28-03-2025, 11:05 AM
(This post was last modified: 28-03-2025, 08:28 PM by Mamun@. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
খন্ড ১৪
'''''''''''''''''''''''
– খাসা একটা মাল জুটিয়েছিস বটে!
– কিন্তু বাচ্চাটার কি করবো বস?
– চুপচাপ পরে আছে পরে থাকতে দে না! মাগীকে বশে আনতে কাজে লাগবে!
– শালা অনেক খেল দেখিয়েছে! এবার ওর বৌদিকে নিয়ে আমরা খেলবো হা! হা! হা!
পাঁচটি যুবককে মধ্যে এই রূপ কথা হচ্ছিল অচেতন মেঘনাকে গাড়ি থেকে নামাতে নামাতে। তারা গত দু'দিন যাবত মেঘনাকে নজরে নজরে রেখেছে। আর আজ যখন মেঘনা বনের মাঝে একা হাটছিল কাঁদতে কাঁদতে। তখনি তারা থাবা বসানোর মোক্ষম সুযোগটা পায়। তবে কি ঘটে ছিল? কিভাবে ও কেন? তা জানতে আমাদের অল্প পেছনে যেতে হবে......
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ফয়সালের জ্ঞান যখন ফিরলো তখন সে চোখ খুলেই সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে দেখলো ফারুক মেঘনাকে সপাটে এখানা চড় বসিয়ে দিয়েছে। মেঘনা আগে থেকেই কাঁদছিল তা তাঁর কন্ঠস্বরেই ধরা পর। এবার সে মাটিতে পরে এক হাতে স্বামীর পা জরিয়ে ধরলো।
ফয়সাল পরে ছিল বালিও ওপরে বড় একটা পাথরের পাশে। সে একবার পাথরে হাত ঠেকিয়ে ওঠার চেষ্টা করলো। কিন্তু তৎক্ষণাৎ মাথাটা কেমন করে উঠলো তাঁর। পাথরটা দুহাতে আঁকড়ে পতন সামলে নিল সে। তারপর নিজেকে ধাতস্থ করতে হাতের কাছে নদীর জলের দিকে ফিরে দুপা এগিয়ে দুহাত ভরে নাক মুখে জল ছিটালো।
অপর পাশের উত্তেজিত কথা বার্তা তাঁর কানে এলেও সে ঠিক বুঝতে পারলো না কিছুই। তাঁর মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে যেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করার ক্ষমতা এই মুহূর্তে হয়ে আছে ভোঁতা। কপালে হাত দিতেই সে অনুভব করলো তীব্র যন্ত্রণা। তখন মনে পরলো ফারুকের ঘুষি খেয়ে সে ঘুরে পরেছিল একখানি পাথরের ওপরে। কিন্তু তখনও জ্ঞান ছিল তাঁর। তবে সে জ্ঞান হাড়ালো কিসে? কিছুতেই মনে পরছে না যে!
এই সব ভাবতে ভাবতে নিজেকে সামলে যখন সে পেছনে ফিরলো, তখন সেখানে মেঘনা নেই ! ফারুক এগুছে তাবুর দিকে। ফয়সাল আর কিছুই না ভেবে ছুটে গেল ভাইয়ের কাছে। পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই ফুসে উঠে ঘুরে দাড়ালো ফারুক। পরক্ষণেই দুহাতে জোড়ালো ধাক্কায় ছোট ভাইকে সরিয়ে দিল দূরে। তবে এবারে ফয়সাল প্রস্তুত ছিল, তাই ধাক্কা খেয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বললে,
– বৌমণি কোথায় ভাই? কি করে ছিস তুই?
– আমায় ভাই বলতে তোর লজ্জা করে নেমখারাম!
ফারুকের রাগ এখনো কমেনি। তাঁর মুখের ভাব দেখলেই তা বোঝা চলে। তবে এই মুহূর্তে প্রথমে জানা দরকার মেঘনা কোথায়।
– তুই আমায় যা বলবি বলিস,যত মারার মারিস, কিন্তু আগে বল বৌমণি কোথায়?
ফারুক নিশ্চুপ ভাবে দাড়িয়ে। এই আবছা অন্ধকারেও ফয়সাল বেশ বুঝলো ফারুকের রাগ আরও চরমে উঠছে। তবে এবার আর মারপিট নয়। ফারুক ঘুরে দাঁড়িয়ে হাটা লাগালো, আর একবারও ফিরে দেখলো না পেছন পানে।
অবস্থায় পরিপ্রেক্ষিতে আর ভাইকে ডাকা চলে না বুঝে ফয়সার মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ঢুকলো বনে। ভাগ্যক্রমে সকালের বৃষ্টিতে মাটি কাদাময়। মেঘনার জুতোর ছাপ পরেছে তাতে। ফয়সালের বিশেষ ভাবান্তর হলো না। ঘটনার আকস্মিকতায় ও অপমানের মেঘনা বনের ভেতর পালালেও বেশি দূর সে যাবে না। সমস্যা থেকে পালানো কিংবা অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করার মতো দূর্বলতা মেঘনার মধ্যে নেই বলেই তাঁর ধারণা। থাকলে তিন বছর আগেই সে মরে যেত না কি! তবে তাকে অবাক করে খানিক দূর থেকে ভেসে আসা অস্ফুট আর্তনাদ! গলা মেঘনার এতে সন্দেহ নেই। ফয়সাল দ্রুত বেগে সেদিকে ছুটলো। তবে সে যখন বড় রাস্তায় উঠলো ততক্ষণে একটি সাদা গাড়িতে মেঘনাকে তোলা হয়ে গিয়েছে। গাড়ি ছেড়ে দেবার আগে ফয়সাল একজনকে দেখলো ও চিনলো বটে,তবে দৌড়ে কি আর গাড়ির নাগাল পাওয়া সম্ভব?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মেঘনার যখন জ্ঞান ফিরলো— তখন সে একটি বড় ঘরের ভেতরে খড়ের গাদায় শুয়ে। সম্বিত ফিরতেই প্রথম সে খুঁজলো খুকি কে। কিন্তু কোথায় খুকি? চারপাশে চোখ বুলিয়েই তার মনে পরলো সবটা। স্বামীর ভৎর্সনা ও অপমানের সবটা মাথায় করে মেঘনা ঢুকেছিল বনে। তবে পালিয়ে যাওয়া তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না,এই শুধু অসহায় লজ্জিত নারীর খানিক আড়াল পাবার চেষ্টা। কিন্তু বনের ভেতরের থেকে থেকে তখন শুধু স্বামীর মুখের কথাগুলো কানে বাজছিল তার। তারপর আচমকা অচেনা একজন লোক দেখে আঁতকে উঠেছিল সে। তবে ভালো মতো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে একটা হাত চেপে ধরলো তাঁর মুখ। এরপর সব অন্ধকার। তাঁর এখনোও মনে পরে সে খুকিকে জড়িয়ে ছিল তখনো। তবে কি? না না তাকি করে হয়!
মেঘনা পাগলীন মতো "খুকি" "খুকি" বলে চিৎকার করতে করতে আঁছড়ে পরলো বন্ধ কাঠের দরজার ওপড়ে। কিন্তু আলোকোজ্জ্বল এই ঘরের বাইরে তখন চলছে মদপানের আসর। বন্দিনী মেঘনার ঘরটির বাইরেই একটি টেবিলে শুয়েছিল খুকি। তার চারপাশে পাঁচ জন লোক তখন মদের গ্লাস ও সিগারেট হাতে আলোচনা করছে নিজেদের মধ্যে। কেউ কেউ বন্দিনীর আর্তচিৎকার শুনে পুলকিত হয়ে হাসছিল আপন মনে।
অপরদিকে মেঘনার কান্না ভেজা করুণ কন্ঠস্বর বন্ধ ঘরে ঘুরপাক খেয়ে যেন তাঁকেই করছে উপহাস। একি তার পাপেরই ফল। সেই ত এতদিন ধরে ধোঁকা দিয়েছে স্বামীকে! না জানি কত মিথ্যা বলেছে গত তিনটি বছর ধরে! তবেকি এই তার শাস্তি? কিন্তু সে মন থেকে তো করেনি কিছুই, যা করেছে তা নিজের সম্মান বাঁচাতে,নিজের সংসার কে টিকিয়ে রাখতে। এর পরেও যদি স্বামী তাকে অবিশ্বাস করে ত্যাগ করে তবে করুক! কিন্তু ঈশ্বর জানে, খোকা- খুকি ছাড়া তার পক্ষে বেঁচে থাকাই যে অসম্ভব। তাঁর পাপের শাস্তি অবুঝ শিশু কেন পাবে?
মেঘনার আর্তনাদ বাড়লো। হয়তো তাই শুনে খুলে গেল কাঠের দরজা। ঘরে ঢুকলো পাঁচ জন বখাটে যুবক। তাঁর মধ্যে যে সবচেয়ে লম্বা। তাঁর কোলে খুকি কাঁদছে তারস্বরে। খুকিকে দেখামাত্র মেঘনার দুহাত বাড়িয়ে ছুটে গেল তাকে কোলে নিতে। কিন্তু সে বেচারি এখনো ঠিক ভাবে তার পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারেনি। একের পর এক অমঙ্গল জনক ঘটনা তাঁর বাছবিচার করার ক্ষমতাকেই করেছে এলোমেলো। সে খুকির কাছে পৌঁছানোর আগেই বাকিরা ঘিরে ধরেছে তাঁকে, পেছন থেকে টেনে ধরেছে তাঁর শাড়ির আঁচলটা। মেঘনা প্রাণপণে বুকের আঁচল আঁকড়ে পেছন ফিরে বললে,
– তোমার কারা? ছাড়ো বলছি আমায়! আমার খুকি- আমার খুকিকে দাও আমার কোলে...
তাঁর কথা শেষ হবার আগেই পাশ থেকে হাসতে হাসতে একজন দুহাতে জড়িয়ে ধরলো তাঁকে, অন্য একজন টেনে নিল তাঁর বুকের আঁচল খানি। মেঘনা কান্না ভেজা কন্ঠস্বরে কিছু বলার চেষ্টা করতেই বাধা পেল একটুকরো কাপড়ে। তাঁর চিৎকার আটকাতে কেউ পেছন থেকে বেঁধে দিয়েছে তাঁর মুখ। তবে মাতৃ শক্তি অসাধারণ। অদ্ভুত ও অপার্থিব এক ক্ষমতা তাঁর যে আছে- একথা যুগ যুগ ধরে প্রমাণিত। মেঘনার শরীর দূর্বল। মাথার আঘাত দিয়ে গাল বেয়ে তাজা রক্ত ঝরছে এখনো। কিন্তু এর পরেও দু' তিনজন শক্ত সমর্থ যুবককে ঠেলে ফেলে স্খলিত আঁচল মেঝেতে লুটিয়ে মেঘনা ছুটে গেল দরজার দিকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লম্বা লোকটির হাত থেকে খুকিকে বুকে জরিয়ে নিল সে। অবশ্য পরক্ষনেই সপাটে চড় বসলো তাঁর ডান গালে। দূর্বল দেহে তাল সামলাতে না পেরে মেঘনা আঁছড়ে পরলো মেঝেতে। সামলে নিয়ে সে সরে পরতে গিয়ে অনুভব করলো তাঁর শাড়ির আঁচল চাপা পরেছে সেই লম্বা চওড়া লোকটার কালো জুতোর তলায়।
– শালা শুয়ারের বাচ্চারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? বাচ্চাটা সরিয়ে নে এখনি।
আদেশ পাও মাত্র একজন মেঘনার কোল থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইলো খুকিকে। মেঘনার মুখ বাঁধা। তবুও অদ্ভুত গোঙানির আওয়াজে ধরা পর তাঁর প্রতিবাদে সুর। প্রাণপণ খুকিকে সে আগলায় তাঁর বুকে চেপে। কিন্তু একটি দূর্বল অসহায় নারী পারবে কেন দুজন যুবককে সাথে? মেঘনার হৃৎপিণ্ড মন হয় এবার আতঙ্কে ফেটেই যায় বুঝি। কিন্তু ঈশ্বর সহায়! হঠাৎ লম্বা চওড়া লোকটা লুটিয়ে পরে মেঘনার পায়ের কাছে। পরক্ষণেই সবার চোখে পর ঘরের ভেতরে ঢুুকে এসেছে দুজন অনিয়ন্ত্রিত অতিথি। তাঁদের মেঘনা চেনে, হ্যাঁ চেনে মেঘনা। একজন ফয়সাল ও অন্য জন্য কালু গোয়ালা।
এই ঘটনা মেঘনা ছাড়া বাকিদের জন্যে যে খুব একটা মঙ্গল জনক নয় তা বলা বাহুল্য। কেন না এই দুজনের বাহু বলের গুনগান গল্পের শুরু থেকেই চলে আসছে। অবশ্য ফয়সালের কিছু করতেও হলো না। তাঁর আগেই শোনা যায় কালু গোয়ালার বাজখাঁই ভীষণ কন্ঠস্বর,
– দাদা বাবু আপনি মা-জীকে দেখুন, ততক্ষনে আমি এই শুয়ার কটার ব্যবস্থা করি!
ফয়সাল এগিয়ে এসে প্রথমেই খুলে দিল মেঘনার মুখের বাঁধন। তারপর একটা রুমাল দিয়ে চেপে ধরেলো মেঘনার কপালের ক্ষতস্থান। মেঘনা খানিকক্ষণ অবাক সজল নয়নে শুধু চেয়ে রইল ফয়সালের মুখপানে। এত সব ঘটনা সে এখনো ঠিক সাজিয়ে তুলতে পারছিল না নিজের দূর্বল মনে। তবে ফয়সাল তাকে বুকে টানতেই অস্ফুটে কি একটু বলে মেঘনা কান্না ভেজা মুখখানি গুজে দিল তাঁর দেবরের বুকে।
অপর দিকে পিকনিক স্পটে এদিকটার পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সন্ধ্যার পর থেকে মেঘনা,ফারুক ও ফয়সালের কোন খবর নেই। তবে রমার কাছে থেকে গন্ডগোলের কারণ ততক্ষণে সবাই কিছুটা জানে। তাবুর সম্মুখে জ্বলন্ত আগুনের পাশে পরিবেশ এখন থমথমে। ফারুক একটি গাড়ি নিয়ে উধাও হয়েছে অনেক আগেই। অন্য গাড়িতে অর্জুন গেছে মেঘনা ও ফয়সালকে খুঁজতে। তাঁবুর ভেতরে মেঘনার শাশুড়ি এক রকম ভেঙেই পরেছেন ব্যানার্জি গিন্নীর কোলে। ব্যানার্জি গিন্নী তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে সামলানোর চেষ্টা করছেন বর্তমান পরিস্থিতি,
–তুমি এভাবে ভেঙে পরলে চলবে কেন দিদি? ভগবানের ওপর ভরসা রাখো। দেখবে তিনি সব ঠিক করে দেবেন।
– এই সব কেন হল বোন? আ-আমার ফয়সাল ও........
তিনি কান্নার দমকে মুখের কথা শেষ করতেও পারলেন না। ব্যানার্জি গিন্নী তাকে বুকে টেনে। ব্যস্ত চিত্তে বললে,
– ছিঃ ছিঃ দিদি তুমি এভাবে কাঁদলে বাকিদের সামলাবে কে বল? ফয়সালের কিছু হয়নি দিদি। দেখো তুমি,ও মেঘনাকে নিয়ে ঠিক ফিরবে, এখনি ফিরবে দেখো.........
এবার ব্যানার্জি গিন্নীর চোখেও অশ্রুবিন্দু ছলছল করে উঠলো। কিন্তু কান্না রূপে তা ঝরে পরার আগেই তাবুতে ছোট্ট মারুফ ছুটে এসে তাঁর কোমরটা জড়িয়ে বললে,
– মা কোথায় দিদা?
ব্যানার্জি গিন্নী কোনরূপে ঠোঁট কামড়ে কান্না সামলে মারুফকে কোলে নিয়ে বললেন,
– মা আসবে দাদাভাই! সকালে হলেই আসবে.....
ফয়সালের মুখভঙ্গি কঠোর। সেদিকে তাকিয়ে কিছু বলবার সাহস মেঘনার হলো না । তাঁর এখন কালু গোয়ালার মিনি ট্রাকে বসে অজানা পথে যাত্রা শুরু করেছে। রাত প্রায় তিনটে বাজে। রাস্তার দুই পাশে ধানক্ষেতে জোড়ালো হাওয়া লেগে দোল খেয়ে চলেছে ধানের শিষ। আকাশের দেবতা ধরণীর পানে চেয়ে ক্ষণে ক্ষণে অদূর গগণ থেকে কটাক্ষ করেছেন বলে এক মুহুর্তে এই দৃশ্য মেঘনার চোখে পরছে। বজ্রপাতের তীব্র শব্দে থেকে থেকে কেঁপে উঠছে ঘুমন্ত খুকি। উত্তাল আবহাওয়া দিচ্ছে ঝড় আসার পূর্ব সংবাদ। ঝড় চলছে মেঘনার মনেও। কিন্তু কেন? স্বামী তাকে বেশ্যা ডেকেছে বলে? নাকি ফিরে গেলে খোকার মরা মুখ দেখবে স্বামীর এই ভৎর্সনার ফলে?
– দাদা বাবু জানালার কাঁচ তুলে দিন, বৃষ্টি নামবে।
ফয়সাল কালুর কথা শুনে গাড়ির কাঁচ তুলে দিল। মনে মনে ভাবলো কি আশ্চর্য ঈশ্বরের পরিহাস! গতকাল হলেও ফয়সাল কালুর গাড়িতে কোন মতেই উঠতো না। কিন্তু এখন শুধু কালুর গাড়ি নয় তাঁর বাড়িতে উঠতেও আপত্তি নেই ফয়সালের। মনে পরে মেঘনা কিছুদিন আগেই তাঁর গলা জড়িয়ে বলেছিল এই সব নেতা-কর্মীদের কাজ কারবারে তাকে না যেতে। ফয়সাল মুখে না বললেও মনে মনে মেনে নিয়েছিল তাঁর বৌমণির কথা। কিন্তু আর দু একটা কাজ তার না করলে এক রকম চলছিলোই না যে। রমা পিসিকে পুরোপুরি রূপে হাতে আনতে তাঁর দরকার ছিল টাকার। ব্যপারটা সামলেও নিয়েছিল সে, তবে সমস্যা যে এতো দূর গড়াবে তা ভাবতেও পারেনি সে। অবশ্য প্রথম দিনেই রমা তাবুর আশপাশে লোকগুলিকে দেখেছিল। হঠাৎ ফয়সালের নিজের ওপরেই প্রচন্ড রাগ হতে শুরু করলো। তাঁর অসাবধানতার পরিনীতি আজ আর একটু হলে মেঘনাকে ভোগ করতে হতো। যদিও এখনো কম কিছু হচ্ছে না মেঘনার সাথে। তবে মেঘনার এখনো ফেরার ইচ্ছে আছে, কিন্তু ফয়সালের তাকে ফিরিয়ে নেবার ইচ্ছে আপাতত নেই।
– একটু ঘুমিয়ে নাও লক্ষ্মীটি,এখনো অনেকটা পথ বাকি।
ফয়সালের কথা শুনে মেঘনা মুখ তুলে চাইলো তাঁর পানে। দেহ ও মনের দূর্বলতায় সে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে যেন। তাঁর ছলছলে চোখে এখন অবাক দৃষ্টির বদলে এক রাশ প্রশ্ন। ফয়সাল মেঘনার কপালে চুমু খেয়ে গালে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে বললে,
– এখন কোন কথা নয় বৌমণি। একটু ঘুমোও এখন,কথা পরে হবে।
কথা শেষ করে ফয়সাল আলতো হাতে মেঘনার মাথাটা শুইয়ে দিল তাঁর কাঁধে......
'''''''''''''''''''''''
– খাসা একটা মাল জুটিয়েছিস বটে!
– কিন্তু বাচ্চাটার কি করবো বস?
– চুপচাপ পরে আছে পরে থাকতে দে না! মাগীকে বশে আনতে কাজে লাগবে!
– শালা অনেক খেল দেখিয়েছে! এবার ওর বৌদিকে নিয়ে আমরা খেলবো হা! হা! হা!
পাঁচটি যুবককে মধ্যে এই রূপ কথা হচ্ছিল অচেতন মেঘনাকে গাড়ি থেকে নামাতে নামাতে। তারা গত দু'দিন যাবত মেঘনাকে নজরে নজরে রেখেছে। আর আজ যখন মেঘনা বনের মাঝে একা হাটছিল কাঁদতে কাঁদতে। তখনি তারা থাবা বসানোর মোক্ষম সুযোগটা পায়। তবে কি ঘটে ছিল? কিভাবে ও কেন? তা জানতে আমাদের অল্প পেছনে যেতে হবে......
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ফয়সালের জ্ঞান যখন ফিরলো তখন সে চোখ খুলেই সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে দেখলো ফারুক মেঘনাকে সপাটে এখানা চড় বসিয়ে দিয়েছে। মেঘনা আগে থেকেই কাঁদছিল তা তাঁর কন্ঠস্বরেই ধরা পর। এবার সে মাটিতে পরে এক হাতে স্বামীর পা জরিয়ে ধরলো।
ফয়সাল পরে ছিল বালিও ওপরে বড় একটা পাথরের পাশে। সে একবার পাথরে হাত ঠেকিয়ে ওঠার চেষ্টা করলো। কিন্তু তৎক্ষণাৎ মাথাটা কেমন করে উঠলো তাঁর। পাথরটা দুহাতে আঁকড়ে পতন সামলে নিল সে। তারপর নিজেকে ধাতস্থ করতে হাতের কাছে নদীর জলের দিকে ফিরে দুপা এগিয়ে দুহাত ভরে নাক মুখে জল ছিটালো।
অপর পাশের উত্তেজিত কথা বার্তা তাঁর কানে এলেও সে ঠিক বুঝতে পারলো না কিছুই। তাঁর মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে যেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করার ক্ষমতা এই মুহূর্তে হয়ে আছে ভোঁতা। কপালে হাত দিতেই সে অনুভব করলো তীব্র যন্ত্রণা। তখন মনে পরলো ফারুকের ঘুষি খেয়ে সে ঘুরে পরেছিল একখানি পাথরের ওপরে। কিন্তু তখনও জ্ঞান ছিল তাঁর। তবে সে জ্ঞান হাড়ালো কিসে? কিছুতেই মনে পরছে না যে!
এই সব ভাবতে ভাবতে নিজেকে সামলে যখন সে পেছনে ফিরলো, তখন সেখানে মেঘনা নেই ! ফারুক এগুছে তাবুর দিকে। ফয়সাল আর কিছুই না ভেবে ছুটে গেল ভাইয়ের কাছে। পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই ফুসে উঠে ঘুরে দাড়ালো ফারুক। পরক্ষণেই দুহাতে জোড়ালো ধাক্কায় ছোট ভাইকে সরিয়ে দিল দূরে। তবে এবারে ফয়সাল প্রস্তুত ছিল, তাই ধাক্কা খেয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বললে,
– বৌমণি কোথায় ভাই? কি করে ছিস তুই?
– আমায় ভাই বলতে তোর লজ্জা করে নেমখারাম!
ফারুকের রাগ এখনো কমেনি। তাঁর মুখের ভাব দেখলেই তা বোঝা চলে। তবে এই মুহূর্তে প্রথমে জানা দরকার মেঘনা কোথায়।
– তুই আমায় যা বলবি বলিস,যত মারার মারিস, কিন্তু আগে বল বৌমণি কোথায়?
ফারুক নিশ্চুপ ভাবে দাড়িয়ে। এই আবছা অন্ধকারেও ফয়সাল বেশ বুঝলো ফারুকের রাগ আরও চরমে উঠছে। তবে এবার আর মারপিট নয়। ফারুক ঘুরে দাঁড়িয়ে হাটা লাগালো, আর একবারও ফিরে দেখলো না পেছন পানে।
অবস্থায় পরিপ্রেক্ষিতে আর ভাইকে ডাকা চলে না বুঝে ফয়সার মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ঢুকলো বনে। ভাগ্যক্রমে সকালের বৃষ্টিতে মাটি কাদাময়। মেঘনার জুতোর ছাপ পরেছে তাতে। ফয়সালের বিশেষ ভাবান্তর হলো না। ঘটনার আকস্মিকতায় ও অপমানের মেঘনা বনের ভেতর পালালেও বেশি দূর সে যাবে না। সমস্যা থেকে পালানো কিংবা অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করার মতো দূর্বলতা মেঘনার মধ্যে নেই বলেই তাঁর ধারণা। থাকলে তিন বছর আগেই সে মরে যেত না কি! তবে তাকে অবাক করে খানিক দূর থেকে ভেসে আসা অস্ফুট আর্তনাদ! গলা মেঘনার এতে সন্দেহ নেই। ফয়সাল দ্রুত বেগে সেদিকে ছুটলো। তবে সে যখন বড় রাস্তায় উঠলো ততক্ষণে একটি সাদা গাড়িতে মেঘনাকে তোলা হয়ে গিয়েছে। গাড়ি ছেড়ে দেবার আগে ফয়সাল একজনকে দেখলো ও চিনলো বটে,তবে দৌড়ে কি আর গাড়ির নাগাল পাওয়া সম্ভব?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মেঘনার যখন জ্ঞান ফিরলো— তখন সে একটি বড় ঘরের ভেতরে খড়ের গাদায় শুয়ে। সম্বিত ফিরতেই প্রথম সে খুঁজলো খুকি কে। কিন্তু কোথায় খুকি? চারপাশে চোখ বুলিয়েই তার মনে পরলো সবটা। স্বামীর ভৎর্সনা ও অপমানের সবটা মাথায় করে মেঘনা ঢুকেছিল বনে। তবে পালিয়ে যাওয়া তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না,এই শুধু অসহায় লজ্জিত নারীর খানিক আড়াল পাবার চেষ্টা। কিন্তু বনের ভেতরের থেকে থেকে তখন শুধু স্বামীর মুখের কথাগুলো কানে বাজছিল তার। তারপর আচমকা অচেনা একজন লোক দেখে আঁতকে উঠেছিল সে। তবে ভালো মতো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে একটা হাত চেপে ধরলো তাঁর মুখ। এরপর সব অন্ধকার। তাঁর এখনোও মনে পরে সে খুকিকে জড়িয়ে ছিল তখনো। তবে কি? না না তাকি করে হয়!
মেঘনা পাগলীন মতো "খুকি" "খুকি" বলে চিৎকার করতে করতে আঁছড়ে পরলো বন্ধ কাঠের দরজার ওপড়ে। কিন্তু আলোকোজ্জ্বল এই ঘরের বাইরে তখন চলছে মদপানের আসর। বন্দিনী মেঘনার ঘরটির বাইরেই একটি টেবিলে শুয়েছিল খুকি। তার চারপাশে পাঁচ জন লোক তখন মদের গ্লাস ও সিগারেট হাতে আলোচনা করছে নিজেদের মধ্যে। কেউ কেউ বন্দিনীর আর্তচিৎকার শুনে পুলকিত হয়ে হাসছিল আপন মনে।
অপরদিকে মেঘনার কান্না ভেজা করুণ কন্ঠস্বর বন্ধ ঘরে ঘুরপাক খেয়ে যেন তাঁকেই করছে উপহাস। একি তার পাপেরই ফল। সেই ত এতদিন ধরে ধোঁকা দিয়েছে স্বামীকে! না জানি কত মিথ্যা বলেছে গত তিনটি বছর ধরে! তবেকি এই তার শাস্তি? কিন্তু সে মন থেকে তো করেনি কিছুই, যা করেছে তা নিজের সম্মান বাঁচাতে,নিজের সংসার কে টিকিয়ে রাখতে। এর পরেও যদি স্বামী তাকে অবিশ্বাস করে ত্যাগ করে তবে করুক! কিন্তু ঈশ্বর জানে, খোকা- খুকি ছাড়া তার পক্ষে বেঁচে থাকাই যে অসম্ভব। তাঁর পাপের শাস্তি অবুঝ শিশু কেন পাবে?
মেঘনার আর্তনাদ বাড়লো। হয়তো তাই শুনে খুলে গেল কাঠের দরজা। ঘরে ঢুকলো পাঁচ জন বখাটে যুবক। তাঁর মধ্যে যে সবচেয়ে লম্বা। তাঁর কোলে খুকি কাঁদছে তারস্বরে। খুকিকে দেখামাত্র মেঘনার দুহাত বাড়িয়ে ছুটে গেল তাকে কোলে নিতে। কিন্তু সে বেচারি এখনো ঠিক ভাবে তার পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারেনি। একের পর এক অমঙ্গল জনক ঘটনা তাঁর বাছবিচার করার ক্ষমতাকেই করেছে এলোমেলো। সে খুকির কাছে পৌঁছানোর আগেই বাকিরা ঘিরে ধরেছে তাঁকে, পেছন থেকে টেনে ধরেছে তাঁর শাড়ির আঁচলটা। মেঘনা প্রাণপণে বুকের আঁচল আঁকড়ে পেছন ফিরে বললে,
– তোমার কারা? ছাড়ো বলছি আমায়! আমার খুকি- আমার খুকিকে দাও আমার কোলে...
তাঁর কথা শেষ হবার আগেই পাশ থেকে হাসতে হাসতে একজন দুহাতে জড়িয়ে ধরলো তাঁকে, অন্য একজন টেনে নিল তাঁর বুকের আঁচল খানি। মেঘনা কান্না ভেজা কন্ঠস্বরে কিছু বলার চেষ্টা করতেই বাধা পেল একটুকরো কাপড়ে। তাঁর চিৎকার আটকাতে কেউ পেছন থেকে বেঁধে দিয়েছে তাঁর মুখ। তবে মাতৃ শক্তি অসাধারণ। অদ্ভুত ও অপার্থিব এক ক্ষমতা তাঁর যে আছে- একথা যুগ যুগ ধরে প্রমাণিত। মেঘনার শরীর দূর্বল। মাথার আঘাত দিয়ে গাল বেয়ে তাজা রক্ত ঝরছে এখনো। কিন্তু এর পরেও দু' তিনজন শক্ত সমর্থ যুবককে ঠেলে ফেলে স্খলিত আঁচল মেঝেতে লুটিয়ে মেঘনা ছুটে গেল দরজার দিকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লম্বা লোকটির হাত থেকে খুকিকে বুকে জরিয়ে নিল সে। অবশ্য পরক্ষনেই সপাটে চড় বসলো তাঁর ডান গালে। দূর্বল দেহে তাল সামলাতে না পেরে মেঘনা আঁছড়ে পরলো মেঝেতে। সামলে নিয়ে সে সরে পরতে গিয়ে অনুভব করলো তাঁর শাড়ির আঁচল চাপা পরেছে সেই লম্বা চওড়া লোকটার কালো জুতোর তলায়।
– শালা শুয়ারের বাচ্চারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? বাচ্চাটা সরিয়ে নে এখনি।
আদেশ পাও মাত্র একজন মেঘনার কোল থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইলো খুকিকে। মেঘনার মুখ বাঁধা। তবুও অদ্ভুত গোঙানির আওয়াজে ধরা পর তাঁর প্রতিবাদে সুর। প্রাণপণ খুকিকে সে আগলায় তাঁর বুকে চেপে। কিন্তু একটি দূর্বল অসহায় নারী পারবে কেন দুজন যুবককে সাথে? মেঘনার হৃৎপিণ্ড মন হয় এবার আতঙ্কে ফেটেই যায় বুঝি। কিন্তু ঈশ্বর সহায়! হঠাৎ লম্বা চওড়া লোকটা লুটিয়ে পরে মেঘনার পায়ের কাছে। পরক্ষণেই সবার চোখে পর ঘরের ভেতরে ঢুুকে এসেছে দুজন অনিয়ন্ত্রিত অতিথি। তাঁদের মেঘনা চেনে, হ্যাঁ চেনে মেঘনা। একজন ফয়সাল ও অন্য জন্য কালু গোয়ালা।
এই ঘটনা মেঘনা ছাড়া বাকিদের জন্যে যে খুব একটা মঙ্গল জনক নয় তা বলা বাহুল্য। কেন না এই দুজনের বাহু বলের গুনগান গল্পের শুরু থেকেই চলে আসছে। অবশ্য ফয়সালের কিছু করতেও হলো না। তাঁর আগেই শোনা যায় কালু গোয়ালার বাজখাঁই ভীষণ কন্ঠস্বর,
– দাদা বাবু আপনি মা-জীকে দেখুন, ততক্ষনে আমি এই শুয়ার কটার ব্যবস্থা করি!
ফয়সাল এগিয়ে এসে প্রথমেই খুলে দিল মেঘনার মুখের বাঁধন। তারপর একটা রুমাল দিয়ে চেপে ধরেলো মেঘনার কপালের ক্ষতস্থান। মেঘনা খানিকক্ষণ অবাক সজল নয়নে শুধু চেয়ে রইল ফয়সালের মুখপানে। এত সব ঘটনা সে এখনো ঠিক সাজিয়ে তুলতে পারছিল না নিজের দূর্বল মনে। তবে ফয়সাল তাকে বুকে টানতেই অস্ফুটে কি একটু বলে মেঘনা কান্না ভেজা মুখখানি গুজে দিল তাঁর দেবরের বুকে।
....................
অপর দিকে পিকনিক স্পটে এদিকটার পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সন্ধ্যার পর থেকে মেঘনা,ফারুক ও ফয়সালের কোন খবর নেই। তবে রমার কাছে থেকে গন্ডগোলের কারণ ততক্ষণে সবাই কিছুটা জানে। তাবুর সম্মুখে জ্বলন্ত আগুনের পাশে পরিবেশ এখন থমথমে। ফারুক একটি গাড়ি নিয়ে উধাও হয়েছে অনেক আগেই। অন্য গাড়িতে অর্জুন গেছে মেঘনা ও ফয়সালকে খুঁজতে। তাঁবুর ভেতরে মেঘনার শাশুড়ি এক রকম ভেঙেই পরেছেন ব্যানার্জি গিন্নীর কোলে। ব্যানার্জি গিন্নী তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে সামলানোর চেষ্টা করছেন বর্তমান পরিস্থিতি,
–তুমি এভাবে ভেঙে পরলে চলবে কেন দিদি? ভগবানের ওপর ভরসা রাখো। দেখবে তিনি সব ঠিক করে দেবেন।
– এই সব কেন হল বোন? আ-আমার ফয়সাল ও........
তিনি কান্নার দমকে মুখের কথা শেষ করতেও পারলেন না। ব্যানার্জি গিন্নী তাকে বুকে টেনে। ব্যস্ত চিত্তে বললে,
– ছিঃ ছিঃ দিদি তুমি এভাবে কাঁদলে বাকিদের সামলাবে কে বল? ফয়সালের কিছু হয়নি দিদি। দেখো তুমি,ও মেঘনাকে নিয়ে ঠিক ফিরবে, এখনি ফিরবে দেখো.........
এবার ব্যানার্জি গিন্নীর চোখেও অশ্রুবিন্দু ছলছল করে উঠলো। কিন্তু কান্না রূপে তা ঝরে পরার আগেই তাবুতে ছোট্ট মারুফ ছুটে এসে তাঁর কোমরটা জড়িয়ে বললে,
– মা কোথায় দিদা?
ব্যানার্জি গিন্নী কোনরূপে ঠোঁট কামড়ে কান্না সামলে মারুফকে কোলে নিয়ে বললেন,
– মা আসবে দাদাভাই! সকালে হলেই আসবে.....
.................
ফয়সালের মুখভঙ্গি কঠোর। সেদিকে তাকিয়ে কিছু বলবার সাহস মেঘনার হলো না । তাঁর এখন কালু গোয়ালার মিনি ট্রাকে বসে অজানা পথে যাত্রা শুরু করেছে। রাত প্রায় তিনটে বাজে। রাস্তার দুই পাশে ধানক্ষেতে জোড়ালো হাওয়া লেগে দোল খেয়ে চলেছে ধানের শিষ। আকাশের দেবতা ধরণীর পানে চেয়ে ক্ষণে ক্ষণে অদূর গগণ থেকে কটাক্ষ করেছেন বলে এক মুহুর্তে এই দৃশ্য মেঘনার চোখে পরছে। বজ্রপাতের তীব্র শব্দে থেকে থেকে কেঁপে উঠছে ঘুমন্ত খুকি। উত্তাল আবহাওয়া দিচ্ছে ঝড় আসার পূর্ব সংবাদ। ঝড় চলছে মেঘনার মনেও। কিন্তু কেন? স্বামী তাকে বেশ্যা ডেকেছে বলে? নাকি ফিরে গেলে খোকার মরা মুখ দেখবে স্বামীর এই ভৎর্সনার ফলে?
– দাদা বাবু জানালার কাঁচ তুলে দিন, বৃষ্টি নামবে।
ফয়সাল কালুর কথা শুনে গাড়ির কাঁচ তুলে দিল। মনে মনে ভাবলো কি আশ্চর্য ঈশ্বরের পরিহাস! গতকাল হলেও ফয়সাল কালুর গাড়িতে কোন মতেই উঠতো না। কিন্তু এখন শুধু কালুর গাড়ি নয় তাঁর বাড়িতে উঠতেও আপত্তি নেই ফয়সালের। মনে পরে মেঘনা কিছুদিন আগেই তাঁর গলা জড়িয়ে বলেছিল এই সব নেতা-কর্মীদের কাজ কারবারে তাকে না যেতে। ফয়সাল মুখে না বললেও মনে মনে মেনে নিয়েছিল তাঁর বৌমণির কথা। কিন্তু আর দু একটা কাজ তার না করলে এক রকম চলছিলোই না যে। রমা পিসিকে পুরোপুরি রূপে হাতে আনতে তাঁর দরকার ছিল টাকার। ব্যপারটা সামলেও নিয়েছিল সে, তবে সমস্যা যে এতো দূর গড়াবে তা ভাবতেও পারেনি সে। অবশ্য প্রথম দিনেই রমা তাবুর আশপাশে লোকগুলিকে দেখেছিল। হঠাৎ ফয়সালের নিজের ওপরেই প্রচন্ড রাগ হতে শুরু করলো। তাঁর অসাবধানতার পরিনীতি আজ আর একটু হলে মেঘনাকে ভোগ করতে হতো। যদিও এখনো কম কিছু হচ্ছে না মেঘনার সাথে। তবে মেঘনার এখনো ফেরার ইচ্ছে আছে, কিন্তু ফয়সালের তাকে ফিরিয়ে নেবার ইচ্ছে আপাতত নেই।
– একটু ঘুমিয়ে নাও লক্ষ্মীটি,এখনো অনেকটা পথ বাকি।
ফয়সালের কথা শুনে মেঘনা মুখ তুলে চাইলো তাঁর পানে। দেহ ও মনের দূর্বলতায় সে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে যেন। তাঁর ছলছলে চোখে এখন অবাক দৃষ্টির বদলে এক রাশ প্রশ্ন। ফয়সাল মেঘনার কপালে চুমু খেয়ে গালে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে বললে,
– এখন কোন কথা নয় বৌমণি। একটু ঘুমোও এখন,কথা পরে হবে।
কথা শেষ করে ফয়সাল আলতো হাতে মেঘনার মাথাটা শুইয়ে দিল তাঁর কাঁধে......
..............
![[Image: IMG-20250228-150207.png]](https://i.ibb.co/mFVcm4qC/IMG-20250228-150207.png)