18-04-2025, 02:56 AM
৬
নাস্তা করেই নীলয়ের বাবা আর দেরি করেনি , নীলয় বলেছিলো নিজে গাড়ি করে দিয়ে আসবে , কিন্তু ওর বাবা রাজি হয়নি । নীলয় যেখানে থাকে সেখান থেকে প্রায় দু ঘণ্টার পথ যেখানে ওর বাবা কাজ করবে, কলেজ থেকেই থাকার ব্যাবস্থা করেছে । তাই ওনার কোন সমস্যা হবে না । বরং নীলয়ের কাছে থাকলেই প্রতিদিন প্রায় দু ঘণ্টা করে চার ঘণ্টা রাস্তায় ব্যয় হবে । তাই নীলয় ও জরাজুরি করেনি ।
আজ নীলয়ে অফিসে প্রায় দু ঘণ্টা লেত করে গেলো । যাওয়ার আগে মিরাকে ডেকে দিয়ে গেলো । আর ওর জন্য কিছু খাবার এনে রেখে গেলো । প্রয়োজন হলে কল করতেও বলে দিলো । লাঞ্চের কথা নিচে রেস্টুরেন্টে বলে গেলো , যেন দুপুর দুটোর সময় দিয়ে যায় ।
সন্ধার দিকে নীলয় আজকে একটু তারাতারি অফিস থেকে বেড়িয়ে গেলো । নিজের টিম কে খুব ভালো করে সব কিছু ব্রিফ করে দিয়েছে তার পর ও যদি কোন দরকার হয় তবে ফোনে যোগাযোগ করতে বলে দিলো । বাসায় যখন পৌছুলো তখন প্রায় পৌনে সাতটা বাজে । নীলয়ের কাছে গেটের চাবি থাকায় কলিং বেল বাজালো না ।
মিরা টিভি দেখছিলো , হাতে কফির মগ। “ কিরে একা একা বোর হচ্ছিস নাকি রে?”
হঠাত দরজা খোলায় মিরা একটু চমকেই উঠেছিলো , টি শার্ট বুকের দিকে একটু ফাঁকা করে বুকে থুতু ছিটিয়ে বলল “ এই তুই এমন ভুতের মতন দরজা খুলবিনাতো ভাইয়া , আমি যতদিন আছি কলিং বেল চাপবি বুঝলি”
নীলয় হাসল , দেখলো টিভিতে একটা হরর সেনেমা চলছে । হয়তো এই জন্যই একটু ভয় পেয়েছে মিরা।
“ তুই কি সব সময় এতো দেরি কইরা বাসায় আসিস?” মিরা জিজ্ঞাস করলো , ততক্ষনে নীলয় ও এসে বসেছে । বসেই ওর চোখ গেলো মিরার উরুর দিকে , একটা বেশ ছোট শর্টস পরছে মিরা যা হাটুর অনেক উপরেই শেষ হয়ে গেছে । ফর্সা সুগটিত উরু , বেশ সুডোল , লোমের চিহ্ন নেই কোথাও । একটা ঢোক গিলল নীলয় । মিরা বেশ খলামেলা পোশাক পরে আজকাল , আগে এমন ছিলো না ।
তবে বেশিক্ষণ তাকালো না নীলয় । মিরা বুঝতে পারলে ব্যাপারটা বিব্রতকর হবে । তাই চোখ টিভির দিকে ফিরিয়ে নিয়ে উত্তর দিলো “ আরে না আজকে তো তারাতারি ফিরলাম , বেশিরভাগ সময় ই নয়টা দশটা বাজে”
“ বলিস কি রে , তাইলে আমি এতক্ষণ একলা একলা কি করবো , তুই সারাদিন অফিস করবি আর বাড়িতে টিভি দেখুম”
নীলয় নিজের ভুল বুঝতে পারলো , ও এখানে মিরাকে এনেছে যেন ওকে এখানে স্থায়ী ভাবে রেখে দেয়া যায় । আর প্রথম দিনেই ওকে বোর করে ফেলল । নীলয় দ্রুত বলল “ আরে না , আমি ছুটি নিসি দুইদিন, আর এখন চল রেডি হইয়া নে , তোরে বাইরে ডিনার করাই , তারপর আমরা রাতে ঘুরাঘুরি করবো , এইটা বড় শহর বুঝলি , এইখানে সারা রাত্র ঘুরাঘুরি করার অনেক জায়গা আছে, একেবার ডিনার কইরা , ঘুরাঘুরি কইরা একদম ১২ টার পর বাসায় আসবো”
“ ১২ টার পর কোন রাত্র হইলো” মিরা তাচ্ছিল্য করে বলল , তারপর বলল “ ছোট ছোট শহরেও আজকাল রাত ১২ টা কোন ব্যাপার না বুঝলি”
মিরার মুখে এই কথা শুনে নীলয়ের বাবার বলা কথা গুলো মনে পরে গেলো , মিরা কে জিজ্ঞাস করতে গিয়েও করলো না যে ও কত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতো । তার বদলে হাঁসতে হাঁসতে বলল , “ঠিক আছে যা আগে রেডি তো হ”
বোঝা গেলো মিরা বেশ খুশি হয়েছে । প্রায় একরকম লাফ দিয়ে উঠে নিজের ঘরের দিকে প্রায় নাচের ভঙ্গিমায় হেঁটে গেলো ,অনেক কষ্ট করেও নীলয় নিজেকে মিরার পশ্চাৎ দেশ ফলো করা থেকে বিরত রাখতে পারলো না। এবং নিজের মন কে এও বলা থেকে বিরত রাখতে পারলো না যে ইসসস what an ass।
নীলয় নিজেও মুখে পানি ঝাপটা দিয়ে একটা পলো শার্ট আর জিন্স পরে নিলো । অফিসের পোষাকে তো আর বাইরে যাওয়া যায় না ।
নীলয় ভেবেছিলো মিরা সকালের মত খোলামেলা কিছু পরবে । কিন্তু সেরকম কিছু পরেনি মিরা , একটা ঢিলেঢালা বেশ বড় সাইজের টি শার্ট আর তারচেও ঢিলেঢালা জিন্স পরে বের হয়ে এলো । নীলয়ের মনে হলো ও মনে মনে একটু ডিজেপয়েন্টেড হয়েছে। কিন্তু অতি দ্রুত মন থেকে সেই চিন্তা বের করে দিলো। ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো এলমেলো করে রাখা । ঠোঁটে হালকা কিছু মেখেছে , এছাড়া তেমন কোন প্রসাধনি ব্যাবহার করেনি । তবে বেশ দামি পারফিউম ব্যাবহার করেছে । যা মিরার হাত খরচা থেকে কেনা সম্ভব না । এমন কি ওদের বাবার সেলারি থেকেও না । নীলয় বুঝতে পারলো এটা জায়েদ গিফট করেছে । তবে যাই পরুক না কেনো মিরা কে সবসময় ই সুন্দর দেখায় ।
গাড়ি তে উঠে নীলয় জিজ্ঞাস করলো “কি খাবি বল?”
“ তুই ই ডিসাইড কর , তোর এইখানে আমি তো মেহমান”
“ আচ্ছা ঠিক আছে চল”
প্রায় আধা ঘণ্টা পর নীলয় একটা বেশ ভালো রেস্তরার সামনে গাড়ি এনে রাখলো । গাড়ি থেকে বের হতেই পোড়া মাংসের গন্ধ এসে লাগলো ওদের নাকে ।
“ ওয়াও ব্রো , নাইস চয়েস , আমাদের ঐখানে এরকম স্টেক এর বেবস্থা নাই, গন্ধেই পেটের ভিতর পোকা গুলা কিলবিল শুরু করসে”
মনে মনে নীলয় বেশ খুশি হলো , ভাবল এইতো মাত্র শুরু , এই কয়দিকে মিরাকে এমন ইম্প্রেস করতে হবে যেন নিজে থেকেই এই শহরে থেকে যায় ।
স্টেক হাউজ টা বেশ নামকরা আর এক্সপেন্সিভ , নীলয় ইচ্ছা করেই মিরা কে এখানে নিয়ে এসেছে । মিরার পারফিউম কত এক্সপেন্সিভ সেটা বোঝার পর থেকে নীলয় বুঝতে পেরেছে যে মিরা কে এখানে রাখতে হলো ওকে বোঝাতে হবে যে এখানে ও অনেক এক্সপেন্সিভ লাইফস্টাইল লিভ করতে পারবে ।
ভেতরে ঢুকে মিরা আরো বেশি এক্সাইটেড হলো । রেস্তরার এম্বিয়ান্স দেখার মত । ওরা দুজনে দুটো প্রাইম কাট রিব আই স্টেক অর্ডার করলো । মিরা কে দেখলে বোঝা যায় না তবে ও রেড মিট খুব পছন্দ করে। তবে নীলয় একটা ঝটকার মত খেলো যখন মিরা সাথে বিয়ার অর্ডার করলো । ওর কাছে মনে হলো বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে , কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই মিরা বলল
“ ডোন্ট বিহ্যাব লাইক ড্যাডি ব্রো , একটু আক্টু এইসব তো চলেই , আর এইখানে তো আমরা আমরাই”
গলার কাছে চলে আসা বড় ভাই সুলভ কথা গুলো ফের গিলে ফেললো নীলয় । মিরার ফ্রেন্ড হতে হবে ওকে , বড় ভাই নয় । তবে প্রস্ন করলো “এসব কবে থেইকা শুরু করলি” যতটুকু সম্ভব ফ্রেন্ডলি ভয়েস রাখার চেষ্টা করলো নীলয় ।
তবে মিরা কোন উত্তর দিলো না , বরং পাল্টা প্রস্ন করলো ভ্রু নাচিয়ে “ ক্যান তুই কি এইসব করিস না?”
নীলয় উত্তরে না বলতে যাচ্ছিলো , কিন্তু তার আগেই মিরা নীলয়ের দিকে আঙ্গুল তাক করে বল্লো “ এই সত্যি বলবি , মিথ্যা কথা বইলা ভালো ছেলে সাজার দরকার নাই”
নীলয় কি বলবে বুঝে ওঠার আগেই , মিরা টেবিল চাপড়ে , উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলো , আর বলল “ব্রো ডোন্ট টেল মিঃ টু বিলিভ দিস শিট”
নীলয় অবশ্য কিছুই বলল না সুধু কাঁধ ঝাকালো আর হাসল “সত্যি বলছিস?তুই তো খুব ভালো পোলা হয়ে গেছিস রে”
“ আর তুই এমন দুষ্টু মাইয়া হইলি কিভাবে” নীলয় হাঁসতে হাঁসতে জিজ্ঞাস করলো
“ ক্যান একটু আধটু এঞ্জয় করলেই কি মানুষ দুষ্টু হয়ে যায় নাকি?” পাল্টা প্রস্ন করলো মিরা , কিন্তু ওইদিকে আরে গেলো না নীলয় । সুধু বল্লো “ না আমি সেইটা বলি নাই , তবে বাবার সাথে থাইকা এইসব করা, আসলে চিন্তা করা যায় না… নিতিবান প্রফেসর সাহেব , কড়া শাসনে ছেলে মেয়ে মানুষ করার পক্ষে” শেষের কথা গুলো বলার সময় নীলয় হাত নেড়ে বেশ কৌতুক পূর্ণ ভঙ্গি করে বলল ।
“ আরে না মায়ের পর বাবা আর ওই রকম নাই , তুই ও এখন বাবার সাথে থাকতে পাড়বি নিশ্চিন্তে”
মিরার শেষের কোথায় ওরা দুজনেই হেসে ফেলল । মিরার চাপাচাপিতে নীলয় ও বিয়ার নিলো , কিন্তু শেষ করলো না , অবশ্য নীলয়ের ভালো ও লাগেনি । অজুহাত দিলো গাড়ি চালাতে হবে বলে । আসলে মিরার সামনে প্রকাশ করতে চায়নি যে ওর পক্ষে এই তেতো জিনিস খাওয়া সম্ভব না । নীলয়ের মনে হয়েছে এটা বললে মিরা ওকে বোরিং ভাববে । তবে যেভাবে হাসি তামাশার মাঝে ওরা ডিনার শেষ করলো তাতে নীলয়ের কাছে মনেই হয়নি যে ওরা প্রায় চার বছর যাবত একপ্রকার যোগাযোগ ই করে না ।
ডিনার শেষে নীলয় মিরা কে কলেজ পাড়ায় নিয়ে এলো । এই এলাকাটা রাতেও জমজমাট থাকে । কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা অনেক রাত পর্যন্ত এখানে আড্ডা দেয় । অনেক রাত পর্যন্ত চায়ের দোকান খোলা থাকে ।
মুখে না বললেও মিরা বেশ অবাক হয়েছে এখানকার পরিবেশ দেখে , সেটা ওর আচরনেই টের পেলো নীলয় । এই জিনিস্টাই নীলয় চাচ্ছিলো , ও চাচ্ছিলো মিরা এখানকার পরিবেশ দেখুক । এমন নয় যে নীলয় চাইবে মিরা এখানে থেকে রাতবিরাত বাইরে আড্ডা দিক । তবে লোভ দেখাতে কোন সমস্যা দেখছে না ও । ওর ইচ্ছা জায়দের মত ছেলের হাত থেকে রক্ষা পাক মিরা ।
“ ওয়াও পরিবেশটা তো দারুন” কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর মিরা স্বীকার করতে বাধ্য হলো ।
“হুম” ছোট্ট করে উত্তর দিলো নীলয় ,
“ আমাদের ঐখানে এইরকম কিছু নাই , সন্ধার পর কলেজ ফাঁকা” মিরাই কথা বলে যেতে লাগলো।
পুরো কলেজ পাড়া ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালো নীলয় ওকে । কোথাও একদল ছেলে মেয়ে বসে নিজদের মাঝে আড্ডা দিচ্ছে । কোথাও বা দল বেধে গোল করে বসে গান গাইছে । কেউ কেউ চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে । কোথাও তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে । পুরো ঘণ্টা তিনেক ঘোরাঘুরির পর মিরা বলল ওর পা ব্যাথা করছে । তাই এবার বাড়ীর উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠলো ওরা ।
মনে মনে নীলয় বেশ খুশি । যে কারনে এখানে এনেছিলো মিরা কে সেটা সার্থক হয়েছে । মিরা নিজেই বলেছে এখানে পড়তে পারলে খুব ভালো লাগতো ওর ।
ঘরে ঢুকে মিরা সোজা ওর রুমে চলে গেলো , যাওয়ার সময় হাত তুলে গুড নাইট আর থায়ঙ্ক ইউ এই দুটো শব্দ বলে গেলো । নীলয় ও ড্রেস চেঞ্জ করে শোয়ার প্রস্তুতি নিয় বিছানায় চলে এলো পনেরো মিনিট এর মাথায় । বেশ ক্লান্ত লাগছে ওর , খুব সকালে উঠে স্টেশনে যাওয়া , তারপর সারাদিন অফিস করা , এর পর রাতের বেলায় ঘুরাঘুরি । বিছানায় শুয়ে অবশ্য সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লো না । আগামিকাল মিরাকে শপিঙয়ে নিয়ে যাওয়ার প্লান করলো । এখানকার সপিং মল দেখলে মিরার পিলে চমকে যাবে বলে নীলয়ের বিশ্বাস ।
নাস্তা করেই নীলয়ের বাবা আর দেরি করেনি , নীলয় বলেছিলো নিজে গাড়ি করে দিয়ে আসবে , কিন্তু ওর বাবা রাজি হয়নি । নীলয় যেখানে থাকে সেখান থেকে প্রায় দু ঘণ্টার পথ যেখানে ওর বাবা কাজ করবে, কলেজ থেকেই থাকার ব্যাবস্থা করেছে । তাই ওনার কোন সমস্যা হবে না । বরং নীলয়ের কাছে থাকলেই প্রতিদিন প্রায় দু ঘণ্টা করে চার ঘণ্টা রাস্তায় ব্যয় হবে । তাই নীলয় ও জরাজুরি করেনি ।
আজ নীলয়ে অফিসে প্রায় দু ঘণ্টা লেত করে গেলো । যাওয়ার আগে মিরাকে ডেকে দিয়ে গেলো । আর ওর জন্য কিছু খাবার এনে রেখে গেলো । প্রয়োজন হলে কল করতেও বলে দিলো । লাঞ্চের কথা নিচে রেস্টুরেন্টে বলে গেলো , যেন দুপুর দুটোর সময় দিয়ে যায় ।
সন্ধার দিকে নীলয় আজকে একটু তারাতারি অফিস থেকে বেড়িয়ে গেলো । নিজের টিম কে খুব ভালো করে সব কিছু ব্রিফ করে দিয়েছে তার পর ও যদি কোন দরকার হয় তবে ফোনে যোগাযোগ করতে বলে দিলো । বাসায় যখন পৌছুলো তখন প্রায় পৌনে সাতটা বাজে । নীলয়ের কাছে গেটের চাবি থাকায় কলিং বেল বাজালো না ।
মিরা টিভি দেখছিলো , হাতে কফির মগ। “ কিরে একা একা বোর হচ্ছিস নাকি রে?”
হঠাত দরজা খোলায় মিরা একটু চমকেই উঠেছিলো , টি শার্ট বুকের দিকে একটু ফাঁকা করে বুকে থুতু ছিটিয়ে বলল “ এই তুই এমন ভুতের মতন দরজা খুলবিনাতো ভাইয়া , আমি যতদিন আছি কলিং বেল চাপবি বুঝলি”
নীলয় হাসল , দেখলো টিভিতে একটা হরর সেনেমা চলছে । হয়তো এই জন্যই একটু ভয় পেয়েছে মিরা।
“ তুই কি সব সময় এতো দেরি কইরা বাসায় আসিস?” মিরা জিজ্ঞাস করলো , ততক্ষনে নীলয় ও এসে বসেছে । বসেই ওর চোখ গেলো মিরার উরুর দিকে , একটা বেশ ছোট শর্টস পরছে মিরা যা হাটুর অনেক উপরেই শেষ হয়ে গেছে । ফর্সা সুগটিত উরু , বেশ সুডোল , লোমের চিহ্ন নেই কোথাও । একটা ঢোক গিলল নীলয় । মিরা বেশ খলামেলা পোশাক পরে আজকাল , আগে এমন ছিলো না ।
তবে বেশিক্ষণ তাকালো না নীলয় । মিরা বুঝতে পারলে ব্যাপারটা বিব্রতকর হবে । তাই চোখ টিভির দিকে ফিরিয়ে নিয়ে উত্তর দিলো “ আরে না আজকে তো তারাতারি ফিরলাম , বেশিরভাগ সময় ই নয়টা দশটা বাজে”
“ বলিস কি রে , তাইলে আমি এতক্ষণ একলা একলা কি করবো , তুই সারাদিন অফিস করবি আর বাড়িতে টিভি দেখুম”
নীলয় নিজের ভুল বুঝতে পারলো , ও এখানে মিরাকে এনেছে যেন ওকে এখানে স্থায়ী ভাবে রেখে দেয়া যায় । আর প্রথম দিনেই ওকে বোর করে ফেলল । নীলয় দ্রুত বলল “ আরে না , আমি ছুটি নিসি দুইদিন, আর এখন চল রেডি হইয়া নে , তোরে বাইরে ডিনার করাই , তারপর আমরা রাতে ঘুরাঘুরি করবো , এইটা বড় শহর বুঝলি , এইখানে সারা রাত্র ঘুরাঘুরি করার অনেক জায়গা আছে, একেবার ডিনার কইরা , ঘুরাঘুরি কইরা একদম ১২ টার পর বাসায় আসবো”
“ ১২ টার পর কোন রাত্র হইলো” মিরা তাচ্ছিল্য করে বলল , তারপর বলল “ ছোট ছোট শহরেও আজকাল রাত ১২ টা কোন ব্যাপার না বুঝলি”
মিরার মুখে এই কথা শুনে নীলয়ের বাবার বলা কথা গুলো মনে পরে গেলো , মিরা কে জিজ্ঞাস করতে গিয়েও করলো না যে ও কত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতো । তার বদলে হাঁসতে হাঁসতে বলল , “ঠিক আছে যা আগে রেডি তো হ”
বোঝা গেলো মিরা বেশ খুশি হয়েছে । প্রায় একরকম লাফ দিয়ে উঠে নিজের ঘরের দিকে প্রায় নাচের ভঙ্গিমায় হেঁটে গেলো ,অনেক কষ্ট করেও নীলয় নিজেকে মিরার পশ্চাৎ দেশ ফলো করা থেকে বিরত রাখতে পারলো না। এবং নিজের মন কে এও বলা থেকে বিরত রাখতে পারলো না যে ইসসস what an ass।
নীলয় নিজেও মুখে পানি ঝাপটা দিয়ে একটা পলো শার্ট আর জিন্স পরে নিলো । অফিসের পোষাকে তো আর বাইরে যাওয়া যায় না ।
নীলয় ভেবেছিলো মিরা সকালের মত খোলামেলা কিছু পরবে । কিন্তু সেরকম কিছু পরেনি মিরা , একটা ঢিলেঢালা বেশ বড় সাইজের টি শার্ট আর তারচেও ঢিলেঢালা জিন্স পরে বের হয়ে এলো । নীলয়ের মনে হলো ও মনে মনে একটু ডিজেপয়েন্টেড হয়েছে। কিন্তু অতি দ্রুত মন থেকে সেই চিন্তা বের করে দিলো। ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো এলমেলো করে রাখা । ঠোঁটে হালকা কিছু মেখেছে , এছাড়া তেমন কোন প্রসাধনি ব্যাবহার করেনি । তবে বেশ দামি পারফিউম ব্যাবহার করেছে । যা মিরার হাত খরচা থেকে কেনা সম্ভব না । এমন কি ওদের বাবার সেলারি থেকেও না । নীলয় বুঝতে পারলো এটা জায়েদ গিফট করেছে । তবে যাই পরুক না কেনো মিরা কে সবসময় ই সুন্দর দেখায় ।
গাড়ি তে উঠে নীলয় জিজ্ঞাস করলো “কি খাবি বল?”
“ তুই ই ডিসাইড কর , তোর এইখানে আমি তো মেহমান”
“ আচ্ছা ঠিক আছে চল”
প্রায় আধা ঘণ্টা পর নীলয় একটা বেশ ভালো রেস্তরার সামনে গাড়ি এনে রাখলো । গাড়ি থেকে বের হতেই পোড়া মাংসের গন্ধ এসে লাগলো ওদের নাকে ।
“ ওয়াও ব্রো , নাইস চয়েস , আমাদের ঐখানে এরকম স্টেক এর বেবস্থা নাই, গন্ধেই পেটের ভিতর পোকা গুলা কিলবিল শুরু করসে”
মনে মনে নীলয় বেশ খুশি হলো , ভাবল এইতো মাত্র শুরু , এই কয়দিকে মিরাকে এমন ইম্প্রেস করতে হবে যেন নিজে থেকেই এই শহরে থেকে যায় ।
স্টেক হাউজ টা বেশ নামকরা আর এক্সপেন্সিভ , নীলয় ইচ্ছা করেই মিরা কে এখানে নিয়ে এসেছে । মিরার পারফিউম কত এক্সপেন্সিভ সেটা বোঝার পর থেকে নীলয় বুঝতে পেরেছে যে মিরা কে এখানে রাখতে হলো ওকে বোঝাতে হবে যে এখানে ও অনেক এক্সপেন্সিভ লাইফস্টাইল লিভ করতে পারবে ।
ভেতরে ঢুকে মিরা আরো বেশি এক্সাইটেড হলো । রেস্তরার এম্বিয়ান্স দেখার মত । ওরা দুজনে দুটো প্রাইম কাট রিব আই স্টেক অর্ডার করলো । মিরা কে দেখলে বোঝা যায় না তবে ও রেড মিট খুব পছন্দ করে। তবে নীলয় একটা ঝটকার মত খেলো যখন মিরা সাথে বিয়ার অর্ডার করলো । ওর কাছে মনে হলো বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে , কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই মিরা বলল
“ ডোন্ট বিহ্যাব লাইক ড্যাডি ব্রো , একটু আক্টু এইসব তো চলেই , আর এইখানে তো আমরা আমরাই”
গলার কাছে চলে আসা বড় ভাই সুলভ কথা গুলো ফের গিলে ফেললো নীলয় । মিরার ফ্রেন্ড হতে হবে ওকে , বড় ভাই নয় । তবে প্রস্ন করলো “এসব কবে থেইকা শুরু করলি” যতটুকু সম্ভব ফ্রেন্ডলি ভয়েস রাখার চেষ্টা করলো নীলয় ।
তবে মিরা কোন উত্তর দিলো না , বরং পাল্টা প্রস্ন করলো ভ্রু নাচিয়ে “ ক্যান তুই কি এইসব করিস না?”
নীলয় উত্তরে না বলতে যাচ্ছিলো , কিন্তু তার আগেই মিরা নীলয়ের দিকে আঙ্গুল তাক করে বল্লো “ এই সত্যি বলবি , মিথ্যা কথা বইলা ভালো ছেলে সাজার দরকার নাই”
নীলয় কি বলবে বুঝে ওঠার আগেই , মিরা টেবিল চাপড়ে , উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলো , আর বলল “ব্রো ডোন্ট টেল মিঃ টু বিলিভ দিস শিট”
নীলয় অবশ্য কিছুই বলল না সুধু কাঁধ ঝাকালো আর হাসল “সত্যি বলছিস?তুই তো খুব ভালো পোলা হয়ে গেছিস রে”
“ আর তুই এমন দুষ্টু মাইয়া হইলি কিভাবে” নীলয় হাঁসতে হাঁসতে জিজ্ঞাস করলো
“ ক্যান একটু আধটু এঞ্জয় করলেই কি মানুষ দুষ্টু হয়ে যায় নাকি?” পাল্টা প্রস্ন করলো মিরা , কিন্তু ওইদিকে আরে গেলো না নীলয় । সুধু বল্লো “ না আমি সেইটা বলি নাই , তবে বাবার সাথে থাইকা এইসব করা, আসলে চিন্তা করা যায় না… নিতিবান প্রফেসর সাহেব , কড়া শাসনে ছেলে মেয়ে মানুষ করার পক্ষে” শেষের কথা গুলো বলার সময় নীলয় হাত নেড়ে বেশ কৌতুক পূর্ণ ভঙ্গি করে বলল ।
“ আরে না মায়ের পর বাবা আর ওই রকম নাই , তুই ও এখন বাবার সাথে থাকতে পাড়বি নিশ্চিন্তে”
মিরার শেষের কোথায় ওরা দুজনেই হেসে ফেলল । মিরার চাপাচাপিতে নীলয় ও বিয়ার নিলো , কিন্তু শেষ করলো না , অবশ্য নীলয়ের ভালো ও লাগেনি । অজুহাত দিলো গাড়ি চালাতে হবে বলে । আসলে মিরার সামনে প্রকাশ করতে চায়নি যে ওর পক্ষে এই তেতো জিনিস খাওয়া সম্ভব না । নীলয়ের মনে হয়েছে এটা বললে মিরা ওকে বোরিং ভাববে । তবে যেভাবে হাসি তামাশার মাঝে ওরা ডিনার শেষ করলো তাতে নীলয়ের কাছে মনেই হয়নি যে ওরা প্রায় চার বছর যাবত একপ্রকার যোগাযোগ ই করে না ।
ডিনার শেষে নীলয় মিরা কে কলেজ পাড়ায় নিয়ে এলো । এই এলাকাটা রাতেও জমজমাট থাকে । কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা অনেক রাত পর্যন্ত এখানে আড্ডা দেয় । অনেক রাত পর্যন্ত চায়ের দোকান খোলা থাকে ।
মুখে না বললেও মিরা বেশ অবাক হয়েছে এখানকার পরিবেশ দেখে , সেটা ওর আচরনেই টের পেলো নীলয় । এই জিনিস্টাই নীলয় চাচ্ছিলো , ও চাচ্ছিলো মিরা এখানকার পরিবেশ দেখুক । এমন নয় যে নীলয় চাইবে মিরা এখানে থেকে রাতবিরাত বাইরে আড্ডা দিক । তবে লোভ দেখাতে কোন সমস্যা দেখছে না ও । ওর ইচ্ছা জায়দের মত ছেলের হাত থেকে রক্ষা পাক মিরা ।
“ ওয়াও পরিবেশটা তো দারুন” কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর মিরা স্বীকার করতে বাধ্য হলো ।
“হুম” ছোট্ট করে উত্তর দিলো নীলয় ,
“ আমাদের ঐখানে এইরকম কিছু নাই , সন্ধার পর কলেজ ফাঁকা” মিরাই কথা বলে যেতে লাগলো।
পুরো কলেজ পাড়া ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালো নীলয় ওকে । কোথাও একদল ছেলে মেয়ে বসে নিজদের মাঝে আড্ডা দিচ্ছে । কোথাও বা দল বেধে গোল করে বসে গান গাইছে । কেউ কেউ চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে । কোথাও তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে । পুরো ঘণ্টা তিনেক ঘোরাঘুরির পর মিরা বলল ওর পা ব্যাথা করছে । তাই এবার বাড়ীর উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠলো ওরা ।
মনে মনে নীলয় বেশ খুশি । যে কারনে এখানে এনেছিলো মিরা কে সেটা সার্থক হয়েছে । মিরা নিজেই বলেছে এখানে পড়তে পারলে খুব ভালো লাগতো ওর ।
ঘরে ঢুকে মিরা সোজা ওর রুমে চলে গেলো , যাওয়ার সময় হাত তুলে গুড নাইট আর থায়ঙ্ক ইউ এই দুটো শব্দ বলে গেলো । নীলয় ও ড্রেস চেঞ্জ করে শোয়ার প্রস্তুতি নিয় বিছানায় চলে এলো পনেরো মিনিট এর মাথায় । বেশ ক্লান্ত লাগছে ওর , খুব সকালে উঠে স্টেশনে যাওয়া , তারপর সারাদিন অফিস করা , এর পর রাতের বেলায় ঘুরাঘুরি । বিছানায় শুয়ে অবশ্য সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লো না । আগামিকাল মিরাকে শপিঙয়ে নিয়ে যাওয়ার প্লান করলো । এখানকার সপিং মল দেখলে মিরার পিলে চমকে যাবে বলে নীলয়ের বিশ্বাস ।