31-12-2018, 04:39 PM
সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে শুনতে পাচ্ছি মেয়েটা বলছে ‘আরে দেখনে কা প্যাইয়সা দেনা চাহিয়েনা...।’
বিমল মেয়েটাকে অনুনয় বিনয় করছে কাপর পরে ঘরে যাওয়ার জন্যে, আর মেয়েটা অবাক ভাবে জিজ্ঞেস করছে যে ওকে কেন আমার পছন্দ হোলো না।
এই মেয়েটা তো বলিউডের হিরোয়িনদেরকেও টেক্কা দেবে। ও কেন এখানে। গুদ দিয়ে কত ইনকাম করে?
বুকের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত উত্তেজনা নয়ে মিলুর পিছন পিছন দ্রুত উঠে এলাম। নিজের কানেই যেন হার্ট বিট শুনতে পাচ্ছি।
দোতলার তিন নম্বর ঘরটা আমাদের।
নাহঃ বাইরের আবরন দেখে বোঝা যায়না যে ভিতরে এরকম জিনিস থাকতে পারে।
বেশ আধুনিক ঘরটা। খুব দামি জিনিসপত্র না থাকলেও বেশ টিপটপ। টিউবের আলো বেশ ঝকঝক করছে। সাদা চাদর পাতা বিছানায়। বেতের দুটো চেয়ারের মাঝে একটা গ্লাসটপ টেবিল। মানে বেশ পেশাদার ভাবেই সাজানো। বোঝায় যাচ্ছে, ব্যাবসার ধরন ধারন।
মিলু একটা চেয়ারে বসে আমার দিকে হেয়ালি করে তাকিয়ে আছে, মুখে ব্যাঙ্গের হাসি।
‘কি পছন্দ?’
‘এই জায়গায় এরকম ঠেক পাতলে কি ভাবে?’
‘এই দ্যাখো, তুমিও না, এসব গোপন কথা কেউ জিজ্ঞেস করে?’
‘বারে, জিজ্ঞেস করবো না? কার সাথে কোথায় এলাম জানবো না? বাজারের মেয়েছেলে হলে আলাদা ব্যাপার ছিলো, কিন্তু তুমি তো আর তা না। আমি যদি সেচ্ছায় আসতাম কোন এরকম জায়গায়, তাহলে নিজে দায়িত্ব নিয়ে বুঝে নিতাম, কিন্তু আমি এসেছি তোমার সাথে তাই জানতে তো ইচ্ছে করবেই।’ ইচ্ছে করেই আমি ওকে বাজারের মেয়েছেলে কথাটা নস্তর্থক বাক্যে বুঝিয়ে দিলাম, আর সাথে সেন্টুও দিলাম যে তুমি বাজারের না ঘরোয়া, মানে এমেচার খানকী।
‘আরে এসব নিয়ে চিন্তা কোরো না। এখানে আমার মত অনেকেই আসে। কি চায় তোমার? আমি তো এলেবেলে। এখানে অনেক কলেজের মেয়ে থেকে এয়ার হোস্টেস, এমন কি ছেলেরাও ছেলে নিয়ে আসে। দিনের বেলা কিছু দেখতে পাবেনা। দুপুরের পর থেকে সব আসা শুরু করে। কেউই এখানে স্থায়ী থাকেনা। আগে থেকে ঠিক করা থাকলে তবেই আসে।’
‘দেখে তো মনে হোলো, অন্যান্য এরিয়ার মতই, যেরকম সবাই দাড়ায় সেরকমই তো, আলাদা কিছু দেখলাম না তো?’
‘ওই আস্তে আস্তে সেরকম হয়ে যাচ্ছে, লোকের মুখে জানতে জানতে আস্তে আস্তে সবাই ভিড় করছে, আর পরিবেশ নষ্ট করছে। আগে এখানে শুধু ঘর ভাড়া পাওয়া যেত। তাও দিনের হিসেবে বা ঘন্টার হিসেবে। হিল্লি দিল্লী থেকে মেয়েরা এসে এখানে ভিড় জমায়। কলেজ কলেজের ছুটিগুলো যখন পরে তখন দেখবে কচি কচি মেয়েতে গিজগিজ করছে। নিজের এলাকায় করলে বদনাম হবে তাই বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ভিড় করে, ঐ যে চিড়িয়াখানায় দেখোনা শীতকালে বিদেশ থেকে পাখি আসে, ঠিক সেরকম। এখানে অনেক এরকম গলি আছে।’
‘কিন্তু তুমি কি করে চেনো এই জায়গা? সেটা তো বলতে হবে।’
‘আরে আমাদের ওখানকার একজনের কিছু সম্পত্তি আছে এখানে। ঢোকার সময় দেখলে না একটা বড় বাড়ি। ওটা ওদের অফিস, আর এ গলির সব বাড়ির মালিক বা দখলদার যাই বলো না কেন সব এসে ঐ বাড়িতে ভিড় করে। এদের আরো অনেক ব্যাবসাপাতি আছে। ওই লোকটাও তোমার মত, এলাকায় কিছু করবে না। তাই নিয়ে আসতো এখানে। তোমাকে আর নতুন করে কি বলবো?’
‘ও, বুঝলাম, জানি আমার কৌতুহলে বুক ফেটে গেলেও তুমি লোকটার নাম আমাকে বলবে না, ছারো আমি জানতেও চাই না। কিন্তু নিচের মেয়েটার কেসটা কি?’
মিলু জিভ কেটে বললো ‘আরে বাবা ওর কথা বোলো না। একদম মন থেকে মুছে দাও। তুমি কিছু দেখোনি।’
‘কেন? এরকম একটা ফুলের মত মেয়ে, কত আর বয়েস হবে...।’
‘তুমি কি এই করে সমইয় নষ্ট করবে?’
‘আরে এতো তারাহুরোর কি আছে? এসেই কি খোলাখুলি করতে ভাল লাগে? একটু গল্প হবে, ভালোবাসা হবে তবেতো জমবে। কিন্তু মেয়েটা কেমন অদ্ভুত ভাবে দেখছিলো ...’
‘এর মধ্যে প্রেমে পরে গেলে নাকি ল্যাংটো দেখে।’
‘প্রেমে পরাটাই কি সব? একটা অল্প বয়েসি মেয়ে দেখে মনে হয় ভালো ঘরের, সে এরকম করছে কেন সেটা জানতে ইচ্ছে করেনা? তারওপর নিজের চোখে যেখানে দেখলাম!’
‘আরে বাবা এত কৌতুহল ভালো না। এর পিছনে অনেক ইতিহাস আছে? তোমাকে আর এখানে আসতে হবেনা কিন্তু দয়া করে এসব নিয়ে কোন কথা বোলো না। এই মেয়েটা এখানকার একজনের বাঁধা মেয়েছেলে, অনেক গল্প আছে, মেয়েটা খুব বাজে, ইঞ্জেকশান নিয়ে নেশা করে। দিল্লির মেয়ে...এখানে সিনেমা করবে বলে এসেছিলো... খুব দেমাগ ছিলো আর এখন কি করছিস...।’ বুঝলাম মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু হয়।
‘মানে ওকে কি এখানে আটকে রেখেছে?’
‘ধুর তুমিও না আবোলতাবোল বকেই চলেছো। বসেই থাকবে নাকি?’
মিলু উঠে এসে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো, কয়েকমুহুর্ত ঠোঁটের সাথে ধস্তাধস্তির পরে সরে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো ‘কি ব্যাপার এরকম নিরস ভাবে বসে আছো?’ চোখে অভিমানের সাথে আগুনের হল্কা।
আমি মাথা নিচু করে বললাম ‘আজকে আবার সেরকম হচ্ছে ......।’
‘কি হচ্ছে?’
‘সেই মাথা যন্ত্রনা, এই জন্যেই তো...’
‘এই জন্যে কি?’
‘কি বলি বলোতো তোমাকে?’
মিলু কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েই বললো ‘কি হয়েছে বলবে তো?’
‘আস্তে চিৎকার কোরোনা, তাতে আরো যন্ত্রনা বেড়ে জাবে।’
‘বাবা তোমার তো অনেক সমস্যা গো।’
‘কি করবো বলো এরকম মারন রোগ কি আর কেউ ইচ্ছে করে বাঁধায়?’
‘মারন রোগ?’
‘হ্যাঁ, ব্রেন টিউমারের কথা শুনেছো?’
‘তোমার?’
‘হ্যাঁ, জানিনা কোনোদিন ঠিক হবে কিনা?’
‘কি হবে তাহলে?’
‘এই জন্যেই তো আমি এসব প্রলোভনে পা দিই না... জানিনা কোনোদিন সুস্থ হতে পারবো কিনা... কতদিন বাঁচবো তাও জানিনা।’
‘ছি ছি এরকম করে বোলো না, এমন সুন্দর পুরুষ মানুষ তুমি আর তোমার এই রোগ...’ বুঝলাম টোটকায় কাজ হয়েছে।
‘একটু বিশ্রাম করে নাও আমি অপেক্ষা করছি, তোমার ইচ্ছে না করলে করতে হবেনা’
‘যত সময় যাবে ততই বেরে জাবে এটা, যতক্ষন না ওষূধ পরছে। এরপর বাড়াবাড়ি হলে সামলাতে পারবেনা।’
‘ও, ঠিক আছে তাহলে চলো বেরিয়ে যাই’
নিচে নামতে নামতে আমার কানে একটা চেনা গলা এলো, সেই মেয়েটার ঘর থেকে। কোন মহিলা ওই মেয়েটা আর বাহাদুরকে শাসাচ্ছে। গলার স্বরটা আমি চিনি। বুঝলাম আমাকে আরো বেশ কয়েকবার এখানে আসতে হবে।
রাতের বেলা তুলির সাথে অনেক গল্প হোলো। বেশিটা ওর ফাংশান নিয়ে। মনটা ফুরফুর করছে বিজয়ার মাকে কাঁটাতে পেরে। যাক বাবা একটা জম্পেশ ঢপ মেরেছি মালটাকে।
তুলির ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে পরের দিন আবার সেই জায়গায় গেলাম। আগের দিনের চেনা গলা আর সেই মেয়েটার কেসটা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। বুঝে উঠতে পারছিনা যে এই রকম একটা মেয়ে সখে করতে পারে কিন্তু এরকম ভাবে পেশাদার কি করে হয়ে যায়। আর সেই মহিলা ওকে ঘর থেকে বেরোনোর জন্যে শাসাচ্ছিল কেন? মহিলার কি স্বার্থ।
সেই জায়গাটার অমোঘ আকর্ষনে আবার চলে গেলাম সেখানে। কোনোরকমে নিজেকে আড়াল করে ঢুকে গেলাম সেই বাড়িটাতে।
বাহাদুরের ঘরে নক ওকে ডাকলাম। ব্যাটা চোখ কচলাতে কচলাতে বেরিয়ে আমাকে দেখে প্রথম কয়েক মুহুর্ত থমকে গেলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো ‘ম্যাডাম আসেনি?’
‘না আজকে আমি একাই এসেছি?’
‘পছন্দ করেছেন?’
‘হ্যাঁ কালকেই করে গেছিলাম’
‘কালকের কেউ তো আসেনি আজকে?’
‘কেন কালকে যে আমাকে ধরে টানাটানি করলো সে আজকে নেই?’
বাহাদুর ভুত দেখার মত চমকে উঠলো আমার কথা শুনে ‘বাবু আপনি চলে যান, ও দিদি এমনি বসেনা।’
‘কালকে তো বসতে চাইছিলো।’
‘নেশায় ছিলো, নেশার জিনিস না পেলেই ওরকম করে।’
‘ওই আমার চলবে’ আমি বাহাদুরের কাঁধে হাত দিয়ে পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে দিলাম। বাহাদুর ইতস্তত করছে।
‘ঠিক আছে বাহাদুর আমি ওই দিদির সাথে বসবো না। কিন্তু কি জানো ওই দিদির প্রেমে পরে গেছি আমি, আমার খুব ভালো লেগেছে ওকে, আমি তোমার থেকে ওর কথা শুনতে চাই’ আমি আরেকটা একশো টাকার নোট বের করে দিলাম ওকে। ‘আমি কি তোমার ঘরে বসতে পারি বাহাদুর একটু গল্প করবো ব্যাস তারপর চলে যাবো’
দুশো টাকা পেয়ে বাহাদুর আমাকে ওর ঘরে নিয়ে গেলো।
আমি গাজা ভরা দুটো সিগেরেট বের করলাম। একটা বাহাদুরের দিকে এগিয়ে দিলাম। বাহাদুর সন্দেহের সাথে হাত বারিয়ে নিয়ে নিলো। আমি বললাম ‘তামাক ভরা আছে... আমাকে দেখেই তো বুঝতে পারছো যে আমি একটু অন্যরকম।’
বাহাদুর দেঁতো হেসে বললো ‘অনেকদিন টান দিইনি। মাথা না ঘুরে যায়?’
‘কিছু হবেনা তুমি এত হাট্টাকাট্টা জওয়ান তোমার আর কি হবে।’ দেশলাই জালিয়ে ওর দিকে আগে বারিয়ে দিলাম।
সলিড একটা টান দিলো, একফোটা ধোয়াও ছারলো না। তার সাথে খক খক করে কাশি। আমারটা আমি গাজা ভরিনি। তাই আমিও সেরকম করেই তামাক টানার অভিনয় করলাম।
এক মিনিট যেতেই বুঝলাম বাহাদুরের চোখ ছোট হয়ে গেছে।
আমি আমার কাজ শুরু করলাম।
-শোনো কেউ এসে ডাকলে বলবে না যে আমি ভিতরে আছি। কেউ জানতে পারলে তোমাকে আর আমাকে গল্প করতে দেবে না।
- আপনি বলুন, আপনার মত লোক আমি দেখিনি আগে।
-আসলে কি জানো আমি একটু লিখিটিখি, তাই সবার সাথে গল্প করতে ভালো লাগে। কালকে তোমার এই দিদিটাকে খুব মনে ধরেছে। ভাবছিলাম ওকে নিয়ে লিখবো। আমার গল্প নিয়ে অনেক সিনেমা হয়েছে জানোতো, আমার তো এই দিদিকে হিরোয়িন করার খুব সখ। আমি বললেই লুফে নেবে, যা দেখতে একদম ফাঁটিয়ে দেবে।
-ও আপনি সিনেমাও করেন নাকি?
-আমি না আমার গল্প নিয়ে করে, অন্য লোকে।
-আপনি রোল দিতে পারেন?
-হ্যাঁ। কত তো দিয়েছি। এই তোমার দিদিকে দেখে খুব পছন্দ হয়েছিলো। কিন্তু কি আর করা যাবে...
-আরে এই দিদি তো সিনেমায় করতে এসেছিলো।
-সিনেমা করতে তো এখানে কেন?
-ধোকা খেয়ে বাবু।
-ধোকা খেয়ে? মানে?
-এই সিনেমার লাইনে তো হরদম এসব হচ্ছে। ভালো ভালো মেয়ে আসে আর কিছু করতে না পেরে এই লাইনে চলে আসে।
-তুমি এত জানো কি করে বাহাদুর?
-এই তো দেখছি তো। এখানে স্টুডিও পাড়ার অনেক লোক আসে কচি কচি মেয়ে নিয়ে বলে শুলে রোল পাবে।
-তুমি দেখো এসব, কিছু বলনা?
-কি বলবো? পেটের দায়ে কাজ করছি, বাবু বেশ যত্ন আত্তি করে আমার, আমার কি দরকার এসব ব্যাপারে নাক গলানোর।
-কে তোমার বাবু? আর এটা কি এমন ভালো আছো?
-বাবুর নাম বলতে পারবোনা, বারন আছে, অনেকে আছে এরকম জিজ্ঞেস করে।
-আরে আমি কি পুলিশের লোক নাকি যে আমাকে বলতে ভয় পাচ্ছো। লেখার সময় না হয় অন্য নাম বানিয়ে দেবো। ভাবছি তোমার জন্যেও বেশ কিছুটা জায়গা রাখবো।
-সিনেমাতেও আমার রোল থাকবে? বাহাদুর চকচকে হয়ে উঠলো।
-হ্যাঁ তোমার মুখ দিয়েই ভাবছি গল্পটা বলাবো।
কি বুঝলো জানিনা বাহাদুর বেশ গদগদ হয়ে উঠলো।
-ভালো টাকা পাওয়া যাবে? আমি দার্জিলিঙ ফিরে যেতে পারবো? অনেক টাকা লাগবে তো ধার শোধ না করতে পারলে আমি আর ঢুকতে পারবোনা।
-কিসের ধার?
-ও অনেক দুঃখের কথা বাবু। সেই জন্যে তো বেইজ্জত হয়েও এখানে কাজ করি। ভালো লাগে বলুন এসব করতে।
-তো তুমি এখানে এলে কি করে?
-এই বাড়ির মালিক দার্জিলিং যেতেন, লেবার ঠিকাদার ছিলেন উনি। সেখান থেকেই পরিচয় আমার সাথে।
-ওঃ। কি নাম তোমার মালিকের?
-সুকুমার দাদা বলে জানি।
বুঝলাম আমার তীর সঠিক জায়গায় লেগেছে। আরেকটু টানলেই সব বেরিয়ে আসবে।
-তো এই মেয়েছেলের ব্যাবসা কি উনার নাকি?
- বিমল একটু চুপ করে থেকে আমাকে জিজ্ঞেস করলো ‘আপনি কি পুলিশের লোক দাদা?’
- আরে দূর তুমিও না, এতক্ষন তোমার সাথে কথা বলছি মন খুলে আর তুমি এসব ভাবছো মনে মনে? কত সাধ্য সাধনা করে একজন পেলাম মনের কথা বলার জন্যে।
-দেখুন দাদা আমি মুর্খ মানুষ, আমি যেন বিপদে না পরি।
- আরে তুমি কেন বিপদে পরবে, আমি কথা দিচ্ছি তোমার কোনদিন কোন বিপদ হবেনা। আর আমি চাইলেই তো পুলিশে খবর দিতে পারতাম, পুলিশ তো মেরেই কথা বের করে নিতে পারে। আমি এত কষ্ট করবো কেন?
-বিমল একটু চুপ করে থেকে বলতে শুরু করলো। মেয়েছেলের ব্যাবসার কথা আমিই ভুল করে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম দাদার মাথায়। বুঝতে পারিনি কি ভুল করেছি। দার্জিলিঙ্গে যখন যেতো এই দাদা, আমিই মেয়েছেলে দিতাম এনাকে। নিত্যনতুন মেয়েছেলে চাইতো। পাহাড়ে তো অনেক গরিব পরিবার আছে, তাদের মা বাবাকে রাজী করানো এমন কিছু ব্যাপার ছিলো না। বরঞ্চ তাদের মা বাবা আর মেয়েগুলোও স্বস্তি পেত যে ধার শোধ করে ভালো ভাবে থাকতে পারবে বলে। পাহাড়ে তো কলকাতার মত ঘাঁটি ছিলো না। সবাই হয় নিজের ঘরে না হয় হোটেলে বা অন্য ঘরে গিয়ে করতো। আমিই বুদ্ধি দিয়েছিলাম কলকাতায় এই মেয়েগুলোকে কলকাতায় রেখে যদি ব্যাবসা করা যায়। তাতে আমারো দু পয়সা হবে, মেয়েগুলোর পরিবারও বাঁচবে আর দাদাও লাল হয়ে যাবে।
আমার দৌলতে ইচ্ছুক মেয়েরা আসতো। সত্যি বলছি দাদা, সেই বাড়ির লোকেরা গাঁয়ে আলাদা সন্মান পেতো, যে ওদের মেয়েরা কলকাতায় কাজ করে। কি কাজ করে সেটা জানা থাকলেও। সবাই এদের ধার দিতে পিছ পা হোতো না। মহাজনরাও এদের আদর যত্ন করতো। কিন্তু দাদা দিনে দিনে দেখলাম এরা মেয়েছেলে তুলে এনে জোর করে নামাচ্ছে। কত ভালো ভালো মেয়েকে যে নষ্ট হয়ে যেতে দেখলাম। নিজেই নিজের কাজের জন্যে অনুতাপ করি এখন। আর এখান থেকে বেরোতেও পারছিনা।
-তাহলে এই সেদিনের দিদিমনিও কি এরকম জোর করে ...।
-মেয়েটা খুব ভালো ছিলো জানেন। কেমন ফুলের মত দেখলেন তো।
-হ্যাঁ তাই তো আবার ফিরে এলাম ওর জন্যে।
- যে দেখবে সেই ফিরে আসবে দাদা, এমন রুপ এই মেয়ের। মেয়েদের রুপ যে কত খারাপ একে দেখলে বোঝা যায়।
- হ্যাঁ তুমি ঠিক বলেছো। আমিও কালকে সারারাত ওর কথা চিন্তা করেছি। ওকে কি পাওয়া যায় না।
-বিমল আমার পা ধরে নিলো। দাদাগো আমাকে জীবিত থাকতে হবে, বৌ বাচ্চার মুখ চেয়ে। নাহলে এরা আমার বৌ মেয়েকেও ছারবেনা। এদের এখন অনেক শক্তি। পুলিশ মন্ত্রি সব পকেটে।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে বিমল, পা ছাড়ো। আমি বলেছি যে তোমাকে কোন বিপদে ফেলবো না। আমি ভদ্রলোকের সন্তান। কথা দিলে কথা রাখি। তুমি বলো মেয়েটা কি ভাবে এখানে এলো।
-এই সুকুমারদাদার ছেলেটার পাল্লায় পরে। কত মেয়ের যে সর্বনাশ করেছে এরকম। সিনামায় নামাবে বলে এদের ফুসলে নিয়ে আসে, এই লাইনে, নিজে কয়েকদিন ভোগ করে তারপর ছেড়ে দেয় দামি দামি লোকের জন্যে। হোটেলে পাঠায়, বাইরে পাঠায়।
-বাইরে পাঠায় পালিয়ে যেতে পারে তো, বা কাউকে বলে দিতে পারে তো।
- সেই জন্যেই তো নেশার ইঞ্জেকশান দিয়ে রাখে, দুবার করে ছোটবাবু আসে আর ইঞ্জেকশান দিয়ে চলে যায়। কোনকোন দিন ইচ্ছে হলে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ফুর্তি করে, এই দুবলা মেয়েটার সাথে।
-ওঃ তো ছোটবাবুর নাম কি?
-রৌনক, সবাই রনি বলে ডাকে।
-আচ্ছা বিমল, তুমি একটা কথা বলো, সেদিন যখন চলে যাচ্ছিলাম, তখন এক মহিলার গলার আওয়াজ পেলাম, খুব ধমক দিচ্ছে মেয়েটাকে আর তোমাকে। মনে হোলো বয়েস আছে। তুমি কিছু মনে না করলে ওকে একটু ফিট করে দেবে আমার সাথে। আমার এরকম তেজি মহিলা বেশ ভালো লাগে।
-জিভ কেটে বিমল বললো কিযে আবদার করেন না। ওতো ছোটদাদাবাবুর বাঁধা মেয়েছেলে।
-ওঃ সবাই যদি বাঁধা হয় তো কি করে হয়। আমাদের কি একটু ইচ্ছে হয়না। আমি চোখ মেরে বিমল কে ইশারা করলাম।
-তুমি বলো না যে ভালো মাল দেবো এখানে না অন্য জায়গায় এলেও চলবে। যেখানে তোমার ছোটবাবু জানবেনা সেখানে নিয়ে যাবো। পয়সার কোন সমস্যা নেই যা চাইবে তাই। তোমাকেও বেশ ভালো বখশিশ দেবো। আমি হাতের ইশারায় পাঁচশোর ইঙ্গিত করলাম।
বুঝলাম বাহদুর চেষ্টা করবে। পাঁচশো টাকা যে অনেক বড় অঙ্ক।
ফেরার অটোতে চরে বসে অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো ‘আব আয়েগা মজা।’
বিমল মেয়েটাকে অনুনয় বিনয় করছে কাপর পরে ঘরে যাওয়ার জন্যে, আর মেয়েটা অবাক ভাবে জিজ্ঞেস করছে যে ওকে কেন আমার পছন্দ হোলো না।
এই মেয়েটা তো বলিউডের হিরোয়িনদেরকেও টেক্কা দেবে। ও কেন এখানে। গুদ দিয়ে কত ইনকাম করে?
বুকের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত উত্তেজনা নয়ে মিলুর পিছন পিছন দ্রুত উঠে এলাম। নিজের কানেই যেন হার্ট বিট শুনতে পাচ্ছি।
দোতলার তিন নম্বর ঘরটা আমাদের।
নাহঃ বাইরের আবরন দেখে বোঝা যায়না যে ভিতরে এরকম জিনিস থাকতে পারে।
বেশ আধুনিক ঘরটা। খুব দামি জিনিসপত্র না থাকলেও বেশ টিপটপ। টিউবের আলো বেশ ঝকঝক করছে। সাদা চাদর পাতা বিছানায়। বেতের দুটো চেয়ারের মাঝে একটা গ্লাসটপ টেবিল। মানে বেশ পেশাদার ভাবেই সাজানো। বোঝায় যাচ্ছে, ব্যাবসার ধরন ধারন।
মিলু একটা চেয়ারে বসে আমার দিকে হেয়ালি করে তাকিয়ে আছে, মুখে ব্যাঙ্গের হাসি।
‘কি পছন্দ?’
‘এই জায়গায় এরকম ঠেক পাতলে কি ভাবে?’
‘এই দ্যাখো, তুমিও না, এসব গোপন কথা কেউ জিজ্ঞেস করে?’
‘বারে, জিজ্ঞেস করবো না? কার সাথে কোথায় এলাম জানবো না? বাজারের মেয়েছেলে হলে আলাদা ব্যাপার ছিলো, কিন্তু তুমি তো আর তা না। আমি যদি সেচ্ছায় আসতাম কোন এরকম জায়গায়, তাহলে নিজে দায়িত্ব নিয়ে বুঝে নিতাম, কিন্তু আমি এসেছি তোমার সাথে তাই জানতে তো ইচ্ছে করবেই।’ ইচ্ছে করেই আমি ওকে বাজারের মেয়েছেলে কথাটা নস্তর্থক বাক্যে বুঝিয়ে দিলাম, আর সাথে সেন্টুও দিলাম যে তুমি বাজারের না ঘরোয়া, মানে এমেচার খানকী।
‘আরে এসব নিয়ে চিন্তা কোরো না। এখানে আমার মত অনেকেই আসে। কি চায় তোমার? আমি তো এলেবেলে। এখানে অনেক কলেজের মেয়ে থেকে এয়ার হোস্টেস, এমন কি ছেলেরাও ছেলে নিয়ে আসে। দিনের বেলা কিছু দেখতে পাবেনা। দুপুরের পর থেকে সব আসা শুরু করে। কেউই এখানে স্থায়ী থাকেনা। আগে থেকে ঠিক করা থাকলে তবেই আসে।’
‘দেখে তো মনে হোলো, অন্যান্য এরিয়ার মতই, যেরকম সবাই দাড়ায় সেরকমই তো, আলাদা কিছু দেখলাম না তো?’
‘ওই আস্তে আস্তে সেরকম হয়ে যাচ্ছে, লোকের মুখে জানতে জানতে আস্তে আস্তে সবাই ভিড় করছে, আর পরিবেশ নষ্ট করছে। আগে এখানে শুধু ঘর ভাড়া পাওয়া যেত। তাও দিনের হিসেবে বা ঘন্টার হিসেবে। হিল্লি দিল্লী থেকে মেয়েরা এসে এখানে ভিড় জমায়। কলেজ কলেজের ছুটিগুলো যখন পরে তখন দেখবে কচি কচি মেয়েতে গিজগিজ করছে। নিজের এলাকায় করলে বদনাম হবে তাই বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ভিড় করে, ঐ যে চিড়িয়াখানায় দেখোনা শীতকালে বিদেশ থেকে পাখি আসে, ঠিক সেরকম। এখানে অনেক এরকম গলি আছে।’
‘কিন্তু তুমি কি করে চেনো এই জায়গা? সেটা তো বলতে হবে।’
‘আরে আমাদের ওখানকার একজনের কিছু সম্পত্তি আছে এখানে। ঢোকার সময় দেখলে না একটা বড় বাড়ি। ওটা ওদের অফিস, আর এ গলির সব বাড়ির মালিক বা দখলদার যাই বলো না কেন সব এসে ঐ বাড়িতে ভিড় করে। এদের আরো অনেক ব্যাবসাপাতি আছে। ওই লোকটাও তোমার মত, এলাকায় কিছু করবে না। তাই নিয়ে আসতো এখানে। তোমাকে আর নতুন করে কি বলবো?’
‘ও, বুঝলাম, জানি আমার কৌতুহলে বুক ফেটে গেলেও তুমি লোকটার নাম আমাকে বলবে না, ছারো আমি জানতেও চাই না। কিন্তু নিচের মেয়েটার কেসটা কি?’
মিলু জিভ কেটে বললো ‘আরে বাবা ওর কথা বোলো না। একদম মন থেকে মুছে দাও। তুমি কিছু দেখোনি।’
‘কেন? এরকম একটা ফুলের মত মেয়ে, কত আর বয়েস হবে...।’
‘তুমি কি এই করে সমইয় নষ্ট করবে?’
‘আরে এতো তারাহুরোর কি আছে? এসেই কি খোলাখুলি করতে ভাল লাগে? একটু গল্প হবে, ভালোবাসা হবে তবেতো জমবে। কিন্তু মেয়েটা কেমন অদ্ভুত ভাবে দেখছিলো ...’
‘এর মধ্যে প্রেমে পরে গেলে নাকি ল্যাংটো দেখে।’
‘প্রেমে পরাটাই কি সব? একটা অল্প বয়েসি মেয়ে দেখে মনে হয় ভালো ঘরের, সে এরকম করছে কেন সেটা জানতে ইচ্ছে করেনা? তারওপর নিজের চোখে যেখানে দেখলাম!’
‘আরে বাবা এত কৌতুহল ভালো না। এর পিছনে অনেক ইতিহাস আছে? তোমাকে আর এখানে আসতে হবেনা কিন্তু দয়া করে এসব নিয়ে কোন কথা বোলো না। এই মেয়েটা এখানকার একজনের বাঁধা মেয়েছেলে, অনেক গল্প আছে, মেয়েটা খুব বাজে, ইঞ্জেকশান নিয়ে নেশা করে। দিল্লির মেয়ে...এখানে সিনেমা করবে বলে এসেছিলো... খুব দেমাগ ছিলো আর এখন কি করছিস...।’ বুঝলাম মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু হয়।
‘মানে ওকে কি এখানে আটকে রেখেছে?’
‘ধুর তুমিও না আবোলতাবোল বকেই চলেছো। বসেই থাকবে নাকি?’
মিলু উঠে এসে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো, কয়েকমুহুর্ত ঠোঁটের সাথে ধস্তাধস্তির পরে সরে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো ‘কি ব্যাপার এরকম নিরস ভাবে বসে আছো?’ চোখে অভিমানের সাথে আগুনের হল্কা।
আমি মাথা নিচু করে বললাম ‘আজকে আবার সেরকম হচ্ছে ......।’
‘কি হচ্ছে?’
‘সেই মাথা যন্ত্রনা, এই জন্যেই তো...’
‘এই জন্যে কি?’
‘কি বলি বলোতো তোমাকে?’
মিলু কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েই বললো ‘কি হয়েছে বলবে তো?’
‘আস্তে চিৎকার কোরোনা, তাতে আরো যন্ত্রনা বেড়ে জাবে।’
‘বাবা তোমার তো অনেক সমস্যা গো।’
‘কি করবো বলো এরকম মারন রোগ কি আর কেউ ইচ্ছে করে বাঁধায়?’
‘মারন রোগ?’
‘হ্যাঁ, ব্রেন টিউমারের কথা শুনেছো?’
‘তোমার?’
‘হ্যাঁ, জানিনা কোনোদিন ঠিক হবে কিনা?’
‘কি হবে তাহলে?’
‘এই জন্যেই তো আমি এসব প্রলোভনে পা দিই না... জানিনা কোনোদিন সুস্থ হতে পারবো কিনা... কতদিন বাঁচবো তাও জানিনা।’
‘ছি ছি এরকম করে বোলো না, এমন সুন্দর পুরুষ মানুষ তুমি আর তোমার এই রোগ...’ বুঝলাম টোটকায় কাজ হয়েছে।
‘একটু বিশ্রাম করে নাও আমি অপেক্ষা করছি, তোমার ইচ্ছে না করলে করতে হবেনা’
‘যত সময় যাবে ততই বেরে জাবে এটা, যতক্ষন না ওষূধ পরছে। এরপর বাড়াবাড়ি হলে সামলাতে পারবেনা।’
‘ও, ঠিক আছে তাহলে চলো বেরিয়ে যাই’
নিচে নামতে নামতে আমার কানে একটা চেনা গলা এলো, সেই মেয়েটার ঘর থেকে। কোন মহিলা ওই মেয়েটা আর বাহাদুরকে শাসাচ্ছে। গলার স্বরটা আমি চিনি। বুঝলাম আমাকে আরো বেশ কয়েকবার এখানে আসতে হবে।
রাতের বেলা তুলির সাথে অনেক গল্প হোলো। বেশিটা ওর ফাংশান নিয়ে। মনটা ফুরফুর করছে বিজয়ার মাকে কাঁটাতে পেরে। যাক বাবা একটা জম্পেশ ঢপ মেরেছি মালটাকে।
তুলির ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে পরের দিন আবার সেই জায়গায় গেলাম। আগের দিনের চেনা গলা আর সেই মেয়েটার কেসটা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। বুঝে উঠতে পারছিনা যে এই রকম একটা মেয়ে সখে করতে পারে কিন্তু এরকম ভাবে পেশাদার কি করে হয়ে যায়। আর সেই মহিলা ওকে ঘর থেকে বেরোনোর জন্যে শাসাচ্ছিল কেন? মহিলার কি স্বার্থ।
সেই জায়গাটার অমোঘ আকর্ষনে আবার চলে গেলাম সেখানে। কোনোরকমে নিজেকে আড়াল করে ঢুকে গেলাম সেই বাড়িটাতে।
বাহাদুরের ঘরে নক ওকে ডাকলাম। ব্যাটা চোখ কচলাতে কচলাতে বেরিয়ে আমাকে দেখে প্রথম কয়েক মুহুর্ত থমকে গেলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো ‘ম্যাডাম আসেনি?’
‘না আজকে আমি একাই এসেছি?’
‘পছন্দ করেছেন?’
‘হ্যাঁ কালকেই করে গেছিলাম’
‘কালকের কেউ তো আসেনি আজকে?’
‘কেন কালকে যে আমাকে ধরে টানাটানি করলো সে আজকে নেই?’
বাহাদুর ভুত দেখার মত চমকে উঠলো আমার কথা শুনে ‘বাবু আপনি চলে যান, ও দিদি এমনি বসেনা।’
‘কালকে তো বসতে চাইছিলো।’
‘নেশায় ছিলো, নেশার জিনিস না পেলেই ওরকম করে।’
‘ওই আমার চলবে’ আমি বাহাদুরের কাঁধে হাত দিয়ে পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে দিলাম। বাহাদুর ইতস্তত করছে।
‘ঠিক আছে বাহাদুর আমি ওই দিদির সাথে বসবো না। কিন্তু কি জানো ওই দিদির প্রেমে পরে গেছি আমি, আমার খুব ভালো লেগেছে ওকে, আমি তোমার থেকে ওর কথা শুনতে চাই’ আমি আরেকটা একশো টাকার নোট বের করে দিলাম ওকে। ‘আমি কি তোমার ঘরে বসতে পারি বাহাদুর একটু গল্প করবো ব্যাস তারপর চলে যাবো’
দুশো টাকা পেয়ে বাহাদুর আমাকে ওর ঘরে নিয়ে গেলো।
আমি গাজা ভরা দুটো সিগেরেট বের করলাম। একটা বাহাদুরের দিকে এগিয়ে দিলাম। বাহাদুর সন্দেহের সাথে হাত বারিয়ে নিয়ে নিলো। আমি বললাম ‘তামাক ভরা আছে... আমাকে দেখেই তো বুঝতে পারছো যে আমি একটু অন্যরকম।’
বাহাদুর দেঁতো হেসে বললো ‘অনেকদিন টান দিইনি। মাথা না ঘুরে যায়?’
‘কিছু হবেনা তুমি এত হাট্টাকাট্টা জওয়ান তোমার আর কি হবে।’ দেশলাই জালিয়ে ওর দিকে আগে বারিয়ে দিলাম।
সলিড একটা টান দিলো, একফোটা ধোয়াও ছারলো না। তার সাথে খক খক করে কাশি। আমারটা আমি গাজা ভরিনি। তাই আমিও সেরকম করেই তামাক টানার অভিনয় করলাম।
এক মিনিট যেতেই বুঝলাম বাহাদুরের চোখ ছোট হয়ে গেছে।
আমি আমার কাজ শুরু করলাম।
-শোনো কেউ এসে ডাকলে বলবে না যে আমি ভিতরে আছি। কেউ জানতে পারলে তোমাকে আর আমাকে গল্প করতে দেবে না।
- আপনি বলুন, আপনার মত লোক আমি দেখিনি আগে।
-আসলে কি জানো আমি একটু লিখিটিখি, তাই সবার সাথে গল্প করতে ভালো লাগে। কালকে তোমার এই দিদিটাকে খুব মনে ধরেছে। ভাবছিলাম ওকে নিয়ে লিখবো। আমার গল্প নিয়ে অনেক সিনেমা হয়েছে জানোতো, আমার তো এই দিদিকে হিরোয়িন করার খুব সখ। আমি বললেই লুফে নেবে, যা দেখতে একদম ফাঁটিয়ে দেবে।
-ও আপনি সিনেমাও করেন নাকি?
-আমি না আমার গল্প নিয়ে করে, অন্য লোকে।
-আপনি রোল দিতে পারেন?
-হ্যাঁ। কত তো দিয়েছি। এই তোমার দিদিকে দেখে খুব পছন্দ হয়েছিলো। কিন্তু কি আর করা যাবে...
-আরে এই দিদি তো সিনেমায় করতে এসেছিলো।
-সিনেমা করতে তো এখানে কেন?
-ধোকা খেয়ে বাবু।
-ধোকা খেয়ে? মানে?
-এই সিনেমার লাইনে তো হরদম এসব হচ্ছে। ভালো ভালো মেয়ে আসে আর কিছু করতে না পেরে এই লাইনে চলে আসে।
-তুমি এত জানো কি করে বাহাদুর?
-এই তো দেখছি তো। এখানে স্টুডিও পাড়ার অনেক লোক আসে কচি কচি মেয়ে নিয়ে বলে শুলে রোল পাবে।
-তুমি দেখো এসব, কিছু বলনা?
-কি বলবো? পেটের দায়ে কাজ করছি, বাবু বেশ যত্ন আত্তি করে আমার, আমার কি দরকার এসব ব্যাপারে নাক গলানোর।
-কে তোমার বাবু? আর এটা কি এমন ভালো আছো?
-বাবুর নাম বলতে পারবোনা, বারন আছে, অনেকে আছে এরকম জিজ্ঞেস করে।
-আরে আমি কি পুলিশের লোক নাকি যে আমাকে বলতে ভয় পাচ্ছো। লেখার সময় না হয় অন্য নাম বানিয়ে দেবো। ভাবছি তোমার জন্যেও বেশ কিছুটা জায়গা রাখবো।
-সিনেমাতেও আমার রোল থাকবে? বাহাদুর চকচকে হয়ে উঠলো।
-হ্যাঁ তোমার মুখ দিয়েই ভাবছি গল্পটা বলাবো।
কি বুঝলো জানিনা বাহাদুর বেশ গদগদ হয়ে উঠলো।
-ভালো টাকা পাওয়া যাবে? আমি দার্জিলিঙ ফিরে যেতে পারবো? অনেক টাকা লাগবে তো ধার শোধ না করতে পারলে আমি আর ঢুকতে পারবোনা।
-কিসের ধার?
-ও অনেক দুঃখের কথা বাবু। সেই জন্যে তো বেইজ্জত হয়েও এখানে কাজ করি। ভালো লাগে বলুন এসব করতে।
-তো তুমি এখানে এলে কি করে?
-এই বাড়ির মালিক দার্জিলিং যেতেন, লেবার ঠিকাদার ছিলেন উনি। সেখান থেকেই পরিচয় আমার সাথে।
-ওঃ। কি নাম তোমার মালিকের?
-সুকুমার দাদা বলে জানি।
বুঝলাম আমার তীর সঠিক জায়গায় লেগেছে। আরেকটু টানলেই সব বেরিয়ে আসবে।
-তো এই মেয়েছেলের ব্যাবসা কি উনার নাকি?
- বিমল একটু চুপ করে থেকে আমাকে জিজ্ঞেস করলো ‘আপনি কি পুলিশের লোক দাদা?’
- আরে দূর তুমিও না, এতক্ষন তোমার সাথে কথা বলছি মন খুলে আর তুমি এসব ভাবছো মনে মনে? কত সাধ্য সাধনা করে একজন পেলাম মনের কথা বলার জন্যে।
-দেখুন দাদা আমি মুর্খ মানুষ, আমি যেন বিপদে না পরি।
- আরে তুমি কেন বিপদে পরবে, আমি কথা দিচ্ছি তোমার কোনদিন কোন বিপদ হবেনা। আর আমি চাইলেই তো পুলিশে খবর দিতে পারতাম, পুলিশ তো মেরেই কথা বের করে নিতে পারে। আমি এত কষ্ট করবো কেন?
-বিমল একটু চুপ করে থেকে বলতে শুরু করলো। মেয়েছেলের ব্যাবসার কথা আমিই ভুল করে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম দাদার মাথায়। বুঝতে পারিনি কি ভুল করেছি। দার্জিলিঙ্গে যখন যেতো এই দাদা, আমিই মেয়েছেলে দিতাম এনাকে। নিত্যনতুন মেয়েছেলে চাইতো। পাহাড়ে তো অনেক গরিব পরিবার আছে, তাদের মা বাবাকে রাজী করানো এমন কিছু ব্যাপার ছিলো না। বরঞ্চ তাদের মা বাবা আর মেয়েগুলোও স্বস্তি পেত যে ধার শোধ করে ভালো ভাবে থাকতে পারবে বলে। পাহাড়ে তো কলকাতার মত ঘাঁটি ছিলো না। সবাই হয় নিজের ঘরে না হয় হোটেলে বা অন্য ঘরে গিয়ে করতো। আমিই বুদ্ধি দিয়েছিলাম কলকাতায় এই মেয়েগুলোকে কলকাতায় রেখে যদি ব্যাবসা করা যায়। তাতে আমারো দু পয়সা হবে, মেয়েগুলোর পরিবারও বাঁচবে আর দাদাও লাল হয়ে যাবে।
আমার দৌলতে ইচ্ছুক মেয়েরা আসতো। সত্যি বলছি দাদা, সেই বাড়ির লোকেরা গাঁয়ে আলাদা সন্মান পেতো, যে ওদের মেয়েরা কলকাতায় কাজ করে। কি কাজ করে সেটা জানা থাকলেও। সবাই এদের ধার দিতে পিছ পা হোতো না। মহাজনরাও এদের আদর যত্ন করতো। কিন্তু দাদা দিনে দিনে দেখলাম এরা মেয়েছেলে তুলে এনে জোর করে নামাচ্ছে। কত ভালো ভালো মেয়েকে যে নষ্ট হয়ে যেতে দেখলাম। নিজেই নিজের কাজের জন্যে অনুতাপ করি এখন। আর এখান থেকে বেরোতেও পারছিনা।
-তাহলে এই সেদিনের দিদিমনিও কি এরকম জোর করে ...।
-মেয়েটা খুব ভালো ছিলো জানেন। কেমন ফুলের মত দেখলেন তো।
-হ্যাঁ তাই তো আবার ফিরে এলাম ওর জন্যে।
- যে দেখবে সেই ফিরে আসবে দাদা, এমন রুপ এই মেয়ের। মেয়েদের রুপ যে কত খারাপ একে দেখলে বোঝা যায়।
- হ্যাঁ তুমি ঠিক বলেছো। আমিও কালকে সারারাত ওর কথা চিন্তা করেছি। ওকে কি পাওয়া যায় না।
-বিমল আমার পা ধরে নিলো। দাদাগো আমাকে জীবিত থাকতে হবে, বৌ বাচ্চার মুখ চেয়ে। নাহলে এরা আমার বৌ মেয়েকেও ছারবেনা। এদের এখন অনেক শক্তি। পুলিশ মন্ত্রি সব পকেটে।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে বিমল, পা ছাড়ো। আমি বলেছি যে তোমাকে কোন বিপদে ফেলবো না। আমি ভদ্রলোকের সন্তান। কথা দিলে কথা রাখি। তুমি বলো মেয়েটা কি ভাবে এখানে এলো।
-এই সুকুমারদাদার ছেলেটার পাল্লায় পরে। কত মেয়ের যে সর্বনাশ করেছে এরকম। সিনামায় নামাবে বলে এদের ফুসলে নিয়ে আসে, এই লাইনে, নিজে কয়েকদিন ভোগ করে তারপর ছেড়ে দেয় দামি দামি লোকের জন্যে। হোটেলে পাঠায়, বাইরে পাঠায়।
-বাইরে পাঠায় পালিয়ে যেতে পারে তো, বা কাউকে বলে দিতে পারে তো।
- সেই জন্যেই তো নেশার ইঞ্জেকশান দিয়ে রাখে, দুবার করে ছোটবাবু আসে আর ইঞ্জেকশান দিয়ে চলে যায়। কোনকোন দিন ইচ্ছে হলে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ফুর্তি করে, এই দুবলা মেয়েটার সাথে।
-ওঃ তো ছোটবাবুর নাম কি?
-রৌনক, সবাই রনি বলে ডাকে।
-আচ্ছা বিমল, তুমি একটা কথা বলো, সেদিন যখন চলে যাচ্ছিলাম, তখন এক মহিলার গলার আওয়াজ পেলাম, খুব ধমক দিচ্ছে মেয়েটাকে আর তোমাকে। মনে হোলো বয়েস আছে। তুমি কিছু মনে না করলে ওকে একটু ফিট করে দেবে আমার সাথে। আমার এরকম তেজি মহিলা বেশ ভালো লাগে।
-জিভ কেটে বিমল বললো কিযে আবদার করেন না। ওতো ছোটদাদাবাবুর বাঁধা মেয়েছেলে।
-ওঃ সবাই যদি বাঁধা হয় তো কি করে হয়। আমাদের কি একটু ইচ্ছে হয়না। আমি চোখ মেরে বিমল কে ইশারা করলাম।
-তুমি বলো না যে ভালো মাল দেবো এখানে না অন্য জায়গায় এলেও চলবে। যেখানে তোমার ছোটবাবু জানবেনা সেখানে নিয়ে যাবো। পয়সার কোন সমস্যা নেই যা চাইবে তাই। তোমাকেও বেশ ভালো বখশিশ দেবো। আমি হাতের ইশারায় পাঁচশোর ইঙ্গিত করলাম।
বুঝলাম বাহদুর চেষ্টা করবে। পাঁচশো টাকা যে অনেক বড় অঙ্ক।
ফেরার অটোতে চরে বসে অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো ‘আব আয়েগা মজা।’