30-06-2019, 12:14 AM
পার্টঃঃ১০
আমি আমার ঘরে এসে ল্যাপটপটা নিয়ে বসলাম। আমার জীবনের একটা নতুন দিকের উন্মোচন হলো। মানুষের জীবনে কত কিছু জানার আছে। এক জন্মে তা শেষ করা যায় না। আমারও তাই অবস্থা। হঠাৎ অমিতাভদার গলার শব্দে সচকিত হয়ে পেছন ফিরে তাকালাম।
তোর সঙ্গে কিছু কথা ছিলো।
ভেতরে আসুন। আমার এই ঘরে একটা কাপরের ইজি চেয়ার আছে। অমিতাভদা তাতে এসে বসলেন। বললেন, মনা তোকে যে চিঠিটা দিয়েছে তুইতো পরলি না।
আপনি পরেছেন ?
পরেছি।
তাহলে।
ও তোকে একবার যেতে বলেছে।
কেনো ?
তোর সম্পত্তি বুঝে নেবার জন্য।
সে নিয়ে আমি কি করবো।
তা ঠিক। তবে তোর মনার প্রতি কিছু কর্তব্য আছে। ছোট থেকে সেইই তোকে মানুষ করেছে।
বলতে যাচ্ছিলাম, সেতো আপনি মাসে মাসে টাকা পাঠাচ্ছেন। চুপ করে থাকলাম। এতদিন এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা ভাবি নি। হঠাত ভাবনাটা মাথা চারা দিয়ে উঠলো। সত্যিতো।
তার এখন বয়েস হয়েছে। আজ বাদে কাল......। সে তোকে তোর সব কিছু বুঝিয়ে দিতে চায়।
আমি মাথা নীচু করে বসে আছি।
একবার ওখানে যা। তাকে ঋণ মুক্ত কর।
ঠিক আছে যাব।
কবে যাবি।
আপনি বলুন।
কালই চলে যা। এ কদিন তো অফিস ডামা ডোলে চলবে।
কেনো।
আমি সব খোঁজ খবর রাখছি। ওটার দ্বারা কিছু হবে না। কাগজটা দেখিস।
না।
কি করিস তাহলে সারাদিন।
চুপচাপ থাকলাম।
মিত্রা কেনো আসছে।
জানিনা। তবে ওকে বলেছিলাম, আমরা যা আলোচনা করলাম, জামাইবাবুকে একবার জানানো উচিত, আফটারঅল উনি তোর গার্জেন।
মিত্রা কি মিঃ ব্যানার্জীকে....।
না সেভাবে পাত্তা দেয়না।
মল্লিকদা এলেন। খাটের ওপর বসলেন। বুঝলেন বেশ গুরু গম্ভীর আলোচনা চলছে।
তুই কি বলিস।
আমার কিছু বলার নেই, মিত্রা যা ডিসিসন নেবে ওটাই ঠিক ও ৭৫ ভাগ শেয়ার হোল্ড করছে।
না।
আপনার কাছে খবরটা ভুল আছে।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন। মল্লিকদা অবাক হয়ে আমার কথা শুনছেন। ছোটমা চায়ের পট কাপ নিয়ে এসে হাজির, ঘরের আবহাওয়ায় বুঝলেন পরিবেশ তার অনুকূল নয়। চা দিয়ে চলে গেল।
চা খেতে খেতে অমিতাভদা বললেন, তুই যে ডিসিসন গুলো ওকে দিয়েছিস তা কি ঠিক ?
বেঠিক কোথায় বলুন।
ও কি সামলাতে পারবে।
ওর রক্তে বিজনেস। ওদের সাতপুরুষের ব্যবসা, ব্লাড কোনদিন বিট্রে করে না।
আমার কথাটা শুনে অমিতাভদা কেমন যেন থমকে গেলেন। মল্লিকদা অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয় আছেন। কোনমতেই এতোদিনকার দেখা অনির সঙ্গে এই মুহূর্তের অনিকে মেলাতে পারছেন না।
ওই যে নতুন ছেলে গুলো এসেছে।
ওই ব্যাপার নিয়ে আপনি ভাববেন না। আপনি এতদিন সব ব্যাপার নিয়ে ভেবেছেন। তাতে অনেকের আপনি শত্রু হয়েছেন। আপনি এবার আপনার জায়গাটা নিয়ে ভাবুন। আর কে কি করছে তাতে আপনার কি যায় আসে।
কথাটা তুই ঠিক বলেছিস। মল্লিকদা বললেন।
অমিতাভদা মল্লিকদার দিকে তাকালেন। তুই তো কোনদিন এ ভাবে আমাকে বলিসনি।
বলার সময় পেয়ছি কোথায়। তুমি যা বলেছো, তা অন্ধের মতো পালন করার চেষ্টা করেছি।
সেটা ঠিক আছে। তবে যুগ বদলেছে, সময় বদলেছে, তোমাকে এগুলো মেনে নিতে হবে। আমি বললাম।
তুই কি ভাবছিস অন্যারা এগুলো মেনে নেবে।
যারা মানবে না, তাদের সরে যেতে হবে।
কি বলছিস।
ঠিক বলছি।
দামানি মল আলুওয়ালিয়ারা ছেরে দেবে।
প্রথমজন শেয়ার বেচে দিয়েছে মিত্রার কাছ। আপনি যে লবির হয়ে এতদিন কাজ করছিলেন। আপনি জানেন ?
না।
বাকি দুজন শেয়ার বেচে চলে যাবে।
কে কিনবে।
মিত্রা কিনে নেবে।
কি বলছিস তুই। আলুওয়ালিয়া মিত্রাকে শেয়ার বেচবেনা।
বাধ্য করবো।
আমিতাভদা ঘার নাড়ছেন।
আমি ঠিক বলছি। ও যদি মনে করে একাই সমস্ত শেয়ার কিনে নিতে পারে। আমি ভেতর ভেতর সেই ব্যবস্থা করছি।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন। মল্লিকদা অবাক। বড়মা ঢুকলেন।
আচ্ছা তোমরা কি ছেলেটাকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না।
দাঁড়াওতো। খালি বক বক বক। অমিতাভ খেঁকিয়ে উঠলেন।
আমি এগিয়ে গিয়ে বড়মাকে ব্যাপারটা বোঝালাম। বড়মা শিশুসুলভ ভাবে বললেন, অনি আমি একটু শুনবো। আমি বড়মাকে চেয়ারটা দিয়ে বললাম, ঠিক আছে তুমি বসো কিন্তু কোন কথা বলতে পারবে না। বড়মা বললেন ঠিক আছে, অমিতাভদা কর্কশ নেত্রে আমার দিকে তাকালেন। মুখে কিছু বললেন না।
ওরা খুব একটা সহজে ছেড়ে দেবে না।
কেউকি দেয়। দিতে বাধ্য হয়।
এখন কতটা শেয়ার বাইরে পরে আছে।
আলুওয়ালিয়া কুড়ি মল পাঁচ।
আপনি এতদিন দামানির লবির হয়ে কাজ করেছেন, মিত্রার বাবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক খুব একটা ভাল ছিল না।
অমিতাভদা ঘাড় নাড়ছেন।
কেনো ? ভদ্রলোক খারাপ ছিলেন না। অমি যতটুকু জানি।
অমিতাভদা মাথানীচু করে বসে আছেন।
আমার ভুল হলে আপনি আমাকে বলতে পারেন।
তুই এখবর জোগাড় করলি কোথা থেকে।
আমার সোর্সের ব্যাপারে আমি কিছু বলবো না। যা বলছি ঠিক কিনা।
হ্যাঁ।
কাজের জায়গায় ব্যক্তিগত আক্রোশ আসবে কেনো।
আমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন, চোখে বিস্ময়।
দামানি আজ থেকে মাস আষ্টেক আগে শেয়ার বেচে দিয়েছে, মিত্রার কাছে। আপনি তা জানতেন।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন।
আমি জানতাম, আপনাকে বলিনি।
কেনো।
আজ পরিস্থিতি এমন পজিসনে যে আপনি আমার কথা শুনছেন, ছ’মাস আগে বললে আপনি আমার কথা শুনতেন।
বড়মা মাথা নাড়ছেন। মনে মনে বেশ আনন্দ পাচ্ছেন। যাক এমন একজন তাহলে তৈরি হয়েছে, যে ওর মুখের ওপর সপাটে উত্তর দিতে পারছে।
অমিতাভদা চুপ।
আমি যদি আপনার পরিচিত না হতাম এবং মিত্রা যদি আমার পূর্ব পরিচিতা না হতো তাহলে আপনাকে আমাকে সবাইকে সরে যেতে হতো।
অমিতাভদা মাথা নীচু করে বসে আছেন।
আপনি হয়তো জানেন না আপনার লবির ৪০ ভাগ লোককে তারিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৬০ ভাগ লোক আপনাকে ছেড়ে সুনিতদার ন্যাওটা হয়েছে। বাকি খবর এখনো আমার কাছে এসে পৌঁছয় নি।
অমিতাভদার চোখ দুটো ছল ছলে। বড়মার চোখে আগুনের হল্কা। কখন যে ছোটমা এসে দাঁড়িয়েছেন জানি না।
আপনার ঘরে আপাতত সুনিতদাকে বসাচ্ছি। মানে ওকে আমি বলির পাঁঠা করবো। আপনি আপাতত আমার কোন কাজে বাধা দেবেন না।
কি বলছিস অনি। মল্লিকদা বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বললেন।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন, চোখ দুটো স্থির।
এই কদিনের মধ্যে কুড়ি পার্সেন্ট শেয়ার আমার চাই। মিত্রাকে বলেছি টাকা জোগাড় করতে।
অমিতাভদা হতাশ দৃষ্টিতে বললেন, ওরা দেবে।
দেবে না। ছেড়ে দেবে। ওটা হিমাংশু ব্যবস্থা করছে।
হিমাংশু কে।
আমর বন্ধু, চাটার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট। আর বেশি কিছু জানতে চাইবেন না।
অমিতাভদার গালে কেউ যেন সপাটে একটা থাপ্পর কষাল, এমন ভাবে আমার দিকে তাকালেন। স্থবিরের মতো ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমার হাত দুটো ধরে আমাকে বুক জরিয়ে ধরে ছোট্ট শিশুর মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
বড়মা কাপড়ের খোঁট দিয়ে চোখ মুছছেন। ছোটমা মাথা নীচু করে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটি ঘষছে। কাপরের খোঁটটা ধরে আঙুলে জড়াচ্ছে। মল্লিকদা খাটের এক কোনে স্থানুর মতো বসে আছেন। কাঁদতে কাঁদতে অমিতাভদা বললেন, মিনু তুমি আমার কাছে সন্তান চেয়েছিলে, তোমাকে দিতে পারি নি, এই নাও তোমার ছেলেকে, বড়মা এগিয়ে এলেন, আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, মা-বাবা কি জিনিষ জানতাম না, আজ জানলাম, ছোটমা কাছে এসে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন, বুবুন মাকে পেয়ে ছোটমাকে ভুলে যাবি নাতে।
মিত্রারা এলো প্রায় দেড়টা নাগাদ। আমি তখন আমার ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছি। অফিসে কম্পিউটর ঘাঁটা ঘাঁটি করি তাই সেই ভাবে খুব একটা অসুবিধা হলো না। বেশ তাড়াতাড়ি সরোগরো হয় গেলাম। ছোটমা এসে বললেন, চলুন আপনার গেস্টরা চলে এসেছেন।
আমি ছোটমার মুখের দিকে তাকালাম, ছোটমা হাসছে। এ হাসি পরিতৃপ্তির হাসি। এ হাসি মন ভাল হয়ে যাবার হাসি। এ হাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে হারিয়ে গিয়ে আবার ফিরে পাওয়া।
কি হলো ওই ভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয় কি দেখছিস।
তোমাকে।
তবেরে দুষ্টু, বলে আমার কান ধরলো।
উঃ ছোটমা লাগছে। ছাড় ছাড়।
ছোটমার চোখ চোখ রেখে বললাম, কেমন দেখলে ?
দারুন।
কি দারুন।
মিত্রাকে দেখতে।
পছন্দ।
ছোটমা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন, পছন্দ হয়ে আর হবে কি।
ঠিক। কপালে নেইকো ঘি ঠক ঠকালে পাবে কি।
আর বুড়োমি করতে হবে না। এবার চলো।
বড়মা কি বলছেন।
খুব শুনতে ইচ্ছে করছে না।
মাথা নারলাম।
বিয়ে না হলে বউ করতেন।
ওতো আমার বউ।
যাঃ।
হ্যাঁগো।
চল চল ওরা বসে আছে।
চলো।
ছোটমার পেছন পেছন নিচে চলে এলাম, এরি মধ্যে মিঃ ব্যানার্জী, মিত্রা, অমিতাভদা, মল্লিকদা বেশ জমিয়ে গল্প শুরু করে দিয়েছেন। আমাকে দেখেই মিত্রার চোখ দুটো চক চক করে উঠলো। সবার চোখ এড়ালেও ছোটমার চোখ এড়ালো না। মিঃ ব্যানার্জী বললেন, এসো অনি তোমার জন্য.....।
মল্লিকদা মিঃ ব্যানার্জীকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, না স্যার, অনি নয়, অনিবাবু। সবাই হো হো করে হসে উঠলো।
আমি মিত্রার পাশে সোফার খালি জায়গায় বসে পরলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, সবার সঙ্গে দাদার আলাপ করিয়ে দিয়েছিস।
ও বোকা বোকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমার আগে মল্লিকদা সবার সঙ্গে আলাপ করেছেন এবং আলাপ করিয়ে দিয়েছেন।
বড়মার সঙ্গে আলাপ হয়েছে।
হ্যাঁ।
তুই বড়লোক মানুষ, বড়মা বিশ্বাসই করতে পারে নি তুই এখানে আসতে পারিস।
গালে একটি থাপ্পর।
হ্যাঁরে সত্যি। দাদার সঙ্গে কথা বলার পর তোর সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, এরা আমাকে পাগল ভাবছিল।
এতটা ঠিক নয়। মিঃ ব্যানার্জী বললেন।
ছোটমা চোখ পাকিয়ে গোল গোল চোখ করলেন, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
বড়মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, ও কোনদিন পরিষ্কার করে কোন কথা বলে না। সব সময় একটা হেঁয়ালি।
ঠিক বলেছেন, এটা ওর চিরকালের অভ্যাস। মিত্রা বললো।
তোমরা আমার থেকে বেশি জানবে মা। আমি আর কতটুকু দেখলাম।
কলেজেও ও এরকম ছিল। সব সময় দেখছি দেখবো খাচ্ছি খাবো ভাব। খালি ডঃ রায় যখন কোন কথা বলতেন তখন বুবুনকে পায় কে। ও তখন সিরিয়াস।
ডঃ রায় কে ?
আমাদের হেডডিপ ছিলেন ।
সমকালীন পত্রিকায় একসময় খুব ভালো ভালো প্রবন্ধ লিখতেন। এখনও লেখেন, আমাদের কাগজেও লিখেছেন, তবে খুব কম, এখন উনি সমালোচক হিসাবে বেশ নাম করেছেন অমিতাভদা বললেন।
ও আরো ভালো বলতে পারবে। ও স্যারের পোষ্যপুত্র ছিলো। মিত্রা বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
ঠিক বলেছো। এখানেও তাই। খালি বড় সাহেব কিছু বললে ও শুনবে আর কাউকে কোন পাত্তাই দেয়না। অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বড়মা বললেন।
খিদে পেয়েছে। তোর পায় নি। মিত্রার দিকে তাকালাম।
কি রাক্ষসরে তুই। এইতো কয়েকঘন্টা আগে অতগুলো লুচি গিললি এরি মধ্যে.....ছোটমা বললেন।
সকলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
তাহলে চলো আমার ঘরে গিয়ে বসি।
আমার কথাটা মিঃ ব্যানার্জী লুফে নিলেন। হ্যাঁ হ্যাঁ সেই ভালো কাজের কথা আগে, তারপর খাওয়া দাওয়া।
আমরা সবাই আমার ঘরে এলাম। ছোটমা বাধা দিয়ে বলেছিলেন, বড়দার ঘরে বোস না।
কেনো ? ছাটমা চোখ পকালেন।
আমি মাথা নীচু করে হাসতে হাসতে বললাম, তুমি মিত্রাদের আদি বাড়িতে যাওনি। গেলে এ কথা বলতে না।
মিত্রা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে, মিঃ ব্যানার্জী আমার দিকে একবার তাকালেন।
আয়, আসুন আমি ওদের আমার ঘরে এনে বসালাম। এই বাড়িটার এই ঘরটা সবচেয়ে সুন্দর। অন্ততঃ আমার কাছে। পিওর ব্যাচেলার্স কোয়ার্টার বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। তবু এটা কিছুটা মন্দের ভালো। সৌজন্যে ছোটমা বড়মা। আমার জানলার ধারেই বিশাল একটা আমগাছ। তার পাশেই বড় একটা নিমগাছ। এছাড়া আরো কত গাছ আছে। অমিতাভদা ওঁর যৌবন বয়সে এই বাগান বাড়িটা কিনেছিলেন। সামনের দিকে কিছুটা অংশ বাগান। বাকিটা পেছনে। প্রায় ২৫ কাঠা জমির ওপর বাড়িটা। কেনার সময় গাছ কিছু ছিল বাকি অমিতাভদা পুঁতেছেন। এখন পরিচর্যার অভাবে জঙ্গল। একে একে সবাই বসলেন। আমি আমার ভাঙ্গা চেয়ারে বসলাম।
কাল কখন ফিরলেন।
বিকেলের ফ্লাইটে।
আপনাকে কাছে পাওয়া খুব মুস্কিল।
কি করবো বলো। ডাক্তারদের কোন জীবন নেই।
না না এমন ভাবে বলবেন না। আপনি শুধু ডাক্তার হলে আলাদা কথা ছিলো। আপনি এশিয়াতে একটা ফিগার।
লোকে বলে।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
দেখছোতো অনি, তোমার বান্ধবীর অবস্থা। আমাকে ডাক্তার বলে মনে করে না। বলে কিনা আমি ভেটারনারি ডাক্তার।
সবাই হেসে উঠলাম।
একচ্যুয়েলি ও তো আপনার পাশে আছে। সব সময় দেখে, তাই। আমরা আপনাকে সেই ভাবে পাই না তাই বলি।
ওকে বোঝাও। ওর পাগলামির চোটে আমি পাগল হয়ে যাবো।
এই দেখো ভাল হচ্ছে না কিন্তু। মিত্রা বললো।
থাক। বাড়িতে গিয়ে কুস্তি করিস। আমরা কেউ দেখতে যাবো না।
আমি আমার ঘরে এসে ল্যাপটপটা নিয়ে বসলাম। আমার জীবনের একটা নতুন দিকের উন্মোচন হলো। মানুষের জীবনে কত কিছু জানার আছে। এক জন্মে তা শেষ করা যায় না। আমারও তাই অবস্থা। হঠাৎ অমিতাভদার গলার শব্দে সচকিত হয়ে পেছন ফিরে তাকালাম।
তোর সঙ্গে কিছু কথা ছিলো।
ভেতরে আসুন। আমার এই ঘরে একটা কাপরের ইজি চেয়ার আছে। অমিতাভদা তাতে এসে বসলেন। বললেন, মনা তোকে যে চিঠিটা দিয়েছে তুইতো পরলি না।
আপনি পরেছেন ?
পরেছি।
তাহলে।
ও তোকে একবার যেতে বলেছে।
কেনো ?
তোর সম্পত্তি বুঝে নেবার জন্য।
সে নিয়ে আমি কি করবো।
তা ঠিক। তবে তোর মনার প্রতি কিছু কর্তব্য আছে। ছোট থেকে সেইই তোকে মানুষ করেছে।
বলতে যাচ্ছিলাম, সেতো আপনি মাসে মাসে টাকা পাঠাচ্ছেন। চুপ করে থাকলাম। এতদিন এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা ভাবি নি। হঠাত ভাবনাটা মাথা চারা দিয়ে উঠলো। সত্যিতো।
তার এখন বয়েস হয়েছে। আজ বাদে কাল......। সে তোকে তোর সব কিছু বুঝিয়ে দিতে চায়।
আমি মাথা নীচু করে বসে আছি।
একবার ওখানে যা। তাকে ঋণ মুক্ত কর।
ঠিক আছে যাব।
কবে যাবি।
আপনি বলুন।
কালই চলে যা। এ কদিন তো অফিস ডামা ডোলে চলবে।
কেনো।
আমি সব খোঁজ খবর রাখছি। ওটার দ্বারা কিছু হবে না। কাগজটা দেখিস।
না।
কি করিস তাহলে সারাদিন।
চুপচাপ থাকলাম।
মিত্রা কেনো আসছে।
জানিনা। তবে ওকে বলেছিলাম, আমরা যা আলোচনা করলাম, জামাইবাবুকে একবার জানানো উচিত, আফটারঅল উনি তোর গার্জেন।
মিত্রা কি মিঃ ব্যানার্জীকে....।
না সেভাবে পাত্তা দেয়না।
মল্লিকদা এলেন। খাটের ওপর বসলেন। বুঝলেন বেশ গুরু গম্ভীর আলোচনা চলছে।
তুই কি বলিস।
আমার কিছু বলার নেই, মিত্রা যা ডিসিসন নেবে ওটাই ঠিক ও ৭৫ ভাগ শেয়ার হোল্ড করছে।
না।
আপনার কাছে খবরটা ভুল আছে।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন। মল্লিকদা অবাক হয়ে আমার কথা শুনছেন। ছোটমা চায়ের পট কাপ নিয়ে এসে হাজির, ঘরের আবহাওয়ায় বুঝলেন পরিবেশ তার অনুকূল নয়। চা দিয়ে চলে গেল।
চা খেতে খেতে অমিতাভদা বললেন, তুই যে ডিসিসন গুলো ওকে দিয়েছিস তা কি ঠিক ?
বেঠিক কোথায় বলুন।
ও কি সামলাতে পারবে।
ওর রক্তে বিজনেস। ওদের সাতপুরুষের ব্যবসা, ব্লাড কোনদিন বিট্রে করে না।
আমার কথাটা শুনে অমিতাভদা কেমন যেন থমকে গেলেন। মল্লিকদা অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয় আছেন। কোনমতেই এতোদিনকার দেখা অনির সঙ্গে এই মুহূর্তের অনিকে মেলাতে পারছেন না।
ওই যে নতুন ছেলে গুলো এসেছে।
ওই ব্যাপার নিয়ে আপনি ভাববেন না। আপনি এতদিন সব ব্যাপার নিয়ে ভেবেছেন। তাতে অনেকের আপনি শত্রু হয়েছেন। আপনি এবার আপনার জায়গাটা নিয়ে ভাবুন। আর কে কি করছে তাতে আপনার কি যায় আসে।
কথাটা তুই ঠিক বলেছিস। মল্লিকদা বললেন।
অমিতাভদা মল্লিকদার দিকে তাকালেন। তুই তো কোনদিন এ ভাবে আমাকে বলিসনি।
বলার সময় পেয়ছি কোথায়। তুমি যা বলেছো, তা অন্ধের মতো পালন করার চেষ্টা করেছি।
সেটা ঠিক আছে। তবে যুগ বদলেছে, সময় বদলেছে, তোমাকে এগুলো মেনে নিতে হবে। আমি বললাম।
তুই কি ভাবছিস অন্যারা এগুলো মেনে নেবে।
যারা মানবে না, তাদের সরে যেতে হবে।
কি বলছিস।
ঠিক বলছি।
দামানি মল আলুওয়ালিয়ারা ছেরে দেবে।
প্রথমজন শেয়ার বেচে দিয়েছে মিত্রার কাছ। আপনি যে লবির হয়ে এতদিন কাজ করছিলেন। আপনি জানেন ?
না।
বাকি দুজন শেয়ার বেচে চলে যাবে।
কে কিনবে।
মিত্রা কিনে নেবে।
কি বলছিস তুই। আলুওয়ালিয়া মিত্রাকে শেয়ার বেচবেনা।
বাধ্য করবো।
আমিতাভদা ঘার নাড়ছেন।
আমি ঠিক বলছি। ও যদি মনে করে একাই সমস্ত শেয়ার কিনে নিতে পারে। আমি ভেতর ভেতর সেই ব্যবস্থা করছি।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন। মল্লিকদা অবাক। বড়মা ঢুকলেন।
আচ্ছা তোমরা কি ছেলেটাকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না।
দাঁড়াওতো। খালি বক বক বক। অমিতাভ খেঁকিয়ে উঠলেন।
আমি এগিয়ে গিয়ে বড়মাকে ব্যাপারটা বোঝালাম। বড়মা শিশুসুলভ ভাবে বললেন, অনি আমি একটু শুনবো। আমি বড়মাকে চেয়ারটা দিয়ে বললাম, ঠিক আছে তুমি বসো কিন্তু কোন কথা বলতে পারবে না। বড়মা বললেন ঠিক আছে, অমিতাভদা কর্কশ নেত্রে আমার দিকে তাকালেন। মুখে কিছু বললেন না।
ওরা খুব একটা সহজে ছেড়ে দেবে না।
কেউকি দেয়। দিতে বাধ্য হয়।
এখন কতটা শেয়ার বাইরে পরে আছে।
আলুওয়ালিয়া কুড়ি মল পাঁচ।
আপনি এতদিন দামানির লবির হয়ে কাজ করেছেন, মিত্রার বাবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক খুব একটা ভাল ছিল না।
অমিতাভদা ঘাড় নাড়ছেন।
কেনো ? ভদ্রলোক খারাপ ছিলেন না। অমি যতটুকু জানি।
অমিতাভদা মাথানীচু করে বসে আছেন।
আমার ভুল হলে আপনি আমাকে বলতে পারেন।
তুই এখবর জোগাড় করলি কোথা থেকে।
আমার সোর্সের ব্যাপারে আমি কিছু বলবো না। যা বলছি ঠিক কিনা।
হ্যাঁ।
কাজের জায়গায় ব্যক্তিগত আক্রোশ আসবে কেনো।
আমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন, চোখে বিস্ময়।
দামানি আজ থেকে মাস আষ্টেক আগে শেয়ার বেচে দিয়েছে, মিত্রার কাছে। আপনি তা জানতেন।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন।
আমি জানতাম, আপনাকে বলিনি।
কেনো।
আজ পরিস্থিতি এমন পজিসনে যে আপনি আমার কথা শুনছেন, ছ’মাস আগে বললে আপনি আমার কথা শুনতেন।
বড়মা মাথা নাড়ছেন। মনে মনে বেশ আনন্দ পাচ্ছেন। যাক এমন একজন তাহলে তৈরি হয়েছে, যে ওর মুখের ওপর সপাটে উত্তর দিতে পারছে।
অমিতাভদা চুপ।
আমি যদি আপনার পরিচিত না হতাম এবং মিত্রা যদি আমার পূর্ব পরিচিতা না হতো তাহলে আপনাকে আমাকে সবাইকে সরে যেতে হতো।
অমিতাভদা মাথা নীচু করে বসে আছেন।
আপনি হয়তো জানেন না আপনার লবির ৪০ ভাগ লোককে তারিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৬০ ভাগ লোক আপনাকে ছেড়ে সুনিতদার ন্যাওটা হয়েছে। বাকি খবর এখনো আমার কাছে এসে পৌঁছয় নি।
অমিতাভদার চোখ দুটো ছল ছলে। বড়মার চোখে আগুনের হল্কা। কখন যে ছোটমা এসে দাঁড়িয়েছেন জানি না।
আপনার ঘরে আপাতত সুনিতদাকে বসাচ্ছি। মানে ওকে আমি বলির পাঁঠা করবো। আপনি আপাতত আমার কোন কাজে বাধা দেবেন না।
কি বলছিস অনি। মল্লিকদা বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বললেন।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকালেন, চোখ দুটো স্থির।
এই কদিনের মধ্যে কুড়ি পার্সেন্ট শেয়ার আমার চাই। মিত্রাকে বলেছি টাকা জোগাড় করতে।
অমিতাভদা হতাশ দৃষ্টিতে বললেন, ওরা দেবে।
দেবে না। ছেড়ে দেবে। ওটা হিমাংশু ব্যবস্থা করছে।
হিমাংশু কে।
আমর বন্ধু, চাটার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট। আর বেশি কিছু জানতে চাইবেন না।
অমিতাভদার গালে কেউ যেন সপাটে একটা থাপ্পর কষাল, এমন ভাবে আমার দিকে তাকালেন। স্থবিরের মতো ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমার হাত দুটো ধরে আমাকে বুক জরিয়ে ধরে ছোট্ট শিশুর মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
বড়মা কাপড়ের খোঁট দিয়ে চোখ মুছছেন। ছোটমা মাথা নীচু করে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটি ঘষছে। কাপরের খোঁটটা ধরে আঙুলে জড়াচ্ছে। মল্লিকদা খাটের এক কোনে স্থানুর মতো বসে আছেন। কাঁদতে কাঁদতে অমিতাভদা বললেন, মিনু তুমি আমার কাছে সন্তান চেয়েছিলে, তোমাকে দিতে পারি নি, এই নাও তোমার ছেলেকে, বড়মা এগিয়ে এলেন, আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, মা-বাবা কি জিনিষ জানতাম না, আজ জানলাম, ছোটমা কাছে এসে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন, বুবুন মাকে পেয়ে ছোটমাকে ভুলে যাবি নাতে।
মিত্রারা এলো প্রায় দেড়টা নাগাদ। আমি তখন আমার ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছি। অফিসে কম্পিউটর ঘাঁটা ঘাঁটি করি তাই সেই ভাবে খুব একটা অসুবিধা হলো না। বেশ তাড়াতাড়ি সরোগরো হয় গেলাম। ছোটমা এসে বললেন, চলুন আপনার গেস্টরা চলে এসেছেন।
আমি ছোটমার মুখের দিকে তাকালাম, ছোটমা হাসছে। এ হাসি পরিতৃপ্তির হাসি। এ হাসি মন ভাল হয়ে যাবার হাসি। এ হাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে হারিয়ে গিয়ে আবার ফিরে পাওয়া।
কি হলো ওই ভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয় কি দেখছিস।
তোমাকে।
তবেরে দুষ্টু, বলে আমার কান ধরলো।
উঃ ছোটমা লাগছে। ছাড় ছাড়।
ছোটমার চোখ চোখ রেখে বললাম, কেমন দেখলে ?
দারুন।
কি দারুন।
মিত্রাকে দেখতে।
পছন্দ।
ছোটমা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন, পছন্দ হয়ে আর হবে কি।
ঠিক। কপালে নেইকো ঘি ঠক ঠকালে পাবে কি।
আর বুড়োমি করতে হবে না। এবার চলো।
বড়মা কি বলছেন।
খুব শুনতে ইচ্ছে করছে না।
মাথা নারলাম।
বিয়ে না হলে বউ করতেন।
ওতো আমার বউ।
যাঃ।
হ্যাঁগো।
চল চল ওরা বসে আছে।
চলো।
ছোটমার পেছন পেছন নিচে চলে এলাম, এরি মধ্যে মিঃ ব্যানার্জী, মিত্রা, অমিতাভদা, মল্লিকদা বেশ জমিয়ে গল্প শুরু করে দিয়েছেন। আমাকে দেখেই মিত্রার চোখ দুটো চক চক করে উঠলো। সবার চোখ এড়ালেও ছোটমার চোখ এড়ালো না। মিঃ ব্যানার্জী বললেন, এসো অনি তোমার জন্য.....।
মল্লিকদা মিঃ ব্যানার্জীকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, না স্যার, অনি নয়, অনিবাবু। সবাই হো হো করে হসে উঠলো।
আমি মিত্রার পাশে সোফার খালি জায়গায় বসে পরলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, সবার সঙ্গে দাদার আলাপ করিয়ে দিয়েছিস।
ও বোকা বোকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমার আগে মল্লিকদা সবার সঙ্গে আলাপ করেছেন এবং আলাপ করিয়ে দিয়েছেন।
বড়মার সঙ্গে আলাপ হয়েছে।
হ্যাঁ।
তুই বড়লোক মানুষ, বড়মা বিশ্বাসই করতে পারে নি তুই এখানে আসতে পারিস।
গালে একটি থাপ্পর।
হ্যাঁরে সত্যি। দাদার সঙ্গে কথা বলার পর তোর সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, এরা আমাকে পাগল ভাবছিল।
এতটা ঠিক নয়। মিঃ ব্যানার্জী বললেন।
ছোটমা চোখ পাকিয়ে গোল গোল চোখ করলেন, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
বড়মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, ও কোনদিন পরিষ্কার করে কোন কথা বলে না। সব সময় একটা হেঁয়ালি।
ঠিক বলেছেন, এটা ওর চিরকালের অভ্যাস। মিত্রা বললো।
তোমরা আমার থেকে বেশি জানবে মা। আমি আর কতটুকু দেখলাম।
কলেজেও ও এরকম ছিল। সব সময় দেখছি দেখবো খাচ্ছি খাবো ভাব। খালি ডঃ রায় যখন কোন কথা বলতেন তখন বুবুনকে পায় কে। ও তখন সিরিয়াস।
ডঃ রায় কে ?
আমাদের হেডডিপ ছিলেন ।
সমকালীন পত্রিকায় একসময় খুব ভালো ভালো প্রবন্ধ লিখতেন। এখনও লেখেন, আমাদের কাগজেও লিখেছেন, তবে খুব কম, এখন উনি সমালোচক হিসাবে বেশ নাম করেছেন অমিতাভদা বললেন।
ও আরো ভালো বলতে পারবে। ও স্যারের পোষ্যপুত্র ছিলো। মিত্রা বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
ঠিক বলেছো। এখানেও তাই। খালি বড় সাহেব কিছু বললে ও শুনবে আর কাউকে কোন পাত্তাই দেয়না। অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বড়মা বললেন।
খিদে পেয়েছে। তোর পায় নি। মিত্রার দিকে তাকালাম।
কি রাক্ষসরে তুই। এইতো কয়েকঘন্টা আগে অতগুলো লুচি গিললি এরি মধ্যে.....ছোটমা বললেন।
সকলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
তাহলে চলো আমার ঘরে গিয়ে বসি।
আমার কথাটা মিঃ ব্যানার্জী লুফে নিলেন। হ্যাঁ হ্যাঁ সেই ভালো কাজের কথা আগে, তারপর খাওয়া দাওয়া।
আমরা সবাই আমার ঘরে এলাম। ছোটমা বাধা দিয়ে বলেছিলেন, বড়দার ঘরে বোস না।
কেনো ? ছাটমা চোখ পকালেন।
আমি মাথা নীচু করে হাসতে হাসতে বললাম, তুমি মিত্রাদের আদি বাড়িতে যাওনি। গেলে এ কথা বলতে না।
মিত্রা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে, মিঃ ব্যানার্জী আমার দিকে একবার তাকালেন।
আয়, আসুন আমি ওদের আমার ঘরে এনে বসালাম। এই বাড়িটার এই ঘরটা সবচেয়ে সুন্দর। অন্ততঃ আমার কাছে। পিওর ব্যাচেলার্স কোয়ার্টার বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। তবু এটা কিছুটা মন্দের ভালো। সৌজন্যে ছোটমা বড়মা। আমার জানলার ধারেই বিশাল একটা আমগাছ। তার পাশেই বড় একটা নিমগাছ। এছাড়া আরো কত গাছ আছে। অমিতাভদা ওঁর যৌবন বয়সে এই বাগান বাড়িটা কিনেছিলেন। সামনের দিকে কিছুটা অংশ বাগান। বাকিটা পেছনে। প্রায় ২৫ কাঠা জমির ওপর বাড়িটা। কেনার সময় গাছ কিছু ছিল বাকি অমিতাভদা পুঁতেছেন। এখন পরিচর্যার অভাবে জঙ্গল। একে একে সবাই বসলেন। আমি আমার ভাঙ্গা চেয়ারে বসলাম।
কাল কখন ফিরলেন।
বিকেলের ফ্লাইটে।
আপনাকে কাছে পাওয়া খুব মুস্কিল।
কি করবো বলো। ডাক্তারদের কোন জীবন নেই।
না না এমন ভাবে বলবেন না। আপনি শুধু ডাক্তার হলে আলাদা কথা ছিলো। আপনি এশিয়াতে একটা ফিগার।
লোকে বলে।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
দেখছোতো অনি, তোমার বান্ধবীর অবস্থা। আমাকে ডাক্তার বলে মনে করে না। বলে কিনা আমি ভেটারনারি ডাক্তার।
সবাই হেসে উঠলাম।
একচ্যুয়েলি ও তো আপনার পাশে আছে। সব সময় দেখে, তাই। আমরা আপনাকে সেই ভাবে পাই না তাই বলি।
ওকে বোঝাও। ওর পাগলামির চোটে আমি পাগল হয়ে যাবো।
এই দেখো ভাল হচ্ছে না কিন্তু। মিত্রা বললো।
থাক। বাড়িতে গিয়ে কুস্তি করিস। আমরা কেউ দেখতে যাবো না।