31-12-2018, 04:23 PM
কোনরকমে শরীরটা টেনে নিয়ে এলাম বাড়ি পর্যন্ত। আস্তে আস্তে রাগ ঠান্ডা হচ্ছে আর নিজের মনে অনুতাপ হচ্ছে, একটু বেশীই করে ফেলেছি বলে মনে হচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম বকাটকা দেবো তুলিকে, কিন্তু এত রাতে তুলির ওরকম নাচ আর দুটো ছেলের সাথে... বিশেষ করে সেই ছেলেটাকে দেখে আমি মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। দেখে তো মনে হোল বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলে, আরে শালা অন্যের মালে হাত বাড়ানোর আগে জিজ্ঞেস করবি তো সে কারো সাথে আছে কিনা। শালা সবই তোদের পুতুলখেলার জিনিস তাই না! ইচ্ছে হলো তো বায়না ধরলাম যে ওটা আমার চাই।
কিন্তু তুলি? তুলিও তো পারতো নিজেকে সংযত রাখতে। আমি দুর্বলতা না দেখালে কেউ সাহস পায় কি করে আমাকে দেখে দুর্বল হোতে। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে কি করতো সেটা তর্কের ব্যাপার। কিন্তু আমি যা করলাম সেটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো। এর থেকে তুলিকে দুটো চর মারলে হয়তো ও এতো কষ্ট পেতোনা। তারওপর আমি জানতাম না যে আজ ওর জন্মদিন। ছিঃ ছিঃ এ কি করলাম। মা আমাকে সবসময় বলে যে মাথা গরম করে জীবনে কিছু পাওয়া যায় না, কিছু তাবেদার আর আজ্ঞাবাহি দাস্* ছাড়া। মা সবসময় একটা কথাই বলে, খুব রেগে গেলে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবি না। রাগ সরাসরি প্রকাশ করবি না। একটা রাত ঘুমিয়ে নিবি কোনরকম প্রতিকৃয়া দেখানোর আগে। তাতে দেখবি তুই সঠিক পথে চলছিস। হয়তো মার বয়েসে এটা অভিজ্ঞতার জঠর থেকে লব্ধ উপলব্ধি। কিন্তু ব্যাবহারিক জীবনে কি এইভাবে নিজেকে সংযত রাখা সম্ভব? জানিনা সেটা সময় বলবে। এখন জানিনা তুলির কাছে কি মুখ নিয়ে আবার এই ভাঙ্গা প্রেম জোড়া দেবো।
সারারাত ছটফট করলাম। পাপ্পু পাশে নাক ডাকছে। এখন ওর ওপরে বেশ রাগ উঠে যাচ্ছে। ও এই সুদিপা মাগির কেসে জরাতো না তো আমার আর তুলির মধ্যেও হয়তো এরকম হোতনা। শালা কোন কুক্ষনে যে এই মাগিটার সাথে দেখা হয়েছিলো। রেন্ডি মাগি শালি। শালা অভিশাপ দেওয়ার ক্ষমতা থাকলে বলতাম শালি তুই আমার পোষা কুকুর হয়ে জনাম পরের জন্মে। তোর সামনে তুলিকে চুদে চুদে তোকে দেখাবো, যে গতরই সব না। ছাল ছাড়ানো মুরগিরও মন থাকে, ওরাও ভালোবাসে, ওর জন্মদিন...। আমি কেঁদে দিলাম।
আকাশ ফর্শা হয়ে আসছে প্রায় পৌনে ছটা বাজে। পাপ্পু নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে এখনো। আমি বেরিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। সিগেড়েটের পর সিগেড়েট টেনে যাচ্ছি। আস্তে আস্তে লাল আকাশ ফর্সা হয়ে আসছে, পাখির ডাকে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। অন্যসময় এটাই মনে হয় যে কি সুন্দর, প্রকৃতির কি অনবদ্য অবদান। মানুষের মনে শান্তি না থাকলে সমুদ্রর ঢেউও বিভিষিকা লাগে, পাহাড়ের সমাহিত রুপও মনে হয় যেন বোবা প্রকৃতি।
চেয়ার দুলিয়ে ঠক ঠক আওয়াজ হচ্ছে। খেয়াল করিনি কখন পাপ্পু উঠে এসে আমার পাশে মেঝেতে দুহাটুর মধ্যে মাথা গুজে বসে আছে। বেশ কিছুক্ষন পরে আমি খেয়াল করলাম। একটু চমকেও গেলাম ওকে দেখে।
আমি কোন কথা বললাম না। চুপ করে বসে রইলাম। পাপ্পুও সেইভাবে বসে রইলো।
অনেকক্ষণ এইভাবে কেটে গেলো। তারপর বাধ্য হয়ে আমি বললাম ‘তুই বাড়ি যা পাপ্পু, পরে কথা বলবো।’
পাপ্পু কোনরকমে উঠে দাঁড়ালো রেলিং ধরে নিজের ভারসাম্য রেখে বললো ‘কি হবে আমার?’
‘তোর মনে আছে তুই কি বলেছিস?’
‘হ্যাঁ সব মনে আছে। কিছু ভুলিনি। দরকার হলে জিজ্ঞেস করো আবার।’
আমি বিরক্ত আর গম্ভির ভাবে বললাম ‘দরকার হলে কারো সামনে গিয়ে বলতে পারবি তো?’
‘তুমি যা বলবে আমি তাই করবো, আমি যা করেছি তার জন্যে ফাঁসিও পড়তে রাজী আমি।’
‘অতসত এখন থেকে ভাবতে হবেনা। তুই সারাদিন বারিতে থাকিস্*। দরকার হলে আমি তোকে ডেকে নেবো।’
পাপ্পু চলে গেলো। আমি এবার একা হয়ে গেলাম। ওর ওপর সাঙ্ঘাতিক রাগ হচ্ছে। হয়তো ও বুঝতে পেরেছে। কিন্তু না এখুনি মাথা গরম করে কিছু করবো না। দেখা যাক আগে কবিরদার সাথে কথা বলি।
পাপ্পু চলে যাওয়ার পরে আবার একটা সিগেরেট ধরালাম, ধোঁয়ায় বুক জ্বালা করছে তবু মনে হচ্ছে যেন এই এখন আমার নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।
কে যেন বাড়ির নিচে দাড়িয়ে বলছে কোথায় একটা বাচ্চা মেয়ে সুইসাইড করেছে। আমার বুক ধরফর করে উঠলো। গলা শুকিয়ে এলো। আমি ভালো করে শুনতে চেষ্টা করলাম। আমি যা ভাবছি সেটা কি সত্যি? কেউ যেন বলছে, কাল রাতে ফাংশান দেখতে গেছিলো মেয়েটা তারপর পাড়ার লোক দেখেছে একটা লম্বা করে ছেলের সাথে ভোররাতে ঝগড়া করছে মেয়েটা। তারপর বাড়িতে ঢুকে সোজা সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে পরেছে। তাহলে তুলি!!!! ওঃ ভগবান!! এ কি দিন দেখালে আমাকে!! এইটুকু মেয়েটা এভাবে নিজেকে শেষ করে দিলো, আমার মত এক বোকাচোদার কথা গায়ে মেখে? এরপর কি করবো আমি? যাবো ওর নিথর দেহটা দেখতে, ওর ফুলের মত মুখটা থেকে চোখ ঠিকড়ে বেরিয়ে এসেছে সেটা দেখতে? না, লাশকাটা ঘরে যাবো কাটাছেড়া দেখতে ওর তুলতুলে শরীরটা। নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে শ্মশানে যাবো দেখতে কিভাবে চুল্লিতে ঢুকে যায় ওর রোগা পাতলা শরীরটা। উফঃ ভগবান তুলি যাস না সোনা আমাকে ছেড়ে যাসনা। আমাকে ক্ষমা করে দিস্* সোনা। পারলাম না তোর মত পাখিকে আমার বুকের খাঁচায় আটকে রাখতে। আমিই তোর যোগ্য না। আমাকে ক্ষমা করে দিস। ইলেক্ট্রিক চুল্লির তাপ এসে আমার চোখে মুখে যেন আছরে পরছে। আমার জন্যে...।
প্রচণ্ড গরমে আমার হাত মুখ জ্বলে যাচ্ছে। উফঃ কি গরম? তুলি কি করে সহ্য করছে কি জানি। আমি তো পারছিনা, আমি ঘেমে যাচ্ছি, গলার তলায় ঘাম এসে গেছে, চুলের ভিতরে মাথা ভিজে গেছে ঘামে। হাতে কিসের গরম ছেঁকা লাগছে। উফঃ।
জলন্ত সিগেরেট জ্বলতে জ্বলতে এসে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢোকার চেষ্টা করছে। আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। ঘেমে গেছি। ভগবান একি দেখালে। মাগো, তুলিকে ভালো রাখো। দরকার নেই আমার প্রেম ভালোবাসার একা থাকবো তাও ভালো। এই ভাবে যেন ওকে আর কষ্ট না দি। মা, মাগো ১০০ টাকার পুজো দেবো তোমাকে, তুলিকে ভালো রাখো। ওকে আনন্দে রাখো। আমার স্বপ্ন যেন কোনদিন সত্যি না হয়। ও ভালো থাকুক। আমার সাথে না হোক ক্ষতি নেই। কিন্তু ওর মুখের হাসি তুমি কেড়ে নিওনা।
অফিস বেরোনোর আগে কবিরদাকে একটা ফোন করে জানালাম সংক্ষেপে পাপ্পুর স্বীকারোক্তির ব্যাপারে। রাতে আমাকে দেখা করতে বললো। পাপ্পুকে না নিয়েই আসতে বলল।
সারাদিন আমি কোন কাজ করতে পারলাম না। কোনরকমে সময় কাটালাম। স্বপ্নের কথাটা বার বার করে ঘুরে ফিরে মনে আসছে। নিজেকে কিছুতেই সেই দৃশ্য থেকে সরিয়ে আনতে পারছিনা। এমন দুঃস্বপ্ন মানুষ কি করে দেখে?
রাতের বেলা কবিরদার বাড়িতে চলে গেলাম ক্যাসেটটা নিয়ে। কবিরদা ডিউটি শেষ করে আস্তেই প্রায় সারে নটা হয়ে গেলো। তারপর কফি আর পাপ্পুর কনফেশান শোনার পালা। কবিরদা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনলো।
‘বুঝলি তো কি কেস? শালা কোথায় এখন? চ তুলে এনে তোর সামনেই ওর গাঁঢ়ের হাড্ডি ভাঙ্গি।’
আমি কাচুমাচু মুখে বললাম ‘কবির দা, একটা কথা বলি? যদি তুমি সাহস দাও।’
‘কি বলনা?’
‘পাপ্পুকে ছেড়ে দেওয়া যায় না? মানে... ও এমনিতে অনুতপ্ত... আর ...’
‘তুই বলছিস্*? তোরই তো পিছন মারতে যাচ্ছিলো?’
‘যানি। কিন্তু তুমি ভালো করে দেখো ও কিন্তু সেটা স্বীকার করেছে আর...।’
‘আর কি?’
‘আজ সকালেও আমাকে বলে গেলো যে ও ফাঁসিতেও যেতে রাজী। আমি খোঁজ নিলাম যে ও সারাদিন বাড়ি থেকে বেড়োই নি আমার অপেক্ষায় বাড়িতে রয়ে গেছে। আমি কখন ওকে আদেশ দেবো কি করতে হবে সেই জন্যে।’
‘দাড়া ভাই এত তাড়াতাড়ি এসব সিদ্ধান্ত হয় না। ওকে ছারতে গেলে অনেক কাঠখড় পোরাতে হবে। আর মেডিয়ার লোক আজই খোঁচা দিয়ে গেছে যে এই কেসটার কি হলো যানার জন্যে।’
‘ওরে বাবা কি হবে গো?’
‘সেটাই তো চিন্তা করছি। দ্যাখ ফ্র্যাঙ্কলি বলছি তুই না হলে এতক্ষনে ওর বাড়ির সামনে জিপ চলে যেত। কিন্তু আমিও যানি যে ও ইচ্ছাকৃত কেসটা করেনি। আর সেই জন্যেই আমি এত চিন্তা করছি। কোনটা বড় সেটা বোঝার চেষ্টা করছি, একটা ছেলের ভবিষ্যৎ না এই কেসের সফল তদন্ত? সময় লাগবে বস্* সময় লাগবে। তুই যা আজকে আমাকে একটু চিন্তা করতে দে।’
রাতের বেলা বাড়ি ফেরার রাস্তায় তুলির বাবার সাথে দেখা আমাকে দেখে হেসে উঠলো ‘কি ব্যাপার এত রাতে?’
আমিও হেসে বললাম ‘এই এক বন্ধুর বাড়ি গেছিলাম।’
‘আমি এই ওষুধ নিতে এসেছি তুলির তো খুব ঠান্ডা লেগেছে, কাল রাতে ফাংশান দেখতে গেছিলো... খুব টানের মত হয়েছে, এই এক মেয়ে কিছুতেই কথা শোনেনা। হাঁপানির রুগি। এই সিজনে কত সাবধানে থাকতে হয়... তা না দুদিন অন্তর অন্তর ডাক্তার বদ্যি।’
‘ ওঃ ওর এজমা আছে নাকি?’
‘হ্যাঁ আমার বাবার থেকে পেয়েছে এই রোগ। আমাদের ভাইদের কারো নেই। কিন্তু ওর মধ্যে ছোটবেলা থেকেই আছে। সেই জন্মের সময়ই তো আমরা ভেবেছিলাম ওকে বাঁচাতে পারবোনা। তাই তো ওর মার কাছে ও যেন জিয়নকাঠি। ওর মধ্যেই ওর মার প্রান।’
মনে বললাম আমি জানতাম যে সব রটনা। তুলি আপনারই মেয়ে।
মনটা এমনিতেই খারাপ ছিলো, তারওপর তুলির শরীর খারাপ শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে। ভোরের স্বপ্নের কিছু প্রভাব হয়তো তুলির ওপরে পরেছে।
কোনরকমে সকাল পর্যন্ত কাটালাম, প্রায় আধ ঘুমে। মনে মনে ঠাকুরকে ডাকলাম সারারাত তুলিকে ভাল করে দিতে। তুলিকে একটা ভাল ছেলে যোগার করে দিতে। আমি ওকে ভুলে যাবো। আমি ওকে বলবো আমাকে ভুলে যেতে যে আমাদের মধ্যে কি হয়েছে। আমি আর ও বন্ধুর মত থাকবো। আমি জানি আমার মত ছেলেরও ওর জীবনে দরকার যাতে ও ভুল পথে না চলে যেতে পারে। কিন্তু সেটা স্রেফ একজন অভিভাবকের মত। আমার মত অসভ্য ছেলে এই প্রানচঞ্চল মেয়েটাকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে ফেললে অকালে ওকে শেষ করে দেবে। ওর জীবনীশক্তির সমস্ত বুদবুদি আমার কাছে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
সকালবেলা উঠেই মাকে আগে পাকড়াও করলাম। তুলির বাড়িতে ফোন করার জন্যে।
আমি খাওয়ার টেবিলে বসে মার কথা বার্তা ফলো করছি।
‘হ্যাঁ, দিদি নমস্কার আমি অভির মা বলছি, শুনলাম তুলির নাকি...।’
ওমা মার মুখটা কেমন হয়ে গেলো ফোন নামিয়ে রাখলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘কি হয়েছে মা? কি বললো তুলির মা? কেমন আছে এখন? সব ঠিক আছে তো?’
মা গম্ভির ভাবে একটু চুপ করে থেকে বলল ‘অসময়ে লোকের বাড়ি ফোন করতে বলিস কেন? বাড়ির মেয়েদের এখন কত কাজ বল তো?’
‘মানে? কি বলছো তুমি আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা?’
‘বুঝতে হবেনা আমি পরে ফোন করে তোকে যানিয়ে দেবো, এখন খেয়ে দেয়ে অফিসে যা।’
আমি জানি মা আর কোন কথা বলবেনা এখন তাই চেপে গেলাম কিন্তু বুঝতে পারলাম খুব ভাল কিছু হয়নি।
অফিসে বসে ছটফট করছি। বার বার করে তুলিদের বাড়িতে ফোন করার কথা চিন্তা করছি কিন্তু হাত থেমে যাচ্ছে। লজ্জায় করতে পারছিনা।
মাকে কি বলল তুলির মা যে মা খুলে বলতে চাইলো না। তাহলে কি তুলি ওর মাকে আমার কথা সব বলে দিয়েছে কাল রাতের, সেটা তুলির মা মাকে বললো। নাঃ সেরকম হলে মা আমাকে ছেড়ে কথা বলতো না। তাহলে?
বাইরে দাড়িয়ে সিগেড়েট ফুঁকছি এসব নানা চিন্তা করতে করতে। একটা বেয়ারা হন্তদন্ত হয়ে আমাকে খুজে বের করলো যেন “স্যার বাড়ির ফোন”
আমি গিয়ে ফোনটা তুলতেই ওদিক থেকে বাবার গলা ‘তুই উডল্যান্ডে চলে আয় তোর মাকে নিয়ে যাচ্ছি... পরে কথা হবে।’
কিন্তু তুলি? তুলিও তো পারতো নিজেকে সংযত রাখতে। আমি দুর্বলতা না দেখালে কেউ সাহস পায় কি করে আমাকে দেখে দুর্বল হোতে। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে কি করতো সেটা তর্কের ব্যাপার। কিন্তু আমি যা করলাম সেটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো। এর থেকে তুলিকে দুটো চর মারলে হয়তো ও এতো কষ্ট পেতোনা। তারওপর আমি জানতাম না যে আজ ওর জন্মদিন। ছিঃ ছিঃ এ কি করলাম। মা আমাকে সবসময় বলে যে মাথা গরম করে জীবনে কিছু পাওয়া যায় না, কিছু তাবেদার আর আজ্ঞাবাহি দাস্* ছাড়া। মা সবসময় একটা কথাই বলে, খুব রেগে গেলে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবি না। রাগ সরাসরি প্রকাশ করবি না। একটা রাত ঘুমিয়ে নিবি কোনরকম প্রতিকৃয়া দেখানোর আগে। তাতে দেখবি তুই সঠিক পথে চলছিস। হয়তো মার বয়েসে এটা অভিজ্ঞতার জঠর থেকে লব্ধ উপলব্ধি। কিন্তু ব্যাবহারিক জীবনে কি এইভাবে নিজেকে সংযত রাখা সম্ভব? জানিনা সেটা সময় বলবে। এখন জানিনা তুলির কাছে কি মুখ নিয়ে আবার এই ভাঙ্গা প্রেম জোড়া দেবো।
সারারাত ছটফট করলাম। পাপ্পু পাশে নাক ডাকছে। এখন ওর ওপরে বেশ রাগ উঠে যাচ্ছে। ও এই সুদিপা মাগির কেসে জরাতো না তো আমার আর তুলির মধ্যেও হয়তো এরকম হোতনা। শালা কোন কুক্ষনে যে এই মাগিটার সাথে দেখা হয়েছিলো। রেন্ডি মাগি শালি। শালা অভিশাপ দেওয়ার ক্ষমতা থাকলে বলতাম শালি তুই আমার পোষা কুকুর হয়ে জনাম পরের জন্মে। তোর সামনে তুলিকে চুদে চুদে তোকে দেখাবো, যে গতরই সব না। ছাল ছাড়ানো মুরগিরও মন থাকে, ওরাও ভালোবাসে, ওর জন্মদিন...। আমি কেঁদে দিলাম।
আকাশ ফর্শা হয়ে আসছে প্রায় পৌনে ছটা বাজে। পাপ্পু নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে এখনো। আমি বেরিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। সিগেড়েটের পর সিগেড়েট টেনে যাচ্ছি। আস্তে আস্তে লাল আকাশ ফর্সা হয়ে আসছে, পাখির ডাকে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। অন্যসময় এটাই মনে হয় যে কি সুন্দর, প্রকৃতির কি অনবদ্য অবদান। মানুষের মনে শান্তি না থাকলে সমুদ্রর ঢেউও বিভিষিকা লাগে, পাহাড়ের সমাহিত রুপও মনে হয় যেন বোবা প্রকৃতি।
চেয়ার দুলিয়ে ঠক ঠক আওয়াজ হচ্ছে। খেয়াল করিনি কখন পাপ্পু উঠে এসে আমার পাশে মেঝেতে দুহাটুর মধ্যে মাথা গুজে বসে আছে। বেশ কিছুক্ষন পরে আমি খেয়াল করলাম। একটু চমকেও গেলাম ওকে দেখে।
আমি কোন কথা বললাম না। চুপ করে বসে রইলাম। পাপ্পুও সেইভাবে বসে রইলো।
অনেকক্ষণ এইভাবে কেটে গেলো। তারপর বাধ্য হয়ে আমি বললাম ‘তুই বাড়ি যা পাপ্পু, পরে কথা বলবো।’
পাপ্পু কোনরকমে উঠে দাঁড়ালো রেলিং ধরে নিজের ভারসাম্য রেখে বললো ‘কি হবে আমার?’
‘তোর মনে আছে তুই কি বলেছিস?’
‘হ্যাঁ সব মনে আছে। কিছু ভুলিনি। দরকার হলে জিজ্ঞেস করো আবার।’
আমি বিরক্ত আর গম্ভির ভাবে বললাম ‘দরকার হলে কারো সামনে গিয়ে বলতে পারবি তো?’
‘তুমি যা বলবে আমি তাই করবো, আমি যা করেছি তার জন্যে ফাঁসিও পড়তে রাজী আমি।’
‘অতসত এখন থেকে ভাবতে হবেনা। তুই সারাদিন বারিতে থাকিস্*। দরকার হলে আমি তোকে ডেকে নেবো।’
পাপ্পু চলে গেলো। আমি এবার একা হয়ে গেলাম। ওর ওপর সাঙ্ঘাতিক রাগ হচ্ছে। হয়তো ও বুঝতে পেরেছে। কিন্তু না এখুনি মাথা গরম করে কিছু করবো না। দেখা যাক আগে কবিরদার সাথে কথা বলি।
পাপ্পু চলে যাওয়ার পরে আবার একটা সিগেরেট ধরালাম, ধোঁয়ায় বুক জ্বালা করছে তবু মনে হচ্ছে যেন এই এখন আমার নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।
কে যেন বাড়ির নিচে দাড়িয়ে বলছে কোথায় একটা বাচ্চা মেয়ে সুইসাইড করেছে। আমার বুক ধরফর করে উঠলো। গলা শুকিয়ে এলো। আমি ভালো করে শুনতে চেষ্টা করলাম। আমি যা ভাবছি সেটা কি সত্যি? কেউ যেন বলছে, কাল রাতে ফাংশান দেখতে গেছিলো মেয়েটা তারপর পাড়ার লোক দেখেছে একটা লম্বা করে ছেলের সাথে ভোররাতে ঝগড়া করছে মেয়েটা। তারপর বাড়িতে ঢুকে সোজা সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে পরেছে। তাহলে তুলি!!!! ওঃ ভগবান!! এ কি দিন দেখালে আমাকে!! এইটুকু মেয়েটা এভাবে নিজেকে শেষ করে দিলো, আমার মত এক বোকাচোদার কথা গায়ে মেখে? এরপর কি করবো আমি? যাবো ওর নিথর দেহটা দেখতে, ওর ফুলের মত মুখটা থেকে চোখ ঠিকড়ে বেরিয়ে এসেছে সেটা দেখতে? না, লাশকাটা ঘরে যাবো কাটাছেড়া দেখতে ওর তুলতুলে শরীরটা। নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে শ্মশানে যাবো দেখতে কিভাবে চুল্লিতে ঢুকে যায় ওর রোগা পাতলা শরীরটা। উফঃ ভগবান তুলি যাস না সোনা আমাকে ছেড়ে যাসনা। আমাকে ক্ষমা করে দিস্* সোনা। পারলাম না তোর মত পাখিকে আমার বুকের খাঁচায় আটকে রাখতে। আমিই তোর যোগ্য না। আমাকে ক্ষমা করে দিস। ইলেক্ট্রিক চুল্লির তাপ এসে আমার চোখে মুখে যেন আছরে পরছে। আমার জন্যে...।
প্রচণ্ড গরমে আমার হাত মুখ জ্বলে যাচ্ছে। উফঃ কি গরম? তুলি কি করে সহ্য করছে কি জানি। আমি তো পারছিনা, আমি ঘেমে যাচ্ছি, গলার তলায় ঘাম এসে গেছে, চুলের ভিতরে মাথা ভিজে গেছে ঘামে। হাতে কিসের গরম ছেঁকা লাগছে। উফঃ।
জলন্ত সিগেরেট জ্বলতে জ্বলতে এসে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢোকার চেষ্টা করছে। আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। ঘেমে গেছি। ভগবান একি দেখালে। মাগো, তুলিকে ভালো রাখো। দরকার নেই আমার প্রেম ভালোবাসার একা থাকবো তাও ভালো। এই ভাবে যেন ওকে আর কষ্ট না দি। মা, মাগো ১০০ টাকার পুজো দেবো তোমাকে, তুলিকে ভালো রাখো। ওকে আনন্দে রাখো। আমার স্বপ্ন যেন কোনদিন সত্যি না হয়। ও ভালো থাকুক। আমার সাথে না হোক ক্ষতি নেই। কিন্তু ওর মুখের হাসি তুমি কেড়ে নিওনা।
অফিস বেরোনোর আগে কবিরদাকে একটা ফোন করে জানালাম সংক্ষেপে পাপ্পুর স্বীকারোক্তির ব্যাপারে। রাতে আমাকে দেখা করতে বললো। পাপ্পুকে না নিয়েই আসতে বলল।
সারাদিন আমি কোন কাজ করতে পারলাম না। কোনরকমে সময় কাটালাম। স্বপ্নের কথাটা বার বার করে ঘুরে ফিরে মনে আসছে। নিজেকে কিছুতেই সেই দৃশ্য থেকে সরিয়ে আনতে পারছিনা। এমন দুঃস্বপ্ন মানুষ কি করে দেখে?
রাতের বেলা কবিরদার বাড়িতে চলে গেলাম ক্যাসেটটা নিয়ে। কবিরদা ডিউটি শেষ করে আস্তেই প্রায় সারে নটা হয়ে গেলো। তারপর কফি আর পাপ্পুর কনফেশান শোনার পালা। কবিরদা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনলো।
‘বুঝলি তো কি কেস? শালা কোথায় এখন? চ তুলে এনে তোর সামনেই ওর গাঁঢ়ের হাড্ডি ভাঙ্গি।’
আমি কাচুমাচু মুখে বললাম ‘কবির দা, একটা কথা বলি? যদি তুমি সাহস দাও।’
‘কি বলনা?’
‘পাপ্পুকে ছেড়ে দেওয়া যায় না? মানে... ও এমনিতে অনুতপ্ত... আর ...’
‘তুই বলছিস্*? তোরই তো পিছন মারতে যাচ্ছিলো?’
‘যানি। কিন্তু তুমি ভালো করে দেখো ও কিন্তু সেটা স্বীকার করেছে আর...।’
‘আর কি?’
‘আজ সকালেও আমাকে বলে গেলো যে ও ফাঁসিতেও যেতে রাজী। আমি খোঁজ নিলাম যে ও সারাদিন বাড়ি থেকে বেড়োই নি আমার অপেক্ষায় বাড়িতে রয়ে গেছে। আমি কখন ওকে আদেশ দেবো কি করতে হবে সেই জন্যে।’
‘দাড়া ভাই এত তাড়াতাড়ি এসব সিদ্ধান্ত হয় না। ওকে ছারতে গেলে অনেক কাঠখড় পোরাতে হবে। আর মেডিয়ার লোক আজই খোঁচা দিয়ে গেছে যে এই কেসটার কি হলো যানার জন্যে।’
‘ওরে বাবা কি হবে গো?’
‘সেটাই তো চিন্তা করছি। দ্যাখ ফ্র্যাঙ্কলি বলছি তুই না হলে এতক্ষনে ওর বাড়ির সামনে জিপ চলে যেত। কিন্তু আমিও যানি যে ও ইচ্ছাকৃত কেসটা করেনি। আর সেই জন্যেই আমি এত চিন্তা করছি। কোনটা বড় সেটা বোঝার চেষ্টা করছি, একটা ছেলের ভবিষ্যৎ না এই কেসের সফল তদন্ত? সময় লাগবে বস্* সময় লাগবে। তুই যা আজকে আমাকে একটু চিন্তা করতে দে।’
রাতের বেলা বাড়ি ফেরার রাস্তায় তুলির বাবার সাথে দেখা আমাকে দেখে হেসে উঠলো ‘কি ব্যাপার এত রাতে?’
আমিও হেসে বললাম ‘এই এক বন্ধুর বাড়ি গেছিলাম।’
‘আমি এই ওষুধ নিতে এসেছি তুলির তো খুব ঠান্ডা লেগেছে, কাল রাতে ফাংশান দেখতে গেছিলো... খুব টানের মত হয়েছে, এই এক মেয়ে কিছুতেই কথা শোনেনা। হাঁপানির রুগি। এই সিজনে কত সাবধানে থাকতে হয়... তা না দুদিন অন্তর অন্তর ডাক্তার বদ্যি।’
‘ ওঃ ওর এজমা আছে নাকি?’
‘হ্যাঁ আমার বাবার থেকে পেয়েছে এই রোগ। আমাদের ভাইদের কারো নেই। কিন্তু ওর মধ্যে ছোটবেলা থেকেই আছে। সেই জন্মের সময়ই তো আমরা ভেবেছিলাম ওকে বাঁচাতে পারবোনা। তাই তো ওর মার কাছে ও যেন জিয়নকাঠি। ওর মধ্যেই ওর মার প্রান।’
মনে বললাম আমি জানতাম যে সব রটনা। তুলি আপনারই মেয়ে।
মনটা এমনিতেই খারাপ ছিলো, তারওপর তুলির শরীর খারাপ শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে। ভোরের স্বপ্নের কিছু প্রভাব হয়তো তুলির ওপরে পরেছে।
কোনরকমে সকাল পর্যন্ত কাটালাম, প্রায় আধ ঘুমে। মনে মনে ঠাকুরকে ডাকলাম সারারাত তুলিকে ভাল করে দিতে। তুলিকে একটা ভাল ছেলে যোগার করে দিতে। আমি ওকে ভুলে যাবো। আমি ওকে বলবো আমাকে ভুলে যেতে যে আমাদের মধ্যে কি হয়েছে। আমি আর ও বন্ধুর মত থাকবো। আমি জানি আমার মত ছেলেরও ওর জীবনে দরকার যাতে ও ভুল পথে না চলে যেতে পারে। কিন্তু সেটা স্রেফ একজন অভিভাবকের মত। আমার মত অসভ্য ছেলে এই প্রানচঞ্চল মেয়েটাকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে ফেললে অকালে ওকে শেষ করে দেবে। ওর জীবনীশক্তির সমস্ত বুদবুদি আমার কাছে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
সকালবেলা উঠেই মাকে আগে পাকড়াও করলাম। তুলির বাড়িতে ফোন করার জন্যে।
আমি খাওয়ার টেবিলে বসে মার কথা বার্তা ফলো করছি।
‘হ্যাঁ, দিদি নমস্কার আমি অভির মা বলছি, শুনলাম তুলির নাকি...।’
ওমা মার মুখটা কেমন হয়ে গেলো ফোন নামিয়ে রাখলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘কি হয়েছে মা? কি বললো তুলির মা? কেমন আছে এখন? সব ঠিক আছে তো?’
মা গম্ভির ভাবে একটু চুপ করে থেকে বলল ‘অসময়ে লোকের বাড়ি ফোন করতে বলিস কেন? বাড়ির মেয়েদের এখন কত কাজ বল তো?’
‘মানে? কি বলছো তুমি আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা?’
‘বুঝতে হবেনা আমি পরে ফোন করে তোকে যানিয়ে দেবো, এখন খেয়ে দেয়ে অফিসে যা।’
আমি জানি মা আর কোন কথা বলবেনা এখন তাই চেপে গেলাম কিন্তু বুঝতে পারলাম খুব ভাল কিছু হয়নি।
অফিসে বসে ছটফট করছি। বার বার করে তুলিদের বাড়িতে ফোন করার কথা চিন্তা করছি কিন্তু হাত থেমে যাচ্ছে। লজ্জায় করতে পারছিনা।
মাকে কি বলল তুলির মা যে মা খুলে বলতে চাইলো না। তাহলে কি তুলি ওর মাকে আমার কথা সব বলে দিয়েছে কাল রাতের, সেটা তুলির মা মাকে বললো। নাঃ সেরকম হলে মা আমাকে ছেড়ে কথা বলতো না। তাহলে?
বাইরে দাড়িয়ে সিগেড়েট ফুঁকছি এসব নানা চিন্তা করতে করতে। একটা বেয়ারা হন্তদন্ত হয়ে আমাকে খুজে বের করলো যেন “স্যার বাড়ির ফোন”
আমি গিয়ে ফোনটা তুলতেই ওদিক থেকে বাবার গলা ‘তুই উডল্যান্ডে চলে আয় তোর মাকে নিয়ে যাচ্ছি... পরে কথা হবে।’