31-12-2018, 04:32 PM
গরিয়াহাট মোর থেকে ট্যাক্সি করে ধর্মতলা, সেখান থেকে বাস ধরে ডায়মন্ডহারবার। হোটেলের খোজ খবর করেই রেখেছিলাম, তাই অসুবিধে হয়নি, একেবারে তুলিকে নিয়ে ঢুকে যেতে। রাস্তায় অনেকে দেখলাম আমাদের দেখছে। এখানে সবাই মেয়েছেলে নিয়ে ঠুকতেই আসে। কি আর করা যাবে। আর কেই বা আমাকে আর ওকে চেনে।
সেরকম ভাবে রাস্তায় কথা বলিনি ওর সাথে। হোটেলে ঢুকে দুটো চা দিতে বলে দিলাম। আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম। তুলি খাটের ওপরে বসলো। ঘুম থেকে ওঠার পরে রাগ পরে যাওয়াতে, এখন মনটা কেমন কেমন লাগছে যেন এরকম ভাবে ওকে নিয়ে আসতে। আমিও এত জেদি যে কিছুই আমার হাত থেকে যেতে দিতে চাইনা। কি আর এমন হোতো ও নাহয় ওর মত থাকতো। আবার চিন্তা করলাম। কিছুটা হলেও তো ওর ওপর আমার দুর্বলতা আছে, কি করে ওর ক্ষতি হবে সেটা চুপ করে দেখি।
চা দিয়ে গেলো। এখানে এত ভাল চা পাওয়া যেতে পারে তা ধারনার বাইরে ছিলো।
তুলি দেখছি মুখ গম্ভির করে বসে আছে। আমিও ওর সাথে কোন কথা বলছিনা। এই কদিনেই কেমন দূরে সরে গেছি আমরা।
বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার তুলি মুখ খুললো, ‘কি হোলো এত হম্বিতম্বি করলে কালকে রাতে, এখন চুপ করে বসে আছো যে।’
আমি চুপ করে রইলাম। তুলি ঊঠে এসে আমার সামনে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। আমাকে ভালো করে দেখছে। আমি কেন যানি না ওর দিকে তাকাতে পারছিনা।
কিছুক্ষন নিঃশব্দে কাটার পরে আমি বললাম ‘চলো ফিরে যাই, ভালো লাগছেনা।’
তুলিও চুপ করে রইলো।
সত্যি আমার ভালো লাগছেনা এইরকম পরিবেশে।
হোটেলের লোকটা একটা খাতা নিয়ে এলো ‘দাদা আপনি আর ম্যাডাম সই করে দিন আর লিখবেন স্বামি স্ত্রী’
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম ‘হ্যা দাদা, পুলিশে খাতা যায় তো তাই এসব লিখতেই হয়।’
আমি আমতা আমতা করে বললাম ‘আমরা এক্ষুনি চলে যাবো’
তুলি হঠাৎ ওই লোকটার হাত থেকে খাতাটা নিয়ে নিলো আর নামধাম সব লিখতে শুরু করলো, ও সই করে আমার দিকে খাতাটা এগিয়ে দিলো।
লোকটা বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলে গেলো ‘টিভিটা চালিয়ে নেবেন কিন্তু।’
আমি তুলিকে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি হলো, বললাম যে চলে যাবো ভালো লাগছেনা।’
‘সবকিছু তোমার ইচ্ছে মত হবে না, আমি যখন এসেছি তখন আমাকে সময়টা কাটিয়েই বেরোতে হবে।’
...ঠিক আছে বলে আমি টিভিটা চালিয়ে দিলাম। একমনে টিভি দেখতে শুরু করলাম। মনে মনে ভাবছি কি দরকার এসব করে। আমি তো আর ধোয়া তুলসি পাতা না, তাহলে তুলি কি করছে না করছে তাতে আমার কি? যা করছে তাতো সেচ্ছায় করছে। কেউ জোর করে তো আর করছে না। আর তুলি তো আমার সাহায্যও চাইছে না। তাহলে আমি কেন যেচে পরে নাক গলাচ্ছি ওর ব্যাপারে।
মিনিট দুয়েক এইভাবে কাটার পরে তুলি উঠে এসে টিভিটা বন্ধ করে দিলো।
‘এই ভাবে চুপ করে বসে আছো যে?’
‘না থাক, আর এসব বাড়িয়ে লাভ নেই, ভেবেছিলাম অনেক কথা বলবো কিন্তু থাক আর এসব বাড়িয়ে লাভ কি?’
‘কাল রাতে এত কথা বললে, আর এখন চুপ করে আছো? আমি তো তোমার কথা শুনতেই এসেছি।’
‘তুমি তো দরকারে আমার কথা শোনোনি, আর এখন শুনে কি হবে। তীর যখন ধনুক থেকে বেরিয়ে গেছে তখন সেটা যেখানে লাগার লাগবেই, আমি আর আটকানোর চেষ্টা করে কি করবো। তুমি তো তোমার পথ দেখে নিয়েছো, আমি কেন পরে থাকবো, আমিও আমার মত লাইফ এঞ্জয় করি।’
‘তুমি কি ভাবছো বলোতো? আমি কি করে বেরাচ্ছি?’
‘এই যে আমি সেদিন এত কথা বললাম তোমার কি কানে ঢুকেছে?’
‘কানে ঢুকবে কি করে, তুমি যা করছিলে ফোনের মধ্যে, শেষ পর্যন্ত মাকেও গালাগালি দিলে? আমার ওপর রাগ ঠিক আছে, তাবলে সবাইকে এরকম বলবে?’
‘তোমার মাকে কেন গালি দিয়েছি তুমি জানো না তাই না? সেদিন যে তোমাকে বললাম?’
‘কোথাই বললে? কেন গালাগালি দিয়েছো তুমি আমার মাকে?’
‘আগে বল তুমি কি কালিপুজোর রাতে যা ঘটেছে তা কি তোমার মাকে বলেছিলে।’
‘হ্যাঁ বলেছিলাম।’
‘ঠিক আছে তুমি বলেছিলে মেনে নিলাম যে অন্যায় করোনি। কিন্তু তুমি কি জানো যে তোমার মা আমার মাকে এমন অপমান করেছে ফোনে যে মা অসুস্থ হয়ে মরতে বসেছিলো।’
তুলি আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো ‘আমি তো জানিনা...। কখন করেছিলো?’
‘সাত কান্ড রামায়ন পড়া হয়ে গেলো আর এখন তুমি জিজ্ঞেস করছো যে কখন বলেছিলো। হাহঃ। তোমার টান উঠেছিলো, সেটা কাকু আমাকে বলে, আমি মাকে দিয়ে তোমার বাড়িতে ফোন করিয়েছিলাম, সেই সময় তোমার মা খুব খারাপ ব্যাবহার করে মার সাথে।’
তুলি মাথা নিচু করে রইলো।
‘আমি তাও মেনে নিয়েছিলাম। কিছু বলিনি। কিন্তু তোমার মা একটা চিজ বটে। তুমি জানো কি জানো না সেটা আমি জানিনা।’
তুলি চুপ করে রইলো।
আমিও চুপ করে থাকলাম। ভাবলাম আর রনির কথা তুলবো না। আমি তো আর ওকে বিয়ে করে ঘরে তুলবো না এতো কিছুর পরে।
এরকম কিছুক্ষন কাটার পরে বললাম ‘চলো এবার যাই’
‘শেষ হয়ে গেছে তোমার কথা?’
আমি তুলির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ ছলছল করছে। নাঃ আর আমি দুর্বল হবো না। অনেক মুল্য দিতে হচ্ছে এই দুর্বলতার। এর থেকে ভাল ভাবে সরে যাই তুলির জীবন থেকে সেটাই সন্মানজনক হবে।
‘দ্যাখো তুলি, আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তুমি বুঝতেই পারছো যে আর আমাদের সম্পর্ক সেরকম নেই সুতরাং এখন আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো। আমিও তোমাকে অসন্মান করবো না আর তুমিও আমাকে করবেনা। হ্যাঁ তোমার কোন দরকার হলে তুমি আমাকে ফোন করতে পারো, আমি সময় সুযোগ পেলে নিশ্চয় তোমাকে সময় দেবো।’
‘এই কথাটা তো ফোনেই বলতে পারতে, এতদুর আসার কি দরকার ছিলো। আমি আন্দাজ করেছিলাম যে কেউ না কেউ তোমার জীবনে এসেছে...।’ বলতে বলতে তুলির গলা বুজে এলো।
আমারও মনটা হুঁ হুঁ করছে ‘সেরকম কোন ব্যাপার না তুলি, কেউ আসেনি আমার জীবনে। আমি কি করবো তুমি বলে দাও আমাকে এর থেকে কি ভালো কিছু ভাবতে পারি আমরা? এতো কিছুর পরে?’
তুলি মাথা নিচু করে চোখের জল মুছতে মুছতে বললো ‘তুমি কেন এরকম করছো? আমি কি করেছি?’
‘সেতো অনেক কথা তুলি, তোমাকে তো বোঝানোর চেষ্টা করেছি কতবার তুমি তো আমার কথা একান দিয়ে ঢোকাও আর ওকান দিয়ে বের করে বের করে দাও। যতক্ষন আমার সাথে থাকো ততক্ষন ভালো, যেই দূরে সরে যাও তুমি তোমার মত চলতে শুরু করো।’
‘তুমি কালিপুজোর রাতের কথাটা বলতে চাইছো বুঝতে পারছি...।’
‘হ্যাঁ সেটা তো আছেই আর তা ছাড়া ...।’
‘দ্যাখো সেদিন আমাদের নাচের কলেজ থেকে সবাই গেছিলো, তাই আমি তোমার কথা না শুনেই গেছিলাম...।’
‘এইভাবে এতগুলো ছেলের মাঝে তুমি একা মেয়ে নাচছো ভাবোতো আমার সন্মানটা কোথায় যায়? সেটা নিয়ে কি তুমি কোনদিন চিন্তা করেছো? তারপর রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে মাঝরাতে ছেলেদের সাথে গল্প করছো... একটা ছেলে তোমাকে কি ভাবে দেখছিলো তা দেখেছো? এসব আমাদের পাড়ার লোক দেখেনি ভাগ্য ভালো।’
‘আমার ভুল হয়ে গেছে আর কোনদিন এরকম করবো না। ও আমার কলেজের বন্ধু, আর আরেকজন ওর বন্ধু, ও মেয়ে দেখলেই এরকম করে, কোন মেয়ে নাকি ওকে পাত্তা দেয়না, ওর সামনের একটা দাঁত ভাঙ্গা, আমি তাই মজার মজার কথা বলে হাসানোর চেষ্টা করছিলাম যাতে ও ফোকলা দাঁতে হাসে আর মজা হয়। আমার মনে কিছু ছিলোনা, প্লিজ বিশ্বাস করো, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
আবার একটা সেমসাইড হোলো, লঘু পাপে গুরু দণ্ড দিয়ে ফেলেছি। আশা করি এতোটা গুল মারবে না তুলি।
আক্ষেপের বশে ওকে বললাম ‘তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও বরঞ্চ, আমি অনেক অন্যায় করেছি তোমার সাথে, বিশেষ করে এত অল্পসময়ের মধ্যে আমার তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা উচিৎ হয়নি। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি, তুমি জীবনে আমার থেকে অনেক ভালো ছেলে পাবে, সেরকম কারো সাথে তুমি জীবন কাটাতে পারবে।’
‘আমি এত খারাপ মেয়ে আমার কি আর সংসার করা হবে? কে জুটবে সেতো অনেক পরের কথা?’ তুলি কেঁদে দিলো বলতে বলতে।
আমার খুব খারাপ লাগছে তুলিকে কাঁদতে দেখতে। আমি উঠে গিয়ে ওর মাথায় হাত দিয়ে বললাম ‘কেঁদো না, বাস্তবটা মেনে নিতেই হবে, এত কিছুর পরে তোমার সাথে সম্পর্ক রাখা কি সম্ভব? তুমি আমার জায়গায় থাকলে কি করতে?’
হাউমাউ করে কেঁদেই চলেছে তুলি।
আমি ভিতরে ভিতরে খুব দুর্বল হলেও তুলিকে বুঝতে দিচ্ছি না ‘তুমি কি চাও তুলি?’ আমি ওর গড়িয়ে পড়া চোখের জল মুছে দিতে দিতে ওর থুতনি ধরে ওর মাথা তুলে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
‘আমি কিছু চাইনা।’
আমি ওর সামনে থেকে উঠে এসে বিছানার ওপরে শুয়ে একটা সিগেরেট টানতে শুরু করলাম।
‘তুলি সেদিন তুমি সত্যি শুনতে পাওনি যে আমি কি বলেছিলাম?’
‘না আমি সত্যি শুনতে পাইনি, মা আমাকে এমন ধাক্কা মেরেছিল যে আমার হাত থেকে ফোন ছিটকে পরে যায়। আমি বুঝতে পারছিলাম যে তুমি কথা বলে চলেছো কিন্তু...।’
‘আমি জানিনা তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে কিনা বা তুমি বুঝতে পারো কিনা? এরকম একটা কথা বারবার ভাবতে আর বলতে নিজের মনের জোরের দরকার হয়। তুমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছো না যে তোমার মা কি রকম...। এই যে তোমাকে কাজে পাঠিয়ে দিয়েছে এর পিছনে তোমার মার কত বড় চক্রান্ত আছে তুমি জানো?’
‘কাজে পাঠিয়েছে, মা? কোথায়? আমাকে বলছিলো যে কি যেন কাজ আছে ভালো মাইনে দেবে, রনি সেটা যোগাযোগ করিয়ে দেবে, তারপর তো আর কোন কথা হয়নি। তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছিনা তো। কাজে কোথায় গেলাম?’
‘তাহলে তুমি এই রোববার আর কালকে কোথায় গেছিলে সেজেগুজে?’
‘ওহ্* এই ব্যাপার। কেন আমাকে যখন দেখেছিলে আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে পারোনি? দরকার হলে তোমাকে নিয়ে যেতাম সঙ্গে করে। কেন তুমি মনামিকে দেখোনি গাড়ীতে? ও তো আমার সাথেই যায়, কোথায় দেখেছিলে আমাকে?’
‘না আমি তো আর কাউকে দেখিনি, তুমি তো বাজারের সামনে থেকে উঠলে।’
‘হ্যাঁ আমরা কয়েকজন মিলে গাড়ীটা ভাড়া করেছি, বাবা আর্ধেক টাকা দিচ্ছে, মনামিও দেয় কিছু, এখন সেই বছর শেষ পর্যন্ত গাড়িটা থাকবে, আমাদের এই টীমটাই বেশ কয়েক জায়গায় ডাক পেয়েছে। আর মনামি তো ব্রীজের ওপার থেকে ওঠে।’
‘কোথায় গেছিলে তোমারা? এতো সেজেগুজে?’
‘আমার কলেজের ফাংশান আছে সামনে। আমি কোঅরডিনেটর, নাচও আমি তুলে দিচ্ছি।’
আমার গলায় সিগেরেটের ধোয়া আটকে বিকট কাঁশি শুরু হোলো। আবার সেমসাইড।
তুলি তাড়াতাড়ি জল এনে আমাকে দিলো।
একটু ধাতস্থ হয়ে আমি আবার চায়ের অর্ডার দিলাম।
ভাবছি বারবার তুলির সাথে এরকম হচ্ছে কেন? এতটা নিশ্চয় বানিয়ে বলছে না।
চা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম ‘তুমি কি আমাকে ভালোবেসেছিলে?’
তুলি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো ‘ভালোবেসেছিলে মানে?’
‘না মানে এখন তো তোমার আর আমার ওপর টান নেই তাই জিজ্ঞেস করছি। সেই সময় কি ছিলো?’
‘তুমি বুঝবেনা এসব। আমি তো খারাপ মেয়ে তাই সখ মেটাতে তোমাকে আমার সব কিছু দিয়েছি।’
‘তুমি খারাপ না, তাই বারবার করে আমি তোমাকে খোঁজ করি, কিন্তু তুমি জানোনা তোমাকে খারাপ করার চক্রান্ত করছে তোমার মা।’
তুলি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। আমি ধীরে ধীরে ওর মার সমস্ত সংলাপ তুলিকে খুলে বললাম।
বেচারি একে আমার খিস্তি খেয়েছে তারওপর মায়ের এরকম কির্তি শুনে একদম ভেঙ্গে পরলো।
আমি আর পারলাম না ওকে বুকে টেনে নিলাম।
তুলি চোখের জলে আমার টি শার্টটা ভিজে গেলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে শুরু করলো ‘আমি জানতাম এরকম কিছুই হচ্ছে। মার ব্যাগে আমি কয়েকবার কণ্ডোম দেখেছি। বাবা আর মা তো একসাথে শোয় না। তাহলে কে? সেটা জানতাম না। ছিঃ এর থেকে আমার মরে যাওয়া ভালো।’
একে একে তুলিকে সমস্ত কথা বললাম, তুলির বাবার সাথে কথা, স্বপনের সাথে হাতাহাতি, শুভ, কর্পোরেশানের কণ্ট্রাক্টর, আরো যা যা শুনেছি সব।
তুলি একে একে আমাকে সব খুলে বললো।
শুভো ওর দাদার বন্ধু, একসাথেই খেলাধুলো করে। ওর দাদার একদিন খেলতে গিয়ে চোঁট লাগে, সেই সময় তুলি একমাত্র বাড়িতে ছিলো। তাই তুলি ওর বাইকের পিছনে বসে খেলার মাঠে যায় দাদাকে রিক্সা করে বাড়ি নিয়ে আসতে। সেটা স্বপন দেখতে পেয়ে, তুলির মাকে ঠিক এরকম ভাবে নালিশ করে।
স্বপনের উদ্দেশ্য তুলিদের বাড়িটা প্রোমোটারের হাতে তুলে দেওয়া। দালালি বাবদ মোটা মাল আর একটা ফ্ল্যাট যদি বের করা যায়। সেই ধান্দায় ও ঘুরছে। তুলির সব কাকারা তুলির বাবার ওপর সিদ্ধান্তের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে, বাইরে রয়েছে। কেউ হয়তো ফিরে আসবেনা। তাই স্বপন যেমন করে হোক এই ডিলটা করতে চাইছে। তুলির মাও তাই চায়, কিন্তু তুলির বাবা সেটা চায়না।
তুলি আরো বলে যে, স্বপন আমার সন্মন্ধে সরাসরি না হলেও অনেক বাজে বাজে কথাই বলেছে ওর মা বাবার কাছে। এমন কি এরকমও বলেছে যে পাড়ার কাজের ঝিও বাদ দিইনা আমরা। ও আমাকে একদম সহ্য করতে পারেনা। আরো কত যে কথা বলেছে তুলির মার কাছে সেটা তুলির মা আর স্বপনই জানে।
আস্তে আস্তে আমার কাছে সব পরিষ্কার হচ্ছে। স্বপনের উদ্দেশ্যও এখন পরিষ্কার।
স্বপনের সাথে সেটা আমি আলাদা করে বুঝে নেবো।
কিন্তু তুলির মা এরকম কেন করছে নিজের মেয়ের সাথে সত্যি সেটা বুঝতে পারছিনা।
আমি তুলিকে বললাম ‘তুমি কি ভাবছো কেন কাকিমা এরকম করছে? আরে বাবা কুকুর বেড়ালও তো নিজের সন্তানের ভালো চায়, তাহলে উনি কেন এরকম ভাবে তোমাকে ঠেলে দিচ্ছে?’
‘আমি জানিনা, কেন এরকম করে আমার সাথে। এর আগে এইরকম একটা ছেলে বাড়িতে আসত। আমি একবার শান্তিনিকেতনে একটা প্রোগ্রাম করতে গেছিলাম কলেজের টিমের সাথে। সেখান থেকে ছেলেটা পিছে পরে গেছিলো। মার হঠাৎ ইচ্ছে হোলো যে ওর সাথে আমার বিয়ে দেবে, তারপর সে কি কান্ড। ছেলেটা হঠাৎ হঠাৎ চলে আসে, সময়ের ধ্যান জ্ঞান নেই। একদিন আমি ভাল করে মুখ ঝামটা দেওয়াতে তার আসা বন্ধ হয়েছিলো। সাথে বাবাও ছেলেটাকে খুব শাসিয়েছিল। তারপর মার সেকি কান্ড। এই বলে সংসার ছেড়ে চলে যাবে, এই পুলিশে খবর দিতে যায় যে আমি আর বাবা মিলে মাকে মানসিক অত্যাচার করছি।’
‘তাহলে বুঝতেই পারছো কি রকম জিনিস উনি।’
‘সব বুঝতে পারছি, কিন্তু তুমি বলো আমি কি করবো?’
‘তোমাকে কিছু করতে হবেনা। আগে তুমি চিন্তা করো যে তুমি ভবিষ্যতে কি চাও?’
তুলি আমার হাত ধরে বললো ‘আমি এত ভাবতে পারিনা অভি। প্লিজ আমাকে হেল্প করো।’
‘শোনো তুলি, দুটো পথ তোমার সামনে আছে, ১। কাউকে যদি ভালবাসো তাহলে তাকে সন্মান করো। যে তোমাকে ভালবাসে সে তোমার ক্ষতি হতে দেবে না। তাতে তুমি ভালোবাসা পাবে, সংসার পাবে, সন্তান পাবে। কেউ তোমাকে মা বলে ডাকবে, কেউ গুটিগুটি পায়ে তোমার গায়ের সাথে লেপ্টে থাকবে। তোমার স্বামি তোমাকে ভালোবাসবে, সেটা যে বিছানার ভালোবাসাই, তা নয়। ভেবে দেখো তুলি, সকাল বেলা তুমি তোমার বরকে ঘুম থেকে তোলার জন্যে তোমার ভেজা হাতটা ওর বুকে দিয়ে দিলে, আর তোমার বর চোখ খুলে তোমাকে দেখে এক ঝটকায় তোমাকে কাছে টেনে নিল, খুব আদর করলো। পুচকি বলে তোমার গাল টিপে দিলো, সেই সময় ধরো তোমার ছেলে বা মেয়ে তোমাদের দেখে ফেলে তোমাদের গায়ের ওপর চরে বসে। ভাবোতো কেমন লাগবে। আবার ধরো তুমি রান্না করছো তাড়াহুড়ো করে, আর তোমার বর স্নান করে এসে তোমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে শুরু করলো। অফিসে যাওয়ার সময় তুমি তোমার সন্তান কে কোলে নিয়ে বরকে টাটা করতে এলে। সেই সময় তোমার বর তোমাকে আর তোমার ছেলে দুজনকেই চুমু খেয়ে নিলো। তারপর ব্যালকনি থেকে তুমি আর ছেলে তোমার বরকে টাটা করবে।’
‘ছেলে না মেয়ে। আমাদের মেয়ে হবে।’ তুলি নিজের মনেই বলে উঠলো। আমি চুপ করে গেলাম।
কিন্তু আমার বলা শেষ হয়নি আমি তাই বলে চললাম ‘আরেক দিকে, তোমার অফুরন্ত স্বাধিনতা, যা খুশি তাই করতে পারো। ইচ্ছে মত যেখানে খুশি যেতে পারো, যার সাথে খুশি তার সাথে তুমি সময় কাটাতে পারো। ইচ্ছে করলে পয়সাও কামাতে পারো। নতুন নতুন ড্রেস পড়তে পারো। গাড়ি করে লোকে তোমাকে নিয়ে যাবে দিয়ে যাবে। রাতের পরে রাত বাইরে থাকতে পারো। কেউ জিজ্ঞেস করার থাকবেনা। কিন্তু যৌবন ফুরিয়ে যায়, মানুষের রুপ দেহ এক না এক সময় ভেঙ্গে পরে, মানুষ একা হয়ে পরে। পারবে তো সেই সময়টা কাটাতে। এই তো খবরের কাগজে পরো না যে এই মডেল সুইসাইড করেছে...।’
তুলি চুপ করে রইলো।
আমি বলে চলেছি “এবার তোমার সিদ্ধান্ত যে তুমি কি করবে।”
‘তুমি আমাকে বিয়ের পরেও পুচকি বলে ডাকবে? আমাদের মেয়ে হলে তুমি আমাকে না ওকে বেশী ভালবাসবে?’
এই মেয়েটা কি কোনোদিনই বড় হবেনা? আমি মনে মনে ভাবছি।
আমি ওকে বুকে টেনে নিলাম। আমি বুঝতেই পারছি যে আমি ছাড়া ওর কোন গতি নেই। মানে সুস্থ স্বাভাবিক গতি। ‘সবতো হবে, কিন্তু এখন এই কদিন কি ভাবে নিজেকে সামলে রাখবে? পারবে নিজের মায়ের সাথে লড়াই করতে? যদি তোমার মা জোর করে তোমাকে রনির দিকে ঠেলে দেয়?’
‘এই তো তুমি বললে যে রনির সাথে মায়ের...। তাহলে আমাকে ঠেলে দেবে কেন?’
‘ওহঃ তুলি তুমি এতো সরল আর অবুঝ তোমাকে কি বোঝাবো। জীবনে কটা শয়তান দেখেছো তুমি?’
এরপর আমি বলবো না বলবোনা করেও সুদিপা আর পাপ্পুর ঘটনাটা ওকে বললাম। তুলি ভয়ে আমাকে আকড়ে ধরলো। বার বার করে বলছে ‘তোমার কিছু হয়ে গেলে কি হবে...। আর তুমি কোথাও যাবেনা এই ভাবে। গেলেও একা যাবেনা।’
ভালোবাসার লোকের ছোঁয়ায় মন খুব দুর্বল বোধ করছে। ভাবছি মিলুর কথা না হোক রিতুর কথা ওকে বলে দি। সব কিছু বলে মুক্ত মনে আবার দুজনের সম্পর্ক শুরু করি। কিন্তু কেউ যেন বারবার করে সাবধান করছে আমাকে “বলিসনা বলিসনা, একবার এসব জানতে পারলে ও আর তোর কাছে ফিরবে না। জীবনের কিছু কিছু জিনিস গোপন রাখাই ভালো। তুই হয়তো শান্তি পাবি বলে, কিন্তু ও সারাজীবন ছটফট করবে... তোকে বিশ্বাস করতে পারবেনা।’
আমি তুলিকে বললাম ‘শোনো তুলি সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু তুমি তোমার মার থেকে সাবধানে থাকো। কাজ কর্মের ব্যাপার তো বহুদুর, সামান্য দুরে পাঠালেও তুমি একা যাবেনা। বিশ্বস্ত কাউকে নিয়ে যাবে। আমি যা বলছি তা ধর্মের মত পালন করবে। নাহলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যাবে। প্লিজ যতই আমি রেগে যাই বা গালি দি না কেন তোমাকে, আমি তোমার ক্ষতি চাইনা। তাই যা বলছি অক্ষরে অক্ষরে পালন কোরো। আর সন্তুকে পারলে এসব কথা জানিয়ে রেখো। আর একটা বছর অপেক্ষা করো, সামনের বছর মাইনে বেড়ে গেলেই আমি তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসবো।’
‘আমি সাবধানে থাকবো, কিন্তু তুমি বলো তো তুমি যদি আমাকে বিশ্বাস না করে কথায় কথায় যদি এরকম সন্দেহ করো, তাহলে আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? তোমার এত রাগ, আমার সত্যি তোমাকে খুব ভয় লাগে, বিয়ে হলেও কি আমরা সুখি হবো? তখন তো আমি আর বাড়িতেও ফিরে আসতে পারবোনা।’
‘আমি জানি আমার বদ মেজাজ, কিন্তু তুমি বলোতো, এই যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তাতে কোন ছেলে মাথা ঠিক রাখতে পারতো? আর আমি সন্দেহ করবো তুমি এমন কাজ করবে কেন? তোমার ওপর অধিকার আছে বলেই তো সন্দেহ, দ্বন্ধ এসব আসে। আমি যাতে তোমার ওপর সন্দেহ না করি সেই দায়িত্ব তো তোমার। কোই আমি তো এমন কিছু করিনা যাতে তুমি আমাকে সন্দেহ করো? তাহলে তুমি কেন সেরকম কিছু করবে। তুলি দেখো আমি কিন্তু পথচলতি ছেলে না, আমার একটা আলাদা সন্মান আছে। তুমি যদি মনে করো যে আমার সাথে জীবন কাটাবে তাহলে সবসময় এটা মাথায় রাখতে হবে।’
বিকেল পর্যন্ত দুজনের কথা বলেই কেটে গেলো। কত স্বপ্ন দেখলাম দুজনে মিলে। ফুলসজ্জার রাতে কিছু না করে এইরকম গল্প করেই কাটিয়ে দেবো। ছেলে হলে কি নাম রাখবো আর মেয়ে হলে কি নাম রাখবো। আগে যদি ছেলে হয় তাহলে পরে আরেকবার একটা নিতে হবে মেয়ের জন্যে। ঘুম থেকে উঠে মা বাবাকে চা দিয়েই আবার একটু ঘুমিয়ে নেবে। আমাকে পরে চা দেবে। আরো কত কি। একবারের জন্যেও মনে হয়নি যে সেক্স করি। মনের খিদে যদি মিটে যায় তো শরীর যে অনেক গৌন সেটা আজকে বুঝতে পারলাম।
আসার আগে তুলি জিজ্ঞেস করলো ‘কালকে কে ফোন করেছিলো?’
‘তুমি সেই জন্যে বার বার ফোন করছিলে তাই না।’
তুলি লজ্জা পেয়ে গেলো। আমি বললাম ‘কেউ না ইচ্ছে করে বলেছি তোমাকে টেনশান দেওয়ার জন্যে।’
‘শয়তান!!! আমি সারারাত...’
‘ইচ্ছে করেই তো করেছি’ আমি তুলিকে টেনে নিয়ে ওর ঠোঁট আমার ঠোঁট দিয়ে সিল করে দিলাম।
সন্ধ্যে হতে হতেই ওকে পৌছে দিলাম বাড়িতে। এতদিনের একটা চাপা কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে বেশ ভালোই লাগছে মনটা। তুলিকে আবার ফিরে পেয়ে, সেই বাউন্ডূলে মনটা কোথায় যেন পালিয়ে গেলো।
কিন্তু পাপ বাপকে ছারেনা। চা খেতে যাবো সেই সময় দেখি মাথায় চাদর মুরি দিয়ে মিলু দাড়িয়ে আছে, ওদের গলির মুখে। আমার বুক দুরুদুরু করছে ওকে দেখে। এই রে এই ভর সন্ধ্যেয় ওর সাথে কথা বলা মানে কত লোকে তো দেখে নেবে।
হ্যাঁ বুঝতে পারছি যে আমাকেই টার্গেট করছে। ব্যাক করে চলে যাবো কিনা ভাবছি, ভাবতে ভাবতেই আমার সামনে ও এসে গেলো।
‘কি সেদিন ধুমকিতে ছিলে নাকি? বললে যে আসবে কি হোলো?’
আমি চাপা গলায় বললাম ‘লোকজন দেখছে তো, পরে কথা বললে হয়না।’
‘তাহলে রাতে আসো, রাতে কথা হবে, আজকে নিশ্চয় চিনিয়ে দিতে হবেনা বাড়ি।’
‘আজকে না অন্যদিন...’
‘বেইমানি কোরো না কিন্তু, সেদিন অনেক কথা কিন্তু বলেছিলে, এখন সব ভুলে মেরে দিয়েছো...।’
আমি জানি তুলি আমাকে রাতে ফোন করবেই করবে সেখানে আমি না থাকলে ও নিশ্চয় সন্দেহ করবে। তাই মিলুকে বললাম ‘আজ কে না। কাল ভোরভোরে আমাকে বেরোতে হবে, দেখছি এর মধ্যে সময় পেলেই আসবো, তোমাকে তো বলেছি যে ছুটির দিনের আগের দিন আসবো, তুমিই সব ভুলে মেরে দিয়েছো।’
আমি হনহন করে হাঁটা দিলাম। বুকের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা ছরিয়ে পরেছে। সত্যি পাপ বাপকেও ছারেনা।
এবার একে কি ভাবে থামাবো কে জানে। কিছু একটা ভুজুং ভাজুং দিতে হবে।
সেরকম ভাবে রাস্তায় কথা বলিনি ওর সাথে। হোটেলে ঢুকে দুটো চা দিতে বলে দিলাম। আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম। তুলি খাটের ওপরে বসলো। ঘুম থেকে ওঠার পরে রাগ পরে যাওয়াতে, এখন মনটা কেমন কেমন লাগছে যেন এরকম ভাবে ওকে নিয়ে আসতে। আমিও এত জেদি যে কিছুই আমার হাত থেকে যেতে দিতে চাইনা। কি আর এমন হোতো ও নাহয় ওর মত থাকতো। আবার চিন্তা করলাম। কিছুটা হলেও তো ওর ওপর আমার দুর্বলতা আছে, কি করে ওর ক্ষতি হবে সেটা চুপ করে দেখি।
চা দিয়ে গেলো। এখানে এত ভাল চা পাওয়া যেতে পারে তা ধারনার বাইরে ছিলো।
তুলি দেখছি মুখ গম্ভির করে বসে আছে। আমিও ওর সাথে কোন কথা বলছিনা। এই কদিনেই কেমন দূরে সরে গেছি আমরা।
বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার তুলি মুখ খুললো, ‘কি হোলো এত হম্বিতম্বি করলে কালকে রাতে, এখন চুপ করে বসে আছো যে।’
আমি চুপ করে রইলাম। তুলি ঊঠে এসে আমার সামনে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। আমাকে ভালো করে দেখছে। আমি কেন যানি না ওর দিকে তাকাতে পারছিনা।
কিছুক্ষন নিঃশব্দে কাটার পরে আমি বললাম ‘চলো ফিরে যাই, ভালো লাগছেনা।’
তুলিও চুপ করে রইলো।
সত্যি আমার ভালো লাগছেনা এইরকম পরিবেশে।
হোটেলের লোকটা একটা খাতা নিয়ে এলো ‘দাদা আপনি আর ম্যাডাম সই করে দিন আর লিখবেন স্বামি স্ত্রী’
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম ‘হ্যা দাদা, পুলিশে খাতা যায় তো তাই এসব লিখতেই হয়।’
আমি আমতা আমতা করে বললাম ‘আমরা এক্ষুনি চলে যাবো’
তুলি হঠাৎ ওই লোকটার হাত থেকে খাতাটা নিয়ে নিলো আর নামধাম সব লিখতে শুরু করলো, ও সই করে আমার দিকে খাতাটা এগিয়ে দিলো।
লোকটা বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলে গেলো ‘টিভিটা চালিয়ে নেবেন কিন্তু।’
আমি তুলিকে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি হলো, বললাম যে চলে যাবো ভালো লাগছেনা।’
‘সবকিছু তোমার ইচ্ছে মত হবে না, আমি যখন এসেছি তখন আমাকে সময়টা কাটিয়েই বেরোতে হবে।’
...ঠিক আছে বলে আমি টিভিটা চালিয়ে দিলাম। একমনে টিভি দেখতে শুরু করলাম। মনে মনে ভাবছি কি দরকার এসব করে। আমি তো আর ধোয়া তুলসি পাতা না, তাহলে তুলি কি করছে না করছে তাতে আমার কি? যা করছে তাতো সেচ্ছায় করছে। কেউ জোর করে তো আর করছে না। আর তুলি তো আমার সাহায্যও চাইছে না। তাহলে আমি কেন যেচে পরে নাক গলাচ্ছি ওর ব্যাপারে।
মিনিট দুয়েক এইভাবে কাটার পরে তুলি উঠে এসে টিভিটা বন্ধ করে দিলো।
‘এই ভাবে চুপ করে বসে আছো যে?’
‘না থাক, আর এসব বাড়িয়ে লাভ নেই, ভেবেছিলাম অনেক কথা বলবো কিন্তু থাক আর এসব বাড়িয়ে লাভ কি?’
‘কাল রাতে এত কথা বললে, আর এখন চুপ করে আছো? আমি তো তোমার কথা শুনতেই এসেছি।’
‘তুমি তো দরকারে আমার কথা শোনোনি, আর এখন শুনে কি হবে। তীর যখন ধনুক থেকে বেরিয়ে গেছে তখন সেটা যেখানে লাগার লাগবেই, আমি আর আটকানোর চেষ্টা করে কি করবো। তুমি তো তোমার পথ দেখে নিয়েছো, আমি কেন পরে থাকবো, আমিও আমার মত লাইফ এঞ্জয় করি।’
‘তুমি কি ভাবছো বলোতো? আমি কি করে বেরাচ্ছি?’
‘এই যে আমি সেদিন এত কথা বললাম তোমার কি কানে ঢুকেছে?’
‘কানে ঢুকবে কি করে, তুমি যা করছিলে ফোনের মধ্যে, শেষ পর্যন্ত মাকেও গালাগালি দিলে? আমার ওপর রাগ ঠিক আছে, তাবলে সবাইকে এরকম বলবে?’
‘তোমার মাকে কেন গালি দিয়েছি তুমি জানো না তাই না? সেদিন যে তোমাকে বললাম?’
‘কোথাই বললে? কেন গালাগালি দিয়েছো তুমি আমার মাকে?’
‘আগে বল তুমি কি কালিপুজোর রাতে যা ঘটেছে তা কি তোমার মাকে বলেছিলে।’
‘হ্যাঁ বলেছিলাম।’
‘ঠিক আছে তুমি বলেছিলে মেনে নিলাম যে অন্যায় করোনি। কিন্তু তুমি কি জানো যে তোমার মা আমার মাকে এমন অপমান করেছে ফোনে যে মা অসুস্থ হয়ে মরতে বসেছিলো।’
তুলি আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো ‘আমি তো জানিনা...। কখন করেছিলো?’
‘সাত কান্ড রামায়ন পড়া হয়ে গেলো আর এখন তুমি জিজ্ঞেস করছো যে কখন বলেছিলো। হাহঃ। তোমার টান উঠেছিলো, সেটা কাকু আমাকে বলে, আমি মাকে দিয়ে তোমার বাড়িতে ফোন করিয়েছিলাম, সেই সময় তোমার মা খুব খারাপ ব্যাবহার করে মার সাথে।’
তুলি মাথা নিচু করে রইলো।
‘আমি তাও মেনে নিয়েছিলাম। কিছু বলিনি। কিন্তু তোমার মা একটা চিজ বটে। তুমি জানো কি জানো না সেটা আমি জানিনা।’
তুলি চুপ করে রইলো।
আমিও চুপ করে থাকলাম। ভাবলাম আর রনির কথা তুলবো না। আমি তো আর ওকে বিয়ে করে ঘরে তুলবো না এতো কিছুর পরে।
এরকম কিছুক্ষন কাটার পরে বললাম ‘চলো এবার যাই’
‘শেষ হয়ে গেছে তোমার কথা?’
আমি তুলির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ ছলছল করছে। নাঃ আর আমি দুর্বল হবো না। অনেক মুল্য দিতে হচ্ছে এই দুর্বলতার। এর থেকে ভাল ভাবে সরে যাই তুলির জীবন থেকে সেটাই সন্মানজনক হবে।
‘দ্যাখো তুলি, আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তুমি বুঝতেই পারছো যে আর আমাদের সম্পর্ক সেরকম নেই সুতরাং এখন আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো। আমিও তোমাকে অসন্মান করবো না আর তুমিও আমাকে করবেনা। হ্যাঁ তোমার কোন দরকার হলে তুমি আমাকে ফোন করতে পারো, আমি সময় সুযোগ পেলে নিশ্চয় তোমাকে সময় দেবো।’
‘এই কথাটা তো ফোনেই বলতে পারতে, এতদুর আসার কি দরকার ছিলো। আমি আন্দাজ করেছিলাম যে কেউ না কেউ তোমার জীবনে এসেছে...।’ বলতে বলতে তুলির গলা বুজে এলো।
আমারও মনটা হুঁ হুঁ করছে ‘সেরকম কোন ব্যাপার না তুলি, কেউ আসেনি আমার জীবনে। আমি কি করবো তুমি বলে দাও আমাকে এর থেকে কি ভালো কিছু ভাবতে পারি আমরা? এতো কিছুর পরে?’
তুলি মাথা নিচু করে চোখের জল মুছতে মুছতে বললো ‘তুমি কেন এরকম করছো? আমি কি করেছি?’
‘সেতো অনেক কথা তুলি, তোমাকে তো বোঝানোর চেষ্টা করেছি কতবার তুমি তো আমার কথা একান দিয়ে ঢোকাও আর ওকান দিয়ে বের করে বের করে দাও। যতক্ষন আমার সাথে থাকো ততক্ষন ভালো, যেই দূরে সরে যাও তুমি তোমার মত চলতে শুরু করো।’
‘তুমি কালিপুজোর রাতের কথাটা বলতে চাইছো বুঝতে পারছি...।’
‘হ্যাঁ সেটা তো আছেই আর তা ছাড়া ...।’
‘দ্যাখো সেদিন আমাদের নাচের কলেজ থেকে সবাই গেছিলো, তাই আমি তোমার কথা না শুনেই গেছিলাম...।’
‘এইভাবে এতগুলো ছেলের মাঝে তুমি একা মেয়ে নাচছো ভাবোতো আমার সন্মানটা কোথায় যায়? সেটা নিয়ে কি তুমি কোনদিন চিন্তা করেছো? তারপর রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে মাঝরাতে ছেলেদের সাথে গল্প করছো... একটা ছেলে তোমাকে কি ভাবে দেখছিলো তা দেখেছো? এসব আমাদের পাড়ার লোক দেখেনি ভাগ্য ভালো।’
‘আমার ভুল হয়ে গেছে আর কোনদিন এরকম করবো না। ও আমার কলেজের বন্ধু, আর আরেকজন ওর বন্ধু, ও মেয়ে দেখলেই এরকম করে, কোন মেয়ে নাকি ওকে পাত্তা দেয়না, ওর সামনের একটা দাঁত ভাঙ্গা, আমি তাই মজার মজার কথা বলে হাসানোর চেষ্টা করছিলাম যাতে ও ফোকলা দাঁতে হাসে আর মজা হয়। আমার মনে কিছু ছিলোনা, প্লিজ বিশ্বাস করো, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
আবার একটা সেমসাইড হোলো, লঘু পাপে গুরু দণ্ড দিয়ে ফেলেছি। আশা করি এতোটা গুল মারবে না তুলি।
আক্ষেপের বশে ওকে বললাম ‘তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও বরঞ্চ, আমি অনেক অন্যায় করেছি তোমার সাথে, বিশেষ করে এত অল্পসময়ের মধ্যে আমার তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা উচিৎ হয়নি। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি, তুমি জীবনে আমার থেকে অনেক ভালো ছেলে পাবে, সেরকম কারো সাথে তুমি জীবন কাটাতে পারবে।’
‘আমি এত খারাপ মেয়ে আমার কি আর সংসার করা হবে? কে জুটবে সেতো অনেক পরের কথা?’ তুলি কেঁদে দিলো বলতে বলতে।
আমার খুব খারাপ লাগছে তুলিকে কাঁদতে দেখতে। আমি উঠে গিয়ে ওর মাথায় হাত দিয়ে বললাম ‘কেঁদো না, বাস্তবটা মেনে নিতেই হবে, এত কিছুর পরে তোমার সাথে সম্পর্ক রাখা কি সম্ভব? তুমি আমার জায়গায় থাকলে কি করতে?’
হাউমাউ করে কেঁদেই চলেছে তুলি।
আমি ভিতরে ভিতরে খুব দুর্বল হলেও তুলিকে বুঝতে দিচ্ছি না ‘তুমি কি চাও তুলি?’ আমি ওর গড়িয়ে পড়া চোখের জল মুছে দিতে দিতে ওর থুতনি ধরে ওর মাথা তুলে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
‘আমি কিছু চাইনা।’
আমি ওর সামনে থেকে উঠে এসে বিছানার ওপরে শুয়ে একটা সিগেরেট টানতে শুরু করলাম।
‘তুলি সেদিন তুমি সত্যি শুনতে পাওনি যে আমি কি বলেছিলাম?’
‘না আমি সত্যি শুনতে পাইনি, মা আমাকে এমন ধাক্কা মেরেছিল যে আমার হাত থেকে ফোন ছিটকে পরে যায়। আমি বুঝতে পারছিলাম যে তুমি কথা বলে চলেছো কিন্তু...।’
‘আমি জানিনা তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে কিনা বা তুমি বুঝতে পারো কিনা? এরকম একটা কথা বারবার ভাবতে আর বলতে নিজের মনের জোরের দরকার হয়। তুমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছো না যে তোমার মা কি রকম...। এই যে তোমাকে কাজে পাঠিয়ে দিয়েছে এর পিছনে তোমার মার কত বড় চক্রান্ত আছে তুমি জানো?’
‘কাজে পাঠিয়েছে, মা? কোথায়? আমাকে বলছিলো যে কি যেন কাজ আছে ভালো মাইনে দেবে, রনি সেটা যোগাযোগ করিয়ে দেবে, তারপর তো আর কোন কথা হয়নি। তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছিনা তো। কাজে কোথায় গেলাম?’
‘তাহলে তুমি এই রোববার আর কালকে কোথায় গেছিলে সেজেগুজে?’
‘ওহ্* এই ব্যাপার। কেন আমাকে যখন দেখেছিলে আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে পারোনি? দরকার হলে তোমাকে নিয়ে যেতাম সঙ্গে করে। কেন তুমি মনামিকে দেখোনি গাড়ীতে? ও তো আমার সাথেই যায়, কোথায় দেখেছিলে আমাকে?’
‘না আমি তো আর কাউকে দেখিনি, তুমি তো বাজারের সামনে থেকে উঠলে।’
‘হ্যাঁ আমরা কয়েকজন মিলে গাড়ীটা ভাড়া করেছি, বাবা আর্ধেক টাকা দিচ্ছে, মনামিও দেয় কিছু, এখন সেই বছর শেষ পর্যন্ত গাড়িটা থাকবে, আমাদের এই টীমটাই বেশ কয়েক জায়গায় ডাক পেয়েছে। আর মনামি তো ব্রীজের ওপার থেকে ওঠে।’
‘কোথায় গেছিলে তোমারা? এতো সেজেগুজে?’
‘আমার কলেজের ফাংশান আছে সামনে। আমি কোঅরডিনেটর, নাচও আমি তুলে দিচ্ছি।’
আমার গলায় সিগেরেটের ধোয়া আটকে বিকট কাঁশি শুরু হোলো। আবার সেমসাইড।
তুলি তাড়াতাড়ি জল এনে আমাকে দিলো।
একটু ধাতস্থ হয়ে আমি আবার চায়ের অর্ডার দিলাম।
ভাবছি বারবার তুলির সাথে এরকম হচ্ছে কেন? এতটা নিশ্চয় বানিয়ে বলছে না।
চা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম ‘তুমি কি আমাকে ভালোবেসেছিলে?’
তুলি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো ‘ভালোবেসেছিলে মানে?’
‘না মানে এখন তো তোমার আর আমার ওপর টান নেই তাই জিজ্ঞেস করছি। সেই সময় কি ছিলো?’
‘তুমি বুঝবেনা এসব। আমি তো খারাপ মেয়ে তাই সখ মেটাতে তোমাকে আমার সব কিছু দিয়েছি।’
‘তুমি খারাপ না, তাই বারবার করে আমি তোমাকে খোঁজ করি, কিন্তু তুমি জানোনা তোমাকে খারাপ করার চক্রান্ত করছে তোমার মা।’
তুলি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। আমি ধীরে ধীরে ওর মার সমস্ত সংলাপ তুলিকে খুলে বললাম।
বেচারি একে আমার খিস্তি খেয়েছে তারওপর মায়ের এরকম কির্তি শুনে একদম ভেঙ্গে পরলো।
আমি আর পারলাম না ওকে বুকে টেনে নিলাম।
তুলি চোখের জলে আমার টি শার্টটা ভিজে গেলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে শুরু করলো ‘আমি জানতাম এরকম কিছুই হচ্ছে। মার ব্যাগে আমি কয়েকবার কণ্ডোম দেখেছি। বাবা আর মা তো একসাথে শোয় না। তাহলে কে? সেটা জানতাম না। ছিঃ এর থেকে আমার মরে যাওয়া ভালো।’
একে একে তুলিকে সমস্ত কথা বললাম, তুলির বাবার সাথে কথা, স্বপনের সাথে হাতাহাতি, শুভ, কর্পোরেশানের কণ্ট্রাক্টর, আরো যা যা শুনেছি সব।
তুলি একে একে আমাকে সব খুলে বললো।
শুভো ওর দাদার বন্ধু, একসাথেই খেলাধুলো করে। ওর দাদার একদিন খেলতে গিয়ে চোঁট লাগে, সেই সময় তুলি একমাত্র বাড়িতে ছিলো। তাই তুলি ওর বাইকের পিছনে বসে খেলার মাঠে যায় দাদাকে রিক্সা করে বাড়ি নিয়ে আসতে। সেটা স্বপন দেখতে পেয়ে, তুলির মাকে ঠিক এরকম ভাবে নালিশ করে।
স্বপনের উদ্দেশ্য তুলিদের বাড়িটা প্রোমোটারের হাতে তুলে দেওয়া। দালালি বাবদ মোটা মাল আর একটা ফ্ল্যাট যদি বের করা যায়। সেই ধান্দায় ও ঘুরছে। তুলির সব কাকারা তুলির বাবার ওপর সিদ্ধান্তের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে, বাইরে রয়েছে। কেউ হয়তো ফিরে আসবেনা। তাই স্বপন যেমন করে হোক এই ডিলটা করতে চাইছে। তুলির মাও তাই চায়, কিন্তু তুলির বাবা সেটা চায়না।
তুলি আরো বলে যে, স্বপন আমার সন্মন্ধে সরাসরি না হলেও অনেক বাজে বাজে কথাই বলেছে ওর মা বাবার কাছে। এমন কি এরকমও বলেছে যে পাড়ার কাজের ঝিও বাদ দিইনা আমরা। ও আমাকে একদম সহ্য করতে পারেনা। আরো কত যে কথা বলেছে তুলির মার কাছে সেটা তুলির মা আর স্বপনই জানে।
আস্তে আস্তে আমার কাছে সব পরিষ্কার হচ্ছে। স্বপনের উদ্দেশ্যও এখন পরিষ্কার।
স্বপনের সাথে সেটা আমি আলাদা করে বুঝে নেবো।
কিন্তু তুলির মা এরকম কেন করছে নিজের মেয়ের সাথে সত্যি সেটা বুঝতে পারছিনা।
আমি তুলিকে বললাম ‘তুমি কি ভাবছো কেন কাকিমা এরকম করছে? আরে বাবা কুকুর বেড়ালও তো নিজের সন্তানের ভালো চায়, তাহলে উনি কেন এরকম ভাবে তোমাকে ঠেলে দিচ্ছে?’
‘আমি জানিনা, কেন এরকম করে আমার সাথে। এর আগে এইরকম একটা ছেলে বাড়িতে আসত। আমি একবার শান্তিনিকেতনে একটা প্রোগ্রাম করতে গেছিলাম কলেজের টিমের সাথে। সেখান থেকে ছেলেটা পিছে পরে গেছিলো। মার হঠাৎ ইচ্ছে হোলো যে ওর সাথে আমার বিয়ে দেবে, তারপর সে কি কান্ড। ছেলেটা হঠাৎ হঠাৎ চলে আসে, সময়ের ধ্যান জ্ঞান নেই। একদিন আমি ভাল করে মুখ ঝামটা দেওয়াতে তার আসা বন্ধ হয়েছিলো। সাথে বাবাও ছেলেটাকে খুব শাসিয়েছিল। তারপর মার সেকি কান্ড। এই বলে সংসার ছেড়ে চলে যাবে, এই পুলিশে খবর দিতে যায় যে আমি আর বাবা মিলে মাকে মানসিক অত্যাচার করছি।’
‘তাহলে বুঝতেই পারছো কি রকম জিনিস উনি।’
‘সব বুঝতে পারছি, কিন্তু তুমি বলো আমি কি করবো?’
‘তোমাকে কিছু করতে হবেনা। আগে তুমি চিন্তা করো যে তুমি ভবিষ্যতে কি চাও?’
তুলি আমার হাত ধরে বললো ‘আমি এত ভাবতে পারিনা অভি। প্লিজ আমাকে হেল্প করো।’
‘শোনো তুলি, দুটো পথ তোমার সামনে আছে, ১। কাউকে যদি ভালবাসো তাহলে তাকে সন্মান করো। যে তোমাকে ভালবাসে সে তোমার ক্ষতি হতে দেবে না। তাতে তুমি ভালোবাসা পাবে, সংসার পাবে, সন্তান পাবে। কেউ তোমাকে মা বলে ডাকবে, কেউ গুটিগুটি পায়ে তোমার গায়ের সাথে লেপ্টে থাকবে। তোমার স্বামি তোমাকে ভালোবাসবে, সেটা যে বিছানার ভালোবাসাই, তা নয়। ভেবে দেখো তুলি, সকাল বেলা তুমি তোমার বরকে ঘুম থেকে তোলার জন্যে তোমার ভেজা হাতটা ওর বুকে দিয়ে দিলে, আর তোমার বর চোখ খুলে তোমাকে দেখে এক ঝটকায় তোমাকে কাছে টেনে নিল, খুব আদর করলো। পুচকি বলে তোমার গাল টিপে দিলো, সেই সময় ধরো তোমার ছেলে বা মেয়ে তোমাদের দেখে ফেলে তোমাদের গায়ের ওপর চরে বসে। ভাবোতো কেমন লাগবে। আবার ধরো তুমি রান্না করছো তাড়াহুড়ো করে, আর তোমার বর স্নান করে এসে তোমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে শুরু করলো। অফিসে যাওয়ার সময় তুমি তোমার সন্তান কে কোলে নিয়ে বরকে টাটা করতে এলে। সেই সময় তোমার বর তোমাকে আর তোমার ছেলে দুজনকেই চুমু খেয়ে নিলো। তারপর ব্যালকনি থেকে তুমি আর ছেলে তোমার বরকে টাটা করবে।’
‘ছেলে না মেয়ে। আমাদের মেয়ে হবে।’ তুলি নিজের মনেই বলে উঠলো। আমি চুপ করে গেলাম।
কিন্তু আমার বলা শেষ হয়নি আমি তাই বলে চললাম ‘আরেক দিকে, তোমার অফুরন্ত স্বাধিনতা, যা খুশি তাই করতে পারো। ইচ্ছে মত যেখানে খুশি যেতে পারো, যার সাথে খুশি তার সাথে তুমি সময় কাটাতে পারো। ইচ্ছে করলে পয়সাও কামাতে পারো। নতুন নতুন ড্রেস পড়তে পারো। গাড়ি করে লোকে তোমাকে নিয়ে যাবে দিয়ে যাবে। রাতের পরে রাত বাইরে থাকতে পারো। কেউ জিজ্ঞেস করার থাকবেনা। কিন্তু যৌবন ফুরিয়ে যায়, মানুষের রুপ দেহ এক না এক সময় ভেঙ্গে পরে, মানুষ একা হয়ে পরে। পারবে তো সেই সময়টা কাটাতে। এই তো খবরের কাগজে পরো না যে এই মডেল সুইসাইড করেছে...।’
তুলি চুপ করে রইলো।
আমি বলে চলেছি “এবার তোমার সিদ্ধান্ত যে তুমি কি করবে।”
‘তুমি আমাকে বিয়ের পরেও পুচকি বলে ডাকবে? আমাদের মেয়ে হলে তুমি আমাকে না ওকে বেশী ভালবাসবে?’
এই মেয়েটা কি কোনোদিনই বড় হবেনা? আমি মনে মনে ভাবছি।
আমি ওকে বুকে টেনে নিলাম। আমি বুঝতেই পারছি যে আমি ছাড়া ওর কোন গতি নেই। মানে সুস্থ স্বাভাবিক গতি। ‘সবতো হবে, কিন্তু এখন এই কদিন কি ভাবে নিজেকে সামলে রাখবে? পারবে নিজের মায়ের সাথে লড়াই করতে? যদি তোমার মা জোর করে তোমাকে রনির দিকে ঠেলে দেয়?’
‘এই তো তুমি বললে যে রনির সাথে মায়ের...। তাহলে আমাকে ঠেলে দেবে কেন?’
‘ওহঃ তুলি তুমি এতো সরল আর অবুঝ তোমাকে কি বোঝাবো। জীবনে কটা শয়তান দেখেছো তুমি?’
এরপর আমি বলবো না বলবোনা করেও সুদিপা আর পাপ্পুর ঘটনাটা ওকে বললাম। তুলি ভয়ে আমাকে আকড়ে ধরলো। বার বার করে বলছে ‘তোমার কিছু হয়ে গেলে কি হবে...। আর তুমি কোথাও যাবেনা এই ভাবে। গেলেও একা যাবেনা।’
ভালোবাসার লোকের ছোঁয়ায় মন খুব দুর্বল বোধ করছে। ভাবছি মিলুর কথা না হোক রিতুর কথা ওকে বলে দি। সব কিছু বলে মুক্ত মনে আবার দুজনের সম্পর্ক শুরু করি। কিন্তু কেউ যেন বারবার করে সাবধান করছে আমাকে “বলিসনা বলিসনা, একবার এসব জানতে পারলে ও আর তোর কাছে ফিরবে না। জীবনের কিছু কিছু জিনিস গোপন রাখাই ভালো। তুই হয়তো শান্তি পাবি বলে, কিন্তু ও সারাজীবন ছটফট করবে... তোকে বিশ্বাস করতে পারবেনা।’
আমি তুলিকে বললাম ‘শোনো তুলি সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু তুমি তোমার মার থেকে সাবধানে থাকো। কাজ কর্মের ব্যাপার তো বহুদুর, সামান্য দুরে পাঠালেও তুমি একা যাবেনা। বিশ্বস্ত কাউকে নিয়ে যাবে। আমি যা বলছি তা ধর্মের মত পালন করবে। নাহলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যাবে। প্লিজ যতই আমি রেগে যাই বা গালি দি না কেন তোমাকে, আমি তোমার ক্ষতি চাইনা। তাই যা বলছি অক্ষরে অক্ষরে পালন কোরো। আর সন্তুকে পারলে এসব কথা জানিয়ে রেখো। আর একটা বছর অপেক্ষা করো, সামনের বছর মাইনে বেড়ে গেলেই আমি তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসবো।’
‘আমি সাবধানে থাকবো, কিন্তু তুমি বলো তো তুমি যদি আমাকে বিশ্বাস না করে কথায় কথায় যদি এরকম সন্দেহ করো, তাহলে আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? তোমার এত রাগ, আমার সত্যি তোমাকে খুব ভয় লাগে, বিয়ে হলেও কি আমরা সুখি হবো? তখন তো আমি আর বাড়িতেও ফিরে আসতে পারবোনা।’
‘আমি জানি আমার বদ মেজাজ, কিন্তু তুমি বলোতো, এই যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তাতে কোন ছেলে মাথা ঠিক রাখতে পারতো? আর আমি সন্দেহ করবো তুমি এমন কাজ করবে কেন? তোমার ওপর অধিকার আছে বলেই তো সন্দেহ, দ্বন্ধ এসব আসে। আমি যাতে তোমার ওপর সন্দেহ না করি সেই দায়িত্ব তো তোমার। কোই আমি তো এমন কিছু করিনা যাতে তুমি আমাকে সন্দেহ করো? তাহলে তুমি কেন সেরকম কিছু করবে। তুলি দেখো আমি কিন্তু পথচলতি ছেলে না, আমার একটা আলাদা সন্মান আছে। তুমি যদি মনে করো যে আমার সাথে জীবন কাটাবে তাহলে সবসময় এটা মাথায় রাখতে হবে।’
বিকেল পর্যন্ত দুজনের কথা বলেই কেটে গেলো। কত স্বপ্ন দেখলাম দুজনে মিলে। ফুলসজ্জার রাতে কিছু না করে এইরকম গল্প করেই কাটিয়ে দেবো। ছেলে হলে কি নাম রাখবো আর মেয়ে হলে কি নাম রাখবো। আগে যদি ছেলে হয় তাহলে পরে আরেকবার একটা নিতে হবে মেয়ের জন্যে। ঘুম থেকে উঠে মা বাবাকে চা দিয়েই আবার একটু ঘুমিয়ে নেবে। আমাকে পরে চা দেবে। আরো কত কি। একবারের জন্যেও মনে হয়নি যে সেক্স করি। মনের খিদে যদি মিটে যায় তো শরীর যে অনেক গৌন সেটা আজকে বুঝতে পারলাম।
আসার আগে তুলি জিজ্ঞেস করলো ‘কালকে কে ফোন করেছিলো?’
‘তুমি সেই জন্যে বার বার ফোন করছিলে তাই না।’
তুলি লজ্জা পেয়ে গেলো। আমি বললাম ‘কেউ না ইচ্ছে করে বলেছি তোমাকে টেনশান দেওয়ার জন্যে।’
‘শয়তান!!! আমি সারারাত...’
‘ইচ্ছে করেই তো করেছি’ আমি তুলিকে টেনে নিয়ে ওর ঠোঁট আমার ঠোঁট দিয়ে সিল করে দিলাম।
সন্ধ্যে হতে হতেই ওকে পৌছে দিলাম বাড়িতে। এতদিনের একটা চাপা কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে বেশ ভালোই লাগছে মনটা। তুলিকে আবার ফিরে পেয়ে, সেই বাউন্ডূলে মনটা কোথায় যেন পালিয়ে গেলো।
কিন্তু পাপ বাপকে ছারেনা। চা খেতে যাবো সেই সময় দেখি মাথায় চাদর মুরি দিয়ে মিলু দাড়িয়ে আছে, ওদের গলির মুখে। আমার বুক দুরুদুরু করছে ওকে দেখে। এই রে এই ভর সন্ধ্যেয় ওর সাথে কথা বলা মানে কত লোকে তো দেখে নেবে।
হ্যাঁ বুঝতে পারছি যে আমাকেই টার্গেট করছে। ব্যাক করে চলে যাবো কিনা ভাবছি, ভাবতে ভাবতেই আমার সামনে ও এসে গেলো।
‘কি সেদিন ধুমকিতে ছিলে নাকি? বললে যে আসবে কি হোলো?’
আমি চাপা গলায় বললাম ‘লোকজন দেখছে তো, পরে কথা বললে হয়না।’
‘তাহলে রাতে আসো, রাতে কথা হবে, আজকে নিশ্চয় চিনিয়ে দিতে হবেনা বাড়ি।’
‘আজকে না অন্যদিন...’
‘বেইমানি কোরো না কিন্তু, সেদিন অনেক কথা কিন্তু বলেছিলে, এখন সব ভুলে মেরে দিয়েছো...।’
আমি জানি তুলি আমাকে রাতে ফোন করবেই করবে সেখানে আমি না থাকলে ও নিশ্চয় সন্দেহ করবে। তাই মিলুকে বললাম ‘আজ কে না। কাল ভোরভোরে আমাকে বেরোতে হবে, দেখছি এর মধ্যে সময় পেলেই আসবো, তোমাকে তো বলেছি যে ছুটির দিনের আগের দিন আসবো, তুমিই সব ভুলে মেরে দিয়েছো।’
আমি হনহন করে হাঁটা দিলাম। বুকের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা ছরিয়ে পরেছে। সত্যি পাপ বাপকেও ছারেনা।
এবার একে কি ভাবে থামাবো কে জানে। কিছু একটা ভুজুং ভাজুং দিতে হবে।