7 hours ago
ক্লাস শেষে ডিপার্টমেন্টের বারান্দা ধরে হেঁটে যাচ্ছে সায়মা আর তানিয়া। চারদিকের কোলাহল, গাছের পাতায় হালকা রোদ, হাওয়ার টুকরো টুকরো ছোঁয়া—সব মিলিয়ে একটা শান্ত দুপুর।
তানিয়া ক্যাম্পাসের একটা গাছের নিচে এসে বসে,
বসেই গলা পুরো খাঁদে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
"তুই সকালে স্যারের সাথে আসলি? স্যারকে তুই কোথায় পেলি?"
সায়মা একটু থমকে তাকায়। “…হ্যাঁ… মানে… দেখা হয়ে গিয়েছিল।”
তানিয়া চোখ সরু করে বলে, “দেখা হয়ে গিয়েছিল? মানে কী! রাস্তার মাঝে হঠাৎ দেখা হলো, আর স্যার বললেন—চলো চলো গাড়িতে উঠো? আর তুই উঠে গেলি তুই তো এমন না ভালো করে বল কি হয়েছে? ”
সায়মা নিঃশ্বাস ছেড়ে হাসে, “তুই না! স্যারের পরিবারের আমাদের পাশের ফ্ল্যাটটা কিনেছেন ২ দিন আগে । আমি সকালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম রিকশার জন্য কিন্তু পাচ্ছিলাম না কিন্তু, কোথায় থেকে যেনো উনি হুট করে আমার সামনে এসে পড়ার আমাকে বলেন গাড়ি তে উঠতে আমি প্রথমে না করলেও পড়ে উনার আদেশের কারণে উঠতেই হলো।”
তানিয়া নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে, “হায় রে ভাগ্যবতী! স্যারের পরিবার পাশের ফ্ল্যাটে!স্যার ভার্সিটিতে নিয়ে আসছেন!প্রেম শুরু হওয়ার জন্য এর চেয়ে সুবিধাজনক পরিস্থিতি আর কী চাই?”
সায়মা একটু বিরক্ত, “তুই সবকিছু প্রেমের দিকে নিয়ে যাচিস কেন?”
“কারণ... ক্লাসে আজকে যা দেখলাম! স্যার আমাদের লিখতে দিয়ে চেয়ারে বসে পুরোটা সময় তোর দিকে তাকিয়ে ছিলো যখন দেখলো আমি দেখছি তখন তিনি চোখ সরিয়ে নেন। ওরকম চোখে কেউ কাউকে দেখে যখন মনের মধ্যে কিছু না কিছু থাকে।”
সায়মা চমকে ওঠে, “কী বলছিস তুই? আমি তো কিছুই খেয়াল করিনি।”
তানিয়া ভাব নিয়ে,
“আমি তো খেয়াল করছিলাম। স্যার যখন বোর্ডে লিখছিলেন, বারবার পিছনে ঘুরে তাকাচ্ছিলেন। সবাই বসে আছে, কিন্তু ওনার চোখ কেবল তোর দিকেই। এমনকি যখন প্রশ্ন করছিলেন, মনে হচ্ছিল কেবল তোকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।”
সায়মা মুখ ঘুরিয়ে নেয়, “তুই বাড়াচ্ছিস।”
“একটুও না। আমি তো তখন থেকেই ভাবছি, স্যারের চোখে আজ একটা আলাদা গভীরতা ছিল। এমনভাবে তাকাচ্ছিলেন যেন... যেন তোর প্রতিটা ভাবনা জানার চেষ্টা করছেন!”
সায়মা একটু থমকে দাঁড়ায়। মনের ভেতরে যেন একটা হালকা কাঁপুনি ওঠে।
“তুই অনেক কথা বলিস তানিয়া,” বলে দ্রুত পা চালায় সায়মা।
কিছুক্ষণ পর সায়মা বেরিয়ে যায় ডিপার্টমেন্ট থেকে। রাশেদ তখন ক্লাস শেষ করে ব্যাগ গুছিয়ে বেরোচ্ছে।
বেরিয়ে ক্লাসের সামনে আসে ডিপার্টমেন্টের সব ক্লাস খুঁজলো না মেয়েটা কোথাও নেই। গেলো কোথায় মেয়েটা?
তখন তানিয়া পেছন থেকে বলে ওঠে, “স্যার, আপনি যদি সায়মাকে খুঁজে থাকেন, তাহলে বলে রাখি,ও তো একটু আগেই বেরিয়ে গেছে।"
রাশেদ তানিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে। রাশেদ এক মুহূর্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখের কোণায় এক ধরনের অদ্ভুত প্রশান্তি আর বিরক্তি মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সে কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে।
বিকেলবেলা
বাসায় সামিহা এসে পৌঁছায়। নানুর বাসায় থেকে আজকেই ফিরেছে। সামিহা মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এই বছরেই কলেজে উঠেছে। সামনে খুব চাপ যাবে তাই আগেই নানুর বাড়িতে ঘুরে আসলো। সামিহা এসে মার সাথে দেখার করেই সায়মার রুমে গেলো, রুমে গিয়ে সায়মাকে জড়িয়ে ধরলো।
সায়মাও সামিহাকে জড়িয়ে ধরলো।
"আমি তো মনের করেছিলাম আর আসবি না আমাদের ভুলে গেলি কিনা? তা দেখি না আমাদের ভুলে যাসনি।"
"আরে আপু তুমি যে কি বলো না। আমি আরো অনেক আগেই আসতাম নানু আসতে দিচ্ছিলো না। কিন্তু ক্লাস এই সামনের সপ্তাহে শুরু হবে তাই আর দেরি না করে এসে পড়লাম। আর তোকে জ্বালানোর জন্য তো কাউকে চাই নাকি"
এই কথা শুনে দুজনেই হেসে উঠলো। অনেক গল্প হয় অনেক হাসাহাসি। সাথে ঢাকা ভার্সিটির ক্লাস ও অভিজ্ঞতা নিয়েও বলে সায়মা।
সেলিনা বেগম খাবার তুলে দিতে দিতে বলেন, “কালকে শুক্রবার। আমি ভাবছি ফারজানা আপাদের দাওয়াত দেব।”
সায়মা চমকে তাকায়, “হঠাৎ কেন তাঁদের দাওয়াত দিতে হবে ?”
সেলিনা জবাব দেন, “হঠাৎ নয় মা, অনেক দিন হয়ে গেছে তারা এসেছে। তোর স্যারের মা, খুব ভদ্র মহিলা। আর খুব ভালো মনের মানুষ এমন মানুষকে তো এখন আর পাওয়া যায় না তাই ভাবলাম একটু তাঁদের দাওয়াত করি।”
সায়েদ হোসেন মাথা নেড়ে বলেন, “আচ্ছা তুমি যখন দাওয়াত দিবে ভেবেছো দাও, আমিও কালকে ঘরেই আছি দাওয়াত দাও। ”
সামিহা অবাক হয়ে বলে, “নতুন প্রতিবেশী? মানে, সামনের ফ্ল্যাটে যারা উঠেছেন তারা?”
সেলিনা হেসে বলেন, “হ্যাঁ রে মা! তুই এলি আজকে, জানবি কীভাবে?”
"সায়মা তুমি গিয়ে তোমার ফারজানা আন্টি কে এখন দাওয়াত দিয়ে আসবে।"
সায়মা না করে বসে ও যাবে না।
সেলিনা বেগম তখন বলেন, "না গেলে কিন্তু কালকে সকালের রান্না তোকেই করতে হবে।"
এই কথা শুনে সায়মা লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় আর বলে,
"আরে আরে রাগ করছো কেন মা। এইযে এক্ষুনি যাচ্ছি।"
সায়মা গিয়ে ফারজানাদের দরজায় বেল দেয়,
ফারজানা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলেন। কলিং বেল শুনে ফারজানা দরজা খুলে দেখে সায়মা দাঁড়িয়ে আছে,
"আরে সায়মা ভেতরে আয় এতো রাতে এলি যে কি হয়েছে।"
"কিছু হয়নি আন্টি কালকে তোমাদের পুরো পরিবার দুপুরে আমাদের বাসায় দাওয়াত। কালকে দুপুরে আমাদের বাসায় খাবে ঠিক আছে।"
"ঠিক আছে। আচ্ছা বোস একটু তোর জন্য খাবার কিছু নিয়ে আসি।"
"না না আন্টি কিছু করা লাগবে না। আমি মাত্র খেয়েছো এসেছি। আমি কিছু খাবোনা।"
"ঠিক আছে তাহলে আমরা কালকে ঠিক সময় চলে যাবো।"
রাশেদ ঘর থেকেই শুনতে পায় সায়মা এসেছে। তাই রাশেদ একটু পর ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়ায়। রাশেদকে দেখে সায়মা তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। আজকে রাশেদ কালো টিশার্ট আর জলপাই রঙের প্যান্ট পড়েছে আর গালে হালকা চাপ দাড়ি। আজকেও সায়মার দিকে সেই ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। সায়মা একবার তা খেয়াল করেই তাড়াতাড়ি করে ঘরে চলে আসে।
পরদিন,
জুম্মার নামাজ পড়ে বাসায় আসে রাশেদের পরিবার। আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসে নানান ধরণের মিষ্টি আর ফল।
রাশেদ আজকে পড়েছে কালো পাঞ্জাবী আর সাদা পায়জামা। অন্য দিকে সায়মা পড়েছে লাল কালারের ঢোলা ঢালা সালোয়ার কামিজ। সায়মা আজকে এই রূপে দেখলে যে কোনো ছেলে প্রেমে পড়তে বাধ্য।
রাশেদের পরিবার—ফারুক খান, ফারজানা, এবং রাশেদ—তাদের বাসায় আসে। হাসি-আড্ডায় মেতে উঠেছে সারা ঘর।
সামিহা চোখ বড় বড় করে ফিসফিসিয়ে বলে, “আপু ! এই কি তোমার সেই স্যার? উফ্, রীতিমতো সিনেমার হিরো!”
সায়মা মুখ ঘুরিয়ে বলে, “চুপ কর!”
“আমি কিছুতেই চুপ করব না। ওনার নাম্বার চাই, আপু ! আমি প্রেমে পড়ে গেছি... help me please!”
সায়মা মুখে কড়াকড়ি ভাব এনে চোখ রাঙায়, “সত্যিই তুই না...”
অনেক সময় কথা বলার তারা খেতে বসে। নানান রকমের খাবারের আইটেম করা হয়েছে। পোলাও মুরগির মাংস, রোস্ট, কাবাব আর কতো কি। খাওয়া শেষ হলে সবাইকে পায়েস পরিবেশন করা হয়।
সেলিনা বেগম সবাইকে পরিবেশন করার সময় বলে,
"আজকের পায়েস আমাদের সায়মা বানিয়েছে।"
এই কথা শুনে রাশেদ তাকায় সায়মার দিকে। সায়মা যখন বুঝতে পারে রাশেদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে তখন ও সাথে সাথে দূরে চলে যায়।
সায়মার হাতের পায়েস খেয়ে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সবাই সায়মার প্রশংসা করছে শুধু রাশেদ ছাড়া ও শুধু খেয়ে যাচ্ছে কিছু বলছে না।
সবার খাওয়া শেষ হলে সবাই বসে এক সঙ্গে। রাশেদ সায়মা সামিয়া ও বড়োদের সঙ্গে বসেছে।
সায়েদ হোসেন তখন বলেন,
"মা সামিহা রাশেদকে একটু আমাদের ঘরটা ঘুরে দেখাও বেচারা মনের হয় বিরক্ত হচ্ছে!"
এই কথা শুনে রাশেদ চমকে যায়,
"না না আঙ্কেল আমি ঠিক আছি।"
"বুঝতে পেরেছি আমি যাও তুমি সায়মা সামিহার সাথে ঘরটা ঘুরে আসো।"
সেই ফাঁকে সামিহা রাশেদকে বলে, “চলুন ভাইয়া, আপনাকে ঘরটা ঘুরিয়ে দেখাই।” রাশেদ কিছুটা দ্বিধা নিয়ে সম্মত হয়।
রাশেদ সামিহার সাথে যেতে রাজি হয়। সামিহা আর সায়মা ২ জন বোন হলেও ২ জন ২ মেরুর মানুষ যেখানে সায়মা একটু লাজুক আর শান্ত প্রকৃতির সেখানে সামিহা আবার একটু চঞ্চল প্রকৃতির। কিন্তু ২ বোনের চেহারা তে ভালো মিল আছে। সামিহা এক এক করে সব রুম ঘুরে দেখাচ্ছে, সামিহা সামনে আর পেছনে রাশেদ আর সায়মা। সবার শেষে সামিহা সায়মার রুমে আসে। সায়মার রুমটা খুব গোছানো। একটা ড্রেসিং টেবিল একটা ওয়ারড্রব আর একটা পড়ার টেবিল আর বিশাল বড়ো একটা খাট খাবে ছড়িয়ে আছে ৩টা বড়ো পুতুল।
সামিহা ব্যঙ্গ করে বলে,
"ভাইয়া এই গুলো কিন্তু আমার আপুর পুতুল আমার আপু এই পুতুল ছাড়া ঘুমাতে পারে না।"
রাশেদ এই কথা শুনে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে সায়মাকে জিজ্ঞেস করে,
"এতো বড়ো হওয়ার পর এখনও পুতুল নিয়ে ঘুমাও?"
সায়মা খুব লজ্জা পায় রাসেদের এই কথায়।
এর মধ্যে সামিহা নিয়ে যায় রাশেদকে সায়মার বারান্দায়। বারান্দায় নানান প্রজাতির গাছ লাগানো আর একটা চেয়ার পাতা। খুব সুন্দর একটা জায়গা।
এর মধ্যেই কিছুক্ষণ পর সেলিনা বেগম সামিহাকে ডেকে পাঠান।
রাশেদ তখন বারান্দার কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা সায়মার দিকে তাকায়। একধরনের স্থির, গভীর দৃষ্টি।
“তুমি না বলে চলে গেলে কেন সেইদিন ক্লাসের পর?”
সায়মা একটু চমকে তাকায়। “মানে... আমার কী বলার ছিল?”
রাশেদ গম্ভীর ভাবে বলে,
"তোমার কি আমাকে বলে আশা উচিত ছিলো না?"
সায়মা তাকায় দেখে রাশেদ এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
সায়মা চোখ সরিয়ে নেয়, “আপনার আমার মধ্যে এমন কিছু হয়নি, স্যার, যার কারণে আমি আপনাকে না বলে চলে আসতে পারবো না ।”
রাশেদের কণ্ঠ আরও ধীর হয়ে ওঠে, “তুমি কি সত্যিই তাই ভাবো? আমরা কি একেবারে অপরিচিত, যে আমি তোমার খবর রাখবো না? আমি চাই... তুমি জানাও—তুমি কেমন আছো, কোথায় যাচ্ছো, কী ভাবছো।”
সায়মা শীতল গলায় বলে, “কেন স্যার আমি আপনাকে এই সব কেন বলবো?”
"আমি জানতে চেয়েছি তাই আমাকে বলবে।"
"আপনি কি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন ?"
"তুমি যদি তাই মনে করো তাহলে ধরো তাই।"
রাশেদ একটুখানি হাসে, সেই হাসি ঠোঁটে থাকলেও চোখে গম্ভীরতা ঝরে পড়ে, “হয়তো করছি। হয়তো করতে চাইছি। কারণ আমি চাই... তুমি নিজের ভাবনা, নিজের নীরবতা আমাকে শোনাও।”
সায়মা ধীরে ধীরে বলে, “আমি কারো অধীন হই না, স্যার। আমি কখনো কারো নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারি না। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতেই শিখেছি।”
রাশেদ একটু এগিয়ে এসে চোখে চোখ রেখে বলে, “তাই? তবে দেখা যাক... কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করে, সায়মা।”
সায়মার বুকের ভেতর কাঁপুনি ওঠে। সে চুপ করে থাকে।
এই মুহূর্তে তাদের চারপাশে যত আলো, যত শব্দ—সব মুছে গিয়ে শুধু এক অন্যরকম ছায়া নামে, যার নাম—অপ্রত্যাশিত অনুভব।
(চলবে…)
তানিয়া ক্যাম্পাসের একটা গাছের নিচে এসে বসে,
বসেই গলা পুরো খাঁদে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
"তুই সকালে স্যারের সাথে আসলি? স্যারকে তুই কোথায় পেলি?"
সায়মা একটু থমকে তাকায়। “…হ্যাঁ… মানে… দেখা হয়ে গিয়েছিল।”
তানিয়া চোখ সরু করে বলে, “দেখা হয়ে গিয়েছিল? মানে কী! রাস্তার মাঝে হঠাৎ দেখা হলো, আর স্যার বললেন—চলো চলো গাড়িতে উঠো? আর তুই উঠে গেলি তুই তো এমন না ভালো করে বল কি হয়েছে? ”
সায়মা নিঃশ্বাস ছেড়ে হাসে, “তুই না! স্যারের পরিবারের আমাদের পাশের ফ্ল্যাটটা কিনেছেন ২ দিন আগে । আমি সকালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম রিকশার জন্য কিন্তু পাচ্ছিলাম না কিন্তু, কোথায় থেকে যেনো উনি হুট করে আমার সামনে এসে পড়ার আমাকে বলেন গাড়ি তে উঠতে আমি প্রথমে না করলেও পড়ে উনার আদেশের কারণে উঠতেই হলো।”
তানিয়া নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে, “হায় রে ভাগ্যবতী! স্যারের পরিবার পাশের ফ্ল্যাটে!স্যার ভার্সিটিতে নিয়ে আসছেন!প্রেম শুরু হওয়ার জন্য এর চেয়ে সুবিধাজনক পরিস্থিতি আর কী চাই?”
সায়মা একটু বিরক্ত, “তুই সবকিছু প্রেমের দিকে নিয়ে যাচিস কেন?”
“কারণ... ক্লাসে আজকে যা দেখলাম! স্যার আমাদের লিখতে দিয়ে চেয়ারে বসে পুরোটা সময় তোর দিকে তাকিয়ে ছিলো যখন দেখলো আমি দেখছি তখন তিনি চোখ সরিয়ে নেন। ওরকম চোখে কেউ কাউকে দেখে যখন মনের মধ্যে কিছু না কিছু থাকে।”
সায়মা চমকে ওঠে, “কী বলছিস তুই? আমি তো কিছুই খেয়াল করিনি।”
তানিয়া ভাব নিয়ে,
“আমি তো খেয়াল করছিলাম। স্যার যখন বোর্ডে লিখছিলেন, বারবার পিছনে ঘুরে তাকাচ্ছিলেন। সবাই বসে আছে, কিন্তু ওনার চোখ কেবল তোর দিকেই। এমনকি যখন প্রশ্ন করছিলেন, মনে হচ্ছিল কেবল তোকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।”
সায়মা মুখ ঘুরিয়ে নেয়, “তুই বাড়াচ্ছিস।”
“একটুও না। আমি তো তখন থেকেই ভাবছি, স্যারের চোখে আজ একটা আলাদা গভীরতা ছিল। এমনভাবে তাকাচ্ছিলেন যেন... যেন তোর প্রতিটা ভাবনা জানার চেষ্টা করছেন!”
সায়মা একটু থমকে দাঁড়ায়। মনের ভেতরে যেন একটা হালকা কাঁপুনি ওঠে।
“তুই অনেক কথা বলিস তানিয়া,” বলে দ্রুত পা চালায় সায়মা।
কিছুক্ষণ পর সায়মা বেরিয়ে যায় ডিপার্টমেন্ট থেকে। রাশেদ তখন ক্লাস শেষ করে ব্যাগ গুছিয়ে বেরোচ্ছে।
বেরিয়ে ক্লাসের সামনে আসে ডিপার্টমেন্টের সব ক্লাস খুঁজলো না মেয়েটা কোথাও নেই। গেলো কোথায় মেয়েটা?
তখন তানিয়া পেছন থেকে বলে ওঠে, “স্যার, আপনি যদি সায়মাকে খুঁজে থাকেন, তাহলে বলে রাখি,ও তো একটু আগেই বেরিয়ে গেছে।"
রাশেদ তানিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে। রাশেদ এক মুহূর্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখের কোণায় এক ধরনের অদ্ভুত প্রশান্তি আর বিরক্তি মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সে কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে।
বিকেলবেলা
বাসায় সামিহা এসে পৌঁছায়। নানুর বাসায় থেকে আজকেই ফিরেছে। সামিহা মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এই বছরেই কলেজে উঠেছে। সামনে খুব চাপ যাবে তাই আগেই নানুর বাড়িতে ঘুরে আসলো। সামিহা এসে মার সাথে দেখার করেই সায়মার রুমে গেলো, রুমে গিয়ে সায়মাকে জড়িয়ে ধরলো।
সায়মাও সামিহাকে জড়িয়ে ধরলো।
"আমি তো মনের করেছিলাম আর আসবি না আমাদের ভুলে গেলি কিনা? তা দেখি না আমাদের ভুলে যাসনি।"
"আরে আপু তুমি যে কি বলো না। আমি আরো অনেক আগেই আসতাম নানু আসতে দিচ্ছিলো না। কিন্তু ক্লাস এই সামনের সপ্তাহে শুরু হবে তাই আর দেরি না করে এসে পড়লাম। আর তোকে জ্বালানোর জন্য তো কাউকে চাই নাকি"
এই কথা শুনে দুজনেই হেসে উঠলো। অনেক গল্প হয় অনেক হাসাহাসি। সাথে ঢাকা ভার্সিটির ক্লাস ও অভিজ্ঞতা নিয়েও বলে সায়মা।
সেলিনা বেগম খাবার তুলে দিতে দিতে বলেন, “কালকে শুক্রবার। আমি ভাবছি ফারজানা আপাদের দাওয়াত দেব।”
সায়মা চমকে তাকায়, “হঠাৎ কেন তাঁদের দাওয়াত দিতে হবে ?”
সেলিনা জবাব দেন, “হঠাৎ নয় মা, অনেক দিন হয়ে গেছে তারা এসেছে। তোর স্যারের মা, খুব ভদ্র মহিলা। আর খুব ভালো মনের মানুষ এমন মানুষকে তো এখন আর পাওয়া যায় না তাই ভাবলাম একটু তাঁদের দাওয়াত করি।”
সায়েদ হোসেন মাথা নেড়ে বলেন, “আচ্ছা তুমি যখন দাওয়াত দিবে ভেবেছো দাও, আমিও কালকে ঘরেই আছি দাওয়াত দাও। ”
সামিহা অবাক হয়ে বলে, “নতুন প্রতিবেশী? মানে, সামনের ফ্ল্যাটে যারা উঠেছেন তারা?”
সেলিনা হেসে বলেন, “হ্যাঁ রে মা! তুই এলি আজকে, জানবি কীভাবে?”
"সায়মা তুমি গিয়ে তোমার ফারজানা আন্টি কে এখন দাওয়াত দিয়ে আসবে।"
সায়মা না করে বসে ও যাবে না।
সেলিনা বেগম তখন বলেন, "না গেলে কিন্তু কালকে সকালের রান্না তোকেই করতে হবে।"
এই কথা শুনে সায়মা লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় আর বলে,
"আরে আরে রাগ করছো কেন মা। এইযে এক্ষুনি যাচ্ছি।"
সায়মা গিয়ে ফারজানাদের দরজায় বেল দেয়,
ফারজানা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলেন। কলিং বেল শুনে ফারজানা দরজা খুলে দেখে সায়মা দাঁড়িয়ে আছে,
"আরে সায়মা ভেতরে আয় এতো রাতে এলি যে কি হয়েছে।"
"কিছু হয়নি আন্টি কালকে তোমাদের পুরো পরিবার দুপুরে আমাদের বাসায় দাওয়াত। কালকে দুপুরে আমাদের বাসায় খাবে ঠিক আছে।"
"ঠিক আছে। আচ্ছা বোস একটু তোর জন্য খাবার কিছু নিয়ে আসি।"
"না না আন্টি কিছু করা লাগবে না। আমি মাত্র খেয়েছো এসেছি। আমি কিছু খাবোনা।"
"ঠিক আছে তাহলে আমরা কালকে ঠিক সময় চলে যাবো।"
রাশেদ ঘর থেকেই শুনতে পায় সায়মা এসেছে। তাই রাশেদ একটু পর ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়ায়। রাশেদকে দেখে সায়মা তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। আজকে রাশেদ কালো টিশার্ট আর জলপাই রঙের প্যান্ট পড়েছে আর গালে হালকা চাপ দাড়ি। আজকেও সায়মার দিকে সেই ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। সায়মা একবার তা খেয়াল করেই তাড়াতাড়ি করে ঘরে চলে আসে।
পরদিন,
জুম্মার নামাজ পড়ে বাসায় আসে রাশেদের পরিবার। আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসে নানান ধরণের মিষ্টি আর ফল।
রাশেদ আজকে পড়েছে কালো পাঞ্জাবী আর সাদা পায়জামা। অন্য দিকে সায়মা পড়েছে লাল কালারের ঢোলা ঢালা সালোয়ার কামিজ। সায়মা আজকে এই রূপে দেখলে যে কোনো ছেলে প্রেমে পড়তে বাধ্য।
রাশেদের পরিবার—ফারুক খান, ফারজানা, এবং রাশেদ—তাদের বাসায় আসে। হাসি-আড্ডায় মেতে উঠেছে সারা ঘর।
সামিহা চোখ বড় বড় করে ফিসফিসিয়ে বলে, “আপু ! এই কি তোমার সেই স্যার? উফ্, রীতিমতো সিনেমার হিরো!”
সায়মা মুখ ঘুরিয়ে বলে, “চুপ কর!”
“আমি কিছুতেই চুপ করব না। ওনার নাম্বার চাই, আপু ! আমি প্রেমে পড়ে গেছি... help me please!”
সায়মা মুখে কড়াকড়ি ভাব এনে চোখ রাঙায়, “সত্যিই তুই না...”
অনেক সময় কথা বলার তারা খেতে বসে। নানান রকমের খাবারের আইটেম করা হয়েছে। পোলাও মুরগির মাংস, রোস্ট, কাবাব আর কতো কি। খাওয়া শেষ হলে সবাইকে পায়েস পরিবেশন করা হয়।
সেলিনা বেগম সবাইকে পরিবেশন করার সময় বলে,
"আজকের পায়েস আমাদের সায়মা বানিয়েছে।"
এই কথা শুনে রাশেদ তাকায় সায়মার দিকে। সায়মা যখন বুঝতে পারে রাশেদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে তখন ও সাথে সাথে দূরে চলে যায়।
সায়মার হাতের পায়েস খেয়ে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সবাই সায়মার প্রশংসা করছে শুধু রাশেদ ছাড়া ও শুধু খেয়ে যাচ্ছে কিছু বলছে না।
সবার খাওয়া শেষ হলে সবাই বসে এক সঙ্গে। রাশেদ সায়মা সামিয়া ও বড়োদের সঙ্গে বসেছে।
সায়েদ হোসেন তখন বলেন,
"মা সামিহা রাশেদকে একটু আমাদের ঘরটা ঘুরে দেখাও বেচারা মনের হয় বিরক্ত হচ্ছে!"
এই কথা শুনে রাশেদ চমকে যায়,
"না না আঙ্কেল আমি ঠিক আছি।"
"বুঝতে পেরেছি আমি যাও তুমি সায়মা সামিহার সাথে ঘরটা ঘুরে আসো।"
সেই ফাঁকে সামিহা রাশেদকে বলে, “চলুন ভাইয়া, আপনাকে ঘরটা ঘুরিয়ে দেখাই।” রাশেদ কিছুটা দ্বিধা নিয়ে সম্মত হয়।
রাশেদ সামিহার সাথে যেতে রাজি হয়। সামিহা আর সায়মা ২ জন বোন হলেও ২ জন ২ মেরুর মানুষ যেখানে সায়মা একটু লাজুক আর শান্ত প্রকৃতির সেখানে সামিহা আবার একটু চঞ্চল প্রকৃতির। কিন্তু ২ বোনের চেহারা তে ভালো মিল আছে। সামিহা এক এক করে সব রুম ঘুরে দেখাচ্ছে, সামিহা সামনে আর পেছনে রাশেদ আর সায়মা। সবার শেষে সামিহা সায়মার রুমে আসে। সায়মার রুমটা খুব গোছানো। একটা ড্রেসিং টেবিল একটা ওয়ারড্রব আর একটা পড়ার টেবিল আর বিশাল বড়ো একটা খাট খাবে ছড়িয়ে আছে ৩টা বড়ো পুতুল।
সামিহা ব্যঙ্গ করে বলে,
"ভাইয়া এই গুলো কিন্তু আমার আপুর পুতুল আমার আপু এই পুতুল ছাড়া ঘুমাতে পারে না।"
রাশেদ এই কথা শুনে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে সায়মাকে জিজ্ঞেস করে,
"এতো বড়ো হওয়ার পর এখনও পুতুল নিয়ে ঘুমাও?"
সায়মা খুব লজ্জা পায় রাসেদের এই কথায়।
এর মধ্যে সামিহা নিয়ে যায় রাশেদকে সায়মার বারান্দায়। বারান্দায় নানান প্রজাতির গাছ লাগানো আর একটা চেয়ার পাতা। খুব সুন্দর একটা জায়গা।
এর মধ্যেই কিছুক্ষণ পর সেলিনা বেগম সামিহাকে ডেকে পাঠান।
রাশেদ তখন বারান্দার কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা সায়মার দিকে তাকায়। একধরনের স্থির, গভীর দৃষ্টি।
“তুমি না বলে চলে গেলে কেন সেইদিন ক্লাসের পর?”
সায়মা একটু চমকে তাকায়। “মানে... আমার কী বলার ছিল?”
রাশেদ গম্ভীর ভাবে বলে,
"তোমার কি আমাকে বলে আশা উচিত ছিলো না?"
সায়মা তাকায় দেখে রাশেদ এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
সায়মা চোখ সরিয়ে নেয়, “আপনার আমার মধ্যে এমন কিছু হয়নি, স্যার, যার কারণে আমি আপনাকে না বলে চলে আসতে পারবো না ।”
রাশেদের কণ্ঠ আরও ধীর হয়ে ওঠে, “তুমি কি সত্যিই তাই ভাবো? আমরা কি একেবারে অপরিচিত, যে আমি তোমার খবর রাখবো না? আমি চাই... তুমি জানাও—তুমি কেমন আছো, কোথায় যাচ্ছো, কী ভাবছো।”
সায়মা শীতল গলায় বলে, “কেন স্যার আমি আপনাকে এই সব কেন বলবো?”
"আমি জানতে চেয়েছি তাই আমাকে বলবে।"
"আপনি কি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন ?"
"তুমি যদি তাই মনে করো তাহলে ধরো তাই।"
রাশেদ একটুখানি হাসে, সেই হাসি ঠোঁটে থাকলেও চোখে গম্ভীরতা ঝরে পড়ে, “হয়তো করছি। হয়তো করতে চাইছি। কারণ আমি চাই... তুমি নিজের ভাবনা, নিজের নীরবতা আমাকে শোনাও।”
সায়মা ধীরে ধীরে বলে, “আমি কারো অধীন হই না, স্যার। আমি কখনো কারো নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারি না। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতেই শিখেছি।”
রাশেদ একটু এগিয়ে এসে চোখে চোখ রেখে বলে, “তাই? তবে দেখা যাক... কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করে, সায়মা।”
সায়মার বুকের ভেতর কাঁপুনি ওঠে। সে চুপ করে থাকে।
এই মুহূর্তে তাদের চারপাশে যত আলো, যত শব্দ—সব মুছে গিয়ে শুধু এক অন্যরকম ছায়া নামে, যার নাম—অপ্রত্যাশিত অনুভব।
(চলবে…)
এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোনো মতামত থাকে জানাতে ভুলবেন না। আমাকে টেলিগ্রাম এ এসএমএস দিতে পারেন @Clasher_1234 এই নামে। আপনাদের এসএমএস এ আমি উৎসাহ পাই। তাই আমাকে বেশি বেশি করে উৎসাহ দিবেন এই আশা করি।