Thread Rating:
  • 121 Vote(s) - 2.73 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy মায়ের বিরল দুগ্ধভিজান
update March 1


দুপুরের ঘুমের পর সারাদিনের যাত্রার ক্লান্তি যেন কেটে গিয়ে শরীর-মনে একটা মিষ্টি হালকা ভাব ফিরে এসেছিল।

বিকেলের আলো ম্লান হয়ে আসতেই রাতের আয়োজন শুরু হল। মা রান্নাঘরে পা রাখল, তার পায়ের নূপুরের শব্দে একটা নরম ছন্দ তৈরি হচ্ছিল।

তাকের ওপর সাজানো কৌটোগুলো একে একে খুলে দেখতে লাগল, হাতে ধরা মসলার ডিব্বাগুলোর গন্ধ যেন তাঁর নাকের কাছে এসে খেলা করছিল।

মনে মনে ভাবতে শুরু করল-আজ রাতে কী রান্না করা যায়, যা সবার মন ভরিয়ে দেবে?

ঠিক তখনই চুমকি দি রান্নাঘরে এসে ঢুকল। তাঁর মুখে একটা স্নিগ্ধ হাসি, চোখে সহায়তার ইচ্ছা ঝিলিক দিচ্ছিল।

মা তাঁকে দেখে একটু মিষ্টি করে হেসে বলল -, “চুমকি, বৃদ্ধদের জন্য কী ধরনের খাবার ভালো হয় বল তো? এই রান্নাঘরে যা আছে, তা দিয়ে কী করা যায় যাতে তাঁদের শরীরে সহজে হজম হয়, আর স্বাস্থ্যও ভালো থাকে?”

চুমকিদি একটু থমকে, তারপর গলায় একটা নরম সুর এনে বলল - “দিদি, ঠিকই ধরেছ, বৃদ্ধদের জন্য সাধারণত নরম আর হালকা খাবারই ভালো, মসলাদার কিছু খেলে অনেকের পেটে গোলমাল হয়, তবে সমস্যাটা এখানেই কারো কারো তো দাঁতই নেই! চিবিয়ে খাওয়া তো দূরের কথা, সবকিছু গিলে ফেলতে হয়।”

মা চিন্তিত মুখে তাকিয়ে কপালে হালকা ভাঁজ ফেলে বলল - “এভাবে খেলে তো সত্যিই বিপদ, ঠিকমতো চিবিয়ে খেতে না পারলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে, হজমেরও সমস্যা দেখা দেবে, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না।

চুমকিদি একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে বলল,- “হ্যাঁয়্য়্য়, দিদি, ঠিকই বলেছ, এটাই তো সবচেয়ে বড় ঝামেলা, আমাদের এখানে রান্নার জন্য বেশি সময় বা আলাদা লোকজন নেই, যিনি ছিলেন, তিনি তো চলে গেছেন, এখন আমি যতটুকু পারি, তাই দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছি।”

মায়ের চোখে তখন একটা দৃঢ় সংকল্পের আলো জ্বলে উঠল, কিছুক্ষণ ভেবে বলল - “ঠিক আছে, আমি একটা পথ বার করছি।” গলায় একটা আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ল।

সঙ্গে সঙ্গে মা কৌটোগুলো থেকে উপকরণ বের করতে শুরু করল, প্রথমে ডাল নিয়ে ভালো করে ফোটাল, গলিয়ে একটা পাতলা, মসৃণ স্যুপ তৈরি করল। সেটা এতটাই নরম আর হালকা ছিল যে দাঁতের কোনো প্রয়োজনই পড়বে না, চামচে তুলে মুখে দিলেই গলা দিয়ে নেমে যাবে। গন্ধটা ছড়িয়ে পড়ল রান্নাঘরে, একটা উষ্ণ আমেজ এনে দিল।

তারপর মা একটু থমকে গিয়ে চুমকিদিকে বলল, - “ডাল তো হল, কিন্তু একটু ভরপুর কিছু চাই।” চোখে একটা চিন্তার ঝিলিক খেলে গেল, তৎক্ষণাৎ ডালিয়া বের করে সেটা ভালো করে সেদ্ধ করে, সামান্য লবণ আর হলুদ মিশিয়ে নরম, পুষ্টিকর একটা খাবার তৈরি করলেন, গরম ডালিয়ার গন্ধে রান্নাঘর ভরে গেল যেমন সহজপাচ্য, তেমনই পেট ভরানো।

চুমকিদির দিকে তাকিয়ে মা একটু হেসে বলল,  - “এবার দেখ, এতে ওনারা আর কষ্ট পাবেন না, এটা ওদের জন্য একদম মানানসই।”

চুমকিদি মায়ের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন, তাঁর চোখে একটা চমক খেলে গিয়ে বলল - “দিদি, তোমার তুলনা হয় না, তোমার মতো মানুষ থাকলে কাউরির কোনদিন কষ্ট হবে না!”

রাতের খাবারের আয়োজন শুরু হল। মা রান্নাঘরের ব্যস্ততা সামলে একে একে টেবিল সাজাতে লাগল, বৃদ্ধরা ধীরে ধীরে টেবিলের দিকে এগিয়ে এলেন, তাঁদের পায়ের শব্দে একটা নরম ছন্দ তৈরি হচ্ছিল।

মা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁদের জন্য পাতলা ডালের বাটি আর ডালিয়ার থালা সাজিয়ে দিল, গরম খাবারের ভাপ ওঠা বাটিগুলো দেখে খুব সুস্বাদু আর লোভনীয় মনে হচ্ছিল, যেন একটা মায়ের স্নেহ হাতে হাতে বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

একজন বৃদ্ধ চোখ বড় করে মায়ের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে বললেন, - “এটা তুমি বানিয়েছ, মা?”

মা স্নেহে ভরা গলায় বলল, - “হ্যাঁ জেঠু, আজকের খাবারটা আমি আপনাদের জন্যই তৈরি করেছি, খেয়ে বলুন তো, কেমন হয়েছে?”

বৃদ্ধরা একে একে খেতে শুরু করলেন, পাতলা ডাল আর নরম ডালিয়া তাঁদের মুখে যেতেই তৃপ্তির একটা আলো ফুটে উঠল, একজন বৃদ্ধা আনন্দে বলে উঠলেন, -  “বৌমা, অনেকদিন পর এমন সুস্বাদু খাবার খেলাম। সত্যিই অপূর্ব হয়েছে!”

আরেকজন যেন স্বপ্নে হারিয়ে গিয়ে বললেন, -  “তোমার হাতের রান্নায় মায়ের সেই পুরোনো স্বাদ ফিরে পেলাম।” সবার মুখে হাসি, প্রশংসার ঢেউ উঠল। খাবারের গন্ধ আর আড্ডার মিশেলে ঘরটা ভরে গেল এক অপূর্ব মাধুর্যে।

চুমকিদি দূর থেকে সব দেখে মায়ের কাছে এগিয়ে এসে বলল, - “দিদি, তুমি জানো? এভাবে ওদের জন্য কেউ এত যত্ন করে কিছু করেনি, ওরা সত্যিই খুব খুশি।”

মা একটা মধুর হাসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল, - “ওরা খুশি থাকলে আমার সব কষ্ট ধুয়ে দূর হয়ে যায়।”

খাওয়া শেষে সবাই একে একে উঠে গেলেন, কিন্তু মা লক্ষ্য করল, দুজন বৃদ্ধ বিছানায় শুয়ে আছেন, তাঁরা খেতে আসেননি, মায়ের চোখে চিন্তার ছায়া পড়ল, চুমকিদির দিকে তাকিয়ে নরম গলায় জিজ্ঞেস করল, “ওনারা খেতে আসেননি কেন? শরীর খারাপ নাকি?”

চুমকিদি একটু ইতস্তত করে বলল, - “দিদি, ওনাদের দাঁত নেই, ভালো করে কিছু খেতে পারেন না, শুধু গলানো খাবার চটকে পাতলা করে চামচে খাওয়াতে হয়, গলানো কলা, ডাল, সবজি যা পাই, তাই মিশিয়ে দিই।”

মা গভীর ভাবনায় ডুবে গেল, শুধু গলানো খাবারে কীভাবে পুষ্টি মিলবে? তাঁদের শরীর ভালো রাখতে হলে তো ভালো খাবার চাই, কোনো কথা না বলে মা নিজের হাতে তৈরি গলানো ডালের বাটি নিয়ে একজন বৃদ্ধের কাছে গেল, বিছানার পাশে বসে চামচে করে খাবার তুলে এক বৃদ্ধের ঠোঁটের কাছে এগিয়ে দিয়ে নরম গলায় বলল - “জেঠু, আসুন, আমি আপনাকে খাইয়ে দিই,একটু খেলে শরীরে জোর পাবেন।”

বৃদ্ধ প্রথম চামচটা মুখে নিলেন, কিন্তু মুখ কুঁচকে বললেন, - “বৌমা, মুখে ঝাল লাগছে, অনেকদিন ধরে নুন-ঝাল কিছু খেতে পারি না।”

মা একটু থমকে গেলে, তারপর আরও চিন্তিত হয়ে তাঁদের জন্য একটা নতুন উপায় ভাবতে লাগল, যাতে স্বাদ আর পুষ্টি দুটোই মিলে যায়।
Like & Repu..... thanks
[+] 4 users Like Siletraj's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মায়ের বিরল দুগ্ধভিজান - by Siletraj - 26-03-2025, 01:26 AM



Users browsing this thread: nextpage, Saker44, sam102, 12 Guest(s)