16-04-2025, 02:11 AM
(This post was last modified: 16-04-2025, 02:12 AM by BDSM lover. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
শাহবাগের সিগন্যালে রিকশার ওপর বসে সায়মা আহমেদের মনটা ছটফট করছে। জ্যামের মাঝে সময় যেন গলার কাছে এসে আটকে গেছে। রিকশাওয়ালার প্যাডেলের শব্দ আর রাস্তার হট্টগোলের মাঝে সে নিজের হৃৎপিণ্ডের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগে আজ তার প্রথম ক্লাস, আর সে লেট হতে চলেছে। মেট্রো রেলের কার্ড ফেলে আসার জন্য নিজেকে বারবার গালি দিচ্ছে। “কেন যে তাড়াহুড়ো করলাম!” মনে মনে হাহাকার করে সে।
অবশেষে সিগন্যাল খোলে। রিকশাওয়ালা জোরে প্যাডেল মারে। সায়মা ব্যাগটা শক্ত করে ধরে বলে, “মামা , একটু তাড়াতাড়ি করেন, প্লিজ।”
“আপা, এই জ্যামে আর কতটুকু তাড়াতাড়ি করব?” রিকশাওয়ালার গলায় অসহায়ত্ব।
ক্যাম্পাসে পৌঁছে সায়মা প্রায় দৌড়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের দিকে যায়। ক্লাসরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার বুক কাঁপছে। ভেতর থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে, স্যার চলে এসেছেন এবং সে কিছুক্ষন আগেই ক্লাসে ঢুকেছে। সায়মা ভয় নিয়েও
দরজায় হালকা টোকা দেয় সে।
সবায় দরজার দিকে তাকায়, একটা সাদা সুতির সালোয়ার কামিজে মনে হয় সাক্ষাৎ কোনো পরী দাঁড়িয়ে আছে। ক্লাসের ছেলেরা সবাই হা করে তাকিয়ে আছে সায়মার দিকে কিন্তু সায়মার সে দিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সায়মা খেয়াল করেছে মানুষটার চোখে কমনীয়তা নেই, সেখানে আছে রুক্ষতা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই ব্যক্তি অনেক গম্ভীর।
"আপনি কে?আপনি কি এই ক্লাসের "
“হ্যা স্যার। আমি... সায়মা আহমেদ। মে আই কাম ইন, স্যার?” সায়মার গলা কেঁপে যায়।
“আসুন। তবে তাড়াতাড়ি। সময়ের কোনো দাম নেই নাকি আপনার?” কণ্ঠে বিরক্তি ঝরে পড়ছে।
সায়মা ক্লাসের ভেতর আসে । ক্লাসরুমে ত্রিশ-চল্লিশ জোড়া চোখ তার দিকে। সামনে দাঁড়ানো একজন লম্বা, সুগঠিত পুরুষ, পরনে ফরমাল শার্ট আর চোখে ধারালো দৃষ্টি। তিনি রাশেদ খান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের নতুন শিক্ষক। তার দৃষ্টি যেন সায়মার ভেতরটা পরীক্ষা করছে।
“মিস সায়মা আহমেদ, প্রথম ক্লাস, প্রথম দিন, আর আপনি লেট?” রাশেদের গলায় তিরস্কার।
“এটা কি আপনার জীবনের প্রতি দায়িত্বের নমুনা?”
“স্যার, আমি... মানে, জ্যাম ছিল... আর মেট্রোর কার্ড ফেলে এসেছি...” সায়মার কথা আটকে যায়। তার মনে হচ্ছে, সে যেন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে আর জাজ তাকে প্রশ্ন করছে।
“জ্যাম? কার্ড ফেলে আসা?” রাশেদ ভ্রু কুঁচকান। “এগুলো অজুহাত, মিস সায়মা। জীবন আপনাকে অজুহাতের জন্য অপেক্ষা করতে বলেনি। সময় একটা নদী, থামে না। আপনি কি নদীর স্রোতের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন না?”
সায়মার মাথা নিচু। “জি, স্যার। আমি দুঃখিত। এটা আর হবে না।”
“দেখি, আপনার কথা কতটুকু রাখেন।” রাশেদের গলা একটু নরম হয়, কিন্তু চোখে এখনও কঠোরতা। “বসুন।”
সায়মা তাড়াতাড়ি একটা খালি জায়গা খুঁজে বসে। তার পাশে বসা একটা মেয়ে, যার চোখে উষ্ণ হাসি, ফিসফিস করে বলে, “ঘাবরিও না স্যার একটু স্ট্রিক্ট, কিন্তু মনে হচ্ছে ভালো মানুষ। আমি তানিয়া। তানিয়া রহমান।”
সায়মা ক্ষীণ হাসি দেয়।
“থ্যাঙ্কস। আমি সায়মা।”
“ফার্স্ট ডে-ই এমন বকুনি খেলে , ভাবতেই পারছি না!” তানিয়ার গলায় হালকা হাসি।
তানিয়া মেয়েটা কে এক কথায় কিউট বলা যায়। আর কিছু না বলা গেলেও। গোলগাল সুন্দর একটা চেহারা, তানিয়া হাসলে ওর চোখ ও হাসে যা আরো সুন্দর লাগে দেখতে।
রাশেদ ক্লাসের দিকে তাকান।
“আমি রাশেদ খান। আপনাদের এই বছরের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক। আমি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজ থেকে ক্লিনিকাল সাইকোলজিতে পিএইচডি করেছি। আমি বিশ্বাস করি, মনোবিজ্ঞান শুধু বইয়ের পাতায় নয়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। আমি চাই, আপনারা এই ক্লাসে নিজেদের মনের গভীরে ডুব দেন।”
তিনি ব্ল্যাকবোর্ডে বড় করে লেখেন—নিয়ন্ত্রণ। তারপর ক্লাসের দিকে তাকান।
“আজ আমরা কথা বলব নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। মানুষের মন কেন নিয়ন্ত্রণের পেছনে ছোটে? কী এমন শক্তি আছে এই শব্দের মধ্যে?” রাশেদের গলায় উৎসাহ। “কেউ বলুন।”
একজন ছেলে হাত তোলে। “স্যার, নিয়ন্ত্রণ থাকলে আমরা জীবনের ওপর ক্ষমতা পাই। জিনিসগুলো ঠিকঠাক রাখতে পারি।”
রাশেদ মাথা নাড়েন। “ঠিক, কিন্তু এটা পৃষ্ঠের কথা। আরেকটু গভীরে যান। নিয়ন্ত্রণ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?”
তানিয়া হাত তোলে। “স্যার, নিয়ন্ত্রণ আমাদের নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়। যখন আমরা জানি কী হতে চলেছে, তখন ভয় কমে।”
“গুড। নিরাপত্তা একটা বড় ব্যাপার। কিন্তু এর পেছনেও কিছু আছে।” রাশেদের চোখ ক্লাসের ওপর ঘুরছে। হঠাৎ তার দৃষ্টি সায়মার ওপর থামে। “মিস সায়মা, আপনি কিছু বলতে চান?”
সায়মা চমকে ওঠে। তার বুকের ভেতরটা আবার কেঁপে ওঠে। তবু সে নিজেকে সামলে নেয়। গভীর নিশ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে বলতে শুরু করে।
“স্যার, আমার মনে হয়, মানুষ নিয়ন্ত্রণ চায় কারণ এটা তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ। নিয়ন্ত্রণ মানে শুধু জিনিস ঠিক রাখা নয়, এটা আমাদের নিজেদের গল্প লেখার ক্ষমতা। আমরা যখন কিছু নিয়ন্ত্রণ করি, তখন মনে হয় আমরা শুধু বেঁচে নেই, আমরা জীবনের দায়িত্ব নিচ্ছি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারালে...” সায়মা একটু থামে, তারপর বলে, “মনে হয় আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলছি। আমাদের গল্পটা আর আমাদের হাতে নেই।”
ক্লাসে একটা নিস্তব্ধতা নেমে আসে। সবাই সায়মার দিকে তাকিয়ে। রাশেদের চোখে একটা অদ্ভুত চমক। তিনি ধীরে ধীরে হাততালি দিতে শুরু করেন।
“ব্রিলিয়ান্ট। একদম ব্রিলিয়ান্ট।” তার গলায় প্রশংসা। “মিস সায়মা, আপনি ঠিক ধরেছেন। নিয়ন্ত্রণ আমাদের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে জড়িত। এটা আমাদের গল্পের কলম। আমরা যখন নিয়ন্ত্রণ করি, তখন আমরা নিজেদের মালিক হই ।”
তিনি ক্লাসের দিকে তাকান। “আসুন, সায়মার জন্য একটা বড় হাততালি। তার উত্তরটা সুন্দর হয়েছে ।”
ক্লাসে হাততালির শব্দ ওঠে। তানিয়া সায়মার কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলে, “বাহ্ ?
তুমি তো প্রথম ক্লাসেই সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলে দেখছি! ফার্স্ট ক্লাসেই ধামাকা!”
সায়মার মুখে লাজুক হাসি। তার ভেতরের ভয়টা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে।
রাশেদ আবার বলতে শুরু করেন। “সায়মার উত্তর আমাদের আজকের আলোচনার ভিত্তি হবে। মনোবিজ্ঞানে আমরা শিখি, নিয়ন্ত্রণ একটা মায়া হতে পারে। কিন্তু এই মায়া আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। প্রশ্ন হলো, আমরা কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি? আর কতটা নিয়ন্ত্রিত হই?”
তিনি ক্লাসের দিকে তাকান। “আরেকটা প্রশ্ন। নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কী কী ত্যাগ করি? কেউ বলুন।”
একজন মেয়ে হাত তোলে। “স্যার, অনেক সময় আমরা স্বাধীনতা ত্যাগ করি। নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখি।”
“ঠিক।” রাশেদ মাথা নাড়েন।
“এটা একটা দ্বন্দ্ব। নিয়ন্ত্রণ চাই, কিন্তু এর জন্য আমরা নিজেকে বেঁধে ফেলি। মিস সায়মা, আপনার কী মনে হয়?”
সায়মা একটু অবাক হয়। আবার তার দিকে প্রশ্ন? তবু সে বলে, “স্যার, আমার মনে হয়, নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা অনেক সময় নিজের ভয়ের কাছে হার মানি। আমরা ভাবি, নিয়ন্ত্রণ না থাকলে সব ভেঙে পড়বে। কিন্তু হয়তো কখনো কখনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও জীবন চলতে পারে।”
রাশেদের মুখে হালকা হাসি। “ইন্টারেস্টিং। আপনি আমাকে ভাবিয়ে তুলছেন, মিস সায়মা।”
তানিয়া ফিসফিস করে বলে, “এই, স্যার তো তো। আর ফ্যান ফ্যান হয়ে গেছে মনে হচ্ছে!”
সায়মা হেসে ফেলে,
"ধুর পাগল হলে নাকি এমনি পেয়েছে আমাকে আজকে তাই এতো প্রশ্ন করছে। কয়দিন গেলেই ঠিক হয়ে যাবে।"
কিন্তু তার মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি। রাশেদ খানের কঠিন ব্যক্তিত্বের পেছনে একটা গভীরতা আছে, যেটা তাকে টানছে।
ক্লাস শেষ হলে তানিয়া বলে, “চল, ক্যান্টিনে যাই।
তোমার সঙ্গে আরও গল্প করতে ইচ্ছে করছে।”
“ঠিক আছে।” সায়মা হাসে। তার মনটা হালকা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটা প্রশ্ন জাগছে—এই নতুন জীবন, এই ক্লাস, এই মানুষগুলো তার নাজুকতাকে কীভাবে বদলে দেবে? তার গল্পের কলম কি তার হাতেই থাকবে, নাকি অন্য কেউ এটা ধরে নেবে?
জানি অনেক লেট করে ফেলেছি তার জন্য খুব দুঃখিত। আসলে প্রথম গল্প লিখছি তো তাই একটু দেরি হচ্ছে। আমি আশা করবো আপনারা আমার পাশে থাকবেন আর আমাকে উৎসাহ দিয়ে যাবেন।
সামনে আরো বড়ো করে আপডেট দেওয়ার চেষ্টা করবো
এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোনো মতামত থাকে জানাতে ভুলবেন না। আমাকে টেলিগ্রাম এ এসএমএস দিতে পারেন @Clasher_1234 এই নামে। আপনাদের এসএমএস এ আমি উৎসাহ পাই। তাই আমাকে বেশি বেশি করে উৎসাহ দিবেন এই আশা করি।
অবশেষে সিগন্যাল খোলে। রিকশাওয়ালা জোরে প্যাডেল মারে। সায়মা ব্যাগটা শক্ত করে ধরে বলে, “মামা , একটু তাড়াতাড়ি করেন, প্লিজ।”
“আপা, এই জ্যামে আর কতটুকু তাড়াতাড়ি করব?” রিকশাওয়ালার গলায় অসহায়ত্ব।
ক্যাম্পাসে পৌঁছে সায়মা প্রায় দৌড়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের দিকে যায়। ক্লাসরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার বুক কাঁপছে। ভেতর থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে, স্যার চলে এসেছেন এবং সে কিছুক্ষন আগেই ক্লাসে ঢুকেছে। সায়মা ভয় নিয়েও
দরজায় হালকা টোকা দেয় সে।
সবায় দরজার দিকে তাকায়, একটা সাদা সুতির সালোয়ার কামিজে মনে হয় সাক্ষাৎ কোনো পরী দাঁড়িয়ে আছে। ক্লাসের ছেলেরা সবাই হা করে তাকিয়ে আছে সায়মার দিকে কিন্তু সায়মার সে দিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সায়মা খেয়াল করেছে মানুষটার চোখে কমনীয়তা নেই, সেখানে আছে রুক্ষতা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই ব্যক্তি অনেক গম্ভীর।
"আপনি কে?আপনি কি এই ক্লাসের "
“হ্যা স্যার। আমি... সায়মা আহমেদ। মে আই কাম ইন, স্যার?” সায়মার গলা কেঁপে যায়।
“আসুন। তবে তাড়াতাড়ি। সময়ের কোনো দাম নেই নাকি আপনার?” কণ্ঠে বিরক্তি ঝরে পড়ছে।
সায়মা ক্লাসের ভেতর আসে । ক্লাসরুমে ত্রিশ-চল্লিশ জোড়া চোখ তার দিকে। সামনে দাঁড়ানো একজন লম্বা, সুগঠিত পুরুষ, পরনে ফরমাল শার্ট আর চোখে ধারালো দৃষ্টি। তিনি রাশেদ খান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের নতুন শিক্ষক। তার দৃষ্টি যেন সায়মার ভেতরটা পরীক্ষা করছে।
“মিস সায়মা আহমেদ, প্রথম ক্লাস, প্রথম দিন, আর আপনি লেট?” রাশেদের গলায় তিরস্কার।
“এটা কি আপনার জীবনের প্রতি দায়িত্বের নমুনা?”
“স্যার, আমি... মানে, জ্যাম ছিল... আর মেট্রোর কার্ড ফেলে এসেছি...” সায়মার কথা আটকে যায়। তার মনে হচ্ছে, সে যেন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে আর জাজ তাকে প্রশ্ন করছে।
“জ্যাম? কার্ড ফেলে আসা?” রাশেদ ভ্রু কুঁচকান। “এগুলো অজুহাত, মিস সায়মা। জীবন আপনাকে অজুহাতের জন্য অপেক্ষা করতে বলেনি। সময় একটা নদী, থামে না। আপনি কি নদীর স্রোতের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন না?”
সায়মার মাথা নিচু। “জি, স্যার। আমি দুঃখিত। এটা আর হবে না।”
“দেখি, আপনার কথা কতটুকু রাখেন।” রাশেদের গলা একটু নরম হয়, কিন্তু চোখে এখনও কঠোরতা। “বসুন।”
সায়মা তাড়াতাড়ি একটা খালি জায়গা খুঁজে বসে। তার পাশে বসা একটা মেয়ে, যার চোখে উষ্ণ হাসি, ফিসফিস করে বলে, “ঘাবরিও না স্যার একটু স্ট্রিক্ট, কিন্তু মনে হচ্ছে ভালো মানুষ। আমি তানিয়া। তানিয়া রহমান।”
সায়মা ক্ষীণ হাসি দেয়।
“থ্যাঙ্কস। আমি সায়মা।”
“ফার্স্ট ডে-ই এমন বকুনি খেলে , ভাবতেই পারছি না!” তানিয়ার গলায় হালকা হাসি।
তানিয়া মেয়েটা কে এক কথায় কিউট বলা যায়। আর কিছু না বলা গেলেও। গোলগাল সুন্দর একটা চেহারা, তানিয়া হাসলে ওর চোখ ও হাসে যা আরো সুন্দর লাগে দেখতে।
রাশেদ ক্লাসের দিকে তাকান।
“আমি রাশেদ খান। আপনাদের এই বছরের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক। আমি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজ থেকে ক্লিনিকাল সাইকোলজিতে পিএইচডি করেছি। আমি বিশ্বাস করি, মনোবিজ্ঞান শুধু বইয়ের পাতায় নয়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। আমি চাই, আপনারা এই ক্লাসে নিজেদের মনের গভীরে ডুব দেন।”
তিনি ব্ল্যাকবোর্ডে বড় করে লেখেন—নিয়ন্ত্রণ। তারপর ক্লাসের দিকে তাকান।
“আজ আমরা কথা বলব নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। মানুষের মন কেন নিয়ন্ত্রণের পেছনে ছোটে? কী এমন শক্তি আছে এই শব্দের মধ্যে?” রাশেদের গলায় উৎসাহ। “কেউ বলুন।”
একজন ছেলে হাত তোলে। “স্যার, নিয়ন্ত্রণ থাকলে আমরা জীবনের ওপর ক্ষমতা পাই। জিনিসগুলো ঠিকঠাক রাখতে পারি।”
রাশেদ মাথা নাড়েন। “ঠিক, কিন্তু এটা পৃষ্ঠের কথা। আরেকটু গভীরে যান। নিয়ন্ত্রণ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?”
তানিয়া হাত তোলে। “স্যার, নিয়ন্ত্রণ আমাদের নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়। যখন আমরা জানি কী হতে চলেছে, তখন ভয় কমে।”
“গুড। নিরাপত্তা একটা বড় ব্যাপার। কিন্তু এর পেছনেও কিছু আছে।” রাশেদের চোখ ক্লাসের ওপর ঘুরছে। হঠাৎ তার দৃষ্টি সায়মার ওপর থামে। “মিস সায়মা, আপনি কিছু বলতে চান?”
সায়মা চমকে ওঠে। তার বুকের ভেতরটা আবার কেঁপে ওঠে। তবু সে নিজেকে সামলে নেয়। গভীর নিশ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে বলতে শুরু করে।
“স্যার, আমার মনে হয়, মানুষ নিয়ন্ত্রণ চায় কারণ এটা তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ। নিয়ন্ত্রণ মানে শুধু জিনিস ঠিক রাখা নয়, এটা আমাদের নিজেদের গল্প লেখার ক্ষমতা। আমরা যখন কিছু নিয়ন্ত্রণ করি, তখন মনে হয় আমরা শুধু বেঁচে নেই, আমরা জীবনের দায়িত্ব নিচ্ছি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারালে...” সায়মা একটু থামে, তারপর বলে, “মনে হয় আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলছি। আমাদের গল্পটা আর আমাদের হাতে নেই।”
ক্লাসে একটা নিস্তব্ধতা নেমে আসে। সবাই সায়মার দিকে তাকিয়ে। রাশেদের চোখে একটা অদ্ভুত চমক। তিনি ধীরে ধীরে হাততালি দিতে শুরু করেন।
“ব্রিলিয়ান্ট। একদম ব্রিলিয়ান্ট।” তার গলায় প্রশংসা। “মিস সায়মা, আপনি ঠিক ধরেছেন। নিয়ন্ত্রণ আমাদের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে জড়িত। এটা আমাদের গল্পের কলম। আমরা যখন নিয়ন্ত্রণ করি, তখন আমরা নিজেদের মালিক হই ।”
তিনি ক্লাসের দিকে তাকান। “আসুন, সায়মার জন্য একটা বড় হাততালি। তার উত্তরটা সুন্দর হয়েছে ।”
ক্লাসে হাততালির শব্দ ওঠে। তানিয়া সায়মার কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলে, “বাহ্ ?
তুমি তো প্রথম ক্লাসেই সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলে দেখছি! ফার্স্ট ক্লাসেই ধামাকা!”
সায়মার মুখে লাজুক হাসি। তার ভেতরের ভয়টা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে।
রাশেদ আবার বলতে শুরু করেন। “সায়মার উত্তর আমাদের আজকের আলোচনার ভিত্তি হবে। মনোবিজ্ঞানে আমরা শিখি, নিয়ন্ত্রণ একটা মায়া হতে পারে। কিন্তু এই মায়া আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। প্রশ্ন হলো, আমরা কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি? আর কতটা নিয়ন্ত্রিত হই?”
তিনি ক্লাসের দিকে তাকান। “আরেকটা প্রশ্ন। নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কী কী ত্যাগ করি? কেউ বলুন।”
একজন মেয়ে হাত তোলে। “স্যার, অনেক সময় আমরা স্বাধীনতা ত্যাগ করি। নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখি।”
“ঠিক।” রাশেদ মাথা নাড়েন।
“এটা একটা দ্বন্দ্ব। নিয়ন্ত্রণ চাই, কিন্তু এর জন্য আমরা নিজেকে বেঁধে ফেলি। মিস সায়মা, আপনার কী মনে হয়?”
সায়মা একটু অবাক হয়। আবার তার দিকে প্রশ্ন? তবু সে বলে, “স্যার, আমার মনে হয়, নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা অনেক সময় নিজের ভয়ের কাছে হার মানি। আমরা ভাবি, নিয়ন্ত্রণ না থাকলে সব ভেঙে পড়বে। কিন্তু হয়তো কখনো কখনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও জীবন চলতে পারে।”
রাশেদের মুখে হালকা হাসি। “ইন্টারেস্টিং। আপনি আমাকে ভাবিয়ে তুলছেন, মিস সায়মা।”
তানিয়া ফিসফিস করে বলে, “এই, স্যার তো তো। আর ফ্যান ফ্যান হয়ে গেছে মনে হচ্ছে!”
সায়মা হেসে ফেলে,
"ধুর পাগল হলে নাকি এমনি পেয়েছে আমাকে আজকে তাই এতো প্রশ্ন করছে। কয়দিন গেলেই ঠিক হয়ে যাবে।"
কিন্তু তার মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি। রাশেদ খানের কঠিন ব্যক্তিত্বের পেছনে একটা গভীরতা আছে, যেটা তাকে টানছে।
ক্লাস শেষ হলে তানিয়া বলে, “চল, ক্যান্টিনে যাই।
তোমার সঙ্গে আরও গল্প করতে ইচ্ছে করছে।”
“ঠিক আছে।” সায়মা হাসে। তার মনটা হালকা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটা প্রশ্ন জাগছে—এই নতুন জীবন, এই ক্লাস, এই মানুষগুলো তার নাজুকতাকে কীভাবে বদলে দেবে? তার গল্পের কলম কি তার হাতেই থাকবে, নাকি অন্য কেউ এটা ধরে নেবে?
জানি অনেক লেট করে ফেলেছি তার জন্য খুব দুঃখিত। আসলে প্রথম গল্প লিখছি তো তাই একটু দেরি হচ্ছে। আমি আশা করবো আপনারা আমার পাশে থাকবেন আর আমাকে উৎসাহ দিয়ে যাবেন।
সামনে আরো বড়ো করে আপডেট দেওয়ার চেষ্টা করবো
এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোনো মতামত থাকে জানাতে ভুলবেন না। আমাকে টেলিগ্রাম এ এসএমএস দিতে পারেন @Clasher_1234 এই নামে। আপনাদের এসএমএস এ আমি উৎসাহ পাই। তাই আমাকে বেশি বেশি করে উৎসাহ দিবেন এই আশা করি।