27-04-2025, 12:46 AM
কিছুই করার নেই তমালের। বন্দনার কপাল খারাপ! তবু ভালো তমালকে না পেলেও দুদিন অন্তত পুরানো বন্ধুর সাথে সময় কাটাতে পারবে। এই কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ডাইনিং রুমে ঢুকলো তমাল। দেখলো ঘরটা ফাঁকাই রয়েছে। সে বসতেই কিছুক্ষণের ভিতরে জলখাবার চলে এলো সামনে। সেই বস্তাপচা বড়লোকি খাবার। কোনো রকমে খেয়ে উঠে এলো তমাল। নিজের ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখলো অদিতির ঘরের দরজার পাল্লাটা অল্প ফাঁক হয়ে আছে। সে ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখলো অগোছালো ভঙ্গিতে উপুর হয়ে শুয়ে আছে অদিতি। পাশে বেডসাইড টেবিলে অর্ধেক খাওয়া জলখাবারের প্লেট। তারমানে আজ নীচে না গিয়ে ব্রেকফাস্ট ঘরেই আনিয়ে নিয়েছে অদিতি।
তমাল বিছানার কাছে এসে মিষ্টি করে বললো, গুড মর্নিং সুইটহার্ট! বহু দূর থেকে ফিরে তাকানোর মতো ক্লান্ত ঘোর লাগা চোখ মেলে চাইলো অদিতি। তারপর লম্বা একটা হাই তুলে চিৎ হতে হতে বললো, ভেরি গুড মর্নিং সোনা!
তমাল জিজ্ঞাসা করলো, শরীর খারাপ নাকি? ঘরেই ব্রেকফাস্ট করেছো যে? অদিতি মুচকি হেসে জবাব দিলো, তুমি জানোনা বুঝি? যা হাল করেছো আমার শরীরের, তাতে আজ সারাদিন বিছানা ছেড়ে উঠবো না আমি, লাঞ্চ ডিনারও ঘরেই করবো! উফফ্ মনে হচ্ছে কোনো দস্যু কাল সারারাত ধরে আমাকে ;., করেছে!
এই কথা শুনে তমাল মুখ ভার করে বললো, আমাকে ধর্ষক বললে তুমি? ইস্ কি জঘন্য অপবাদ? ধর্ষিতা বুঝি নিজের ইচ্ছায় সব কিছু খুলে দেয়? ধর্ষিত হবে বলে ঘরে আলোকসজ্জা করে রাখে? এমন শিৎকার করে যে তা শুনে নিজের বড় দিদি গুদে উঙলি করতে বাধ্য হয় দরজার সামনে বসে কাপড় তুলে? বয়সে ছোট বোনের মতো একটা মেয়েও বাদ যায় না! দোষ শুধু আমার?
তমালের কথা শুনে তড়াক্ করে লাফিয়ে উঠে বসলো অদিতি। এতোক্ষনের ক্লান্ত ঘুমঘুম ভাব নিমেষে উধাও চেহারা থেকে। সোজা তমালের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, কে উঙলি করেছে? দিদি? তমাল চোখ মেরে ঘাড় নাড়লো, মুখে বললো, বন্দনাও! তোমার সাউন্ডপ্রুফ রুমও আটকাতে পারেনি কাল রাতে তোমার চিৎকার আর খিস্তি। তারপর হাসতে লাগলো জোরে জোরে।
অদিতি ধমক দিয়ে বললো, হেসো না তো? কি হয়েছে আমাকে বলো। তুমি কিভাবে জানলে এতো কিছু? তমাল বন্দনার দেওয়া বর্ননাগুলো পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বলে গেলো। যদিও তাদের পরের প্ল্যান সম্পর্কে কিছু বললো না অদিতিকে। শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো অদিতি। বললো, ইস্ কি লজ্জা! এরপর দিদি আর বন্দনার সামনে।মুখ দেখাবো কিভাবে?
তমাল বললো, মুখ না দেখানোর কি আছে? রাজীবের সাথে তোমাদের তিনজনেরই শারীরিক সম্পর্ক ছিলো এবং তিনজনেই লুকিয়ে একে অন্যের সঙ্গম দেখেছো বা শুনেছো। তাহলে আজ হঠাৎ কি এমন নতুন হলো যে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছো? যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। লুকিয়ে করার আর প্রয়োজন হবে না। মুখোশ যতো জলদি খুলে যায়, ততোই ভালো।
তবু অদিতির দ্বিধা যায়না যেন। বললো, আসলে দিদির সাথে আমার সেভাবে বন্ধুত্ব তৈরি হয়নি। বয়সে অনেকটা বড় হবার কারণে দূরে দূরে থাকতাম। দিদিও কোনোদিন তেমন কাছে ডাকেনি। তারপরে তো দিদি পালিয়েই চলে গেলো। ফিরে আসার পরেও তেমন ভাব হলো না আর। অথচ একই বাড়িতে দুই বোন থাকলে তারা তো বন্ধুর মতোই হয়, সব কিছু শেয়ার করে?
তমাল চোখ টিপে বললো, শেয়ার করতে চাও ভালো কথা, তাই বলে আবার আমাকে শেয়ার করতে চেও না যেন। বাব্বা! এক একটা বাঘিনী দুই বোন। একজনকে সামলাতেই আমার হিমসিম অবস্থা, দুজন একসাথে হলে তো কালঘাম ছুটে যাবে।
অদিতি তমালের হাতে একটা চড় কষিয়ে বললো, ভালো হবে না বলছি তমালদা.. উফফ্ অসভ্য একটা!
তমাল অদিতির খাটে বসে একটা সিগারেট ধরালো। ধোঁয়া ছেড়ে জিজ্ঞেস করলো, তা ;., কেমন উপভোগ করলে কাল? অদিতি ঘোর লাগা চোখ তুলে বললো, বলে বোঝানো যাবে না সেটা। মনে হচ্ছে আর সারাজীবনেও যদি পুরুষ শরীরের ছোঁয়া না পাই, তাহলেও কোনো আফসোস থাকবে না আমার। তুমি কাল আমাকে পূর্ণ করে দিয়েছো তমালদা!
বালাই ষাট! এই বয়সেই পুরুষ শরীরের ছোঁয়া থেকে দূরে থাকার কথা বলতে নেই! আমি নিজেই আরও কতোবার যে তোমার শরীরে ঢুকবো বেরোবো, তারই ঠিক নেই, অন্য পুরুষ তো বাদই দিলাম। বলো তো এখনি একবার ঢুকে যেতে পারি.. বলতে বলতে তার দিকে এগিয়ে যাবার ভান করলো তমাল।
আঁতকে উঠে দূরে সরে গেলো অদিতি। এঁই.. না না... একদম কাছে আসবে না... এখনো ব্যাথায় টনটন করছে শরীর। পুরো আটচল্লিশ ঘন্টা লাগবে রিসেট হতে... হাসতে হাসতে কপট রাগ দেখিয়ে বললো অদিতি।
তমাল বললো, সেই জন্যই তো আটচল্লিশ ঘন্টা বা বাহাত্তর ঘন্টার জন্য দূরে চলে যাচ্ছি আমি। তুমি এই সময়ে শরীর ফরম্যাট দিয়ে রাখো, ফিরে এসে আমার পেনড্রাইভ দিয়ে তোমার পুরানো হার্ডওয়্যারে নতুন সফটওয়্যার আপলোড করবো।
তমালের কথা শুনে ফিক্ করে হেসে ফেললো অদিতি। তারপর বললো, কোথায় যাচ্ছো? তমাল বললো, কয়েকটা কাজ বাকি আছে। কয়েকজনের সাথে দেখা করতে হবে। অদিতি আবার জিজ্ঞেস করলো, কখন বেরোচ্ছো? তমাল জানালো থানায় কিছু কাজ সেরে বিকালেই যাবো। মদন কাল রাতেই ফিরে এসেছে, তাই মদনকে নিয়ে গার্গীর গাড়িতেই যাবো। অদিতিকে তার ঘরে রেখে নিজের ঘরে ফিরে এলো তমাল।
ঢুকেই দেখলো মুখ ভার করে বসে আছে বন্দনা। তমালকে দেখে বলে উঠলো, দেখলে বুড়ির চালাকিটা দেখলে? সাথে বুড়ো ড্রাইভারটাকে গছিয়ে দিলো, আবার রোজ ফোন করতে হবে রাধাকে নিয়ে,সে শর্তও জুড়ে দিলো। মহা হারাম...
তমাল ধমক দেওয়াতে গালাগালিটা শেষ করতে পারলো না বন্দনা। তমাল বললো, উনি তো ঠিক কাজই করেছেন? মা মেয়ের ভালোটা ভাববেন না? তাকে খারাপ কথা বলতে তোমার বাঁধছে না মুখে? বন্দনা মুখ নীচু করে আস্তে করে বললো, সরি! আমাদের এতো সুন্দর প্ল্যানটা বানচাল হয়ে গেলো বলে রাগ উঠে গেছিলো। ইস্ কতো কিছুই না ভেবেছিলাম।
তমাল বন্দনার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ভেবো না, আমি তো আছি, আবার কখনো নিশ্চয়ই হবে। তুমি বরং এই দুটোদিন রাধার সাথে কাটিয়ে এসো। আমি ফেরার দিন নিয়ে আসবো তোমাকে। আমার ফোন নাম্বারটা রাখো, বলে নিজের একটা কার্ড ধরিয়ে দিলো বন্দনার হাতে। তারপর বললো, আর একটা কথা, তোমার কাছে ঘনশ্যামের কোনো ছবি আছে? বন্দনা জানাল তার মোবাইলে আছে, পাঠিয়ে দিচ্ছে তমালকে। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তমাল জিজ্ঞেস করলো, কখন বেরোচ্ছো তোমরা? বন্দনা বললো, ঘন্টাখানেক পরেই যাবো।
মদন আগেরদিন রাতেই ফিরে এসেছিলো। তমাল তাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো থানার উদ্দেশ্যে। পথে যেতে যেতে সে কি কি জানতে পেরেছে তার খুঁটিনাটি জিজ্ঞাসা করে নিলো তমাল। তারপর বললো, ওয়েল ডান মদন, দারুণ কাজ করেছো তুমি। গার্গীকে বলে তোমার পার্মানেন্ট চাকরির ব্যবস্থা করে দেবো আমি। মদন খুশি হয়ে দাঁত বের করে হাসলো।
থানায় ঢুকতেই ইনস্পেকটর ঘোষ বেশ সমাদর করেই বসালেন। তমালের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা মনে পড়তে হাসি পেলো খুব। চা খেতে খেতে তমাল জিজ্ঞেস করলো, আপনাকে যে অ্যাকাউন্ট নাম্বারটা দিয়েছিলাম, সেটার মালিকের খোঁজ পাওয়া গেলো? মিঃ ঘোষ মুখে কিছু না বলে ড্রয়ার খুলে একটা কাগজ তমালের হাতে ধরিয়ে দিলো। সেটাতে চোখ বুলিয়ে ইনস্পেকটর ঘোষ কে ধন্যবাদ জানালো তমাল। তারপরে বললো, মিঃ ঘোষ, পুরো জাল বিছানো হয়ে গেছে, এখন গোটানোর সময়। আপনাকে ছাড়া সেটা সম্ভব নয় স্যার।
ইনস্পেকটর হেসে বললো, আবার স্যার কেন? আমাকে দাদা বলতে পারেন। ভালো লেগে গেছে আপনাকে। এতো অল্প বয়সে বুদ্ধিমান কর্মঠ যুবক বেশি একটা দেখা যায়না ব্রাদার। আমরা তো কেসটাকে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। আপনি এতো কম সময়ে সেটা প্রায় সমাধান করে ফেলবেন, আমি ভাবতেই পারিনি। যে কোনো প্রবলেমে আমাকে আপনার সাথেই পাবেন।
তমাল বললো, অনেক ধন্যবাদ। তবে আপনিও এবার আপনিটা ছেটে ফেলে তুমি বলুন। আমি অনেকটাই ছোট আপনার থেকে। ইনস্পেকটর ঘোষ খুশি হয়ে বললো, বেশ বেশ, তাই হবে ব্রাদার। এবার বলো, কি ধরনের হেল্প চাই তোমার?
তমাল বললো, প্রথমে সুরেশ চাকলাদারের খবর বলুন। মিঃ ঘোষ বললেন, সুরেশ চাকলাদার বর্তমানে আছেন ধানবাদে। একটা কোলিয়ারির হিসাব পত্র দেখেন। একাই থাকেন, তবে শরীর বিশেষ ভালো নয় বলে তাকে আনা গেলো না এখানে।
তমাল বললো, তাহলে তো ভালোই হলো, আজ রাতে আমি চিত্তরঞ্জনে যাচ্ছি। সেখান থেকে ধানবাদে গিয়ে দেখা করতে কোনো অসুবিধা হবে না। আপনি তার ঠিকানা আর ফোন নাম্বারটা আমাকে দিন দাদা, আর তাকে একটু বলে দেবেন যে আমি দেখা করতে যাবো। একটা কাগজ টেনে ফাইল দেখে খসখস করে লিখে দিলেন ইনস্পেকটর ইন্দ্রজিৎ ঘোষ। বললো, ঠিক আছে, আমি জানিয়ে দেবো।
এরপরে তমাল বলল, দাদা আর একটা কাজ করে দিতে হবে। আমি চিত্তরঞ্জনে স্ট্রীট নং ছাব্বিশের একটা হোম আনন্দভবনে যাবো একজনের সম্পর্কে খোঁজ নিতে। আপনি যদি আমাকে একটা পারমিশন লেটার দিতেন, তাহলে সুবিধা হতো।
এবারে একটু চিন্তায় পড়লেন ইনস্পেকটর ঘোষ। বললেন সরকারি না বেসরকারি হোম? তমাল জানালো যে সেটা বেসরকারি হোম। মিঃ ঘোষ বললেন, দেখো ভায়া, কোনো অনাথাশ্রম কে আমরা তাদের বোর্ডারদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য করতে পারিনা। দ্যাট ইজ কমপ্লিটলি আনএথিকাল অ্যান্ড ইল্লিগাল টু!
তমাল বললো, তাহলে তো বেশ সমস্যায় পড়া গেলো। এই ব্যাপারটার উপরে কেসটা অনেকটাই নির্ভর করছে বলেই আমার ধারণা। যদি আমার সন্দেহ সঠিক হয়, আমি আপনাকে এমন একটা কেস উপহার দেবো যা ক্রাইমের ইতিহাসে নজিরবিহীন হয়ে থাকবে দাদা। কোনো উপায় কি নেই? সোজা পথে না হলেও একটা বাঁকা আঙুলেও কি ঘি তোলা যাবে না?
ইনস্পেকটর ঘোষ কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপরে বললেন, একটা উপায় হতে পারে। হোম তো জানে না যে এটা অ্যাটেম্পট টু মার্ডার কেস? আমি তোমাকে একটা পরিচয় পত্র লিখে দিচ্ছি, যেখানে বলা থাকবে তুমি একটা খুনের কেসে আমাদের সাহায্য করছো। তারা যেন সব রকম ভাবে তোমাকে সাহায্য করে। এটুকু মিথ্যা তোমার জন্য বলা যেতেই পারে কি বলো? খুনের মামলা শুনলে তারা আর আপত্তি না ও করতে পারে। এছাড়া চিত্তরঞ্জন থানার ওসি মিঃ বাসুদেব গড়াইকে আমি জানিয়ে রাখছি তোমার কথা, সব রকম সাহায্য পাবে তুমি তার কাছ থেকে।
তমাল হেসে বললো, ওতেই হবে। আমারও ধারণা এতে কাজ হবে। তবে আপনি হয়তো মিথ্যা বলার হাত থেকে বেঁচেও যেতে পারেন দাদা। কে বলতে পারে?
ইনস্পেকটর ঘোষ অবাক হয়ে তমালের দিকে তাকিয়ে বললেন, মানে? ঠিক বুঝতে পারলাম না তোমার কথা। তমাল হাত জোড় করে বললো, আর একটু ধৈর্য্য ধরুন দাদা। এখনো পুরোটাই আমার অনুমান। আমি ফিরে এসেই সব কথা প্রথমে আপনাকে জানাবো, কথা দিলাম।
ইনস্পেকটর ঘোষের কাছ থেকে লিখিত পরিচয়পত্র নিয়ে তমাল থানা থেকে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে উঠে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম ঠিকানাটা মদনের হাতে দিয়ে বললো, দেখো তো? চিনতে পারো একে? মদন কাগজটা পড়ে অবাক হয়ে তাকালো তমালের দিকে। বললো, হ্যাঁ দাদা, এই তো সেই লোক! এর ঠিকানা আপনি কি করে পেলেন? তমাল কিছু না বলে মুচকি হাসলো শুধু।
ফেরার পথে মদনকে সেই কিউরিও সপে একবার গাড়ি দাঁড় করাতে বললো তমাল। গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে চলে গেলো সে। পাঁচ মিনিটের ভিতরে খুশি মনে বেরিয়ে এসে মদনকে বললো ফিরে চলো।
মুখার্জি বাড়িতে এসে তমাল দেখলো বন্দনা ঘনশ্যামের সাথে চলে গেছে রাধাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। নিজের ঘরে ঢুকে টুকটাক জিনিস পত্র গুছিয়ে নিলো দু তিনদিনের জন্য।
নীচে গিয়ে একা একাই লাঞ্চ করে এলো তমাল। অদিতির ঘরের দরজা বন্ধ দেখে তাকে আর ডিস্টার্ব করলো না। ফিরে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলো সে। তখনি টের পেলো দরজায় কেউ নক্ করছে। তমাল ভাবলো অদিতি এসেছে, কিন্তু দরজা খুলেই দেখতে পেলো মৌপিয়া দাঁড়িয়ে আছে, একটা স্লিভলেস ব্লাউজ আর পাতলা শাড়ি পরে। তমালকে সামনে দেখে সে কোনো সময় না দিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়লো তার উপর। প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও টাল সামলে নিয়ে অদিতির ঘরের দিকে তাকালো সে।
তমালের মনোভাব বুঝতে পেরে মৌপিয়া তাকে বুকের মধ্যে পিষতে পিষতে বললো, ভয় নেই, অদিতিকে পাঠিয়েছি শিখাকে আনতে। বলেছি শরীরটা ভালো লাগছে না। ওদের ফিরতে এখনো ঘন্টা খানেক লাগবে তমাল। তুমি আমাকে শান্ত করো প্লিজ, কাল রাত থেকে জ্বলে মরছি আমি।
তমাল এক হাতে দরজা আটকে দিয়ে বললো, স্বাভাবিক, মাঝরাতে ছোট বোনের দরজায় আড়ি পেতে তার যৌনলীলার শব্দ শুনে শাড়ি তুলে দরজার সামনে বসে উঙলি করলে শরীরে জ্বালা তো হবেই মৌ?
মৌপিয়া তমালের কথা শুনে যেন চার'শ চল্লিশ ভোল্টের শক্ খেলো। রাতের অন্ধকারে ফাঁকা বারন্দায় গোপনে সে যা করেছে তা এতো ডিটেলসে ঘরের ভিতরে চোদাচুদি করতে করতে তমাল কিভাবে জানলো সেটা ভেবে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো মৌপিয়া। অনেক কষ্টে তুতলিয়ে বললো, তু... তুমি... কিভাবে জানলে সে কথা?
তমাল নিজের বিছানায় বসে মুখে বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ানের মতো অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলে বললো, তুমি ভুলে যাচ্ছো মৌ যে আমি একজন গোয়েন্দা। আমার কাছে কিছুই লুকানো থাকে না।
মৌপিয়া দ্বিধায় পড়ে গেলো। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবার সময় তার নেই। সময় খুব অল্প। কাল রাত থেকে কামনার আগুনে পুড়ে মরছে সে, এখনি তমালের পুরুষালি বুকে নিষ্পেষিত না হলে, তার নরম রসালো গোপন নারী অঙ্গ তমালের কঠিন দন্ডের মন্থনে ছিন্নভিন্ন না হলে সে কিছুতেই শান্তি পাবে না।
সে বললো, উফফফফ্ তমাল আমাকে বাঁচাও। কাল তোমাদের কথা আর আদির শিৎকার শুনে আমি পাগল হয়ে আছি। কি ভয়ানক চিৎকার করছিলো মেয়েটা! না জানি কতো সুখ দিচ্ছিলে তুমি! আমাকেও একটু ভাগ দাও সেই সুখের। প্লিজ তমাল, তোমার পায়ে ধরছি, ফিরিয়ে দিও না আমাকে?
মৌপিয়ার কাতর আর্তি মন ছুঁয়ে গেলো তমালের। মৌপিয়ার কষ্ট সে বোঝে। অদিতি বা বন্দনার কোনো সামাজিক পবিত্রতা রক্ষার দায়বদ্ধতা নেই, কিন্তু মৌপিয়া স্বামী পরিত্যক্তা, তার দিকে সমাজ রক্তচক্ষু মেলে তাকিয়ে আছে যেন পৃথিবীর সমস্ত শুচিতা, পবিত্রতা রক্ষা করা তার একার কর্তব্য। বেচারি চাইলেই যখন খুশি যৌন চাহিদা মিটিয়ে নিতে পারেনা যার তার সাথে। একবার ঘর ছেড়ে দুর্নাম কুড়িয়েছে। দ্বিতীয় বার তার পদস্খলন সমাজ সহ্য করবে না। কলঙ্কিনী তকমা লাগিয়ে সারাজীবনের মতো দূরে সরিয়ে দেবে।
তমাল বিছানার কাছে এসে মিষ্টি করে বললো, গুড মর্নিং সুইটহার্ট! বহু দূর থেকে ফিরে তাকানোর মতো ক্লান্ত ঘোর লাগা চোখ মেলে চাইলো অদিতি। তারপর লম্বা একটা হাই তুলে চিৎ হতে হতে বললো, ভেরি গুড মর্নিং সোনা!
তমাল জিজ্ঞাসা করলো, শরীর খারাপ নাকি? ঘরেই ব্রেকফাস্ট করেছো যে? অদিতি মুচকি হেসে জবাব দিলো, তুমি জানোনা বুঝি? যা হাল করেছো আমার শরীরের, তাতে আজ সারাদিন বিছানা ছেড়ে উঠবো না আমি, লাঞ্চ ডিনারও ঘরেই করবো! উফফ্ মনে হচ্ছে কোনো দস্যু কাল সারারাত ধরে আমাকে ;., করেছে!
এই কথা শুনে তমাল মুখ ভার করে বললো, আমাকে ধর্ষক বললে তুমি? ইস্ কি জঘন্য অপবাদ? ধর্ষিতা বুঝি নিজের ইচ্ছায় সব কিছু খুলে দেয়? ধর্ষিত হবে বলে ঘরে আলোকসজ্জা করে রাখে? এমন শিৎকার করে যে তা শুনে নিজের বড় দিদি গুদে উঙলি করতে বাধ্য হয় দরজার সামনে বসে কাপড় তুলে? বয়সে ছোট বোনের মতো একটা মেয়েও বাদ যায় না! দোষ শুধু আমার?
তমালের কথা শুনে তড়াক্ করে লাফিয়ে উঠে বসলো অদিতি। এতোক্ষনের ক্লান্ত ঘুমঘুম ভাব নিমেষে উধাও চেহারা থেকে। সোজা তমালের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, কে উঙলি করেছে? দিদি? তমাল চোখ মেরে ঘাড় নাড়লো, মুখে বললো, বন্দনাও! তোমার সাউন্ডপ্রুফ রুমও আটকাতে পারেনি কাল রাতে তোমার চিৎকার আর খিস্তি। তারপর হাসতে লাগলো জোরে জোরে।
অদিতি ধমক দিয়ে বললো, হেসো না তো? কি হয়েছে আমাকে বলো। তুমি কিভাবে জানলে এতো কিছু? তমাল বন্দনার দেওয়া বর্ননাগুলো পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বলে গেলো। যদিও তাদের পরের প্ল্যান সম্পর্কে কিছু বললো না অদিতিকে। শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো অদিতি। বললো, ইস্ কি লজ্জা! এরপর দিদি আর বন্দনার সামনে।মুখ দেখাবো কিভাবে?
তমাল বললো, মুখ না দেখানোর কি আছে? রাজীবের সাথে তোমাদের তিনজনেরই শারীরিক সম্পর্ক ছিলো এবং তিনজনেই লুকিয়ে একে অন্যের সঙ্গম দেখেছো বা শুনেছো। তাহলে আজ হঠাৎ কি এমন নতুন হলো যে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছো? যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। লুকিয়ে করার আর প্রয়োজন হবে না। মুখোশ যতো জলদি খুলে যায়, ততোই ভালো।
তবু অদিতির দ্বিধা যায়না যেন। বললো, আসলে দিদির সাথে আমার সেভাবে বন্ধুত্ব তৈরি হয়নি। বয়সে অনেকটা বড় হবার কারণে দূরে দূরে থাকতাম। দিদিও কোনোদিন তেমন কাছে ডাকেনি। তারপরে তো দিদি পালিয়েই চলে গেলো। ফিরে আসার পরেও তেমন ভাব হলো না আর। অথচ একই বাড়িতে দুই বোন থাকলে তারা তো বন্ধুর মতোই হয়, সব কিছু শেয়ার করে?
তমাল চোখ টিপে বললো, শেয়ার করতে চাও ভালো কথা, তাই বলে আবার আমাকে শেয়ার করতে চেও না যেন। বাব্বা! এক একটা বাঘিনী দুই বোন। একজনকে সামলাতেই আমার হিমসিম অবস্থা, দুজন একসাথে হলে তো কালঘাম ছুটে যাবে।
অদিতি তমালের হাতে একটা চড় কষিয়ে বললো, ভালো হবে না বলছি তমালদা.. উফফ্ অসভ্য একটা!
তমাল অদিতির খাটে বসে একটা সিগারেট ধরালো। ধোঁয়া ছেড়ে জিজ্ঞেস করলো, তা ;., কেমন উপভোগ করলে কাল? অদিতি ঘোর লাগা চোখ তুলে বললো, বলে বোঝানো যাবে না সেটা। মনে হচ্ছে আর সারাজীবনেও যদি পুরুষ শরীরের ছোঁয়া না পাই, তাহলেও কোনো আফসোস থাকবে না আমার। তুমি কাল আমাকে পূর্ণ করে দিয়েছো তমালদা!
বালাই ষাট! এই বয়সেই পুরুষ শরীরের ছোঁয়া থেকে দূরে থাকার কথা বলতে নেই! আমি নিজেই আরও কতোবার যে তোমার শরীরে ঢুকবো বেরোবো, তারই ঠিক নেই, অন্য পুরুষ তো বাদই দিলাম। বলো তো এখনি একবার ঢুকে যেতে পারি.. বলতে বলতে তার দিকে এগিয়ে যাবার ভান করলো তমাল।
আঁতকে উঠে দূরে সরে গেলো অদিতি। এঁই.. না না... একদম কাছে আসবে না... এখনো ব্যাথায় টনটন করছে শরীর। পুরো আটচল্লিশ ঘন্টা লাগবে রিসেট হতে... হাসতে হাসতে কপট রাগ দেখিয়ে বললো অদিতি।
তমাল বললো, সেই জন্যই তো আটচল্লিশ ঘন্টা বা বাহাত্তর ঘন্টার জন্য দূরে চলে যাচ্ছি আমি। তুমি এই সময়ে শরীর ফরম্যাট দিয়ে রাখো, ফিরে এসে আমার পেনড্রাইভ দিয়ে তোমার পুরানো হার্ডওয়্যারে নতুন সফটওয়্যার আপলোড করবো।
তমালের কথা শুনে ফিক্ করে হেসে ফেললো অদিতি। তারপর বললো, কোথায় যাচ্ছো? তমাল বললো, কয়েকটা কাজ বাকি আছে। কয়েকজনের সাথে দেখা করতে হবে। অদিতি আবার জিজ্ঞেস করলো, কখন বেরোচ্ছো? তমাল জানালো থানায় কিছু কাজ সেরে বিকালেই যাবো। মদন কাল রাতেই ফিরে এসেছে, তাই মদনকে নিয়ে গার্গীর গাড়িতেই যাবো। অদিতিকে তার ঘরে রেখে নিজের ঘরে ফিরে এলো তমাল।
ঢুকেই দেখলো মুখ ভার করে বসে আছে বন্দনা। তমালকে দেখে বলে উঠলো, দেখলে বুড়ির চালাকিটা দেখলে? সাথে বুড়ো ড্রাইভারটাকে গছিয়ে দিলো, আবার রোজ ফোন করতে হবে রাধাকে নিয়ে,সে শর্তও জুড়ে দিলো। মহা হারাম...
তমাল ধমক দেওয়াতে গালাগালিটা শেষ করতে পারলো না বন্দনা। তমাল বললো, উনি তো ঠিক কাজই করেছেন? মা মেয়ের ভালোটা ভাববেন না? তাকে খারাপ কথা বলতে তোমার বাঁধছে না মুখে? বন্দনা মুখ নীচু করে আস্তে করে বললো, সরি! আমাদের এতো সুন্দর প্ল্যানটা বানচাল হয়ে গেলো বলে রাগ উঠে গেছিলো। ইস্ কতো কিছুই না ভেবেছিলাম।
তমাল বন্দনার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ভেবো না, আমি তো আছি, আবার কখনো নিশ্চয়ই হবে। তুমি বরং এই দুটোদিন রাধার সাথে কাটিয়ে এসো। আমি ফেরার দিন নিয়ে আসবো তোমাকে। আমার ফোন নাম্বারটা রাখো, বলে নিজের একটা কার্ড ধরিয়ে দিলো বন্দনার হাতে। তারপর বললো, আর একটা কথা, তোমার কাছে ঘনশ্যামের কোনো ছবি আছে? বন্দনা জানাল তার মোবাইলে আছে, পাঠিয়ে দিচ্ছে তমালকে। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তমাল জিজ্ঞেস করলো, কখন বেরোচ্ছো তোমরা? বন্দনা বললো, ঘন্টাখানেক পরেই যাবো।
মদন আগেরদিন রাতেই ফিরে এসেছিলো। তমাল তাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো থানার উদ্দেশ্যে। পথে যেতে যেতে সে কি কি জানতে পেরেছে তার খুঁটিনাটি জিজ্ঞাসা করে নিলো তমাল। তারপর বললো, ওয়েল ডান মদন, দারুণ কাজ করেছো তুমি। গার্গীকে বলে তোমার পার্মানেন্ট চাকরির ব্যবস্থা করে দেবো আমি। মদন খুশি হয়ে দাঁত বের করে হাসলো।
থানায় ঢুকতেই ইনস্পেকটর ঘোষ বেশ সমাদর করেই বসালেন। তমালের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা মনে পড়তে হাসি পেলো খুব। চা খেতে খেতে তমাল জিজ্ঞেস করলো, আপনাকে যে অ্যাকাউন্ট নাম্বারটা দিয়েছিলাম, সেটার মালিকের খোঁজ পাওয়া গেলো? মিঃ ঘোষ মুখে কিছু না বলে ড্রয়ার খুলে একটা কাগজ তমালের হাতে ধরিয়ে দিলো। সেটাতে চোখ বুলিয়ে ইনস্পেকটর ঘোষ কে ধন্যবাদ জানালো তমাল। তারপরে বললো, মিঃ ঘোষ, পুরো জাল বিছানো হয়ে গেছে, এখন গোটানোর সময়। আপনাকে ছাড়া সেটা সম্ভব নয় স্যার।
ইনস্পেকটর হেসে বললো, আবার স্যার কেন? আমাকে দাদা বলতে পারেন। ভালো লেগে গেছে আপনাকে। এতো অল্প বয়সে বুদ্ধিমান কর্মঠ যুবক বেশি একটা দেখা যায়না ব্রাদার। আমরা তো কেসটাকে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। আপনি এতো কম সময়ে সেটা প্রায় সমাধান করে ফেলবেন, আমি ভাবতেই পারিনি। যে কোনো প্রবলেমে আমাকে আপনার সাথেই পাবেন।
তমাল বললো, অনেক ধন্যবাদ। তবে আপনিও এবার আপনিটা ছেটে ফেলে তুমি বলুন। আমি অনেকটাই ছোট আপনার থেকে। ইনস্পেকটর ঘোষ খুশি হয়ে বললো, বেশ বেশ, তাই হবে ব্রাদার। এবার বলো, কি ধরনের হেল্প চাই তোমার?
তমাল বললো, প্রথমে সুরেশ চাকলাদারের খবর বলুন। মিঃ ঘোষ বললেন, সুরেশ চাকলাদার বর্তমানে আছেন ধানবাদে। একটা কোলিয়ারির হিসাব পত্র দেখেন। একাই থাকেন, তবে শরীর বিশেষ ভালো নয় বলে তাকে আনা গেলো না এখানে।
তমাল বললো, তাহলে তো ভালোই হলো, আজ রাতে আমি চিত্তরঞ্জনে যাচ্ছি। সেখান থেকে ধানবাদে গিয়ে দেখা করতে কোনো অসুবিধা হবে না। আপনি তার ঠিকানা আর ফোন নাম্বারটা আমাকে দিন দাদা, আর তাকে একটু বলে দেবেন যে আমি দেখা করতে যাবো। একটা কাগজ টেনে ফাইল দেখে খসখস করে লিখে দিলেন ইনস্পেকটর ইন্দ্রজিৎ ঘোষ। বললো, ঠিক আছে, আমি জানিয়ে দেবো।
এরপরে তমাল বলল, দাদা আর একটা কাজ করে দিতে হবে। আমি চিত্তরঞ্জনে স্ট্রীট নং ছাব্বিশের একটা হোম আনন্দভবনে যাবো একজনের সম্পর্কে খোঁজ নিতে। আপনি যদি আমাকে একটা পারমিশন লেটার দিতেন, তাহলে সুবিধা হতো।
এবারে একটু চিন্তায় পড়লেন ইনস্পেকটর ঘোষ। বললেন সরকারি না বেসরকারি হোম? তমাল জানালো যে সেটা বেসরকারি হোম। মিঃ ঘোষ বললেন, দেখো ভায়া, কোনো অনাথাশ্রম কে আমরা তাদের বোর্ডারদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য করতে পারিনা। দ্যাট ইজ কমপ্লিটলি আনএথিকাল অ্যান্ড ইল্লিগাল টু!
তমাল বললো, তাহলে তো বেশ সমস্যায় পড়া গেলো। এই ব্যাপারটার উপরে কেসটা অনেকটাই নির্ভর করছে বলেই আমার ধারণা। যদি আমার সন্দেহ সঠিক হয়, আমি আপনাকে এমন একটা কেস উপহার দেবো যা ক্রাইমের ইতিহাসে নজিরবিহীন হয়ে থাকবে দাদা। কোনো উপায় কি নেই? সোজা পথে না হলেও একটা বাঁকা আঙুলেও কি ঘি তোলা যাবে না?
ইনস্পেকটর ঘোষ কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপরে বললেন, একটা উপায় হতে পারে। হোম তো জানে না যে এটা অ্যাটেম্পট টু মার্ডার কেস? আমি তোমাকে একটা পরিচয় পত্র লিখে দিচ্ছি, যেখানে বলা থাকবে তুমি একটা খুনের কেসে আমাদের সাহায্য করছো। তারা যেন সব রকম ভাবে তোমাকে সাহায্য করে। এটুকু মিথ্যা তোমার জন্য বলা যেতেই পারে কি বলো? খুনের মামলা শুনলে তারা আর আপত্তি না ও করতে পারে। এছাড়া চিত্তরঞ্জন থানার ওসি মিঃ বাসুদেব গড়াইকে আমি জানিয়ে রাখছি তোমার কথা, সব রকম সাহায্য পাবে তুমি তার কাছ থেকে।
তমাল হেসে বললো, ওতেই হবে। আমারও ধারণা এতে কাজ হবে। তবে আপনি হয়তো মিথ্যা বলার হাত থেকে বেঁচেও যেতে পারেন দাদা। কে বলতে পারে?
ইনস্পেকটর ঘোষ অবাক হয়ে তমালের দিকে তাকিয়ে বললেন, মানে? ঠিক বুঝতে পারলাম না তোমার কথা। তমাল হাত জোড় করে বললো, আর একটু ধৈর্য্য ধরুন দাদা। এখনো পুরোটাই আমার অনুমান। আমি ফিরে এসেই সব কথা প্রথমে আপনাকে জানাবো, কথা দিলাম।
ইনস্পেকটর ঘোষের কাছ থেকে লিখিত পরিচয়পত্র নিয়ে তমাল থানা থেকে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে উঠে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম ঠিকানাটা মদনের হাতে দিয়ে বললো, দেখো তো? চিনতে পারো একে? মদন কাগজটা পড়ে অবাক হয়ে তাকালো তমালের দিকে। বললো, হ্যাঁ দাদা, এই তো সেই লোক! এর ঠিকানা আপনি কি করে পেলেন? তমাল কিছু না বলে মুচকি হাসলো শুধু।
ফেরার পথে মদনকে সেই কিউরিও সপে একবার গাড়ি দাঁড় করাতে বললো তমাল। গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে চলে গেলো সে। পাঁচ মিনিটের ভিতরে খুশি মনে বেরিয়ে এসে মদনকে বললো ফিরে চলো।
মুখার্জি বাড়িতে এসে তমাল দেখলো বন্দনা ঘনশ্যামের সাথে চলে গেছে রাধাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। নিজের ঘরে ঢুকে টুকটাক জিনিস পত্র গুছিয়ে নিলো দু তিনদিনের জন্য।
নীচে গিয়ে একা একাই লাঞ্চ করে এলো তমাল। অদিতির ঘরের দরজা বন্ধ দেখে তাকে আর ডিস্টার্ব করলো না। ফিরে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলো সে। তখনি টের পেলো দরজায় কেউ নক্ করছে। তমাল ভাবলো অদিতি এসেছে, কিন্তু দরজা খুলেই দেখতে পেলো মৌপিয়া দাঁড়িয়ে আছে, একটা স্লিভলেস ব্লাউজ আর পাতলা শাড়ি পরে। তমালকে সামনে দেখে সে কোনো সময় না দিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়লো তার উপর। প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও টাল সামলে নিয়ে অদিতির ঘরের দিকে তাকালো সে।
তমালের মনোভাব বুঝতে পেরে মৌপিয়া তাকে বুকের মধ্যে পিষতে পিষতে বললো, ভয় নেই, অদিতিকে পাঠিয়েছি শিখাকে আনতে। বলেছি শরীরটা ভালো লাগছে না। ওদের ফিরতে এখনো ঘন্টা খানেক লাগবে তমাল। তুমি আমাকে শান্ত করো প্লিজ, কাল রাত থেকে জ্বলে মরছি আমি।
তমাল এক হাতে দরজা আটকে দিয়ে বললো, স্বাভাবিক, মাঝরাতে ছোট বোনের দরজায় আড়ি পেতে তার যৌনলীলার শব্দ শুনে শাড়ি তুলে দরজার সামনে বসে উঙলি করলে শরীরে জ্বালা তো হবেই মৌ?
মৌপিয়া তমালের কথা শুনে যেন চার'শ চল্লিশ ভোল্টের শক্ খেলো। রাতের অন্ধকারে ফাঁকা বারন্দায় গোপনে সে যা করেছে তা এতো ডিটেলসে ঘরের ভিতরে চোদাচুদি করতে করতে তমাল কিভাবে জানলো সেটা ভেবে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো মৌপিয়া। অনেক কষ্টে তুতলিয়ে বললো, তু... তুমি... কিভাবে জানলে সে কথা?
তমাল নিজের বিছানায় বসে মুখে বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ানের মতো অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলে বললো, তুমি ভুলে যাচ্ছো মৌ যে আমি একজন গোয়েন্দা। আমার কাছে কিছুই লুকানো থাকে না।
মৌপিয়া দ্বিধায় পড়ে গেলো। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবার সময় তার নেই। সময় খুব অল্প। কাল রাত থেকে কামনার আগুনে পুড়ে মরছে সে, এখনি তমালের পুরুষালি বুকে নিষ্পেষিত না হলে, তার নরম রসালো গোপন নারী অঙ্গ তমালের কঠিন দন্ডের মন্থনে ছিন্নভিন্ন না হলে সে কিছুতেই শান্তি পাবে না।
সে বললো, উফফফফ্ তমাল আমাকে বাঁচাও। কাল তোমাদের কথা আর আদির শিৎকার শুনে আমি পাগল হয়ে আছি। কি ভয়ানক চিৎকার করছিলো মেয়েটা! না জানি কতো সুখ দিচ্ছিলে তুমি! আমাকেও একটু ভাগ দাও সেই সুখের। প্লিজ তমাল, তোমার পায়ে ধরছি, ফিরিয়ে দিও না আমাকে?
মৌপিয়ার কাতর আর্তি মন ছুঁয়ে গেলো তমালের। মৌপিয়ার কষ্ট সে বোঝে। অদিতি বা বন্দনার কোনো সামাজিক পবিত্রতা রক্ষার দায়বদ্ধতা নেই, কিন্তু মৌপিয়া স্বামী পরিত্যক্তা, তার দিকে সমাজ রক্তচক্ষু মেলে তাকিয়ে আছে যেন পৃথিবীর সমস্ত শুচিতা, পবিত্রতা রক্ষা করা তার একার কর্তব্য। বেচারি চাইলেই যখন খুশি যৌন চাহিদা মিটিয়ে নিতে পারেনা যার তার সাথে। একবার ঘর ছেড়ে দুর্নাম কুড়িয়েছে। দ্বিতীয় বার তার পদস্খলন সমাজ সহ্য করবে না। কলঙ্কিনী তকমা লাগিয়ে সারাজীবনের মতো দূরে সরিয়ে দেবে।

kingsuk25@ জিমেইল ডট কম