04-05-2025, 09:42 PM
(This post was last modified: 04-05-2025, 09:45 PM by Abirkkz. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
কামিনীর নাম গ্রামের মানুষের মুখে ফিসফিসে বাতাসের মতো ভেসে বেড়াত, কিন্তু তার উৎপত্তি ছিল এক রহস্যের জালে মোড়া। বুড়োরা বলত, কামিনী কোনো সাধারণ মানুষ ছিল না। বহু বছর আগে, জমিদার বাড়ির স্বর্ণযুগে, সে ছিল এক তরুণী—অপরূপ সুন্দরী, যার চোখে ছিল আগুনের ঝিলিক আর হাসিতে ছিল মায়ার জাদু। গ্রামের লোকেরা তাকে ভালোবাসত, কিন্তু জমিদারের লোভী চোখ তার ওপর পড়েছিল। কথিত আছে, কামিনী জমিদারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল, আর সেই অপমানের প্রতিশোধে জমিদার তাকে অভিশপ্ত করেছিল—এক কালো তান্ত্রিকের সাহায্যে।সেই অভিশাপ কামিনীকে মানুষ থেকে কিছু অন্যরূপে বদলে দিয়েছিল। তার দেহ মর্ত্যের বাঁধন ছাড়িয়ে অতিপ্রাকৃত শক্তিতে ভরে উঠেছিল। তার রূপ আরও মোহময় হয়েছিল, কিন্তু তার চোখে জ্বলত লাল আগুন, আর তার স্পর্শে ছিল মৃত্যুর ঠান্ডা ছোঁয়া। গ্রামের লোককথায় বলা হয়, কামিনী জমিদার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে নিজেকে শেষ করেছিল, কিন্তু তার আত্মা সেই ধ্বংসস্তূপে বন্দী হয়ে গিয়েছিল। সে আর মানুষ ছিল না—একটা সত্তা, যে ভয় আর আকর্ষণের মাঝে ভারসাম্য রাখত।জমিদার বাড়ির ধ্বংসের পর গ্রামে শান্তি ফিরেছিল, কিন্তু কামিনীর উপস্থিতি কখনো পুরোপুরি মুছে যায়নি। বুড়িরা বলত, কামিনী এখনো সেই পোড়া ধ্বংসাবশেষে বাস করে, তার ফিসফিস বাতাসে ভাসে, তার ছায়া রাতের অন্ধকারে নড়ে। সে এমন কাউকে খুঁজে, যার মনে ভয় আর কামনার দ্বন্দ্ব আছে—যেমন মালতী। কামিনীর শক্তি ছিল তার মায়ায়—সে কারো মনের গভীরতম ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলতে পারত, তাদের নিজেরই অজান্তে তাদের হৃদয়কে নিজের দিকে টেনে নিত।কেউ কেউ বলত, কামিনী কেবল অভিশাপের শিকার নয়, সে নিজেই একটা শক্তি হয়ে উঠেছিল। জমিদারের তান্ত্রিক যে মন্ত্র ব্যবহার করেছিল, তা কোনো সাধারণ অভিশাপ ছিল না। এটি ছিল প্রাচীন দেবী-উপাসনার একটা বিকৃত রূপ, যা কামিনীকে মানুষ আর দেবত্বের মাঝামাঝি কিছুতে রূপান্তরিত করেছিল। তার সাত ফুটের রূপ, তার অমানুষিক সৌন্দর্য, তার জ্বলন্ত চোখ—এসব ছিল তার অতিপ্রাকৃত সত্তার প্রমাণ। কিন্তু তার মনে এখনো মানুষী কামিনীর একটা ছায়া ছিল, যে প্রতিশোধ চায়, আর সেই প্রতিশোধের জন্য সে মালতীর মতো নিরীহ মনকে বেছে নিয়েছিল।
জমিদার বাড়ির ধ্বংসের পর গ্রামে একটা অস্বস্তিকর শান্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু মালতীর মন অশান্ত।
রাতের গ্রাম যেন নিজেই একটা জীবন্ত ছায়া। মালতীর কুঁড়েঘরের মাটির মেঝেতে চাঁদের আলো এসে পড়ত, কিন্তু সেই আলোতেও একটা অন্ধকার লুকিয়ে থাকত।
বিছানায় শুয়ে মালতী চোখ বন্ধ করত, কিন্তু তার মনের অতলে কামিনীর রূপ ফিরে আসত—তার সাত ফুটের দেহ, যেন কোনো প্রাচীন মায়াবিনীর মূর্তি, ত্বকের ঝিলিকে রুপোলি আভা, আর চোখের জ্বলন্ত লাল আগুন। কামিনীর ঠোঁটে সেই হাসি—মিষ্টি, কিন্তু যেন বিষ মাখানো—মালতীর হৃদয়ে একই সঙ্গে ভয় আর এক অজানা টান জাগাত।
মালতী ঘুমের ঘোরে শুনতে পেত, একটা ফিসফিস, নরম কিন্তু অমোঘ: "মালতী, তুই আমার কাছে আয়।" তার শরীর কেঁপে উঠত, কিন্তু সেই কণ্ঠস্বরে একটা মায়া ছিল, যেন তাকে ডাকছিল কোনো নিষিদ্ধ রহস্যের দিকে। স্বপ্নে কামিনীর ছায়া কাছে আসত, তার স্পর্শের উত্তাপ মালতীর ত্বকে যেন আগুনের ফুলকি ছড়াত। সেই মুহূর্তে মালতী জানত না সে ভয় পাচ্ছে, নাকি সেই আগুনে নিজেকে হারিয়ে দিতে চায়।জেগে উঠলে তার শ্বাস ভারী হত, বুকের ধুকপুকানি থামত না। ঘরের কোণে ছায়া নড়ে উঠত, যেন কামিনী সত্যিই সেখানে দাঁড়িয়ে। জানালার বাইরে গাছের পাতায় হাওয়ার শব্দ মিশে যেত কামিনীর ফিসফিসের সঙ্গে: "তুই পালাতে পারবি না।"
মালতী নিজেকে বোঝাতে চাইত, এ শুধুই তার মনের খেলা। কিন্তু তার শরীরের কাঁপুনি, তার মনের অস্থিরতা আরও গভীর কিছুর ইঙ্গিত দিত। কামিনী কি কেবল একটা ভূত? নাকি মালতীর নিজের লুকানো আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি?মাঝরাতে, যখন গ্রাম ঘুমে ডুবে থাকত, মালতী অনুভব করত একটা কুয়াশার মত অবয়ব তার উপর উঠে আসছে, যার জ্বলন্ত লাল চোখ, সেই মিষ্টি হাসি, তার স্তন জোড়া, তার পেটের নাভির খাজ, আর তার স্পর্শের উত্তাপ। আর সেই কুয়াশার ভিতর থেকে একসাথে কয়েকটা হাত বের হয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করতে থাকতো।
তার দুধ গলা পেট নাভি পুরো জায়গায় হাতগুলো ঘুরতে লাগে আর মালতির প্রচন্ড সুখ অনুভূতি হয় খবর নিও আনন্দের সাথে তার ঘুম ভাঙ্গে
সে চোখ খুলত, কিন্তু কেউ থাকত না। শুধু বাতাসে একটা মৃদু সুগন্ধ ভাসত—যেন বুনো ফুলের গন্ধ, কিন্তু তাতে মিশে থাকত কিছুটা পোড়া কাঠের গন্ধ। মালতী জানত, কামিনী তার কাছেই আছে। আর সেই জানা তার ভয় আর আকর্ষণের মাঝে একটা অদ্ভুত সেতু তৈরি করত।
মালতী ঘামে ভিজে জেগে উঠত, তার শরীর কাঁপত, কিন্তু সেই ভয়ের মাঝেও এক অদ্ভুত মায়া তাকে টানত। কামিনীর স্পর্শের কল্পনা—যেন আগুনের উত্তাপে মোড়া বরফ—তার শিরায় রক্তের গতি বাড়িয়ে দিত। সে নিজেকে শান্ত করতে চাইত, বলত, "এ শুধুই স্বপ্ন।" কিন্তু রাতের পর রাত, কামিনীর উপস্থিতি যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠত। ঘরের কোণে ছায়া নড়ত, জানালার কাচে অস্পষ্ট প্রতিবিম্ব ভেসে উঠত। মালতী জানত না এ ভয়, না কোনো অচেনা আকর্ষণ। শুধু জানত, কামিনী তাকে ছাড়বে না।
এক রাতে, মালতী তার ঘরের জানালায় একটা কালো কুয়াশা দেখল। তার হৃৎপিণ্ড দ্রুত চলতে শুরু করল। সে তাবিজটা হাতে ধরল, কিন্তু কুয়াশা থেকে কামিনীর রূপ ফুটে উঠল। সে এবার আরো মায়াবী—তার রক্তলাল শাড়ি যেন তার শরীরের সঙ্গে মিশে গেছে, তার লম্বা চুল মাটিতে ছড়িয়ে পড়ছে, আর তার ঠোঁটে একটা প্রলোভনময় হাসি। তার সাত ফুটের উচ্চতা মালতীর সামনে দাঁড়িয়ে একটা অদ্ভুত আকর্ষণ তৈরি করল।"মালতী," কামিনী ফিসফিস করল, তার কণ্ঠে মধু ঝরছে। "তুই কেন আমাকে ভয় পাস? আমি তোকে চাই, তোর মতো কেউ আমাকে বুঝতে পারে।" মালতী পিছিয়ে গেল, কিন্তু তার শরীর যেন নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কামিনী এগিয়ে এল, তার হাত মালতীর কাঁধে রাখল। সেই স্পর্শে মালতীর শরীরে একটা শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল—যেন বরফ আর আগুন একসঙ্গে তার শিরায় বইছে।
মালতীর শ্বাস ভারী হয়ে এল। কামিনীর স্পর্শ, যেন তার শরীরের প্রতিটি কোষে এক অজানা তরঙ্গ ছড়িয়ে দিচ্ছিল। তার হাত, ঠান্ডা কিন্তু অদ্ভুতভাবে উষ্ণ, মালতীর কাঁধ থেকে ধীরে ধীরে তার বাহুর দিকে নেমে এল। প্রতিটি স্পর্শে মালতীর হৃৎপিণ্ড আরও দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছিল, যেন তার শরীর কামিনীর এই অলৌকিক উপস্থিতির সঙ্গে এক অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।কামিনীর রক্তলাল শাড়ি মেঝেতে ছড়িয়ে পড়েছিল, যেন তা কোনো জীবন্ত সত্ত্বা, মালতীর চারপাশে আলতো করে জড়িয়ে ধরছে। তার লম্বা কালো চুল বাতাসে দুলছিল, যদিও ঘরে কোনো হাওয়া ছিল না। তার চোখ, গভীর এবং জ্বলন্ত, মালতীর দৃষ্টিকে বন্দি করে রেখেছিল। সেই চোখে দুঃখ ছিল, কিন্তু তার সঙ্গে ছিল এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ।"মালতী," কামিনী আবার ফিসফিস করল, তার কণ্ঠে এমন এক মায়া ছিল যে মালতী নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও তার দিকে ঝুঁকে পড়ল। "তুই কি জানিস, ভালোবাসা কতটা শক্তিশালী হতে পারে? এমনকি মৃত্যুও তাকে ধ্বংস করতে পারে না।" কামিনীর ঠোঁটে সেই প্রলোভনময় হাসি ফিরে এল, কিন্তু এবার তা আরও গভীর, আরও রহস্যময়।মালতী পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তার পা যেন মাটিতে গেঁথে গেছে। কামিনীর হাত এখন তার গালে উঠে এসেছে, আঙুলের ডগা দিয়ে সে মালতীর ত্বকে আলতো করে স্পর্শ করল। সেই স্পর্শে মালতীর শরীরে একটা শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল—যেন তার ভেতরের সমস্ত ভয়, সমস্ত সংশয় গলে যাচ্ছে।"তুই আমাকে ভয় পাস, কিন্তু তোর এই ভয়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কৌতূহল," কামিনী বলল, তার কণ্ঠ এখন আরও গভীর, আরও মোহনীয়। "তুই জানতে চাস আমি কে। তুই জানতে চাস আমার গল্প। আর আমি... আমি চাই তুই আমার সঙ্গে থাকিস।"মালতীর মন দ্বিধায় দুলছিল। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই সত্ত্বা ভয়ংকর, কিন্তু একই সঙ্গে অদ্ভুতভাবে আকর্ষণীয়। কামিনীর দুঃখ, তার অপূর্ণ ভালোবাসার গল্প, মালতীর হৃদয়ে এক অজানা সহানুভূতি জাগিয়ে তুলছিল। কিন্তু তার স্পর্শ, তার কণ্ঠ, তার উপস্থিতি—সবকিছুই মালতীকে এমন এক জগতে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, যেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন।
কামিনী মালতীর আরও কাছে এল, তার শরীর থেকে ছড়িয়ে আসা এক অলৌকিক উষ্ণতা মালতীর ত্বককে স্পর্শ করছিল। তার লম্বা, ধারালো নখ মালতীর গালে আলতো করে ছুঁয়ে গেল, যেন একটি অদৃশ্য ছবি আঁকছে। সেই স্পর্শে মালতীর শরীরে এক তীব্র শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল, তার চোখ অজান্তেই বন্ধ হয়ে গেল। তার মনে হল, সে এক অন্ধকার, কিন্তু মায়াবী জগতে ডুবে যাচ্ছে—যেখানে সময় থেমে গেছে, এবং শুধু কামিনীর অস্তিত্বই বিরাজ করছে।কামিনীর শ্বাস, ঠান্ডা কিন্তু মধুর, মালতীর কানের কাছে এসে লাগল। "আমার সঙ্গে থাক, মালতী," সে ফিসফিস করল, তার কণ্ঠে এমন এক মায়া ছিল যেন তা মালতীর সমস্ত ইচ্ছাশক্তিকে গলিয়ে দিচ্ছে। "আমি তোকে এমন ভালোবাসা দেব, যা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এমন ভালোবাসা, যা মৃত্যুকেও অতিক্রম করে।" তার কথাগুলো মালতীর মনে এক অজানা তৃষ্ণা জাগিয়ে তুলল, যেন তার শরীর ও মন কামিনীর এই প্রলোভনের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাইছে।মালতীর শরীর কাঁপছিল, তার হৃৎপিণ্ড এত জোরে ধুকপুক করছিল যে সে ভাবল, কামিনী নিশ্চয়ই এই স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে। কামিনীর হাত ধীরে ধীরে মালতীর কাঁধ থেকে তার কোমরের দিকে নেমে এল, তার আঙুলের স্পর্শে এক অদ্ভুত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছিল। মালতী চাইলেও পিছিয়ে যেতে পারছিল না; তার শরীর যেন কামিনীর এই মোহনীয় উপস্থিতির সঙ্গে এক অদৃশ্য শৃঙ্খলে বাঁধা পড়েছিল।কামিনীর রক্তলাল শাড়ি মালতীর পায়ের কাছে ছড়িয়ে পড়েছিল, যেন তা একটি জীবন্ত স্রোত, মালতীকে নিজের মধ্যে টেনে নিতে চাইছে। তার লম্বা কালো চুল মালতীর হাতের কাছে এসে স্পর্শ করল, এবং সেই মুহূর্তে মালতীর মনে হল, সে কামিনীর সঙ্গে এক অলৌকিক বন্ধনে জড়িয়ে পড়ছে। কামিনীর চোখ, গভীর এবং জ্বলন্ত, মালতীর দৃষ্টিকে বন্দি করে রেখেছিল। সেই চোখে এক অপার দুঃখ ছিল, কিন্তু তার সঙ্গে ছিল এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ, যা মালতীর মনকে দোলা দিচ্ছিল।মালতীর মন দ্বিধায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। একদিকে তার ভয়, তার স্বাভাবিক জ্ঞান তাকে পালাতে বলছিল; অন্যদিকে কামিনীর স্পর্শ, তার কণ্ঠ, তার প্রলোভন তাকে এই অন্ধকার জগতের গভীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। সে অনুভব করল, তার শরীর আর মন আর তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই—কামিনীর মায়ায় সে পুরোপুরি আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
হঠাৎ মালতীর গলায় ঝুলন্ত তাবিজটি জ্বলন্ত গরম হয়ে উঠল, যেন তার ত্বকে একটি আগুনের ছোঁয়া লাগছে। তীব্র উত্তাপে তার চোখ খুলে গেল, এবং সে যা দেখল, তাতে তার রক্ত জমে গেল। কামিনীর মুখ, যা কিছুক্ষণ আগেও মায়াবী সৌন্দর্যে ভরা ছিল, এখন ভয়ংকরভাবে বিকৃত হয়ে যাচ্ছিল। তার চোখের কোটর থেকে কালো, গাঢ় রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল, যেন দুটি অন্ধকার ঝর্ণা। তার ঠোঁটের কোণে ধারালো, পশুর মতো দাঁত ঝকঝক করছিল, এবং তার মুখে সেই প্রলোভনময় হাসি এখন একটি দানবীয় হিংস্রতায় রূপান্তরিত হয়েছিল।"তুই আমাকে প্রত্যাখ্যান করছিস?" কামিনীর গলা থেকে একটি গভীর, অমানুষিক গর্জন বেরিয়ে এল, যা ঘরের দেয়ালগুলোকে কাঁপিয়ে তুলল। তার শরীর থেকে কালো, ঘন ধোঁয়া উঠতে শুরু করল, যা মালতীর চারপাশে পাক খেয়ে তাকে আবদ্ধ করতে চাইছিল। ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠল, যেন অদৃশ্য একটি শক্তি মালতীর শ্বাস বন্ধ করে দিতে চায়।মালতী চিৎকার করে পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তার পা যেন মাটিতে গেঁথে গেছে। কামিনীর লম্বা, কালো চুল হঠাৎ জীবন্ত হয়ে উঠল। সেগুলো সাপের মতো ছটফট করতে করতে মালতীর হাত-পা জড়িয়ে ধরল, তাদের ঠান্ডা, পিচ্ছিল স্পর্শে মালতীর শরীরে এক তীব্র শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল। কামিনীর নখ মালতীর ত্বকে গভীরভাবে বসে গেল, রক্তের পাতলা ধারা গড়িয়ে পড়ল। সেই ব্যথার সঙ্গে মিশে গেল এক অদ্ভুত, অলৌকিক আকর্ষণ—মালতীর মন যেন এখনো কামিনীর মায়ায় বন্দি ছিল।"তুই আমার হবি, মালতী, জোর করেই হোক!" কামিনীর গলা এখন পুরোপুরি দানবীয়, তার কথাগুলো মালতীর হৃৎপিণ্ডে ছুরির মতো বিঁধছিল। তার চুল আরও শক্ত করে মালতীকে জড়িয়ে ধরল, যেন তাকে নিজের অন্ধকার জগতে টেনে নিয়ে যেতে চায়। মালতীর শরীরে কামিনীর স্পর্শের উত্তাপ এখনো অনুভূত হচ্ছিল, তার ফিসফিস এখনো তার কানে বাজছিল, এবং তার চোখে সেই ভয় আর আকর্ষণের দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠছিল।ঠিক সেই মুহূর্তে, দরজা ভেঙে একটি প্রচণ্ড শব্দে খুলে গেল। রুদ্রনাথ ঝড়ের মতো ঘরে প্রবেশ করল, তার হাতে একটি ত্রিশূল ঝকঝক করছিল, এবং তার গলায় ঝোলানো রুদ্রাক্ষের মালা থেকে একটি অদ্ভুত আলো নির্গত হচ্ছিল। তার চোখে জ্বলছিল এক অটল সংকল্প। "কামিনী, ছাড় তাকে!" তার কণ্ঠে এমন এক শক্তি ছিল যে ঘরের বাতাস যেন এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল।কামিনী ঘুরে তাকাল, তার মুখ এখন পুরোপুরি বিকৃত। তার চোখের কোটর ফাঁকা, শুধু অন্ধকারের গভীর গহ্বর। তার মুখ থেকে কালো, আঠালো রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল, এবং তার ঠোঁটে একটি হিংস্র হাসি ফুটে উঠল। "তুই আবার এসেছিস, তান্ত্রিক?" সে হাসল, তার কণ্ঠে বিদ্রূপ আর হুমকি মিশে ছিল। "মালতী আমার, আর তুই আমাকে থামাতে পারবি না!"রুদ্রনাথ কোনো কথা না বলে মন্ত্র পড়তে শুরু করল। তার কণ্ঠ গম্ভীর, প্রতিটি শব্দ যেন অদৃশ্য শক্তির তরঙ্গ তৈরি করছিল। তার রুদ্রাক্ষের মালা থেকে সোনালি আলোর রেখা বেরিয়ে এল, যা কামিনীর দিকে ছুটে গেল। কামিনী বিকট চিৎকার করে পিছিয়ে গেল, তার শরীর থেকে কালো ধোঁয়া আরও তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু তার চুল এখনো মালতীকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছিল, যেন সে মালতীকে ছাড়তে রাজি নয়।মালতী মাটিতে কাঁপছিল, তার শরীরে কামিনীর নখের দাগ থেকে রক্ত ঝরছিল। তার মনে এখনো কামিনীর সেই মায়াবী ফিসফিস বাজছিল। সে ফিসফিস করে বলল, "কামিনী... আমি তোকে ভয় পাই, কিন্তু..." তার কথা শেষ হল না। কামিনী তার দিকে তাকাল, এবং এক মুহূর্তের জন্য তার ফাঁকা চোখে সেই পুরনো মায়াবী হাসি ফিরে এল। "তুই আমাকে ভালোবাসিস, মালতী। শুধু স্বীকার কর," সে বলল, তার কণ্ঠে এখনো সেই মধুর আকর্ষণ মিশে ছিল।রুদ্রনাথের মন্ত্র আরও জোরালো হয়ে উঠল। সে ত্রিশূল দিয়ে মাটিতে একটি জটিল চিহ্ন আঁকল, এবং হঠাৎ ঘরে একটি বিস্ফোরণের মতো শব্দ হল। সোনালি আলোর একটি ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল, এবং কামিনীর চুল ছিঁড়ে গেল। মালতী মাটিতে পড়ে গেল, তার শরীর কাঁপছিল, তার চোখে ভয় আর বিস্ময় মিশে ছিল। কামিনী একটি চূড়ান্ত, বিকট চিৎকার করে বলল, "এটা শেষ নয়! মালতী, আমি তোর জন্য ফিরব!" তার শরীর কালো কুয়াশায় মিশে গেল, কিন্তু তার হাসি, সেই অলৌকিক, ভয়ংকর হাসি, ঘরের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে থাকল।মালতী মাটিতে পড়ে ছিল, তার শরীরে কামিনীর স্পর্শের উত্তাপ এখনো অনুভূত হচ্ছিল। তার মন দ্বিধায় ছিন্নভিন্ন—ভয়, আকর্ষণ, এবং এক অজানা তৃষ্ণা তাকে গ্রাস করছিল। রুদ্রনাথ তার দিকে এগিয়ে এল, তার চোখে উদ্বেগ আর দৃঢ়তা। "মালতী, তুমি ঠিক আছ?" সে জিজ্ঞাসা করল। কিন্তু মালতীর মনে শুধু একটি প্রশ্ন বাজছিল—কামিনী কি সত্যিই ফিরে আসবে?
মালতী আর রুদ্রনাথ কোনোমতে ঘর থেকে বেরিয়ে এল, তাদের পায়ের নিচে মাটি যেন এখনো কামিনীর অলৌকিক উপস্থিতির ওজনে কাঁপছিল। মালতীর শরীরে কামিনীর নখের গভীর দাগ থেকে রক্তের পাতলা ধারা শুকিয়ে যাচ্ছিল, তবুও তার ত্বকে এক অদ্ভুত জ্বালা অনুভূত হচ্ছিল—যেন সেই দাগগুলো তার শরীরে কামিনীর অস্তিত্বের চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। তার চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঝুলে ছিল, যেন তার আত্মার একটি অংশ কামিনীর অন্ধকার জগতে হারিয়ে গেছে। তার শ্বাস ভারী, প্রতিটি নিঃশ্বাসে কামিনীর ফিসফিসের প্রতিধ্বনি যেন তার কানে বাজছিল।রুদ্রনাথ তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, তার ত্রিশূল এখনো হাতে ধরা, রুদ্রাক্ষের মালা থেকে একটি ক্ষীণ আলো নির্গত হচ্ছিল। তার কপালে ঘামের ফোঁটা জমেছিল, চোখে উদ্বেগ আর দৃঢ়তার মিশ্রণ। সে মালতীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, "কামিনী তোমার মনের দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছে, মালতী। সে তোমার ভয়, তোমার কৌতূহল, তোমার লুকানো তৃষ্ণাকে কাজে লাগাচ্ছে। তুমি যদি তার প্রলোভনের কাছে হার মানো, তাহলে সে আরও শক্তিশালী হবে। তার অন্ধকার তোমাকে গ্রাস করবে।"মালতী কিছু বলল না। তার ঠোঁট শুকিয়ে গিয়েছিল, তার হাত তাবিজটির ওপর শক্ত করে চেপে ধরা। কিন্তু তার মন অন্য কোথাও ছিল। কামিনীর সেই মায়াবী স্পর্শ, তার মধুর ফিসফিস, তার চোখের গভীর দুঃখ—সবকিছু তার মনের গভীরে এক অদ্ভুত ঝড় তুলছিল। সে জানত, কামিনী একটি ভয়ংকর সত্ত্বা, কিন্তু তার মধ্যে এমন কিছু ছিল যা মালতীকে টানছিল—এক অজানা, নিষিদ্ধ আকর্ষণ। তার শরীরে সেই নখের দাগ যেন এখনো কামিনীর উষ্ণতা ধরে রেখেছিল, তার কানে সেই ফিসফিস বারবার ফিরে আসছিল।
।
জমিদার বাড়ির ধ্বংসের পর গ্রামে একটা অস্বস্তিকর শান্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু মালতীর মন অশান্ত।
রাতের গ্রাম যেন নিজেই একটা জীবন্ত ছায়া। মালতীর কুঁড়েঘরের মাটির মেঝেতে চাঁদের আলো এসে পড়ত, কিন্তু সেই আলোতেও একটা অন্ধকার লুকিয়ে থাকত।
বিছানায় শুয়ে মালতী চোখ বন্ধ করত, কিন্তু তার মনের অতলে কামিনীর রূপ ফিরে আসত—তার সাত ফুটের দেহ, যেন কোনো প্রাচীন মায়াবিনীর মূর্তি, ত্বকের ঝিলিকে রুপোলি আভা, আর চোখের জ্বলন্ত লাল আগুন। কামিনীর ঠোঁটে সেই হাসি—মিষ্টি, কিন্তু যেন বিষ মাখানো—মালতীর হৃদয়ে একই সঙ্গে ভয় আর এক অজানা টান জাগাত।
মালতী ঘুমের ঘোরে শুনতে পেত, একটা ফিসফিস, নরম কিন্তু অমোঘ: "মালতী, তুই আমার কাছে আয়।" তার শরীর কেঁপে উঠত, কিন্তু সেই কণ্ঠস্বরে একটা মায়া ছিল, যেন তাকে ডাকছিল কোনো নিষিদ্ধ রহস্যের দিকে। স্বপ্নে কামিনীর ছায়া কাছে আসত, তার স্পর্শের উত্তাপ মালতীর ত্বকে যেন আগুনের ফুলকি ছড়াত। সেই মুহূর্তে মালতী জানত না সে ভয় পাচ্ছে, নাকি সেই আগুনে নিজেকে হারিয়ে দিতে চায়।জেগে উঠলে তার শ্বাস ভারী হত, বুকের ধুকপুকানি থামত না। ঘরের কোণে ছায়া নড়ে উঠত, যেন কামিনী সত্যিই সেখানে দাঁড়িয়ে। জানালার বাইরে গাছের পাতায় হাওয়ার শব্দ মিশে যেত কামিনীর ফিসফিসের সঙ্গে: "তুই পালাতে পারবি না।"
মালতী নিজেকে বোঝাতে চাইত, এ শুধুই তার মনের খেলা। কিন্তু তার শরীরের কাঁপুনি, তার মনের অস্থিরতা আরও গভীর কিছুর ইঙ্গিত দিত। কামিনী কি কেবল একটা ভূত? নাকি মালতীর নিজের লুকানো আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি?মাঝরাতে, যখন গ্রাম ঘুমে ডুবে থাকত, মালতী অনুভব করত একটা কুয়াশার মত অবয়ব তার উপর উঠে আসছে, যার জ্বলন্ত লাল চোখ, সেই মিষ্টি হাসি, তার স্তন জোড়া, তার পেটের নাভির খাজ, আর তার স্পর্শের উত্তাপ। আর সেই কুয়াশার ভিতর থেকে একসাথে কয়েকটা হাত বের হয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করতে থাকতো।
তার দুধ গলা পেট নাভি পুরো জায়গায় হাতগুলো ঘুরতে লাগে আর মালতির প্রচন্ড সুখ অনুভূতি হয় খবর নিও আনন্দের সাথে তার ঘুম ভাঙ্গে
সে চোখ খুলত, কিন্তু কেউ থাকত না। শুধু বাতাসে একটা মৃদু সুগন্ধ ভাসত—যেন বুনো ফুলের গন্ধ, কিন্তু তাতে মিশে থাকত কিছুটা পোড়া কাঠের গন্ধ। মালতী জানত, কামিনী তার কাছেই আছে। আর সেই জানা তার ভয় আর আকর্ষণের মাঝে একটা অদ্ভুত সেতু তৈরি করত।
মালতী ঘামে ভিজে জেগে উঠত, তার শরীর কাঁপত, কিন্তু সেই ভয়ের মাঝেও এক অদ্ভুত মায়া তাকে টানত। কামিনীর স্পর্শের কল্পনা—যেন আগুনের উত্তাপে মোড়া বরফ—তার শিরায় রক্তের গতি বাড়িয়ে দিত। সে নিজেকে শান্ত করতে চাইত, বলত, "এ শুধুই স্বপ্ন।" কিন্তু রাতের পর রাত, কামিনীর উপস্থিতি যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠত। ঘরের কোণে ছায়া নড়ত, জানালার কাচে অস্পষ্ট প্রতিবিম্ব ভেসে উঠত। মালতী জানত না এ ভয়, না কোনো অচেনা আকর্ষণ। শুধু জানত, কামিনী তাকে ছাড়বে না।
এক রাতে, মালতী তার ঘরের জানালায় একটা কালো কুয়াশা দেখল। তার হৃৎপিণ্ড দ্রুত চলতে শুরু করল। সে তাবিজটা হাতে ধরল, কিন্তু কুয়াশা থেকে কামিনীর রূপ ফুটে উঠল। সে এবার আরো মায়াবী—তার রক্তলাল শাড়ি যেন তার শরীরের সঙ্গে মিশে গেছে, তার লম্বা চুল মাটিতে ছড়িয়ে পড়ছে, আর তার ঠোঁটে একটা প্রলোভনময় হাসি। তার সাত ফুটের উচ্চতা মালতীর সামনে দাঁড়িয়ে একটা অদ্ভুত আকর্ষণ তৈরি করল।"মালতী," কামিনী ফিসফিস করল, তার কণ্ঠে মধু ঝরছে। "তুই কেন আমাকে ভয় পাস? আমি তোকে চাই, তোর মতো কেউ আমাকে বুঝতে পারে।" মালতী পিছিয়ে গেল, কিন্তু তার শরীর যেন নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কামিনী এগিয়ে এল, তার হাত মালতীর কাঁধে রাখল। সেই স্পর্শে মালতীর শরীরে একটা শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল—যেন বরফ আর আগুন একসঙ্গে তার শিরায় বইছে।
মালতীর শ্বাস ভারী হয়ে এল। কামিনীর স্পর্শ, যেন তার শরীরের প্রতিটি কোষে এক অজানা তরঙ্গ ছড়িয়ে দিচ্ছিল। তার হাত, ঠান্ডা কিন্তু অদ্ভুতভাবে উষ্ণ, মালতীর কাঁধ থেকে ধীরে ধীরে তার বাহুর দিকে নেমে এল। প্রতিটি স্পর্শে মালতীর হৃৎপিণ্ড আরও দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছিল, যেন তার শরীর কামিনীর এই অলৌকিক উপস্থিতির সঙ্গে এক অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।কামিনীর রক্তলাল শাড়ি মেঝেতে ছড়িয়ে পড়েছিল, যেন তা কোনো জীবন্ত সত্ত্বা, মালতীর চারপাশে আলতো করে জড়িয়ে ধরছে। তার লম্বা কালো চুল বাতাসে দুলছিল, যদিও ঘরে কোনো হাওয়া ছিল না। তার চোখ, গভীর এবং জ্বলন্ত, মালতীর দৃষ্টিকে বন্দি করে রেখেছিল। সেই চোখে দুঃখ ছিল, কিন্তু তার সঙ্গে ছিল এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ।"মালতী," কামিনী আবার ফিসফিস করল, তার কণ্ঠে এমন এক মায়া ছিল যে মালতী নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও তার দিকে ঝুঁকে পড়ল। "তুই কি জানিস, ভালোবাসা কতটা শক্তিশালী হতে পারে? এমনকি মৃত্যুও তাকে ধ্বংস করতে পারে না।" কামিনীর ঠোঁটে সেই প্রলোভনময় হাসি ফিরে এল, কিন্তু এবার তা আরও গভীর, আরও রহস্যময়।মালতী পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তার পা যেন মাটিতে গেঁথে গেছে। কামিনীর হাত এখন তার গালে উঠে এসেছে, আঙুলের ডগা দিয়ে সে মালতীর ত্বকে আলতো করে স্পর্শ করল। সেই স্পর্শে মালতীর শরীরে একটা শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল—যেন তার ভেতরের সমস্ত ভয়, সমস্ত সংশয় গলে যাচ্ছে।"তুই আমাকে ভয় পাস, কিন্তু তোর এই ভয়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কৌতূহল," কামিনী বলল, তার কণ্ঠ এখন আরও গভীর, আরও মোহনীয়। "তুই জানতে চাস আমি কে। তুই জানতে চাস আমার গল্প। আর আমি... আমি চাই তুই আমার সঙ্গে থাকিস।"মালতীর মন দ্বিধায় দুলছিল। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই সত্ত্বা ভয়ংকর, কিন্তু একই সঙ্গে অদ্ভুতভাবে আকর্ষণীয়। কামিনীর দুঃখ, তার অপূর্ণ ভালোবাসার গল্প, মালতীর হৃদয়ে এক অজানা সহানুভূতি জাগিয়ে তুলছিল। কিন্তু তার স্পর্শ, তার কণ্ঠ, তার উপস্থিতি—সবকিছুই মালতীকে এমন এক জগতে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, যেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন।
কামিনী মালতীর আরও কাছে এল, তার শরীর থেকে ছড়িয়ে আসা এক অলৌকিক উষ্ণতা মালতীর ত্বককে স্পর্শ করছিল। তার লম্বা, ধারালো নখ মালতীর গালে আলতো করে ছুঁয়ে গেল, যেন একটি অদৃশ্য ছবি আঁকছে। সেই স্পর্শে মালতীর শরীরে এক তীব্র শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল, তার চোখ অজান্তেই বন্ধ হয়ে গেল। তার মনে হল, সে এক অন্ধকার, কিন্তু মায়াবী জগতে ডুবে যাচ্ছে—যেখানে সময় থেমে গেছে, এবং শুধু কামিনীর অস্তিত্বই বিরাজ করছে।কামিনীর শ্বাস, ঠান্ডা কিন্তু মধুর, মালতীর কানের কাছে এসে লাগল। "আমার সঙ্গে থাক, মালতী," সে ফিসফিস করল, তার কণ্ঠে এমন এক মায়া ছিল যেন তা মালতীর সমস্ত ইচ্ছাশক্তিকে গলিয়ে দিচ্ছে। "আমি তোকে এমন ভালোবাসা দেব, যা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এমন ভালোবাসা, যা মৃত্যুকেও অতিক্রম করে।" তার কথাগুলো মালতীর মনে এক অজানা তৃষ্ণা জাগিয়ে তুলল, যেন তার শরীর ও মন কামিনীর এই প্রলোভনের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাইছে।মালতীর শরীর কাঁপছিল, তার হৃৎপিণ্ড এত জোরে ধুকপুক করছিল যে সে ভাবল, কামিনী নিশ্চয়ই এই স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে। কামিনীর হাত ধীরে ধীরে মালতীর কাঁধ থেকে তার কোমরের দিকে নেমে এল, তার আঙুলের স্পর্শে এক অদ্ভুত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছিল। মালতী চাইলেও পিছিয়ে যেতে পারছিল না; তার শরীর যেন কামিনীর এই মোহনীয় উপস্থিতির সঙ্গে এক অদৃশ্য শৃঙ্খলে বাঁধা পড়েছিল।কামিনীর রক্তলাল শাড়ি মালতীর পায়ের কাছে ছড়িয়ে পড়েছিল, যেন তা একটি জীবন্ত স্রোত, মালতীকে নিজের মধ্যে টেনে নিতে চাইছে। তার লম্বা কালো চুল মালতীর হাতের কাছে এসে স্পর্শ করল, এবং সেই মুহূর্তে মালতীর মনে হল, সে কামিনীর সঙ্গে এক অলৌকিক বন্ধনে জড়িয়ে পড়ছে। কামিনীর চোখ, গভীর এবং জ্বলন্ত, মালতীর দৃষ্টিকে বন্দি করে রেখেছিল। সেই চোখে এক অপার দুঃখ ছিল, কিন্তু তার সঙ্গে ছিল এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ, যা মালতীর মনকে দোলা দিচ্ছিল।মালতীর মন দ্বিধায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। একদিকে তার ভয়, তার স্বাভাবিক জ্ঞান তাকে পালাতে বলছিল; অন্যদিকে কামিনীর স্পর্শ, তার কণ্ঠ, তার প্রলোভন তাকে এই অন্ধকার জগতের গভীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। সে অনুভব করল, তার শরীর আর মন আর তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই—কামিনীর মায়ায় সে পুরোপুরি আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
হঠাৎ মালতীর গলায় ঝুলন্ত তাবিজটি জ্বলন্ত গরম হয়ে উঠল, যেন তার ত্বকে একটি আগুনের ছোঁয়া লাগছে। তীব্র উত্তাপে তার চোখ খুলে গেল, এবং সে যা দেখল, তাতে তার রক্ত জমে গেল। কামিনীর মুখ, যা কিছুক্ষণ আগেও মায়াবী সৌন্দর্যে ভরা ছিল, এখন ভয়ংকরভাবে বিকৃত হয়ে যাচ্ছিল। তার চোখের কোটর থেকে কালো, গাঢ় রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল, যেন দুটি অন্ধকার ঝর্ণা। তার ঠোঁটের কোণে ধারালো, পশুর মতো দাঁত ঝকঝক করছিল, এবং তার মুখে সেই প্রলোভনময় হাসি এখন একটি দানবীয় হিংস্রতায় রূপান্তরিত হয়েছিল।"তুই আমাকে প্রত্যাখ্যান করছিস?" কামিনীর গলা থেকে একটি গভীর, অমানুষিক গর্জন বেরিয়ে এল, যা ঘরের দেয়ালগুলোকে কাঁপিয়ে তুলল। তার শরীর থেকে কালো, ঘন ধোঁয়া উঠতে শুরু করল, যা মালতীর চারপাশে পাক খেয়ে তাকে আবদ্ধ করতে চাইছিল। ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠল, যেন অদৃশ্য একটি শক্তি মালতীর শ্বাস বন্ধ করে দিতে চায়।মালতী চিৎকার করে পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তার পা যেন মাটিতে গেঁথে গেছে। কামিনীর লম্বা, কালো চুল হঠাৎ জীবন্ত হয়ে উঠল। সেগুলো সাপের মতো ছটফট করতে করতে মালতীর হাত-পা জড়িয়ে ধরল, তাদের ঠান্ডা, পিচ্ছিল স্পর্শে মালতীর শরীরে এক তীব্র শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল। কামিনীর নখ মালতীর ত্বকে গভীরভাবে বসে গেল, রক্তের পাতলা ধারা গড়িয়ে পড়ল। সেই ব্যথার সঙ্গে মিশে গেল এক অদ্ভুত, অলৌকিক আকর্ষণ—মালতীর মন যেন এখনো কামিনীর মায়ায় বন্দি ছিল।"তুই আমার হবি, মালতী, জোর করেই হোক!" কামিনীর গলা এখন পুরোপুরি দানবীয়, তার কথাগুলো মালতীর হৃৎপিণ্ডে ছুরির মতো বিঁধছিল। তার চুল আরও শক্ত করে মালতীকে জড়িয়ে ধরল, যেন তাকে নিজের অন্ধকার জগতে টেনে নিয়ে যেতে চায়। মালতীর শরীরে কামিনীর স্পর্শের উত্তাপ এখনো অনুভূত হচ্ছিল, তার ফিসফিস এখনো তার কানে বাজছিল, এবং তার চোখে সেই ভয় আর আকর্ষণের দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠছিল।ঠিক সেই মুহূর্তে, দরজা ভেঙে একটি প্রচণ্ড শব্দে খুলে গেল। রুদ্রনাথ ঝড়ের মতো ঘরে প্রবেশ করল, তার হাতে একটি ত্রিশূল ঝকঝক করছিল, এবং তার গলায় ঝোলানো রুদ্রাক্ষের মালা থেকে একটি অদ্ভুত আলো নির্গত হচ্ছিল। তার চোখে জ্বলছিল এক অটল সংকল্প। "কামিনী, ছাড় তাকে!" তার কণ্ঠে এমন এক শক্তি ছিল যে ঘরের বাতাস যেন এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল।কামিনী ঘুরে তাকাল, তার মুখ এখন পুরোপুরি বিকৃত। তার চোখের কোটর ফাঁকা, শুধু অন্ধকারের গভীর গহ্বর। তার মুখ থেকে কালো, আঠালো রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল, এবং তার ঠোঁটে একটি হিংস্র হাসি ফুটে উঠল। "তুই আবার এসেছিস, তান্ত্রিক?" সে হাসল, তার কণ্ঠে বিদ্রূপ আর হুমকি মিশে ছিল। "মালতী আমার, আর তুই আমাকে থামাতে পারবি না!"রুদ্রনাথ কোনো কথা না বলে মন্ত্র পড়তে শুরু করল। তার কণ্ঠ গম্ভীর, প্রতিটি শব্দ যেন অদৃশ্য শক্তির তরঙ্গ তৈরি করছিল। তার রুদ্রাক্ষের মালা থেকে সোনালি আলোর রেখা বেরিয়ে এল, যা কামিনীর দিকে ছুটে গেল। কামিনী বিকট চিৎকার করে পিছিয়ে গেল, তার শরীর থেকে কালো ধোঁয়া আরও তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু তার চুল এখনো মালতীকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছিল, যেন সে মালতীকে ছাড়তে রাজি নয়।মালতী মাটিতে কাঁপছিল, তার শরীরে কামিনীর নখের দাগ থেকে রক্ত ঝরছিল। তার মনে এখনো কামিনীর সেই মায়াবী ফিসফিস বাজছিল। সে ফিসফিস করে বলল, "কামিনী... আমি তোকে ভয় পাই, কিন্তু..." তার কথা শেষ হল না। কামিনী তার দিকে তাকাল, এবং এক মুহূর্তের জন্য তার ফাঁকা চোখে সেই পুরনো মায়াবী হাসি ফিরে এল। "তুই আমাকে ভালোবাসিস, মালতী। শুধু স্বীকার কর," সে বলল, তার কণ্ঠে এখনো সেই মধুর আকর্ষণ মিশে ছিল।রুদ্রনাথের মন্ত্র আরও জোরালো হয়ে উঠল। সে ত্রিশূল দিয়ে মাটিতে একটি জটিল চিহ্ন আঁকল, এবং হঠাৎ ঘরে একটি বিস্ফোরণের মতো শব্দ হল। সোনালি আলোর একটি ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল, এবং কামিনীর চুল ছিঁড়ে গেল। মালতী মাটিতে পড়ে গেল, তার শরীর কাঁপছিল, তার চোখে ভয় আর বিস্ময় মিশে ছিল। কামিনী একটি চূড়ান্ত, বিকট চিৎকার করে বলল, "এটা শেষ নয়! মালতী, আমি তোর জন্য ফিরব!" তার শরীর কালো কুয়াশায় মিশে গেল, কিন্তু তার হাসি, সেই অলৌকিক, ভয়ংকর হাসি, ঘরের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে থাকল।মালতী মাটিতে পড়ে ছিল, তার শরীরে কামিনীর স্পর্শের উত্তাপ এখনো অনুভূত হচ্ছিল। তার মন দ্বিধায় ছিন্নভিন্ন—ভয়, আকর্ষণ, এবং এক অজানা তৃষ্ণা তাকে গ্রাস করছিল। রুদ্রনাথ তার দিকে এগিয়ে এল, তার চোখে উদ্বেগ আর দৃঢ়তা। "মালতী, তুমি ঠিক আছ?" সে জিজ্ঞাসা করল। কিন্তু মালতীর মনে শুধু একটি প্রশ্ন বাজছিল—কামিনী কি সত্যিই ফিরে আসবে?
মালতী আর রুদ্রনাথ কোনোমতে ঘর থেকে বেরিয়ে এল, তাদের পায়ের নিচে মাটি যেন এখনো কামিনীর অলৌকিক উপস্থিতির ওজনে কাঁপছিল। মালতীর শরীরে কামিনীর নখের গভীর দাগ থেকে রক্তের পাতলা ধারা শুকিয়ে যাচ্ছিল, তবুও তার ত্বকে এক অদ্ভুত জ্বালা অনুভূত হচ্ছিল—যেন সেই দাগগুলো তার শরীরে কামিনীর অস্তিত্বের চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। তার চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঝুলে ছিল, যেন তার আত্মার একটি অংশ কামিনীর অন্ধকার জগতে হারিয়ে গেছে। তার শ্বাস ভারী, প্রতিটি নিঃশ্বাসে কামিনীর ফিসফিসের প্রতিধ্বনি যেন তার কানে বাজছিল।রুদ্রনাথ তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, তার ত্রিশূল এখনো হাতে ধরা, রুদ্রাক্ষের মালা থেকে একটি ক্ষীণ আলো নির্গত হচ্ছিল। তার কপালে ঘামের ফোঁটা জমেছিল, চোখে উদ্বেগ আর দৃঢ়তার মিশ্রণ। সে মালতীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, "কামিনী তোমার মনের দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছে, মালতী। সে তোমার ভয়, তোমার কৌতূহল, তোমার লুকানো তৃষ্ণাকে কাজে লাগাচ্ছে। তুমি যদি তার প্রলোভনের কাছে হার মানো, তাহলে সে আরও শক্তিশালী হবে। তার অন্ধকার তোমাকে গ্রাস করবে।"মালতী কিছু বলল না। তার ঠোঁট শুকিয়ে গিয়েছিল, তার হাত তাবিজটির ওপর শক্ত করে চেপে ধরা। কিন্তু তার মন অন্য কোথাও ছিল। কামিনীর সেই মায়াবী স্পর্শ, তার মধুর ফিসফিস, তার চোখের গভীর দুঃখ—সবকিছু তার মনের গভীরে এক অদ্ভুত ঝড় তুলছিল। সে জানত, কামিনী একটি ভয়ংকর সত্ত্বা, কিন্তু তার মধ্যে এমন কিছু ছিল যা মালতীকে টানছিল—এক অজানা, নিষিদ্ধ আকর্ষণ। তার শরীরে সেই নখের দাগ যেন এখনো কামিনীর উষ্ণতা ধরে রেখেছিল, তার কানে সেই ফিসফিস বারবার ফিরে আসছিল।
।