29-03-2025, 02:39 PM
শোনারপুরের ছায়া (ছায়ার আগমন)
দিনটা শান্ত। রাজবাড়ির পাশের বাগানে রণো আর অরিজিৎ কিছুক্ষণ কাটাচ্ছে। রণো একটা পুরোনো গাছের নীচে দৌড়াচ্ছে, তার হাতে একটা কাঠের ডাল। “বাবা, দেখো, আমি এটা দিয়ে তলোয়ার বানাব!” অরিজিৎ হাসে, “ঠিক আছে, সাবধানে।” বাতাসে গাছের পাতা নড়ছে, আর দূরে রাজবাড়ির জানালাগুলো নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে।
ওপরের ঘরে শ্যামলী কাজে ব্যস্ত। সে একটা পুরোনো আলমারি খুলে কাপড় গোছাচ্ছে। তার হাতে একটা শাড়ি—ব্রজেন্দ্রর দেওয়া, অনেক বছর আগের। সে একটু থমকে যায়, চোখে একটা স্মৃতির ছায়া পড়ে। বাইরে থেকে রণোর হাসির শব্দ ভেসে আসে, আর সে আবার কাজে মন দেয়।
নীচে রান্নাঘরে মিতালি একা। সে একটা মাটির হাঁড়িতে মাছের ঝোল রাঁধছে। আগুনের ধোঁয়া তার চোখে লাগছে, সে হাত দিয়ে মুছে। তার শাড়ির আঁচল কাঁধ থেকে সরে গেছে, ফর্সা গলা আর স্তনের আভাস দেখা যাচ্ছে। ঘরে একটা শান্তি, কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা বদলে যায়।
একটা ছায়া তার দিকে আসছে—ধীরে ধীরে। রান্নাঘরের দরজার কাছ থেকে শুরু হয়ে মেঝে বেয়ে এগোচ্ছে। ছায়াটা লম্বা, অস্পষ্ট, যেন কোনো মানুষের নয়। এটা মিতালির পিছনে এসে থেমে যায়। মিতালি কিছু টের পায় না। সে হাঁড়িতে মশলা দিচ্ছে, তার মুখে একটা হালকা হাসি।
হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাওয়া ঢোকে। কোথা থেকে এলো, বোঝা যায় না—জানালা বন্ধ, দরজা অচল। হাওয়াটা মিতালির পায়ের কাছে ঘুরে, তার শাড়ির প্রান্ত নাড়িয়ে ওঠে। তারপর ধীরে ধীরে তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। মিতালির পুরো শরীর কেঁপে ওঠে—একটা শীতল শিহরণ তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছুটে যায়। তার হাত থেমে যায়, চোখে একটা অস্বস্তি।
সে ধীরে ধীরে পিছনে ঘোরে। তার চুল বাতাসে উড়ছে, শাড়ি তার শরীরে লেগে। আর তখনই লক্ষ করা যায়—তার চোখ বদলে গেছে। সেই গভীর কাজল-আঁকা চোখ এখন ফ্যাকাশে, সাদা। যেন কেউ তার ভেতরে বসে আছে। তার মুখ শান্ত, কিন্তু চোখে কিছু নেই—শূন্য, অন্ধকার। সে তাকিয়ে আছে, কিন্তু কার দিকে, বোঝা যায় না।
বাইরে রণোর হাসি থেমে যায়। অরিজিৎ তাকায়, “কী হলো?” রণো বলে, “বাবা, ঠান্ডা লাগছে।” ওপরে শ্যামলী শাড়িটা হাতে ধরে থমকে আছে। আর রান্নাঘরে মিতালি দাঁড়িয়ে—চোখ ফ্যাকাশে, শরীর নিশ্চল।
শোনারপুরের ছায়া (স্বাভাবিকতার মুখোশ)
রান্নাঘরে মিতালি দাঁড়িয়ে, তার চোখ ফ্যাকাশে, শরীর নিশ্চল। ঠান্ডা হাওয়া তার শাড়ির প্রান্ত নাড়াচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। হাওয়া থেমে যায়, ছায়াটা মিলিয়ে যায়। মিতালির চোখে আবার সেই গভীর কাজল-আঁকা আলো ফিরে আসে। সে একটু কেঁপে ওঠে, তার মাথায় একটা হালকা ব্যথা শুরু হয়—যেন কেউ তার মগজে আঙুল দিয়ে টিপছে।
সে চোখ বন্ধ করে হাতটা কপালে রাখে। “কী হলো এটা?” সে ভাবে। তখনই তার নজর পড়ে আগুনের দিকে—হাঁড়ির ঝোল পুড়ে যাচ্ছে। “ও মা!” সে তাড়াতাড়ি এক গ্লাস জল ঢেলে দেয়, আগুনটা নরম হয়। মিতালি আবার রান্নায় মন দেয়, তার হাতে চামচ নড়ছে। কিন্তু তার মনের কোণে একটা অস্বস্তি থেকে যায়—কিছু একটা ঘটেছিল, কিন্তু কী?
বাগানে রণো আর অরিজিৎ খেলছে। রণোর হাসির শব্দ আবার ফিরে এসেছে। “বাবা, এবার আমি জিতব!” সে চিৎকার করে। অরিজিৎ হাসে, “দেখি তোর তলোয়ারের জোর!” বাতাসে গাছের পাতা নড়ছে, সবকিছু স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
ওপরে শ্যামলী তার কাজ শেষ করে। সে শাড়িটা আলমারিতে রেখে দরজা বন্ধ করে। তার পায়ের শব্দ সিঁড়িতে পড়ে—ঠকঠক, ঠকঠক। সে নীচে নামছে, মুখে একটা হালকা হাসি। “বউমা, রান্না কতদূর?” সে ডাকে। মিতালি উত্তর দেয়, “হয়ে এসেছে, মা।” শ্যামলী এগিয়ে আসে, কিন্তু তার চোখে কিছু নেই—সে জানে না রান্নাঘরে কী ঘটে গেছে।
কেউ জানে না। না অরিজিৎ, না রণো, না শ্যামলী। রাজবাড়ির এই ঘরে একটা বিশাল পরিবর্তন হয়ে গেছে—কিছু একটা জেগে উঠেছে, বা কেউ একজন। কিন্তু যারা জানে, তারা তাদের মতো করে হাসছে।
তালাবন্ধ ঘরে ব্রজেন্দ্র শিকলে বাঁধা। তার মাথা নিচু, কিন্তু হঠাৎ সে মাথা তুলে। তার ফ্যাকাশে চোখে একটা চকচকে ভাব, ঠোঁটে একটা হাসি ফোটে—গোপন, অন্ধকার। শিকলটা ঝনঝন করে, যেন তার শরীরে কিছু নড়ে উঠেছে। সে ফিসফিস করে, “এসে গেছে।”
কোথাও কালীচরণ দাঁড়িয়ে। তার হাতে লাঠি, চোখে সেই রহস্যময় আলো। সে একটা দেয়ালের ছায়ায় লুকিয়ে, মুখে একটা হাসি—বিকৃত, থ্রিলিং। তার ইতিহাস কেউ জানে না, কিন্তু তার হাসি বলে—সে সব জানে।
রান্নাঘরে মিতালি হাঁড়ি থেকে ঝোল তুলছে। তার মাথার ব্যথা এখনো আছে, কিন্তু সে কাজে মন দিয়েছে। বাইরে সব স্বাভাবিক। কিন্তু রাজবাড়ির অন্ধকার জানে—কিছু একটা শুরু হয়েছে।
দিনটা শান্ত। রাজবাড়ির পাশের বাগানে রণো আর অরিজিৎ কিছুক্ষণ কাটাচ্ছে। রণো একটা পুরোনো গাছের নীচে দৌড়াচ্ছে, তার হাতে একটা কাঠের ডাল। “বাবা, দেখো, আমি এটা দিয়ে তলোয়ার বানাব!” অরিজিৎ হাসে, “ঠিক আছে, সাবধানে।” বাতাসে গাছের পাতা নড়ছে, আর দূরে রাজবাড়ির জানালাগুলো নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে।
ওপরের ঘরে শ্যামলী কাজে ব্যস্ত। সে একটা পুরোনো আলমারি খুলে কাপড় গোছাচ্ছে। তার হাতে একটা শাড়ি—ব্রজেন্দ্রর দেওয়া, অনেক বছর আগের। সে একটু থমকে যায়, চোখে একটা স্মৃতির ছায়া পড়ে। বাইরে থেকে রণোর হাসির শব্দ ভেসে আসে, আর সে আবার কাজে মন দেয়।
নীচে রান্নাঘরে মিতালি একা। সে একটা মাটির হাঁড়িতে মাছের ঝোল রাঁধছে। আগুনের ধোঁয়া তার চোখে লাগছে, সে হাত দিয়ে মুছে। তার শাড়ির আঁচল কাঁধ থেকে সরে গেছে, ফর্সা গলা আর স্তনের আভাস দেখা যাচ্ছে। ঘরে একটা শান্তি, কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা বদলে যায়।
একটা ছায়া তার দিকে আসছে—ধীরে ধীরে। রান্নাঘরের দরজার কাছ থেকে শুরু হয়ে মেঝে বেয়ে এগোচ্ছে। ছায়াটা লম্বা, অস্পষ্ট, যেন কোনো মানুষের নয়। এটা মিতালির পিছনে এসে থেমে যায়। মিতালি কিছু টের পায় না। সে হাঁড়িতে মশলা দিচ্ছে, তার মুখে একটা হালকা হাসি।
হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাওয়া ঢোকে। কোথা থেকে এলো, বোঝা যায় না—জানালা বন্ধ, দরজা অচল। হাওয়াটা মিতালির পায়ের কাছে ঘুরে, তার শাড়ির প্রান্ত নাড়িয়ে ওঠে। তারপর ধীরে ধীরে তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। মিতালির পুরো শরীর কেঁপে ওঠে—একটা শীতল শিহরণ তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছুটে যায়। তার হাত থেমে যায়, চোখে একটা অস্বস্তি।
সে ধীরে ধীরে পিছনে ঘোরে। তার চুল বাতাসে উড়ছে, শাড়ি তার শরীরে লেগে। আর তখনই লক্ষ করা যায়—তার চোখ বদলে গেছে। সেই গভীর কাজল-আঁকা চোখ এখন ফ্যাকাশে, সাদা। যেন কেউ তার ভেতরে বসে আছে। তার মুখ শান্ত, কিন্তু চোখে কিছু নেই—শূন্য, অন্ধকার। সে তাকিয়ে আছে, কিন্তু কার দিকে, বোঝা যায় না।
বাইরে রণোর হাসি থেমে যায়। অরিজিৎ তাকায়, “কী হলো?” রণো বলে, “বাবা, ঠান্ডা লাগছে।” ওপরে শ্যামলী শাড়িটা হাতে ধরে থমকে আছে। আর রান্নাঘরে মিতালি দাঁড়িয়ে—চোখ ফ্যাকাশে, শরীর নিশ্চল।
শোনারপুরের ছায়া (স্বাভাবিকতার মুখোশ)
রান্নাঘরে মিতালি দাঁড়িয়ে, তার চোখ ফ্যাকাশে, শরীর নিশ্চল। ঠান্ডা হাওয়া তার শাড়ির প্রান্ত নাড়াচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। হাওয়া থেমে যায়, ছায়াটা মিলিয়ে যায়। মিতালির চোখে আবার সেই গভীর কাজল-আঁকা আলো ফিরে আসে। সে একটু কেঁপে ওঠে, তার মাথায় একটা হালকা ব্যথা শুরু হয়—যেন কেউ তার মগজে আঙুল দিয়ে টিপছে।
সে চোখ বন্ধ করে হাতটা কপালে রাখে। “কী হলো এটা?” সে ভাবে। তখনই তার নজর পড়ে আগুনের দিকে—হাঁড়ির ঝোল পুড়ে যাচ্ছে। “ও মা!” সে তাড়াতাড়ি এক গ্লাস জল ঢেলে দেয়, আগুনটা নরম হয়। মিতালি আবার রান্নায় মন দেয়, তার হাতে চামচ নড়ছে। কিন্তু তার মনের কোণে একটা অস্বস্তি থেকে যায়—কিছু একটা ঘটেছিল, কিন্তু কী?
বাগানে রণো আর অরিজিৎ খেলছে। রণোর হাসির শব্দ আবার ফিরে এসেছে। “বাবা, এবার আমি জিতব!” সে চিৎকার করে। অরিজিৎ হাসে, “দেখি তোর তলোয়ারের জোর!” বাতাসে গাছের পাতা নড়ছে, সবকিছু স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
ওপরে শ্যামলী তার কাজ শেষ করে। সে শাড়িটা আলমারিতে রেখে দরজা বন্ধ করে। তার পায়ের শব্দ সিঁড়িতে পড়ে—ঠকঠক, ঠকঠক। সে নীচে নামছে, মুখে একটা হালকা হাসি। “বউমা, রান্না কতদূর?” সে ডাকে। মিতালি উত্তর দেয়, “হয়ে এসেছে, মা।” শ্যামলী এগিয়ে আসে, কিন্তু তার চোখে কিছু নেই—সে জানে না রান্নাঘরে কী ঘটে গেছে।
কেউ জানে না। না অরিজিৎ, না রণো, না শ্যামলী। রাজবাড়ির এই ঘরে একটা বিশাল পরিবর্তন হয়ে গেছে—কিছু একটা জেগে উঠেছে, বা কেউ একজন। কিন্তু যারা জানে, তারা তাদের মতো করে হাসছে।
তালাবন্ধ ঘরে ব্রজেন্দ্র শিকলে বাঁধা। তার মাথা নিচু, কিন্তু হঠাৎ সে মাথা তুলে। তার ফ্যাকাশে চোখে একটা চকচকে ভাব, ঠোঁটে একটা হাসি ফোটে—গোপন, অন্ধকার। শিকলটা ঝনঝন করে, যেন তার শরীরে কিছু নড়ে উঠেছে। সে ফিসফিস করে, “এসে গেছে।”
কোথাও কালীচরণ দাঁড়িয়ে। তার হাতে লাঠি, চোখে সেই রহস্যময় আলো। সে একটা দেয়ালের ছায়ায় লুকিয়ে, মুখে একটা হাসি—বিকৃত, থ্রিলিং। তার ইতিহাস কেউ জানে না, কিন্তু তার হাসি বলে—সে সব জানে।
রান্নাঘরে মিতালি হাঁড়ি থেকে ঝোল তুলছে। তার মাথার ব্যথা এখনো আছে, কিন্তু সে কাজে মন দিয়েছে। বাইরে সব স্বাভাবিক। কিন্তু রাজবাড়ির অন্ধকার জানে—কিছু একটা শুরু হয়েছে।