Thread Rating:
  • 3 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller সাজু ভাই সিরিজ নম্বর -০৬ (গল্প কাপ ঠান্ডা কফি)
#13
 
পর্ব:- ১৩ 



ইমাম সাহেব চলে এসেছে। রাতের আঁধারে লাশ দাফন করা হবে তবুও প্রচুর মানুষ উপস্থিত হয়েছে মাহিশার বাড়িতে। বিয়ে করে শশুর বাড়িতে যার যাবার কথা ছিল সে আজ কদিন পরে চিরস্থায়ী মাটির ঘরের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে। 
যে ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার বাবাও সন্ধ্যা বেলা এসেছেন। সেদিনের পর থেকে তারা আর কেউ আসেননি কিন্তু আজ যেহেতু মাহিশার লাশ নিয়ে আসা হয় তাই আসতে হয়েছে।

দাফন শেষে সবাই আস্তে আস্তে চলে গেছে। যে কজন বাকি আছে তারা বেশিরভাগ আত্মীয় বা প্রতিবেশী। দারোগা সাহেব মাহিশার বাবার কাছে গিয়ে বললো, 

- সাজু ছেলেটাই কি সত্যি সত্যি আপনার মেয়ে খুন করেছে? 

- সবকিছু শুনে আমারও তাই মনে হচ্ছে স্যার। কারণ এছাড়া আর কেউ নেই যার কারণে আমার মেয়ে খুন হতে পারে। 

- ভালো করে মামলা করেছেন? মানে কতদিনের মধ্যে ধরা পড়তে পারে। 

- জানি না, তবে ছেলেটা যেহেতু ভালো সাজার চেষ্টা করছে তাই পালাবে না। মনে হয় আজকের মধ্যে ধরা পড়তে পারে। 

- আপনি আমাদের মংলা থানায় গিয়ে আরেকটা মামলা করে আসবেন আগামীকাল। তারপর আমরা এখান থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য চাপ দেবো। 

- দারোগা সাহেব? 

- বলেন। 

- আমার মেয়ে ওই ছেলেটার কি ক্ষতি করেছে যে তাকে খুন করতে হলো।

- একবার ধরা পড়ুক তারপর সবকিছু জানতে পারবেন আপনারা। আমি এখন চলে যাচ্ছি, কাল সকালে গিয়ে মামলা করে আসবেন। 

- ঠিক আছে স্যার। 

★★★

রাব্বি সবসময় যার কাছ থেকে অস্ত্র নেয় তার আস্তানা গাবতলী। রাব্বি প্রথমে সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে। লোকটার বয়স ৬০ বছরের মতো হবে, রাব্বির সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে ওই মন্ত্রীর কারণে। 

মন্ত্রী... 
হ্যাঁ মন্ত্রী। 
রাব্বি সবসময় যার কথা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় সে একজন মন্ত্রী। সরকারি দলের কিছু কাজ থাকে যেগুলো তারা আইনের মাধ্যমে করতে পারে না। তখন তারা রাব্বির মতো কাউকে ঠিকই কাজ করার জন্য ব্যবহার করে। রাজনৈতিক নেতাদের কাজকর্ম বড়ই অদ্ভুত, এখানে টিকতে হলে কতো কাজ অগোচরে করতে হয়।

রাব্বির আসল নাম কেউ জানে না। অস্ত্র বিক্রি করা এই লোকটার ধারণা ওই মন্ত্রী সাহেব নিজেও হয়তো জানে না রাব্বির আসল নাম কি। নামের সঙ্গে তার কোনো কাজ নেই, তার যেটা কাজ সেটা হলেই হয়। তবে রাব্বি ছেলেটা অনার্স পাশ করে কেন এমন পেশাদার খুনির কাজ করে তার জানা নেই। 
আজ পর্যন্ত রাব্বি কখনো জেলে যায়নি। না না, ভুল কথা। রাব্বি জেলে গিয়েছিল, কিন্তু সেটা লঞ্চ ডাকাতি করার জন্য। কোনো এক রাতের আঁধারে তারা লঞ্চ ডাকাতি করতে চায়। সেখানে একটা মেয়ের সঙ্গে রাব্বির যখন পরিচয় হয় নাকি আগে থেকে পরিচিত ছিল জানে না। সেই মেয়ের জন্য নাকি রাব্বি তার দলের সঙ্গে বেঈমানী করে এবং পরবর্তীতে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। 
কিন্তু সেখানে তার নাম ছিল " সজীব। "
রাব্বির এসব খবর সে এই লাইনের আরেক ছোট মাস্তানের কাছ থেকে জেনেছে। কিন্তু আসল কাহিনি কেউ বলতে পারে না। 

অদ্ভুত চরিত্রের এই রাব্বি তাকে একটু আগে কল দিয়ে আস্তানায় থাকতে বলেছে। আজ কালের মধ্যে আরো একজনকে মরতে হবে, আফসোস করার ভঙ্গি করলেন তিনি। 
রাব্বি এসে গেছে। কোনো প্রকার কথা না বলে চুপচাপ একটা পিস্তল ফুল লোড মুহূর্তের মধ্যে চলে গেল। 

গাবতলি থেকে সরাসরি সাভার চলে গেল। সে জানে এখানকার একটা ছোট্ট কাঁচা বাজারের পাশেই একটা লন্ড্রী দোকান। সেখানে গেলে আলাউদ্দীন কিংবা তার সঙ্গী কারো খোঁজ পাওয়া যাবে নিশ্চিত। 

লাল একটা পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করছিল ছেলেটা। রাব্বি তার সামনে যেতেই বললো, 

- কেমন আছেন ভাইজান? 

- তোর এ মাসের ঘরভাড়া বাকি নাকি? 

- বুঝতে পারছি, কি জানতে চান বলেন। 

- আলাউদ্দীনকে কোথায় পাবো? 

- তা তো জানি না, গতকাল রাতে বাজারের মধ্যে দেখছিলাম। আজকে সারাদিন দেখি নাই। 

- কার কাছে গেলে তার খবর পাবো? 

- আলিফ হোটেলের মালিক বলতে পারবে তার ঠিকানা। তার সঙ্গে বেশ ভাব জমে উঠেছে ইদানীং, লোকটা নাকি কাউন্সিল নির্বাচন করবে। 
দুটো টাকা হতে পারে নাই তাতেই শুরু করেছে, মনে হয় গোপন ব্যাবসা আছে।  

- ঠিক আছে আমি আসি। 
পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে রাব্বি হাঁটা শুরু করেছে। 

- রাব্বি ভাই? 

- বলো। 

- আলাউদ্দীন ইদানীং খুনখারাবি শুরু করেছে, তার সঙ্গে লড়তে গেলে একটু সাবধানে থাকবেন। 

- আচ্ছা ঠিক আছে। 

আলিফ হোটেলে মানুষ গিজগিজ করছে। রাব্বি চারিদিকে তাকিয়ে আগে কোথায় কি রয়েছে সব দেখে নিলো। তারপর মুখে মাস্ক লাগিয়ে এগিয়ে গেল মালিকের দিকে। লোকটা তাকে নিজেই ক্যাশে বসে আছে, চারিদিকে তাকিয়ে কোথায় কি দরকার নজর রাখছে। 
রাব্বি ঘুরে একদম তার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। নিচ থেকে পিস্তলটা পেটে ঠেকিয়ে দিতেই লোকটা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। 

- কে আপনি? কি চান? 

- আপনার সঙ্গে গোপনে কিছু কথা বলতে চাই। 

- বলেন। 

- এখানে নিশ্চয়ই আপনার বিশ্রাম করার আলাদা রুম আছে তাই না? 

- হ্যাঁ হ্যাঁ। 

- চলেন সেখানে গিয়ে কথা বলবো। 

লোকটা দাঁড়াতেই রাব্বি তাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর শরীরে পিস্তল ধরে তার সঙ্গে সঙ্গে চলে গেল একটা সাইডে। রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেই রাব্বি দরজা বন্ধ করে দিল। ভয়ে যবুথবু হয়ে বসে আছে তার সামনের লোকটা, রাব্বি আস্তে করে বললো, 

- আলাউদ্দীন কোথায়? 

- কোন আলাউদ্দীন? 

- খুনি আলাউদ্দীন। 

- আপনি কি পুলিশের লোক? 

- আলাউদ্দীন এখন কোথায় আছে? 

- আমি জানি না, আজকে সারাদিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি আমার। 

- কাউন্সিল নির্বাচন করতে চান? 

- জ্বি। 

- এসব ছোটখাট কাউকে ধরে লাভ নেই, আপনি আমার কথা শুনলে আমি আপনাকে কাউন্সিলর বানিয়ে দেবো। 

- কে আপনি? 

- রাব্বি। 

- আ্যা...  

- আলাউদ্দীনের নাম্বারে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেন সে এখন কোথায় আছে। 

লোকটা পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল দিল, কিন্তু রিসিভ হলো না। পরপর অনেকবার কল দিয়ে রিসিভ করাতে পারলো না। 

- রিসিভ করে না। 

- ওর সঙ্গে যারা আছে তাদের কাউকে কল দেন। 

- কারো নাম্বার নেই আমার কাছে। 

- ভালো করে কথা বল নাহলে কিন্তু এখানেই লাশ বানিয়ে দেবো৷ কাউন্সিলর হওয়া তো দুরের কথা তখন কোই যাবি বুঝতে পারছিস? 

লোকটা আরেকটা নাম্বারে কল দিল। কল দেবার সময় বললো, 

- এর সঙ্গে আলাউদ্দীন চলে না, তবে মাঝে মাঝে সঙ্গে রাখে। তার কাছে কারো নাম্বার আছে নাকি জিজ্ঞেস করে দেখি। 

কল রিসিভ করছে। 
- হ্যালো ফারুক? আচ্ছা শোন, আলাউদ্দীনের সঙ্গে কথা বলা দরকার। 

- এখন তো সম্ভব না, ভাই একটা কাজের মধ্যে আছে। 

রাব্বির ইশারায় লোকটা জিজ্ঞেস করলো, 

- কিসের কাজ? 

- একটা ছেলেকে খুন করতে হবে। ছেলেটাকে সেই দুপুর থেকে চেষ্টা করছি মারার জন্য। একবার তারে আলাউদ্দীন ভাই গুলি করছে কিন্তু হালায় বাঁইচা গেছে। 

- কোন ছেলে? 

- তুমি চিনবা না ভাই, নদীর ওপাড়ের মানুষ। খুলনার ওদিকে বাড়ি মনে হয়। সাজু নাম। 

- ওহ্, কাম শেষ করে আলাউদ্দীনকে বলবা আমার সঙ্গে দেখা করতে। 

- আচ্ছা ঠিক আছে। 

লোকটা মোবাইল কাটতেই রাব্বি তার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে গেল। পকেট থেকে একটা স্প্রে বের করে সেটা লোকটার মুখের দিকে তাক করে মেরে দিল। 

- রাব্বি বললো, একটু পরে তুই ঘুমিয়ে যাবি কিন্তু তার আগে দরজা বন্ধ করবি। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবো, যদি দরজা খুলে বের হবার চেষ্টা করো তাহলে শেষ। 

লোকটা ততক্ষণে টলতে লাগলো। রাব্বি আরও একটু সময় দাঁড়িয়ে থেকে যখন বুঝতে পারলো সঠিক সময় হয়ে গেছে। তখনই রুম থেকে বের হয়ে গেল, কিন্তু পিস্তল এমন করে হাতে রাখলো যেন হোটেলের কেউ বুঝতে না পারে। 
লোকটা সত্যি সত্যি দরজা বন্ধ করে দিল। 
এটা করার কোনো দরকার ছিল না, কিন্তু লোকটা যদি আলাউদ্দীনকে সতর্ক করে দেয় তাহলে তাকে রাতের মধ্যে শেষ করা যাবে না। 

হোটেলে দাঁড়িয়েই রাব্বি তার দাদাজানের কাছে কল দিল, একজন মন্ত্রী সে। 

- হ্যাঁ বলো। 

- সাজু ভাইকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব না। 

- কি বলো এসব? 

- আলাউদ্দীন অলরেডি সাজু ভাইয়ের কাছেই আছে কিন্তু সঠিক লোকেশন আমি জানি না। আর জানলেও কিছু করতে পারবো না সেটা আপনি ভালো করে জানেন। তাছাড়া তাকে যে আমার বাঁচাতেই হবে এমনটা তো নয়। 

- হুম বুঝলাম। কিন্তু তুমি কি করবে এখন? 

- এখানেই অপেক্ষা করবো। আমার বিশ্বাস ওই আলাউদ্দীন যত রাতই হোক এখানে আসবে। তারপর ওর হিসাবটা মিটিয়ে এখান থেকে বের হবো। 

- তোমাকে আগামীকাল আরেকটা কাজ করতে হবে তোমাকে। 

- কি কাজ? 

- আমার পিএস তোমার পরবর্তী টার্গেট। সে আমার সঙ্গে বেঈমানী করেছে। আমার অনেক কথা সে ওই বিরোধী পক্ষের কাছে বলে দিয়েছে। 

- সবাই কেন যে বেঈমানী করে। 

- মানে? 

- আপনি যেমন আপনার বিরোধী পক্ষের পিএস কে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছেন। তারপর এই-যে মেয়েটা খুন তারপর সাজু ভাইয়ের খুনের কথা সবকিছু তার কাছে জানলেন। ঠিক সেভাবে সেও হয়তো আপনার লোককে কিনে নিয়েছে। 

- ওর এক এক সবগুলো আমি কিনে নেবো। 

- আপনার কাছে সাজু ভাইয়ের নাম্বার আছে? 

- হ্যাঁ। 

- একবার কল দিয়ে দেখেন তো, বেঁচে আছে কিনা। 

- সেটা জেনে কি হবে? 

- যদি সাজু মারা যায় তাহলে আলাউদ্দীনের কাজ তো শেষ হয়ে যাবে। তাহলে তাড়াতাড়ি এখানে আসবে আর আমি আমার কাজটা শেষ করবো। 

  

চলবে----------।

লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply


Messages In This Thread
RE: সাজু ভাই সিরিজ নম্বর -০৬ (গল্প কাপ ঠান্ডা কফি) - by Bangla Golpo - 27-04-2025, 10:00 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)