11-04-2025, 11:09 AM
(19)
রিটার্ন গিফট
ঠিক এই সময়েই বাইরে একটা বাইকের আওয়াজ থামল। একটু পরেই সান্যালবাড়ির দরজা দিয়ে ঢুকল রুদ্রদীপ বাগচী। আজ তার পিঠে ভারী একটা ব্যাগ, পরনে বিশাল জ্যাকেট আর একগাদা পকেটওয়ালা একটা কার্গো, পায়ে জুতো। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল গোয়ালঘরটার দিকে। গত ক’দিনে বারবার সে দিনের ভিডিও দেখে সে জানে, আজ কোথায় কী ব্যবস্থা হচ্ছে। এমনকি দোতলায় রুপশ্রীর পুরনো ঘরেই যে ফুলশয্যা হবে, সেটাও সে জেনে গেছে সেদিনের ভিডিওর দৌলতে।
*********
পুরোহিতের সামনে হাতজোড়ে বসে পুজোর মন্ত্র বিড়বিড় করে বলার ফাঁকেই চোখের কোন দিয়ে হঠাৎ রুপশ্রী দেখতে পেলেন, আবার এসেছে রুদ্র। এবং একেবারে বিয়ের জায়গাতেই! আর সহ্য হল না তাঁর। রাগে দিশেহারা হয়ে সব ভুলে গেলেন তিনি। কলেজের সহকর্মীদের উপস্থিতি, পুরোহিতের নিষেধ সব অগ্রাহ্য করে পিঁড়ি থেকে উঠে দ্রুত পায়ে ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে গলায় বিষ ঢেলে গর্জে উঠলেন, ‘‘আবার কী মরতে এসেছিস আজ, শয়তান! বেরো বলছি!’’ বলে ছেলেকে ধাক্কা দেওয়ার আগেই স্তম্ভিত হয়ে রুপশ্রী দেখলেন, ক’দিন আগেও তাঁর সামনে মুখ তুলে কথা বলত না যে ভিতুর ডিম, মেনিমুখো ছেলে, সে হঠাৎ একদলা থুতু ছিটিয়ে দিল তাঁর মুখে! তার পর আবার একদলা, তার পর আবার! প্রতিবারই রুপশ্রীর মুখের সামনে গিয়ে এমন ভাবে থুতু দিল, যাতে সেটা গোটা মুখে ছিটিয়ে যায়। পরপর তিন বার রুপশ্রীর মুখে থুতু ছিটিয়ে সান্যালবাড়ির উঠোন ধরে সিঁড়ির দিকে হাঁটা দিল রুদ্র। সারা বিকেল ধরে মেকাপ করে অনেক যত্ন নিয়ে আজ নিজেকে সাজিয়েছিলেন রুপশ্রী। কলেজের সহকর্মী, হেডমিস্ট্রেস, পুরোহিত এমনকি ক্যাটারিংয়ের ছেলেদের সামনে এমন ঘটনায় প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি। গা-টাও গুলিয়ে উঠল। গলা দিয়ে একটা প্রথমে কোনও আওয়াজই বেরোল না। তার পর সবাইকে চমকে দিয়ে তারস্বরে চিৎকার করে উঠলেন, সুখন বলে! তার পর সকলের স্তম্ভিত চোখমুখের সামনে হাউহাউ করে কেঁদে ফের পিঁড়িতে বসে পড়লেন তিনি।
সুখন তখন সবে ভাল করে সাবান মেখে স্নান সেরে গা মুছে মেয়ের নির্দেশে নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি চাপিয়ে গায়ে সেন্ট মাখছিল। স্নান করায় নেশার ধুমকিটা এখন অনেকটা কমলেও এ বার ঘুম পাচ্ছে তার। রুপশ্রীর তারস্বর চিৎকারে চমকে গেল প্রথমে, তার পর দৌড়ে এল গোয়ালের দিকটা। তাকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়া রুপশ্রী শুধু বললেন, এই দেখ, আমার মুখে থুতু দিয়ে উপরে গেল শয়তানটা। তুমি কিছু কর!
রুপশ্রীর মুখভর্তি দলা দলা থুতু এবং হাউহাউ কান্না, সামনে বসে-দাঁড়িয়ে থাকা একদল লোক সঙের মতো তাকিয়ে— প্রথমে ভেবলে গেল সুখন। তার পরেই গোটা ব্যাপারটা বুঝে নিল সে। ফের তার মাথায় রক্ত উঠে গেল। সে দৌড়ল বাড়ির দিকে। একতলায় না, ছোঁড়াটা নিশ্চয়ই দোতলা বা তিন তলায় গেছে। রুপশ্রীর কাছে জেনেছে, ওই ছেলে এ বাড়িতে এসে নাকি তার মামার ঘরেই থাকে। সেই দু’দিনও নাকি ছিল। আজ শালাকে খুন করে জেলে যেতে হয় যাবে, তবু আজ আর মালটাকে ছাড়বে না ও। ভাবতে ভাবতে একতলার সিঁড়ি দিয়ে দোতলার দিকে উঠতে শুরু করল সুখন।
কালভৈরব
(১৯)
রুদ্র অপেক্ষাতেই ছিল। দোতলার বারান্দা দিয়ে সুখনের দৌড়ে গোয়ালের দিকে যাওয়ার পরেই হাতে সার্জিকাল গ্লাভস পরে নিয়ে দ্রুত কয়েকটা জিনিস পকেটে দেখে একটা মাঝারি মাপের স্প্রে বোতল নিয়ে সিঁড়ির কোনটায় একটু আড়াল দেখে দাঁড়াল। সুখন লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছিল। একতলা টপকে দোতলায় উঠে মামার ঘরের দিকে ঘোরার আগেই তার নাকের সামনে স্প্রেটা চার্জ করল রুদ্র। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল বিশাল চেহারার সুখন। দ্রুত তাকে টানতে টানতে দোতলায় রুপশ্রীর ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে পরপর কয়েকটা ইঞ্জেকশন কাঁপা কাঁপা হাতেই দিল রুদ্র। তার প্রচন্ড হাত কাঁপছিল। সে জানে, আজ একটু ভুল মানেই মৃত্যু। না করলেও রুপশ্রীর নালিশে জেলেও যেতে হতে পারে তাকে। তবু মাথা ঠান্ডা করে সুখনের দুই পা, এবং দুহাত মিলিয়ে পরপর বেশ কয়েকটা ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে কোনও রকমে খাটে তুলে ওই ঘর থেকে বেরোল সে।
******
কমলি নীচের ঘরেই ছিল। রুপশ্রীর চিৎকারে সুখনের বেরিয়ে যাওয়ায়, সে প্রথমে মনে করেছিল, কিছু দেখে ভয় পেয়েছে নতুন মামণি। তার পরে বাবার ওই ভাবে ছুটে যাওয়া এবং একটু পরে সিঁড়ি দিয়ে দোতলার দিকে দৌড় দেখে ও আর থাকতে পারল না। প্রথমেই রুপশ্রীর কাছে গেল। সেখানে সবার হইচই, রুপশ্রীর কান্না, মুখে কী সব লেগে থাকা দেখে চমকে গেল কমলি। তার পর সেও দৌড় দিল দোতলার দিকে।
সুখনকে পরপর লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া চার্জ করে ঘরের বাইরে এসে দাঁড়াল রুদ্র। এই সময় কমলিকে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসতে দেখে একটা মোটা থামের পিছনে একটু আড়াল নিয়ে দাঁড়াল। কমলি উপরে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু দেখতে না পেয়ে রুপশ্রীর ঘরের দিকে পা বাড়াল। নিঃশব্দে থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে কমলির পিছনে এসে দাঁড়িয়ে লম্বা শ্বাস টেনে ফের স্প্রেটা করল রুদ্র। পিছন ফিরে থাকা কমলি কিছু টেরই পেল না, শুধু একটা মিস্টি গন্ধে কেমন ঘুমঘুম পেয়ে গেল তার। তার পর লুটিয়ে পড়ল ঘরের সামনেটায়। রুদ্র ঠান্ডা মাথায় কমলিকে যত্ন করে টেনে রুপশ্রীর ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে রুপশ্রীর বিছানাতেই শুইয়ে দিল। সুখনের সঙ্গে ফুলশয্যা করবেন বলে আজ গোটা ঘরের মেঝে এবং বিছানা জুড়ে প্রচুর ফুলের পাপড়ি বিকেলবেলায় ছড়িয়েছেন রুপশ্রী। রুদ্র কমলিকে বিছানায় শুইয়ে তারও দুহাতে এবং দুপায়ে অল্প ডোজের ইঞ্জেকশনটা দিয়ে নীচে নেমে গেল। এখন তার মন অনেকটা শান্ত। শরীরে কাঁপুনিও বেশ কমেছে।
সুখনের দৌড়, তার পর কোনও আওয়াজ না পাওয়া এবং কমলির দৌড়— সব পরপর ঘটলেও রুপশ্রীর কিছুই মাথায় ঢুকছিল না। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছিল রাগে। শরীরের নেশায় গত কয়েক দিন ধরে নিজের গর্ভজাত সন্তানকেও শত্রু মনে করতে শুরু করেছেন রুপশ্রী। আজ তাই নিজের এই বিয়ের আসরে সেই সন্তানের উপস্থিতিতে ওই ভাবে ক্ষেপে উঠেছিলেন। পাশাপাশি, তাঁর মনে আগে থেকেই একটা ভয় ছিল। তাঁর বিয়ে, সন্তানদের চাকরি বা ডাক্তারি পড়ার মতো বিষয় এক সময় গর্ব করে বললেও নিজের ডিভোর্সের বিষয়টা কলেজের সহকর্মীদের কাছে গোপনই রেখেছিলেন এত দিন। আজ রুদ্রকে দেখে আঁতকে উঠেছিলেন এই কারণে যে, রুদ্র যদি ওখানে উপস্থিত তাঁর কলেজের সহকর্মীদের সামনে নিজের পরিচয় তুলে ধরে, তা হলে তাঁদের সকলের চোখেই রুপশ্রী একেবারে নেমে যাবেন। তাঁর কোনও মর্যাদা, মানসম্মান কিছুই থাকবে না। ওই কলেজে এর পরে চাকরি করাও তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে যাবে। আবার তাঁকে নতুন কলেজ খুঁজে সেখানে চলে যেতে হবে। এই সবগুলো চিন্তাই তাঁকে দিশেহারা করে তুলেছিল। সুখন এবং পরে কমলি যাওয়ার পর থেকে পুরোহিতের সামনে পিঁড়িতে থমথমে মুখে বসে এসবই ভাবতে ভাবতে রুপশ্রী কাঁপছিলেন রীতিমতো। বুঝতে পারছিলেন, সহকর্মীদের কাছে তাঁকে এবার অনেক জবাবদিহি করতে হবে।
রুপশ্রীর এই ভাবনার মধ্যেই নীচে নামল রুদ্র।
*******
তাকে দেখে ফের তেলেবেগুনে জ্বলে পিঁড়ি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তেড়ে যেতে গেলেন রুপশ্রী। কিন্তু তার আগেই তাঁকে ফের চমকে দিয়ে এ বার রীতিমতো তান্ডব বাধিয়ে দিল রুদ্র। এ ছেলে রুপশ্রীর চেনা ভিতুর ডিম গোলু নয়, এ রুদ্র যেন বহু বছরের ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা ভৈরব। রুপশ্রীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সোজা গিয়ে পুরুতের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর গলার চাদর ধরে টেনে তুলল আসন থেকে। তার পরের কয়েক মিনিটের মধ্যে লাথি মেরে বিয়ের সব আয়োজন ভেঙে, ছড়িয়ে পুরোহিতকে ঘাড় ধরে বাড়ির বাইরে বের করে ফিরল আবার। সোজা চলে গেল ক্যাটারিংয়ের ছেলেগুলো যেখানে খাবার সাজিয়ে রেখেছে, সেখানে। সব খাবার উল্টে মাটিতে ফেলে প্রবল রাগে পা দিয়ে পিষে দিল সব। সেই ছেলেগুলিকেও বাড়ি থেকে বের করে দিল। হাওয়া দেখে তারাও কোনও কথা না বাড়িয়েই বেরিয়ে গেল। এর পর রুদ্র হাতজোড় করে এসে দাঁড়াল রুপশ্রীর সহকর্মীদের সামনে। তার পরে স্বভাবসিদ্ধ অত্যন্ত নরম কিন্তু দৃঢ় গলায় বলল, ‘‘এ বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে একটা ভয়ঙ্কর অন্যায় হয়েছে, আজও হচ্ছিল। আপনারা আমায় ক্ষমা করুন। আপনারা আমার মাতৃসম, দয়া করে এ বার আপনারা এখান থেকে চলে যান, প্লিজ।’’ প্রথম থেকে রুদ্রর কাজকর্ম, রুপশ্রীর আচরণে সহকর্মীদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। এ বারে তারা বুঝতে পারল, গোলমাল অনেক বড়। তা ছাড়া তাঁরা সরকারি চাকরি করেন। তাই একটিও কথা না বলে এবং রুপশ্রীর দিকে না তাকিয়েই দরজা দিয়ে বাইরে চলে গেলেন সবাই। সব দেখে শুনে এ বার রুপশ্রী আক্ষরিক অর্থেই সব হারানো অসহায়ের মতো ধুপ করে বসে পড়লেন মাটিতে। রুদ্র ফের উপরের দিকে হাঁটা দিল।
****
রুপশ্রীর সম্বিত ফিরতেই এ বারে তাঁর মাথায় খুন চেপে গেল। এখানে এসে অবধি তাঁর জীবনে শনি হয়ে বারবার এসেছেন ওই ছেলে। তিনি এতদিনে ভুলেই গেছেন, ডেঙ্গুতে যখন প্রায় মরতে বসেছিলেন তিনি, এই ছেলেই তাঁকে কোলে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করে চারদিক থেকে টাকা জোগাড় করে তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিল। এখন রুপশ্রীর মনে হল, এই শনিটার জন্যই আজ তাঁর আজ সব নষ্ট হয়ে গেছে। আজ দরকারে ওকে খুন করবেন তিনি নিজেই। তার পরেই সুখনের কথা মনে পড়ে মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি বোধ করতে থাকলেন। কোথায় গেল লোকটা? কমলিই বা কোথায়? ফের মনের মধ্যে কুডাক দিল রুপশ্রীর। মোবাইলটা হাতে চেপে আজও অন্ধকারে ডুবে থাকা তুলসীমঞ্চ এবং রাধাকৃষ্ণের সামনে দিয়েই পড়িমড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে নিজের ঘরের দিকে যেতে গিয়ে কমলির মতোই একটা মিস্টি গন্ধ পেলেন এবং ধুপ করে মাটিতে পড়ে গেলেন রুপশ্রী। তাঁকেও ওই ঘরে ঢুকিয়ে একটা কাঠের চেয়ারে বসিয়ে সুখন-কমলির মতোই পরপর কয়েকটা ইঞ্জেকশন দিল রুদ্র। তার পর ঘর ছেড়ে মামার ঘরে গেল।
******
নতুন একসেট ড্রেস পরে প্রথমেই নীচে গিয়ে ভারী লোহার গেটটা ভাল করে বন্ধ করল। তার পর একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির কোলাপসিবলটা ভাল করে বন্ধ করে তাতে একটা তালা ঝোলাল। বহু যুগ ধরে এই কোলাপসিবলটা ব্যবহারই হত না। আজ হল। এ সব কাজ সেরে ফের এই ঘরে এসে ঢুকল সে।
রুদ্র দোতলায় রুপশ্রীর ঘরে ঢুকে প্রথমেই সবকটা আলো জ্বালিয়ে দিল। তার পর টেনেটেনে বন্ধ করল সেকেলে সেগুনকাঠের ভারী জানলাগুলো। টেনে দিল সবক’টা জানলার ভারী ভারী পর্দাও। এই সব পর্দা গত ক’দিনে কিনে ঘর সাজিয়েছিলেন রুপশ্রী। জানলা বন্ধ করে পর্দা টেনে দেওয়ায় এখন ঘরটা প্রায় সাউন্ডপ্রুফ হয়ে গেল। বাইরে সে ভাবে আওয়াজ যাবে না। তার পর জ্যাকেটের পকেট থেকে এক এক করে বেশ কয়েকটা সিরিঞ্জ বের করে সামনে একটা টুলে রাখল রুদ্র। প্যান্টের পকেট থেকে বের করল দু’রকমের ট্যাবলেট এবং আরও কিছু জিনিস। ঘরে রাখা জলের জাগ থেকে একটা গ্লাসে জল নিয়ে প্রথমে এগিয়ে গেল সুখনের দিকে। তার মাথাটা একটু তুলে মুখটা হা করিয়ে প্রথমে জিভে একটা ইঞ্জেকশন এবং তার পরে এক রকমের একটা ট্যাবলেট গলায় দিয়ে গিলিয়ে দিল। একই ভাবে অন্য এক রকমের ট্যাবলেট খাইয়ে দিল কমলিকেও। তারও জিভে একটা ইঞ্জেকশন দিল, তবে অল্প পরিমাণে। তার পর দ্রুত কমলির শাড়ি-সায়া-ব্লাইজ-ব্রা খুলে ইজেরটাও খুলে নিল। উনিশ পেরনো ভরন্ত যৌবনের কমলি এখন সম্পূর্ণ নগ্ন দেহে রুপশ্রীর ফুলশয্যার বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে। সেই শরীর দেখে রুদ্রর লোভ হলেও মনে পড়ল, এখন সামনে অনেক কাজ। সে দ্রুত একটা পাতলা কাপড় কমলির উপরে এমন ভাবে দিয়ে দিল, যাতে তার মুখ দেখা যাবে না। তার পর একই কায়দায় সুখনকে ল্যাংটো করে তার বিচিতে এবং বিশেষ কয়েকটা জায়গায় টোকা দিতে শুরু করল। হাতে গ্লাভস, তাই ঘেন্না করল না তার। জায়গা মতো পরপর কয়েকটা টোকার পরেই সুখন পেচ্ছাব করে ফেলল। সেই পেচ্ছাবের মধ্যে ফেলে সুখনের জাঙ্গিয়া এবং কমলির ইজের ভালো করে ভিজিয়ে একপাশে সরিয়ে রাখল রুদ্র। এই সময় সুখনের একটু একটু করে জ্ঞান ফিরছে বুঝে দ্রুত নিজের দু’টি ফোনের ক্যামেরা অন করে সেগুলো জায়গা মতো রাখল। অন করে ফেলল রুপশ্রীর হাত থেকে পড়ে যাওয়া ফোনটাও। সেটারও ক্যামেরা অন করে ঘরের অন্য একটি জায়গায় রাখল। তার পর হেলমেটটা মাথায় চাপিয়ে ঘরের নাইটল্যাম্প বাদে সব আলো নিভিয়ে সুখনের এবং কমলির মুখেচোখে জলের ছিটে দিল রুদ্র। তার পর ঘরের কোনে মস্ত সেকেলে কাঠের আলমারিটার পিছনে গা ঢাকা দিল।
রিটার্ন গিফট
ঠিক এই সময়েই বাইরে একটা বাইকের আওয়াজ থামল। একটু পরেই সান্যালবাড়ির দরজা দিয়ে ঢুকল রুদ্রদীপ বাগচী। আজ তার পিঠে ভারী একটা ব্যাগ, পরনে বিশাল জ্যাকেট আর একগাদা পকেটওয়ালা একটা কার্গো, পায়ে জুতো। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল গোয়ালঘরটার দিকে। গত ক’দিনে বারবার সে দিনের ভিডিও দেখে সে জানে, আজ কোথায় কী ব্যবস্থা হচ্ছে। এমনকি দোতলায় রুপশ্রীর পুরনো ঘরেই যে ফুলশয্যা হবে, সেটাও সে জেনে গেছে সেদিনের ভিডিওর দৌলতে।
*********
পুরোহিতের সামনে হাতজোড়ে বসে পুজোর মন্ত্র বিড়বিড় করে বলার ফাঁকেই চোখের কোন দিয়ে হঠাৎ রুপশ্রী দেখতে পেলেন, আবার এসেছে রুদ্র। এবং একেবারে বিয়ের জায়গাতেই! আর সহ্য হল না তাঁর। রাগে দিশেহারা হয়ে সব ভুলে গেলেন তিনি। কলেজের সহকর্মীদের উপস্থিতি, পুরোহিতের নিষেধ সব অগ্রাহ্য করে পিঁড়ি থেকে উঠে দ্রুত পায়ে ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে গলায় বিষ ঢেলে গর্জে উঠলেন, ‘‘আবার কী মরতে এসেছিস আজ, শয়তান! বেরো বলছি!’’ বলে ছেলেকে ধাক্কা দেওয়ার আগেই স্তম্ভিত হয়ে রুপশ্রী দেখলেন, ক’দিন আগেও তাঁর সামনে মুখ তুলে কথা বলত না যে ভিতুর ডিম, মেনিমুখো ছেলে, সে হঠাৎ একদলা থুতু ছিটিয়ে দিল তাঁর মুখে! তার পর আবার একদলা, তার পর আবার! প্রতিবারই রুপশ্রীর মুখের সামনে গিয়ে এমন ভাবে থুতু দিল, যাতে সেটা গোটা মুখে ছিটিয়ে যায়। পরপর তিন বার রুপশ্রীর মুখে থুতু ছিটিয়ে সান্যালবাড়ির উঠোন ধরে সিঁড়ির দিকে হাঁটা দিল রুদ্র। সারা বিকেল ধরে মেকাপ করে অনেক যত্ন নিয়ে আজ নিজেকে সাজিয়েছিলেন রুপশ্রী। কলেজের সহকর্মী, হেডমিস্ট্রেস, পুরোহিত এমনকি ক্যাটারিংয়ের ছেলেদের সামনে এমন ঘটনায় প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি। গা-টাও গুলিয়ে উঠল। গলা দিয়ে একটা প্রথমে কোনও আওয়াজই বেরোল না। তার পর সবাইকে চমকে দিয়ে তারস্বরে চিৎকার করে উঠলেন, সুখন বলে! তার পর সকলের স্তম্ভিত চোখমুখের সামনে হাউহাউ করে কেঁদে ফের পিঁড়িতে বসে পড়লেন তিনি।
সুখন তখন সবে ভাল করে সাবান মেখে স্নান সেরে গা মুছে মেয়ের নির্দেশে নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি চাপিয়ে গায়ে সেন্ট মাখছিল। স্নান করায় নেশার ধুমকিটা এখন অনেকটা কমলেও এ বার ঘুম পাচ্ছে তার। রুপশ্রীর তারস্বর চিৎকারে চমকে গেল প্রথমে, তার পর দৌড়ে এল গোয়ালের দিকটা। তাকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়া রুপশ্রী শুধু বললেন, এই দেখ, আমার মুখে থুতু দিয়ে উপরে গেল শয়তানটা। তুমি কিছু কর!
রুপশ্রীর মুখভর্তি দলা দলা থুতু এবং হাউহাউ কান্না, সামনে বসে-দাঁড়িয়ে থাকা একদল লোক সঙের মতো তাকিয়ে— প্রথমে ভেবলে গেল সুখন। তার পরেই গোটা ব্যাপারটা বুঝে নিল সে। ফের তার মাথায় রক্ত উঠে গেল। সে দৌড়ল বাড়ির দিকে। একতলায় না, ছোঁড়াটা নিশ্চয়ই দোতলা বা তিন তলায় গেছে। রুপশ্রীর কাছে জেনেছে, ওই ছেলে এ বাড়িতে এসে নাকি তার মামার ঘরেই থাকে। সেই দু’দিনও নাকি ছিল। আজ শালাকে খুন করে জেলে যেতে হয় যাবে, তবু আজ আর মালটাকে ছাড়বে না ও। ভাবতে ভাবতে একতলার সিঁড়ি দিয়ে দোতলার দিকে উঠতে শুরু করল সুখন।
কালভৈরব
(১৯)
রুদ্র অপেক্ষাতেই ছিল। দোতলার বারান্দা দিয়ে সুখনের দৌড়ে গোয়ালের দিকে যাওয়ার পরেই হাতে সার্জিকাল গ্লাভস পরে নিয়ে দ্রুত কয়েকটা জিনিস পকেটে দেখে একটা মাঝারি মাপের স্প্রে বোতল নিয়ে সিঁড়ির কোনটায় একটু আড়াল দেখে দাঁড়াল। সুখন লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছিল। একতলা টপকে দোতলায় উঠে মামার ঘরের দিকে ঘোরার আগেই তার নাকের সামনে স্প্রেটা চার্জ করল রুদ্র। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল বিশাল চেহারার সুখন। দ্রুত তাকে টানতে টানতে দোতলায় রুপশ্রীর ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে পরপর কয়েকটা ইঞ্জেকশন কাঁপা কাঁপা হাতেই দিল রুদ্র। তার প্রচন্ড হাত কাঁপছিল। সে জানে, আজ একটু ভুল মানেই মৃত্যু। না করলেও রুপশ্রীর নালিশে জেলেও যেতে হতে পারে তাকে। তবু মাথা ঠান্ডা করে সুখনের দুই পা, এবং দুহাত মিলিয়ে পরপর বেশ কয়েকটা ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে কোনও রকমে খাটে তুলে ওই ঘর থেকে বেরোল সে।
******
কমলি নীচের ঘরেই ছিল। রুপশ্রীর চিৎকারে সুখনের বেরিয়ে যাওয়ায়, সে প্রথমে মনে করেছিল, কিছু দেখে ভয় পেয়েছে নতুন মামণি। তার পরে বাবার ওই ভাবে ছুটে যাওয়া এবং একটু পরে সিঁড়ি দিয়ে দোতলার দিকে দৌড় দেখে ও আর থাকতে পারল না। প্রথমেই রুপশ্রীর কাছে গেল। সেখানে সবার হইচই, রুপশ্রীর কান্না, মুখে কী সব লেগে থাকা দেখে চমকে গেল কমলি। তার পর সেও দৌড় দিল দোতলার দিকে।
সুখনকে পরপর লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া চার্জ করে ঘরের বাইরে এসে দাঁড়াল রুদ্র। এই সময় কমলিকে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসতে দেখে একটা মোটা থামের পিছনে একটু আড়াল নিয়ে দাঁড়াল। কমলি উপরে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু দেখতে না পেয়ে রুপশ্রীর ঘরের দিকে পা বাড়াল। নিঃশব্দে থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে কমলির পিছনে এসে দাঁড়িয়ে লম্বা শ্বাস টেনে ফের স্প্রেটা করল রুদ্র। পিছন ফিরে থাকা কমলি কিছু টেরই পেল না, শুধু একটা মিস্টি গন্ধে কেমন ঘুমঘুম পেয়ে গেল তার। তার পর লুটিয়ে পড়ল ঘরের সামনেটায়। রুদ্র ঠান্ডা মাথায় কমলিকে যত্ন করে টেনে রুপশ্রীর ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে রুপশ্রীর বিছানাতেই শুইয়ে দিল। সুখনের সঙ্গে ফুলশয্যা করবেন বলে আজ গোটা ঘরের মেঝে এবং বিছানা জুড়ে প্রচুর ফুলের পাপড়ি বিকেলবেলায় ছড়িয়েছেন রুপশ্রী। রুদ্র কমলিকে বিছানায় শুইয়ে তারও দুহাতে এবং দুপায়ে অল্প ডোজের ইঞ্জেকশনটা দিয়ে নীচে নেমে গেল। এখন তার মন অনেকটা শান্ত। শরীরে কাঁপুনিও বেশ কমেছে।
সুখনের দৌড়, তার পর কোনও আওয়াজ না পাওয়া এবং কমলির দৌড়— সব পরপর ঘটলেও রুপশ্রীর কিছুই মাথায় ঢুকছিল না। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছিল রাগে। শরীরের নেশায় গত কয়েক দিন ধরে নিজের গর্ভজাত সন্তানকেও শত্রু মনে করতে শুরু করেছেন রুপশ্রী। আজ তাই নিজের এই বিয়ের আসরে সেই সন্তানের উপস্থিতিতে ওই ভাবে ক্ষেপে উঠেছিলেন। পাশাপাশি, তাঁর মনে আগে থেকেই একটা ভয় ছিল। তাঁর বিয়ে, সন্তানদের চাকরি বা ডাক্তারি পড়ার মতো বিষয় এক সময় গর্ব করে বললেও নিজের ডিভোর্সের বিষয়টা কলেজের সহকর্মীদের কাছে গোপনই রেখেছিলেন এত দিন। আজ রুদ্রকে দেখে আঁতকে উঠেছিলেন এই কারণে যে, রুদ্র যদি ওখানে উপস্থিত তাঁর কলেজের সহকর্মীদের সামনে নিজের পরিচয় তুলে ধরে, তা হলে তাঁদের সকলের চোখেই রুপশ্রী একেবারে নেমে যাবেন। তাঁর কোনও মর্যাদা, মানসম্মান কিছুই থাকবে না। ওই কলেজে এর পরে চাকরি করাও তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে যাবে। আবার তাঁকে নতুন কলেজ খুঁজে সেখানে চলে যেতে হবে। এই সবগুলো চিন্তাই তাঁকে দিশেহারা করে তুলেছিল। সুখন এবং পরে কমলি যাওয়ার পর থেকে পুরোহিতের সামনে পিঁড়িতে থমথমে মুখে বসে এসবই ভাবতে ভাবতে রুপশ্রী কাঁপছিলেন রীতিমতো। বুঝতে পারছিলেন, সহকর্মীদের কাছে তাঁকে এবার অনেক জবাবদিহি করতে হবে।
রুপশ্রীর এই ভাবনার মধ্যেই নীচে নামল রুদ্র।
*******
তাকে দেখে ফের তেলেবেগুনে জ্বলে পিঁড়ি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তেড়ে যেতে গেলেন রুপশ্রী। কিন্তু তার আগেই তাঁকে ফের চমকে দিয়ে এ বার রীতিমতো তান্ডব বাধিয়ে দিল রুদ্র। এ ছেলে রুপশ্রীর চেনা ভিতুর ডিম গোলু নয়, এ রুদ্র যেন বহু বছরের ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা ভৈরব। রুপশ্রীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সোজা গিয়ে পুরুতের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর গলার চাদর ধরে টেনে তুলল আসন থেকে। তার পরের কয়েক মিনিটের মধ্যে লাথি মেরে বিয়ের সব আয়োজন ভেঙে, ছড়িয়ে পুরোহিতকে ঘাড় ধরে বাড়ির বাইরে বের করে ফিরল আবার। সোজা চলে গেল ক্যাটারিংয়ের ছেলেগুলো যেখানে খাবার সাজিয়ে রেখেছে, সেখানে। সব খাবার উল্টে মাটিতে ফেলে প্রবল রাগে পা দিয়ে পিষে দিল সব। সেই ছেলেগুলিকেও বাড়ি থেকে বের করে দিল। হাওয়া দেখে তারাও কোনও কথা না বাড়িয়েই বেরিয়ে গেল। এর পর রুদ্র হাতজোড় করে এসে দাঁড়াল রুপশ্রীর সহকর্মীদের সামনে। তার পরে স্বভাবসিদ্ধ অত্যন্ত নরম কিন্তু দৃঢ় গলায় বলল, ‘‘এ বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে একটা ভয়ঙ্কর অন্যায় হয়েছে, আজও হচ্ছিল। আপনারা আমায় ক্ষমা করুন। আপনারা আমার মাতৃসম, দয়া করে এ বার আপনারা এখান থেকে চলে যান, প্লিজ।’’ প্রথম থেকে রুদ্রর কাজকর্ম, রুপশ্রীর আচরণে সহকর্মীদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। এ বারে তারা বুঝতে পারল, গোলমাল অনেক বড়। তা ছাড়া তাঁরা সরকারি চাকরি করেন। তাই একটিও কথা না বলে এবং রুপশ্রীর দিকে না তাকিয়েই দরজা দিয়ে বাইরে চলে গেলেন সবাই। সব দেখে শুনে এ বার রুপশ্রী আক্ষরিক অর্থেই সব হারানো অসহায়ের মতো ধুপ করে বসে পড়লেন মাটিতে। রুদ্র ফের উপরের দিকে হাঁটা দিল।
****
রুপশ্রীর সম্বিত ফিরতেই এ বারে তাঁর মাথায় খুন চেপে গেল। এখানে এসে অবধি তাঁর জীবনে শনি হয়ে বারবার এসেছেন ওই ছেলে। তিনি এতদিনে ভুলেই গেছেন, ডেঙ্গুতে যখন প্রায় মরতে বসেছিলেন তিনি, এই ছেলেই তাঁকে কোলে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করে চারদিক থেকে টাকা জোগাড় করে তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিল। এখন রুপশ্রীর মনে হল, এই শনিটার জন্যই আজ তাঁর আজ সব নষ্ট হয়ে গেছে। আজ দরকারে ওকে খুন করবেন তিনি নিজেই। তার পরেই সুখনের কথা মনে পড়ে মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি বোধ করতে থাকলেন। কোথায় গেল লোকটা? কমলিই বা কোথায়? ফের মনের মধ্যে কুডাক দিল রুপশ্রীর। মোবাইলটা হাতে চেপে আজও অন্ধকারে ডুবে থাকা তুলসীমঞ্চ এবং রাধাকৃষ্ণের সামনে দিয়েই পড়িমড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে নিজের ঘরের দিকে যেতে গিয়ে কমলির মতোই একটা মিস্টি গন্ধ পেলেন এবং ধুপ করে মাটিতে পড়ে গেলেন রুপশ্রী। তাঁকেও ওই ঘরে ঢুকিয়ে একটা কাঠের চেয়ারে বসিয়ে সুখন-কমলির মতোই পরপর কয়েকটা ইঞ্জেকশন দিল রুদ্র। তার পর ঘর ছেড়ে মামার ঘরে গেল।
******
নতুন একসেট ড্রেস পরে প্রথমেই নীচে গিয়ে ভারী লোহার গেটটা ভাল করে বন্ধ করল। তার পর একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির কোলাপসিবলটা ভাল করে বন্ধ করে তাতে একটা তালা ঝোলাল। বহু যুগ ধরে এই কোলাপসিবলটা ব্যবহারই হত না। আজ হল। এ সব কাজ সেরে ফের এই ঘরে এসে ঢুকল সে।
রুদ্র দোতলায় রুপশ্রীর ঘরে ঢুকে প্রথমেই সবকটা আলো জ্বালিয়ে দিল। তার পর টেনেটেনে বন্ধ করল সেকেলে সেগুনকাঠের ভারী জানলাগুলো। টেনে দিল সবক’টা জানলার ভারী ভারী পর্দাও। এই সব পর্দা গত ক’দিনে কিনে ঘর সাজিয়েছিলেন রুপশ্রী। জানলা বন্ধ করে পর্দা টেনে দেওয়ায় এখন ঘরটা প্রায় সাউন্ডপ্রুফ হয়ে গেল। বাইরে সে ভাবে আওয়াজ যাবে না। তার পর জ্যাকেটের পকেট থেকে এক এক করে বেশ কয়েকটা সিরিঞ্জ বের করে সামনে একটা টুলে রাখল রুদ্র। প্যান্টের পকেট থেকে বের করল দু’রকমের ট্যাবলেট এবং আরও কিছু জিনিস। ঘরে রাখা জলের জাগ থেকে একটা গ্লাসে জল নিয়ে প্রথমে এগিয়ে গেল সুখনের দিকে। তার মাথাটা একটু তুলে মুখটা হা করিয়ে প্রথমে জিভে একটা ইঞ্জেকশন এবং তার পরে এক রকমের একটা ট্যাবলেট গলায় দিয়ে গিলিয়ে দিল। একই ভাবে অন্য এক রকমের ট্যাবলেট খাইয়ে দিল কমলিকেও। তারও জিভে একটা ইঞ্জেকশন দিল, তবে অল্প পরিমাণে। তার পর দ্রুত কমলির শাড়ি-সায়া-ব্লাইজ-ব্রা খুলে ইজেরটাও খুলে নিল। উনিশ পেরনো ভরন্ত যৌবনের কমলি এখন সম্পূর্ণ নগ্ন দেহে রুপশ্রীর ফুলশয্যার বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে। সেই শরীর দেখে রুদ্রর লোভ হলেও মনে পড়ল, এখন সামনে অনেক কাজ। সে দ্রুত একটা পাতলা কাপড় কমলির উপরে এমন ভাবে দিয়ে দিল, যাতে তার মুখ দেখা যাবে না। তার পর একই কায়দায় সুখনকে ল্যাংটো করে তার বিচিতে এবং বিশেষ কয়েকটা জায়গায় টোকা দিতে শুরু করল। হাতে গ্লাভস, তাই ঘেন্না করল না তার। জায়গা মতো পরপর কয়েকটা টোকার পরেই সুখন পেচ্ছাব করে ফেলল। সেই পেচ্ছাবের মধ্যে ফেলে সুখনের জাঙ্গিয়া এবং কমলির ইজের ভালো করে ভিজিয়ে একপাশে সরিয়ে রাখল রুদ্র। এই সময় সুখনের একটু একটু করে জ্ঞান ফিরছে বুঝে দ্রুত নিজের দু’টি ফোনের ক্যামেরা অন করে সেগুলো জায়গা মতো রাখল। অন করে ফেলল রুপশ্রীর হাত থেকে পড়ে যাওয়া ফোনটাও। সেটারও ক্যামেরা অন করে ঘরের অন্য একটি জায়গায় রাখল। তার পর হেলমেটটা মাথায় চাপিয়ে ঘরের নাইটল্যাম্প বাদে সব আলো নিভিয়ে সুখনের এবং কমলির মুখেচোখে জলের ছিটে দিল রুদ্র। তার পর ঘরের কোনে মস্ত সেকেলে কাঠের আলমারিটার পিছনে গা ঢাকা দিল।