10-04-2025, 03:40 PM
দ্বিপঞ্চাশৎ পরিচ্ছেদ
স্টাফ রুমে জমে উঠেছে আলোচনা।যেহেতু কোন মেল স্টাফ নেই সকলেই খোলাখুলি মত বিনিময় করছে।নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনা আলোচনা।এক সময় যৌনতায় এসে পড়ে।অধিক মিলন কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর,যৌন মিলনে পেনিসের আকারের গুরত্ব কতটা।ইলিনার এইসব আলোচনা ভাল লাগছিল না তাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।ডক্টর পার্বতী গুপ্তা সাইকোলজির অধ্যাপিকা এক পাশে বসে চুপচাপ শুনছিলেন।উনি অবাঙালী বাংলা ভালই বলেন।ইলিনা অধৈর্য হয়ে উঠি-উঠি করছে,তার আর ক্লাস নেই।
আমি একটু বলতে পারি?ডক্টর পিজি বললেন। ।
ইলিনা বসে পড়ে কৌতূহলী হল ডক্টর গুপ্তা কি বলেন?
পেনিসের আকার কোনো ফ্যক্টর নয় আর একটা কথা টু মাচ অর টু লিটল নাথিং ইজ বেটার।ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞানে, কামেরব অর্থাৎ লিবিডোর দমন বা ইচ্ছার অবদমন, বিপরীত প্রতিক্রিয়া বা নিউরোসিসের সৃষ্টি করতে পারে, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা বা রোগের কারণ হতে পারে। ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞানের মূল ধারণা হলো, মানুষের আচরণ অচেতন স্মৃতি, চিন্তা এবং তাগিদ দ্বারা প্রভাবিত হয়। কামের মতো শক্তিশালী ইচ্ছার দমন বা Repression হলে, তা অচেতন মনে জমা হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন আকারে প্রকাশ পায়, যা মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। মিলার তার প্রতিক্রিয়া তত্ত্বকে ব্যবহারিক পরামর্শের প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারণে প্রেরণা এবং আচরণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তার অবদান মূল্যবান ছিল। ব্যক্তিগত স্বায়ত্তশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে তার কাজ, আসক্তির চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া কীভাবে আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা গঠনে সহায়তা করেছিল। মিলার জোর দিয়েছিলেন যে পরামর্শদাতারা তাদের পরামর্শের ধরণ অনুসারে প্রতিরোধের মাত্রা বাড়াতে বা কমাতে পারেন - সরাসরি সংঘর্ষ বা স্বাধীনতার ক্ষতি বোঝায় এমন প্ররোচনামূলক বার্তা এড়িয়ে চলা কাউন্সেলিং কথোপকথনে প্রতিক্রিয়া প্রশমিত করার জন্য অপরিহার্য। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে পরামর্শদাতারা কথোপকথনের শুরুতে ক্লায়েন্টদের আশ্বস্ত করেন যে তাদের আচরণ পরিবর্তন করার যেকোনো সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে তাদের নিজস্ব, এটি স্পষ্ট করে যে তাদের পছন্দের স্বাধীনতা সীমিত করা হচ্ছে না।একটা সাধারন উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে।নদীতে বাঁধ প্রধানত জল সঞ্চয়, সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নৌচলাচলের সুবিধার্থে দেওয়া হয়।কিন্তু মাঝে মাঝে জল না ছাড়লে বাধ ভেঙ্গে বিপর্যয়ের আশঙ্কা।মেয়েরা সাধারণত লিঙ্গের আকার একটু বড় পছন্দ করে তাদের ধারণা সেটা সুখকর।
সবাই হেসে উঠল।
সদ্বব্যবহার না হলে পীড়নের কারণও হতে পারে।সুফল পাওয়ার জন্য স্বায়ত্বশাসন দেওয়া উচিত,বাইরে থেকে চাপ দিয়ে আরো ভালো ফল পাওয়া যাবে এটা ভ্রান্তি।মনে যখন চিন্তা জমা হয় তা শেয়ার করলে কিছুটা রিলিফ পাওয়া যায়।পরিমিত রমণ শরীর মনের পক্ষে হিতকর।
ইলিনার আর ক্লাস নেই,সুপমাকে আসতে বলেছে। সকলের অগোচরে ইলিনা বেরিয়ে পড়ল।দ্রুত বাস স্ট্যাণ্ডের দিকে হাটতে থাকে।
বাস কখন আসে দেখা যাক।ডক্টর পার্বতীর কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগছিল না।কিন্তু অনেকবেলা হয়ে গেছে সুপমাকে কথা দিয়েছে।আনু দরজা খুলে বসাবে তো?নাকি বেল বাজিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাবে? সেটা বিশ্রী ব্যাপার হবে।
বাস স্ট্যাণ্ডে দাড়িয়ে বাসের দেখা নেই।কলকাতা থেকে বাস আসছে কিন্তু যাবার বাসের পাত্তা নেই।যখন যেটা দরকার তার উল্টোটা পাওয়া যায়।
সহেলী রান্না ঘরে গোছগাছ করছে বাবুলারের কথা মনে পড়ল।কথায় কথায় মুখে বাড়া ল্যাওড়া লেগে থাকতো এমন সুন্দর করে কথা তার মুখে শোনেনি।কোথায় স্যার আর কোথায় বাবুলাল।
ঘড়ি দেখে কাতু সঠিক সময় বলে দিল।সত্যপ্রিয়র মনে নতুন চিন্তা উকি দেয়।তিনি কাতুকে ডাকলেন।সামনে এসে দাড়াতে সত্যপ্রিয় বললেন,এখানে বোসো।
সহেলী নীরবে নির্দেশ পালন করল।
আচ্ছা কাতু মানে কি তুমি জানো?
আমার কাত্তিক মাসে জন্ম হয়েছিল--।
শোনো কাতু মানে কটু অর্থাৎ তেতো বুঝেছো?
নিম পাতা উচ্ছে এইসব।
সত্যপ্রিয় হেসে বললেন,আচ্ছ আমি যদি তোমাকে মিঠি বলে ডাকি কেমন লাগবে?
মাথা নীচু করে সহেলী ঠোট চেপে হাসে।ম্যাডাম থাকতি স্যারের সঙ্গে এত কথা হয়নি।কথায় যে এত আনন্দ জানা ছিল না।
নামটা তোমার পছন্দ নয়?
আপনি ডাকবেন ডাকলিই আমি চলে আসবো।
এবার কাজের কথা বলি।
এখন আবার কি কাজ করতি বলবেন?সহেলী মুখ তুলে তাকায়?
মিঠি তুমি পড়াশুনা কত অবধি করেছো?
সুদূর অতীতে হারিয়ে যায় সহেলীর মন।এমন প্রশ্নের সামনে পড়তে হবে ভাবেনি।নদীর পাড়ে ছিল পাঠশালা।তালপাতায় লিখতে হতো।টিফিনের সময় নদীর ধারে গিয়ে ঘষে ঘষে তালপাতা ধুতে হতো।
কি হল মিঠি?
বাংলাদেশে আমি পাঠশালায় পড়তাম।
তারপর?
সে অনেক কথা আপনি শুনে করবেন কি?
তুমি বলো আমি শুনবো।
তার কথা এত গুরুত্ব দিয়ে কেউ শুনতে চাইবে স্বপ্নেও ভাবেনি। মিঠির চোখে জল এসে যায়।
নিজেকে সামলে নিয়ে শুরু করল।বাবার ছেল ক্ষয়রোগ দিদির বিয়েতে অনেক টাকা দেনা হয়েছিল।একদিন কাশতে কাশতে রক্তবমী করে বাবা মারা গেল।পাওনাদারের তাগাদা বাড়তে থাকে।লোকের কুনজরে মা বাইরে বেরোতি পারেনা।ঠিক হল ইণ্ডিয়ায় পলায় যাবো।একগাছা চুড়ি দিয়ে দালাল ধরে আমরা রওনা দিলাম। শেষে এই দেশে এসে এই বস্তিতে উঠলাম।জমানো টাকা দিয়ে কয়দিন চলে?মা লোকের বাড়ী কাজ নেল,আমিও মা-র সঙ্গে যেতাম। বাবুলালের নজর পড়ল আমার পরে।বাবুলালের ভয়ে কেউ আমার দিকি তাকাতি সাহস করত না।পথেঘাটে দেখা হলি বাবুলাল আমার সঙ্গে কথা বলতো।আমাদের বাসায় যাতায়াত শুরু করল।শেষে আমারে বে করে এ ই বাড়ীতে নিয়ে আসল।কদিন পর কাজ ছাড়ায়ে মাকেও নিয়ে এল।তার শাশুড়ি লোকের বাড়ী কাজ করলি পেস্টিকে লাগে।
বেশ ভালই ছিলাম।একদিন মাও মারা গেল।বাবুলাল নিরুদ্দেশ হতি সরকার বাড়ীতে কাজ নিলাম।ছেলেরে কলেজ নিয়ে আসা যাওয়া করতি হবে।রেবতী কাকী সেই কাজ ছাড়ায়ে ম্যাডামের দেখাশুনার কাজে লাগায়ে দেল।
অধ্যাপক অন্যদিকে তাকিয়ে কি এক ভাবনায় ডুবে আছেন।
অবশেষে বাস আসতে ইলিনা উঠে পড়ল।অনেক্ষণ পরে বাস লোক গিজগিজ করছে।ইলিনা ভীড় ঠেলে লেডিস সিটের কাছে দাড়াল।
বালিঘাটে একজন মহিলা ইলিনা জায়গা পেল।বাস গঙ্গার উপর দিয়ে ছুটে চলেছে।জানলা দিয়ে ফুরফুরে হাওয়া ঢুকছে।ডক্টর পার্বতীর একটা কথা তাকে নাড়া দিয়েছে।মাঝে মাঝে বাধ থেকে জল না ছাড়লে বিপর্য্যয়ের আশঙ্কা।পেনিসের আকার কোনো ফ্যাক্টর নয়। আপন মনে হাসে ইলিনা।
কলিং বেল বাজতে চোখ মেলে তাকায়।লিনা ফিরেছে।লিনা তো কলিং বেল বাজাবে না তা হলে?আণ্যক দ্বিধায় পড়ে যায়।আবার বেল বেজে উঠল।ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আই হোল চোখ রেখে দেখল মোটাসোটা গোলগাল এক মহিলা।ভুল দরজায় বেল টিপছে নাতো?দরজা না খুলে বলল?কে-এ-এ?
আমি সুপমা ইলু আছে?
দরজা ঈষৎ ফাক করে জিজ্ঞেস করে ,কাকে চান?
ইলু মানে মিস ব্রাউন আমাকে আসতে বলেছিল।
উনি ত কলেজ হতে ফেরেন নি,সময় হয়ে গেছে--।
লোকটার কথাগুলো কাঠ-কাঠ,দেখা না করেই ফিরে যাবে।সুপমা বলল,আমি অনেক দূর থেকে এসেছি, ভিতরে একটু বসতে পারি?
লজ্জা পেয়ে আরণ্যক বলল,হ্যা-হ্যা আসুন।দরজা খুলে পাশে সরে দাড়ালো।
সোফা দেখিয়ে পাখা চালিয়ে দিয়ে বলল,বসুন।
সুপমা চোখ ফেরাতে পারেনা।যেন গ্রীক ভাস্কর্য খোদাই করা অ্যাপেলোর মত চেহারা।এই কি ইলুর হাজব্যাণ্ড?ইলুর পছন্দের তারিফ করতে হয়। হেসে সোফায় বসে বলল,ইলু কি রোজই এরকম দেরী করে ফেরে?
আসার সময় হয়ে গেছে আসলে অনেকটা জার্নি করে আসতে হয়।
আমি সুপমা ইলু আমার বন্ধু আমরা একসঙ্গে মাস্টার্স করেছি।আপনি বসুন।
ঠিক আছে।আমি আরণ্যক সোম।আপনার বন্ধু আমার অভিভাবক বলতে পারেন।
সুপমা ধন্দ্বে পড়ে যায়।একটু কথা বলবে ভেবে বসতে বলল,বসল না।মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে লোকের মধ্যে একটা গদগদ ভাব থাকে,এই ভদ্রলোক কেমন কাঠখোট্টা গম্ভীর। হাত ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখল,ছটা বাজতে চলল প্রায়।
ম্যাডাম আপনি চা খাবেন?
চা?কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলল,না থাক ইলু এলেই একসঙ্গে চা খাওয়া যাবে।
ফ্লাটের নীচে গাড়ী দেখে বিরক্ত হয়,একটা গাড়ী রাখলে আরেকটা গাড়ী যাওয়ার পথ থাকেনা।ইলিনা পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে এল।হঠাৎ খেয়াল হয় গাড়ীটা সুপমার নয়তো? ব্যাগ থেকে চাবি বের করে দরজা খুলতে যাবে একটি লোক ছুটে এসে বলল,ম্যাডাম আরণ্যক সোম- -।
আমার স্বামী কেন?
ম্যাডাম বাংলা জানেন,লোকটি স্বাস্তি বোধ করে বলল,একটা রেজিস্ট্রি চিঠি--।
আমাকে দেওয়া যাবে?
লোকটি একটা ব্রাউন খাম বের করে একটা কাগজ এগিয়ে দিল বলল,এখানে সই করুন।
ইলিনা সই করে ব্রাউন খামটা নিল।
আসি ম্যাম?আপনি ভালো বাংলা বলেন।
একটু হেসে ইলিনা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে সুপমাকে দেখে বলল,কতক্ষণ এসেছিস?
মিনিট পনেরো-কুড়ি হবে--তোর কি রোজ এত দেরী হয়?
আর বলিস না--এক মিনিট।ইলিনা নিজের ঘরে ঢুকে গেল।পোশাক বদলে খামটা ছিড়ে দেখল আনুর এ্যাডমিট কার্ড।বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে ওঠে ,পরীক্ষা তো এসে গেল, কেমন হবে গড নোজ।সুপমা হঠাৎ কেন এল?ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল,কি চেহারা করেছিস আমি তো চিনতেই পারিনি?
একটু মুটিয়ে গেছি।সুপমা হেসে বলল।
এই একটু মুটিয়ে যাওয়া?
ইলু বিয়ে করেছিস বললি তোর বরকে তো দেখছি না।উনি কি বেরিয়েছেন?
ইলিনা মুখ টিপে হেসে বলল,তোকে দরজা খুলে দিল কে?
আরণ্যক সোম তোর বর?
কেমন লাগল?
আমাকে বলল তুই ওর অভিভাবক।ওর সঙ্গে তো আলাপই হল না।আমার উপস্থিতি পছন্দ হয়নি মনে হয়--
ইলিনা হেসে ফেলে বলে,না না সেরকম কিছু নয়। ও মেয়েদের খুব সম্মান করে আসলে মেয়েদের সঙ্গে মিশতে পারেনা,এক্টু শাই টাইপ।তারপর বল হঠাৎ কি মনে করে?
আর বলিস না একটা বিশ্রী ব্যাপারে ফেসে গেছি--।
তুই বোস আমি আসছি।
মেয়ে পটানো চেহারা মেয়েদের সঙ্গে মিশতে পারেনা।সুপমা ভাবে অবশ্য মেয়েদের সঙ্গে বেশি না মেশাই ভাল।তা হলে ইলুর কপালে দুঃখ আছে।
একটা প্লেটে মিস্টি সাজিয়ে সুপমার সামনে রেখে আরেক প্লেট নিয়ে স্টাডির দিকে গেল।তালশ্বস সন্দেশ আনুর খুব প্রিয় অথচ ভ্রুক্ষেপ নেই একবার চোখ তুলে দেখছেও না।ইলিনা অবাক হয়ে বলে,তোমার কি শরীর খারাপ? ইলিনা কপালে হাত দিয়ে দেখল।
শরীর খারাপ হবে কেন?
একলা এখানে বসে আছো?বাড়ীতে অতিথি এসেছে--।
আমি কি করব?
কথা বলবে,গল্প করবে।
চিনিনা জানি না কি কথা বলব?
ঠিক আছে খাওয়া হলে ওখানে আসবে।খাম এগিয়ে দিয়ে বলল, আজ এটা এসেছে।
আরণ্যক খাম খুলে দেখল এ্যাডমিট কার্ড।নটা সাবজেক্ট টানা চলবে।পড়াশোনা সব তালগোল পাকিয়ে যায়। মহিলার চাউনি ভাল নয় মাস্টার্স করলেও চোখে মুখে তার ছাপ নেই। লিনার সব কথা ভাল না লাগলেও অবাধ্য হতে পারেনা।
ইলিনা ফিরে এসে বসে বলল,কি বলছিলি?
চালতা বাগানের মোড়ে সামন্ত জুয়েলার্স আমার মামার।আমাদের দোকান থেকে কয়েক লাখ টাকার সোনা কিনেছিল।
বছর পেরিয়ে গেল এখনো লাখ খানেকের উপর বাকী--।
এত টাকা বাকীতে দিল?
আমার জন্য দিয়েছে--সেটাই তো মুষ্কিল।কি লজ্জা বলতো? দোকানে গিয়ে মামাকে বলেছি,বীরু মামাকেও বললাম,বলল দেখবে।বাদ দে এসব।এবার তোর কথা বল। বিয়ে করবি না বললি হঠাৎ বিয়ে করে ফেললি?
মাথা নীচু করে আরণ্যক আসতে ইলিনা বলল,বোসো।আমার বন্ধু সুপমা মণ্ডল মানে এখন কি হয়েছে?
জানা।
হ্যা সুপমা জানা। তোরা বোস চা নিয়ে আসছি।
ইলু নেই কথাটা এই ফাকে বলা যেতে পারে।সুপমা বলল,ইলুর আগে একবার বিয়ে হয়েছিল জানেন?
সে লিনাকে আমি চিনিনা তার সম্পর্কে আমার আগ্রহও নেই।
বুঝলাম না।মানে?
আপনি লিনার বন্ধু সুপমা মণ্ডল,এখন সুপমা জানা।
পদবী বদলালেও আমি তো সেই একই।
তাই কি?একবার ভেবে বলুন তো যখন আপনারা এক সঙ্গে পড়তেন সেদিন চোখে যে জীবনের স্বপ্ন ছিল আজও কি তা আছে?আপনি কি সেই আপনি আছেন?
ভদ্রলোককে যেমন গোমড়ামুখো ভেবেছিল তা নয়।সুন্দর কথা বলে।সুপমার মনটা উদাস হয়ে যায়।ইলু তার সহপাঠী ছিল দুজনে কতরকম আলোচনা মজা করতাম।বিয়ের পর মন খুলে কথা বলার একজন কেউ নেই।টুনির বাপটা রাত করে দোকান থেকে ফিরলে কথা বলবে কি মূর্খ একটা তারপর বিছানায় ফেলে হাপুস-হুপুস চুদে নেতিয়ে পড়ে ঘুমে।কথা বলার সময় কোথা তার।এর আগে গাড়ী বাড়ী না থাকলেও অনেক ভাল ছিল।
জানেন সুপমা অনেকেই বলতে শোনা যায়, আমার ছেলেটা অমুকের সঙ্গে মিশে খারাপ হয়ে গেছে।কথাটা পুরোপুরি সত্য আমি মনে করি না।তার মধ্যে খারাপ দিক সুপ্তভাবে না থাকলে কেউ খারাপ করতে পারত না।
সেতো ঠিকই।
আমি একটা দোকানে পেটভাতার বিনিময়ে কাজ করতাম।লিনার সংস্পর্শে এসে নিজেকে নতুন করে চিনলাম।এখন নিজের মধ্যে অনুভব করি এক প্রত্যয়।এবার বলুন আগের আমি এখনকার আমি এক?
একটা ট্রেতে চা নিয়ে এসে ইলিনা বলল,মনে হচ্ছে খুব সিরিয়াস আলোচনা হচ্ছে?আমার বরকে কেমন লাগলো?
আরণ্যক অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে ভাবে বর না ছাই বন্ধুর সামনে বর,আর অন্য সময়ে এটা করো,ওটা কোরোনা খালি আদেশ।
সুপমা চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল,দ্যাখ ইলু একটা জিনিস বুঝলাম চোখ দিয়ে নয় অনুভব দিয়ে চিনতে হয়।
উরিব্বাস তুইও দেখছি দার্শনিক হয়ে গেলি?একী স্পর্শগুণ?
সে তুই যাই বলিস।জলে মাটি গোলা যায় কিন্তু লোহা গলানো যাবে না,তার জন্য চাই আগুণ।
ইলিনা আড়চোখে আরণ্যককে দেখে।আনুকে যেন কেমন লাগছে।
স্টাফ রুমে জমে উঠেছে আলোচনা।যেহেতু কোন মেল স্টাফ নেই সকলেই খোলাখুলি মত বিনিময় করছে।নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনা আলোচনা।এক সময় যৌনতায় এসে পড়ে।অধিক মিলন কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর,যৌন মিলনে পেনিসের আকারের গুরত্ব কতটা।ইলিনার এইসব আলোচনা ভাল লাগছিল না তাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।ডক্টর পার্বতী গুপ্তা সাইকোলজির অধ্যাপিকা এক পাশে বসে চুপচাপ শুনছিলেন।উনি অবাঙালী বাংলা ভালই বলেন।ইলিনা অধৈর্য হয়ে উঠি-উঠি করছে,তার আর ক্লাস নেই।
আমি একটু বলতে পারি?ডক্টর পিজি বললেন। ।
ইলিনা বসে পড়ে কৌতূহলী হল ডক্টর গুপ্তা কি বলেন?
পেনিসের আকার কোনো ফ্যক্টর নয় আর একটা কথা টু মাচ অর টু লিটল নাথিং ইজ বেটার।ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞানে, কামেরব অর্থাৎ লিবিডোর দমন বা ইচ্ছার অবদমন, বিপরীত প্রতিক্রিয়া বা নিউরোসিসের সৃষ্টি করতে পারে, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা বা রোগের কারণ হতে পারে। ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞানের মূল ধারণা হলো, মানুষের আচরণ অচেতন স্মৃতি, চিন্তা এবং তাগিদ দ্বারা প্রভাবিত হয়। কামের মতো শক্তিশালী ইচ্ছার দমন বা Repression হলে, তা অচেতন মনে জমা হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন আকারে প্রকাশ পায়, যা মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। মিলার তার প্রতিক্রিয়া তত্ত্বকে ব্যবহারিক পরামর্শের প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারণে প্রেরণা এবং আচরণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তার অবদান মূল্যবান ছিল। ব্যক্তিগত স্বায়ত্তশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে তার কাজ, আসক্তির চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া কীভাবে আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা গঠনে সহায়তা করেছিল। মিলার জোর দিয়েছিলেন যে পরামর্শদাতারা তাদের পরামর্শের ধরণ অনুসারে প্রতিরোধের মাত্রা বাড়াতে বা কমাতে পারেন - সরাসরি সংঘর্ষ বা স্বাধীনতার ক্ষতি বোঝায় এমন প্ররোচনামূলক বার্তা এড়িয়ে চলা কাউন্সেলিং কথোপকথনে প্রতিক্রিয়া প্রশমিত করার জন্য অপরিহার্য। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে পরামর্শদাতারা কথোপকথনের শুরুতে ক্লায়েন্টদের আশ্বস্ত করেন যে তাদের আচরণ পরিবর্তন করার যেকোনো সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে তাদের নিজস্ব, এটি স্পষ্ট করে যে তাদের পছন্দের স্বাধীনতা সীমিত করা হচ্ছে না।একটা সাধারন উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে।নদীতে বাঁধ প্রধানত জল সঞ্চয়, সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নৌচলাচলের সুবিধার্থে দেওয়া হয়।কিন্তু মাঝে মাঝে জল না ছাড়লে বাধ ভেঙ্গে বিপর্যয়ের আশঙ্কা।মেয়েরা সাধারণত লিঙ্গের আকার একটু বড় পছন্দ করে তাদের ধারণা সেটা সুখকর।
সবাই হেসে উঠল।
সদ্বব্যবহার না হলে পীড়নের কারণও হতে পারে।সুফল পাওয়ার জন্য স্বায়ত্বশাসন দেওয়া উচিত,বাইরে থেকে চাপ দিয়ে আরো ভালো ফল পাওয়া যাবে এটা ভ্রান্তি।মনে যখন চিন্তা জমা হয় তা শেয়ার করলে কিছুটা রিলিফ পাওয়া যায়।পরিমিত রমণ শরীর মনের পক্ষে হিতকর।
ইলিনার আর ক্লাস নেই,সুপমাকে আসতে বলেছে। সকলের অগোচরে ইলিনা বেরিয়ে পড়ল।দ্রুত বাস স্ট্যাণ্ডের দিকে হাটতে থাকে।
বাস কখন আসে দেখা যাক।ডক্টর পার্বতীর কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগছিল না।কিন্তু অনেকবেলা হয়ে গেছে সুপমাকে কথা দিয়েছে।আনু দরজা খুলে বসাবে তো?নাকি বেল বাজিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাবে? সেটা বিশ্রী ব্যাপার হবে।
বাস স্ট্যাণ্ডে দাড়িয়ে বাসের দেখা নেই।কলকাতা থেকে বাস আসছে কিন্তু যাবার বাসের পাত্তা নেই।যখন যেটা দরকার তার উল্টোটা পাওয়া যায়।
সহেলী রান্না ঘরে গোছগাছ করছে বাবুলারের কথা মনে পড়ল।কথায় কথায় মুখে বাড়া ল্যাওড়া লেগে থাকতো এমন সুন্দর করে কথা তার মুখে শোনেনি।কোথায় স্যার আর কোথায় বাবুলাল।
ঘড়ি দেখে কাতু সঠিক সময় বলে দিল।সত্যপ্রিয়র মনে নতুন চিন্তা উকি দেয়।তিনি কাতুকে ডাকলেন।সামনে এসে দাড়াতে সত্যপ্রিয় বললেন,এখানে বোসো।
সহেলী নীরবে নির্দেশ পালন করল।
আচ্ছা কাতু মানে কি তুমি জানো?
আমার কাত্তিক মাসে জন্ম হয়েছিল--।
শোনো কাতু মানে কটু অর্থাৎ তেতো বুঝেছো?
নিম পাতা উচ্ছে এইসব।
সত্যপ্রিয় হেসে বললেন,আচ্ছ আমি যদি তোমাকে মিঠি বলে ডাকি কেমন লাগবে?
মাথা নীচু করে সহেলী ঠোট চেপে হাসে।ম্যাডাম থাকতি স্যারের সঙ্গে এত কথা হয়নি।কথায় যে এত আনন্দ জানা ছিল না।
নামটা তোমার পছন্দ নয়?
আপনি ডাকবেন ডাকলিই আমি চলে আসবো।
এবার কাজের কথা বলি।
এখন আবার কি কাজ করতি বলবেন?সহেলী মুখ তুলে তাকায়?
মিঠি তুমি পড়াশুনা কত অবধি করেছো?
সুদূর অতীতে হারিয়ে যায় সহেলীর মন।এমন প্রশ্নের সামনে পড়তে হবে ভাবেনি।নদীর পাড়ে ছিল পাঠশালা।তালপাতায় লিখতে হতো।টিফিনের সময় নদীর ধারে গিয়ে ঘষে ঘষে তালপাতা ধুতে হতো।
কি হল মিঠি?
বাংলাদেশে আমি পাঠশালায় পড়তাম।
তারপর?
সে অনেক কথা আপনি শুনে করবেন কি?
তুমি বলো আমি শুনবো।
তার কথা এত গুরুত্ব দিয়ে কেউ শুনতে চাইবে স্বপ্নেও ভাবেনি। মিঠির চোখে জল এসে যায়।
নিজেকে সামলে নিয়ে শুরু করল।বাবার ছেল ক্ষয়রোগ দিদির বিয়েতে অনেক টাকা দেনা হয়েছিল।একদিন কাশতে কাশতে রক্তবমী করে বাবা মারা গেল।পাওনাদারের তাগাদা বাড়তে থাকে।লোকের কুনজরে মা বাইরে বেরোতি পারেনা।ঠিক হল ইণ্ডিয়ায় পলায় যাবো।একগাছা চুড়ি দিয়ে দালাল ধরে আমরা রওনা দিলাম। শেষে এই দেশে এসে এই বস্তিতে উঠলাম।জমানো টাকা দিয়ে কয়দিন চলে?মা লোকের বাড়ী কাজ নেল,আমিও মা-র সঙ্গে যেতাম। বাবুলালের নজর পড়ল আমার পরে।বাবুলালের ভয়ে কেউ আমার দিকি তাকাতি সাহস করত না।পথেঘাটে দেখা হলি বাবুলাল আমার সঙ্গে কথা বলতো।আমাদের বাসায় যাতায়াত শুরু করল।শেষে আমারে বে করে এ ই বাড়ীতে নিয়ে আসল।কদিন পর কাজ ছাড়ায়ে মাকেও নিয়ে এল।তার শাশুড়ি লোকের বাড়ী কাজ করলি পেস্টিকে লাগে।
বেশ ভালই ছিলাম।একদিন মাও মারা গেল।বাবুলাল নিরুদ্দেশ হতি সরকার বাড়ীতে কাজ নিলাম।ছেলেরে কলেজ নিয়ে আসা যাওয়া করতি হবে।রেবতী কাকী সেই কাজ ছাড়ায়ে ম্যাডামের দেখাশুনার কাজে লাগায়ে দেল।
অধ্যাপক অন্যদিকে তাকিয়ে কি এক ভাবনায় ডুবে আছেন।
অবশেষে বাস আসতে ইলিনা উঠে পড়ল।অনেক্ষণ পরে বাস লোক গিজগিজ করছে।ইলিনা ভীড় ঠেলে লেডিস সিটের কাছে দাড়াল।
বালিঘাটে একজন মহিলা ইলিনা জায়গা পেল।বাস গঙ্গার উপর দিয়ে ছুটে চলেছে।জানলা দিয়ে ফুরফুরে হাওয়া ঢুকছে।ডক্টর পার্বতীর একটা কথা তাকে নাড়া দিয়েছে।মাঝে মাঝে বাধ থেকে জল না ছাড়লে বিপর্য্যয়ের আশঙ্কা।পেনিসের আকার কোনো ফ্যাক্টর নয়। আপন মনে হাসে ইলিনা।
কলিং বেল বাজতে চোখ মেলে তাকায়।লিনা ফিরেছে।লিনা তো কলিং বেল বাজাবে না তা হলে?আণ্যক দ্বিধায় পড়ে যায়।আবার বেল বেজে উঠল।ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আই হোল চোখ রেখে দেখল মোটাসোটা গোলগাল এক মহিলা।ভুল দরজায় বেল টিপছে নাতো?দরজা না খুলে বলল?কে-এ-এ?
আমি সুপমা ইলু আছে?
দরজা ঈষৎ ফাক করে জিজ্ঞেস করে ,কাকে চান?
ইলু মানে মিস ব্রাউন আমাকে আসতে বলেছিল।
উনি ত কলেজ হতে ফেরেন নি,সময় হয়ে গেছে--।
লোকটার কথাগুলো কাঠ-কাঠ,দেখা না করেই ফিরে যাবে।সুপমা বলল,আমি অনেক দূর থেকে এসেছি, ভিতরে একটু বসতে পারি?
লজ্জা পেয়ে আরণ্যক বলল,হ্যা-হ্যা আসুন।দরজা খুলে পাশে সরে দাড়ালো।
সোফা দেখিয়ে পাখা চালিয়ে দিয়ে বলল,বসুন।
সুপমা চোখ ফেরাতে পারেনা।যেন গ্রীক ভাস্কর্য খোদাই করা অ্যাপেলোর মত চেহারা।এই কি ইলুর হাজব্যাণ্ড?ইলুর পছন্দের তারিফ করতে হয়। হেসে সোফায় বসে বলল,ইলু কি রোজই এরকম দেরী করে ফেরে?
আসার সময় হয়ে গেছে আসলে অনেকটা জার্নি করে আসতে হয়।
আমি সুপমা ইলু আমার বন্ধু আমরা একসঙ্গে মাস্টার্স করেছি।আপনি বসুন।
ঠিক আছে।আমি আরণ্যক সোম।আপনার বন্ধু আমার অভিভাবক বলতে পারেন।
সুপমা ধন্দ্বে পড়ে যায়।একটু কথা বলবে ভেবে বসতে বলল,বসল না।মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে লোকের মধ্যে একটা গদগদ ভাব থাকে,এই ভদ্রলোক কেমন কাঠখোট্টা গম্ভীর। হাত ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখল,ছটা বাজতে চলল প্রায়।
ম্যাডাম আপনি চা খাবেন?
চা?কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলল,না থাক ইলু এলেই একসঙ্গে চা খাওয়া যাবে।
ফ্লাটের নীচে গাড়ী দেখে বিরক্ত হয়,একটা গাড়ী রাখলে আরেকটা গাড়ী যাওয়ার পথ থাকেনা।ইলিনা পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে এল।হঠাৎ খেয়াল হয় গাড়ীটা সুপমার নয়তো? ব্যাগ থেকে চাবি বের করে দরজা খুলতে যাবে একটি লোক ছুটে এসে বলল,ম্যাডাম আরণ্যক সোম- -।
আমার স্বামী কেন?
ম্যাডাম বাংলা জানেন,লোকটি স্বাস্তি বোধ করে বলল,একটা রেজিস্ট্রি চিঠি--।
আমাকে দেওয়া যাবে?
লোকটি একটা ব্রাউন খাম বের করে একটা কাগজ এগিয়ে দিল বলল,এখানে সই করুন।
ইলিনা সই করে ব্রাউন খামটা নিল।
আসি ম্যাম?আপনি ভালো বাংলা বলেন।
একটু হেসে ইলিনা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে সুপমাকে দেখে বলল,কতক্ষণ এসেছিস?
মিনিট পনেরো-কুড়ি হবে--তোর কি রোজ এত দেরী হয়?
আর বলিস না--এক মিনিট।ইলিনা নিজের ঘরে ঢুকে গেল।পোশাক বদলে খামটা ছিড়ে দেখল আনুর এ্যাডমিট কার্ড।বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে ওঠে ,পরীক্ষা তো এসে গেল, কেমন হবে গড নোজ।সুপমা হঠাৎ কেন এল?ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল,কি চেহারা করেছিস আমি তো চিনতেই পারিনি?
একটু মুটিয়ে গেছি।সুপমা হেসে বলল।
এই একটু মুটিয়ে যাওয়া?
ইলু বিয়ে করেছিস বললি তোর বরকে তো দেখছি না।উনি কি বেরিয়েছেন?
ইলিনা মুখ টিপে হেসে বলল,তোকে দরজা খুলে দিল কে?
আরণ্যক সোম তোর বর?
কেমন লাগল?
আমাকে বলল তুই ওর অভিভাবক।ওর সঙ্গে তো আলাপই হল না।আমার উপস্থিতি পছন্দ হয়নি মনে হয়--
ইলিনা হেসে ফেলে বলে,না না সেরকম কিছু নয়। ও মেয়েদের খুব সম্মান করে আসলে মেয়েদের সঙ্গে মিশতে পারেনা,এক্টু শাই টাইপ।তারপর বল হঠাৎ কি মনে করে?
আর বলিস না একটা বিশ্রী ব্যাপারে ফেসে গেছি--।
তুই বোস আমি আসছি।
মেয়ে পটানো চেহারা মেয়েদের সঙ্গে মিশতে পারেনা।সুপমা ভাবে অবশ্য মেয়েদের সঙ্গে বেশি না মেশাই ভাল।তা হলে ইলুর কপালে দুঃখ আছে।
একটা প্লেটে মিস্টি সাজিয়ে সুপমার সামনে রেখে আরেক প্লেট নিয়ে স্টাডির দিকে গেল।তালশ্বস সন্দেশ আনুর খুব প্রিয় অথচ ভ্রুক্ষেপ নেই একবার চোখ তুলে দেখছেও না।ইলিনা অবাক হয়ে বলে,তোমার কি শরীর খারাপ? ইলিনা কপালে হাত দিয়ে দেখল।
শরীর খারাপ হবে কেন?
একলা এখানে বসে আছো?বাড়ীতে অতিথি এসেছে--।
আমি কি করব?
কথা বলবে,গল্প করবে।
চিনিনা জানি না কি কথা বলব?
ঠিক আছে খাওয়া হলে ওখানে আসবে।খাম এগিয়ে দিয়ে বলল, আজ এটা এসেছে।
আরণ্যক খাম খুলে দেখল এ্যাডমিট কার্ড।নটা সাবজেক্ট টানা চলবে।পড়াশোনা সব তালগোল পাকিয়ে যায়। মহিলার চাউনি ভাল নয় মাস্টার্স করলেও চোখে মুখে তার ছাপ নেই। লিনার সব কথা ভাল না লাগলেও অবাধ্য হতে পারেনা।
ইলিনা ফিরে এসে বসে বলল,কি বলছিলি?
চালতা বাগানের মোড়ে সামন্ত জুয়েলার্স আমার মামার।আমাদের দোকান থেকে কয়েক লাখ টাকার সোনা কিনেছিল।
বছর পেরিয়ে গেল এখনো লাখ খানেকের উপর বাকী--।
এত টাকা বাকীতে দিল?
আমার জন্য দিয়েছে--সেটাই তো মুষ্কিল।কি লজ্জা বলতো? দোকানে গিয়ে মামাকে বলেছি,বীরু মামাকেও বললাম,বলল দেখবে।বাদ দে এসব।এবার তোর কথা বল। বিয়ে করবি না বললি হঠাৎ বিয়ে করে ফেললি?
মাথা নীচু করে আরণ্যক আসতে ইলিনা বলল,বোসো।আমার বন্ধু সুপমা মণ্ডল মানে এখন কি হয়েছে?
জানা।
হ্যা সুপমা জানা। তোরা বোস চা নিয়ে আসছি।
ইলু নেই কথাটা এই ফাকে বলা যেতে পারে।সুপমা বলল,ইলুর আগে একবার বিয়ে হয়েছিল জানেন?
সে লিনাকে আমি চিনিনা তার সম্পর্কে আমার আগ্রহও নেই।
বুঝলাম না।মানে?
আপনি লিনার বন্ধু সুপমা মণ্ডল,এখন সুপমা জানা।
পদবী বদলালেও আমি তো সেই একই।
তাই কি?একবার ভেবে বলুন তো যখন আপনারা এক সঙ্গে পড়তেন সেদিন চোখে যে জীবনের স্বপ্ন ছিল আজও কি তা আছে?আপনি কি সেই আপনি আছেন?
ভদ্রলোককে যেমন গোমড়ামুখো ভেবেছিল তা নয়।সুন্দর কথা বলে।সুপমার মনটা উদাস হয়ে যায়।ইলু তার সহপাঠী ছিল দুজনে কতরকম আলোচনা মজা করতাম।বিয়ের পর মন খুলে কথা বলার একজন কেউ নেই।টুনির বাপটা রাত করে দোকান থেকে ফিরলে কথা বলবে কি মূর্খ একটা তারপর বিছানায় ফেলে হাপুস-হুপুস চুদে নেতিয়ে পড়ে ঘুমে।কথা বলার সময় কোথা তার।এর আগে গাড়ী বাড়ী না থাকলেও অনেক ভাল ছিল।
জানেন সুপমা অনেকেই বলতে শোনা যায়, আমার ছেলেটা অমুকের সঙ্গে মিশে খারাপ হয়ে গেছে।কথাটা পুরোপুরি সত্য আমি মনে করি না।তার মধ্যে খারাপ দিক সুপ্তভাবে না থাকলে কেউ খারাপ করতে পারত না।
সেতো ঠিকই।
আমি একটা দোকানে পেটভাতার বিনিময়ে কাজ করতাম।লিনার সংস্পর্শে এসে নিজেকে নতুন করে চিনলাম।এখন নিজের মধ্যে অনুভব করি এক প্রত্যয়।এবার বলুন আগের আমি এখনকার আমি এক?
একটা ট্রেতে চা নিয়ে এসে ইলিনা বলল,মনে হচ্ছে খুব সিরিয়াস আলোচনা হচ্ছে?আমার বরকে কেমন লাগলো?
আরণ্যক অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে ভাবে বর না ছাই বন্ধুর সামনে বর,আর অন্য সময়ে এটা করো,ওটা কোরোনা খালি আদেশ।
সুপমা চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল,দ্যাখ ইলু একটা জিনিস বুঝলাম চোখ দিয়ে নয় অনুভব দিয়ে চিনতে হয়।
উরিব্বাস তুইও দেখছি দার্শনিক হয়ে গেলি?একী স্পর্শগুণ?
সে তুই যাই বলিস।জলে মাটি গোলা যায় কিন্তু লোহা গলানো যাবে না,তার জন্য চাই আগুণ।
ইলিনা আড়চোখে আরণ্যককে দেখে।আনুকে যেন কেমন লাগছে।