Thread Rating:
  • 50 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller অন্তরের বন্ধন- তমালের গোয়েন্দা গল্প
একটা দামী এয়ার কন্ডিশনড রেস্তোরাঁয় একটা কেবিন বুক করলো তমাল। বেয়ারাকে ডেকে নিজের জন্য কিছু স্ন্যাকস আর সুরেশ বাবুর জন্য লাঞ্চ  অর্ডার দিলো তমাল। বেয়ারা এসে খাবার দিতে গেলে তাদের যেন বিরক্ত না করা হয় জানিয়ে কথাবার্তা শুরু করলো দুজনে।


সুরেশ বাবু বললেন, জানেন ওই বাড়ির জন্য আমি নিজের জীবনের প্রায় সবটাই দিয়ে দিলাম। নিজের পরিবার, একমাত্র মেয়ের দিকেও তাকাইনি কোনোদিন। সেই পাপে এই বুড়ো বয়সে সেও আমাকে দেখে না। অথচ ওই বাড়ি থেকেই আমাকে চোর অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিলো, ভাবতে পারেন? ধুতির খুঁটে চোখ মুছলেন বৃদ্ধ।

অ্যাকাউন্ট থেকে যে টাকা সরানো হচ্ছে এই কথাটা আপনি কবে জানতে পারেন? সুরেশ বাবু মুখ তুলে তমালের দিকে চাইলো। সরাসরি এই প্রশ্ন করে তমাল তাকে বুঝিয়ে দিলো যে সে অনেক কিছুই জানে। সুরেশ বাবুও ভনিতা না করেই বললেন, রাহুলের বাবা শুভেন্দু মুখার্জির অ্যাক্সিডেন্টের কিছুদিন পর থেকে।

মানে মধুছন্দা দেবী পরিবারের দায়িত্ব নেবার পরেই? জিজ্ঞেস করলো তমাল। মাথা নাড়লেন সুরেশ বাবু, বললেন, হ্যাঁ। তখনো মধু ব্যবসা বানিজ্য পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি। সেই সুযোগে কেউ সরাচ্ছিলো টাকা খুব কৌশল করে। অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ার আগেই তছরুপ হয়ে যাচ্ছিলো, তাই অডিট না হলে ধরা মুশকিল হচ্ছিলো। আমি সে কথা জানাই মধু মা কে। কিন্তু সে পাত্তাই দিলো না। এমনকি আমার কথা বিশ্বাস করলো না। আমি ঠিক বলছি কি না জানার জন্য ওই রাজীব ছোকরাকে কাজে লাগালো। সে কি বললো জানিনা, একদিন মধু মা আমাকে ডেকে সেই তছরুপের জন্য আমাকেই দায়ী করে টাকা ফিরিয়ে দিতে বললো। আমি টাকা কোথায় পাবো? আমার অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছেন। বলতে গেলে বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রায় বিনা পয়সায় বিশ্বাসের সাথে কাজ করেছি ওই বাড়িতে। যা পেতাম নিজের পরিবারে পাঠিয়ে দিতাম। আমি কিভাবে অতো টাকা ফেরত দেবো? আর দেবোই বা কেন, আমি তো আর অপরাধ করিনি?

তমাল জিজ্ঞাসা বললো, বন্ধু মানে? সুরেশ বাবু উত্তর দিলেন, শুভেন্দুর বাবা রমাপতি ছিলো আমার ছেলে বেলার বন্ধু। দুজনে মিলে অনেক পরিশ্রম করে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি। ওই পরিবারের বড়লোক হবার পিছনে আমার অবদানও কম না। সে তখন কাঠের ব্যবসা করতো, আর দুমকা, অঞ্চল থেকে অভ্রের ব্যবসাও করতো। দুজনে গ্রামে গঞ্জে পড়ে থাকতাম অভ্র খনি থেকে সস্তায় অভ্র এনে ভারতের অন্য প্রদেশে বিক্রি করার জন্য।

তমাল জিজ্ঞেস করলো, তারপর কি হলো? খেতে খেতে সুরেশ বাবু উত্তর দিলেন, তারপর আর কি? টাকা ফেরত দিতে পারলাম না, চাকরিটাই চলে গেলো আমার। মেয়ের কাছে গেলাম রাণীগঞ্জে, সেও রাখতে চাইলো না। তারপর এক পরিচিত লোকের দয়ায় এই খাতা দেখাশোনার চাকরিটা পাই কোলিয়ারিতে। কোনো রকমে বেঁচে আছি এখন।

এরপরে দুজনে অনেক পুরানো দিনে ফিরে গেলো। ছেলেবেলার বন্ধুত্ব, রমাপতি মুখার্জির বিয়ে, ছেলেপুলে, নাতি নাতনি, মধুছন্দা আর মৌপিয়ার বাড়ি থেকে প্রেমিকের সাথে পালানো, আবার ফিরে আসা, অনেক গল্পই হলো। বৃদ্ধ বললেন স্মৃতিচারণ হিসাবে, কিন্তু তমাল রাজহাঁসের মতো জল বাদ দিয়ে শুধু দুধটুকুই গেঁথে নিলো মনে। 

অনেকদিন পরে পেট পুরে ভালোমন্দ খেয়ে তমালকে আশীর্বাদ করলেন বৃদ্ধ সুরেশ চাকলাদার। তার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা যাবে জেনে নিয়ে তাকে জানালো, একবার তাকে তমাল ডাকলেই যেতে হবে মুখার্জি বাড়িতে। তাঁর উপস্থিতি যে কতোটা জরুরী বুঝিয়ে দিয়ে তার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে সুরেশ চাকলাদারের কাছ থেকে বিদায় নিলো তমাল। তখন সূর্য্য মধ্য গগনে, ঘন্টাখানেকের ভিতরে পৌঁছে যাবে নিয়ামতপুরে।

রাধাদের বাড়িতে যখন পৌঁছালো তমাল, তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় দু'টো ছুঁয়েছে। রাধা আর বন্দনা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো তমালের জন্য। তমালকে দেখেই রাধা বন্দনার হাতে চিমটি কেটে চোখ মেরে বললো, ওয়াওওও!!! বন্দনা মৃদু ধমক দিলো তাকে। রাধার পালক বাবা মা ও বেশ খাতির যত্ন করে আপ্যায়ন করলো তমালকে। প্রায় জোর করেই তাকে স্নান করতে পাঠালো রাধা। 

স্নান সেরে এসে তমাল দেখলো লাঞ্চ পরিবেশন করা হয়েছে। এলাহি ব্যাপার! তমাল আঁতকে উঠে বললো, করেছেন কি! এতো কিছুর কি প্রয়োজন ছিলো? রাধার মা বললেন, আপনি মিষ্টির দাদা, প্রথম এলেন আমাদের বাড়িতে! তাছাড়া মিষ্টিও প্রথম এলো, এতো সামান্য আয়োজন! 

সামান্য আয়োজনের অসামান্য ভোজনে গুরুভোজন হয়ে গেলো সবার। রাধা তমালকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো। সাথে বন্দনাও রয়েছে বলাই বাহুল্য। তমাল আর থাকতে না পেরে গড়িয়ে পড়লো বিছানায়। বন্দনা তার পাশে বসলো, আর রাধা চেয়ারে। প্রথম দেখার সেই বিটকেলপনা আবার ফিরে এলো রাধার গলায়। বললো, বন্দনা, তোর দাদাটি তো দারুণ হ্যান্ডসাম!  ইসসসস্‌ আমার যদি এমন একটা দাদা থাকতো! বলেই দুহাতের তর্জনী আর মধ্যমা জড়ো করে নাচিয়ে কোট-আনকোট মুদ্রা বানালো সে। বন্দনা হেসে বললো, ধার দিতে পারি দাদাকে, না না ধার নয়, ভাড়া দিতে পারি, নিবি?

তমাল এবার কপট রাগ দেখিয়ে বললো, এই মেয়ে, আমি কি তোর জামা নাকি যে ভাড়া দিবি? আমার কোনো প্রেস্টিজ নেই? রাধা বললো, জামা না হোক, মায়ের জামাই হতে পারে? বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো। বন্দনা একটু লজ্জায় পড়ে গেলো এই কথা শুনে। কিন্তু তমাল বুঝে গেলো যে রাধা তৈরি মেয়ে। সে আগামী দুদিনের নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে পেলো যেন দিব্য চক্ষে! সে বললো, তোমরা এখন যাও তো, আমি একটু বিশ্রাম নেবো। রাধা আবার চোখ মেরে বললো, বন্দনাকে কি রেখে যাবো? নাকি শ্যামের রাধাকে চাই?

তমাল তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে দুজনকে ঠেলে বাইরে বের করে দিলো। ওরা দুজন একজন আর একজনের গায়ে হেসে গড়িয়ে পড়তে পড়তে বাইরে চলে গেলে তমাল দরজা ভেজিয়ে দিয়ে সিগারেট ধরালো। তারপর একসময় ঘুমিয়েও পড়লো অতিভোজনের আয়েশে।

রাধা আর বন্দনা চা নিয়ে এসে ঘুম ভাঙালো তার। তমাল ঘড়ি দেখলো, প্রায় ছ'টা বাজে। অনেক্ষণ ঘুমিয়েছে সে। চটপট উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তারপর রাধার বাবা মায়ের কাছে অনুমতি নিলো রাধা আর বন্দনাকে চিত্তরঞ্জনে নিয়ে যাবার জন্য। রাধার বাবা বললেন, হ্যাঁ ওরা বলেছে যে হোমে যেতে চায় একবার, বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। আপনি যাচ্ছেন শুনে বায়না করলো। আমাদের আপত্তি নেই, তবে আপনি নিরাপদে ওদের ফিরিয়ে দিয়ে যাবেন, এই অনুরোধ রইলো। বোঝেনই তো দু দুটো সোমত্ত মেয়ে!


তমাল বললো, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আসানসোল থানার ওসি আমার বিশেষ পরিচিত। তিনি চিত্তরঞ্জন থানার ওসি কে জানিয়ে দিয়েছেন আমার কথা। একটা চিঠিও দিয়ে দিয়েছেন। তাই বিপদের ভয় একদম করবেন না। কাজ শেষ হলেই আমি নিজে এসে রাধাকে আপনাদের কাছে দিয়ে যাবো।

এরপর আর আপত্তি করলেন না তিনি। দুদিনের মতো জামাকাপড় গুছিয়ে নিয়ে, হোমের বাচ্চাদের জন্য প্রচুর উপহার আর খেলনা সাথে করে গাড়িতে উঠে পড়লো রাধা আর বন্দনা। প্রথমে দুই বান্ধবী পাশাপাশিই বসেছিলো। কিন্তু তমাল সামনে মদনের পাশে উঠতে যেতেই রাধা বললো, পিছনে আসুন না তমালদা, গল্প।করতে করতে যাওয়া যাবে? তমাল নেমে এলে রাধাও নেমে তমালকে বন্দনার পাশে পাঠিয়ে নিজে উঠে বসে তমালকে স্যান্ডউইচ বানিয়ে ফেললো। তমাল মনে মনে মদন দেবতাকে স্মরণ করে আঁতকে উঠে ড্রাইভার মদনকে গাড়ি ছাড়তে বললো!

তমালের গা ঘেষে বসেছে দুই যুবতী। দুজনের শরীর থেকে এসি গাড়ির বদ্ধ কামরায় পারফিউমের সুগন্ধ ছাপিয়েও যৌন উত্তেজক একটা মিশ্র ঘ্রাণ পাচ্ছে তমাল। সেটা প্রমাণ করছে দুই পূর্ণ যুবতী শরীর মনে মনে বেশ জেগে রয়েছে। তমাল বুঝলো কাল সারারাত ধরে অনেক পরিকল্পনা হয়েছে আজকের এই অভিযান নিয়ে। তমাল কিছুটা জড়োসড়ো হয়েই বসে আছে রাধার উপস্থিতিতে। 

রাধা কিন্তু ততোটাই সাবলীল। পুরুষ শরীর তার অচেনা নয় শুনেছে বন্দনার কাছে। যদিও সেই শরীর গুলো সে নিজের ইচ্ছায় গ্রহণ করেনি, তবুও পুরুষ এবং নারী শরীর অনিচ্ছা স্বত্তে মিশলেও একসময় তারা সাড়া দেয়ই। বরং সেই অতৃপ্তি কামনা আরও বাড়িয়ে তোলে। রাধা মদনের কান বাঁচিয়ে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করলো, তমালদা, আমার বান্ধবীকে কি জাদু করেছেন বলুন তো, কাল থেকে শুধু তমালদা তমালদা করে যাচ্ছে। তমালদা এই, তমালদা সেই, উফ্‌ কান ঝালাপালা হয়ে গেলো আপনার গুনগান শুনতে শুনতে!

তমাল বললো, তাই বুঝি? তা কি কি শুনলে? সবই কি নিন্দা, নাকি প্রশংসাও কিছু জুটেছে কপালে? রাধা বললো, নিন্দা কি বলছেন? উলটে বাড়িয়ে বাড়িয়ে যা সব বলেছে, প্রতিবাদ করলেই রেগে যাচ্ছে। বন্দনা ঝাঁঝিয়ে উঠে বললো, কি বাড়িয়ে বললাম রে মুখপুড়ি? রাধা বললো, দেখেছেন এখনো কেমন রেগে যাচ্ছে? তমাল বললো, হুম তাই তো দেখছি! তা কি তোমার বিশ্বাস হয়নি? 

রাধা বললো, সাইজ নিয়ে যা বলেছে সেটাই তো বাড়িয়ে বলা? তমাল তার দিকে ফিরে বললো, তাই নাকি? কি বলেছে? রাধা আরও কাছে সরে এসে দুটো হাত ফাঁকা করে ফিসফিসিয়ে বললো, এত্তো বড় বলেছে! বন্দনা জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিলো। সে মুখ ঘুরিয়ে রাধার দেখানো মাপটা দেখে গম্ভীর মুখে বললো, আরও বড়!

দাঁত খেঁচালো রাধা, ইহ্‌ আরও বড়, গুল মারিস না! তমাল সাথে সাথে বললো, কি, কি বললে? কি মারিস না? তমালের অশ্লীল ইঙ্গিত বুঝতে পেরে রাধা লজ্জায় লাল হয়ে বলে উঠলো, ইসসসস্‌ কি অসভ্য লোক! গুল... গুল মশাই গুল, ল... ল, বুঝলেন ল বলেছি। তমাল হাসতে হাসতে বললো, ওই মারামারিতে তো ল থাকে না, আর আমিও ওই ব্যাপারে কমপ্লিটলি আউট ল! তমালের কথা শুনে দুজনই হাসতে লাগলো জোরে জোরে।

এরকম হাসি ঠাট্টা করতে করতে পঞ্চান্ন কিলোমিটার রাস্তা কখন ফুরিয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না ওরা। মদনকে তমাল বললো, হোমের কাছাকাছি কোনো ভালো হোটেলে চলো। মদন একটা বড়সড় হোটেলের সামনে গাড়ি দাঁড় করালে রাধা বললো, এই হোটেলে থাকবেন নাকি! বাবা, এতো মস্ত হোটেল, একটু সস্তা হোটেলে গেলে হতো না! এখানে তো অনেক খরচা! তমাল বললো, সেসব তোমাকে ভাবতে হবে না, তুমি চলো তো!

তিন তলায় পাশাপাশি দুটো রুম নিলো তমাল। একটা নিজের জন্য, অন্যটা রাধা আর বন্দনার জন্য। প্রথমে ওদের ঘরটায় গেলো তিনজনে। ওরা দুজনের কেউই এতো বড় হোটেলে কখনো আসেনি, তাই একটু জড়োসড়ো হয়ে আছে। তমাল হেসে বললো, শোনো এখানে কারো বাড়িতে বেড়াতে আসিনি আমরা। রীতিমতো টাকা দিতে ভাড়া করেছি। যতোক্ষণ থাকবে এই রুম তোমাদের নিজেদের, তাই যেমন খুশি ব্যবহার করো, এতো গুটিয়ে আছো কেন? রাধা বিছানার কাছে গিয়ে আঙুল দিয়ে টিপে দেখছে ধবধবে সাদা বিছানাটা কতোটা নরম। আসলে রাধার বর্তমান বাবা মা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। জ্ঞান হবার পর থেকে হোমে মানুষ হয়েছে, একটা পরিবার পাবার পরেও এসব জায়গায় আসেনি, তাই তার দ্বিধা যাচ্ছে না।

বন্দনা অবশ্য বড়লোকি ব্যাপার স্যাপার দেখেছে মুখার্জি বাড়িতে, কিন্তু এমন হোটেলে সেও থাকেনি। তমাল ওদের সংকোচ কাটাতে জুতো পরেই বিছানার টানটান হয়ে শুয়ে পড়লো। বললো বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও তোমরা। ঠিক এক ঘন্টা পরে ডিনার করবো। ডাইনিং এ গিয়ে খাবে নাকি রুমেই আনিয়ে নেবো? রাধা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, না বাবা, এখানেই আনিয়ে নিন তমালদা, ডাইনিং আবার কেমন হবে কে জানে?

তমাল হেসে বললো, বেশ তাই হবে। আগে ফ্রেশ তো হয়ে নাও, আমি নিজের ঘরে যাচ্ছি। রাধা বললো, এতো বড় বিছানা, একটা রুম নিলেই তো হতো, দিব্যি থাকতে পারতাম তিনজনে। তমাল বললো, নিয়ম নেই রাধা, তবে রুম দুটো নিলেও এখনও আমরা তিনজনে এক সাথে শুতে পারি, কি বলো বন্দনা? তমালের কথার ধরনে যে ইঙ্গিতটা আছে সেটা বুঝে আবার ব্লাশ করলো রাধা! তমাল তাদের রেখে নিজের ঘরে চলে এলো।

তমালের ঘরে বসেই ডিনার সারলো তিনজনে। খেতে খেতেই আনন্দভবন নিয়ে কথা হচ্ছিলো তাদের ভিতরে। রাধা বন্দনার চেয়ে বেশিদিন ছিলো হোমে। তাই সে আরও ভালো জানে হোমের ব্যাপারে। তমাল তাকে জিজ্ঞেস করলো, বন্দনার হোমে প্রথম ভর্তি হবার ব্যাপারে কিছু জানে কি না?


রাধা জানালো, অফিসে কে বা কারা বন্দনাকে নিয়ে এসেছিলো সেগুলো সে জানে না। ছোটদের এসব জানার অধিকার নেই। আমি তো জ্ঞান হবার পর থেকেই হোমে আছি। বন্দনা এসেছিলো বোধ হয় তিন চার বছর বয়সে। আমার তখন সাত আট বছর বয়স। বহুদিন একসাথে কাটালাম। তারপর যখন আমার মাসিক শুরু হলো আমাকে বড় মেয়েদের সাথে রুমে পাঠিয়ে দিলো। আনন্দভবনে দুই ধরনের রুম ছিলো। ছোট বাচ্চারা ডরমিটরিতে একসাথে থাকতো। আর যারা একটু বড় বা টাকা পয়সা বেশি দেয় তারা চারজনের রুম বা দু'জনের রুম পেতো। আমি একটু বড় হলে আমাকে ডরমিটরি থেকে রুমে শিফট করা হলো। মেয়েদের সুবিধার জন্য যে এসব করা হতো তা মোটেই নয়। আসলে একটু বড় মেয়েদের দিয়ে ব্যবসা করতো হোম। তাই তাদের বাচ্চাদের থেকে আলাদা রাখা হতো। বন্দনা তখনো ডরমিটরিতে ছোটদের সাথে ছিলো।

দু তিন বছর পরে অন্য মেয়েরা এলে চারজনের রুম ফাঁকা ছিলোনা বলে একটা দুজনের রুমে এক আয়ার সাথে রাখা হয়েছিলো আমাকে। একদিন দেখলাম বন্দনাকে নিয়ে এলো আমার রুমে। বন্দনা আসার পরে সেই আয়ার জায়গায় আমার রুমমেট হয় বন্দনা। প্রথম থেকেই আমি বুঝতে পারি যে বন্দনাকে একটু আলাদা খাতির যত্ন করা হয়। আস্তে আস্তে আমাদের ভিতরে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

তমাল জিজ্ঞেস করলো, তোমাকে কি বাইরে পাঠানো হতো? রাধা মুখ নীচু করে বললো, হ্যাঁ হতো। সব সময় যে বাইরে পাঠানো হতো, তা নয়, হোমের ভিতরে একটা গেস্ট রুম ছিলো, বিশেষ বিশেষ প্রভাবশালী লোকজন সেখানেও আসতো। তাদের হোমের মেয়েদের ছবি দেখিয়ে পছন্দ করতে দেওয়া হতো। তারা যাকে পছন্দ করতো, তাকে সেই গেস্ট রুমে তার সাথে রাত কাটাতে হতো। 

কতোদিন পরপর হতো এসব? আবার জানতে চাইলো তমাল। রাধা বললো, মাসে একবার, কখনো বিশেষ অতিথি এলে দুবার। তমাল বললো, আচ্ছা এগুলো তারা করতো কোন সাহসে? এই মেয়েরা বাইরে গিয়ে তো তাদের কুকীর্তি ফাঁস করে দিতে পারে? রাধা বললো, হোম থেকে বড় মেয়েদের খুব একটা কেউ দত্তক নেয় না। সবাই প্রায় অনাথ। দত্তক নিতে যারা আসে তারা বাচ্চা মেয়ে খোঁজে। আর বাচ্চাদের তো আলাদা রাখা হয় আগেই বললাম। তারা এসব কুকীর্তির কথা জানেনা, বা বোঝে না। যে মেয়েদের কেউ নেয় না, তারা হোমে থাকতে থাকতে বড় হয়ে যায়। তাদের আর যাবার জায়গা থাকে না। একটু ভালো রুমে থাকার জন্য, একটু ভালো খাবার দাবারের লোভে মেয়েরাই রাজি হয়ে যায়। এক সময় তাদের অভ্যেস হয়ে যায় এসব, কেউ কেউ তো বেশ উপভোগও করে। দু একজন পালিয়ে গিয়েও এই পেশাই বেছে নিয়েছে বাইরে।

তমাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাধার কথা শুনে। তারপর বললো, তোমাকে তারা দত্তক দিলো কেন? রাধা বললো, বাবা মা যখন হোমে আসে, তাদের একটু বড় মেয়ের প্রয়োজন ছিলো। তাদের বয়স হয়েছে, ছোট মেয়েকে দত্তক নিয়ে মানুষ করার মতো বয়স আর তাদের নেই, অথচ তাদের দেখাশুনা করারও কেউ নেই। হোমে যোগাযোগ করলে ছবি দেখে তারা আমাকে পছন্দ করে। হোমের ম্যানেজার আমাকে ডেকে বলে এখানের এইসব কথা বাইরে কাউকে না বলার প্রতিজ্ঞা করলে তবে তারা আমাকে দত্তক দিতে পারে। আমি রাজি হয়ে যাই।

তমাল আবার প্রশ্ন করলো, তুমি বললে বড়দের দত্তক দেওয়া হয়না, বা তাদের খুব একটা কেউ নেয় না, তাহলে বন্দনাকে কিভাবে দত্তক নিলো? রাধা বললো, বন্দনার ব্যাপারটা প্রথম থেকেই রহস্যজনক ছিলো। একে ক্লায়েন্টদের কাছে পাঠানো হতো না। কোনো বিশেষ অতিথিও ডাকেনি কোনোদিন। শুধু ম্যানেজার মাঝে মাঝে আয়া দিদিকে দিয়ে ডেকে পাঠাতো। তাও শুতে হয়নি কোনোদিন ওকে। তারপর তো আমি চলে এলাম। বন্দনাকে কে দত্তক নিলো জানতাম না। একদিন ও নিজেই কিভাবে যেন আমার নাম্বার জেনে আমাকে ফোন করেছিলো।

এতোক্ষণ একটা কথাও বলেনি বন্দনা। এবারে সে বললো, রাধা চলে আসার পরে আমি খুব একা হয়ে পড়ি। ওই রুমে আর কোনো নতুন মেয়ে এলো না। আমি একাই থাকতাম। ম্যানেজারের খুব সুবিধা হলো, যখন তখন এসে বিরক্ত করতো। কিন্তু শোবার কথা বলতো না। গায়ে হাত টাত বোলাতো খুব, আর মাঝে মাঝে চুষে দিতে হতো। সেরকম একদিন আমি বললাম রাধার নম্বরটা দিতে। প্রথমে রাজি হয়নি, কিন্তু আমি তাহলে চুষবো না শুনে রাজি হলো। হোম থেকে আমাদের কাউকে কল করার নিয়ম ছিলো না। কল আসতোও না কারো।

তোমাকে তাহলে ঘনশ্যাম কিভাবে নিয়ে গেলো মধুছন্দা দেবীর কাছে? প্রশ্ন করলো তমাল। বন্দনা বললো, ঘনশ্যাম কাকা হোমের ড্রাইভার ছিলো। মেয়েদের বাইরে ক্লায়েন্টের কাছে নিয়ে যাওয়া আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব ছিলো তার। রাধাকেও সেই নিয়ে যেতো বাইরে। আমাকে ছোটবেলা থেকেই ভীষণ পছন্দ করতো সে। এটা সেটা কিনে এনে দিতো, আদরও করতো খুব মেয়ের মতো। একদিন এসে বললেন তোকে একজনের কাছে নিয়ে যাবো। তোকে পছন্দ হলে আর তোকে এখানে থাকতে হবে না, মস্ত বড়লোকের মেয়ে হয়ে থাকতে পারবি সারাজীবন। সত্যি সত্যিই একদিন আমাকে নিয়ে গেলো মায়ের কাছে। সেও আমাকে পছন্দ করলো। তারপর তো জানোই।

হ্যাঁ জানি, তোমার সাথে দেখা করাতে ঘনশ্যাম তোমাকে আসানসোল নিয়ে গেছিলো,বললো তমাল। অবাক হয়ে বন্দনা বললো, না তো, আসানসোল কেন হবে? আমাকে তো চিত্তরঞ্জনেই একটা বাড়িতে নিয়ে গেছিলো ঘনশ্যাম কাকা। আর সেটাই তো প্রথম না, মাঝে মাঝেই তো কাকা আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যেতো। তিনি খুব আদর যত্ন করতেন। জামা কাপড় কিনে দিতেন, ভালো ভালো খাবার খেতে দিতেন। একটু বড় হবার পরে অবশ্য আর যেতাম না। কিন্তু ঘনশ্যাম কাকা যখন মায়ের কাছেই নিয়ে গেলো, আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।

তমাল বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো বন্দনার কথা শুনে। সে বললো, তুমি মধুছন্দা দেবীকে আগে থেকেই চিনতে? কই এ কথা তো তুমি আমাকে আগে বলোনি? বন্দনা বললো, তুমি তো জিজ্ঞাসা করোনি সে কথা? হ্যাঁ তো চিনতাম তো? তমাল আবার জিজ্ঞাসা করলো, শেষবার তোমাকে যেখানে নিয়ে গেছিলো, ছোট বেলায়ও কি সেই বাড়িতে যেতে? বন্দনা বললো, না সেটা অন্য বাড়ি ছিলো। ছোট্ট একতলা বাড়ি, পিছনে একটা ফাঁকা জায়গা ছিলো, গাছপালা ছিলো অনেক। খুব খেলতাম সারাদিন সেখানে। কিন্তু শেষবার একটা অন্য বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলো কাকা। প্রথমে তো মা কে চিনতেই পারিনি, সেজে গুঁজে, গয়নাগাটি পরে তাকে অন্য রকম লাগছিলো। আর ভীষণ গম্ভীর হয়ে গেছিলেন। আগে খুব হাসিখুশি ছিলেন। আমার মিষ্টি নামটা তো ওনারই দেওয়া? ছোট বেলায় আমাকে মিষ্টি বলে ডাকতেন।
Tiger

                kingsuk25@ জিমেইল ডট কম
[+] 4 users Like kingsuk-tomal's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অন্তরের বন্ধন- তমালের গোয়েন্দা গল্প - by kingsuk-tomal - 27-04-2025, 12:55 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)