Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica তার ছিঁড়ে গেছে কবে
#56
(১৪)


জন্মদিনের মুখর তিথি


অক্টোবরের শেষ দিকে কালীপুজোর দিনই প্রবল জ্বরে পড়ল সৌমাভ। ঘটনাচক্রে সে দিনটাই ওর জন্মদিন। যদিও জন্মদিন পালন কাকে বলে, ছোটবেলায় মা হারানো সৌমাভ তা জানত না। তবে আন্দামানে থাকাকালীন ঈশিতার চাপাচাপিতে ওকে কথাটা বলেছিল একবার। ওই অবধিই। গুঞ্জাও একবার জেদাজেদি করে ওর জন্মদিনটা জেনেছিল। তবে গুঞ্জাকে ও মানা করেছিল, কাউকে দিনটার কথা না বলতে। গুঞ্জা সে কথা রেখেছিল। তাই এবারও ওর জন্মদিনটা কেটে গেল বহু বছরের মতোই, নীরবে, নিভৃতে। দু’দিন প্রায় জ্ঞান রইল না জ্বরের তাড়সে। টানা পরিশ্রম এবং রাতের পর রাত জাগা ওকে ভিতরে ভিতরে কাহিল করে দিয়েছিল অনেক দিন ধরে। একটা মানসিক যন্ত্রণাও ওকে ভিতরে ভিতরে অনেকটা ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু কাউকেই কিচ্ছু বুঝতে দেয়নি ও। কেউ বোঝেওনি, এমনকি ঈশিতাও না। আসলে বহু বছর ধরে একা থাকার জীবন ওকে নিজেকে আড়াল করতে শিখিয়েছিল। নিজের কষ্টের জন্য কাউকে বিব্রত করতে বা অসুবিধায় ফেলতে বা কারও সহানুভূতি পেতে মন চাইত না ওর। বিয়ের পরে একমাসের জন্য ঈশিতাকে কাছে পেলেও কলকাতা আসা ইস্তক সেই পুরনো একাকীত্বের জীবনেই ফিরতে হয়েছে ওকে। খারাপ লাগলেও সেটা নীরবে মেনে নিয়েছিল। পাশাপাশি ঈশিতার ব্যবহারে প্রবল বদলটাও ওকে কোথাও ধাক্কা দিয়েছিল। তাই বাপের বাড়ি যাওয়ার পর থেকে যে ক’বার ঈশিতার সঙ্গে সৌমাভর কথা হয়েছে, ও পুরনো ঈশি ডাক ছেড়ে ঈশিতাই বলা শুরু করেছে। সকলের সামনে তো বটেই, আলাদা করে কথা বলার সময়েও। কিন্তু সৌমাভর ডাকের এই বদল ঈশিতা খেয়ালই করেনি! সব দেখেশুনে আবার নিজের পুরনো জীবনেই ফিরে গিয়েছিল মানসিক ভাবে। এই গুরুতর অসুস্থতার কথাও যথারীতি কাউকেই জানাল না। কিন্তু পরপর চার দিন না ওর কোনও ফোন বা ও নিজে না আসায় ঈশিতার বাড়ির লোক কিছুটা উদ্বেগে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত ঈশিতার বড় জামাইবাবু ওর অফিসে ফোন করে জানলেন, তিন দিন ধরে সৌমাভ অফিসে যায়নি। তিনি কথাটা কাউকে বললেন না, শুধু নিজের ভায়রাকে ছাড়া। চার দিনের দিন দুপুরে ঈশিতার দুই জামাইবাবু বেলেঘাটার ফ্ল্যাটে গিয়ে বিস্তর দরজা ধাক্কিয়ে ওকে যখন তুললেন, দেখে চমকে গেলেন। তাঁদের দেখা এক বছর আগের সেই ঝকঝকে, চনমনে ভাব চলে গিয়েছিল আগেই। সেটা ঈশিতা সামান্য খেয়াল করলেও এ নিয়ে কথা বাড়ায়নি। বলা যায় সাহস পায়নি নিজে ধরা পড়ে যাবে, এই ভয়ে। কারণ একমাত্র ও নিজেই সত্যিটা জানে আর এটাও জানে, সৌমাভও সেটা ধরে ফেলেছে বহু আগেই। আর ওর বাড়ির লোকেরা কেউ খেয়ালই করেনি। এ বারে তাঁরা দেখলেন দুর্বল, শীর্ণ একটা লোক! চমকে উঠলেন দু’জনেই। ওঁরা দু’জনেই বিস্তর জোরাজুরি করে ও বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে জোর গলায় আপত্তি জানাল সৌমাভ। স্পষ্ট জানিয়ে দিল, এই অবস্থায় ও বাড়িতে গিয়ে ঈশিকাকে, বাচ্চাদুটোকে বা ঈশিতার বাবা-মাকে সমস্যায় ফেলবে না। আগামী সপ্তাহ থেকে আবার যাবে, আগের মতো। একই সঙ্গে দু’জনকে অনুরোধ করল, ওর শরীর খারাপের কথা যেন আপাতত কেউ জানতে না পারে। ওর কথার মধ্যেকার দৃঢ়তা দেখে থমকে গেলেও কথা রাখবেন বলে জানালেন দুই জামাইবাবুই। একই সঙ্গে বুঝলেন, প্রায় একবছর আগে তাঁদের দেখা ঝকঝকে তরুণ ফরেস্ট অফিসারটি অনেক বদলে গেছে। শরীরের দিক থেকে তো বটেই, মনের দিক থেকেও। সেই চনমনে, ঝকঝকে, রসিক ছেলেটা কোথাও যেন হারিয়ে গেছে।
[+] 7 users Like Choton's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: তার ছিঁড়ে গেছে কবে - by Choton - 03-05-2025, 02:31 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)