28-04-2025, 01:41 PM
প্রথম পর্ব:
আজও সেই একই রুটিন। মায়ের ঘুম ভাঙার আগেই আমার অ্যালার্মটা ডেকে তুললো। কোনোমতে চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকালাম – সাতটা বাজে। আর দু'ঘণ্টা। তারপর সেই চেনা ধকল। মায়ের অফিসের তাড়া, আমার কলেজের জন্য দৌড়। এই সময়টায় বাড়িতে একটা চাপা উত্তেজনা থাকে সবসময়।
কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখি মা রান্নাঘরে ব্যস্ত। কপালে হালকা ঘাম জমেছে। রোজকার মতো এক কাপ চা এগিয়ে দিলাম মায়ের দিকে। মা হাসলেন। সেই ক্লান্ত হাসি, যা আমি গত ছয় বছর ধরে দেখে আসছি। বাবার সাথে ডিভোর্সের পর মায়ের মুখের এই হাসিটা যেন একটু ফিকে হয়ে গেছে।
আমি শমীক... বয়স ২০ , কলেজে পড়ি। কলকাতা শহরেরই থাকি মায়ের সাথে... আমার মা বিশাখা, বয়স ৪৪, একটা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরি করে। বছর ছয়েক আগে মা বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। সেই সময় টা খুব কঠিন ছিলো আমাদের পরিবারের জন্য। বাবা একটা MNC তে জব করে, বছরখানেক ধরে দিল্লিতে সেটেলড।
প্রতিদিন নটার মধ্যে তৈরি হতে হয় কলেজ যাবার জন্য। এই সময়টা ভীষণ তাড়া থাকে, মায়ের অফিস, আমার কলেজ। আমি বেরোনোর সময় প্রায় দিনই দেখা হয় প্রকাশ আঙ্কেলের সাথে। আজও অন্যথা হলো না।
প্রকাশ আঙ্কেল আমাদের আউট হাউসে ভাড়া থাকে । তাও প্রায় মাস চারেক হল। আঙ্কেলের বয়স ৫৫ , তবে দেখে মধ্য চল্লিশ বলে দিব্যি চালানো যায় । এই বয়সেও বেশ ফিট। আঙ্কেল রিটায়ার্ড অফিসার। স্ত্রী গত হয়েছেন বছর দশেক আগে, ওনার এক মেয়ে জার্মানিতে থাকে, জামাই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ওনার এক বছর ছয়েকের নাতনি আছে।
প্রথম দিন মা ওনাকে ডিনারে ইনভাইট করেছিল। আঙ্কেল বেশ ভালোই গল্প করতে পারেন। আমার কলেজ, মার অফিস থেকে শুরু করে ওনার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা কোনো টপিকই বাদ রাখেন নি। ওনার মেয়ে নাকি চায় আঙ্কেল জার্মানিতেই থাকুক, কিন্তু উনি তাতে রাজি না।
কলেজ পৌছাতেই সমীরের সাথে দেখা। সমীর আমার ভালো বন্ধু। মাঝে মধ্যেই ওর বাড়িতে চলে যাই গেম খেলতে। সমীর গেম খেলাতে এক্সপার্ট। ও বললো আজ শেষ ক্লাসটা বাদ দিয়ে যেন ওর সাথেই চলে যাই গেম খেলতে। আমি বললাম "আজ বাদ দে, বাড়ি ফিরতে লেট হলে , মাকেও বলা হয় নি"
- "আরে কাকিমা কে বলে দিবি নোট নিতে এসেছিস আমার বাড়ি"
"সবসময় এই অজুহাত দেওয়া যায় না"
এমন সময় বাবার ফোন। বাবা রোজ ফোন না করলেও মাঝে মধ্যেই ফোন করে। এটা সেটা বলার পর বাবা জানতে চাইলো 'আচ্ছা বাইক নেবার ব্যাপারে তোর মা কি বললো?'.. এই একটা টপিক নিয়ে আমাদের তিনজনের মধ্যেই চাপানউতোর চলছে কিছুদিন ধরে। আসলে এবারের জন্মদিনে আমার ইচ্ছা ছিলো বাইকের। বাবা রাজি, তবে মার প্রবল আপত্তি। মা নিজস্ব গাড়ি করেই অফিস যায়, আমি বাস বা অটো করেই কলেজ আসি। মায়ের ধারণা বাইক টা পেলে সারাদিন টোটো করে ঘুরে বেড়ানো হবে।
বাবা- 'এই তোর মা, সব ব্যাপারেই বাড়াবাড়ি'
আমি- 'দেখি আজ আবার বলবো তাহলে'
ফোনটা কেটে ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাটা দিই।
(চলবে)
আজও সেই একই রুটিন। মায়ের ঘুম ভাঙার আগেই আমার অ্যালার্মটা ডেকে তুললো। কোনোমতে চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকালাম – সাতটা বাজে। আর দু'ঘণ্টা। তারপর সেই চেনা ধকল। মায়ের অফিসের তাড়া, আমার কলেজের জন্য দৌড়। এই সময়টায় বাড়িতে একটা চাপা উত্তেজনা থাকে সবসময়।
কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখি মা রান্নাঘরে ব্যস্ত। কপালে হালকা ঘাম জমেছে। রোজকার মতো এক কাপ চা এগিয়ে দিলাম মায়ের দিকে। মা হাসলেন। সেই ক্লান্ত হাসি, যা আমি গত ছয় বছর ধরে দেখে আসছি। বাবার সাথে ডিভোর্সের পর মায়ের মুখের এই হাসিটা যেন একটু ফিকে হয়ে গেছে।
আমি শমীক... বয়স ২০ , কলেজে পড়ি। কলকাতা শহরেরই থাকি মায়ের সাথে... আমার মা বিশাখা, বয়স ৪৪, একটা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরি করে। বছর ছয়েক আগে মা বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। সেই সময় টা খুব কঠিন ছিলো আমাদের পরিবারের জন্য। বাবা একটা MNC তে জব করে, বছরখানেক ধরে দিল্লিতে সেটেলড।
প্রতিদিন নটার মধ্যে তৈরি হতে হয় কলেজ যাবার জন্য। এই সময়টা ভীষণ তাড়া থাকে, মায়ের অফিস, আমার কলেজ। আমি বেরোনোর সময় প্রায় দিনই দেখা হয় প্রকাশ আঙ্কেলের সাথে। আজও অন্যথা হলো না।
প্রকাশ আঙ্কেল আমাদের আউট হাউসে ভাড়া থাকে । তাও প্রায় মাস চারেক হল। আঙ্কেলের বয়স ৫৫ , তবে দেখে মধ্য চল্লিশ বলে দিব্যি চালানো যায় । এই বয়সেও বেশ ফিট। আঙ্কেল রিটায়ার্ড অফিসার। স্ত্রী গত হয়েছেন বছর দশেক আগে, ওনার এক মেয়ে জার্মানিতে থাকে, জামাই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ওনার এক বছর ছয়েকের নাতনি আছে।
প্রথম দিন মা ওনাকে ডিনারে ইনভাইট করেছিল। আঙ্কেল বেশ ভালোই গল্প করতে পারেন। আমার কলেজ, মার অফিস থেকে শুরু করে ওনার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা কোনো টপিকই বাদ রাখেন নি। ওনার মেয়ে নাকি চায় আঙ্কেল জার্মানিতেই থাকুক, কিন্তু উনি তাতে রাজি না।
কলেজ পৌছাতেই সমীরের সাথে দেখা। সমীর আমার ভালো বন্ধু। মাঝে মধ্যেই ওর বাড়িতে চলে যাই গেম খেলতে। সমীর গেম খেলাতে এক্সপার্ট। ও বললো আজ শেষ ক্লাসটা বাদ দিয়ে যেন ওর সাথেই চলে যাই গেম খেলতে। আমি বললাম "আজ বাদ দে, বাড়ি ফিরতে লেট হলে , মাকেও বলা হয় নি"
- "আরে কাকিমা কে বলে দিবি নোট নিতে এসেছিস আমার বাড়ি"
"সবসময় এই অজুহাত দেওয়া যায় না"
এমন সময় বাবার ফোন। বাবা রোজ ফোন না করলেও মাঝে মধ্যেই ফোন করে। এটা সেটা বলার পর বাবা জানতে চাইলো 'আচ্ছা বাইক নেবার ব্যাপারে তোর মা কি বললো?'.. এই একটা টপিক নিয়ে আমাদের তিনজনের মধ্যেই চাপানউতোর চলছে কিছুদিন ধরে। আসলে এবারের জন্মদিনে আমার ইচ্ছা ছিলো বাইকের। বাবা রাজি, তবে মার প্রবল আপত্তি। মা নিজস্ব গাড়ি করেই অফিস যায়, আমি বাস বা অটো করেই কলেজ আসি। মায়ের ধারণা বাইক টা পেলে সারাদিন টোটো করে ঘুরে বেড়ানো হবে।
বাবা- 'এই তোর মা, সব ব্যাপারেই বাড়াবাড়ি'
আমি- 'দেখি আজ আবার বলবো তাহলে'
ফোনটা কেটে ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাটা দিই।
(চলবে)