21-04-2025, 08:47 AM
চশমে-শাহী গার্ডেনটা তেমন দেখার কিছু নেই। সম্রাট শাহজাহান বড় ছেলে দারাশিকোহকে উদ্যানটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। পাহাড়ের সামনে একটা ছোটখাটো ফুলবাগান বলা যায়। তাই বেশি সময় নষ্ট না করে আমরা পরি মহলের দিকে রওনা হলাম। পরি মহল এখন একটা ভগ্নস্তূপ। এটি তৈরি করেছিলেন শাহজাহানের বড় ছেলে দারাশিকোহ। কথিত আছে, এখানে নাকি একটা পরীকে বেঁধে রাখা ছিল। আসলে আমার ধারণা, সেই সময়ের নবাবজাদাদের এটি একটা ফুর্তি করার জায়গা ছিল। গোপনে কোনো রক্ষীতাকে এখানে আটকে রেখে যৌনক্রীড়া চলত।
যাই হোক, জায়গাটা কিন্তু ভালোই লাগল। একসময় এটি তিনতলা ইমারত ছিল। আজ শুধুই খণ্ডহর। এখানে যেটা সবচেয়ে ভালো লাগে তা হলো, এখান থেকে পুরো শ্রীনগরের একটা সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। এক কথায় অসাধারণ। পুরো ডাল লেকটা এখান থেকে দেখা যায়।
পরি মহল দেখা শেষ করে ওরা আমাদের আরও কয়েকটা জায়গায় নিয়ে গেল। পছন্দ না হওয়ায় আমরা কেউই প্রায় নামলাম না। দু-একজন যারা নেমেছিল, তারাও একটু পরে ফিরে এল।
অতঃপর হোটেলের পথ ধরলাম আমরা। আড়াইটে নাগাদ হোটেলে পৌঁছে গেলাম। আমরা যার যার ঘরে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। মধ্যাহ্নভোজ হয়ে গিয়েছিল, তাই কিছুই করার নেই এখন। মা আর গায়ত্রী মাসিমা একটু গড়িয়ে নিতে কম্বলের নীচে ঢুকলেন। রিয়া অঙ্কিতাকে তাদের ঘরে নিয়ে গেল। উমা বৌদি তার ঘরে চলে গেলেন। আমিও বুকের উপর কম্বলটা টেনে দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলাম আর অঙ্কিতার ঘটনাটা ভাবতে লাগলাম। মেয়েটার মনের জোর আছে। গড়পড়তা বাঙালি মেয়ে হলে এই অবস্থায় ভেঙে পড়ত। হয় ডিপ্রেশনে ভুগত, নাহলে জলদি বিয়ে করে স্বামী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়ে ঘটনাটা ভোলার চেষ্টা করত।
কিন্তু অঙ্কিতা ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ করে আবার নিজের অধিকার নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচছে। মনে মনে মেয়েটাকে শ্রদ্ধা না করে পারলাম না। স্বীকার করতেই হয়, বাঙালি মেয়ে হিসেবে অঙ্কিতা অনেক বেশি উন্মুক্তমনা।
সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে বোধ হয় একটু তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। হঠাৎ দরজায় নক হলো। খুলতে দেখি উমা বৌদি। বললেন, “তমাল, আমাদের ঘরে একটু এসো তো।” আমি তার পিছু পিছু গিয়ে দেখি মৃণালদা হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছেন। ঘরটা দুর্গন্ধে ভরে আছে।
বৌদি বললেন, “দেখো অবস্থা! বেসিন তো বমিতে ভর্তি হয়ে আছে, এমনকি মেঝেতেও আছে। খেতে যখন পারো না, এইসব ছাইপাঁশ খাও কেন? কতটা গিলেছ শুনি? আর যাদের সঙ্গে ফুর্তি করলে তারা সব গেল কোথায়? তোমাকে এই অবস্থায় ফেলে দিয়ে পালল? এমনই বন্ধু সব? অপদার্থের বন্ধু আর কোন পদার্থ হবে?”
মৃণালদা মিনমিন করে কিছু বলতে গেলেন। তারপরে ওয়াক তুলে দৌড়ে বেসিনে উপুড় হলেন, আর দুর্গন্ধযুক্ত তরল ঢেলে দিলেন। উমা বৌদি দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে দেখতে লাগলেন। আমি এগিয়ে গিয়ে মৃণালদাকে ধরলাম। একটু ফ্যাকাসে হেসে বললেন, “আমি ঠিক আছি ভাই।”
আমি বললাম, “কে বলল আপনি ঠিক নেই? এমন হতে পারে।” আমি মৃণালদার মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিলাম। তারপর ঘরে এনে বৌদিকে বললাম, “ওকে অন্য কোন জামাকাপড় দিন তো।”
বৌদি একটা লুঙ্গি আর ফতুয়া দিলেন। আমি বললাম, “নিন, এটা চেঞ্জ করে নিন।” মৃণালদা এতই কাহিল হয়ে পড়েছেন যে চেঞ্জ করতেও পারছেন না ঠিকমতো। থরথর করে কাঁপছেন। আমি তাকে সাহায্য করে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
তারপর বললাম, “বোতলে আর একটুও অবশিষ্ট আছে?”
মৃণালদা বললেন, “না, বোধ হয়।” আমি বোতলটা নিয়ে দেখলাম, এক-দুই মিলিলিটার মতো পড়ে আছে।
বৌদিকে বললাম, “একটা গ্লাস দিন তো।” বৌদি অবাক হয়ে বললেন, “কি হবে? ওকে এটাও খাওয়াবে নাকি? হ্যাঁ হ্যাঁ, দাও খাইয়ে, পারলে আরও এক বোতল এনে ঢেলে দাও গলায়, আপদ বিদায় হোক।”
আমি বৌদিকে ধমক দিয়ে বললাম, “কি যা তা বলছেন? চুপ করুন! আর যা বলছি সেটা করুন, একটা গ্লাস দিন।” বৌদি একটা কাঁচের গ্লাস এগিয়ে দিলেন। আমি দুই মিলিলিটার মতো ওয়াইন গ্লাসে ঢেলে পুরো গ্লাসটা জল দিয়ে ভর্তি করে দিলাম। তারপর বললাম, “মৃণালদা, এটা খেয়ে নিন।”
মৃণালদা ভয়ে ভয়ে এমনভাবে একবার গ্লাস, একবার আমার আর বৌদির দিকে তাকাতে লাগলেন যেন বৌ আর তার প্রেমিক মিলে বিষ খাইয়ে তাকে মারতে চাইছে। আমি হেসে বললাম, “ভয় নেই, কিছু হবে না, এটা খেলে আপনার বমি বন্ধ হয়ে যাবে।”
মৃণালদা গ্লাসটা নিলেন। তারপর আস্তে আস্তে পুরো গ্লাসটা শেষ করে ফেললেন। আমি আরও এক গ্লাস জল নিয়ে বললাম, “এটাও খেয়ে ফেলুন, অনেক বমি করেছেন, শরীরে জল কমে গেছে।”
মৃণালদা খেয়ে নিলেন।
তারপর আমি বললাম, “এবার চুপটি করে শুয়ে পড়ুন।” মৃণালদাকে সবে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছি, অঙ্কিতা আর রিয়া ঘরে ঢুকল। বলল, “চলো চলো, শিকারাতে ঘুরব।” বাহ! বৌদি তো রেডিই আছে। “তমাল, জলদি রেডি হয়ে নাও।”
উমা বৌদি মুখ ঝামটা দিলেন, “আর রেডি! সে কপাল করে কি এসেছি ভাই! তোমরা যাও! মৃণালদা চোখ খুলে বলতে গেলেন, “না না, তুমিও যাও, আমি ঠিক আছি। ঘুরতে এসে…”
“আর যায় কোথায়!” উমা বৌদি রাগে ফেটে পড়লেন। “একদম ন্যাকামো করবে না। দরদ উঠলে উঠছে, তাই না? তোমার মতো আপদ সঙ্গে থাকলে ঘুরতে এসেও শান্তি নেই! সারাটা জীবন জ্বালিয়ে মারলে তুমি। কিছু হয় না তোমার দ্বারা…”
আমি বললাম, “থাক বৌদি, ওকে একটু ঘুমাতে দিন।” তারপর অঙ্কিতা আর রিয়ার দিকে ফিরে বললাম, “আজ না হয় থাক শিকারা। কাল দেখা যাবে। মৃণালদা অসুস্থ, আজ বাদ দেওয়া যাক।”
উমা বৌদি বললেন, “না না, থাকবে কেন? তোমরা যাও ভাই। আমাদের হাতে তো সময় নেই? মাত্র কয়দিন আছি এখানে, যাও তোমরা ঘুরে এসো। আমি ঘাটের মড়া আগলে পড়ে থাকি।”
আমি বললাম, “তা হয় না বৌদি। আমরাও…”
বৌদি ধমক দিলেন, “চুপ করো! যাও বলছি… যাও।”
আমরা বৌদিদের ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
আমার ঘরে এসে ঢুকতে রিয়া জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে তমাল?” আমি বললাম, “তেমন কিছু না। অ্যালকোহল ওভারডোজ! রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।” ওরা শুনে একটু আশ্বস্ত হলো। তারপর বলল, “নাও, এবার জলদি রেডি হয়ে নাও।”
আমি বললাম, “দাঁড়াও, মাকে জিজ্ঞেস করি যাবে কি না?”
অঙ্কিতা বলল, “আমি জিজ্ঞেস করেই এসেছি। ওরা যাবে না। আমাদের যেতে বলল। আর মা বলে দিয়েছেন, তমালকে যেন অবশ্যই সঙ্গে নিই, একা যেন না যাই।”
কথাটা শেষ হতেই রিয়া ফোড়ন কাটল, “হ্যাঁ! বাঘকে দিয়েছে ছাগল পাহারা দিতে!” আমি শুনেও না শোনার ভান করলাম।
আমি বললাম, “তোমাদের সামনেই চেঞ্জ করতে হবে নাকি? তোমরা বাইরে যাও।”
রিয়া জোরে হেসে উঠে বলল, “আহা! বিনয়ের অবতার! তুমি কি নেকেড হয়ে চেঞ্জ করো নাকি? টাওয়েল নেই? আর অঙ্কিতা তো সবই দেখে নিয়েছে, আমিও না হয় দেখলাম! ক্ষয়ে তো আর যাবে না জিনিসটা।”
আমি দুষ্টুমি করে বললাম, “ক্ষয়ে যাবার ভয় নেই, কিন্তু উল্টে বড় হয়ে যাবার ভয় আছে। আর সেটা হলে ওনাকে প্যান্টের ভিতর ঢোকাতেই অনেক কষ্ট করতে হবে। বড় হয়ে গেলে উনি আবার কাপড়চোপড় একদম লাইক করেন না।”
লজ্জায় লাল হয়ে রিয়া বলল, “যাহ্… অসভ্য কোথাকার!”
অঙ্কিতাও হাসতে লাগল।
আমি ওদের ঘরে রেখে বাথরুমে ঢুকে চট করে চেঞ্জ করে নিলাম। জিন্স-টি-শার্টের উপর একটা হাইনেক সোয়েটার চাপিয়ে বেরিয়ে এলাম। তারপর তিনজন মিলে ডাল লেকের পাড়ে চললাম। ঘড়িতে প্রায় চারটে বাজে। সূর্যের তেজ আর একটুও অবশিষ্ট নেই। ঘণ্টাখানেকের ভিতর অন্ধকার হতে শুরু করবে।
এই ডাল গেট রোডটা অনেক লম্বা। এপাশে সারি সারি হোটেল। তারপর লেক সাইড রোড, তারপর ফুটপাত, তারপরে খাল। খালটা একশ ফুট মতো চওড়া হবে। তার উল্টো দিকে গায়ে গায়ে লেগে আছে অগণিত হাউসবোট।
প্রতিটা হাউসবোটের নিজস্ব ছোট নৌকা আছে যাত্রী পারাপার করানোর জন্য। এপাশে ফুটপাতটাতে একটু পরপর সেই নৌকা থেকে নেমে-বেরোনোর জন্য সিঁড়ি আর গেট করা আছে। প্রতিটা গেটের নম্বর আছে।
গেট এক… গেট দুই… গেট তিন… এভাবে। কোন হাউসবোটে যেতে চাও বা সেটা কোথায় আছে তা ওই গেট নম্বর দিয়ে বুঝতে হয়। আমরা গেট এগারোতে এসে দাঁড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গে শিকারাওয়ালারা ছেঁকে ধরল।
অনেক দরদস্তুর করে ঠিক হলো, আমাদের চার ঘণ্টা লেকে ঘোরাবে, পাঁচশ টাকা নেবে। আমি, অঙ্কিতা আর রিয়া শিকারাতে উঠলাম। শিকারা চলতে শুরু করল। আস্তে আস্তে খাল ছেড়ে মূল লেকে বেরিয়ে এলাম আমরা।
আজ রিয়া আর অঙ্কিতা দুজনে সালোয়ার-কামিজ পরেছে, দুজনের গায়েই চাদর। আমিই শুধু সোয়েটার পরা। আমরা শিকারার ভীষণ নরম গদিওয়ালা সীটে পাশাপাশি বসলাম। আমি মাঝখানে, দুপাশে রিয়া আর অঙ্কিতা।
আমাদের পিছন দিকে বসে মাঝি শিকারা চালাচ্ছেন। সীটের পিছন দিকটা এতই উঁচু যে উঠে না দাঁড়ালে মাঝি আমাদের দেখতে পাবেন না। আরও বেশ কয়েকটা শিকারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবগুলোতেই কম বয়সী ছেলেমেয়ে, বেশিরভাগই জোড়ায় জোড়ায়। পরিবার নিয়ে খুব কম শিকারাই বেরিয়েছে দেখলাম।
যাই হোক, জায়গাটা কিন্তু ভালোই লাগল। একসময় এটি তিনতলা ইমারত ছিল। আজ শুধুই খণ্ডহর। এখানে যেটা সবচেয়ে ভালো লাগে তা হলো, এখান থেকে পুরো শ্রীনগরের একটা সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। এক কথায় অসাধারণ। পুরো ডাল লেকটা এখান থেকে দেখা যায়।
পরি মহল দেখা শেষ করে ওরা আমাদের আরও কয়েকটা জায়গায় নিয়ে গেল। পছন্দ না হওয়ায় আমরা কেউই প্রায় নামলাম না। দু-একজন যারা নেমেছিল, তারাও একটু পরে ফিরে এল।
অতঃপর হোটেলের পথ ধরলাম আমরা। আড়াইটে নাগাদ হোটেলে পৌঁছে গেলাম। আমরা যার যার ঘরে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। মধ্যাহ্নভোজ হয়ে গিয়েছিল, তাই কিছুই করার নেই এখন। মা আর গায়ত্রী মাসিমা একটু গড়িয়ে নিতে কম্বলের নীচে ঢুকলেন। রিয়া অঙ্কিতাকে তাদের ঘরে নিয়ে গেল। উমা বৌদি তার ঘরে চলে গেলেন। আমিও বুকের উপর কম্বলটা টেনে দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলাম আর অঙ্কিতার ঘটনাটা ভাবতে লাগলাম। মেয়েটার মনের জোর আছে। গড়পড়তা বাঙালি মেয়ে হলে এই অবস্থায় ভেঙে পড়ত। হয় ডিপ্রেশনে ভুগত, নাহলে জলদি বিয়ে করে স্বামী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়ে ঘটনাটা ভোলার চেষ্টা করত।
কিন্তু অঙ্কিতা ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ করে আবার নিজের অধিকার নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচছে। মনে মনে মেয়েটাকে শ্রদ্ধা না করে পারলাম না। স্বীকার করতেই হয়, বাঙালি মেয়ে হিসেবে অঙ্কিতা অনেক বেশি উন্মুক্তমনা।
সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে বোধ হয় একটু তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। হঠাৎ দরজায় নক হলো। খুলতে দেখি উমা বৌদি। বললেন, “তমাল, আমাদের ঘরে একটু এসো তো।” আমি তার পিছু পিছু গিয়ে দেখি মৃণালদা হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছেন। ঘরটা দুর্গন্ধে ভরে আছে।
বৌদি বললেন, “দেখো অবস্থা! বেসিন তো বমিতে ভর্তি হয়ে আছে, এমনকি মেঝেতেও আছে। খেতে যখন পারো না, এইসব ছাইপাঁশ খাও কেন? কতটা গিলেছ শুনি? আর যাদের সঙ্গে ফুর্তি করলে তারা সব গেল কোথায়? তোমাকে এই অবস্থায় ফেলে দিয়ে পালল? এমনই বন্ধু সব? অপদার্থের বন্ধু আর কোন পদার্থ হবে?”
মৃণালদা মিনমিন করে কিছু বলতে গেলেন। তারপরে ওয়াক তুলে দৌড়ে বেসিনে উপুড় হলেন, আর দুর্গন্ধযুক্ত তরল ঢেলে দিলেন। উমা বৌদি দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে দেখতে লাগলেন। আমি এগিয়ে গিয়ে মৃণালদাকে ধরলাম। একটু ফ্যাকাসে হেসে বললেন, “আমি ঠিক আছি ভাই।”
আমি বললাম, “কে বলল আপনি ঠিক নেই? এমন হতে পারে।” আমি মৃণালদার মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিলাম। তারপর ঘরে এনে বৌদিকে বললাম, “ওকে অন্য কোন জামাকাপড় দিন তো।”
বৌদি একটা লুঙ্গি আর ফতুয়া দিলেন। আমি বললাম, “নিন, এটা চেঞ্জ করে নিন।” মৃণালদা এতই কাহিল হয়ে পড়েছেন যে চেঞ্জ করতেও পারছেন না ঠিকমতো। থরথর করে কাঁপছেন। আমি তাকে সাহায্য করে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
তারপর বললাম, “বোতলে আর একটুও অবশিষ্ট আছে?”
মৃণালদা বললেন, “না, বোধ হয়।” আমি বোতলটা নিয়ে দেখলাম, এক-দুই মিলিলিটার মতো পড়ে আছে।
বৌদিকে বললাম, “একটা গ্লাস দিন তো।” বৌদি অবাক হয়ে বললেন, “কি হবে? ওকে এটাও খাওয়াবে নাকি? হ্যাঁ হ্যাঁ, দাও খাইয়ে, পারলে আরও এক বোতল এনে ঢেলে দাও গলায়, আপদ বিদায় হোক।”
আমি বৌদিকে ধমক দিয়ে বললাম, “কি যা তা বলছেন? চুপ করুন! আর যা বলছি সেটা করুন, একটা গ্লাস দিন।” বৌদি একটা কাঁচের গ্লাস এগিয়ে দিলেন। আমি দুই মিলিলিটার মতো ওয়াইন গ্লাসে ঢেলে পুরো গ্লাসটা জল দিয়ে ভর্তি করে দিলাম। তারপর বললাম, “মৃণালদা, এটা খেয়ে নিন।”
মৃণালদা ভয়ে ভয়ে এমনভাবে একবার গ্লাস, একবার আমার আর বৌদির দিকে তাকাতে লাগলেন যেন বৌ আর তার প্রেমিক মিলে বিষ খাইয়ে তাকে মারতে চাইছে। আমি হেসে বললাম, “ভয় নেই, কিছু হবে না, এটা খেলে আপনার বমি বন্ধ হয়ে যাবে।”
মৃণালদা গ্লাসটা নিলেন। তারপর আস্তে আস্তে পুরো গ্লাসটা শেষ করে ফেললেন। আমি আরও এক গ্লাস জল নিয়ে বললাম, “এটাও খেয়ে ফেলুন, অনেক বমি করেছেন, শরীরে জল কমে গেছে।”
মৃণালদা খেয়ে নিলেন।
তারপর আমি বললাম, “এবার চুপটি করে শুয়ে পড়ুন।” মৃণালদাকে সবে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছি, অঙ্কিতা আর রিয়া ঘরে ঢুকল। বলল, “চলো চলো, শিকারাতে ঘুরব।” বাহ! বৌদি তো রেডিই আছে। “তমাল, জলদি রেডি হয়ে নাও।”
উমা বৌদি মুখ ঝামটা দিলেন, “আর রেডি! সে কপাল করে কি এসেছি ভাই! তোমরা যাও! মৃণালদা চোখ খুলে বলতে গেলেন, “না না, তুমিও যাও, আমি ঠিক আছি। ঘুরতে এসে…”
“আর যায় কোথায়!” উমা বৌদি রাগে ফেটে পড়লেন। “একদম ন্যাকামো করবে না। দরদ উঠলে উঠছে, তাই না? তোমার মতো আপদ সঙ্গে থাকলে ঘুরতে এসেও শান্তি নেই! সারাটা জীবন জ্বালিয়ে মারলে তুমি। কিছু হয় না তোমার দ্বারা…”
আমি বললাম, “থাক বৌদি, ওকে একটু ঘুমাতে দিন।” তারপর অঙ্কিতা আর রিয়ার দিকে ফিরে বললাম, “আজ না হয় থাক শিকারা। কাল দেখা যাবে। মৃণালদা অসুস্থ, আজ বাদ দেওয়া যাক।”
উমা বৌদি বললেন, “না না, থাকবে কেন? তোমরা যাও ভাই। আমাদের হাতে তো সময় নেই? মাত্র কয়দিন আছি এখানে, যাও তোমরা ঘুরে এসো। আমি ঘাটের মড়া আগলে পড়ে থাকি।”
আমি বললাম, “তা হয় না বৌদি। আমরাও…”
বৌদি ধমক দিলেন, “চুপ করো! যাও বলছি… যাও।”
আমরা বৌদিদের ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
আমার ঘরে এসে ঢুকতে রিয়া জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে তমাল?” আমি বললাম, “তেমন কিছু না। অ্যালকোহল ওভারডোজ! রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।” ওরা শুনে একটু আশ্বস্ত হলো। তারপর বলল, “নাও, এবার জলদি রেডি হয়ে নাও।”
আমি বললাম, “দাঁড়াও, মাকে জিজ্ঞেস করি যাবে কি না?”
অঙ্কিতা বলল, “আমি জিজ্ঞেস করেই এসেছি। ওরা যাবে না। আমাদের যেতে বলল। আর মা বলে দিয়েছেন, তমালকে যেন অবশ্যই সঙ্গে নিই, একা যেন না যাই।”
কথাটা শেষ হতেই রিয়া ফোড়ন কাটল, “হ্যাঁ! বাঘকে দিয়েছে ছাগল পাহারা দিতে!” আমি শুনেও না শোনার ভান করলাম।
আমি বললাম, “তোমাদের সামনেই চেঞ্জ করতে হবে নাকি? তোমরা বাইরে যাও।”
রিয়া জোরে হেসে উঠে বলল, “আহা! বিনয়ের অবতার! তুমি কি নেকেড হয়ে চেঞ্জ করো নাকি? টাওয়েল নেই? আর অঙ্কিতা তো সবই দেখে নিয়েছে, আমিও না হয় দেখলাম! ক্ষয়ে তো আর যাবে না জিনিসটা।”
আমি দুষ্টুমি করে বললাম, “ক্ষয়ে যাবার ভয় নেই, কিন্তু উল্টে বড় হয়ে যাবার ভয় আছে। আর সেটা হলে ওনাকে প্যান্টের ভিতর ঢোকাতেই অনেক কষ্ট করতে হবে। বড় হয়ে গেলে উনি আবার কাপড়চোপড় একদম লাইক করেন না।”
লজ্জায় লাল হয়ে রিয়া বলল, “যাহ্… অসভ্য কোথাকার!”
অঙ্কিতাও হাসতে লাগল।
আমি ওদের ঘরে রেখে বাথরুমে ঢুকে চট করে চেঞ্জ করে নিলাম। জিন্স-টি-শার্টের উপর একটা হাইনেক সোয়েটার চাপিয়ে বেরিয়ে এলাম। তারপর তিনজন মিলে ডাল লেকের পাড়ে চললাম। ঘড়িতে প্রায় চারটে বাজে। সূর্যের তেজ আর একটুও অবশিষ্ট নেই। ঘণ্টাখানেকের ভিতর অন্ধকার হতে শুরু করবে।
এই ডাল গেট রোডটা অনেক লম্বা। এপাশে সারি সারি হোটেল। তারপর লেক সাইড রোড, তারপর ফুটপাত, তারপরে খাল। খালটা একশ ফুট মতো চওড়া হবে। তার উল্টো দিকে গায়ে গায়ে লেগে আছে অগণিত হাউসবোট।
প্রতিটা হাউসবোটের নিজস্ব ছোট নৌকা আছে যাত্রী পারাপার করানোর জন্য। এপাশে ফুটপাতটাতে একটু পরপর সেই নৌকা থেকে নেমে-বেরোনোর জন্য সিঁড়ি আর গেট করা আছে। প্রতিটা গেটের নম্বর আছে।
গেট এক… গেট দুই… গেট তিন… এভাবে। কোন হাউসবোটে যেতে চাও বা সেটা কোথায় আছে তা ওই গেট নম্বর দিয়ে বুঝতে হয়। আমরা গেট এগারোতে এসে দাঁড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গে শিকারাওয়ালারা ছেঁকে ধরল।
অনেক দরদস্তুর করে ঠিক হলো, আমাদের চার ঘণ্টা লেকে ঘোরাবে, পাঁচশ টাকা নেবে। আমি, অঙ্কিতা আর রিয়া শিকারাতে উঠলাম। শিকারা চলতে শুরু করল। আস্তে আস্তে খাল ছেড়ে মূল লেকে বেরিয়ে এলাম আমরা।
আজ রিয়া আর অঙ্কিতা দুজনে সালোয়ার-কামিজ পরেছে, দুজনের গায়েই চাদর। আমিই শুধু সোয়েটার পরা। আমরা শিকারার ভীষণ নরম গদিওয়ালা সীটে পাশাপাশি বসলাম। আমি মাঝখানে, দুপাশে রিয়া আর অঙ্কিতা।
আমাদের পিছন দিকে বসে মাঝি শিকারা চালাচ্ছেন। সীটের পিছন দিকটা এতই উঁচু যে উঠে না দাঁড়ালে মাঝি আমাদের দেখতে পাবেন না। আরও বেশ কয়েকটা শিকারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবগুলোতেই কম বয়সী ছেলেমেয়ে, বেশিরভাগই জোড়ায় জোড়ায়। পরিবার নিয়ে খুব কম শিকারাই বেরিয়েছে দেখলাম।

kingsuk25@ জিমেইল ডট কম


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)