলের মধ্যে করেই, সেগুলোও পাঠিয়ে দেব। চিন্তা করবেন না, আপনার মতো ঠকাব না। আপনার নতুন জীবনের সাফল্য কামনা করি। আসল স্বামীকে আজ যে ভাবে বুকে টেনে আদরে ভরিয়ে দিয়েছেন, তাতে তাকে যে আপনি আমার মতো ঠকাবেন না বা তার আজড়ালে কোনও রকম নোংরামি করবেন না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। অবশ্য আমি তো ছিলাম ‘নকল বর’, স্টপগ্যাপ আপনার কাছে! আজকের ঘটনার অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে কয়েক দিনের মধ্যে আপনাদের দু’জনের সন্তান আপনার গর্ভে আসবে। তার যত্ন নেবেন। দরকারে নিজের পড়াশোনাটা কয়েক বছর বন্ধ রাখবেন। এই সময়টায় মাকে বড় দরকার হয় শিশুদের। আর একটা কথা, অপরাধ নেবেন না। আপনার এবং আপনার আসল স্বামী রাহুলের আগামী দিনের সন্তানের প্রথম কয়েক মাসের খাবার অন্তত ওদেরই খেতে দেবেন ম্যাডাম। বুকে দুধ কমে গেছে, ডাক্তার বলেছে বাইরের দুধ খেতে জাতীয় অকারণ এবং ফালতু মিথ্যে কথা বলে কৌটোর দুধ ওদের খাওয়াবেন না। আর ভাল কথা, ‘আজ বাড়িতে অনুষ্ঠান আছে’ বা আপনার আসল স্বামীর দেওয়া আদরের দাগ রাতে ‘কারও চোখে’ পড়ে গেলে লজ্জায় পড়ে যাবেন, এই ভয়টা আপনার আর রইল না।  

ভাল থাকবেন ম্যাডাম ঈশিতা (দুবে) রায়চৌধুরী।

আপনার আসন্ন এবং আগামী বিবাহিত জীবনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল

ইতি ‘নকল বর’।’’
[+] 9 users Like Choton's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: তার ছিঁড়ে গেছে কবে - by Choton - 05-05-2025, 02:23 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)