Operation X 11
২৪শে মার্চ, ২০২৫
ঢাকার রাত তখন গভীর। শহরের ব্যস্ততা কমে এসেছে, কিন্তু পুলিশের একটি বিশেষ টিমের তৎপরতা বেড়েছে বহুগুণ। রাত ২টা ১৫ মিনিটে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা গাবতলীর একটি নির্জন গলিতে অভিযান চালায়। টার্গেট—একজন সন্দেহভাজন, যার গতিবিধি কয়েকদিন ধরে নজরে রেখেছিল গোয়েন্দারা। লোকটি ধরা পড়ার আগে এক মুহূর্ত দেরি না করে পালানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পুলিশের চৌকস টিম তাকে আটক করে ফেলে।
আটকের পর লোকটিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে—একটি সন্ত্রাসী সংগঠন, যার নাম এক্স-১১ পরিকল্পনা করেছে ঈদের দিন জাতীয় ঈদগাহতে ভয়াবহ বোমা হামলা চালানোর। সংবাদটি সঙ্গে সঙ্গে স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদর দফতরে পৌঁছে যায়, এবং মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই সন্দেহভাজনকে স্পেশাল ব্রাঞ্চের এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সকাল ৭টা, স্পেশাল ব্রাঞ্চ সদর দফতর।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের চিফ ওসমানী ইমারজেন্সি মিটিং ডেকেছেন। কনফারেন্স রুমে এজেন্ট আকাশ এবং তার দল উপস্থিত। তাদের চোখে উত্তেজনা, মনে দৃঢ় সংকল্প। চিফ ওসমানী গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, “দেশের ওপর শকুনের নজর পড়েছে। আর যখনই শকুনের নজর পড়ে, আমরা তাদের ধ্বংস করি। এবারও তাই করব ইনশাআল্লাহ। ঈদের দিন যারা আমাদের নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরাতে চায়, তাদের আমরা এখানে পুঁতে ফেলব।”
এজেন্ট আকাশ গম্ভীর মুখে তথ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করছিল। তার হাতে থাকা ফাইলের প্রতিটি পৃষ্ঠা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সন্দেহভাজনের নাম রফিকুল ইসলাম, বয়স ৩৫। পূর্বে কোনো বড় অপরাধমূলক কার্যকলাপে যুক্ত থাকার রেকর্ড নেই, তবে গত ছয় মাস ধরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহ ছিল।
আকাশ ফাইল বন্ধ করে বলল, “আমাদের প্রথম কাজ হবে এক্স-১১-এর মূল ঘাঁটিগুলো খুঁজে বের করা। সন্দেহভাজন হয়তো পুরো পরিকল্পনা জানে না, কিন্তু তার কাছে যে সূত্র আছে, তা আমাদের দরকার।”
ইমন পাশে বসে বলল, “আমার ধারণা, আমরা যদি ওর যোগাযোগের উৎস ট্র্যাক করতে পারি, তাহলে এক্স-১১-এর শীর্ষ নেতৃত্বের নাগাল পেতে পারব।”
“ঠিক বলেছিস,” আকাশ মাথা নাড়ল। “প্রথমে আমাদের জানতে হবে, রফিকুল আসলে কার হয়ে কাজ করছিল। আমরা তাকে ব্রেক করব। বোরহান, তুই ওর ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কাজ কর। রাইয়্যান, ওর মোবাইল ও ইলেকট্রনিকস ডিভাইস এনালাইসিস কর।”
চিফ ওসমানী বললেন, “তোমাদের হাতে এক সপ্তাহ সময় আছে। ৩১শে মার্চের আগে এই হামলার পরিকল্পনাকে ধ্বংস করতে হবে। যদি ব্যর্থ হও, তাহলে দেশের হাজার হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে।”
আকাশ উঠে দাঁড়াল এবং বলল, “আমরা ব্যর্থ হব না, স্যার।”
২৫শে মার্চ, ২০২৫, দুপুর ১২টা।
ঢাকা, স্পেশাল ব্রাঞ্চ সদর দফতর। জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষের ভেতর হালকা আলো জ্বলছে। এজেন্ট আকাশ টেবিলের ওপারে বসে আছেন, সামনে হাতকড়া পরানো রফিকুল ইসলাম। ঘরের পরিবেশ থমথমে। “তুমি যদি আমাদের সাহায্য করো, আমরা তোমার শাস্তি কমানোর জন্য সুপারিশ করতে পারি,” আকাশ শীতল কণ্ঠে বলল।
রফিকুল মাথা নিচু করে বসে ছিল, কিন্তু কিছু বলল না।
আকাশ এক পা সামনে বাড়িয়ে বলল, “আমরা জানি তুমি এক্স-১১-এর সাথে যুক্ত। প্রশ্ন হচ্ছে, কতটা গভীরভাবে?”*
রফিকুল এবার মুখ তুলল, চোখে অস্বস্তি। “আমি জানি না,” সে ফিসফিস করে বলল।
“মিথ্যে বললে তোমার জন্য ভালো হবে না,” আকাশ টেবিলে ঘুষি মারল। “তোমার ফোন আমরা ট্র্যাক করেছি। গত এক মাসে অন্তত তিনবার তোমার এক্স-১১ নেতাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে।”
রফিকুল চুপ করে রইল। আকাশ এবার ছবি বের করল। এতে দেখা যাচ্ছে, রফিকুল এক অচেনা মানুষের সাথে হাত মেলাচ্ছে।
“এই লোকটা কে?”
রফিকুল চোখ বড় বড় করে তাকাল। “আমি... আমি জানি না।”
আকাশ একটু হেসে বলল, “তোমার পরিবার এখনো নিরাপদ আছে, কিন্তু যদি কিছু না বলো, তাহলে তাদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারব না। তোমার লাশটাও কিন্তু তোমার পরিবার আর পাবে না যদি না আমাদের সঠিক তথ্য দাও।”
রফিকুলের মুখ কালো হয়ে গেল। সে আস্তে আস্তে স্বীকার করে নেয় তার নাম **কামরুল**। সে এক্স-১১-এর একজন অপারেটিভ।
“আর কে কে আছে তোমাদের সাথে?”
“আমি ঠিক জানি না... কিন্তু আমি শুনেছি, তারা মিরপুরে কোথাও গোপন ঘাঁটি বানিয়েছে।”
আকাশ টেবিলে হাত রাখল। “ঠিকানা?”
রফিকুল কাঁপতে কাঁপতে বলল, “মিরপুর-১১, গুদামের মতো একটা জায়গা। আমি সঠিক ঠিকানা জানি না, কিন্তু সেখানে অস্ত্র লুকিয়ে রাখা হয়েছে।”
২৫শে মার্চ, ২০২৫, রাত ৮টা।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের ওয়ার রুমে আলো ঝলমল করছে। বিশাল স্ক্রিনে মিরপুর-১১ এলাকার স্যাটেলাইট ছবি ভেসে উঠছে। আকাশ, ইমন, রাইয়্যান, বোরহান, স্বরুপ, তিন্নি ও মিলি গভীর মনোযোগে পরিকল্পনা করছে।
চিফ ওসমানী কড়া গলায় বললেন, “এই অভিযানে আমাদের একটিও ভুল করা চলবে না। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এক্স-১১ এখানে অস্ত্র মজুদ করেছে এবং এখান থেকেই ঈদের দিন হামলার নির্দেশ দেওয়া হবে। এজেন্ট আকাশ, তোমার টিম প্রস্তুত তো?"
আকাশ দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “প্রস্তুত, স্যার।”
ইমন স্ক্রিনে একটি দাগানো স্থানের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, “আমাদের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, এই গুদামের নিচে একটি গোপন চেম্বার রয়েছে। সম্ভবত এখানেই অস্ত্র রাখা হয়েছে। আমাদের এখানে সাবধানে প্রবেশ করতে হবে।”
স্বরুপ বলল, “আমি ড্রোন ফিড থেকে দেখেছি, ভবনের চারপাশে পাহারার জন্য কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি রয়েছে। আমরা স্নাইপার পজিশন ঠিক করে তাদের নামিয়ে দিতে পারি।”
বোরহান যোগ করল, “আমার টিম ভবনের পেছন থেকে ঢুকবে। সামনে থেকে মূল মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার জন্য কিছু ডাইভারশন ব্যবহার করতে হবে।”
তিন্নি বলল, “আমরা যদি বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিই, তাহলে ওদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। আমরা নাইটভিশন নিয়ে প্রবেশ করব।”
চিফ ওসমানী আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “সবকিছু ঠিক থাকলে, আজ রাতেই অভিযান শুরু করো।”
আকাশ মাথা ঝাঁকাল, “আমরা প্রস্তুত।”
২৬শে মার্চ, ২০২৫, রাত ২টা।
মিরপুর-১১ এলাকার নির্দিষ্ট গুদামের চারপাশ নিস্তব্ধ। আকাশ ও তার টিম স্টিলথ মোডে এগিয়ে চলেছে। ছাদে অবস্থান নিয়েছে দুই স্নাইপার, রাইয়্যান ও স্বরুপ।
ইমন কানে ছোট কমিউনিকেশন ডিভাইস লাগিয়ে বলল, “স্নাইপার টিম, গ্রীণ সিগনাল পেলেই প্রথম টার্গেট ডাউন করবে।”
স্বরুপ ফিসফিস করে বলল, “টার্গেট লকড ইন।”
এক সেকেন্ড পর, সুপ্রশিক্ষিত স্নাইপার গুলির শব্দহীন ফায়ারে পাহারাদার মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। বোরহান ফিসফিস করে বলল, “এগোই?” আকাশ সংকেত দিল এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
তিন্নি দ্রুত ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করল। পুরো এলাকা আঁধারে ঢেকে গেল। নাইটভিশন গগলস পরা স্পেশাল ব্রাঞ্চের এজেন্টরা দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করল। ভেতরে প্রবেশ করতেই শত্রুপক্ষ সতর্ক হয়ে গেল। গুলি বিনিময় শুরু হলো। আকাশ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিল। একের পর এক সন্ত্রাসী মাটিতে পড়তে লাগল।
হঠাৎ মিলি বলল, “আমরা চেম্বারের দরজার সামনে এসে গেছি, কিন্তু এটা লক করা আছে।”
বোরহান বলল, “আমি চার্জ বসাচ্ছি।”
মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দরজায় বিস্ফোরণ ঘটল, এবং সবাই দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করল। ভেতরে যা দেখা গেল, তা শিউরে ওঠার মতো। সারি সারি বিস্ফোরক ভর্তি বাক্স সাজানো।
২৬শে মার্চ, ২০২৫, রাত ২:৩০
গুদামের গোপন চেম্বারে প্রবেশের পরই বাতাসে মিশে থাকা বারুদের গন্ধে স্পেশাল ব্রাঞ্চের এজেন্টদের শিরদাঁড়া শিউরে উঠল। নাইটভিশনের সবুজ আলোয় ধরা পড়লো দেয়ালজুড়ে সাজানো এক ডজনেরও বেশি সোফিস্টিকেটেড আইইডি ডিভাইস, প্রতিটিতে লাগানো টাইমার টিক টিক করে গুনে চলেছে ঈদের নামাজের সময়টা।
"একটা...দুইটা...তিনটা..." বোরহান গুনতে গুনতে হঠাৎ থেমে গেল, "আকাশ, এখানে শুধু ১২টা নয়, আরও ৬টি ডিভাইস অন্যত্র পাঠানো হয়েছে!"
আকাশের কপালে ঠিক তখনই জমে উঠেছিল ঘামের বিন্দু। তার গলার স্বর কর্কশ হয়ে এলো, "কোথায়?"
"চট্টগ্রামের জামেয়া মসজিদ, সিলেটের শাহী ঈদগাহ, এমনকি-"
"বস্!" আকাশ হঠাৎই চিৎকার করে উঠল, "এই যে...এখানে দেখ।"
তার আঙুলের ডগায় মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠল একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজ:
"যখন ইমাম 'আল্লাহু আকবার' বলবেন, তখন পুরো দেশ কেঁপে উঠবে। - জেডএইচ"
২৬শে মার্চ, ভোর ৪:০০
মিরপুরের একটি অ্যান্টিকিউটেড বাংলো। ড্রোন ফুটেজে দেখা গেল কালো গাড়ি থেকে নামছে একজন সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত ভদ্রলোক। তার হাতে একটি অ্যান্টিক স্যুটকেস।
"ড. জাহিদ হাসান," ইমন ফিসফিস করে বলল, "নামীদামী ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, আসলে এক্স-১১-এর ব্রেইন।"
"সেই স্যুটকেসে কী আছে?" স্বরূপ প্রশ্ন করতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠল ভয়ঙ্কর দৃশ্য - প্রফেসর স্যুটকেস খুলতেই দেখা গেল একটি ল্যাপটপ আর...একটি রেড বাটন ডিভাইস!
"গড ড্যাম ইট।" আকাশ চিৎকার করে উঠল, "সব টিমকে ইমিডিয়েটলি-"
ঠিক তখনই...
বুম.............. ব্লাস্ট!
২৬শে মার্চ, ভোর ৪:০৭
ধোঁয়ার মধ্যে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখল বাংলোর অর্ধেক উড়ে গেছে। কিন্তু প্রফেসর...
" আকাশ প্রফেসর পালাচ্ছেন।"
একটা রক্তাক্ত হাত বাড়িয়ে আকাশ রেডিওতে গর্জন করল "অল ইউনিট, টার্গেট ইস্ট বাই নর্থ-ইস্ট মুভিং। রিপিট, টার্গেট ইস্ট বাই নর্থ-ইস্ট। হেডশট অনলি। আই রিপিট, হেডশট অনলি।"
৩১শে মার্চ, সকাল ১০:০০
জাতীয় ঈদগাহ মাঠ। লাখো মানুষের ঢল। প্রধান ইমাম মাইক্রোফোন হাতে তুলে নিচ্ছেন। দূরের একটি ভ্যান থেকে ইমন নার্ভাসলি বলল, "সব ডিভাইস নিউট্রালাইজড, কিন্তু..."
"কিন্তু?"
"যদি আরেকটা-"
"শাট আপ।" আকাশের চোখ আটকে গেল মঞ্চের পাশের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর দিকে। খুব স্লো মোশনে সে তার ব্যাগ খুলছে...
এক সেকেন্ডের মধ্যে আকাশ লাফিয়ে পড়ল মঞ্চে, গ্রাব করল সেই ব্যাগটা। ভেতরে...একটি শিশুর খেলনা।
হাসতে হাসতে ওই কর্মী বলল, "স্যার, আমার ছেলের গিফট।"
৩১শে মার্চ, সকাল ১০:৩০
নামাজ শেষ। শিশুরা মিষ্টি খাচ্ছে। বৃদ্ধরা কোলাকুলি করছে। আকাশ নিঃশ্বাস ফেলে তাকাল আকাশের দিকে।
ইমন ক্লান্ত হাসি দিয়ে বলল, "কেস ক্লোজড, বস।"
আকাশ চোখ বন্ধ করে বলল, "না ইমন...আজ আমরা শুধু কেস ক্লোজ করিনি।" সে হাত বাড়াল একটি শিশুর দিকে যে তাকে ফুল দিচ্ছিল, "আজ আমরা ভবিষ্যৎ বাঁচালাম। সকল প্রসংশা মহান আল্লাহর যিনি আমাদের সাহায্য করেছেন এই সন্ত্রাসীদের হাত থেকে সবাইকে বাঁচাতে।"
[সমাপ্ত]
লেখক:-আকাশ আহমেদ
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)