30-04-2025, 01:15 AM
৭
মিরার ব্যবহার করা পারফিউম থেকে নীলয়ের বিশ্বাস হয়েছে যে জায়েদ মিরাকে বেশ দামি দামি গিফট দেয় । তাই নীলয় ঠিক করেছে এখানেও মিরাকে সেই একি রকম লাইফস্টাইল এর নিশ্চয়তা দেবে ও। কারো গিফট এর জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে না । নিজেই যখন যা খুশি নিজের পরছন্দ মতন কিনে নিতে পারবে ।
আজকেও মিরা বেশ সাধারন পোশাক ই পড়েছে । নীলয় মনে মনে একটু হতাশ হলেও ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে । মিরা নিজের ভাইয়ের সাথে শপিঙয়ে যাচ্ছে , অন্য কোন ছেলের সাথে ডেটে নয় । তাই সাধারন দইনন্দিন পোশাক পরাই তো স্বাভাবিক । তবে নীলয় নিজের নিরাশ হওয়ার ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না । গতকাল ও নীলয় এমন হতাশ হয়েছিলো । নিজের এমন অস্বাভাবিক আচরনের জন্য মনে মনে লজ্জিত হয় নীলয় । ভাবে এখন আর আগের মত ছোট নেই , তার উপর মিরার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এসবের উপরে । মনে মনে নিজেকে বুঝ দেয় নীলয় , বলে মিরা সাধারন পোশাক পরলেই কি আর হট পোশাক পরলেই কি ওর তাতে কিছু এসে যায় না । বরং একজন বড় ভাই হিসেবে মিরাকে সাধারন পোশাক পরতেই উৎসাহিত করা উচিৎ ওর । মিরা ওর গার্ল ফ্রেন্ড নয় যে লোকের সামনে ফ্লেক্স করে বেড়াবে , এই দেখো আমার গার্ল ফ্রেন্ড কি হট ।
তবে যেকোনো পোষাকেই মিরা কে দেখতে বেশ লাগে । এর প্রধান কারন ওর ভরাট সুন্দর ফিগার আর দ্বিতীয় কারন মিরার হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত আচরন আর চলাফেরা । মিরার মাঝে কোন ধরনের আড়ষ্টতা নেই । ওকে দেখে মনে হয় আশেপাশে কে আছে , তারা কি মনে করছে এসব ব্যাপারে ওর থোড়াই কেয়ার আছে । মিরার চরিত্রের মাঝে এসব ব্যাপার গুলো নীলয় এবার ই প্রথম লক্ষো করছে । আগে মিরা এরকম ছিলো বলে ওর কাছে মনে হয় না । আর দশটা মেয়ের মতই আচরন ছিলো মিরার । আবার মনে হয়, কি জানি ? হয়তবা ঠিক মত খেয়াল করে দেখা হয়নি আগে ।
“কোথায় নিয়া যাচ্ছিস আজকে?”
কিছুক্ষণ ভাবার ভান করে নীলয় তারপর বলে “ চল তোরে শপিং এ নিয়া যাই” মিরা কে বুঝতেই দেয় না যে ও আগে থেকেই এই প্লান করে রেখেছিলো ।
“ওয়াও ভাইয়া তুই তো দেখি খুব জেনারস হইয়া গেছিস, পয়সা পাত্তি হইলে লোকজন উদার হইয়া যায় নারে?”
মিরাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও বেশ খুশি হয়েছে , মনে মনে নীলয় নিজেকে বাহবা দেয় । ভাবে এই এনার্জি যদি অন্য কোন মেয়ের পেছনে খরচ করতো তাহলে এতদিনে দুই একটা গার্ল ফ্রেন্ড যোগার হয়ে যেতো ।
“ আরে ধ্যাত ঘুরাইতে নিয়া যাচ্ছি , শপিং করতে না, দুই একটা জিনিস পছন্দ হইলে কিনতে পারিস তবে বেশি না বুঝলি”
শহরের সবচেয়ে বড় শপিং মলে মিরাকে নিয়ে গেলো নীলয় । এতো বড় যে একদিনে হেঁটে শেষ করা সম্ভব নয় । শপিং মল দেখে মিরার চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসার যোগার । ব্যাপারটা নীলয় কে এক ধরনের আনন্দ দেয় । কিন্তু আনন্দ অনুভূতিটা নীলয় ঠিক উপভোগ করে না । এই আপাত দৃষ্টে নিরীহ আনন্দের আড়ালে কেমন জানি একটা ডার্ক মেটারের উপস্থিতি অনুভব হয় ওর মাঝে ।
দুজনে মিলে শপিং মলের ভেতরে প্রবেশ করে । বেশ কিছুক্ষণ এমনি ঘোরাফেরার পর নীলয় মিরাকে নিয়ে বেশ দামি কয়েকটা ব্রান্ডের দোকানে প্রবেশ করে । মিরা প্রথমে সংকোচ করলেও নীলয়ের উৎসাহে বেশ অনেক গুলো ড্রেস আর এক্সেসরিজ কিনে ফেলে ।
শপিং শেষে ওরা দুজন ফুড কোর্টে লাঞ্চ করার জন্য যায় । অর্ডার করার পর মিরা বলে “ ওয়াও ভাইয়া তুই তো সত্যি সত্যি পুরা মালদার লোক রে, বাবা খালি খালি তোকে বিরক্ত করতো পড়াশুনা নিয়া”
উত্তরে নীলয় কিছু বলে বলে না সুধু হাসে একটু ,
“ আসলে সবাই কে নিজের ইচ্ছা মতন ক্যারিয়াররে যেতে দেয়াই উচিৎ”
মিরার এই কোথায় নীলয় মাথা ঝাকিয়ে সায় দেয় তার জিজ্ঞাস করে “ তা তোর ইচ্ছা কি ভবিষ্যৎ নিয়া”
মাথা ঝাকায় মিরা , বলে “ জানি না”
“ উঁহু , সবার উচিৎ ক্যারিয়ার নিয়া চিন্তা করা , লাইফে aim না থাকলে কিছু করা যায় না”
“ এইতো শুরু করলি বাবার মতন কথা বার্তা” নীলয়ের কোথায় বেশ বিরক্ত হয় মিরা । অবশ্য নীলয় কথা গুলো বলেই বুঝতে পেরেছিলো কথাগুলো আসলেই ওর বাবার মত হয়ে গিয়েছে । তাই হেসে ফেলল নীলয় । বলল “ ঠিক আছে যা আর বল্মু না”
আসলে গত দুই দিনে ওদের মাঝে যত কথা হয়েছে তা গত দুই বছরেও হয়নি । এখন হয়তো এসব নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না ……… মনে মনে ভাবে নীলয় । মিরার সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। তবেই না ওকে এখানে রাখা যাবে ।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নীলয় একটু থমকে যায় । মিরাকে এখানে রাখার এমন ডেস্পারেট চেষ্টা কে কেমন জানি দৃষ্টি কটু লাগে ওর কাছে । হ্যা এটা সত্য জায়েদ ছেলেটা তেমন ভালো নয় । কিন্তু সেটা তো প্রায় চারবছর আগের জায়েদ , এখন জায়েদ কেমন হয়েছে সেই সম্পর্কে নীলয়ের কোন ধারনা নেই । একজন বড় ভাই হিসেবে কি নীলয়ের উচিৎ না মিরার সাথে খলাখুলি আলাপ করা ?
আসলেই কি জায়েদের সাথে মিরার কোন সিরিয়াস সম্পর্ক আছে কিনা সেটা জনার চেষ্টা করা । অথচ ও কি করছে ? চক্রান্ত করছে , এমনকি মিরা যখন নানা রকম দামি জিনিসপত্র কিনে আনন্দ পাচ্ছিলো তখন নীলয় এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করছিলো । কিন্তু সেই অনুভুতি যে এক বড় ভাইয়ের ছোট বোনের আনন্দ দেখে তৃপ্তি পাওয়ার চেয়ে আলাদা ধরনের তৃপ্তি সেটা নীলয় নিজের কাছে স্বীকার না করলেও একদম অস্বীকার করতে পারছে না ।
“ কিরে কই হারাইয়া গেলি”
মিরার ডাকে নীলয় ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে এলো ।
এরি মাঝে খাবার চলে এসেছে , দুজনে মিলে সেটা শেষ করলো । তারপর মিরা বলল “ ভাইয়া এই সব শপিং মলে নাকি সিনেপ্লেক্স থাকে , চল সিনেমা দেখি , আমার অনেক ইচ্ছা সিনেপ্লেস্কে সিনেমা দেখার”
“ ঠিক আছে চল”
দুজনে মিলে সিনেমা দেখে বের হলো সন্ধার কিছু আগে । সেখান থেকে সোজা বাসায় চলে এলো । বাসায় এসে অবশ্য রিলেক্স হওয়ার টাইম পেলো না তেমন । ওদের বাবা নিজের কাজ শেষে করে চলে এসেছে । আজকে আসার কথা ছিলো না ওদের বাবার । কথা ছিলো উনি গতকাল সকালে এসে সন্ধার ট্রেনে চলে যাবে । কিন্তু জোবায়দা বেগম বিশেষ করে বলে দিয়েছে আজকে রাতের খাবার যেন নীলয় মিরা আর ওদের বাবা ওনার বাড়িতে করে । তাই নীলয়ের বাবা সন্ধায় ই চলে এসেছে ।
সবাই দ্রুত তৈরি হয় ঈশানদের বাড়ীতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয় । এবার অবশ্য মিরা সাধারন পোশাক পড়লো না । বেশ সুন্দর একটা ড্রেস পড়লো । সাথে হালকা প্রসাধনি ও ব্যাবহার করেছে । মনে মনে নীলয় কে প্রশংসা করতেই হলো যে মিরার বেশ পরিস্থিতি জ্ঞান আছে । দারুন দেখাচ্ছিলো মিরাকে । স্লিভলেস একটা সালোয়ার সাথে চুরিদার পাজামা , চোখে কাজল, কপালে একটা টিপ ও পড়েছে । মিরাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এই মেয়ে স্টেকের সাথে বিয়ার খায় । এরকম ক্লাসিক সাঁজেও মিরাকে আগে কখনো দেখছে বলে মনে পরেনা নীলয়ের ।
জোবায়দা বেগম মিরা কে দেখে যেমন রিয়েক্ট করলো , তাতে নীলয়ের মনে হলো মিরা যেন ঈশানের মা কেই ইম্প্রেস করার জন্য মিরা এমন ভাবে তৈরি হয় এসেছে । জোবায়দা বেগম প্রথমেই মিরা কে জড়িয়ে ধরে বল্লেন “ ওমা কি সুন্দর মেয়ে আমার , একদম পরীর মতন”
মিরাও লাজুক হাসল , এই হাসি নীলয় নতুন দেখছে , যা মিরার সাধারন আচরনের সাথে ঠিক যায় না। মিরাকে সবসময় প্রান খোলা ভাবেই হাঁসতে দেখছে ও।
খাওয়ার টেবিলেই মিরা জোবায়দা বেগম আর রিবার বেশ সাক্ষতা তৈরি হয়ে গেলো । “ ভাই সাহেব আর যাই বলেন না ক্যান আপনার দুইটা ছেলে মেয়েই একদম হীরার টুকরা হইসে” খাওয়ার এক ফাঁকে নীলয়ের আর মিরার বাবা কে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা দিলেন জোবায়দা বেগম । নীলয়ের বাবা অবশ্য এর উত্তরে কিছু বলল না , একটু মুচকি হাসল সুধু । নীলয়ের ঠোঁটেও মুচকি হাসি দেখা দিলো , আড় চোখে একবার বাবা কে দেখে নিয়েছে ও , বাবার কি রিএকশন হয় সেটা দেখার লোভ সামলাতে পারেনি। অবশ্য তেমন বিশেষ কিছু দেখতে পায় নি নীলয় । বাবা যে জোবায়দা বেগমের সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত তাতে কোন সন্দেহ ওর মনে নেই । তবে সন্তানের মিথ্যা গুনগান ও হয়তো বাবা মা কে গরবিত করে , অন্তত গর্বিত না করলেও ওদের জন্য প্রসান্তি বয়ে আনে ।
কথা বলল মিরা “ জেবু খালা , তুমি এইটা কি বল্লা , বাবা তো এখন হার্ট এটাক করবে হি হি হি” হ্যাঁ এতক্ষনে মিরার কাছে জোবায়দা বেগম জেবু খালা হয়ে গেছে ।
খাওয়া দাওয়া শেষে জোবায়দা বেগম আর নীলয়ের বাবা লিভিং রুমে বসে গল্প করতে থাকে আর মিরাকে রিবা নিজের ঘরে নিয়ে যায় । এক বছরের ছোট রিবার সাথে দারুন সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে মিরার । বলতে গেলে রিবাই মিরার ভক্ত হয়ে গেছে । এদিকে নীলয় ও ঈশানের সাথে কিছুটা অফিস বিষয়ক আলাপের জন্য ঈশানের ঘর লাগোয়া বারান্দায় চলে আসে ।
এসেই সিগারেট ধরায় ঈশান , ঈশানকে মটামুটি চেইন স্মোকার ই বলা যায় ।আলচনার এক ফাঁকে নীলয় ঈশান কে জানায় যে ও চাচ্ছে মিরা যেন এখানেই থেকে যায় । শুনে ঈশান খুব খুশি হয় । ঈশানের এমন খুশি হওয়া দেখে নীলয়ের মনে একটু খটকা লাগে । ঈশান কে ভালো করে একবার পরখ করে নেয় নীলয়। মনে মনে ভাবে ঈশান নিজেও একটা ছেলে , আর কোন ছেলের পক্ষেই মিরা কে দেখার পর অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয় । ঈশান এর এমন খুশি হওয়ার পেছনে কি অন্য কোন মতলব আছে কিনা? এমন প্রশ্নের উদয় হয় নীলয়ের মনে ।
যদিও নীলয় বন্ধুকে অনেক আগে থেকেই চেনে । ঈশান এমন ছেলে নয় যে বন্ধুর বোন কে নিয়ে খারাপ কিছু ভাববে । কিন্তু একটা মেয়ে কে ভালো লাগা তো খারাপ কিছু ভাবা নয় …… মনে মনে ভাবে নীলয় । কিন্তু তবুও চিন্তাটা ওর মনে বিধতে থাকে ।
ঈশান নিজে থেকে যেচেই বলে “ মিরা কে এইখানে ভর্তি করা কোন ব্যাপার না বুঝলি , তুই খালি ওরে রাজি করা । এরকম বড় শহরে ভালো কলেজে লেখাপড়া করলে ওর ভবিষ্যৎ ও ভালো হইবো”
উত্তরে সুধু মাথা ঝাঁকায় নীলয় । এক দিধার মাঝে পরে গেছে ও , ওর মন বলছে মিরার ব্যাপারে ঈশানের কোন হেল্প নিতে না ।
মিরার ব্যবহার করা পারফিউম থেকে নীলয়ের বিশ্বাস হয়েছে যে জায়েদ মিরাকে বেশ দামি দামি গিফট দেয় । তাই নীলয় ঠিক করেছে এখানেও মিরাকে সেই একি রকম লাইফস্টাইল এর নিশ্চয়তা দেবে ও। কারো গিফট এর জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে না । নিজেই যখন যা খুশি নিজের পরছন্দ মতন কিনে নিতে পারবে ।
আজকেও মিরা বেশ সাধারন পোশাক ই পড়েছে । নীলয় মনে মনে একটু হতাশ হলেও ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে । মিরা নিজের ভাইয়ের সাথে শপিঙয়ে যাচ্ছে , অন্য কোন ছেলের সাথে ডেটে নয় । তাই সাধারন দইনন্দিন পোশাক পরাই তো স্বাভাবিক । তবে নীলয় নিজের নিরাশ হওয়ার ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না । গতকাল ও নীলয় এমন হতাশ হয়েছিলো । নিজের এমন অস্বাভাবিক আচরনের জন্য মনে মনে লজ্জিত হয় নীলয় । ভাবে এখন আর আগের মত ছোট নেই , তার উপর মিরার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এসবের উপরে । মনে মনে নিজেকে বুঝ দেয় নীলয় , বলে মিরা সাধারন পোশাক পরলেই কি আর হট পোশাক পরলেই কি ওর তাতে কিছু এসে যায় না । বরং একজন বড় ভাই হিসেবে মিরাকে সাধারন পোশাক পরতেই উৎসাহিত করা উচিৎ ওর । মিরা ওর গার্ল ফ্রেন্ড নয় যে লোকের সামনে ফ্লেক্স করে বেড়াবে , এই দেখো আমার গার্ল ফ্রেন্ড কি হট ।
তবে যেকোনো পোষাকেই মিরা কে দেখতে বেশ লাগে । এর প্রধান কারন ওর ভরাট সুন্দর ফিগার আর দ্বিতীয় কারন মিরার হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত আচরন আর চলাফেরা । মিরার মাঝে কোন ধরনের আড়ষ্টতা নেই । ওকে দেখে মনে হয় আশেপাশে কে আছে , তারা কি মনে করছে এসব ব্যাপারে ওর থোড়াই কেয়ার আছে । মিরার চরিত্রের মাঝে এসব ব্যাপার গুলো নীলয় এবার ই প্রথম লক্ষো করছে । আগে মিরা এরকম ছিলো বলে ওর কাছে মনে হয় না । আর দশটা মেয়ের মতই আচরন ছিলো মিরার । আবার মনে হয়, কি জানি ? হয়তবা ঠিক মত খেয়াল করে দেখা হয়নি আগে ।
“কোথায় নিয়া যাচ্ছিস আজকে?”
কিছুক্ষণ ভাবার ভান করে নীলয় তারপর বলে “ চল তোরে শপিং এ নিয়া যাই” মিরা কে বুঝতেই দেয় না যে ও আগে থেকেই এই প্লান করে রেখেছিলো ।
“ওয়াও ভাইয়া তুই তো দেখি খুব জেনারস হইয়া গেছিস, পয়সা পাত্তি হইলে লোকজন উদার হইয়া যায় নারে?”
মিরাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও বেশ খুশি হয়েছে , মনে মনে নীলয় নিজেকে বাহবা দেয় । ভাবে এই এনার্জি যদি অন্য কোন মেয়ের পেছনে খরচ করতো তাহলে এতদিনে দুই একটা গার্ল ফ্রেন্ড যোগার হয়ে যেতো ।
“ আরে ধ্যাত ঘুরাইতে নিয়া যাচ্ছি , শপিং করতে না, দুই একটা জিনিস পছন্দ হইলে কিনতে পারিস তবে বেশি না বুঝলি”
শহরের সবচেয়ে বড় শপিং মলে মিরাকে নিয়ে গেলো নীলয় । এতো বড় যে একদিনে হেঁটে শেষ করা সম্ভব নয় । শপিং মল দেখে মিরার চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসার যোগার । ব্যাপারটা নীলয় কে এক ধরনের আনন্দ দেয় । কিন্তু আনন্দ অনুভূতিটা নীলয় ঠিক উপভোগ করে না । এই আপাত দৃষ্টে নিরীহ আনন্দের আড়ালে কেমন জানি একটা ডার্ক মেটারের উপস্থিতি অনুভব হয় ওর মাঝে ।
দুজনে মিলে শপিং মলের ভেতরে প্রবেশ করে । বেশ কিছুক্ষণ এমনি ঘোরাফেরার পর নীলয় মিরাকে নিয়ে বেশ দামি কয়েকটা ব্রান্ডের দোকানে প্রবেশ করে । মিরা প্রথমে সংকোচ করলেও নীলয়ের উৎসাহে বেশ অনেক গুলো ড্রেস আর এক্সেসরিজ কিনে ফেলে ।
শপিং শেষে ওরা দুজন ফুড কোর্টে লাঞ্চ করার জন্য যায় । অর্ডার করার পর মিরা বলে “ ওয়াও ভাইয়া তুই তো সত্যি সত্যি পুরা মালদার লোক রে, বাবা খালি খালি তোকে বিরক্ত করতো পড়াশুনা নিয়া”
উত্তরে নীলয় কিছু বলে বলে না সুধু হাসে একটু ,
“ আসলে সবাই কে নিজের ইচ্ছা মতন ক্যারিয়াররে যেতে দেয়াই উচিৎ”
মিরার এই কোথায় নীলয় মাথা ঝাকিয়ে সায় দেয় তার জিজ্ঞাস করে “ তা তোর ইচ্ছা কি ভবিষ্যৎ নিয়া”
মাথা ঝাকায় মিরা , বলে “ জানি না”
“ উঁহু , সবার উচিৎ ক্যারিয়ার নিয়া চিন্তা করা , লাইফে aim না থাকলে কিছু করা যায় না”
“ এইতো শুরু করলি বাবার মতন কথা বার্তা” নীলয়ের কোথায় বেশ বিরক্ত হয় মিরা । অবশ্য নীলয় কথা গুলো বলেই বুঝতে পেরেছিলো কথাগুলো আসলেই ওর বাবার মত হয়ে গিয়েছে । তাই হেসে ফেলল নীলয় । বলল “ ঠিক আছে যা আর বল্মু না”
আসলে গত দুই দিনে ওদের মাঝে যত কথা হয়েছে তা গত দুই বছরেও হয়নি । এখন হয়তো এসব নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না ……… মনে মনে ভাবে নীলয় । মিরার সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। তবেই না ওকে এখানে রাখা যাবে ।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নীলয় একটু থমকে যায় । মিরাকে এখানে রাখার এমন ডেস্পারেট চেষ্টা কে কেমন জানি দৃষ্টি কটু লাগে ওর কাছে । হ্যা এটা সত্য জায়েদ ছেলেটা তেমন ভালো নয় । কিন্তু সেটা তো প্রায় চারবছর আগের জায়েদ , এখন জায়েদ কেমন হয়েছে সেই সম্পর্কে নীলয়ের কোন ধারনা নেই । একজন বড় ভাই হিসেবে কি নীলয়ের উচিৎ না মিরার সাথে খলাখুলি আলাপ করা ?
আসলেই কি জায়েদের সাথে মিরার কোন সিরিয়াস সম্পর্ক আছে কিনা সেটা জনার চেষ্টা করা । অথচ ও কি করছে ? চক্রান্ত করছে , এমনকি মিরা যখন নানা রকম দামি জিনিসপত্র কিনে আনন্দ পাচ্ছিলো তখন নীলয় এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করছিলো । কিন্তু সেই অনুভুতি যে এক বড় ভাইয়ের ছোট বোনের আনন্দ দেখে তৃপ্তি পাওয়ার চেয়ে আলাদা ধরনের তৃপ্তি সেটা নীলয় নিজের কাছে স্বীকার না করলেও একদম অস্বীকার করতে পারছে না ।
“ কিরে কই হারাইয়া গেলি”
মিরার ডাকে নীলয় ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে এলো ।
এরি মাঝে খাবার চলে এসেছে , দুজনে মিলে সেটা শেষ করলো । তারপর মিরা বলল “ ভাইয়া এই সব শপিং মলে নাকি সিনেপ্লেক্স থাকে , চল সিনেমা দেখি , আমার অনেক ইচ্ছা সিনেপ্লেস্কে সিনেমা দেখার”
“ ঠিক আছে চল”
দুজনে মিলে সিনেমা দেখে বের হলো সন্ধার কিছু আগে । সেখান থেকে সোজা বাসায় চলে এলো । বাসায় এসে অবশ্য রিলেক্স হওয়ার টাইম পেলো না তেমন । ওদের বাবা নিজের কাজ শেষে করে চলে এসেছে । আজকে আসার কথা ছিলো না ওদের বাবার । কথা ছিলো উনি গতকাল সকালে এসে সন্ধার ট্রেনে চলে যাবে । কিন্তু জোবায়দা বেগম বিশেষ করে বলে দিয়েছে আজকে রাতের খাবার যেন নীলয় মিরা আর ওদের বাবা ওনার বাড়িতে করে । তাই নীলয়ের বাবা সন্ধায় ই চলে এসেছে ।
সবাই দ্রুত তৈরি হয় ঈশানদের বাড়ীতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয় । এবার অবশ্য মিরা সাধারন পোশাক পড়লো না । বেশ সুন্দর একটা ড্রেস পড়লো । সাথে হালকা প্রসাধনি ও ব্যাবহার করেছে । মনে মনে নীলয় কে প্রশংসা করতেই হলো যে মিরার বেশ পরিস্থিতি জ্ঞান আছে । দারুন দেখাচ্ছিলো মিরাকে । স্লিভলেস একটা সালোয়ার সাথে চুরিদার পাজামা , চোখে কাজল, কপালে একটা টিপ ও পড়েছে । মিরাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এই মেয়ে স্টেকের সাথে বিয়ার খায় । এরকম ক্লাসিক সাঁজেও মিরাকে আগে কখনো দেখছে বলে মনে পরেনা নীলয়ের ।
জোবায়দা বেগম মিরা কে দেখে যেমন রিয়েক্ট করলো , তাতে নীলয়ের মনে হলো মিরা যেন ঈশানের মা কেই ইম্প্রেস করার জন্য মিরা এমন ভাবে তৈরি হয় এসেছে । জোবায়দা বেগম প্রথমেই মিরা কে জড়িয়ে ধরে বল্লেন “ ওমা কি সুন্দর মেয়ে আমার , একদম পরীর মতন”
মিরাও লাজুক হাসল , এই হাসি নীলয় নতুন দেখছে , যা মিরার সাধারন আচরনের সাথে ঠিক যায় না। মিরাকে সবসময় প্রান খোলা ভাবেই হাঁসতে দেখছে ও।
খাওয়ার টেবিলেই মিরা জোবায়দা বেগম আর রিবার বেশ সাক্ষতা তৈরি হয়ে গেলো । “ ভাই সাহেব আর যাই বলেন না ক্যান আপনার দুইটা ছেলে মেয়েই একদম হীরার টুকরা হইসে” খাওয়ার এক ফাঁকে নীলয়ের আর মিরার বাবা কে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা দিলেন জোবায়দা বেগম । নীলয়ের বাবা অবশ্য এর উত্তরে কিছু বলল না , একটু মুচকি হাসল সুধু । নীলয়ের ঠোঁটেও মুচকি হাসি দেখা দিলো , আড় চোখে একবার বাবা কে দেখে নিয়েছে ও , বাবার কি রিএকশন হয় সেটা দেখার লোভ সামলাতে পারেনি। অবশ্য তেমন বিশেষ কিছু দেখতে পায় নি নীলয় । বাবা যে জোবায়দা বেগমের সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত তাতে কোন সন্দেহ ওর মনে নেই । তবে সন্তানের মিথ্যা গুনগান ও হয়তো বাবা মা কে গরবিত করে , অন্তত গর্বিত না করলেও ওদের জন্য প্রসান্তি বয়ে আনে ।
কথা বলল মিরা “ জেবু খালা , তুমি এইটা কি বল্লা , বাবা তো এখন হার্ট এটাক করবে হি হি হি” হ্যাঁ এতক্ষনে মিরার কাছে জোবায়দা বেগম জেবু খালা হয়ে গেছে ।
খাওয়া দাওয়া শেষে জোবায়দা বেগম আর নীলয়ের বাবা লিভিং রুমে বসে গল্প করতে থাকে আর মিরাকে রিবা নিজের ঘরে নিয়ে যায় । এক বছরের ছোট রিবার সাথে দারুন সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে মিরার । বলতে গেলে রিবাই মিরার ভক্ত হয়ে গেছে । এদিকে নীলয় ও ঈশানের সাথে কিছুটা অফিস বিষয়ক আলাপের জন্য ঈশানের ঘর লাগোয়া বারান্দায় চলে আসে ।
এসেই সিগারেট ধরায় ঈশান , ঈশানকে মটামুটি চেইন স্মোকার ই বলা যায় ।আলচনার এক ফাঁকে নীলয় ঈশান কে জানায় যে ও চাচ্ছে মিরা যেন এখানেই থেকে যায় । শুনে ঈশান খুব খুশি হয় । ঈশানের এমন খুশি হওয়া দেখে নীলয়ের মনে একটু খটকা লাগে । ঈশান কে ভালো করে একবার পরখ করে নেয় নীলয়। মনে মনে ভাবে ঈশান নিজেও একটা ছেলে , আর কোন ছেলের পক্ষেই মিরা কে দেখার পর অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয় । ঈশান এর এমন খুশি হওয়ার পেছনে কি অন্য কোন মতলব আছে কিনা? এমন প্রশ্নের উদয় হয় নীলয়ের মনে ।
যদিও নীলয় বন্ধুকে অনেক আগে থেকেই চেনে । ঈশান এমন ছেলে নয় যে বন্ধুর বোন কে নিয়ে খারাপ কিছু ভাববে । কিন্তু একটা মেয়ে কে ভালো লাগা তো খারাপ কিছু ভাবা নয় …… মনে মনে ভাবে নীলয় । কিন্তু তবুও চিন্তাটা ওর মনে বিধতে থাকে ।
ঈশান নিজে থেকে যেচেই বলে “ মিরা কে এইখানে ভর্তি করা কোন ব্যাপার না বুঝলি , তুই খালি ওরে রাজি করা । এরকম বড় শহরে ভালো কলেজে লেখাপড়া করলে ওর ভবিষ্যৎ ও ভালো হইবো”
উত্তরে সুধু মাথা ঝাঁকায় নীলয় । এক দিধার মাঝে পরে গেছে ও , ওর মন বলছে মিরার ব্যাপারে ঈশানের কোন হেল্প নিতে না ।