31-12-2018, 04:29 PM
উফ্*। কি যে যন্ত্রনায় পরলাম। বাঁশ তুমি কেন ঝারে এসো আমার গাঁঢ়ে। যেচে পরে কাল রাতে ফোন করতে গেলাম, আর আজ তার কি বিপরিত প্রতিক্রিয়া। তুলি কি আমার শেষ কথাগুলো শুনেছে? যদি শোনে তাহলে নিশ্চয় ও যাচাই করবে। এখন আমার এই ভরসা।
অফিস কামাই করে বাড়িতেই রয়ে গেলাম। এই মানসিকতা নিয়ে অফিস করা যায়না। চাকড়িটা এবার চলেই যাবে হয়তো।
পাগলের মত বার বার করে তুলিদের বাড়িতে ফোন করছি কিন্তু বিজি টোন আসছে। ফোনটা মনে হয় এখনো ঠিক করে রাখেনি। কোন কিছু খারাপ হলো না তো। তুলি ওর মার নামে এসব শুনে কিছু করে বসলো না তো?
কি করে জানতে পারি?
পাপ্পুও নেই। কে ফোন করে জানতে পারে। বা গিয়ে দেখে আসতে পারে?
আরো কয়েকবার ফোন করলাম তুলিদের বাড়িতে। সেই একই।
আবার কিছুক্ষন অপেক্ষা করে আবার ফোন করলাম। বুকের ধুকপুক বেড়ে গেলো। রিং হচ্ছে।
তুলির বাবা ফোন ধরেছে। ‘হ্যালো’
‘কাকু তুলি কেমন আছে।’
‘এই তো শুয়ে আছে, কে বলছো তুমি।’
আমার বুকের থেকে একটা চাপ নেমে গেল। যাক বারাবারি কিছু হয়নি। ‘আমি অভি বলছি কাকু।’
‘ওঃ ধরো তুলিকে ডেকে দিচ্ছি। তুলি... তুলিইই’
‘না কাকু, ওকে ডাকার দরকার নেই, আমার আপনার সাথেই দরকার। আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।’
‘তো চলে এসো না, চা খেতে খেতে কথা বলা যাবে।’ আমি বুঝলাম উনি এসব ব্যাপারের কিছুই যানেন না।
‘না আমি আসতে পারবোনা। অসুবিধে আছে। আপনি বলুন আমার সাথে কি দেখা করতে পারবেন? এটা আপনার মেয়ের ভবিষ্যতের ব্যাপার। খুব জরুরি।’
‘অ। তো কোথায় আসবো বলো।’
‘আপনার অসুবিধে না হলে স্টেশানে কথা বলতে অসুবিধে আছে?’
‘নাঃ আমি আসছি। কি ব্যাপার একটু হিণ্টস দেবে? আসলে বয়েস হয়েছে তো টেনশান নিতে পারিনা।’
‘আরে না না কাকু, সেরকম ব্যাপার না। আপনি চলে আসুন তখন সব বললে বুঝতে পারবেন।’
ফোনটা রেখে দিয়ে আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম। প্রায় দৌড়ে স্টেশানে এসে পৌছুলাম। ঊনি যাতে আমার আগে এসে অপেক্ষা না করে সেই উদ্দেশ্যে। তুলিকে ওর মার হাত থেকে বাচাতেই হবে।
আমি আর তুলির বাবা প্ল্যাটফর্মের একটা সিমেন্ট বাঁধানো বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। এই সময় একটু ভিড়ই আছে। চেনাশোনা অনেকেই আমাকে দেখতে দেখতে যাচ্ছে। তবুও ভিড়ের মধ্যে থাকলেই লোকে লক্ষ করেনা এটা আমার পুরোনো অভিজ্ঞতা। আমি আর তুলির বাবা একটা করে চা নিলাম।
আমি বিনা দ্বিধায় শুরু করলাম ‘কাকু, তুলিকে নিয়ে কি ভাবছেন?’
‘কি ভাববো আর, তোমরা নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছো, তো গ্র্যাজুয়েশানটা করুক তারপর না হয় তোমার বাড়িতে যাবো...।’
‘আমি বোঝাতে পারলাম না কাকু আপনাকে?’
তুলির বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে যে উনি কি ভুল বুঝেছেন।
আমি মরিয়া হয়ে উনাকে বললাম ‘তুলিকে তো একটু সংযত হতে হবে, পরিনত হতে হবে, ভালো মন্দ বুঝতে হবে, পড়াশুনাটা ভাল করে করতে হবে, কিন্তু ও তো সেরকম গাইডেন্স পাচ্ছেনা কাকু?’
‘হ্যাঁ, সেতো ঠিকই, তুমি ঠিকই বলেছো।’
আমি বুকে বল পেলাম যে সেমসাইড হয়নি। ‘কাকু কালিপুজোর রাতে ও একা একা রাত জেগে ফাংশান দেখতে গেছিলো আপনি যানেন?’
মাথা নিচু করে উনি জবাব দিলেন ‘আমাকে কেউ কিছু বলে নাকি? ওরা ওদের মর্জি মত চলে একসময় অনেক বালেছি, তারপর দেখি এদের বলে লাভ নেই। তুমি একটু কড়া হাতে ওকে ধরো।’
‘আমার কি সেই অধিকার আছে, আপনার মিসেস তো আমাকে সেই অধিকার দেবে না।’
‘কেন দেবেনা?’
‘আপনি যানেন, আমি তুলিকে সেদিন রাতে ফাংশান থেকে উদ্ধার করি। আমি গিয়ে দেখছি একগাদা ছেলের সাথে ও একা মেয়ে নেচে চলেছে, তারপর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভোররাতেও দুটো ছেলের সাথে দেখি গল্প করছে। আমি ওকে ভীষণ যা তা বলেছি। সেদিন যে আপনি বললেন তুলির শরীর খারাপ, তাই আমি মাকে বললাম খোঁজ নিতে যে ও কেমন আছে? আর তুলির মা, মার সাথে ভীষণ দুর্ব্যাবহার করে, মা সেই জের সামলাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পরে। আজকে আমি ফোন করেছি আমার সাথেও খুব বাজে ব্যাবহার করলো। এরপর আমি তুলির সাথে কথা বললাম মনে হোলো যে তুলি ওর মাকেই সমর্থন করছে। এবার বলুন আমি কি ভাবে তুলিকে শাসন করবো?’
‘তুমি ভুল বুঝোনা এরা সরল, কিন্তু প্রচণ্ড জেদি আর মাথা গরম। তাই জানেনা কোথায় কি ভাবে কথা বলতে হয়। আর মা মেয়ের মধ্যে গোপন কিছু থাকেনা তাই হয়তো অভিমানে তোমার কথাগুলো বলে দিয়েছে। ওর মা কিছু অন্যায় করলে আমি তোমার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’
-‘এইখানেই আমার প্রশ্ন আর আমার আপনাকে ডাকা’
তুলির বাবা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
আমি আবার বলতে শুরু করলাম ‘আপনি যানেন আপনার মিসেস কোথায় যায়? কাদের সাথে মেলামেশা করেন?’
-‘শুনেছি তো কি যেন ফিল্মের ব্যাপারে রোজ বেরোই। আমার এসব পছন্দ না। ঘরের মেয়ে ঘরে থাকলেই ভালো। কিন্তু দিনকাল কি পরেছে দেখেছো তো। পেপার খুললেই তো রোজই এরকম খবর বেরোয়। জোরজবরদস্তি করতে গেলে কিছু না করে বসে সেই ভয় পাই।’
- ‘এখানেই আমার আপত্তি। উনি তো আপনার পরিবার। উনার ভালো মন্দ তো আপনার ভালো মন্দ তাহলে আপনি তো মিনিমাম খোজ খবর রাখবেন?’
- ‘কি করবো তুমি বল? কেউ যদি কথা না শোনে, তাহলে কি আমি লোক লাগাবো তার পিছনে, সেটা কি সন্মানের ব্যাপার হবে।’
- ‘এই ভাবে হাল ছেড়ে দিলে কিন্তু তুলির ভবিষ্যতও বিপন্ন হবে কাকু। আমি যতদুর জানি, ওর মা কিন্তু ভালো সঙ্গে নেই। যে কোনদিন বিপদে পড়তে পারেন। আপনি আমার বাবার বয়েসি আর বাবার বন্ধুস্থানিয় তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি যে দেখবেন কোনোদিন তুলির মা কোথাও পাচার হয়ে যাবে। এর থেকে ভেঙ্গে আমি বলতে পারবোনা।’
-‘আমি সব বুঝি, আমি ওদের অনেকবার বলেছি যে এসব লাইনে যাচ্ছো, একদিন মা আর মেয়েকে বাক্স করে পাচার করে দেবে। কে শোনে কার কথা। এদের ছেড়ে দিতে হয় যেদিন ঠোক্কর খাবে সেদিন ঠিক পথে চলে আসবে।’
-‘সেই অপেক্ষাই থাকলে তো আরো বিপদ, এতো কেউ পাহারে উঠছে না যে উঠতে গিয়ে হাঁপ ধরে গিয়ে নেমে আসবে। কোনদিন দেখবেন রেপ হয়ে যাবে। তখন কি করবেন?’
তুলির বাবা চুপ করে রইলো।
আমি মরিয়া হয়ে উঠেছি তাই বলে চলেছি ‘এই যে রনি নামের ছেলেটা আপনাদের বাড়িতে আসে ওর খোঁজখবর রাখেন?’
‘আরে ও তো এক বড় চিটিংবাজের ছেলে। ওর বংশপরিচয় তুমি আমার থেকে নাও। ওর বাবা তো বিড়াট ঠগবাজ লোক। আর ব্যাটা গেছে বাপের ওপরে। তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করবে সুকুমার কি জিনিস বলে দেবে। আগে তো আমাদের একই থানা ছিলো। আমরা যারা পুরোনো লোক তারা ওর চরিত্র ভালো মতই জানি। কবার জেল খেটেছে তার ঠিক নেই। ওতো সুকুমারের ছেলে। আমি তো তুলির মাকে বলি ওই ছেলেটার ব্যাপারে আমার কথা বিশ্বাসই করেনা। বলে আমার মাথায় ভিমরতি হয়েছে।’
‘আপনি যানেন এই রনি, তুলিকে নষ্ট করতে চায়?’
তুলির বাবা থমকে আমার দিকে তাকালো তারপর মাথা নেরে নেরে আমাকে বললো ‘আমি জানতাম যে এরকম কিছুই হবে। এই স্বপনকেও তারাতে হবে সাথে সবকটা কে। মাঝে একবার হুমকি দিয়েছিলাম বলে ব্যাটা বাড়িতে আসা বন্ধ করেছে। কিন্তু ফোন করে তুলি তুলির মা দুজনেই কথা বলে। স্বপনের হাত ধরেই এ বাড়িতে ঢুকেছে ও। বিষঝারে কি ফুল ফোঁটে নাকি।’
-‘তো এই হুমকি আপনি আপনার বাড়ির লোককে দিতে পারেন না? আপনার মিসেস তো তুলিকে ঠেলে দিচ্ছে যে রনির কাছে কিসের কাজের ব্যাপারে।’
-‘কই তুলিতো আমাকে বলেনি? ও তো সব কথা আমাকে বলে।’
-‘তুলি হয়তো নিজেও জানে না। আমি বুঝতে পারছি না। নিজের মা হয়ে উনি কি ভাবে এসব করছেন?’
‘না না তুমি এরকম ভেবো না। ও অতসত ভাবেনা। আসলে সরল প্রকৃতির তাই সবাই সুযোগ নেয় এদের থেকে।’
-‘কাকু, আমি ছোট হয়ে বলছি। আপনি ভালো করে যাজ করুন। মানুষ ওপরে এক আর ভিতরে আরেক। হয়তো উনি আপনার সরলতার সুযোগ নিচ্ছে। এমনও তো হতে পারে।’
তুলির বাবা অনেকক্ষণ চুপ করে থাকল তারপর আমাকে হতাশ গলায় বললেন ‘তাহলে তো মারদাঙ্গা করতে হয় এদের আটকাতে।’
-‘কিচ্ছু করতে হবেনা। আমার বয়েস অল্প, কিন্তু অনেক অভিজ্ঞতা। সেখান থেকে আপনাকে বলছি সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু আপাতত আপনি তুলিকে ওর মার সাথে কোথাও যেতে দেবেন না। তুলির এখনো ভালো মন্দের জ্ঞান হয়নি। বাকিটা আমি দেখছি।’
-‘আমি বরঞ্চ তোমাকে বলি, তুমি দেখছো দেখো, কিন্তু তোমার কাকিমার সাথে তুমি খুলে কথা বলো। বোঝালে ও ঠিক বুঝবে, কি হবে তুমি না হয় একটু ছোটই হলে ওর কাছে। তুমিই না হয় ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলে। কিন্তু ও আমার কথা শুনবে না, শোনাতে হলে আমাকে মারদাঙ্গা করতে হবে। এরা এমন জেদি। একবার যেটা করবে বলে সেটা করেই ছারে। এইখানে বোঝানোই একমাত্র রাস্তা। আর নয়তো আমাকে এদের মেরে জেলে যেতে হবে।’
- ‘ঠিক আছে, কিন্তু আগে আপনি তুলিকে বাচান। ও ফুলের মত মেয়ে। নষ্ট না হয়ে যায়...।’
‘একি তুমি এখানে বসে আছো রবিনদা।’ চেনা গলা শুনে মাথা তুলে দেখলাম স্বপন।
বিরক্তি ভরে তাকিয়ে আছে তুলির বাবার দিকে। আমাকে সেই মাপছে।
শালা দাড়া সু্যোগ আসুক তোর কেমন গাঁঢ় মারি দেখে নিস।
আবার ঝাঁঝি মেরে তুলির বাবাকে বললো ‘বৌদি আমাকে বলল তুমি কার ফোন পেয়ে দৌরে বেরিয়ে গেছো, আর এখানে বসে চা খাচ্ছ, আর যায়গা পেলেনা।’
মাথাটা চর চর করে গরম হয়ে গেল।
তুলির বাবা দেখলাম বলে উঠলো ‘এই যা তো এখান থেকে তোকে বলে কয়ে আসতে হবে নাকি কোথায় যাবো আর না যাবো?’
‘আমার কি? তুমি কার সাথে গল্প করবে আর কোথায় চা খাবে তোমার ব্যাপার, বৌদি আমাকে ফোন করে বিরক্ত না করলেই তো পারতো, সাইকেল নিয়ে এপাড়া ওপাড়া করে বেরাচ্ছি, আর তুমি এখানে আর মানুষ পেলে না গল্প করার।’
আমি থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালাম। ‘এই বাড়া কি ব্যাপার রে ? কার সাথে কথা বলছে বলছিস্*?’
স্বপন সাইকেলটা স্ট্যান্ড করাতে করাতে আমার উদ্দেশ্যে বলছে ‘কি রে তোর সাহস তো কম না তুই আমাকে তুই তোকারি করছিস? জানিস আমি কে? তোর বাপ কে গিয়ে জিজ্ঞেস করিস্*।’
‘শালা তুই কে আমি জানিনা?’ বলে এক লাথি মেরে ওর সাইকেলটা রেল লাইনে ফেলে দিলাম চলন্ত মানুষজন সব থমকে দাঁড়ালো। একঝটকায় ওর পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে এক থাবড়া দিলাম। ছিটকে পরে গেলো মাটিতে। তুলির বাবা আমাদের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো। আমি বললাম ‘কাকু আপনি সরে যান, ওকে আমি বুঝে নিচ্ছি। ওর ইতিহাস আমার জানা আছে, এর আগে পাপ্পুও ওকে পেঁদিয়েছিলো। এখন আমার কাছে খাবে।’
তুলির বাবা ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবরে গিয়ে সরে দাঁড়ালো।
স্বপন উঠে আমার দিকে তেরে এলো ‘শালা খানকির ছেলে।’
আমার মাথায় রক্ত চরে গেলো ‘আমি খানকির ছেলে, কুত্তার বাচ্চা, আমার মা খানকি?’ গলা টিপে ওকে পিলার সাথে চেপে ধরলাম। হাটু দিয়ে বেছে বেছে ওর গাঁটে গাঁটে মারতে শুরু করে দিলাম। লোকে গিজগিজ করছে। কানে শুনছি, আমাকে চেনে কেউ কেউ বলছে, ভালো হয়েছে অভি শুয়োরের বাচ্চাটাকে কেলাচ্ছে। আগেই খাওয়া উচিৎ ছিলো এর। বহুত বার বেরেছে ইদানিং।
তাতে আমার জোর আরো বেরে গেল। আমি দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ওকে পিটিয়ে চললাম। বহুদিন পরে কাউকে মনের সুখে পেদালাম। স্বপনের হালত খারাপ দেখে দু একজন চেচিয়ে উঠলো দাদা ছেড়ে দিন মরে যাবে। শুনে হুঁশ ফিরলো। দেখলাম ও পুরো রঙ্গিন হয়ে গেছে। আমি ছারতেই ধপ করে মাটিতে পরে গেলো।
তুলির বাবাকে দেখে নার্ভাস মনে হোলো, থর থর করে কাঁপতে শুরু করেছে। আমাকে টেনে নিয়ে বললো। ‘ব্যাটা খুব বদমাইশ, ও কিছু না কিছু করে তোমাকে বিপদে ফেলবেই। তুমি সাবধানে থেকো, এখন বাড়ি যাও। এরপর আমার বাড়িতে তো আর ঢুকতে পারবেনা। কিন্তু তুমি বাড়ি গিয়ে বরুনদাকে সব বলে রেখো।’
বেশ একটা তৃপ্তি হচ্ছে মনের মধ্যে। একটা খানকির ছেলেকে মনের সুখে কেলিয়েছি। আরো ভালো লাগছে এই ভেবে যে এ তুলিদের বাড়ির খাচ্ছে পরছে কিন্তু ওদেরই ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, ওকে কেলালে ভগবানও আমার সাথ দেবে। তারওপর শালা রনিকে ওদের বাড়ি ঢুকিয়েছে। নাঃ এটাকে আমি আর ঝড় বলবো না। এটা হওয়ারই ছিলো।
বাড়িতে ফিরে এলাম। মাথা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। এখন আবার মনে হচ্ছে একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেলো।
যায় হোক, দেখি তুলির বাবা কি করে এর পরে। বেশ কিছুক্ষন বসে থেকে স্নান করতে উঠবো এমন সময় বাড়ির নিচে বেশ হইচই হচ্ছে শুনতে পেলাম দরজা খুলে শুনি বেশ কিছু লোকজনের আওয়াজ। ‘বরুনদা ও বরুনদা।’
নামতে নামতেই বুঝতে পারলাম যে স্বপন লোকজন নিয়ে এসেছে ঝামেলা করতে। ওর কাঁদো কাঁদো গলা পাচ্ছি জনে জনে বলছে আমি কি ভাবে ওকে মেরেছি। এর বিহিত চায়। অচেনা গলার আওয়াজ ভেসে আসছে ‘মগের মুলুক নাকি, দিনে দুপুরে এরকম চোর পিটানোর মত মারধোর করবে কাউকে।’ কেউ বলছে ‘বাড়ির ছেলেকে এরকম খ্যাপা ষাঁড়ের মত ছেড়ে দিলে আমরা কোথায় যাবো?’
আবার ওপরে উঠলাম হাতে একটা দরজার বাটাম নিলাম। সিঁড়ি দিয়ে আওয়াজ করতে করতে নামলাম। আমাকে দেখে সব চুপ। স্বপন কাকে যেন গলার কাছে কি দেখাচ্ছিলো। সে আমাকে দেখে ওকে ইশারায় থামতে বললো।
আমি সবকটাকেই চিনি। সবকটা দারু খোর বাজারের ভিতরে রোজ জুয়া আর মদের ঠেক বসে এদের রাতের বেলায়।
আমার হাতে দরজার খিল দেখে একপা দুপা পিছোতে শুরু করেছে বিপ্লবি জনগন।
স্বপন আমাকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে কাকে যেন দেখাচ্ছে ‘এই যে! এই! এই আমাকে এই ভাবে মেরেছে।’
আমি বললাম ‘হাতে খেয়েছিস এবার এটা মাথায় দেবো নাকি?’
পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলো ‘আরে ও তো ভালো ছেলে কি করে ওর সাথে ঝামেলা লাগলো।’
আমি বললাম ‘কার বাড়িতে এসেছিস জানিস না? তো এসেছিস কেন? এখনি ডাকবো দলবল? এখানেই হিসেব করে দি সবকটার বেপাড়ায় ঢুকে বাওয়াল করছিস? নয়তো বল বাজারে ঢুকে কেলিয়ে আসবো রাতে।’
দেখলাম ভিড়টা আস্তে আস্তে ফেটে যাচ্ছে। হঠাৎ বাবার গলা। ‘কিরে কি ব্যাপার রে কে আমাকে ডাকছিলো।’
আমি জানি আমি কোন অন্যায় করিনি তাই ভয় পাওয়ারও ব্যাপার নেই।
বাবার চোখমুখ দেখে পাবলিকের তো আত্মারাম খাঁচাছাড়া। একসময়ের টেরর্* বরুনদা।
আমার দিকে তাকিয়ে বাবা জিজ্ঞেস করলো ‘কি হয়েছে রে?’
আমি স্বপনের দিকে দেখিয়ে বললাম ‘এ একটু দাদাগিরি দেখাচ্ছিলো, মাকে গাল দিয়েছিলো, তাই ক্যাশ পেমেন্ট করে দিয়েছি।’
বাবা স্বপনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘কিরে আমি কি মরে গেছি ভাবছিস?’
স্বপন হাউমাউ করে বাবার পায়ের ওপরে ডাইভ। ‘আমি বুঝতে পারিনি ও তোমার ছেলে।’
‘এ বাড়িতে আসার পরেও বুঝতে পারিসনি? আর ও আমার ছেলে বলে ছার আর অন্য কেউ হলে তার মাকে তুই গালি দিতি?’
‘ভুল হয়ে গেছে দাদা...।’
‘ভুল তো আমাদের হয়েছিলো রে তোদের মত ছেলেকে ছার দিয়ে। মনে আছে তো, না সেদিনগুলো ভুলে গেছিস। চামচেগিরি করে তো জীবন কাটালি, ভদ্রলোকের সন্মান তোরা কি দিবি।’
‘দাদা ক্ষমা করে দাও আর হবেনা।’
তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘ও আমার চেনা ছেলে, শুধু ওকে বলতে গেছি যে রবিনদার বাড়িতে না যেতে, আপনি তো যানেন দাদা, ওদের পরিবারের নামে কেমন কেচ্ছা। ওর মত ভাল ছেলে ওদের সাথে নাম জড়িয়ে গেলে কি হবে বলুন তো। আমি তো জানতামই না যে ও আপনার ছেলে। তাহলে তো কবেই আপনার কাছে এসে সাবধান করে যেতাম। আর সেটা বলতেই ও আমার ওপর হামলা করলো।’
-‘তুই কি করতে যাস ওখানে...।’ আমি চিৎকার করে তেড়ে গিয়ে পুরো বলতে পারলাম না, আটকে গেলাম। বাবা আমার হাত ধরে একঝটকা দিয়ে থামিয়ে দিলো।
স্বপনের উদেশ্যে বাবা গম্ভির ভাবে বলে উঠলো ‘তুই যা এখন।’
কি জানি বাবা স্বপনের কথা বিশ্বাস করলো কিনা। কিন্তু আমার সাথে বাক্যালাপ প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। যার জন্যে এতো কিছু, সেই তুলির সাথে কিছুতেই আর যোগাযোগ করে উঠতে পারছিনা কয়েকদিন ধরে। মনে হয় ওদের ফোন খারাপ। দিনরাত চিন্তা করে করে ক্লান্ত বোধ করছি। নিজের পেশার প্রতি চূড়ান্ত বেইমানি করে চলেছি এই এক কারনে। এক সময় ক্লান্ত মন সিদ্ধান্ত নিলো, আমার আর কিছু করার নেই। আমি যতদুর সম্ভব করেছি। ওর বাবাকে পর্যন্ত সব খুলে বলেছি। এর পর আর কি করতে পারি। এরপর যা হবে হবে। মেনে নিতে হবে। দুনিয়া শুদ্ধু সবাইকে সঠিক পথে চালনা করা আমার দায়িত্ব না। পাগলেও নিজের ভালো বোঝে তো তুলি কেন বুঝবেনা। আমার শুধু খারাপ লাগছে, ওর মত একটা সহজ সরল মেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে, সেটা ভেবে। কিন্তু মারে হরি তো রাখে কে? আর রাখে হরি তো মারে কে। হরি যেখানে ওর নিজের রক্ত সেখানে আমি তো পিপিলিকা।
ভুলে থাকতে চাইলেও কি ভুলে থাকা যায়। ও তো আমার প্রেম। আমি তো ওকে ব্যাবহার করবো বলে সম্পর্ক করিনি। আমার মত রাশভারি ছেলের সাথে ওর মত চুলবুলি মেয়ের সম্পর্কটাই যেখানে অস্বাভাবিক, সেখানে আমাদের সম্পর্ক হোলো, শরীর হোলো। মন বদল করলাম। এগুলো কি নিয়তির হাত না?
মনের গভিরে এই ধরনের নানান চিন্তা সবসময় ঘুরপাক খেতে শুরু করলো। তিন চার দিন কোনোরকমে কাটাতে পেরেছি। নিজেকে বার বার বাঁধা দিয়েছি, মনকে শাসন করেছি আর না। একবার তুই ফিরেছিস, আর জীবন জটিল করিস না। এই জন্যে প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষ ভাবে অনেক ক্ষতি স্বীকার করেছিস। অনেকে সরে গেছে দূরে। নিজের ঘরে মা আর বাবা দুজনেই আহত, মর্মাহত তোর এই সম্পর্কের জন্যে। তবুও মনের মধ্যে ঘুরে ফিরে সেই কাজল কালো চোখদুটো যেন আমার সাহায্য চায় বারবার। যেন বলে ‘অভি আমাকে একটু সুযোগ দাও, আমাকে সময় দাও, আমি ঠিক তোমার মত করে তৈরি করে নেবো নিজেকে। আমাকে এই ভাবে দূরে সরিয়ে দিওনা। আমি একা এই লড়াই লড়তে পারবোনা।’ অদ্ভুত এক দোলাচলে কাটাচ্ছি প্রতি মুহুর্ত।
বেশ কিছুদিন পরে এক রবিবারে, বাজারের সামনে একটা চায়ের দোকানে বন্ধুবান্ধব মিলে চা খাচ্ছি। দুপুরে ক্রিকেট ম্যাচ আছে সেই নিয়ে বেশ সরগরম। আমাকে খেলতে বলছে, কিন্তু এই মানসিক অবস্থা নিয়ে কি করে খেলবো, তাই একটা কাজের বাহানা দিয়ে এড়িয়ে গেছি। সবাই বিপক্ষের শক্তি আর দুর্বলতা নয়ে আলোচনা করছে। আমি চুপচাপ রয়েছি। ভিড়েই তো মিশে থাকতে হবে। মনে মনে ভাবছি তুলির কথা। এই কদিনে তুলিও আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। ওর যদি ইচ্ছে থাকতো তাহলে নিশ্চয় বাইরে থেকে হলেও ও ফোন করতো। নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছি বারবার, তুলি এইটুকু মেয়ে হয়ে যদি সব ভুলে নিজের রাস্তা দেখে নিতে পারে তাহলে তুই পারিস না কেন? কেমন ব্যাটাছেলে তুই? একটা মেয়ে চলে গেলো তো কি জীবন শেষ হয়ে গেলো? দুনিয়ায় কি সব প্রেমই মিলনের মালা পায়? একেই বোধহয় বলে বিরহ।
চা খেতে খেতেই দেখছি দূর থেকে স্বপনও আমাকে দেখছে। এটা ওর ঘাঁটি। তাতে কিছু যায় আসেনা। আমার সুনাম বা দুর্নাম এই এলাকার লোকজন ভালো করেই জানে। তাই আশা করি ও এবার আর ভুল করবেনা। কিন্তু ওকে দেখে মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে। সেদিন কেমন বানিয়ে বানিয়ে বলে দিলো। পাক্কা খানকির ছেলে না হলে এমন পরিস্থিতিতে এরকম মিথ্যে কথা বলতে পারে ঠান্ডা মাথায়, বানিয়ে বানিয়ে। ভাবছি আরেক রাউণ্ড দেবো নাকি।
এমন সময় একটা রিক্সাওয়ালা এসে আমাকে ডাকলো ‘দাদা আপনাকে ডাকছেন।’
‘কে?’
রিক্সাওয়ালাটা গলার স্বর নিচু করে বললো ‘স্বপনদা ডাকছে বসুন নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে।’
আমার মাথা গরম হয়ে গেলো ‘এই যাতো গিয়ে বল দরকার হলে আমার সাথে এখানে এসে কথা বলতে, লাটেরবাট কোথাকারের। ভাগ এখান থেকে।’ তাকিয়ে দেখলাম স্বপন ওখানে নেই।
রিক্সাটা ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেলো।
সব বন্ধুরা আমার দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে রইলো হঠাৎ করে কার সাথে জোর গলায় কথা বলছি ভেবে। কিন্তু আমার রাগত মুখ দেখে কেউ আর সাহস করলো না যে জিজ্ঞেস করবে।
এখন একটা নতুন রোগ ধরেছে। ঘুম হয়না। তাই হাল্কা স্লিপিং পিলস নিতে হয়। দুপুরেও তাই নিলাম। নাহলে তো সারাক্ষনই তুইর চিন্তা করে যাবো, কখনো দুঃখ হবে কখনো রাগ হবে। শরীর চঞ্চল হবে। আর ঘুম যাবে চটকে। এইভাবে কয়েকরাত কেটেছে। আসলে তুলি যদি আমার মুখের ওপর বলে দিত যে ওর যা ইচ্ছে ও তাই করবে। তাহলে হয়তো শুধু বিরহ থাকতো। কিন্তু আমার মনে হয় যেন তুলি এই এত কিছুর পরেও আমার উপর দুর্বল, ও আমাকে সত্যি ভালবাসে। তাই জোর দিয়ে বলতে পারেনি যে আমার মুখ আর দেখবেনা। আমার কানে ভাসে ওর সেই কথাগুলো মা অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে ওর সেই ব্যাকুলতা। ভালোবাসা না থাকলে কি করে এরকম করে। এতোটা কি অভিনয় করতে পারে কেউ?
সন্ধ্যেবেলা মার সাথে একটু কথা বলে আমি ঠেকে গিয়ে বসলাম। ঠেকে বসেও মনটা বেশ খারাপ লাগে। পাপ্পু না থাকাতে এই যায়গাটা যেন গ্ল্যামার হারিয়েছে। সবই চলছে, যেরকম চলার সেরকম। জুয়া, তাস, ক্যারাম, খেলাধুলো, কিন্তু ঠেকের সেই প্রানটা যেন পাপ্পুর সাথে বিছানায় শুয়ে রয়েছে। পাপ্পু এখন সারাদিন শুয়েই থাকে। চুপ করে থাকে কারো সাথে কথা বলেনা। অনেক ডাকাডাকি করলে ওঠে শুধু স্নান আর খাওয়ার জন্যে। আমি এরমধ্যে দুএকবার গেছি ওকে দেখতে। ও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে, কিছু বলেনা। ওর মা চোখের জল ফেলে খালি, কি দস্যি ছেলের কি পরিনাম হল, এই বলে।
কিছুক্ষন বাদে শুনতে পেলাম একজন আমার নাম ধরে ডাকছে। আমাকে চেনেনা। আমিও চিনতে পারছিনা।
আমি ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসতেই সে বললো ‘স্বপনদা বলেছে রাগ না করতে, উনি আসতে পারছেন না যদি আপনি একটু দেখা করেন তো ভালো হয়। খুব একটা জরুরি খবর আপনাকে দেওয়ার আছে বলেছেন।’
আমি ভদ্রলোকের বাইকের পিছনে উঠে বসলাম।
সেই স্টেশান চত্তর। সাইডিং-এর পিছনে কাঠের স্লিপার পাতা ইটের ওপোর রেখে বেঞ্চে পরিনত করা হয়েছে। তার পাশে একটা ঘুপচি ঘর। ওপরে চায়ের দোকান কিন্তু এই দোকানে গাঁজাও পাওয়া যায়, চুল্লুও পাওয়া যায়। সব জি আর পির সাথে সাঁট আছে। আমি নিজে কিনিনি, কিন্তু এখান থেকেই আমার খোরাকি যায়। দুনিয়ার সব বঞ্চিত বানচোত্* এখানে ভিড় করে। আমি স্বপনকে খুজছি, শালা কেন আমাকে ডাকলো।
হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন জড়িয়ে ধরলো। স্বপন। মুখ থেকে চোলাইয়ের গন্ধ বেরোচ্ছে ভক ভক করে। সাথে বিড়ির কম্বো।
‘ভাই, আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দে।’
আমি একঝটকায় ওর ফাঁস থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিলাম।
‘এটা বলার জন্যে এত নাটক করছো। সেদিন তো বাড়িতে ভালোই ডায়লগ দিয়ে এলে।’
‘ভুল হয়ে গেছে রে, ভুল হয়ে গেছে। আমার কয়েকদিন ঘুম হয়নি রে বিশ্বাস কর। আমি তোর পায়ে ছুয়ে বলছি।’ স্বপন নিচু হয়ে আমার পা ছুতে গেলো আমি সরে দাঁড়ালাম।
‘আমাকে ক্ষমা কর। তোর মনের অবস্থা আমি বুঝি রে ভাই। আমারও তো একই অবস্থা। ভালোবাসার জন্যে জীবন দিয়ে দিলাম। কি ছিলাম আর কি হয়েছি।’
শালা কি বলেরে, এ আবার কার সাথে প্রেমপিরিতির গল্প ফাঁদবে।
আমি একটা সিগেরেট ধরিয়ে স্লিপারটার ওপরে বসলাম। পাশে স্বপনও।
স্বপন বলে চলেছে ‘তুলি আমি নিজের সন্তানের মত ভালবাসি। বিশ্বাস কর ওর কোন ক্ষতি হোক আমি চাই না। রবিনদাকে তো বুঝেই গেছিস তুই আমি আর নতুন করে কি বলবো। কোনদিন কাউকে শাসন করেনি। তাই এই হাল। কেউ পাত্তাও দেয় না। আমাকেই দেখতে হয় জানিস। তুলি কি ড্রেস করবে, কি পরবে, কোচিনে যাবে তো আমি যাবো সঙ্গে করে, কিছু খেতে ইচ্ছে করলো তো আমি। এই তো বড়দিন আসছে কত বায়না শুরু হয়ে যাবে ওর এখানে নিয়ে চলো, ওখানে নিয়ে চলো, কেক কিনে দাও। কোনদিন না করিনা। কি করবো, ও তো আর ওর বাবার থেকে পায়না এসব। ওদের জন্যে নিজের সংসারকে আমি বঞ্চিত করি জানিস...।’
এত বড় বড় কথা বলছে শালা। সত্যি না ঢপ্*?
‘তো তুলির বাবার তো ভালোই ইনকাম, উনি দেন না কেন?’
‘আরে ও তো শালা পয়দায়সি কেলানে। নাহলে কারো বৌ বাচ্চা এরকম বিগড়ে যায়? সব হয়ে যাওয়ার পরে এখন আমাকে বলেছে বাড়িতে না ঢুকতে।’
‘তুমি তো শুনলাম রনি বলে ছেলেটাকে ওদের বাড়িতে ঢুকিয়েছ...।’
স্বপন একটু থমকে গেলো ‘ কে বললো তোকে? তুলি?’
-‘সে যেই বলুক না কেন? ঘটনা তো সত্যি।’
- ‘সে আমি কি করবো। আমার আত্মিয় হয় ও। একদিন আমাকে খুজতে খুজতে ওদের বাড়িতে গিয়ে খুজে পায় আমাকে, ওকে দেখে মা মেয়ের কি পিরিত। আমি সাবধান করেছি বড়বৌদিকে অনেক, বলেছি যে ছেলে কিন্তু অনেক ঘাটের জল খাওয়া, কিন্তু কে শোনে কার কথা? ও আসলেই দুজনে লুরলুর করে একদম। আমি নিজের হাতে কোনদিন কি ওদের ক্ষতি করতে চাইবো। সেই তো আমারই চোখের জল বেরোবে...’
‘কেন তুমি তো বাইরের লোক, ওদের সাথে কি তোমার?’
‘তুই বুঝবি না ভাই... এই বড়বৌদির কোলে মাথা দিয়ে কত ঘুমিয়েছি? কত ভালো ভালো রান্না করে আমাকে খাইয়েছে। ব্যবসার সব টাকা, বৌদির হাতে তুলে দিতাম, নেমকহারাম মহিলা। বেশী টাকা দেখেছে আর ভেগেছে অন্যদিকে। ভীষণ লোভি। সাথে মেয়েটাকেও টোপ দিচ্ছে টাকার। আমি ইচ্ছে করলেই সব বন্ধ করে দিতে পারি এক মুহুর্ত লাগবে আমার। কিন্তু তারপর বলতো কি হবে?’
‘কি হবে?’
‘এই থানা পুলিশ এসব তো আমাকেই ছোটাছুটী করতে হবে। কি হবে কাদা ছোরাছুরি করে? দুটো মেয়ের তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে...’
‘এমনিও তাই হচ্ছে, তো থানা পুলিশ না হয় হোত, তাতে আর কি এমন বাড়তো? লোকে তো সব ভুলে যেত সময়ের সাথে সাথে।’
‘আরে তুই জানিস না, থানাতে আমি যাওয়া মানে সবাই জানবে বড়সড় কেস নিয়ে গেছি, তখন আর সহজে ছার পাবেনা কেউ। এই যে তুই আমাকে মারলি অনেকে আমাকে বলেছে, স্বপন একবার বড়বাবুকে জানা, দেখ কি হয়, সেতো আমার একটা ফোনের ব্যাপার ছিলো, তারপর কি হোত দৌড়াতে তো আমাকেই হোত, তুলি কি আমাকে ছেড়ে দিতো, আমার জামাই বলে কথা...’ বলে আমার পিঠে হাত দিয়ে স্বপন একটু হেক্কা দেখানোর চেষ্টা করলো।
আমি একঝটকায় হাত সরিয়ে দিলাম পিঠের ওপোর থেকে ‘ওসব গল্প ছারো, মাসিমার গোঁফ থাকলে কি হোতো সেসব গল্প আমার শোনার ইচ্ছে নেই, কাজের কথা বলো।’
একটুও না ঘাবড়ে স্বপন বললো’সেই জন্যেই তো তোকে ডেকেছি, আমি তোর জালা বুঝি রে। ভালবাসায় তুইও জ্বলছিস্*, আমিও... বড়বৌদিকে আমি আমার জানের থেকে ভালবাসি, কি না করেছি ওর জন্যে।। প্রতিদানে ঠোক্ক্র পেয়েছি, আরে আমি ইচ্ছে করলে তো ওকে নিংরে খেয়ে নিতে পারতাম... আমি তো ভালোবেসে ফেলেছি রে।’
লে হালুয়া আবার নতুন গল্প শুরু হোলো। স্বপন পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে চোখের জল মুছে নিয়ে সোজা হয়ে বসলো। খেয়াল করলাম না যে কুম্ভীরাশ্রু নাকি।
‘তুই ভাই তুলিকে সাবধান কর। ও তোর কথাই শুনবে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, হয়নি। মেয়েটা এত মিথ্যে কথা বলতে পারে যে চিন্তা করতে পারবিনা। তোর কাছে হয়তো সব সত্যি কথা বলবে। তুই ওকে ওর সবকিছু জিজ্ঞেস কর, ও কি চায় জানতে চা, দরকার হলে ওকে বিয়ের প্রস্তাব দে। এইতো সেদিন বলছিলো কোথায় কি কাজের কথা চলছে। আমি বললাম যে পরাশুনা শেষ কর তারপর ভদ্রলোকের মত একটা চাকরিবাকরি খোজ, এত ভালো ছেলে পেয়েছিস, এত বড় ফ্যামিলি, আর তুই যদি এরকম ঘুরে বেড়াস তো ওদের সন্মানটা কোথায় যায়। তাতে বলে কি, আগে বিয়ে হোক তারপর সন্মানের কথা চিন্তা করবো। চিন্তা কর এইটুকু মেয়ের মুখে কি বুলি। পুরো ওর মার রক্ত পেয়েছে, লোভি, মিথ্যুক। ওকে জিজ্ঞেস করবি তো শুভোর সাথে কি ব্যাপার ছিলো ওর?’
‘কে শুভ?’
‘এই তো ওদের পারাতেই থাকে। সবাই ওকে আমির খান বলে। কত মেয়ের যে সব্বোনাশ করেছে তার হিসেব ওর নেই, বাইক দেখেছে আর মেয়ে ঝুলে পরেছে ওর দিকে, এই তো সেদিন দেখি, গরিয়াহাটে ঘুরে বেরাচ্ছে, দুজনে। আমাকে দেখে তুলি লুকিয়ে পরলো বুঝতে পারলাম, ওতো যানে আমি এসব পছন্দ করিনা, যদি তোর কানে তুলে দি? তারপর থেকে ও যেন আমাকে দেখলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছে।’
আমার কান গরম হয়ে উঠছে, শালা সত্যি বলছে না মিথ্যে, এত কেলানি খাওয়ার পরেও কি সাহস করবে এত বড় মিথ্যে কথা বলার জন্যে।’
তবুও মনের ভাব গোপন রেখে যেন আমার মধ্যে কিছুই হচ্ছেনা সেরকম নির্লিপ্ত ভাব করে বললাম ‘তো ওর মা বাবাকে বলবে? তোমার কি দায় পরেছে ওকে শাসন করার।’
‘হাসালি? ওর মাকে বলতে বলছিস? ওর মা তো পারলে লেলিয়ে দেয়। একবার তো কত কাণ্ড পাড়ায়। সেটো আমি এসে পরাতে সব থামল।’
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ও নতুন গল্প শুরু করলো ‘আরে একটা ছেলে আসতো, কর্পোরেশানের কন্ট্রাক্টর, চারচাকা নিয়ে আসতো। অল্প বয়েসি ছেলে। কি যেন নাম? ও হ্যাঁ বাপ্পা। তুলির দিকে একটু তাকাতো টাকাতো। ব্যাস আর যায় কোথায়? মা মেয়েকে এগিয়ে দিলো। ছেলেটা থাকলেই ওর মা ওকে দোকানে পাঠাবে, এটা ওটা আনতে দেবে। তারপর আর কি। দেখা গেলো মা আর মেয়ে ওর গাড়ি করে ঘুরছে। প্রতিদিন রাত নটা দশটা করে এসে গাড়ি নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আমি কত সাবধান করেছি, কে শোনে কার কথা।’
বুকের ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে তবুও নির্লিপ্ত থাকার অভিনয় করলাম ‘ তো তুমি সন্তুকে বলবে, সন্তুতো মনে হয় অন্য রকম?’
‘আরে ও ভালো ছেলে খুব। কিন্তু অল্প বয়েসি ছেলে বিড়ি সিগেরেটের পয়সা কোথায় পাবে, মার কাছেই তো হাত পাততে হয়। মা না দিলে আমার কাছে এসে হাত পাতে। এই তো সেদিন দুশো টাকা দিলাম, কোথায় খেলা আছে বলে নিলো।’
আমি বুঝতে পারছিনা এ মাল সত্যি বলছে না বানিয়ে বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। তবু ওর উদ্দেশ্য কি বুঝতে না পারা পর্যন্ত এই খেলা চালিয়ে যেতে হবে যে সেটা আমার ইন্দ্রিয়গুলো জানান দিচ্ছে।
‘ঠিক আছে দাদা আবার পরে একদিন কথা হবে, অনেক রাত হয়েছে, পরে আবার সময় সুযোগে কথা হবে।’
হ্যাঁ ভাই তুলিকে আটকা একটু। এই রোববারের দিন মেয়ে যদি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকে আর রংচং মেখে বেরোয়, সেই মেয়েকে কেউ ভাল বলবে? তুইই বল? ওতো উচ্ছন্নে যাচ্ছে যাক, তুই কি ভুলতে পারবি ওকে?’
মাথার মধ্যে ভোঁ ভোঁ করছে। তুলির সাথে কোন লগ্নে দেখা হয়েছিলো তা যাচাই করতে হবে। এত অশান্তি যেখানে, সেখানে আমি কি করে জড়ালাম।
স্বপনও যে সব কথা ঠিক ঠিক বললো সেটাও ঠিক ভরসা করা যায় না। রত্নাকর থেকে একেবারে বাল্মিকি হয়ে গেলো যে। বিশ্বাস করার পিছনে একটাই যুক্তি যে ও তুলির মার ওপর দুর্বল। শালা প্রেম খোলামকুচি হয়ে গেছে। অন্যের স্ত্রী তার সাথে প্রেম। কোলে মাথা রেখে শোওয়া। শালা এই তুলির বাপটা তো আস্ত কেলানে মাল। কবে কোন আমলে বোম বেঁধেছিলো সেই গল্প করে কাটিয়ে দিলো মাইরি। এদিকে মেয়ে আর বৌ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হয়ে গেছে সেদিকে খেয়ালই নেই।
রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে, দুএকটা রিক্সাতে মাতাল লোকজন ছাড়া আর কেউ নেই রাস্তায়। রিক্সাওয়ালাও মাতাল। সওয়ারিও মাতাল। নিজের মনে হেটে চলেছি। বুকের মধ্যে নতুন তথ্য নাড়াচারা করতে করতে। তার সত্যতা নিয়ে নাড়াচারা করতে করতে। হঠাৎ এক মহিলা কণ্ঠে ডাক। ‘এই অভি?’
মাথা তুলে দেখি বিজয়ার মা। ওদের বাড়ির গলির মুখে দাঁড়িয়ে আছে। এতই খারাপ সময় আমার, স্বপনের সাথে কথা বলতে হচ্ছে, বিজয়ার মা ডাকছে। কি অধঃপতন।
‘হ্যা বলুন?’
‘পাপ্পু কেমন আছে জানো?’
‘খুব ভালো নেই।’
‘কেন করলো এমন জানতে পারলে কিছু?’
‘নাঃ ও আর কারো সাথে কোন কথা বলছেনা।’
‘পুলিশ কেস হয়েছিলো না?’
আমি দেখলাম বেশী হয়ে যাচ্ছে তাই চারপাস দেখে নিলাম ভালো করে কেউ দেখে না ফেলে আবার। এদের সাথে কথা বলা মানেই তো গায়ে ছাঁপ পরে যাওয়া।
চারিদিক ফাঁকা পেয়ে একটু ভরসা পেলাম ‘নাঃ বেচে থাকলে আর পুলিশ কেস কি? ও একটা ডায়েরি হয়েছে এই আরকি।’
‘কি জন্যে করেছে কিছু জানতে পারোনি না?’
‘নাঃ।’
‘আমি শুনে থেকে ভাবছি যে একমাত্র তুমিই জানলে জানতে পারো। তোমরা তো খুব ভালো বন্ধু।’
‘হ্যাঁ, তা ঠিক কিন্তু সেই সময় মারও খুব শরীর খারাপ হয়।’
‘হ্যাঁ শুনেছি, তোমরা তো এদিক দিয়ে যাতায়াত করোনা যে জিজ্ঞেস করবো। সেদিনই তো সকালে তোমার মাকে বাজারে দেখলাম, আমাকে আবার অনেক কথা বলছিলেন জিনিস পত্রের দাম নিয়ে, এক যায়গা থেকেই তো সব্জি নি। আহারে এত ভালো মানুষটার কি কষ্ট।’
‘সে আর কি করা যাবে আজকাল এগুলো তো ঘরে ঘরে।’
‘এই তুমি আসোনা রাস্তায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছো। পাপ্পুকে অনেকদিন বলেছি তোমাকে নিয়ে আস্তে একদিন, একটু বিজয়ার ব্যাপারে কথা বলতাম, ওও তো সিএ পরছে, সেইজন্যে। তুমি তো নাকি সময়ই পাও না।’
আমি আঁতকে উঠলাম ‘না না বাড়িতে আজ না। অন্য আরেকদিন আসবো, এতরাতে আর না। মা অপেক্ষা করছে। আমি গেলে ঘুমোবে।’
‘ওঃ আমাদের আবার এখন সন্ধ্যে। এই গিয়ে হয়তো চা করবো, তাই বলছিলাম যদি একটু চা খেয়ে যাও।’
‘না আজ থাক, আপনার মেয়ে আসলে বলবেন তখন একদিন এসে কথা বলে যাবো।’
‘বাঃ মেয়ে কবে আসবে আর তুমি তখন আসবে?’ উনার গলা একটু হতাশই শোনালো।
আমি বললাম ‘আসি পরে দেখা হবে।’
বিজয়ার মা রহস্যজনক হেসে বললো ‘পরে? দেখি কবে সেই পরে আসে।’ গলা নামিয়ে বলে উঠলো ‘আমি অপেক্ষা করে থাকবো, সারারাত বললে সারারাত।’
অফিস কামাই করে বাড়িতেই রয়ে গেলাম। এই মানসিকতা নিয়ে অফিস করা যায়না। চাকড়িটা এবার চলেই যাবে হয়তো।
পাগলের মত বার বার করে তুলিদের বাড়িতে ফোন করছি কিন্তু বিজি টোন আসছে। ফোনটা মনে হয় এখনো ঠিক করে রাখেনি। কোন কিছু খারাপ হলো না তো। তুলি ওর মার নামে এসব শুনে কিছু করে বসলো না তো?
কি করে জানতে পারি?
পাপ্পুও নেই। কে ফোন করে জানতে পারে। বা গিয়ে দেখে আসতে পারে?
আরো কয়েকবার ফোন করলাম তুলিদের বাড়িতে। সেই একই।
আবার কিছুক্ষন অপেক্ষা করে আবার ফোন করলাম। বুকের ধুকপুক বেড়ে গেলো। রিং হচ্ছে।
তুলির বাবা ফোন ধরেছে। ‘হ্যালো’
‘কাকু তুলি কেমন আছে।’
‘এই তো শুয়ে আছে, কে বলছো তুমি।’
আমার বুকের থেকে একটা চাপ নেমে গেল। যাক বারাবারি কিছু হয়নি। ‘আমি অভি বলছি কাকু।’
‘ওঃ ধরো তুলিকে ডেকে দিচ্ছি। তুলি... তুলিইই’
‘না কাকু, ওকে ডাকার দরকার নেই, আমার আপনার সাথেই দরকার। আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।’
‘তো চলে এসো না, চা খেতে খেতে কথা বলা যাবে।’ আমি বুঝলাম উনি এসব ব্যাপারের কিছুই যানেন না।
‘না আমি আসতে পারবোনা। অসুবিধে আছে। আপনি বলুন আমার সাথে কি দেখা করতে পারবেন? এটা আপনার মেয়ের ভবিষ্যতের ব্যাপার। খুব জরুরি।’
‘অ। তো কোথায় আসবো বলো।’
‘আপনার অসুবিধে না হলে স্টেশানে কথা বলতে অসুবিধে আছে?’
‘নাঃ আমি আসছি। কি ব্যাপার একটু হিণ্টস দেবে? আসলে বয়েস হয়েছে তো টেনশান নিতে পারিনা।’
‘আরে না না কাকু, সেরকম ব্যাপার না। আপনি চলে আসুন তখন সব বললে বুঝতে পারবেন।’
ফোনটা রেখে দিয়ে আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম। প্রায় দৌড়ে স্টেশানে এসে পৌছুলাম। ঊনি যাতে আমার আগে এসে অপেক্ষা না করে সেই উদ্দেশ্যে। তুলিকে ওর মার হাত থেকে বাচাতেই হবে।
আমি আর তুলির বাবা প্ল্যাটফর্মের একটা সিমেন্ট বাঁধানো বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। এই সময় একটু ভিড়ই আছে। চেনাশোনা অনেকেই আমাকে দেখতে দেখতে যাচ্ছে। তবুও ভিড়ের মধ্যে থাকলেই লোকে লক্ষ করেনা এটা আমার পুরোনো অভিজ্ঞতা। আমি আর তুলির বাবা একটা করে চা নিলাম।
আমি বিনা দ্বিধায় শুরু করলাম ‘কাকু, তুলিকে নিয়ে কি ভাবছেন?’
‘কি ভাববো আর, তোমরা নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছো, তো গ্র্যাজুয়েশানটা করুক তারপর না হয় তোমার বাড়িতে যাবো...।’
‘আমি বোঝাতে পারলাম না কাকু আপনাকে?’
তুলির বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে যে উনি কি ভুল বুঝেছেন।
আমি মরিয়া হয়ে উনাকে বললাম ‘তুলিকে তো একটু সংযত হতে হবে, পরিনত হতে হবে, ভালো মন্দ বুঝতে হবে, পড়াশুনাটা ভাল করে করতে হবে, কিন্তু ও তো সেরকম গাইডেন্স পাচ্ছেনা কাকু?’
‘হ্যাঁ, সেতো ঠিকই, তুমি ঠিকই বলেছো।’
আমি বুকে বল পেলাম যে সেমসাইড হয়নি। ‘কাকু কালিপুজোর রাতে ও একা একা রাত জেগে ফাংশান দেখতে গেছিলো আপনি যানেন?’
মাথা নিচু করে উনি জবাব দিলেন ‘আমাকে কেউ কিছু বলে নাকি? ওরা ওদের মর্জি মত চলে একসময় অনেক বালেছি, তারপর দেখি এদের বলে লাভ নেই। তুমি একটু কড়া হাতে ওকে ধরো।’
‘আমার কি সেই অধিকার আছে, আপনার মিসেস তো আমাকে সেই অধিকার দেবে না।’
‘কেন দেবেনা?’
‘আপনি যানেন, আমি তুলিকে সেদিন রাতে ফাংশান থেকে উদ্ধার করি। আমি গিয়ে দেখছি একগাদা ছেলের সাথে ও একা মেয়ে নেচে চলেছে, তারপর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভোররাতেও দুটো ছেলের সাথে দেখি গল্প করছে। আমি ওকে ভীষণ যা তা বলেছি। সেদিন যে আপনি বললেন তুলির শরীর খারাপ, তাই আমি মাকে বললাম খোঁজ নিতে যে ও কেমন আছে? আর তুলির মা, মার সাথে ভীষণ দুর্ব্যাবহার করে, মা সেই জের সামলাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পরে। আজকে আমি ফোন করেছি আমার সাথেও খুব বাজে ব্যাবহার করলো। এরপর আমি তুলির সাথে কথা বললাম মনে হোলো যে তুলি ওর মাকেই সমর্থন করছে। এবার বলুন আমি কি ভাবে তুলিকে শাসন করবো?’
‘তুমি ভুল বুঝোনা এরা সরল, কিন্তু প্রচণ্ড জেদি আর মাথা গরম। তাই জানেনা কোথায় কি ভাবে কথা বলতে হয়। আর মা মেয়ের মধ্যে গোপন কিছু থাকেনা তাই হয়তো অভিমানে তোমার কথাগুলো বলে দিয়েছে। ওর মা কিছু অন্যায় করলে আমি তোমার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’
-‘এইখানেই আমার প্রশ্ন আর আমার আপনাকে ডাকা’
তুলির বাবা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
আমি আবার বলতে শুরু করলাম ‘আপনি যানেন আপনার মিসেস কোথায় যায়? কাদের সাথে মেলামেশা করেন?’
-‘শুনেছি তো কি যেন ফিল্মের ব্যাপারে রোজ বেরোই। আমার এসব পছন্দ না। ঘরের মেয়ে ঘরে থাকলেই ভালো। কিন্তু দিনকাল কি পরেছে দেখেছো তো। পেপার খুললেই তো রোজই এরকম খবর বেরোয়। জোরজবরদস্তি করতে গেলে কিছু না করে বসে সেই ভয় পাই।’
- ‘এখানেই আমার আপত্তি। উনি তো আপনার পরিবার। উনার ভালো মন্দ তো আপনার ভালো মন্দ তাহলে আপনি তো মিনিমাম খোজ খবর রাখবেন?’
- ‘কি করবো তুমি বল? কেউ যদি কথা না শোনে, তাহলে কি আমি লোক লাগাবো তার পিছনে, সেটা কি সন্মানের ব্যাপার হবে।’
- ‘এই ভাবে হাল ছেড়ে দিলে কিন্তু তুলির ভবিষ্যতও বিপন্ন হবে কাকু। আমি যতদুর জানি, ওর মা কিন্তু ভালো সঙ্গে নেই। যে কোনদিন বিপদে পড়তে পারেন। আপনি আমার বাবার বয়েসি আর বাবার বন্ধুস্থানিয় তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি যে দেখবেন কোনোদিন তুলির মা কোথাও পাচার হয়ে যাবে। এর থেকে ভেঙ্গে আমি বলতে পারবোনা।’
-‘আমি সব বুঝি, আমি ওদের অনেকবার বলেছি যে এসব লাইনে যাচ্ছো, একদিন মা আর মেয়েকে বাক্স করে পাচার করে দেবে। কে শোনে কার কথা। এদের ছেড়ে দিতে হয় যেদিন ঠোক্কর খাবে সেদিন ঠিক পথে চলে আসবে।’
-‘সেই অপেক্ষাই থাকলে তো আরো বিপদ, এতো কেউ পাহারে উঠছে না যে উঠতে গিয়ে হাঁপ ধরে গিয়ে নেমে আসবে। কোনদিন দেখবেন রেপ হয়ে যাবে। তখন কি করবেন?’
তুলির বাবা চুপ করে রইলো।
আমি মরিয়া হয়ে উঠেছি তাই বলে চলেছি ‘এই যে রনি নামের ছেলেটা আপনাদের বাড়িতে আসে ওর খোঁজখবর রাখেন?’
‘আরে ও তো এক বড় চিটিংবাজের ছেলে। ওর বংশপরিচয় তুমি আমার থেকে নাও। ওর বাবা তো বিড়াট ঠগবাজ লোক। আর ব্যাটা গেছে বাপের ওপরে। তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করবে সুকুমার কি জিনিস বলে দেবে। আগে তো আমাদের একই থানা ছিলো। আমরা যারা পুরোনো লোক তারা ওর চরিত্র ভালো মতই জানি। কবার জেল খেটেছে তার ঠিক নেই। ওতো সুকুমারের ছেলে। আমি তো তুলির মাকে বলি ওই ছেলেটার ব্যাপারে আমার কথা বিশ্বাসই করেনা। বলে আমার মাথায় ভিমরতি হয়েছে।’
‘আপনি যানেন এই রনি, তুলিকে নষ্ট করতে চায়?’
তুলির বাবা থমকে আমার দিকে তাকালো তারপর মাথা নেরে নেরে আমাকে বললো ‘আমি জানতাম যে এরকম কিছুই হবে। এই স্বপনকেও তারাতে হবে সাথে সবকটা কে। মাঝে একবার হুমকি দিয়েছিলাম বলে ব্যাটা বাড়িতে আসা বন্ধ করেছে। কিন্তু ফোন করে তুলি তুলির মা দুজনেই কথা বলে। স্বপনের হাত ধরেই এ বাড়িতে ঢুকেছে ও। বিষঝারে কি ফুল ফোঁটে নাকি।’
-‘তো এই হুমকি আপনি আপনার বাড়ির লোককে দিতে পারেন না? আপনার মিসেস তো তুলিকে ঠেলে দিচ্ছে যে রনির কাছে কিসের কাজের ব্যাপারে।’
-‘কই তুলিতো আমাকে বলেনি? ও তো সব কথা আমাকে বলে।’
-‘তুলি হয়তো নিজেও জানে না। আমি বুঝতে পারছি না। নিজের মা হয়ে উনি কি ভাবে এসব করছেন?’
‘না না তুমি এরকম ভেবো না। ও অতসত ভাবেনা। আসলে সরল প্রকৃতির তাই সবাই সুযোগ নেয় এদের থেকে।’
-‘কাকু, আমি ছোট হয়ে বলছি। আপনি ভালো করে যাজ করুন। মানুষ ওপরে এক আর ভিতরে আরেক। হয়তো উনি আপনার সরলতার সুযোগ নিচ্ছে। এমনও তো হতে পারে।’
তুলির বাবা অনেকক্ষণ চুপ করে থাকল তারপর আমাকে হতাশ গলায় বললেন ‘তাহলে তো মারদাঙ্গা করতে হয় এদের আটকাতে।’
-‘কিচ্ছু করতে হবেনা। আমার বয়েস অল্প, কিন্তু অনেক অভিজ্ঞতা। সেখান থেকে আপনাকে বলছি সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু আপাতত আপনি তুলিকে ওর মার সাথে কোথাও যেতে দেবেন না। তুলির এখনো ভালো মন্দের জ্ঞান হয়নি। বাকিটা আমি দেখছি।’
-‘আমি বরঞ্চ তোমাকে বলি, তুমি দেখছো দেখো, কিন্তু তোমার কাকিমার সাথে তুমি খুলে কথা বলো। বোঝালে ও ঠিক বুঝবে, কি হবে তুমি না হয় একটু ছোটই হলে ওর কাছে। তুমিই না হয় ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলে। কিন্তু ও আমার কথা শুনবে না, শোনাতে হলে আমাকে মারদাঙ্গা করতে হবে। এরা এমন জেদি। একবার যেটা করবে বলে সেটা করেই ছারে। এইখানে বোঝানোই একমাত্র রাস্তা। আর নয়তো আমাকে এদের মেরে জেলে যেতে হবে।’
- ‘ঠিক আছে, কিন্তু আগে আপনি তুলিকে বাচান। ও ফুলের মত মেয়ে। নষ্ট না হয়ে যায়...।’
‘একি তুমি এখানে বসে আছো রবিনদা।’ চেনা গলা শুনে মাথা তুলে দেখলাম স্বপন।
বিরক্তি ভরে তাকিয়ে আছে তুলির বাবার দিকে। আমাকে সেই মাপছে।
শালা দাড়া সু্যোগ আসুক তোর কেমন গাঁঢ় মারি দেখে নিস।
আবার ঝাঁঝি মেরে তুলির বাবাকে বললো ‘বৌদি আমাকে বলল তুমি কার ফোন পেয়ে দৌরে বেরিয়ে গেছো, আর এখানে বসে চা খাচ্ছ, আর যায়গা পেলেনা।’
মাথাটা চর চর করে গরম হয়ে গেল।
তুলির বাবা দেখলাম বলে উঠলো ‘এই যা তো এখান থেকে তোকে বলে কয়ে আসতে হবে নাকি কোথায় যাবো আর না যাবো?’
‘আমার কি? তুমি কার সাথে গল্প করবে আর কোথায় চা খাবে তোমার ব্যাপার, বৌদি আমাকে ফোন করে বিরক্ত না করলেই তো পারতো, সাইকেল নিয়ে এপাড়া ওপাড়া করে বেরাচ্ছি, আর তুমি এখানে আর মানুষ পেলে না গল্প করার।’
আমি থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালাম। ‘এই বাড়া কি ব্যাপার রে ? কার সাথে কথা বলছে বলছিস্*?’
স্বপন সাইকেলটা স্ট্যান্ড করাতে করাতে আমার উদ্দেশ্যে বলছে ‘কি রে তোর সাহস তো কম না তুই আমাকে তুই তোকারি করছিস? জানিস আমি কে? তোর বাপ কে গিয়ে জিজ্ঞেস করিস্*।’
‘শালা তুই কে আমি জানিনা?’ বলে এক লাথি মেরে ওর সাইকেলটা রেল লাইনে ফেলে দিলাম চলন্ত মানুষজন সব থমকে দাঁড়ালো। একঝটকায় ওর পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে এক থাবড়া দিলাম। ছিটকে পরে গেলো মাটিতে। তুলির বাবা আমাদের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো। আমি বললাম ‘কাকু আপনি সরে যান, ওকে আমি বুঝে নিচ্ছি। ওর ইতিহাস আমার জানা আছে, এর আগে পাপ্পুও ওকে পেঁদিয়েছিলো। এখন আমার কাছে খাবে।’
তুলির বাবা ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবরে গিয়ে সরে দাঁড়ালো।
স্বপন উঠে আমার দিকে তেরে এলো ‘শালা খানকির ছেলে।’
আমার মাথায় রক্ত চরে গেলো ‘আমি খানকির ছেলে, কুত্তার বাচ্চা, আমার মা খানকি?’ গলা টিপে ওকে পিলার সাথে চেপে ধরলাম। হাটু দিয়ে বেছে বেছে ওর গাঁটে গাঁটে মারতে শুরু করে দিলাম। লোকে গিজগিজ করছে। কানে শুনছি, আমাকে চেনে কেউ কেউ বলছে, ভালো হয়েছে অভি শুয়োরের বাচ্চাটাকে কেলাচ্ছে। আগেই খাওয়া উচিৎ ছিলো এর। বহুত বার বেরেছে ইদানিং।
তাতে আমার জোর আরো বেরে গেল। আমি দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ওকে পিটিয়ে চললাম। বহুদিন পরে কাউকে মনের সুখে পেদালাম। স্বপনের হালত খারাপ দেখে দু একজন চেচিয়ে উঠলো দাদা ছেড়ে দিন মরে যাবে। শুনে হুঁশ ফিরলো। দেখলাম ও পুরো রঙ্গিন হয়ে গেছে। আমি ছারতেই ধপ করে মাটিতে পরে গেলো।
তুলির বাবাকে দেখে নার্ভাস মনে হোলো, থর থর করে কাঁপতে শুরু করেছে। আমাকে টেনে নিয়ে বললো। ‘ব্যাটা খুব বদমাইশ, ও কিছু না কিছু করে তোমাকে বিপদে ফেলবেই। তুমি সাবধানে থেকো, এখন বাড়ি যাও। এরপর আমার বাড়িতে তো আর ঢুকতে পারবেনা। কিন্তু তুমি বাড়ি গিয়ে বরুনদাকে সব বলে রেখো।’
বেশ একটা তৃপ্তি হচ্ছে মনের মধ্যে। একটা খানকির ছেলেকে মনের সুখে কেলিয়েছি। আরো ভালো লাগছে এই ভেবে যে এ তুলিদের বাড়ির খাচ্ছে পরছে কিন্তু ওদেরই ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, ওকে কেলালে ভগবানও আমার সাথ দেবে। তারওপর শালা রনিকে ওদের বাড়ি ঢুকিয়েছে। নাঃ এটাকে আমি আর ঝড় বলবো না। এটা হওয়ারই ছিলো।
বাড়িতে ফিরে এলাম। মাথা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। এখন আবার মনে হচ্ছে একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেলো।
যায় হোক, দেখি তুলির বাবা কি করে এর পরে। বেশ কিছুক্ষন বসে থেকে স্নান করতে উঠবো এমন সময় বাড়ির নিচে বেশ হইচই হচ্ছে শুনতে পেলাম দরজা খুলে শুনি বেশ কিছু লোকজনের আওয়াজ। ‘বরুনদা ও বরুনদা।’
নামতে নামতেই বুঝতে পারলাম যে স্বপন লোকজন নিয়ে এসেছে ঝামেলা করতে। ওর কাঁদো কাঁদো গলা পাচ্ছি জনে জনে বলছে আমি কি ভাবে ওকে মেরেছি। এর বিহিত চায়। অচেনা গলার আওয়াজ ভেসে আসছে ‘মগের মুলুক নাকি, দিনে দুপুরে এরকম চোর পিটানোর মত মারধোর করবে কাউকে।’ কেউ বলছে ‘বাড়ির ছেলেকে এরকম খ্যাপা ষাঁড়ের মত ছেড়ে দিলে আমরা কোথায় যাবো?’
আবার ওপরে উঠলাম হাতে একটা দরজার বাটাম নিলাম। সিঁড়ি দিয়ে আওয়াজ করতে করতে নামলাম। আমাকে দেখে সব চুপ। স্বপন কাকে যেন গলার কাছে কি দেখাচ্ছিলো। সে আমাকে দেখে ওকে ইশারায় থামতে বললো।
আমি সবকটাকেই চিনি। সবকটা দারু খোর বাজারের ভিতরে রোজ জুয়া আর মদের ঠেক বসে এদের রাতের বেলায়।
আমার হাতে দরজার খিল দেখে একপা দুপা পিছোতে শুরু করেছে বিপ্লবি জনগন।
স্বপন আমাকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে কাকে যেন দেখাচ্ছে ‘এই যে! এই! এই আমাকে এই ভাবে মেরেছে।’
আমি বললাম ‘হাতে খেয়েছিস এবার এটা মাথায় দেবো নাকি?’
পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলো ‘আরে ও তো ভালো ছেলে কি করে ওর সাথে ঝামেলা লাগলো।’
আমি বললাম ‘কার বাড়িতে এসেছিস জানিস না? তো এসেছিস কেন? এখনি ডাকবো দলবল? এখানেই হিসেব করে দি সবকটার বেপাড়ায় ঢুকে বাওয়াল করছিস? নয়তো বল বাজারে ঢুকে কেলিয়ে আসবো রাতে।’
দেখলাম ভিড়টা আস্তে আস্তে ফেটে যাচ্ছে। হঠাৎ বাবার গলা। ‘কিরে কি ব্যাপার রে কে আমাকে ডাকছিলো।’
আমি জানি আমি কোন অন্যায় করিনি তাই ভয় পাওয়ারও ব্যাপার নেই।
বাবার চোখমুখ দেখে পাবলিকের তো আত্মারাম খাঁচাছাড়া। একসময়ের টেরর্* বরুনদা।
আমার দিকে তাকিয়ে বাবা জিজ্ঞেস করলো ‘কি হয়েছে রে?’
আমি স্বপনের দিকে দেখিয়ে বললাম ‘এ একটু দাদাগিরি দেখাচ্ছিলো, মাকে গাল দিয়েছিলো, তাই ক্যাশ পেমেন্ট করে দিয়েছি।’
বাবা স্বপনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘কিরে আমি কি মরে গেছি ভাবছিস?’
স্বপন হাউমাউ করে বাবার পায়ের ওপরে ডাইভ। ‘আমি বুঝতে পারিনি ও তোমার ছেলে।’
‘এ বাড়িতে আসার পরেও বুঝতে পারিসনি? আর ও আমার ছেলে বলে ছার আর অন্য কেউ হলে তার মাকে তুই গালি দিতি?’
‘ভুল হয়ে গেছে দাদা...।’
‘ভুল তো আমাদের হয়েছিলো রে তোদের মত ছেলেকে ছার দিয়ে। মনে আছে তো, না সেদিনগুলো ভুলে গেছিস। চামচেগিরি করে তো জীবন কাটালি, ভদ্রলোকের সন্মান তোরা কি দিবি।’
‘দাদা ক্ষমা করে দাও আর হবেনা।’
তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘ও আমার চেনা ছেলে, শুধু ওকে বলতে গেছি যে রবিনদার বাড়িতে না যেতে, আপনি তো যানেন দাদা, ওদের পরিবারের নামে কেমন কেচ্ছা। ওর মত ভাল ছেলে ওদের সাথে নাম জড়িয়ে গেলে কি হবে বলুন তো। আমি তো জানতামই না যে ও আপনার ছেলে। তাহলে তো কবেই আপনার কাছে এসে সাবধান করে যেতাম। আর সেটা বলতেই ও আমার ওপর হামলা করলো।’
-‘তুই কি করতে যাস ওখানে...।’ আমি চিৎকার করে তেড়ে গিয়ে পুরো বলতে পারলাম না, আটকে গেলাম। বাবা আমার হাত ধরে একঝটকা দিয়ে থামিয়ে দিলো।
স্বপনের উদেশ্যে বাবা গম্ভির ভাবে বলে উঠলো ‘তুই যা এখন।’
কি জানি বাবা স্বপনের কথা বিশ্বাস করলো কিনা। কিন্তু আমার সাথে বাক্যালাপ প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। যার জন্যে এতো কিছু, সেই তুলির সাথে কিছুতেই আর যোগাযোগ করে উঠতে পারছিনা কয়েকদিন ধরে। মনে হয় ওদের ফোন খারাপ। দিনরাত চিন্তা করে করে ক্লান্ত বোধ করছি। নিজের পেশার প্রতি চূড়ান্ত বেইমানি করে চলেছি এই এক কারনে। এক সময় ক্লান্ত মন সিদ্ধান্ত নিলো, আমার আর কিছু করার নেই। আমি যতদুর সম্ভব করেছি। ওর বাবাকে পর্যন্ত সব খুলে বলেছি। এর পর আর কি করতে পারি। এরপর যা হবে হবে। মেনে নিতে হবে। দুনিয়া শুদ্ধু সবাইকে সঠিক পথে চালনা করা আমার দায়িত্ব না। পাগলেও নিজের ভালো বোঝে তো তুলি কেন বুঝবেনা। আমার শুধু খারাপ লাগছে, ওর মত একটা সহজ সরল মেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে, সেটা ভেবে। কিন্তু মারে হরি তো রাখে কে? আর রাখে হরি তো মারে কে। হরি যেখানে ওর নিজের রক্ত সেখানে আমি তো পিপিলিকা।
ভুলে থাকতে চাইলেও কি ভুলে থাকা যায়। ও তো আমার প্রেম। আমি তো ওকে ব্যাবহার করবো বলে সম্পর্ক করিনি। আমার মত রাশভারি ছেলের সাথে ওর মত চুলবুলি মেয়ের সম্পর্কটাই যেখানে অস্বাভাবিক, সেখানে আমাদের সম্পর্ক হোলো, শরীর হোলো। মন বদল করলাম। এগুলো কি নিয়তির হাত না?
মনের গভিরে এই ধরনের নানান চিন্তা সবসময় ঘুরপাক খেতে শুরু করলো। তিন চার দিন কোনোরকমে কাটাতে পেরেছি। নিজেকে বার বার বাঁধা দিয়েছি, মনকে শাসন করেছি আর না। একবার তুই ফিরেছিস, আর জীবন জটিল করিস না। এই জন্যে প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষ ভাবে অনেক ক্ষতি স্বীকার করেছিস। অনেকে সরে গেছে দূরে। নিজের ঘরে মা আর বাবা দুজনেই আহত, মর্মাহত তোর এই সম্পর্কের জন্যে। তবুও মনের মধ্যে ঘুরে ফিরে সেই কাজল কালো চোখদুটো যেন আমার সাহায্য চায় বারবার। যেন বলে ‘অভি আমাকে একটু সুযোগ দাও, আমাকে সময় দাও, আমি ঠিক তোমার মত করে তৈরি করে নেবো নিজেকে। আমাকে এই ভাবে দূরে সরিয়ে দিওনা। আমি একা এই লড়াই লড়তে পারবোনা।’ অদ্ভুত এক দোলাচলে কাটাচ্ছি প্রতি মুহুর্ত।
বেশ কিছুদিন পরে এক রবিবারে, বাজারের সামনে একটা চায়ের দোকানে বন্ধুবান্ধব মিলে চা খাচ্ছি। দুপুরে ক্রিকেট ম্যাচ আছে সেই নিয়ে বেশ সরগরম। আমাকে খেলতে বলছে, কিন্তু এই মানসিক অবস্থা নিয়ে কি করে খেলবো, তাই একটা কাজের বাহানা দিয়ে এড়িয়ে গেছি। সবাই বিপক্ষের শক্তি আর দুর্বলতা নয়ে আলোচনা করছে। আমি চুপচাপ রয়েছি। ভিড়েই তো মিশে থাকতে হবে। মনে মনে ভাবছি তুলির কথা। এই কদিনে তুলিও আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। ওর যদি ইচ্ছে থাকতো তাহলে নিশ্চয় বাইরে থেকে হলেও ও ফোন করতো। নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছি বারবার, তুলি এইটুকু মেয়ে হয়ে যদি সব ভুলে নিজের রাস্তা দেখে নিতে পারে তাহলে তুই পারিস না কেন? কেমন ব্যাটাছেলে তুই? একটা মেয়ে চলে গেলো তো কি জীবন শেষ হয়ে গেলো? দুনিয়ায় কি সব প্রেমই মিলনের মালা পায়? একেই বোধহয় বলে বিরহ।
চা খেতে খেতেই দেখছি দূর থেকে স্বপনও আমাকে দেখছে। এটা ওর ঘাঁটি। তাতে কিছু যায় আসেনা। আমার সুনাম বা দুর্নাম এই এলাকার লোকজন ভালো করেই জানে। তাই আশা করি ও এবার আর ভুল করবেনা। কিন্তু ওকে দেখে মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে। সেদিন কেমন বানিয়ে বানিয়ে বলে দিলো। পাক্কা খানকির ছেলে না হলে এমন পরিস্থিতিতে এরকম মিথ্যে কথা বলতে পারে ঠান্ডা মাথায়, বানিয়ে বানিয়ে। ভাবছি আরেক রাউণ্ড দেবো নাকি।
এমন সময় একটা রিক্সাওয়ালা এসে আমাকে ডাকলো ‘দাদা আপনাকে ডাকছেন।’
‘কে?’
রিক্সাওয়ালাটা গলার স্বর নিচু করে বললো ‘স্বপনদা ডাকছে বসুন নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে।’
আমার মাথা গরম হয়ে গেলো ‘এই যাতো গিয়ে বল দরকার হলে আমার সাথে এখানে এসে কথা বলতে, লাটেরবাট কোথাকারের। ভাগ এখান থেকে।’ তাকিয়ে দেখলাম স্বপন ওখানে নেই।
রিক্সাটা ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেলো।
সব বন্ধুরা আমার দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে রইলো হঠাৎ করে কার সাথে জোর গলায় কথা বলছি ভেবে। কিন্তু আমার রাগত মুখ দেখে কেউ আর সাহস করলো না যে জিজ্ঞেস করবে।
এখন একটা নতুন রোগ ধরেছে। ঘুম হয়না। তাই হাল্কা স্লিপিং পিলস নিতে হয়। দুপুরেও তাই নিলাম। নাহলে তো সারাক্ষনই তুইর চিন্তা করে যাবো, কখনো দুঃখ হবে কখনো রাগ হবে। শরীর চঞ্চল হবে। আর ঘুম যাবে চটকে। এইভাবে কয়েকরাত কেটেছে। আসলে তুলি যদি আমার মুখের ওপর বলে দিত যে ওর যা ইচ্ছে ও তাই করবে। তাহলে হয়তো শুধু বিরহ থাকতো। কিন্তু আমার মনে হয় যেন তুলি এই এত কিছুর পরেও আমার উপর দুর্বল, ও আমাকে সত্যি ভালবাসে। তাই জোর দিয়ে বলতে পারেনি যে আমার মুখ আর দেখবেনা। আমার কানে ভাসে ওর সেই কথাগুলো মা অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে ওর সেই ব্যাকুলতা। ভালোবাসা না থাকলে কি করে এরকম করে। এতোটা কি অভিনয় করতে পারে কেউ?
সন্ধ্যেবেলা মার সাথে একটু কথা বলে আমি ঠেকে গিয়ে বসলাম। ঠেকে বসেও মনটা বেশ খারাপ লাগে। পাপ্পু না থাকাতে এই যায়গাটা যেন গ্ল্যামার হারিয়েছে। সবই চলছে, যেরকম চলার সেরকম। জুয়া, তাস, ক্যারাম, খেলাধুলো, কিন্তু ঠেকের সেই প্রানটা যেন পাপ্পুর সাথে বিছানায় শুয়ে রয়েছে। পাপ্পু এখন সারাদিন শুয়েই থাকে। চুপ করে থাকে কারো সাথে কথা বলেনা। অনেক ডাকাডাকি করলে ওঠে শুধু স্নান আর খাওয়ার জন্যে। আমি এরমধ্যে দুএকবার গেছি ওকে দেখতে। ও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে, কিছু বলেনা। ওর মা চোখের জল ফেলে খালি, কি দস্যি ছেলের কি পরিনাম হল, এই বলে।
কিছুক্ষন বাদে শুনতে পেলাম একজন আমার নাম ধরে ডাকছে। আমাকে চেনেনা। আমিও চিনতে পারছিনা।
আমি ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসতেই সে বললো ‘স্বপনদা বলেছে রাগ না করতে, উনি আসতে পারছেন না যদি আপনি একটু দেখা করেন তো ভালো হয়। খুব একটা জরুরি খবর আপনাকে দেওয়ার আছে বলেছেন।’
আমি ভদ্রলোকের বাইকের পিছনে উঠে বসলাম।
সেই স্টেশান চত্তর। সাইডিং-এর পিছনে কাঠের স্লিপার পাতা ইটের ওপোর রেখে বেঞ্চে পরিনত করা হয়েছে। তার পাশে একটা ঘুপচি ঘর। ওপরে চায়ের দোকান কিন্তু এই দোকানে গাঁজাও পাওয়া যায়, চুল্লুও পাওয়া যায়। সব জি আর পির সাথে সাঁট আছে। আমি নিজে কিনিনি, কিন্তু এখান থেকেই আমার খোরাকি যায়। দুনিয়ার সব বঞ্চিত বানচোত্* এখানে ভিড় করে। আমি স্বপনকে খুজছি, শালা কেন আমাকে ডাকলো।
হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন জড়িয়ে ধরলো। স্বপন। মুখ থেকে চোলাইয়ের গন্ধ বেরোচ্ছে ভক ভক করে। সাথে বিড়ির কম্বো।
‘ভাই, আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দে।’
আমি একঝটকায় ওর ফাঁস থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিলাম।
‘এটা বলার জন্যে এত নাটক করছো। সেদিন তো বাড়িতে ভালোই ডায়লগ দিয়ে এলে।’
‘ভুল হয়ে গেছে রে, ভুল হয়ে গেছে। আমার কয়েকদিন ঘুম হয়নি রে বিশ্বাস কর। আমি তোর পায়ে ছুয়ে বলছি।’ স্বপন নিচু হয়ে আমার পা ছুতে গেলো আমি সরে দাঁড়ালাম।
‘আমাকে ক্ষমা কর। তোর মনের অবস্থা আমি বুঝি রে ভাই। আমারও তো একই অবস্থা। ভালোবাসার জন্যে জীবন দিয়ে দিলাম। কি ছিলাম আর কি হয়েছি।’
শালা কি বলেরে, এ আবার কার সাথে প্রেমপিরিতির গল্প ফাঁদবে।
আমি একটা সিগেরেট ধরিয়ে স্লিপারটার ওপরে বসলাম। পাশে স্বপনও।
স্বপন বলে চলেছে ‘তুলি আমি নিজের সন্তানের মত ভালবাসি। বিশ্বাস কর ওর কোন ক্ষতি হোক আমি চাই না। রবিনদাকে তো বুঝেই গেছিস তুই আমি আর নতুন করে কি বলবো। কোনদিন কাউকে শাসন করেনি। তাই এই হাল। কেউ পাত্তাও দেয় না। আমাকেই দেখতে হয় জানিস। তুলি কি ড্রেস করবে, কি পরবে, কোচিনে যাবে তো আমি যাবো সঙ্গে করে, কিছু খেতে ইচ্ছে করলো তো আমি। এই তো বড়দিন আসছে কত বায়না শুরু হয়ে যাবে ওর এখানে নিয়ে চলো, ওখানে নিয়ে চলো, কেক কিনে দাও। কোনদিন না করিনা। কি করবো, ও তো আর ওর বাবার থেকে পায়না এসব। ওদের জন্যে নিজের সংসারকে আমি বঞ্চিত করি জানিস...।’
এত বড় বড় কথা বলছে শালা। সত্যি না ঢপ্*?
‘তো তুলির বাবার তো ভালোই ইনকাম, উনি দেন না কেন?’
‘আরে ও তো শালা পয়দায়সি কেলানে। নাহলে কারো বৌ বাচ্চা এরকম বিগড়ে যায়? সব হয়ে যাওয়ার পরে এখন আমাকে বলেছে বাড়িতে না ঢুকতে।’
‘তুমি তো শুনলাম রনি বলে ছেলেটাকে ওদের বাড়িতে ঢুকিয়েছ...।’
স্বপন একটু থমকে গেলো ‘ কে বললো তোকে? তুলি?’
-‘সে যেই বলুক না কেন? ঘটনা তো সত্যি।’
- ‘সে আমি কি করবো। আমার আত্মিয় হয় ও। একদিন আমাকে খুজতে খুজতে ওদের বাড়িতে গিয়ে খুজে পায় আমাকে, ওকে দেখে মা মেয়ের কি পিরিত। আমি সাবধান করেছি বড়বৌদিকে অনেক, বলেছি যে ছেলে কিন্তু অনেক ঘাটের জল খাওয়া, কিন্তু কে শোনে কার কথা? ও আসলেই দুজনে লুরলুর করে একদম। আমি নিজের হাতে কোনদিন কি ওদের ক্ষতি করতে চাইবো। সেই তো আমারই চোখের জল বেরোবে...’
‘কেন তুমি তো বাইরের লোক, ওদের সাথে কি তোমার?’
‘তুই বুঝবি না ভাই... এই বড়বৌদির কোলে মাথা দিয়ে কত ঘুমিয়েছি? কত ভালো ভালো রান্না করে আমাকে খাইয়েছে। ব্যবসার সব টাকা, বৌদির হাতে তুলে দিতাম, নেমকহারাম মহিলা। বেশী টাকা দেখেছে আর ভেগেছে অন্যদিকে। ভীষণ লোভি। সাথে মেয়েটাকেও টোপ দিচ্ছে টাকার। আমি ইচ্ছে করলেই সব বন্ধ করে দিতে পারি এক মুহুর্ত লাগবে আমার। কিন্তু তারপর বলতো কি হবে?’
‘কি হবে?’
‘এই থানা পুলিশ এসব তো আমাকেই ছোটাছুটী করতে হবে। কি হবে কাদা ছোরাছুরি করে? দুটো মেয়ের তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে...’
‘এমনিও তাই হচ্ছে, তো থানা পুলিশ না হয় হোত, তাতে আর কি এমন বাড়তো? লোকে তো সব ভুলে যেত সময়ের সাথে সাথে।’
‘আরে তুই জানিস না, থানাতে আমি যাওয়া মানে সবাই জানবে বড়সড় কেস নিয়ে গেছি, তখন আর সহজে ছার পাবেনা কেউ। এই যে তুই আমাকে মারলি অনেকে আমাকে বলেছে, স্বপন একবার বড়বাবুকে জানা, দেখ কি হয়, সেতো আমার একটা ফোনের ব্যাপার ছিলো, তারপর কি হোত দৌড়াতে তো আমাকেই হোত, তুলি কি আমাকে ছেড়ে দিতো, আমার জামাই বলে কথা...’ বলে আমার পিঠে হাত দিয়ে স্বপন একটু হেক্কা দেখানোর চেষ্টা করলো।
আমি একঝটকায় হাত সরিয়ে দিলাম পিঠের ওপোর থেকে ‘ওসব গল্প ছারো, মাসিমার গোঁফ থাকলে কি হোতো সেসব গল্প আমার শোনার ইচ্ছে নেই, কাজের কথা বলো।’
একটুও না ঘাবড়ে স্বপন বললো’সেই জন্যেই তো তোকে ডেকেছি, আমি তোর জালা বুঝি রে। ভালবাসায় তুইও জ্বলছিস্*, আমিও... বড়বৌদিকে আমি আমার জানের থেকে ভালবাসি, কি না করেছি ওর জন্যে।। প্রতিদানে ঠোক্ক্র পেয়েছি, আরে আমি ইচ্ছে করলে তো ওকে নিংরে খেয়ে নিতে পারতাম... আমি তো ভালোবেসে ফেলেছি রে।’
লে হালুয়া আবার নতুন গল্প শুরু হোলো। স্বপন পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে চোখের জল মুছে নিয়ে সোজা হয়ে বসলো। খেয়াল করলাম না যে কুম্ভীরাশ্রু নাকি।
‘তুই ভাই তুলিকে সাবধান কর। ও তোর কথাই শুনবে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, হয়নি। মেয়েটা এত মিথ্যে কথা বলতে পারে যে চিন্তা করতে পারবিনা। তোর কাছে হয়তো সব সত্যি কথা বলবে। তুই ওকে ওর সবকিছু জিজ্ঞেস কর, ও কি চায় জানতে চা, দরকার হলে ওকে বিয়ের প্রস্তাব দে। এইতো সেদিন বলছিলো কোথায় কি কাজের কথা চলছে। আমি বললাম যে পরাশুনা শেষ কর তারপর ভদ্রলোকের মত একটা চাকরিবাকরি খোজ, এত ভালো ছেলে পেয়েছিস, এত বড় ফ্যামিলি, আর তুই যদি এরকম ঘুরে বেড়াস তো ওদের সন্মানটা কোথায় যায়। তাতে বলে কি, আগে বিয়ে হোক তারপর সন্মানের কথা চিন্তা করবো। চিন্তা কর এইটুকু মেয়ের মুখে কি বুলি। পুরো ওর মার রক্ত পেয়েছে, লোভি, মিথ্যুক। ওকে জিজ্ঞেস করবি তো শুভোর সাথে কি ব্যাপার ছিলো ওর?’
‘কে শুভ?’
‘এই তো ওদের পারাতেই থাকে। সবাই ওকে আমির খান বলে। কত মেয়ের যে সব্বোনাশ করেছে তার হিসেব ওর নেই, বাইক দেখেছে আর মেয়ে ঝুলে পরেছে ওর দিকে, এই তো সেদিন দেখি, গরিয়াহাটে ঘুরে বেরাচ্ছে, দুজনে। আমাকে দেখে তুলি লুকিয়ে পরলো বুঝতে পারলাম, ওতো যানে আমি এসব পছন্দ করিনা, যদি তোর কানে তুলে দি? তারপর থেকে ও যেন আমাকে দেখলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছে।’
আমার কান গরম হয়ে উঠছে, শালা সত্যি বলছে না মিথ্যে, এত কেলানি খাওয়ার পরেও কি সাহস করবে এত বড় মিথ্যে কথা বলার জন্যে।’
তবুও মনের ভাব গোপন রেখে যেন আমার মধ্যে কিছুই হচ্ছেনা সেরকম নির্লিপ্ত ভাব করে বললাম ‘তো ওর মা বাবাকে বলবে? তোমার কি দায় পরেছে ওকে শাসন করার।’
‘হাসালি? ওর মাকে বলতে বলছিস? ওর মা তো পারলে লেলিয়ে দেয়। একবার তো কত কাণ্ড পাড়ায়। সেটো আমি এসে পরাতে সব থামল।’
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ও নতুন গল্প শুরু করলো ‘আরে একটা ছেলে আসতো, কর্পোরেশানের কন্ট্রাক্টর, চারচাকা নিয়ে আসতো। অল্প বয়েসি ছেলে। কি যেন নাম? ও হ্যাঁ বাপ্পা। তুলির দিকে একটু তাকাতো টাকাতো। ব্যাস আর যায় কোথায়? মা মেয়েকে এগিয়ে দিলো। ছেলেটা থাকলেই ওর মা ওকে দোকানে পাঠাবে, এটা ওটা আনতে দেবে। তারপর আর কি। দেখা গেলো মা আর মেয়ে ওর গাড়ি করে ঘুরছে। প্রতিদিন রাত নটা দশটা করে এসে গাড়ি নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আমি কত সাবধান করেছি, কে শোনে কার কথা।’
বুকের ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে তবুও নির্লিপ্ত থাকার অভিনয় করলাম ‘ তো তুমি সন্তুকে বলবে, সন্তুতো মনে হয় অন্য রকম?’
‘আরে ও ভালো ছেলে খুব। কিন্তু অল্প বয়েসি ছেলে বিড়ি সিগেরেটের পয়সা কোথায় পাবে, মার কাছেই তো হাত পাততে হয়। মা না দিলে আমার কাছে এসে হাত পাতে। এই তো সেদিন দুশো টাকা দিলাম, কোথায় খেলা আছে বলে নিলো।’
আমি বুঝতে পারছিনা এ মাল সত্যি বলছে না বানিয়ে বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। তবু ওর উদ্দেশ্য কি বুঝতে না পারা পর্যন্ত এই খেলা চালিয়ে যেতে হবে যে সেটা আমার ইন্দ্রিয়গুলো জানান দিচ্ছে।
‘ঠিক আছে দাদা আবার পরে একদিন কথা হবে, অনেক রাত হয়েছে, পরে আবার সময় সুযোগে কথা হবে।’
হ্যাঁ ভাই তুলিকে আটকা একটু। এই রোববারের দিন মেয়ে যদি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকে আর রংচং মেখে বেরোয়, সেই মেয়েকে কেউ ভাল বলবে? তুইই বল? ওতো উচ্ছন্নে যাচ্ছে যাক, তুই কি ভুলতে পারবি ওকে?’
মাথার মধ্যে ভোঁ ভোঁ করছে। তুলির সাথে কোন লগ্নে দেখা হয়েছিলো তা যাচাই করতে হবে। এত অশান্তি যেখানে, সেখানে আমি কি করে জড়ালাম।
স্বপনও যে সব কথা ঠিক ঠিক বললো সেটাও ঠিক ভরসা করা যায় না। রত্নাকর থেকে একেবারে বাল্মিকি হয়ে গেলো যে। বিশ্বাস করার পিছনে একটাই যুক্তি যে ও তুলির মার ওপর দুর্বল। শালা প্রেম খোলামকুচি হয়ে গেছে। অন্যের স্ত্রী তার সাথে প্রেম। কোলে মাথা রেখে শোওয়া। শালা এই তুলির বাপটা তো আস্ত কেলানে মাল। কবে কোন আমলে বোম বেঁধেছিলো সেই গল্প করে কাটিয়ে দিলো মাইরি। এদিকে মেয়ে আর বৌ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হয়ে গেছে সেদিকে খেয়ালই নেই।
রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে, দুএকটা রিক্সাতে মাতাল লোকজন ছাড়া আর কেউ নেই রাস্তায়। রিক্সাওয়ালাও মাতাল। সওয়ারিও মাতাল। নিজের মনে হেটে চলেছি। বুকের মধ্যে নতুন তথ্য নাড়াচারা করতে করতে। তার সত্যতা নিয়ে নাড়াচারা করতে করতে। হঠাৎ এক মহিলা কণ্ঠে ডাক। ‘এই অভি?’
মাথা তুলে দেখি বিজয়ার মা। ওদের বাড়ির গলির মুখে দাঁড়িয়ে আছে। এতই খারাপ সময় আমার, স্বপনের সাথে কথা বলতে হচ্ছে, বিজয়ার মা ডাকছে। কি অধঃপতন।
‘হ্যা বলুন?’
‘পাপ্পু কেমন আছে জানো?’
‘খুব ভালো নেই।’
‘কেন করলো এমন জানতে পারলে কিছু?’
‘নাঃ ও আর কারো সাথে কোন কথা বলছেনা।’
‘পুলিশ কেস হয়েছিলো না?’
আমি দেখলাম বেশী হয়ে যাচ্ছে তাই চারপাস দেখে নিলাম ভালো করে কেউ দেখে না ফেলে আবার। এদের সাথে কথা বলা মানেই তো গায়ে ছাঁপ পরে যাওয়া।
চারিদিক ফাঁকা পেয়ে একটু ভরসা পেলাম ‘নাঃ বেচে থাকলে আর পুলিশ কেস কি? ও একটা ডায়েরি হয়েছে এই আরকি।’
‘কি জন্যে করেছে কিছু জানতে পারোনি না?’
‘নাঃ।’
‘আমি শুনে থেকে ভাবছি যে একমাত্র তুমিই জানলে জানতে পারো। তোমরা তো খুব ভালো বন্ধু।’
‘হ্যাঁ, তা ঠিক কিন্তু সেই সময় মারও খুব শরীর খারাপ হয়।’
‘হ্যাঁ শুনেছি, তোমরা তো এদিক দিয়ে যাতায়াত করোনা যে জিজ্ঞেস করবো। সেদিনই তো সকালে তোমার মাকে বাজারে দেখলাম, আমাকে আবার অনেক কথা বলছিলেন জিনিস পত্রের দাম নিয়ে, এক যায়গা থেকেই তো সব্জি নি। আহারে এত ভালো মানুষটার কি কষ্ট।’
‘সে আর কি করা যাবে আজকাল এগুলো তো ঘরে ঘরে।’
‘এই তুমি আসোনা রাস্তায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছো। পাপ্পুকে অনেকদিন বলেছি তোমাকে নিয়ে আস্তে একদিন, একটু বিজয়ার ব্যাপারে কথা বলতাম, ওও তো সিএ পরছে, সেইজন্যে। তুমি তো নাকি সময়ই পাও না।’
আমি আঁতকে উঠলাম ‘না না বাড়িতে আজ না। অন্য আরেকদিন আসবো, এতরাতে আর না। মা অপেক্ষা করছে। আমি গেলে ঘুমোবে।’
‘ওঃ আমাদের আবার এখন সন্ধ্যে। এই গিয়ে হয়তো চা করবো, তাই বলছিলাম যদি একটু চা খেয়ে যাও।’
‘না আজ থাক, আপনার মেয়ে আসলে বলবেন তখন একদিন এসে কথা বলে যাবো।’
‘বাঃ মেয়ে কবে আসবে আর তুমি তখন আসবে?’ উনার গলা একটু হতাশই শোনালো।
আমি বললাম ‘আসি পরে দেখা হবে।’
বিজয়ার মা রহস্যজনক হেসে বললো ‘পরে? দেখি কবে সেই পরে আসে।’ গলা নামিয়ে বলে উঠলো ‘আমি অপেক্ষা করে থাকবো, সারারাত বললে সারারাত।’