31-12-2018, 04:23 PM
আমি হাসপাতালের নিচে ওয়েটিং রুমে একটা চাদরের ওপর শুয়ে শুয়ে ভাবছি যে জীবন কোথায় নিয়ে এলো আমাকে। এই কদিনে আমার বয়েস হুঁ হুঁ করে বেরে গেলো এক ধাক্কায়। অন্যের ঝামেলাতে যে নিজে ঝাপিয়ে পরে আজ তার পাশে কেউ নেই। কেউ সেচ্ছায়, কেউ অনিচ্ছা্* কেউ ধাক্কায় সরে গেছে। আজ আমি নিজের জীবনে এই চলতে থাকা সুনামির সাথে কি ভাবে যুঝবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছিনা। দিশেহারা হয়ে পরছি আমি। নিজের ইমেজ্* এমন তৈরি করেছি যে কারো কাছে গিয়ে সাহায্য চাইবো সেই উপায় নেই। সবাই তো তখন সু্যোগ নিতে চাইবে।
জানিনা সুদিপার কেসটার পর থেকে কেন হঠাৎ হঠাৎ মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। আমি কিছু বলতে চাইলে, কেউ থামিয়ে দিলে মনে হচ্ছে মেরে দি ধরে। আমার কথা কেউ না মানলে মনে হচ্ছে মেরে দি। এত রাগ হচ্ছে কেন আমার। আজকে এই মুহুর্তে আমার নিজের কেউ নেই, সবাইকে আমি হারিয়েছি। যে আছে সেও সাথিহারা; সে আমাকে কি ভাবে সান্ত্বনা দেবে?
চোখে জল চলে আসছে আমার। কিন্তু আমি তো হিরো। হিরোরা কাঁদে নাকি। আমি তো হিম্যান, হিম্যানের কি হৃদয় থাকে নাকি যে কাঁদবে ভালোবাসবে, সহ্য করবে?
কোলকাতার এঁদো গলির হিরো এখন দেখ্* কেমন লাগে!!!
তুলির ফোনটা কে ওই ভাবে রাখতেই আমার মাথায় রক্ত চরে গেলো। আমি পাপ্পুকে রেখে দিয়েই দৌড়ে বেরোতে চাইছিলাম। সেই সময় পাপ্পু বমি করতে শুরু করে।
কিছুই বেরোয়নি বমিতে শুধু জল, তাও ভাবছিলাম করুক গিয়ে তুলিকে আগে আটকাই। কিন্তু তারপর ওর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলো। আমি তা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। কি হবে? এক একবার ও ওঁক তুলছে আর গল গল করে রক্ত বেরোচ্ছে নাক দিয়ে। এই অবস্থায় ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া মানে চরম অমানবিকতা। আমি কোনোরকমে ওকে টেনে হিচড়ে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে শাওয়ারের তলায় বসিয়ে দিলাম। জল ছেড়ে দিয়ে ওকে পরিস্কার করতে শুরু করলাম। অনেকক্ষন লাগলো ওকে দাড় করাতে। ধীরে ধীরে রক্ত বন্ধ হোল। টান টান করে বাথরুমে শুইয়ে দিয়েছি। ও যখন কথা বললো তখন আমি ওর গা হাত পা মুছিয়ে ওকে আমার বিছানায় শুইয়ে বেরোলাম। আমাকে বলছিলো যে ঘুমোলে ঠিক হয়ে যাবে। আমিও ভেজা ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে পরলাম। ফাংশান প্রায় শেষের পথে।
তুলি কোথায় তুলি কোথায়? খুজতে খুজতে আমি ওকে যখন পেলাম আমার মাথায় রক্ত চরে গেলো। নির্লজ্জের মত নেচে চলেছে স্টেজের সামনে, অনেকগুলো ছেলে ওর সাথে নাচছে। এমন কি কেউ কেউ ওর গায়েও হাত দিয়ে দিচ্ছে ইচ্ছে করে। মাই পাছাতে অনবরত হাত পরছে সেটা আমি ভালো করেই দেখলাম। কই, আজ তো সন্তু নেই যে ওকে জোর করে নাচাবে। তাহলে?
আমি চাইছি ও আমাকে দেখুক কিন্তু ও নাচাতে এমনই মত্ত যে এদিক ওদিক কি দেখবে। ওই একমাত্র মেয়ে যে নাচছে। এ সুযোগ আর কেউ ছারে ছেলেদের ভির ওকে ঘিরে ধরেছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও ভির ঠেলে আর এগুতে পারলাম না। তাই দূর থেকেই ওকে দেখতে থাকলাম।
আরেকটা গানের পরেই মাইকে তুমুল ঘোষনা হতে শুরু করলো ফাংশান শেষ। তুলি ঘরে ফেরার ভিরে মিশে গেলো ধাক্কাধাক্কিতে আমিও ওকে হারিয়ে ফেললাম। কি করি?
আমি ওদের বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। ভিড় এড়িয়ে একটা শর্টকাট রাস্তা ধরলাম। তাতেও অনেক লোক, তবে তুলনামুলক কম। তাড়াতাড়ি করে সেই রাস্তা দিয়ে গিয়ে আমি দাড়িয়ে রইলাম তুলিদের বাড়ি থেকে একটু আড়ালে। এখান দিয়েও অনেক লোক আসছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুটো সিগেরেট খাওয়া হয়ে গেল তুলি তাও আসছেনা। কি ব্যাপার। এত তাড়াতাড়ি কি ও বাড়িতে ঢুকে গেলো?
নাঃ আমি যে গতিতে এসেছি তাতে ওর পক্ষে আমার আগে পৌছুনো সম্ভব না। তাহলে?
আস্তে আস্তে রাস্তা ফাঁকা হয়ে আসছে। আমি ওর সম্ভাব্য ফেরার রাস্তা ধরে আবার শহিদনগরের মাঠের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। একটা বাঁক নিতেই দেখি তুলি দাড়িয়ে আছে। দুটো ছেলের সাথে। ছেলেগুলোকে দেখেই মনে হচ্ছে মালটাল টেনে আছে। তুলি আমার দিকে পিছন করে দাড়িয়ে। কি বলছে শুনতে পারছিনা কারন খানিকটা দূরে আছে ওরা। একটা ছেলে কথা বলছে আর একটা ছেলের মুখ বেশ হাসি হাসি আর চোখে মুখে একটা প্রেম প্রেম ভাব, যেন নতুন প্রেমে পরেছে, তুলিকে বেশ ইম্প্রেসড্* হয়ে দেখছে। তুলিতে যেন তন্ময় হয়ে আছে। আরেকটা ছেলের সাথে তুলি গল্প করছে। তুলি একটা কালো জিন্স্* আর কালো গোল গলার গেঞ্জি পরেছে। হাল্কা একটা জ্যাকেট ওর কোমরে জড়ানো। মুখ নরছে, বেশ কায়দা করে চিউয়িং গাম চেবাচ্ছে।
আমি ধীরে ধীরে ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম। তুলি দেখছি বলছে ও ভুমির ফাংশান এর আগে কোথায় কোথায় দেখেছে। আমি পিছন থেকে গিয়ে তুলির সামনে দাঁড়ালাম। তুলি আমাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।
আমার মটকা এমনি গরম ছিলো তাই বিরক্তি না চেপেই ওকে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি ব্যাপার? এখানে দাড়িয়ে আছো?’
আমার গলার টোন শুনে ছেলেগুলো একটু ঘাবড়েই গেলো, কি ভাবল আমাকে কে জানে, হয়তো তুলির দাদা। কিছু একটা গোলমাল হয়েছে আন্দাজ করে মানে মানে কেটে পরলো ‘এই আসি আজকে পরে আবার একদিন গল্প হবে।’
আরেকটা ছেলে যার কথা বলছিলাম সে বলল ‘আসছি সুচু।’ হাতের ইশারায় ফোন করার ইঙ্গিত দিলো। যেতে যেতে বার বার ঘুরে ঘুরে দেখছে আমাদের দিকে। শালা প্রেমে পরেছে সিওর।
তুলি ভয়ে কাঁপছে আমাকে দেখে। কিছু বলতে যাচ্ছিলো আমি থামিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম ‘তোমাকে বারন করেছিলাম না?’
তুলি কোন উত্তর দিতে পারছেনা। বলির পাঁঠার মত ঠকঠক করে কাঁপছে। আমার মাথার পারদ চরছে। আমি হাত ধরে হ্যাচকা টান দিলাম ওর, বাড়ির দিকে টেনে নিয়ে চললাম।
বাঁকটা ঘুরে দাঁড় করিয়ে দিলাম।
‘কি ব্যাপারটা কি? তোমাকে একদিন আমি কিছু বলিনি বলে তো তুমি যা খুশি শুরু করেছো? এর মধ্যে আলাপ আর ফোন নাম্বারও দেওয়া হয়ে গেলো? আর ছেলেটা তোমাকে সুচু বলে ডাকল কেন?’
তুলি মাথা নিচু করে বললো ‘আমার ভালো নাম সুচন্দ্রা, তাই সুচু বলে ডেকেছে।’
‘বাহঃ এই আলাপ আর এই সুচু, আমিও তো জানতাম না যে তোমাকে কেউ সুচু বলে ডাকতে পারে।’
তুলি আবার মাথা নিচু করে রইলো আস্তে করে জবাব দিলো ‘আমার কলেজের বন্ধু ও’
‘দুজনেই?’
‘না, একজন?’
‘আরেকজন বন্ধুর বন্ধু তাই তো, কি প্রেম নিবেদন করে দিলো নাকি যে ফোন নাম্বার দিয়ে দিলে?’
তুলি আমার মুখের দিকে তাকালো মাথা তুলে আবার মাথা নিচু করে দিলো।
‘এরকম নির্লজ্জের মত নাচানাচি করলে আমার মান সন্মানটা কোথায় রাখলে আর?’
তুলি চুপ করে থাকল। আমার আরো রাগ উঠে গেলো আমি ওর কাঁধ ধরে ঝাকাতে শুরু করলাম আর বলতে থাকলাম ‘আমি বারন করলাম শুনলে না, আমার নাম দিয়ে বাড়ি থেকে বেরোলে তাও একা, আর এখানে এসে নির্লজ্জের মত পাছা দুলিয়ে নাচ করলে একগাদা ছেলের সাথে, আমি তো তোমাকে দেখলাম, কে কে তোমার এখানে ওখানে হাত দিল তাতে তোমার কিছু যায় আসেনা ঠিকই কিন্তু আমার অনেক কিছু যায় আসে, তোমার মান সন্মান না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে, আমি একটা ভদ্র ফ্যামিলির ছেলে, তারওপর নতুন প্রেমিক জুটিয়ে নিলে। আর কি বাকি রেখেছো?’
তুলি আমার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে গলা বুজে আসার মত স্বরে বললো ‘অভি তুমি এরকম করে বলছো কেন?’
‘কিরকম করে বলবো?’ আমি চিৎকার করে উঠলাম। তুলি কেঁপে উঠলো।
আমার মাথা থেকে মনে হচ্ছে রক্ত ফিনকি দিয়ে বেরোবে ‘দুপুর বেলা তো অনেক অভিনয় করলে আর এখন অন্যরুপ তাই না?’ আমি হিসহিস করে বললাম।
‘কি বলছো!! আমি অভিনয় করেছি তোমার সাথে? থাক তোমার আর আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে হবেনা, আমি যখন এতই খারাপ...’ তুলি কেঁদে দিলো।
‘তা কেন রাখতে হবে? তোমার তো পুজোর কোটা পূরণ হয়ে গেছে, যা মস্তি করার করে নিয়েছো এবার কালিপুজোর কোটাও পূরণ হয়ে গেছে, এবার এর সাথেও শুয়ে মস্তি করো, তারপর জগদ্ধাত্রি পুজোর জন্যে ছেলে পটানোর চেষ্টা কোরো। তোমার বাড়ির সন্মন্ধে এত শুনেও কেন যে এগোলাম আমি বোকাচোদার মত, কি জানি?’
তুলি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
আমার মাথা আরো গরম হয়ে গেলো আমি তুলি ধাক্কা দিয়ে বললাম ‘দয়া করে সিন ক্রিয়েট কোরোনা, আমি নিজের থেকে এসে নাটক করছি না, অন্যায় করবে আর বললে নাটক তাই তো? যাও ভাগো তোমার মত মেয়ের আমার দরকার নেই।’
তুলি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো অপমানে।
আমি হাল্কা একটা ধাক্কা মেরে ওকে বললাম ‘যা বাড়ি যা, আমার নাম করে তো বেরিয়েছিস, আবার কোথায় গিয়ে কি করে পেট বাধাবি আর পরে আমার নামে দোষ পরবে।’ আমি পাগলা কুকুরের মত হয়ে গেছি তুলির এসব দেখে।
তুলি ওর বাড়ির গলিতে ঢুকে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো ‘ভালোই কাটালাম আমার জন্মদিন। ধন্যবাদ।’
জানিনা সুদিপার কেসটার পর থেকে কেন হঠাৎ হঠাৎ মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। আমি কিছু বলতে চাইলে, কেউ থামিয়ে দিলে মনে হচ্ছে মেরে দি ধরে। আমার কথা কেউ না মানলে মনে হচ্ছে মেরে দি। এত রাগ হচ্ছে কেন আমার। আজকে এই মুহুর্তে আমার নিজের কেউ নেই, সবাইকে আমি হারিয়েছি। যে আছে সেও সাথিহারা; সে আমাকে কি ভাবে সান্ত্বনা দেবে?
চোখে জল চলে আসছে আমার। কিন্তু আমি তো হিরো। হিরোরা কাঁদে নাকি। আমি তো হিম্যান, হিম্যানের কি হৃদয় থাকে নাকি যে কাঁদবে ভালোবাসবে, সহ্য করবে?
কোলকাতার এঁদো গলির হিরো এখন দেখ্* কেমন লাগে!!!
তুলির ফোনটা কে ওই ভাবে রাখতেই আমার মাথায় রক্ত চরে গেলো। আমি পাপ্পুকে রেখে দিয়েই দৌড়ে বেরোতে চাইছিলাম। সেই সময় পাপ্পু বমি করতে শুরু করে।
কিছুই বেরোয়নি বমিতে শুধু জল, তাও ভাবছিলাম করুক গিয়ে তুলিকে আগে আটকাই। কিন্তু তারপর ওর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলো। আমি তা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। কি হবে? এক একবার ও ওঁক তুলছে আর গল গল করে রক্ত বেরোচ্ছে নাক দিয়ে। এই অবস্থায় ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া মানে চরম অমানবিকতা। আমি কোনোরকমে ওকে টেনে হিচড়ে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে শাওয়ারের তলায় বসিয়ে দিলাম। জল ছেড়ে দিয়ে ওকে পরিস্কার করতে শুরু করলাম। অনেকক্ষন লাগলো ওকে দাড় করাতে। ধীরে ধীরে রক্ত বন্ধ হোল। টান টান করে বাথরুমে শুইয়ে দিয়েছি। ও যখন কথা বললো তখন আমি ওর গা হাত পা মুছিয়ে ওকে আমার বিছানায় শুইয়ে বেরোলাম। আমাকে বলছিলো যে ঘুমোলে ঠিক হয়ে যাবে। আমিও ভেজা ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে পরলাম। ফাংশান প্রায় শেষের পথে।
তুলি কোথায় তুলি কোথায়? খুজতে খুজতে আমি ওকে যখন পেলাম আমার মাথায় রক্ত চরে গেলো। নির্লজ্জের মত নেচে চলেছে স্টেজের সামনে, অনেকগুলো ছেলে ওর সাথে নাচছে। এমন কি কেউ কেউ ওর গায়েও হাত দিয়ে দিচ্ছে ইচ্ছে করে। মাই পাছাতে অনবরত হাত পরছে সেটা আমি ভালো করেই দেখলাম। কই, আজ তো সন্তু নেই যে ওকে জোর করে নাচাবে। তাহলে?
আমি চাইছি ও আমাকে দেখুক কিন্তু ও নাচাতে এমনই মত্ত যে এদিক ওদিক কি দেখবে। ওই একমাত্র মেয়ে যে নাচছে। এ সুযোগ আর কেউ ছারে ছেলেদের ভির ওকে ঘিরে ধরেছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও ভির ঠেলে আর এগুতে পারলাম না। তাই দূর থেকেই ওকে দেখতে থাকলাম।
আরেকটা গানের পরেই মাইকে তুমুল ঘোষনা হতে শুরু করলো ফাংশান শেষ। তুলি ঘরে ফেরার ভিরে মিশে গেলো ধাক্কাধাক্কিতে আমিও ওকে হারিয়ে ফেললাম। কি করি?
আমি ওদের বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। ভিড় এড়িয়ে একটা শর্টকাট রাস্তা ধরলাম। তাতেও অনেক লোক, তবে তুলনামুলক কম। তাড়াতাড়ি করে সেই রাস্তা দিয়ে গিয়ে আমি দাড়িয়ে রইলাম তুলিদের বাড়ি থেকে একটু আড়ালে। এখান দিয়েও অনেক লোক আসছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুটো সিগেরেট খাওয়া হয়ে গেল তুলি তাও আসছেনা। কি ব্যাপার। এত তাড়াতাড়ি কি ও বাড়িতে ঢুকে গেলো?
নাঃ আমি যে গতিতে এসেছি তাতে ওর পক্ষে আমার আগে পৌছুনো সম্ভব না। তাহলে?
আস্তে আস্তে রাস্তা ফাঁকা হয়ে আসছে। আমি ওর সম্ভাব্য ফেরার রাস্তা ধরে আবার শহিদনগরের মাঠের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। একটা বাঁক নিতেই দেখি তুলি দাড়িয়ে আছে। দুটো ছেলের সাথে। ছেলেগুলোকে দেখেই মনে হচ্ছে মালটাল টেনে আছে। তুলি আমার দিকে পিছন করে দাড়িয়ে। কি বলছে শুনতে পারছিনা কারন খানিকটা দূরে আছে ওরা। একটা ছেলে কথা বলছে আর একটা ছেলের মুখ বেশ হাসি হাসি আর চোখে মুখে একটা প্রেম প্রেম ভাব, যেন নতুন প্রেমে পরেছে, তুলিকে বেশ ইম্প্রেসড্* হয়ে দেখছে। তুলিতে যেন তন্ময় হয়ে আছে। আরেকটা ছেলের সাথে তুলি গল্প করছে। তুলি একটা কালো জিন্স্* আর কালো গোল গলার গেঞ্জি পরেছে। হাল্কা একটা জ্যাকেট ওর কোমরে জড়ানো। মুখ নরছে, বেশ কায়দা করে চিউয়িং গাম চেবাচ্ছে।
আমি ধীরে ধীরে ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম। তুলি দেখছি বলছে ও ভুমির ফাংশান এর আগে কোথায় কোথায় দেখেছে। আমি পিছন থেকে গিয়ে তুলির সামনে দাঁড়ালাম। তুলি আমাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।
আমার মটকা এমনি গরম ছিলো তাই বিরক্তি না চেপেই ওকে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি ব্যাপার? এখানে দাড়িয়ে আছো?’
আমার গলার টোন শুনে ছেলেগুলো একটু ঘাবড়েই গেলো, কি ভাবল আমাকে কে জানে, হয়তো তুলির দাদা। কিছু একটা গোলমাল হয়েছে আন্দাজ করে মানে মানে কেটে পরলো ‘এই আসি আজকে পরে আবার একদিন গল্প হবে।’
আরেকটা ছেলে যার কথা বলছিলাম সে বলল ‘আসছি সুচু।’ হাতের ইশারায় ফোন করার ইঙ্গিত দিলো। যেতে যেতে বার বার ঘুরে ঘুরে দেখছে আমাদের দিকে। শালা প্রেমে পরেছে সিওর।
তুলি ভয়ে কাঁপছে আমাকে দেখে। কিছু বলতে যাচ্ছিলো আমি থামিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম ‘তোমাকে বারন করেছিলাম না?’
তুলি কোন উত্তর দিতে পারছেনা। বলির পাঁঠার মত ঠকঠক করে কাঁপছে। আমার মাথার পারদ চরছে। আমি হাত ধরে হ্যাচকা টান দিলাম ওর, বাড়ির দিকে টেনে নিয়ে চললাম।
বাঁকটা ঘুরে দাঁড় করিয়ে দিলাম।
‘কি ব্যাপারটা কি? তোমাকে একদিন আমি কিছু বলিনি বলে তো তুমি যা খুশি শুরু করেছো? এর মধ্যে আলাপ আর ফোন নাম্বারও দেওয়া হয়ে গেলো? আর ছেলেটা তোমাকে সুচু বলে ডাকল কেন?’
তুলি মাথা নিচু করে বললো ‘আমার ভালো নাম সুচন্দ্রা, তাই সুচু বলে ডেকেছে।’
‘বাহঃ এই আলাপ আর এই সুচু, আমিও তো জানতাম না যে তোমাকে কেউ সুচু বলে ডাকতে পারে।’
তুলি আবার মাথা নিচু করে রইলো আস্তে করে জবাব দিলো ‘আমার কলেজের বন্ধু ও’
‘দুজনেই?’
‘না, একজন?’
‘আরেকজন বন্ধুর বন্ধু তাই তো, কি প্রেম নিবেদন করে দিলো নাকি যে ফোন নাম্বার দিয়ে দিলে?’
তুলি আমার মুখের দিকে তাকালো মাথা তুলে আবার মাথা নিচু করে দিলো।
‘এরকম নির্লজ্জের মত নাচানাচি করলে আমার মান সন্মানটা কোথায় রাখলে আর?’
তুলি চুপ করে থাকল। আমার আরো রাগ উঠে গেলো আমি ওর কাঁধ ধরে ঝাকাতে শুরু করলাম আর বলতে থাকলাম ‘আমি বারন করলাম শুনলে না, আমার নাম দিয়ে বাড়ি থেকে বেরোলে তাও একা, আর এখানে এসে নির্লজ্জের মত পাছা দুলিয়ে নাচ করলে একগাদা ছেলের সাথে, আমি তো তোমাকে দেখলাম, কে কে তোমার এখানে ওখানে হাত দিল তাতে তোমার কিছু যায় আসেনা ঠিকই কিন্তু আমার অনেক কিছু যায় আসে, তোমার মান সন্মান না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে, আমি একটা ভদ্র ফ্যামিলির ছেলে, তারওপর নতুন প্রেমিক জুটিয়ে নিলে। আর কি বাকি রেখেছো?’
তুলি আমার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে গলা বুজে আসার মত স্বরে বললো ‘অভি তুমি এরকম করে বলছো কেন?’
‘কিরকম করে বলবো?’ আমি চিৎকার করে উঠলাম। তুলি কেঁপে উঠলো।
আমার মাথা থেকে মনে হচ্ছে রক্ত ফিনকি দিয়ে বেরোবে ‘দুপুর বেলা তো অনেক অভিনয় করলে আর এখন অন্যরুপ তাই না?’ আমি হিসহিস করে বললাম।
‘কি বলছো!! আমি অভিনয় করেছি তোমার সাথে? থাক তোমার আর আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে হবেনা, আমি যখন এতই খারাপ...’ তুলি কেঁদে দিলো।
‘তা কেন রাখতে হবে? তোমার তো পুজোর কোটা পূরণ হয়ে গেছে, যা মস্তি করার করে নিয়েছো এবার কালিপুজোর কোটাও পূরণ হয়ে গেছে, এবার এর সাথেও শুয়ে মস্তি করো, তারপর জগদ্ধাত্রি পুজোর জন্যে ছেলে পটানোর চেষ্টা কোরো। তোমার বাড়ির সন্মন্ধে এত শুনেও কেন যে এগোলাম আমি বোকাচোদার মত, কি জানি?’
তুলি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
আমার মাথা আরো গরম হয়ে গেলো আমি তুলি ধাক্কা দিয়ে বললাম ‘দয়া করে সিন ক্রিয়েট কোরোনা, আমি নিজের থেকে এসে নাটক করছি না, অন্যায় করবে আর বললে নাটক তাই তো? যাও ভাগো তোমার মত মেয়ের আমার দরকার নেই।’
তুলি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো অপমানে।
আমি হাল্কা একটা ধাক্কা মেরে ওকে বললাম ‘যা বাড়ি যা, আমার নাম করে তো বেরিয়েছিস, আবার কোথায় গিয়ে কি করে পেট বাধাবি আর পরে আমার নামে দোষ পরবে।’ আমি পাগলা কুকুরের মত হয়ে গেছি তুলির এসব দেখে।
তুলি ওর বাড়ির গলিতে ঢুকে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো ‘ভালোই কাটালাম আমার জন্মদিন। ধন্যবাদ।’