31-12-2018, 04:26 PM
আমিও টাল সামলাতে না পেরে ওর গায়ে ওপর পরলাম।
মেয়েটা আমার হাত চেপে ধরে আমাকে কেবিনে ঢুকতে বারন করলো। তারপর আমাকে যা বললো তাতে আমার রক্ত গরম হয়ে উঠলো।
এই লোকটা মেয়েটার বাবার বন্ধু। মেয়েটার বাবা ব্যাবসার কারনে এর থেকে অনেক টাকা ধার নিয়েছিলো। ঠিক মত শোধ না করতে পারাতে এর মার ওপর অত্যাচার চালায় এই লোকটা। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েটার মা আর বাবা দুজনেই আত্মহত্যা করে। তারপরে বাইরে পরাশুনা করা এই মেয়ে যখন গ্রামে ফেরে তখন পঞ্চায়েত কে হাত করে এই মেয়েটাকে জোর করে বিয়ে করে এই লোকটা। এখন উদ্দেশ্য যে বম্বে নিয়ে গিয়ে একে ব্যবহার করে পয়সা কামানো। মানে একে হাই ক্লাস প্রস্টিট্যুটে পরিনত করা।
বলতে বলতে মেয়েটা কেঁদে দিলো।
কেন জানিনা আমার মন বললো, এর ওপর আমার অনেক দায়িত্ব আছে। এই ভাবে আমি একটা সুন্দর জীবন নষ্ট হোতে দিতে পারিনা। ওর বর যখন ঘুমে ঢলে পরেছে আমি ওকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের ব্যাগ আর ব্যাগেজ নিলাম আর ওর একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে নিলাম।
তারপর ওকে বললাম যদি জীবন চাও তো আমার সাথে আসো। নাহলে সামনেই কেবিন ফিরে যাও। বম্বে পর্যন্ত আমি তোমার সাথে আছি। আর এখন আমার সাথে আসলে, সারাজীবন তোমার সাথে আছি।
এরপর আমি ওকে নিয়ে ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছি। সব জায়গাতেই এই লোকটার দল আমাকে আর ওকে ফলো করেছে। কিন্তু সেরকম কায়দা করে উঠতে পারেনি, কারন আমার কলেজের বন্ধুরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন দায়িত্বে রয়েছে। তাই সময় লাগলেও এই লোকটা আর তার স্যাঙাৎদের কায়দা করতে আমাকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। সম্পুর্ন প্রশাসনিক সমর্থন আমি পেয়েছি।
তারপর ওকে কোলকাতায় নিয়ে এসে মাকে দেখিয়ে ধুমধাম করে বিয়ে করি। হ্যাঁ রিতুই সেই মেয়ে।
কিন্তু আমি নিজে জানতাম না যে আমার শরীর আমাকে এরকম ধোঁকা দেবে। হ্যাঁ রিতুকে প্রথম বার নিজের মত করে পেতে গিয়ে বুঝলাম আমার সেই ক্ষমতাই নেই। একটা মেয়ের পরম আরাধ্য যে ফুলসজ্জার দিন স্বামির থেকে যৌনসুখ পাওয়া; সেটা আর ওর হয়নি। ছোটবেলার এক দুরারোগ্য রোগের ওষুধে এমন কিছু ছিলো যে সেটা আমার পুরুষত্ব কেড়ে নিয়েছিলো।
রিতু অনেক চেষ্টা করেছে। দিনের পর দিন। ডাক্তার বদ্যি কম করিনি আমরা। এমনকি বিদেশে গিয়েও আমি ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু কোন ফল পায়নি। রিতু রোজ চেষ্টা করে যায়, ওর সাধের তানপুরা যেন সুরে বাজে। কিন্তু যে তানপুরায় তারই ছিরে গেছে সে আর কি বাজবে।
কিন্তু ও আমাকে ভগবান বলে মনে করে। আমার সেটাই সবথেকে খারাপ লাগে। আমি তো মানুষের কর্তব্য করেছি প্রথমে। তার আগে তো ওকে আমি ভালবেসেছি। ওকে কোনো দয়া তো করিনি। তাহলে ও কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। মেয়েটাকে এটাই আমি বোঝাতে পারিনা।
আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি, এমন কি বিদেশে নিয়ে গিয়ে ওকে কৃত্তিম উপায়ে গর্ভদান করতে চেয়েছি। ও কিন্তু রাজী হয়নি। তুই বিশ্বাস করবিনা, আর আমাকে কি ভাববি জানিনা, তুই আমার ভাইয়ের মত, তাও আমার তোকে বলতে আপত্তি বা লজ্জা কোনোটাই নেই যে আমি রিতুকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে জোর করে আমি মেল গিগোলোর হাতে তুলে দিয়েছিলাম, যাতে ও শরীরসুখটা পায়। ওকে বুঝিয়েছিলাম যে আমি এতেই সুখি। সুখ করে নাও মন ভরে, নিজের সমাজ, আপনজন, সবার থেকে দূরে মনে ভরে সুখ নিয়ে নাও, কেউ তোমাকে বারন করবেনা। কেউ জিজ্ঞেস করবেনা। এখানকার সমাজ এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। তুমি সুখি হলেই আমি সুখি। পাশের ঘরে আমি তৃপ্তি নিয়ে বসে থাকবো যে তুমি সুখ পাচ্ছো। আমি সব থেকে সুখি হবো তোমার কামতৃপ্ত লাজুক চাহুনিতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
ও সুখি না হলে আমি কি করে সুখি হোই তুইই বল। ডলার আর ইউরোর বন্যা বইয়ে দিয়ে কয়েকবার ছেলে ভাড়া করে এনেছি তাদের পেডিগ্রী দেখে। কিন্তু একা ঘরেও পরপুরুষের সামনেও ও চুপ করে বসে ছিলো, ছেলেটাকে ছুতেও দেয়নি ওর শরীর। বারবার আমাকে প্রমিস করে যে এবার বিদেশে গিয়ে ও এটা করবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ও পেরে ওঠেনা।
আজকে যখন আমার বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেলেছে ও তোর সাথে ঘটনাটা বলতে গিয়ে আমি তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা যে আমি কি স্বস্তি পেয়েছি। অবশেষে, অবশেষে ও পেরেছে। সেটা নিজের থেকেই। আমি ওকে বুকে জড়িয়ে অনেক আদর করেছি। বুঝিয়েছি যে যা করেছে ঠিক করেছে। বার বার করে আমার কাছে ক্ষমা চাইছে, যে ওর ভুল হয়ে গেছে, ওর ভুল হয়ে গেছে। কি ভুল করেছে বলতো ও। আরে ও তো তোর আমার মতই রক্তমাংসের মানুষ। যার মন আছে, যার শরীর আছে। যার শরীরে কামনা, বাসনা, লালসা, যৌবন ইচ্ছে এসব জাগে।
বিশ্বাস কর আমার মনে প্রথম প্রথম ভয় ছিলো এরকম পুর্নযৌবনা নাড়ি কতদিন নিজেকে সামলে রাখতে পারবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা, নিশ্চয় ও ওর মত পথে নিজের সুখ খুজে নেবে। সেটা আমাকে লুকিয়েই। আমার বুক কাঁপতো ভয়ে। যদি ভুল হাতে পরে। যদি যৌবনের জ্বালা মেটাতে গিয়ে ও ভুল পাত্রে নিজেকে দান করে তাহলে কি হবে। কেউ কি অতৃপ্ত নাড়ির মনের কথা জানার চেষ্টা করবে ভোগ করার সময়। কেউ কি সুযোগ নেবেনা? পরবর্তিকালে কি ওর বিপদ হবেনা এরকম দৈহিক সম্পর্কে?
কিন্তু আজ বারো বছর ওর সাথে থেকে আমার মনে হয়েছে ও যোগিনী। কামজয়ী। কিন্তু আমি স্বস্তি পেতাম না এতে। আমার মনে হোতো আমার জন্যেই ও এই ত্যাগ করছে। আরে বাবা, আমি নিজে যেখানে ওকে পরপুরুষের সাথে সম্ভোগে সন্মতি দিচ্ছি, সেখানে ও কেন তা গ্রহন করছেনা, আমি বুঝতে পারতাম না। ও ভাবে যে আমি এসব বলার জন্যে বলি। মন থেকে কি কেউ এসব চাইতে পারে। কোনো পুরুষ মানুষ কি চিন্তা করতে পারে যে তার বিবাহিতা স্ত্রী পরপুরুষের সাথে বেহায়ার মত যৌনসুখ নিচ্ছে। আরে আমার যদি তোকে দেওয়ার ক্ষমতা থাকতো তাহলে কি আমি তোকে এসবের ঠেলে দিতাম। বরঞ্চ আগলে রাখতাম। ও যদি আমার জায়গায় থাকতো তাহলে ও কি করতো। আগেকার দিনে হোতোনা যে বৌ বাঁজা, তাই স্বামির জন্যে আরেকবার বিয়ের ব্যাবস্থা করছে যাতে সংসারে সন্তান আসে।
আরে অভি আমি তো ওকে ভালোবেসেছি রে। তুই বল তুই আমার জায়গায় থাকলে কি করতি। তুই চাইতিনা যে তোর ভালোবাসার লোকটা সুখে থাকুক। দুনিয়ার কোন কিছু থেকে সে যেন বঞ্চিত না হয়। আরে শালা বিবাহিত জীবনের দুটো প্রাথমিক সর্ত হোলো চোদন আর ভোজন। দুদিকের ফুটোই সময়ে সময়ে ভরে দিতে হবে। সেখানে আমি শালা নপুংসক, আমি কি পারি এরকম উগ্রযৌবনা নাড়িকে তৃপ্ত করতে? মুখে যতই বলুক না কেন, আমি ওর দেবতা। আমি ওর সবকিছু। তাহলে আজকে কি ভাবে হোলো?
আমার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। সুবিরদা বারবার আমার আর ওর বৌয়ের কথাটা টেনে আনছে বলে। এখনো আমার মনে পরছেনা যে এত কিছু কি ভাবে হয়ে গেলো। এত কিছু করলাম অথচ নিজের কোন হুঁশ ছিলো না। সত্যিটা কি আমি জানি। কিন্তু আমি কি পারবো এই আহত লোকটাকে সেটা বোঝাতে। সে কি বিশ্বাস করবে। আজকে এই মুহূর্তে সে হয়তো আমাকে ভাবছে পাপ্পুর মতই কোন লোফার, নাড়িমাংস লোভী। কিন্তু মেরে ফাটিয়ে দিতে পারছেনা, নিজের এই গুপ্ত রোগের জন্যে। একটা পুরুষ সত্যি অসহায় এই অঙ্গ ছাড়া। জীবনে এ আমার নতুন উপলব্ধি। অন্ধ, কালা, বোবা, এদের মতই এও এক অস্বাভাবিকতা, পঙ্গুত্ব। দেখতে তুমি পুরুষ মানুষ হওনা কেন, তোমার যদি পুরুষত্ব না থাকে, এক নাড়ির কামনার জ্বালা মেটানোর ব্যাপারে যদি তুমি অসহায় হও তাহলে কিসের পুরুষ তুমি। ভগবানকে অসংখ্য ধন্যবাদ, কোটী কোটী প্রনাম তার পায়ে যে আমার শরীরে কোনো ত্রুটি নেই।
সত্যি, মানুষের জীবন কত জটীল হয়। এর আগে এরকম ঘটনা শুনেছি নাদু কাকার, মানে বিজয়ার বাবার। কিন্তু সুবিরদার স্ট্যান্ডার্ড আর নাদু কাকার স্ট্যান্ডার্ড অনেক হেরফের। সুবিরদা দেশের এক মহারত্ন কোম্পানির সিইও। চলনে বলনে গাম্ভির্যে, আভিযাত্যে যে সকলের ঈর্ষার পাত্র, কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে কতটা ফাঁপা। নাদু কাকার না আছে চাল না চুলো। তাই বিজয়ার মা মানে নাদু কাকার বৌ অনায়াসে নিজের শরীর সওদা করতে পারে। তার কামনা, লালসার বহিঃর্প্রকাশ অতি প্রকট। নিজেকে সস্তা করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে শরীরের খিদে মেটাণোর জন্যে। তার স্বামির দায়িত্ব পাপ্পুর মত ছেলেরা যৌথ ভাবে পালন করে। সহজেই পুরুষেরা ধেয়ে যায় সেই দিকে। নিজেকে পুরুষের মনোরঞ্জনকারিনি হিসেবে তুলে ধরতে পারে সে।
কিন্তু রিতু বোউদির মত সম্ভ্রান্ত মহিলা কি করে নিজেকে বিলিয়ে দেবে? সেতো মক্ষিরানির মত চালচলন দেখাতে পারেনা। তার চালচলন অতি সম্ভ্রান্ত। সন্মানের গাম্ভির্যে, কেউ সাহস পাবেনা, কুদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাতে। মনে মনেও না। সুবিরদার পরিবারের প্রভাব না। এটা লালনপালন, শিক্ষাদিক্ষা আর রক্তের ব্যাপার।
শুধু সামান্য একটা অঙ্গের ত্রুটির জন্যে সুবিরদা জীবনের কত সুখ থেকে বঞ্চিত। মানুষের মানসিক অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছুলে মানুষ নিজের বিবাহিতা স্ত্রীকে পরপুরুষের সাথে শুতে দিতে চায়। তাতে সে সুখ পায়। না, আমি গুলিয়ে ফেলছিনা। হাবলু আর সুবিরদাকে একই লাইনে রাখলে সুবিরদার চুড়ান্ত অপমান হবে। হাবলুদের অস্পৃশ্য আত্মা সুখি হবে তাহলে, সুবিরদার মত মানুষের সাথে ওদের নাম একসাথে উচ্চারিত হলে। কিন্তু আমি ভাবছি, মুখে সুখি হবে বললেও, সুবিরদার কি একটা হাহাকার ভেসে উঠছেনা কথাবার্তায়।
আমি সুবিরদার পা ধরে ফেললাম। ওর এই দুর্বল মুহুর্তে নিজের দোষটা স্বীকার করে নিয়ে নিজে মুক্তি পেতে চাই। হ্যাঁ ধান্দাবাজিই করছি এই অসহায় মানুষটার সাথে। কিন্তু কি করবো। এরপরে আমি সুযোগ নাও পেতে পারি। কোনদিনই হয়তো ক্ষমা চাইতে পারবোনা, এই মানুষটার কাছে। নিজের ভিতরেই দগ্ধে দগ্ধে মরবো। যে এতদিন আমার আদর্শ ছিলো, তার এইরকম দুর্বল দেখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তার থেকেও কষ্ট হচ্ছে যে রিতু বৌদি আমাকে কি ভাবছে সেই ভেবে। এত সুন্দর আমাদের সম্পর্কটা, কি ভাবে নষ্ট করে দিলাম আমি নিজের হাতে।
সুবিরদা খেয়াল করতে পারেনি যে আমি ওর পা ধরেছি। আমি সুবিরদাকে বললাম ‘ বিশ্বাস করো আমি কিছু ভেবে উঠতে পারছিনা, কি ভাবে এসব হয়ে গেলো, আমি ভাবতে পারছিনা যে আমি এখনও তোমার সামনে বসে আছি তাও সুস্থ শরীরে।’
সুবিরদা সিগেরেটের ধোয়াতে রিং ছেড়ে আমার মাথায় হাত দিয়ে চুল হাল্কা করে মুঠি করে ধরলো। জড়ানো গলায় আমাকে বললো ‘এতক্ষন আমি তোকে কি বললাম আমি কি হাওয়ায় কথা বলছিলাম?’ সুবিরদার গলায় ক্ষোভ আর অভিমান দুইই।
আমি চুপ করে গেলাম।
সুবিরদা রাগত গলায় বলে চলেছে, ‘বুকের মধ্যে জমিয়ে রেখেছিলাম এই কথাগুলো এতদিন। নিজের নপুংশকতার কথা বলার জন্যে যে সাহসটা দরকার সেটা আমার মধ্যে ছিলো না। কিন্তু আমি জানতাম, রিতুর জন্যে কারো না কারো কাছে আমাকে এই দুর্বলতার কথা স্বীকার করতেই হবে। আজ নয় কাল। আমি ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না আর। নিজের দুর্বলতা দেখিয়ে অন্য কারো কাছে রিতুর জন্যে সুখ ভিক্ষা চাইবো ভেবেছিলাম। আর যখন আজ তোকে এই কথাগুলো বললাম তুই সেগুলো মন দিয়ে শুনলিই না।’
‘আমি শুনেছি দাদা, আমি শুনেছি’
‘শুনেছিস কিন্তু মন দিয়ে না। তুই কি ভাবছিস আমি মুখেই বলছি এগুলো, এগুলো আমার মনের কথা না? ভুল ভাবছিস তুই, তাহলে তুই আমাকে চিনিস না।’
‘দেখো সুবিরদা আমি অন্যায় করেছি আমার মনে হয়েছে আমার শাস্তি পাওয়া দরকার তাই আমি তোমার কাছে এসেছি, তুমি যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেবো। মানুষ ফাঁসিতে যাওয়ার আগেও তো কিছু বলতে চায় তো আমি বলে নিজেকে হাল্কা করতে চাইলাম। তুমি কি ভাবে নেবে তোমার ব্যাপার।’
‘এই জন্যেই আমি তোকে ডেকেছি আর এত কথা বললাম এতক্ষন। পৃথিবিতে আর কাউকেই হয়তো আমি এই কথাগুলো বলতে পারতাম না। সত্যি বলতে কি তোর কথা আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। ভেবেছিলাম রিতুকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দেবো যাতে ও আমি ছাড়া আরেকজনকে বেছে নেয়। কিন্তু আমার ভয় ছিলো, যে সোনাদার ছেলের (পাপ্পু) মত কারো পাল্লায় না পরে যায় ভুল করে। ডুবন্ত মানুষ তো খড়কুটো পেলে সেটাই আঁকড়ে ধরে। কিন্তু তুই আমাকে নিশ্চিন্ত করেছিস। তোরা আমার সেই খাঁটনি বাঁচিয়ে দিয়েছিস। ঘরের কাছেই যে ঘর সেটা বুঝতে পারিনি। আসলে তোদের সম্পর্ক দেখে কেউ ভাবতেও পারবেনা এসব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন ঘটেছে তখন এটা ওপরওয়ালার বর ছাড়া আমার কাছে আর কিছু না। অন্ততঃ আমি নিশ্চিন্ত যে রিতু একটা সুন্দর আর ভালো ভুল করেছে। আমার মাথার ওপরে চাপ নেই যে এর ভবিষ্যৎ কি হবে। আমি তোদের মাঝখানে থাকবো না, তোরা বোঝাপরা করে নিস পরে যে কিভাবে থাকবি তোরা। কিন্তু অভি একটা অনুরোধ রাখবি এই লোকটার?’
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই সুবিরদা বলে উঠলো ‘রিতুকে একটা বাচ্চা দিবি, আমরা ওকে খুব আদরে রাখবো রে, একবার ও কনসিভ করলে আমি আর তোকে আটকে রাখবোনা। তারপর তোর ইচ্ছে। কিন্তু রিতু আর তুই চাইলে আমি কোন বাঁধা দেবোনা; পুরোপুরি তোদের ইচ্ছা। তুই তখন ভেবে দেখিস আমাদের মত নোংরা লোকজনের সাথে সম্পর্ক রাখবি কিনা, আমি আর জোর করবো না, তোকেও না রিতুকেও না। প্লিজ অভি, শুরু যখন হয়েছে, এটাকে সুন্দর ভাবে শেষ কর ভাই আমার। চাইলে আমি তোদের মাঝ থেকে সরে যাবো। মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে জীবনে। আমি আমার মৃত বাবার শপথ খেয়ে বলছি, একটা সন্তান পেলে ও সবথেকে সুখি হবে; সাথে আমিও। সব ভুলে যাবো ও কার ঔরসের সন্তান। ভুল বুঝিস না প্লিজ। আমিও চাই যে ওর কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা খেলে বেড়াক। সারাদিন সেই শিশুটার সাথে ওর খুনশুটি চলতে থাকুক, ওর জীবনটাই বদলে যাবে। ঘরময় সেই শিশুর দাপাদাপিতে এটা সত্যিকারের সংসার হয়ে উঠুক। আমার এই অপুর্নতা যে বিরাট একটা শুন্য সৃষ্টি করেছে রে আমাদের মধ্যে। তুই পারবিনা আমাদের এইটুকু দিতে? শালা ঘরের কাছেই শিশির বিন্দু দেখলাম না আর আকাশ পাতাল ফুরে ফেললাম। আমি ওকে সুখি দেখতে চাইরে। ওরও চাহিদা আছে। কতদিন লুকাবে ও। আমি তো চাইই...।’
সুবিরদা বলে চলেছে না না কথা। আমি অপলকে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। কেমন যেন মনে হচ্ছে, সুবিরদার মুখটা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এটা সত্যি সুবিরদা তো? মনে হচ্ছে বহুদুর থেকে ওর কথাগুলো ভেসে আসছে। নখদন্তহীন এক অক্ষম পুরুষ সিংহের হাহাকারে ভেসে আসছে বহুদুর থেকে। মানুষ আর কি কি কারনে অসহায় হয়। রিতু বৌদির মাকে রিতুর প্রথম বর ভোগ করে, টাকার হিসেব নিকেশের বিনিময়ে। কত অসহায় ছিলো রিতুর বাবা সেই সময়।
সুবিরদার তো কোন অভাব নেই। যেটার অভাব সেটা তো কোটি টাকা দিয়েও পূরণ হবেনা। সেই অভাব পুর্ন করতে সে আজ তার ভালোবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করছে না। কিরকম মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে সুবিরদা চলেছে এতদিন।
একটানা কথা বলতে বলতে সুবিরদার গলায় সিগেরেটের ধোয়া আটকে গেলো তার থেকে কাশতে কাশতে সুবিরদা হঠাৎ করে বমি করতে শুরু করলো। প্রচণ্ড ড্রিঙ্ক করেছে আজকে। পারে নাকি সহ্য করতে? তারওপর এরকম একটা পরিস্থিতি যার জীবনে, তার ওপর যে কি ঝড় চলে, সেটা যার হয় সেই বোঝে। আমি আপনি বুঝতে পারবোনা।
সত্যি আমি অনেক বড় হয়ে গেলাম এই দুদিনে। সবাই কেমন দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছে আমাকে। সবাই ভাবছে যেন আমার কত চওড়া কাঁধ দায়িত্ব নেওয়ার মত।
মেয়েটা আমার হাত চেপে ধরে আমাকে কেবিনে ঢুকতে বারন করলো। তারপর আমাকে যা বললো তাতে আমার রক্ত গরম হয়ে উঠলো।
এই লোকটা মেয়েটার বাবার বন্ধু। মেয়েটার বাবা ব্যাবসার কারনে এর থেকে অনেক টাকা ধার নিয়েছিলো। ঠিক মত শোধ না করতে পারাতে এর মার ওপর অত্যাচার চালায় এই লোকটা। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েটার মা আর বাবা দুজনেই আত্মহত্যা করে। তারপরে বাইরে পরাশুনা করা এই মেয়ে যখন গ্রামে ফেরে তখন পঞ্চায়েত কে হাত করে এই মেয়েটাকে জোর করে বিয়ে করে এই লোকটা। এখন উদ্দেশ্য যে বম্বে নিয়ে গিয়ে একে ব্যবহার করে পয়সা কামানো। মানে একে হাই ক্লাস প্রস্টিট্যুটে পরিনত করা।
বলতে বলতে মেয়েটা কেঁদে দিলো।
কেন জানিনা আমার মন বললো, এর ওপর আমার অনেক দায়িত্ব আছে। এই ভাবে আমি একটা সুন্দর জীবন নষ্ট হোতে দিতে পারিনা। ওর বর যখন ঘুমে ঢলে পরেছে আমি ওকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের ব্যাগ আর ব্যাগেজ নিলাম আর ওর একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে নিলাম।
তারপর ওকে বললাম যদি জীবন চাও তো আমার সাথে আসো। নাহলে সামনেই কেবিন ফিরে যাও। বম্বে পর্যন্ত আমি তোমার সাথে আছি। আর এখন আমার সাথে আসলে, সারাজীবন তোমার সাথে আছি।
এরপর আমি ওকে নিয়ে ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছি। সব জায়গাতেই এই লোকটার দল আমাকে আর ওকে ফলো করেছে। কিন্তু সেরকম কায়দা করে উঠতে পারেনি, কারন আমার কলেজের বন্ধুরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন দায়িত্বে রয়েছে। তাই সময় লাগলেও এই লোকটা আর তার স্যাঙাৎদের কায়দা করতে আমাকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। সম্পুর্ন প্রশাসনিক সমর্থন আমি পেয়েছি।
তারপর ওকে কোলকাতায় নিয়ে এসে মাকে দেখিয়ে ধুমধাম করে বিয়ে করি। হ্যাঁ রিতুই সেই মেয়ে।
কিন্তু আমি নিজে জানতাম না যে আমার শরীর আমাকে এরকম ধোঁকা দেবে। হ্যাঁ রিতুকে প্রথম বার নিজের মত করে পেতে গিয়ে বুঝলাম আমার সেই ক্ষমতাই নেই। একটা মেয়ের পরম আরাধ্য যে ফুলসজ্জার দিন স্বামির থেকে যৌনসুখ পাওয়া; সেটা আর ওর হয়নি। ছোটবেলার এক দুরারোগ্য রোগের ওষুধে এমন কিছু ছিলো যে সেটা আমার পুরুষত্ব কেড়ে নিয়েছিলো।
রিতু অনেক চেষ্টা করেছে। দিনের পর দিন। ডাক্তার বদ্যি কম করিনি আমরা। এমনকি বিদেশে গিয়েও আমি ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু কোন ফল পায়নি। রিতু রোজ চেষ্টা করে যায়, ওর সাধের তানপুরা যেন সুরে বাজে। কিন্তু যে তানপুরায় তারই ছিরে গেছে সে আর কি বাজবে।
কিন্তু ও আমাকে ভগবান বলে মনে করে। আমার সেটাই সবথেকে খারাপ লাগে। আমি তো মানুষের কর্তব্য করেছি প্রথমে। তার আগে তো ওকে আমি ভালবেসেছি। ওকে কোনো দয়া তো করিনি। তাহলে ও কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। মেয়েটাকে এটাই আমি বোঝাতে পারিনা।
আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি, এমন কি বিদেশে নিয়ে গিয়ে ওকে কৃত্তিম উপায়ে গর্ভদান করতে চেয়েছি। ও কিন্তু রাজী হয়নি। তুই বিশ্বাস করবিনা, আর আমাকে কি ভাববি জানিনা, তুই আমার ভাইয়ের মত, তাও আমার তোকে বলতে আপত্তি বা লজ্জা কোনোটাই নেই যে আমি রিতুকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে জোর করে আমি মেল গিগোলোর হাতে তুলে দিয়েছিলাম, যাতে ও শরীরসুখটা পায়। ওকে বুঝিয়েছিলাম যে আমি এতেই সুখি। সুখ করে নাও মন ভরে, নিজের সমাজ, আপনজন, সবার থেকে দূরে মনে ভরে সুখ নিয়ে নাও, কেউ তোমাকে বারন করবেনা। কেউ জিজ্ঞেস করবেনা। এখানকার সমাজ এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। তুমি সুখি হলেই আমি সুখি। পাশের ঘরে আমি তৃপ্তি নিয়ে বসে থাকবো যে তুমি সুখ পাচ্ছো। আমি সব থেকে সুখি হবো তোমার কামতৃপ্ত লাজুক চাহুনিতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
ও সুখি না হলে আমি কি করে সুখি হোই তুইই বল। ডলার আর ইউরোর বন্যা বইয়ে দিয়ে কয়েকবার ছেলে ভাড়া করে এনেছি তাদের পেডিগ্রী দেখে। কিন্তু একা ঘরেও পরপুরুষের সামনেও ও চুপ করে বসে ছিলো, ছেলেটাকে ছুতেও দেয়নি ওর শরীর। বারবার আমাকে প্রমিস করে যে এবার বিদেশে গিয়ে ও এটা করবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ও পেরে ওঠেনা।
আজকে যখন আমার বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেলেছে ও তোর সাথে ঘটনাটা বলতে গিয়ে আমি তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা যে আমি কি স্বস্তি পেয়েছি। অবশেষে, অবশেষে ও পেরেছে। সেটা নিজের থেকেই। আমি ওকে বুকে জড়িয়ে অনেক আদর করেছি। বুঝিয়েছি যে যা করেছে ঠিক করেছে। বার বার করে আমার কাছে ক্ষমা চাইছে, যে ওর ভুল হয়ে গেছে, ওর ভুল হয়ে গেছে। কি ভুল করেছে বলতো ও। আরে ও তো তোর আমার মতই রক্তমাংসের মানুষ। যার মন আছে, যার শরীর আছে। যার শরীরে কামনা, বাসনা, লালসা, যৌবন ইচ্ছে এসব জাগে।
বিশ্বাস কর আমার মনে প্রথম প্রথম ভয় ছিলো এরকম পুর্নযৌবনা নাড়ি কতদিন নিজেকে সামলে রাখতে পারবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা, নিশ্চয় ও ওর মত পথে নিজের সুখ খুজে নেবে। সেটা আমাকে লুকিয়েই। আমার বুক কাঁপতো ভয়ে। যদি ভুল হাতে পরে। যদি যৌবনের জ্বালা মেটাতে গিয়ে ও ভুল পাত্রে নিজেকে দান করে তাহলে কি হবে। কেউ কি অতৃপ্ত নাড়ির মনের কথা জানার চেষ্টা করবে ভোগ করার সময়। কেউ কি সুযোগ নেবেনা? পরবর্তিকালে কি ওর বিপদ হবেনা এরকম দৈহিক সম্পর্কে?
কিন্তু আজ বারো বছর ওর সাথে থেকে আমার মনে হয়েছে ও যোগিনী। কামজয়ী। কিন্তু আমি স্বস্তি পেতাম না এতে। আমার মনে হোতো আমার জন্যেই ও এই ত্যাগ করছে। আরে বাবা, আমি নিজে যেখানে ওকে পরপুরুষের সাথে সম্ভোগে সন্মতি দিচ্ছি, সেখানে ও কেন তা গ্রহন করছেনা, আমি বুঝতে পারতাম না। ও ভাবে যে আমি এসব বলার জন্যে বলি। মন থেকে কি কেউ এসব চাইতে পারে। কোনো পুরুষ মানুষ কি চিন্তা করতে পারে যে তার বিবাহিতা স্ত্রী পরপুরুষের সাথে বেহায়ার মত যৌনসুখ নিচ্ছে। আরে আমার যদি তোকে দেওয়ার ক্ষমতা থাকতো তাহলে কি আমি তোকে এসবের ঠেলে দিতাম। বরঞ্চ আগলে রাখতাম। ও যদি আমার জায়গায় থাকতো তাহলে ও কি করতো। আগেকার দিনে হোতোনা যে বৌ বাঁজা, তাই স্বামির জন্যে আরেকবার বিয়ের ব্যাবস্থা করছে যাতে সংসারে সন্তান আসে।
আরে অভি আমি তো ওকে ভালোবেসেছি রে। তুই বল তুই আমার জায়গায় থাকলে কি করতি। তুই চাইতিনা যে তোর ভালোবাসার লোকটা সুখে থাকুক। দুনিয়ার কোন কিছু থেকে সে যেন বঞ্চিত না হয়। আরে শালা বিবাহিত জীবনের দুটো প্রাথমিক সর্ত হোলো চোদন আর ভোজন। দুদিকের ফুটোই সময়ে সময়ে ভরে দিতে হবে। সেখানে আমি শালা নপুংসক, আমি কি পারি এরকম উগ্রযৌবনা নাড়িকে তৃপ্ত করতে? মুখে যতই বলুক না কেন, আমি ওর দেবতা। আমি ওর সবকিছু। তাহলে আজকে কি ভাবে হোলো?
আমার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। সুবিরদা বারবার আমার আর ওর বৌয়ের কথাটা টেনে আনছে বলে। এখনো আমার মনে পরছেনা যে এত কিছু কি ভাবে হয়ে গেলো। এত কিছু করলাম অথচ নিজের কোন হুঁশ ছিলো না। সত্যিটা কি আমি জানি। কিন্তু আমি কি পারবো এই আহত লোকটাকে সেটা বোঝাতে। সে কি বিশ্বাস করবে। আজকে এই মুহূর্তে সে হয়তো আমাকে ভাবছে পাপ্পুর মতই কোন লোফার, নাড়িমাংস লোভী। কিন্তু মেরে ফাটিয়ে দিতে পারছেনা, নিজের এই গুপ্ত রোগের জন্যে। একটা পুরুষ সত্যি অসহায় এই অঙ্গ ছাড়া। জীবনে এ আমার নতুন উপলব্ধি। অন্ধ, কালা, বোবা, এদের মতই এও এক অস্বাভাবিকতা, পঙ্গুত্ব। দেখতে তুমি পুরুষ মানুষ হওনা কেন, তোমার যদি পুরুষত্ব না থাকে, এক নাড়ির কামনার জ্বালা মেটানোর ব্যাপারে যদি তুমি অসহায় হও তাহলে কিসের পুরুষ তুমি। ভগবানকে অসংখ্য ধন্যবাদ, কোটী কোটী প্রনাম তার পায়ে যে আমার শরীরে কোনো ত্রুটি নেই।
সত্যি, মানুষের জীবন কত জটীল হয়। এর আগে এরকম ঘটনা শুনেছি নাদু কাকার, মানে বিজয়ার বাবার। কিন্তু সুবিরদার স্ট্যান্ডার্ড আর নাদু কাকার স্ট্যান্ডার্ড অনেক হেরফের। সুবিরদা দেশের এক মহারত্ন কোম্পানির সিইও। চলনে বলনে গাম্ভির্যে, আভিযাত্যে যে সকলের ঈর্ষার পাত্র, কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে কতটা ফাঁপা। নাদু কাকার না আছে চাল না চুলো। তাই বিজয়ার মা মানে নাদু কাকার বৌ অনায়াসে নিজের শরীর সওদা করতে পারে। তার কামনা, লালসার বহিঃর্প্রকাশ অতি প্রকট। নিজেকে সস্তা করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে শরীরের খিদে মেটাণোর জন্যে। তার স্বামির দায়িত্ব পাপ্পুর মত ছেলেরা যৌথ ভাবে পালন করে। সহজেই পুরুষেরা ধেয়ে যায় সেই দিকে। নিজেকে পুরুষের মনোরঞ্জনকারিনি হিসেবে তুলে ধরতে পারে সে।
কিন্তু রিতু বোউদির মত সম্ভ্রান্ত মহিলা কি করে নিজেকে বিলিয়ে দেবে? সেতো মক্ষিরানির মত চালচলন দেখাতে পারেনা। তার চালচলন অতি সম্ভ্রান্ত। সন্মানের গাম্ভির্যে, কেউ সাহস পাবেনা, কুদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাতে। মনে মনেও না। সুবিরদার পরিবারের প্রভাব না। এটা লালনপালন, শিক্ষাদিক্ষা আর রক্তের ব্যাপার।
শুধু সামান্য একটা অঙ্গের ত্রুটির জন্যে সুবিরদা জীবনের কত সুখ থেকে বঞ্চিত। মানুষের মানসিক অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছুলে মানুষ নিজের বিবাহিতা স্ত্রীকে পরপুরুষের সাথে শুতে দিতে চায়। তাতে সে সুখ পায়। না, আমি গুলিয়ে ফেলছিনা। হাবলু আর সুবিরদাকে একই লাইনে রাখলে সুবিরদার চুড়ান্ত অপমান হবে। হাবলুদের অস্পৃশ্য আত্মা সুখি হবে তাহলে, সুবিরদার মত মানুষের সাথে ওদের নাম একসাথে উচ্চারিত হলে। কিন্তু আমি ভাবছি, মুখে সুখি হবে বললেও, সুবিরদার কি একটা হাহাকার ভেসে উঠছেনা কথাবার্তায়।
আমি সুবিরদার পা ধরে ফেললাম। ওর এই দুর্বল মুহুর্তে নিজের দোষটা স্বীকার করে নিয়ে নিজে মুক্তি পেতে চাই। হ্যাঁ ধান্দাবাজিই করছি এই অসহায় মানুষটার সাথে। কিন্তু কি করবো। এরপরে আমি সুযোগ নাও পেতে পারি। কোনদিনই হয়তো ক্ষমা চাইতে পারবোনা, এই মানুষটার কাছে। নিজের ভিতরেই দগ্ধে দগ্ধে মরবো। যে এতদিন আমার আদর্শ ছিলো, তার এইরকম দুর্বল দেখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তার থেকেও কষ্ট হচ্ছে যে রিতু বৌদি আমাকে কি ভাবছে সেই ভেবে। এত সুন্দর আমাদের সম্পর্কটা, কি ভাবে নষ্ট করে দিলাম আমি নিজের হাতে।
সুবিরদা খেয়াল করতে পারেনি যে আমি ওর পা ধরেছি। আমি সুবিরদাকে বললাম ‘ বিশ্বাস করো আমি কিছু ভেবে উঠতে পারছিনা, কি ভাবে এসব হয়ে গেলো, আমি ভাবতে পারছিনা যে আমি এখনও তোমার সামনে বসে আছি তাও সুস্থ শরীরে।’
সুবিরদা সিগেরেটের ধোয়াতে রিং ছেড়ে আমার মাথায় হাত দিয়ে চুল হাল্কা করে মুঠি করে ধরলো। জড়ানো গলায় আমাকে বললো ‘এতক্ষন আমি তোকে কি বললাম আমি কি হাওয়ায় কথা বলছিলাম?’ সুবিরদার গলায় ক্ষোভ আর অভিমান দুইই।
আমি চুপ করে গেলাম।
সুবিরদা রাগত গলায় বলে চলেছে, ‘বুকের মধ্যে জমিয়ে রেখেছিলাম এই কথাগুলো এতদিন। নিজের নপুংশকতার কথা বলার জন্যে যে সাহসটা দরকার সেটা আমার মধ্যে ছিলো না। কিন্তু আমি জানতাম, রিতুর জন্যে কারো না কারো কাছে আমাকে এই দুর্বলতার কথা স্বীকার করতেই হবে। আজ নয় কাল। আমি ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না আর। নিজের দুর্বলতা দেখিয়ে অন্য কারো কাছে রিতুর জন্যে সুখ ভিক্ষা চাইবো ভেবেছিলাম। আর যখন আজ তোকে এই কথাগুলো বললাম তুই সেগুলো মন দিয়ে শুনলিই না।’
‘আমি শুনেছি দাদা, আমি শুনেছি’
‘শুনেছিস কিন্তু মন দিয়ে না। তুই কি ভাবছিস আমি মুখেই বলছি এগুলো, এগুলো আমার মনের কথা না? ভুল ভাবছিস তুই, তাহলে তুই আমাকে চিনিস না।’
‘দেখো সুবিরদা আমি অন্যায় করেছি আমার মনে হয়েছে আমার শাস্তি পাওয়া দরকার তাই আমি তোমার কাছে এসেছি, তুমি যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেবো। মানুষ ফাঁসিতে যাওয়ার আগেও তো কিছু বলতে চায় তো আমি বলে নিজেকে হাল্কা করতে চাইলাম। তুমি কি ভাবে নেবে তোমার ব্যাপার।’
‘এই জন্যেই আমি তোকে ডেকেছি আর এত কথা বললাম এতক্ষন। পৃথিবিতে আর কাউকেই হয়তো আমি এই কথাগুলো বলতে পারতাম না। সত্যি বলতে কি তোর কথা আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। ভেবেছিলাম রিতুকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দেবো যাতে ও আমি ছাড়া আরেকজনকে বেছে নেয়। কিন্তু আমার ভয় ছিলো, যে সোনাদার ছেলের (পাপ্পু) মত কারো পাল্লায় না পরে যায় ভুল করে। ডুবন্ত মানুষ তো খড়কুটো পেলে সেটাই আঁকড়ে ধরে। কিন্তু তুই আমাকে নিশ্চিন্ত করেছিস। তোরা আমার সেই খাঁটনি বাঁচিয়ে দিয়েছিস। ঘরের কাছেই যে ঘর সেটা বুঝতে পারিনি। আসলে তোদের সম্পর্ক দেখে কেউ ভাবতেও পারবেনা এসব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন ঘটেছে তখন এটা ওপরওয়ালার বর ছাড়া আমার কাছে আর কিছু না। অন্ততঃ আমি নিশ্চিন্ত যে রিতু একটা সুন্দর আর ভালো ভুল করেছে। আমার মাথার ওপরে চাপ নেই যে এর ভবিষ্যৎ কি হবে। আমি তোদের মাঝখানে থাকবো না, তোরা বোঝাপরা করে নিস পরে যে কিভাবে থাকবি তোরা। কিন্তু অভি একটা অনুরোধ রাখবি এই লোকটার?’
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই সুবিরদা বলে উঠলো ‘রিতুকে একটা বাচ্চা দিবি, আমরা ওকে খুব আদরে রাখবো রে, একবার ও কনসিভ করলে আমি আর তোকে আটকে রাখবোনা। তারপর তোর ইচ্ছে। কিন্তু রিতু আর তুই চাইলে আমি কোন বাঁধা দেবোনা; পুরোপুরি তোদের ইচ্ছা। তুই তখন ভেবে দেখিস আমাদের মত নোংরা লোকজনের সাথে সম্পর্ক রাখবি কিনা, আমি আর জোর করবো না, তোকেও না রিতুকেও না। প্লিজ অভি, শুরু যখন হয়েছে, এটাকে সুন্দর ভাবে শেষ কর ভাই আমার। চাইলে আমি তোদের মাঝ থেকে সরে যাবো। মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে জীবনে। আমি আমার মৃত বাবার শপথ খেয়ে বলছি, একটা সন্তান পেলে ও সবথেকে সুখি হবে; সাথে আমিও। সব ভুলে যাবো ও কার ঔরসের সন্তান। ভুল বুঝিস না প্লিজ। আমিও চাই যে ওর কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা খেলে বেড়াক। সারাদিন সেই শিশুটার সাথে ওর খুনশুটি চলতে থাকুক, ওর জীবনটাই বদলে যাবে। ঘরময় সেই শিশুর দাপাদাপিতে এটা সত্যিকারের সংসার হয়ে উঠুক। আমার এই অপুর্নতা যে বিরাট একটা শুন্য সৃষ্টি করেছে রে আমাদের মধ্যে। তুই পারবিনা আমাদের এইটুকু দিতে? শালা ঘরের কাছেই শিশির বিন্দু দেখলাম না আর আকাশ পাতাল ফুরে ফেললাম। আমি ওকে সুখি দেখতে চাইরে। ওরও চাহিদা আছে। কতদিন লুকাবে ও। আমি তো চাইই...।’
সুবিরদা বলে চলেছে না না কথা। আমি অপলকে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। কেমন যেন মনে হচ্ছে, সুবিরদার মুখটা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এটা সত্যি সুবিরদা তো? মনে হচ্ছে বহুদুর থেকে ওর কথাগুলো ভেসে আসছে। নখদন্তহীন এক অক্ষম পুরুষ সিংহের হাহাকারে ভেসে আসছে বহুদুর থেকে। মানুষ আর কি কি কারনে অসহায় হয়। রিতু বৌদির মাকে রিতুর প্রথম বর ভোগ করে, টাকার হিসেব নিকেশের বিনিময়ে। কত অসহায় ছিলো রিতুর বাবা সেই সময়।
সুবিরদার তো কোন অভাব নেই। যেটার অভাব সেটা তো কোটি টাকা দিয়েও পূরণ হবেনা। সেই অভাব পুর্ন করতে সে আজ তার ভালোবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করছে না। কিরকম মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে সুবিরদা চলেছে এতদিন।
একটানা কথা বলতে বলতে সুবিরদার গলায় সিগেরেটের ধোয়া আটকে গেলো তার থেকে কাশতে কাশতে সুবিরদা হঠাৎ করে বমি করতে শুরু করলো। প্রচণ্ড ড্রিঙ্ক করেছে আজকে। পারে নাকি সহ্য করতে? তারওপর এরকম একটা পরিস্থিতি যার জীবনে, তার ওপর যে কি ঝড় চলে, সেটা যার হয় সেই বোঝে। আমি আপনি বুঝতে পারবোনা।
সত্যি আমি অনেক বড় হয়ে গেলাম এই দুদিনে। সবাই কেমন দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছে আমাকে। সবাই ভাবছে যেন আমার কত চওড়া কাঁধ দায়িত্ব নেওয়ার মত।