20-04-2025, 03:38 PM
(This post was last modified: 20-04-2025, 03:39 PM by BDSM lover. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ক্লাস শেষে সায়মা আর তানিয়া হাঁটছে ক্যান্টিনের দিকে। গাছপালার ফাঁক দিয়ে নরম রোদ এসে পড়েছে, একটা সোনালি ছায়া যেন ছড়িয়ে আছে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। তানিয়া বরাবরের মতো চঞ্চল, আর তার প্রাণখোলা হাসি যা সায়মার ভারী মনটা হালকা করে দেয়। সায়মার সাথে তানিয়ার কথা বার্তা শুনলে কেও বলবে না এই মেয়ের সাথে এই একটু আগে পরিচিত হয়েছে, ওদের কথা শুনলে মনে হবে কতো দিনের চেনা। কতদিনের সম্পর্ক ওদের। কিন্তু সত্যি বলতে দেখার হলো এই প্রথম।
“তোর সেই উত্তরটা... মানে গল্পের মতো করে বলেছিলি না?” তানিয়া হেসে বলে, “স্যার তো একেবারে হাঁ করে শুনছিলেন! আমি ভাবলাম, এই বুঝি তোর ভক্ত হয়ে গেলেন!”
“আরে না রে!” সায়মা হেসে ফেলে, “আমি তো কাঁপতে কাঁপতে বলেছি। স্যারের চোখের দিকে তাকালে মনে হয় উনি আমার ভেতরের সব পড়ে ফেলবেন।”
“ওই তো! মনোবিজ্ঞানের স্যার—মন না পড়লে নামই খাটো পড়ে!” তানিয়া চোখ টিপে বলে, “কিন্তু মানতেই হবে, চোখ দুটোতে একটা রহস্য আছে। কেমন যেন চুম্বকের মতো টানে।”
সায়মা হালকা হেসে বলে, “তুই-ই বরং ফ্যান হয়ে যা। আমি তো এখনো স্যারের সামনে পড়লেই গলা শুকিয়ে যায়।”
তারা ক্যান্টিনে ঢুকে চা আর সিঙ্গারার অর্ডার দেয়। ছোট ছোট আলাপে সময় পেরিয়ে যায়, যেন ক্যান্টিনের চায়ের কাপেই সব গল্প জমা হচ্ছে।
“তুই কোথায় থাকিস রে?” হঠাৎ তানিয়া জিজ্ঞেস করে।
“ধানমন্ডিতে।” সায়মার কণ্ঠে গর্ব।"তুই কোথায় থাকিস?"
"আমি মিরপুর থাকি।"
“ধানমন্ডি! বেশ ! ক্লাসি তো!” তানিয়া বলে, “আমাকে একদিন দাওয়াত দিবি, কিন্তু ঠিক আছে ? তোর বাসায় গিয়ে আন্টির হাতের রান্না খাব।”
“অবশ্যই! তুই এলেই মা একেবারে বিরিয়ানি পাকা করে ফেলবে,” সায়মা হেসে বলে।
তাদের আলাপে যেন একটা সহজ বন্ধুত্ব গড়ে উঠছে, যা সায়মার মতো অন্তর্মুখী মেয়ের জন্য খুব দরকারি।
সারাদিন ক্লাস নতুন বন্ধু আর টিএসসিতে বসে আড্ডা দিয়ে দিনটা যে কোন দিক দিয়ে পারে হলো সেটা বুঝতেই পারলো না। বিকেল ৪টায় সায়মা খেয়াল করে সময় অনেক হয়েছে এখন না উঠলে পড়ে জ্যামের সম্মুখীন হতে হবে। তাই বন্ধু বান্ধবীদের বিদায় দিয়ে আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।ধানমন্ডির রাস্তাগুলো ঝিরঝিরে বাতাসে আর নরম আলোয় মায়াবী লাগছে।
সন্ধ্যার একটু আগে বাসায় ঢোকে সায়মা। বাসায় ঢোকার সময় সায়মা খেয়াল করে সামনের ফ্ল্যাটে তালা ঝোলানো নেই। এই ফ্লাটটা এখনও বিক্রি হয়নি তাই তালা থাকতো, কিন্তু মনে হচ্ছে বিক্রি হয়ে গেছে।সায়মা এ বিষয় নিয়ে আর বেশি মাথা ঘামালো না। সায়মা কলিং বেল দিলো।
ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই সেলিনা বেগমের উষ্ণ হাসি—একটা নিরাপদ আশ্রয়ের মতো।
“কি রে মা, প্রথম দিনের ক্লাস কেমন হলো?” সেলিনা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
“একটা দারুণ কাণ্ড হয়ে গেল, মা!” জুতো খুলে রাখে সায়মা। “মেট্রোকার্ড বাসায় ফেলে এসেছিলাম। তারপর জ্যামে পড়লাম। প্রথম দিনেই দেরি করে ক্লাসে ঢুকলাম,দেরি করে গিয়েছি বলে স্যার আমাকে কিছু কথা শোনালেন।”
“ও মা!” সেলিনা চোখ কুঁচকে বলেন, “তাই বলি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দেখে নে সব ঠিক আছে কিনা ? কিন্তু কে শোনে কার কথা তুই। বেশি ঘাবড়ে গিয়েছিলি নাকি?”
“একেবারে গলা শুকিয়ে গিয়েছিল, মা,” সায়মা সোফায় বসে পড়ে। “কিন্তু পরে আমি একটা প্রশ্নের উত্তর দিই। স্যারের মনে হয় প্রশ্নের উত্তরটা খুব পছন্দ হয় তাই স্যার সবাইকে বললেন তালি দিতে!”
সেলিনা চোখে গর্ব নিয়ে বলেন, “বলেছিলাম না? তুই যা করিস, তাতেই আলাদা ছাপ পড়ে।”
“তুমি না আমার সবচেয়ে বড় ফ্যান, মা,” সায়মা মুচকি হেসে বলে।
ঠিক সেই সময় দরজার বেল বেজে ওঠে।
"সায়মা মা গিয়ে দেখতো কে এলো, আমি চায়ের পানি দিয়েছি আমি একটু না হলে পানি শুকিয়ে যাবে।"
সায়মা দরজা খুলে দেখে, এক অপরিচিত মুখ—মধ্যবয়সী মহিলা, হাতে একটা প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
সায়মা ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিলো,
"আস্সালামুআলাইকুম কাকে চাই?"
"ওয়ালাইকুম আস্সালাম। তোমার আম্মু ঘরে আছে মা?"
“আন্টি, ভেতরে আসুন না,” সায়মা বলে। “আমি মাকে ডাকি।”
সায়মা মহিলাকে সোফায় বসালো। সায়মা ওর মাকে রান্না ঘর থেকে ডেকে নিয়ে আসলো।
সায়মার মাকে দেখে সেই মহিলা সালাম দিলো,
“আস্সালামুআলাইকুম ভাবি,আমি পাশের ফ্ল্যাটে উঠেছি,” মহিলা বলেন, “আমি সারাদিন একাই থাকি তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে একটু পরিচিত হয়ে যাই, যখন ভাবলাম আসবো তখন খালি হাতে কিভাবে আসি, তাই আপনাদের জন্য এই সামান্য একটু মিষ্টি নিয়ে আসলাম। "
"আরে ভাবি এইসবের কি দরকার ছিলো, আমি খুব দুঃখিত ভাবি আসলে আমার একটা কাজ পড়ে গিয়েছিলো যার কারণে আমি বাইরে বেরিয়ে যে
দেখবো কি হচ্ছে সে সময়টা পাইনি। আপনি এসেছেন খুব ভালো লাগলো। "
"আরে না না কি যে বলেন না ভাবি কোনো সমস্যা নেই। ভাবি ভাইকে দেখছি না। "
"উনি এখনও ফেরেননি অফিসে গিয়েছে। এইতো একটু পড়ে এসে পড়বে।"
"বাহ্ খুব ভালো। আর পরিবারে কে আছে ভাবি?"
"আর আমি আর আমার এই মেয়ে আরেকটা মেয়ে আছে ও একটু নানুর বাসায় গিয়েছে কিছুদিনে মধ্যে এসে পড়বে।"
মহিলা সায়মাকে ডাক দিলেন, সায়মা মহিলার কাছে গিয়ে বসলো, মহিলা সায়মার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,
"নাম কি মা তোমার?"
"সায়মা।"
"বেশ সুন্দর নাম। শোনো আমার কোনো মেয়ে নেই। তাই তোমাকে আমি কিন্তু তুমি বলবো না আমি কিন্তু তোমাকে তুই বলবো, তুমি না হয় আজকে থেকে আমার মেয়ে।"
"আচ্ছা আন্টি।"
সায়মা সেখান থেকে বিদায় নিয়ে নিজের রুমে আসলো। ভারী হাসিখুশি মানুষ, খুব তাড়াতাড়ি কাউকে আপন করে নিতে পারে যা সচারচর
এখন দেখা যায় না।
সেলিনা চা নিয়ে আসেন , এবং মুহূর্তেই দুজনের মধ্যে প্রাণখোলা আলাপ জমে ওঠে। মহিলার নাম ফারজানা খান। সদ্য ফ্ল্যাট কিনে উঠেছেন। স্বামী ব্যবসায়ী, ছেলে ইউনিভার্সিটিতে পড়ায়।
"বাহ্ আমার মেয়েটাও এইবার ইউনিভার্সিটি তে উঠলো। মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে।"
“তাই নাকি?” ফারজানা খুশি হয়ে বলেন, “আমার ছেলেও তো মনোবিজ্ঞানে শিক্ষক!”
তারপর জমে উঠে ধুমায়িত চায়ের কাপে আড্ডা।
________________________________________
পরদিন বিকেলে সেলিনা একটি খাবারের বাটি হাতে তুলে দেয় সায়মার হাতে।
“সায়মা তোর ফারজানা আন্টির বাসায় দিয়ে আয় তো। নতুন প্রতিবেশী, একটু আদর-আপ্যায়ন তো করতেই হয়।”
সায়মা বাটি নিয়ে গিয়ে দরজায় বেল দেয়। ফারজানা দরজা খুলে বলেন, “আরে, সায়মা! ভেতরে আয়।”
"আন্টি এই নিন মা আপনাদের জন্য পাঠালো।"
"তুই কি ভেতরে আসবি না নাকি বাইরে থেকে দিচ্ছিস ভেতরে আয়।"
সায়মা আর কথা বাড়ালো না সেও ফারজানার পেছনে গেলো। ফারজানা ড্রয়িং রুমে সায়মাকে বসালো। আর বললো,
"তুই একটু বস আমি আসছি।"
সায়মা সোফায় বসলো। সারাঘর দেখতে লাগলো। সারা ঘরে আভিজাত্যের ছোঁয়া । খুব সুন্দর করে ঘরটা গোছানো হয়েছে। বেশ সৌখিন এই পরিবার তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এইসব দেখছিলো এর মধ্যে চোখে আটকে যায় একটা ছবিতে ড্রয়িং রুমের দেয়ালে লাগানো বড়ো একটা ছবি। সে ছবিতে আঙ্কেল আন্টি সোফায় বসে আছে আর তারা পেছনে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে। এর মাঝে ফারাজানা ফিরে আসেন হাতে দুটো মিষ্টি নিয়ে।
সায়মা ফারজানাকে জিজ্ঞেস করে
“আন্টি এই ছবিতে... এটা কি... রাশেদ স্যার?” কণ্ঠ কাঁপে সায়মার।
“হ্যাঁ, ও-ই আমার ছেলে। তুই কি ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে পড়িস? "
সায়মা শুধু মাথা দোলায়। ফারাজানা হেসে দেয়,
"তাহলে ওকেই তুই ক্লাসে পেয়েছিস!”
ফারজানা খুশি হয়ে বলেন, “বাহ! তাহলে তো আরও ভালো হলো। ও তো খুব সিরিয়াস, কিন্তু ভেতরে ভেতরে খুব নরম মন।”
সায়মা একটা মুচকি হাসি দিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে।
ঢাকার আকাশ সেদিন ভারী মেঘে ঢাকা। এই হুট করে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে জানালায়। সায়মা চাটা , ব্যাগ সব ঠিকঠাক করে বেরোয় ভার্সিটি রা উদ্দেশে, কিন্তু বেরিয়ে না কোনো রিকশা পাচ্ছে না কোনো, সিএনজী, এখন কি হবে আজকেও যদি লেট্ হয়, খুব ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে মিস করতে চাইছে না। কি করবে কি করবে যখন ভাবছিলো, তখন সামনে একটা কালো এসে থামলো।
থামার পর সাথে সাথে দরজা খুলে গেল,
সায়মা অবাক আর কেও না রাশেদ বসে আছে গাড়ির ভেতর। সায়মা মনে মনে বলছে,
"এই আপদ আবার কোথায় থেকে আসলো?"
রাশেদ গাড়ি থেকেই বললো,
"ভার্সিটি যাচ্ছ?"
সায়মা শুধু মাথা দুলায়। রাশেদ বলে,
"উঠে পরো।"
"আরে না না স্যার আপনি যান আমি এই একটা সি এন জী এসে পড়বো।"
রাশেদের মুখে মনে হয় যেন মেঘ করল, গমগমে ভারী গলায় বলল,
"আমি এক কথা দুই বার বলতে পছন্দ করি না।"
সায়মা আর কি করবে অগত্যা উঠতেই হলো।
গাড়িতে বসে সায়মা চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। বৃষ্টির ফোঁটা গ্লাসে গড়িয়ে পড়ছে, আর তার মনের ভেতর কী এক অদ্ভুত সাড়া।
“আপনার উত্তরটা খুব সুন্দর ছিল গতকাল,” রাশেদ বলেন হঠাৎ। “তাতে অনেক ভাবনার খোরাক আছে।”
সায়মা গলার স্বর নিচু করে বলে, “আমি আসলে সঠিক উত্তর দিতে পারব কিনা, জানতাম না।”
“সঠিক কি ভুল, সেটার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ তুমি কী ভাবছো—সেটা,” রাশেদ বলেন।
সায়মা আর কিছু বলতে পারে না। তার ভেতরে ঢেউ ওঠে। হয়তো এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হতে চলেছে।
ভার্সিটির গেটে পৌঁছে তারা একসঙ্গে হাঁটছে। দূরে দাঁড়িয়ে তানিয়া চোখ গোল গোল করে বলল, “তুই আর স্যার! একসাথে?”
“আসলে... উনি কাছেই থাকেন তো,” সায়মা ফিসফিস করে।
“বৃষ্টি না রোমান্স?” তানিয়া বলে চোখ টিপে।
“পাগল!” সায়মা লজ্জায় হেসে ফেলে।
ক্লাসে ঢুকেই রাশেদ আবার সেই কঠিন রূপে ফিরে যান। কিন্তু সায়মার মনে একটা প্রশ্ন গেঁথে যায়—এই মানুষটা তার জীবনের গল্পে ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে?
প্রথম গল্প লিখছি তো, তাই জানি না কেমন হচ্ছে, আপনারা তাই দোয়া করে জানাবেন কেমন হচ্ছে। ভালো লাগুক মন্দ লাগুক জানাবেন এই আশা করবো
এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোনো মতামত থাকে জানাতে ভুলবেন না। আমাকে টেলিগ্রাম এ এসএমএস দিতে পারেন @Clasher_1234 এই নামে। আপনাদের এসএমএস এ আমি উৎসাহ পাই। তাই আমাকে বেশি বেশি করে উৎসাহ দিবেন এই আশা করি।
“তোর সেই উত্তরটা... মানে গল্পের মতো করে বলেছিলি না?” তানিয়া হেসে বলে, “স্যার তো একেবারে হাঁ করে শুনছিলেন! আমি ভাবলাম, এই বুঝি তোর ভক্ত হয়ে গেলেন!”
“আরে না রে!” সায়মা হেসে ফেলে, “আমি তো কাঁপতে কাঁপতে বলেছি। স্যারের চোখের দিকে তাকালে মনে হয় উনি আমার ভেতরের সব পড়ে ফেলবেন।”
“ওই তো! মনোবিজ্ঞানের স্যার—মন না পড়লে নামই খাটো পড়ে!” তানিয়া চোখ টিপে বলে, “কিন্তু মানতেই হবে, চোখ দুটোতে একটা রহস্য আছে। কেমন যেন চুম্বকের মতো টানে।”
সায়মা হালকা হেসে বলে, “তুই-ই বরং ফ্যান হয়ে যা। আমি তো এখনো স্যারের সামনে পড়লেই গলা শুকিয়ে যায়।”
তারা ক্যান্টিনে ঢুকে চা আর সিঙ্গারার অর্ডার দেয়। ছোট ছোট আলাপে সময় পেরিয়ে যায়, যেন ক্যান্টিনের চায়ের কাপেই সব গল্প জমা হচ্ছে।
“তুই কোথায় থাকিস রে?” হঠাৎ তানিয়া জিজ্ঞেস করে।
“ধানমন্ডিতে।” সায়মার কণ্ঠে গর্ব।"তুই কোথায় থাকিস?"
"আমি মিরপুর থাকি।"
“ধানমন্ডি! বেশ ! ক্লাসি তো!” তানিয়া বলে, “আমাকে একদিন দাওয়াত দিবি, কিন্তু ঠিক আছে ? তোর বাসায় গিয়ে আন্টির হাতের রান্না খাব।”
“অবশ্যই! তুই এলেই মা একেবারে বিরিয়ানি পাকা করে ফেলবে,” সায়মা হেসে বলে।
তাদের আলাপে যেন একটা সহজ বন্ধুত্ব গড়ে উঠছে, যা সায়মার মতো অন্তর্মুখী মেয়ের জন্য খুব দরকারি।
সারাদিন ক্লাস নতুন বন্ধু আর টিএসসিতে বসে আড্ডা দিয়ে দিনটা যে কোন দিক দিয়ে পারে হলো সেটা বুঝতেই পারলো না। বিকেল ৪টায় সায়মা খেয়াল করে সময় অনেক হয়েছে এখন না উঠলে পড়ে জ্যামের সম্মুখীন হতে হবে। তাই বন্ধু বান্ধবীদের বিদায় দিয়ে আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।ধানমন্ডির রাস্তাগুলো ঝিরঝিরে বাতাসে আর নরম আলোয় মায়াবী লাগছে।
সন্ধ্যার একটু আগে বাসায় ঢোকে সায়মা। বাসায় ঢোকার সময় সায়মা খেয়াল করে সামনের ফ্ল্যাটে তালা ঝোলানো নেই। এই ফ্লাটটা এখনও বিক্রি হয়নি তাই তালা থাকতো, কিন্তু মনে হচ্ছে বিক্রি হয়ে গেছে।সায়মা এ বিষয় নিয়ে আর বেশি মাথা ঘামালো না। সায়মা কলিং বেল দিলো।
ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই সেলিনা বেগমের উষ্ণ হাসি—একটা নিরাপদ আশ্রয়ের মতো।
“কি রে মা, প্রথম দিনের ক্লাস কেমন হলো?” সেলিনা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
“একটা দারুণ কাণ্ড হয়ে গেল, মা!” জুতো খুলে রাখে সায়মা। “মেট্রোকার্ড বাসায় ফেলে এসেছিলাম। তারপর জ্যামে পড়লাম। প্রথম দিনেই দেরি করে ক্লাসে ঢুকলাম,দেরি করে গিয়েছি বলে স্যার আমাকে কিছু কথা শোনালেন।”
“ও মা!” সেলিনা চোখ কুঁচকে বলেন, “তাই বলি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দেখে নে সব ঠিক আছে কিনা ? কিন্তু কে শোনে কার কথা তুই। বেশি ঘাবড়ে গিয়েছিলি নাকি?”
“একেবারে গলা শুকিয়ে গিয়েছিল, মা,” সায়মা সোফায় বসে পড়ে। “কিন্তু পরে আমি একটা প্রশ্নের উত্তর দিই। স্যারের মনে হয় প্রশ্নের উত্তরটা খুব পছন্দ হয় তাই স্যার সবাইকে বললেন তালি দিতে!”
সেলিনা চোখে গর্ব নিয়ে বলেন, “বলেছিলাম না? তুই যা করিস, তাতেই আলাদা ছাপ পড়ে।”
“তুমি না আমার সবচেয়ে বড় ফ্যান, মা,” সায়মা মুচকি হেসে বলে।
ঠিক সেই সময় দরজার বেল বেজে ওঠে।
"সায়মা মা গিয়ে দেখতো কে এলো, আমি চায়ের পানি দিয়েছি আমি একটু না হলে পানি শুকিয়ে যাবে।"
সায়মা দরজা খুলে দেখে, এক অপরিচিত মুখ—মধ্যবয়সী মহিলা, হাতে একটা প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
সায়মা ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিলো,
"আস্সালামুআলাইকুম কাকে চাই?"
"ওয়ালাইকুম আস্সালাম। তোমার আম্মু ঘরে আছে মা?"
“আন্টি, ভেতরে আসুন না,” সায়মা বলে। “আমি মাকে ডাকি।”
সায়মা মহিলাকে সোফায় বসালো। সায়মা ওর মাকে রান্না ঘর থেকে ডেকে নিয়ে আসলো।
সায়মার মাকে দেখে সেই মহিলা সালাম দিলো,
“আস্সালামুআলাইকুম ভাবি,আমি পাশের ফ্ল্যাটে উঠেছি,” মহিলা বলেন, “আমি সারাদিন একাই থাকি তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে একটু পরিচিত হয়ে যাই, যখন ভাবলাম আসবো তখন খালি হাতে কিভাবে আসি, তাই আপনাদের জন্য এই সামান্য একটু মিষ্টি নিয়ে আসলাম। "
"আরে ভাবি এইসবের কি দরকার ছিলো, আমি খুব দুঃখিত ভাবি আসলে আমার একটা কাজ পড়ে গিয়েছিলো যার কারণে আমি বাইরে বেরিয়ে যে
দেখবো কি হচ্ছে সে সময়টা পাইনি। আপনি এসেছেন খুব ভালো লাগলো। "
"আরে না না কি যে বলেন না ভাবি কোনো সমস্যা নেই। ভাবি ভাইকে দেখছি না। "
"উনি এখনও ফেরেননি অফিসে গিয়েছে। এইতো একটু পড়ে এসে পড়বে।"
"বাহ্ খুব ভালো। আর পরিবারে কে আছে ভাবি?"
"আর আমি আর আমার এই মেয়ে আরেকটা মেয়ে আছে ও একটু নানুর বাসায় গিয়েছে কিছুদিনে মধ্যে এসে পড়বে।"
মহিলা সায়মাকে ডাক দিলেন, সায়মা মহিলার কাছে গিয়ে বসলো, মহিলা সায়মার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,
"নাম কি মা তোমার?"
"সায়মা।"
"বেশ সুন্দর নাম। শোনো আমার কোনো মেয়ে নেই। তাই তোমাকে আমি কিন্তু তুমি বলবো না আমি কিন্তু তোমাকে তুই বলবো, তুমি না হয় আজকে থেকে আমার মেয়ে।"
"আচ্ছা আন্টি।"
সায়মা সেখান থেকে বিদায় নিয়ে নিজের রুমে আসলো। ভারী হাসিখুশি মানুষ, খুব তাড়াতাড়ি কাউকে আপন করে নিতে পারে যা সচারচর
এখন দেখা যায় না।
সেলিনা চা নিয়ে আসেন , এবং মুহূর্তেই দুজনের মধ্যে প্রাণখোলা আলাপ জমে ওঠে। মহিলার নাম ফারজানা খান। সদ্য ফ্ল্যাট কিনে উঠেছেন। স্বামী ব্যবসায়ী, ছেলে ইউনিভার্সিটিতে পড়ায়।
"বাহ্ আমার মেয়েটাও এইবার ইউনিভার্সিটি তে উঠলো। মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে।"
“তাই নাকি?” ফারজানা খুশি হয়ে বলেন, “আমার ছেলেও তো মনোবিজ্ঞানে শিক্ষক!”
তারপর জমে উঠে ধুমায়িত চায়ের কাপে আড্ডা।
________________________________________
পরদিন বিকেলে সেলিনা একটি খাবারের বাটি হাতে তুলে দেয় সায়মার হাতে।
“সায়মা তোর ফারজানা আন্টির বাসায় দিয়ে আয় তো। নতুন প্রতিবেশী, একটু আদর-আপ্যায়ন তো করতেই হয়।”
সায়মা বাটি নিয়ে গিয়ে দরজায় বেল দেয়। ফারজানা দরজা খুলে বলেন, “আরে, সায়মা! ভেতরে আয়।”
"আন্টি এই নিন মা আপনাদের জন্য পাঠালো।"
"তুই কি ভেতরে আসবি না নাকি বাইরে থেকে দিচ্ছিস ভেতরে আয়।"
সায়মা আর কথা বাড়ালো না সেও ফারজানার পেছনে গেলো। ফারজানা ড্রয়িং রুমে সায়মাকে বসালো। আর বললো,
"তুই একটু বস আমি আসছি।"
সায়মা সোফায় বসলো। সারাঘর দেখতে লাগলো। সারা ঘরে আভিজাত্যের ছোঁয়া । খুব সুন্দর করে ঘরটা গোছানো হয়েছে। বেশ সৌখিন এই পরিবার তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এইসব দেখছিলো এর মধ্যে চোখে আটকে যায় একটা ছবিতে ড্রয়িং রুমের দেয়ালে লাগানো বড়ো একটা ছবি। সে ছবিতে আঙ্কেল আন্টি সোফায় বসে আছে আর তারা পেছনে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে। এর মাঝে ফারাজানা ফিরে আসেন হাতে দুটো মিষ্টি নিয়ে।
সায়মা ফারজানাকে জিজ্ঞেস করে
“আন্টি এই ছবিতে... এটা কি... রাশেদ স্যার?” কণ্ঠ কাঁপে সায়মার।
“হ্যাঁ, ও-ই আমার ছেলে। তুই কি ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে পড়িস? "
সায়মা শুধু মাথা দোলায়। ফারাজানা হেসে দেয়,
"তাহলে ওকেই তুই ক্লাসে পেয়েছিস!”
ফারজানা খুশি হয়ে বলেন, “বাহ! তাহলে তো আরও ভালো হলো। ও তো খুব সিরিয়াস, কিন্তু ভেতরে ভেতরে খুব নরম মন।”
সায়মা একটা মুচকি হাসি দিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে।
ঢাকার আকাশ সেদিন ভারী মেঘে ঢাকা। এই হুট করে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে জানালায়। সায়মা চাটা , ব্যাগ সব ঠিকঠাক করে বেরোয় ভার্সিটি রা উদ্দেশে, কিন্তু বেরিয়ে না কোনো রিকশা পাচ্ছে না কোনো, সিএনজী, এখন কি হবে আজকেও যদি লেট্ হয়, খুব ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে মিস করতে চাইছে না। কি করবে কি করবে যখন ভাবছিলো, তখন সামনে একটা কালো এসে থামলো।
থামার পর সাথে সাথে দরজা খুলে গেল,
সায়মা অবাক আর কেও না রাশেদ বসে আছে গাড়ির ভেতর। সায়মা মনে মনে বলছে,
"এই আপদ আবার কোথায় থেকে আসলো?"
রাশেদ গাড়ি থেকেই বললো,
"ভার্সিটি যাচ্ছ?"
সায়মা শুধু মাথা দুলায়। রাশেদ বলে,
"উঠে পরো।"
"আরে না না স্যার আপনি যান আমি এই একটা সি এন জী এসে পড়বো।"
রাশেদের মুখে মনে হয় যেন মেঘ করল, গমগমে ভারী গলায় বলল,
"আমি এক কথা দুই বার বলতে পছন্দ করি না।"
সায়মা আর কি করবে অগত্যা উঠতেই হলো।
গাড়িতে বসে সায়মা চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। বৃষ্টির ফোঁটা গ্লাসে গড়িয়ে পড়ছে, আর তার মনের ভেতর কী এক অদ্ভুত সাড়া।
“আপনার উত্তরটা খুব সুন্দর ছিল গতকাল,” রাশেদ বলেন হঠাৎ। “তাতে অনেক ভাবনার খোরাক আছে।”
সায়মা গলার স্বর নিচু করে বলে, “আমি আসলে সঠিক উত্তর দিতে পারব কিনা, জানতাম না।”
“সঠিক কি ভুল, সেটার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ তুমি কী ভাবছো—সেটা,” রাশেদ বলেন।
সায়মা আর কিছু বলতে পারে না। তার ভেতরে ঢেউ ওঠে। হয়তো এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হতে চলেছে।
ভার্সিটির গেটে পৌঁছে তারা একসঙ্গে হাঁটছে। দূরে দাঁড়িয়ে তানিয়া চোখ গোল গোল করে বলল, “তুই আর স্যার! একসাথে?”
“আসলে... উনি কাছেই থাকেন তো,” সায়মা ফিসফিস করে।
“বৃষ্টি না রোমান্স?” তানিয়া বলে চোখ টিপে।
“পাগল!” সায়মা লজ্জায় হেসে ফেলে।
ক্লাসে ঢুকেই রাশেদ আবার সেই কঠিন রূপে ফিরে যান। কিন্তু সায়মার মনে একটা প্রশ্ন গেঁথে যায়—এই মানুষটা তার জীবনের গল্পে ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে?
প্রথম গল্প লিখছি তো, তাই জানি না কেমন হচ্ছে, আপনারা তাই দোয়া করে জানাবেন কেমন হচ্ছে। ভালো লাগুক মন্দ লাগুক জানাবেন এই আশা করবো
এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোনো মতামত থাকে জানাতে ভুলবেন না। আমাকে টেলিগ্রাম এ এসএমএস দিতে পারেন @Clasher_1234 এই নামে। আপনাদের এসএমএস এ আমি উৎসাহ পাই। তাই আমাকে বেশি বেশি করে উৎসাহ দিবেন এই আশা করি।