31-12-2018, 04:19 PM
তুলির আর অনেক কথা বলা হোলোনা। প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা অফিস ফেরত ওদের বাড়ি ঘুরে আসতাম। তুলির ম্যালেরিয়া হয়েছে। অনেকদিনের ধাক্কা। জ্বর আসার দুদিন পরে ম্যালেরিয়া ধরা পরেছে। প্রতিদিন প্রায় ঘন্টাখানেক ওদের বাড়িতে থেকে আসতাম। সব সময়ই প্রায় ঘুমাচ্ছে ও। এই কয়দিন সেই স্বপনকেও দেখছিনা, মনে মনে বুঝতে পারছি যে ও আমার এখানে আসাটা পছন্দ করছেনা। করছেনা তো করছেনা, ছেড়া গেছে আমার।
তুলির বাড়ি ফেরত রোজ ঠেকে গিয়ে একটু করে বসি। নাঃ একদম গতানুগতিক জীবন। তুলি তাও আমার জীবনের মশলা ছিলো, ওকে দেখলেই মনে একটা বাঁশি বেজে ওঠে, কেউ যেন নেচে ওঠে, বুকের ধরফর বন্ধ হয়ে যায় যেন। একেই বোধহয় প্রেম বলে। হয়তো কোনদিন আরো ভালোভাবে বর্ননা করতে পারবো। মনটা খারাপ লাগে এইরকম প্রানচঞ্চল মেয়ে নিস্তেজ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে দেখে। এমনিতে রোগাপাতলা, তার ওপর এখন যেন বিছানার সাথে মিশে গেছে। অনেক অন্যায় ভাবছিলাম ওর সন্মন্ধে, কি নোংরা নোংরা কথাই না চিন্তা করছিলাম, এইটুকু মেয়ের সন্মন্ধে। প্রতক্ষ ভাবে আমার দোষ না হলেও, আমার তো চিলের পিছনে দৌড়নর আগে ভাবা উচিত ছিলো চিল মানুষের কান নিতে পারেনা।
সুদিপার কথা অনেক চিন্তা করেছি এই কদিনে। কেন এরকম করলো। আমাকেই টার্গেট করলো কেন? ওর ব্যাক্তিগত পছন্দ হলে বুঝতাম যে এরকম কথাবার্তার যুক্তি আছে। যে আমাকে তুলির সন্মন্ধে মন বিষিয়ে দিয়ে ওর দিকে টেনে নেওয়া। যেটা নাড়ি চরিত্রসুলভ মানসিকতা। কিন্তু নিজের বরের দর্শকাম চরিতার্থ করার জন্যে কেন আমার পিছনে পরে গেলো। আর সত্যি বলতে ও তুলিকে না দেখেও ওর সন্মন্ধে এত কথা জানলো কি করে? সুদিপার সাথে তো প্রথম পরিচয় সেই দশমির দিনে আর চারদিনের মধ্যে এতকিছু... আমি ভেবে কুল করতে পারছিনা। ও যে আমাকে ভুল বোঝাতে চাইছিলো সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কিন্তু কেন মেদিনীপুর, সেই শ্যামল আর প্রকাশ, কেন টুলটুলির ঘটনা তুলির ওপর দিয়ে চালিয়ে দিলো? ইচ্ছাকৃত না নিজের কাছেও ভুল তথ্য থাকার দরুন। এই উত্তর কেউ আমাকে দিতে পারবেনা। যে দিতে পারতো সে আর ফিরে আসবেনা আমার উত্তর দিতে।
দিন সাতেক কেটে গেলো এই ভাবে। নিরুত্তাপ জীবনযাপন, আর প্রতিদিন তুলিদের বাড়িতে ঢূঁ মারা কিছুক্ষনের জন্যে।
জানিনা কি যে সময় চলছে আমার, অমাবস্যার কালো রাত যেন আমার পিছু ছারছেই না।
অফিস্* ফেরতা একদিন প্ল্যান করলাম যে বাড়িতে গিয়ে স্নান করে তুলিদের বাড়ি যাবো, পরের দিন রবিবার তাই দেরি করে ফিরলেও সেরকম অসুবিধে নেই। বাড়িতে ঢুকেই শুনতে পারলাম, সুবিরদা অনেকবার খুজে গেছে আমাকে, আমি ফিরলেই দেখা করতে বলেছে। আজই ফিরেছে ওরা। নিশ্চয় ভালো মাল এনেছে বিদেশ থেকে। কোনোরকমে মুখহাত ধুয়েই দৌড় দিলাম সুবিরদার বাড়িতে।
আমাকে দেখেই রিতু বৌদি হইহই করে উঠলো, ‘কিরে পুজোই নতুন মাল তুলে নাকি কাউকে পাত্তাই দিচ্ছিস নারে?’
সুবিরদা জানে বোউদি আসতে আসতে কি না কি বলতে শুরু করবে তাই তড়িঘড়ি রিতু বৌদিকে চুপ করিয়ে আমাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো।
‘চল চল থানায় যেতে হবে অনেক বড় কেস হয়েছে’ সুবির দা বেশ উদ্বিগ্ন মুখে আমাকে বলল।
‘আবার কি হোলো? এই তো সেদিন একটা কেস হোলো আজ আবার কি?’ আমি অবাক হয়ে সুবিরদাকে জিজ্ঞেস্য করলাম।
‘আরে সেই কেসটা নিয়েই তো, পোষ্টমর্টেমে অনেক কিছু বেরিয়েছে। কবির আমাকে ফোন করে বলেছে তোকে নিয়ে যেতে?’ চল ও দশটার পরে চলে যাবে, আর কথা বলতে পারবিনা।
‘আরে তুমি তো আজ এলে আর আজই এই লাফড়ায় জড়িয়ে ফেললে।’
‘আরে আগে চল, দেখ কে লাফড়ায় পরেছে’
‘মানে?’
‘মানে, কবির বলবে, তুই যাবি কি বল?’
সুবিরদার বাবার ভিন্টেজ ইয়েজদি বাইকটা বের করে সজোরে কিক্* করে স্টার্ট দিলো, আমি পিছনে চেপে বসলাম। এদের বাড়ির এই জিনিসটা আমার বেশ ভালো লাগে, পুরোনো জিনিস জমানোর বা সংগ্রহ করার বিষয়টা। এদের গ্যারেজে প্রায় তিন চারটে ভিন্টেজ গাড়ি আছে। মেশোমশায় বেঁচে থাকতে মাঝেই মাঝেই পুরোন গাড়ির রেসে নাম দিতো আর জিততোও। সুবিরদাও গাড়িগুলো বেশ ভালোবাসে। এই ইয়েজদি বাইক্*টা শুনেছি খোঁদ ইংল্যান্ড থেকে আনা।
‘আরে শালা, এরকম মেয়েছেলের মত চেপে ধরেছিস কেন? রিতুর ওপর খাঁড় খেয়ে আছিস নাকি যে এখন আমার টং করে ছেড়ে দিবি আর রাতে আমি গিয়ে গরম মেটাবো, বেচারি প্রায় বারো ঘণ্টা ফ্লাই করেছে।’
‘আরে বহুত ঠাণ্ডা তাই তোমার আড়ালে নিজেকে ঢাকছিস্*।’
‘এই হয় বেটাছেলে মেয়েছেলের চক্করে পরলে এই হয় শরীরের গর্মি সব উধাও হয়ে যায়।’
‘তোমার আর বৌদির মুখের ভাষা সত্যি মাঝে মাঝে মনে হয়...।’
‘কি মনে হয়, যে ড্রেনের পাশে দাড়িয়ে আছিস্*?’
‘ধুর তুমি চালাও তো, কথা বলতে বলতে কাকে ভিড়িয়ে দেবে, ভাবালাম কোথায় মাল খেতে ডাকছো ফুলকপির পাকোড়া দিয়ে, তা না মাঝরাতে থানায় চল...।’
‘আরে কেসটা কি বলতো? এই হাবলু শালা ঝুলে পড়লো কি করে নিজের বোউকে মেরে?’
‘জানিনা তোমার বন্ধু বলতে পারবে? তাই জলদী চলো। ফিরে তোমার বাড়ীতে গিয়ে কফি খাবো।’
আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে থানায় পৌছে গেলাম, কবিরদা আমাদের আঁড় চোখে দেখে বসতে বললো।
এই থানাটা একটু নির্জন জায়গায়, রাস্তা থেকে নেমে একটু দূরে। সামনে দুএকটা চায়ের দোকান, এগুলোতে ডিমটোস্ট, ঘুগনি, আলুরদম আর রাতের বেলা থানার কর্মিদের জন্যে ভাতটাতও পাওয়া যায়।
কিছুক্ষন বসে বুঝলাম এর থেকে চিরিয়াখানাও ভাল। কেউ চুল্লু খেয়ে লকাপে বাওয়াল করছে, তো একদল কলেজ অভিভাবিকা মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু বস্তির ছেলেকে ধরে এনেছে, আবার একদিকে বাড়িওয়ালা এসে ভাড়াটের নামে নালিশ জানাচ্ছে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা এই চাকরির সেটা বোঝায় যাচ্ছে। কবিরদা বারবার করে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। নিশ্চয় কলেজের বন্ধুর সামনে লজ্জায় পরছে তাই।
সুবিরদা কবিরদাকে কি যেন ইশারা করে আমাকে নিয়ে বাইরে চলে এলো।
বাইরের দোকানে দুটো চায়ের অর্ডার দিলাম। এই জায়গাটা বেশ ঠাণ্ডা, ফাঁকা বলেই বোধহয়। আর কয়েকদিন পরেই কালিপুজো, থানার সাদা টিউবের আলোতে শ্যামাপোকা উড়তে দেখে খেয়াল পরে যায়। হাতে গরম কাঁচের গ্লাস ধরে বেশ আরাম লাগছে। একটু কফিও মিশিয়েছে। যাকে বলে চাফি। আমার একটু টেনশান্* হচ্ছেনা তা নয়। কিন্তু আমি জানি যে আমি কোন অন্যায় করিনি, আর কবিরদা নিশ্চয় আমাকে বিশ্বাস করবে। পুলিশের লোক, নিশ্চয় মানুষ চেনেন।
আরো দুবার চাফি খেয়ে নিলাম, সুবিরদা ইওরোপ টুরের গল্প শোনাচ্ছে। সুইডেনের কোন হোটেলে স্ট্রিপ টিজ দেখেছে, তারপর রিতুকে রাতে কনিয়াক খাইয়ে ওরকম নাচিয়েছে। মানে মুখে কোনো ট্যাক্স নেই যাকে বলে। হয়তো থানায় না এসে এদের বাড়িতে গেলে রিতু বৌদি গল্প করতো যে কি ভাবে নেচে নেচে ল্যাংটো হয়েছে। সত্যি বলছি আমার পাপী মন, সেই দৃশ্য ভেবে প্যাণ্টের মধ্যে হাল্কা আন্দোলনও হোচ্ছে। মিশ্র অনুভুতির দরুন সেটা প্রকট হয়ে উঠছে না।
কবিরদা বেরিয়ে এলো। একদম জ্যাকেট পরে, ঢিক ঢিক করে একটা এনফিল্ড বাইকে করে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালো। প্রথমে বুঝতে পারিনি। ভাল করে খেয়াল করে বুঝলাম যে কবিরদা। ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলেছে। ডিউটি শেষ, তাই।
তারপর দুই বন্ধুর খিস্তির কি ফোয়ারা। এতদিন পরে দেখা আর ছারে নাকি সুযোগ। আমি যে সামনে আছি ওরা পাত্তাই দিলোনা। প্রায় পাঁচ মিনিট একে অন্যকে বাপবাপান্ত করার পর যেন দম নেওয়ার জন্যে থামল।
আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে কবিরদা বলে উঠলো, ‘এই সুবির তোর এই ভাই তো বেশ গুণধর রে? ভালো তো ফেঁসেছিস ভাইটি।’
আমার বুক দূর দূর করতে শুরু করলো কোনোরকমে বলতে পারলাম ‘ক ক্কি হয়েছে?’
‘কি হয়েছে না রে বাল্*, কি করেছিস সেটা বল? সেদিন তো ভালোই প্রসাদ খাওয়ার গল্প দিলি, তুই কি ভাবলি পুলিশ এত চোদু?’
আমার গলা পুরো চোক হয়ে গেলো, ধরা পরে গেলাম হয়তো, পুলিশে ঠিক ছুয়ে দিলো। মনে মনে দেখতে পাচ্ছি কাল পাড়াতে ঢি ঢি পরে গেছে সুদিপাদের মৃত্যুকান্ডে আমার হাত আছে বলে, আমার মা বাবার, পরিবারের সন্মানের কি হবে ভাবতে গলা বুজে এলো, হাতের পাতা ঠাণ্ডা হয়ে কনকন করছে, এই সামান্য ঠাণ্ডাতেও মনে হয় ঠকঠক করে কাঁপছি।
সুবিরদাও সিরিয়াস হয়ে গেলো, ‘কি হয়েছে রে কবির?’ জিজ্ঞেস করলো কবিরদাকে, কিন্তু চোখ আমার দিকে, চোখে কেমন অবিশ্বাস।
‘চল চল বাইক চালিয়ে আমার পিছে পিছে আয়’ কবিরদা বুলেটটা স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে গেলো। সুবিরদা চুপচাপ কবিরদাকে ফলো করলো, আমিও চুপ করে রইলাম, প্রায় দশ মিনিট পরে একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম সবাই। কবিরদা গেট খুলে ভিতরে আসতে বললো আমাদের। এটা কবিরদার ব্যাচেলর লাইফের ভাড়াবাড়ি, এখনো ভাড়া ছারেনি। বাড়ি না ফিরে গেলে এখানেই থেকে যায় সমস্ত সুযোগ সুবিধে আছে, খাওয়ার দাওয়ার বলে দিলে দিয়ে যায়। আর পুলিশের লোক যেখানে, সবাই তো একটু তেল মারবেই। বাড়ির ভিতর ঢুকে বেশ আরাম লাগছে। বেশ গরম আছে ভিতরটা। বাইরে যেন কনকন করছে। বাইকের হাওয়াতে আরো বেশী ঠান্ডা লাগছিলো যেন। দাঁতে দাঁত চেপে ছিলাম। এতক্ষনে দাঁতকপাটি সামলানো গেলো। বুকের ধুকপুকানিটা রয়েছে।
কবিরদা আমাদের বস্তে বলে নিজে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। সুবিরদা ঘুরে ঘুরে কবিরদার ঘর দেখতে শুরু করলো আর আমি উত্তেজনা চেপে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি। সুবিরদা আমার সাথে কোনো কথা বলছেনা। সেটা আমার সব থেকে খারাপ লাগছে। আমিতো কোনো দোষ করিনি। কটা ছেলে আমার মত এরকম সুযোগ ছেড়ে দিত? আজকে যদি সেরকম পরিস্থিতি হয় তো আমি সেই প্রশ্ন এদের সামনে রাখবো।
মিনিট দশেক পরে কবিরদা একটা ট্রেতে ধোঁয়া ওঠা কফি আর ছোট ছোট নিমকি বিস্কিট নিয়ে এলো আমাদের জন্যে।
কফিতে চুমুক দিয়ে সুবিরদার দিকে তাকিয়ে কবিরদা বললো ‘এই ভক্ত তোর পরিচিত আর কেসটা আমি ডিল করছি বলে, সাহেব এখনো আমাদের সাথে কফি খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।’
সুবিরদা গম্ভির ভাবে বললো ‘কি হয়েছে একটু খোলসা করে বল, ওকে তো এতদিন ধরে চিনি, এরকম কোন কেসে ও প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত তা ভাবতে অসুবিধে হচ্ছে। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি আম্নুশ আমি ভুল চিনিনা, কিন্তু সব কিছুরই ব্যাতিক্রম আছে তাই তুই খুলে বল, ও হয়তো এরকম সুযোগ আর পাবেনা নিজের দোষগুন স্বিকার করার।’
একটু খোঁচা থাকলেও বুঝলাম সুবিরদার জায়গায় আমি থাকলে আমার প্রতিক্রিয়াও একই হোতো।
‘বাবু তুই তো আমাকে সেদিন সত্যি কথা বলিসনি?’ কবিরদা আমার দিকে তাকিয়ে একটা সিগেরেট ঠোঁটে ঝুলিয়ে বললো।
‘হ্যাঁ বলিনি তো। কি করে বলবো? এরকম কথা কি বলা যায় দুম করে? তারওপর তুমি পুলিশ সে যতই সুবিরদার বন্ধু হও।’ আমি অলআউট এটাকে গেলাম। জানি মিথ্যে কথা বলে কিছু লাভ হবেনা।
‘এবার ভাইটি আমার বলতো কি কি হয়েছিলো সেদিন?’ কবিরদা একটা টু ইন ওয়ানের রেকর্ডিং বোতাম টিপে বললো।‘
আমি ঘাবড়ে গেলাম ‘মানে তুমি কি অফিসিয়ালি জিজ্ঞেস করছো?’
‘গেলো তো বিচি শুকিয়ে? আরে এই চিন্টু মালগুলো নিয়ে যত সমস্যা। আরে বাল এগুলো আমি পরে রিউইণ্ড করে শুনবো, তোর জন্যে এত খাটবো রে বাল, নাহলে বয়ে গেছিলো কফি খাইয়ে জেরা করতে,ল সোজা ঢুকিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করতাম। এরকম কেস আমার জীবনে প্রথম, আর তোকে বলি কোলকাতা পুলিশের তরফ থেকে ক্রাইম সাইকোলোজি নিয়ে আমি কাজ করছি, তো এই কেসটাতে আমার একাডেমিক ইন্টারেস্ট অনেক, ধরপাকরের থেকেও।’
সুবিরদা কবিরদার থেকে কাউণ্টার চেয়ে ফুঁকতে শুরু করলো।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে কবিরদাকে সেই দশমির দিন হাবলুদার সাথে ঝামেলা, তারপর সুদিপার আমাকে সিঁদুর মাখানো থেকে ওর বাড়ি থেকে চলে আসার সব গল্প বললাম।
আমি থামতে দেখলাম সব চুপ। কবিরদা কয়েকটা যায়গা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ঠিক সেই সময়ের যখন হাবলুদা পাশের ঘরে ঘুমোচ্ছে(?) আর সুদিপা নিজেকে বিবস্ত্র করছে আমার সাথে সেক্স করবে বলে। অনেক বার অনেক রকম প্রশ্ন করলো। কপালে বেশ ভাঁজ পরেছে দেখলাম।
সুবিরদা এবার হাল্কা চালে বলে উঠলো ‘শালা লাগিয়ে আসলেই ভালো করতি, মস্তিও হোতো আর কেসও হোতো। তুই শালা যুধিষ্ঠিরই রয়ে গেলি।’ বুঝলাম সুবিরদা ফর্মে
সত্যি বলতে এতদিনে সত্যি ঘটনাগুলো কাউকে বলতে পেরে আমার বেশ হাল্কা লাগছে, আর মনে হোচ্ছে যে অপাত্রে দান হয়নি, তাই হাল্কা চালে বললাম ‘কিছু না করেই এত কেস্*, করলে কি হোতো?’
কবিরদা কিছু না বলে উঠে গেলো। একটা ভিডিও ক্যাসেট নিয়ে এলো। প্লেয়ারে সেটা চালিয়ে দিলো, সুবিরদার উদ্দেশ্যে বললো ‘ভাইয়ের কির্তি দেখে লজ্জা পাসনা, অনেক দামি ক্যামেরাতে তোলা নাইট মোডে।’
এদিক ওদিক করে যখন চালু হোলো স্ক্রিনে দেখে প্রথমে বুঝতে পারিনি, তারপর সুদিপার সেই শেষ কথাগুলো শুনে বুঝতে পারছি যে এটা সুদিপাদের বাড়িতে সেই মুহুর্তের ঘটনা। “নির্ভয়ে করবে, কোন ভয় পাবেনা, আমার সেফ পিরিওড চলছে। আজ পুজো বলে ওষূধ খেয়েছি পিছোনোর জন্যে। আর ওর কথা চিন্তা কোরোনা।”
আমি অবাক হয়ে কবিরদার দিকে তাকালাম, কবিরদা দেখলাম নির্লিপ্ত। সুবিরদা সামনের দিকে ঝুকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে শুরু করলো সেটা। আমার খুব লজ্জা লাগছে, আবার ভয়ও লাগছে, ভিডিও যদি বিকৃত করা হয়।
ধীরে ধীরে সেই লজ্জার মুহুর্ত ভেসে এলো পর্দায়। আমি সোফার ওপরে অবশ হয়ে বসে আছি, সুদিপা আমার পুরুষাঙ্গ হাতে নিয়ে তার স্তুতি করে চলেছে, আরে বাবা, অনেকক্ষন ধরে তো চলছে, লজ্জায় মুখ দেখাতে না পাড়ার মত কেস্*। আবার সুবিরদা উৎসুক ভাবে সেটা দেখছে। ইস রিতু বৌদিকে নিশ্চয় গিয়ে বলবে। কাল থেকে অফিস ফেরতা অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতে হবে। এদের বাড়ির মুখোমুখি হোলেই তো কেস্*।
এরপর সেই আমার দৌড়ে বেরিয়ে যাওয়া, আর সুদিপার উলঙ্গ শরিরটা দরজা দাপাচ্ছে, দরজা খুলে দেওয়ার জন্যে। কি চিল চিৎকার করেছিলো, কিন্তু একি কাকে চর মারছে, এতো হাবলুদা না, হাবলুদার গলা অন্যদিক থেকে আসছে। আমি কি ঠিক দেখছি? পাপ্পু না, সুদিপা পাপ্পুকে চর মারছে। পাপ্পু ওখানে ছিলো? কি করে? কেন? আমার আগে থেকেই ছিলো? তাহলে ও আমাকে আর সুদিপাকে দেখেছে?
তুলির বাড়ি ফেরত রোজ ঠেকে গিয়ে একটু করে বসি। নাঃ একদম গতানুগতিক জীবন। তুলি তাও আমার জীবনের মশলা ছিলো, ওকে দেখলেই মনে একটা বাঁশি বেজে ওঠে, কেউ যেন নেচে ওঠে, বুকের ধরফর বন্ধ হয়ে যায় যেন। একেই বোধহয় প্রেম বলে। হয়তো কোনদিন আরো ভালোভাবে বর্ননা করতে পারবো। মনটা খারাপ লাগে এইরকম প্রানচঞ্চল মেয়ে নিস্তেজ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে দেখে। এমনিতে রোগাপাতলা, তার ওপর এখন যেন বিছানার সাথে মিশে গেছে। অনেক অন্যায় ভাবছিলাম ওর সন্মন্ধে, কি নোংরা নোংরা কথাই না চিন্তা করছিলাম, এইটুকু মেয়ের সন্মন্ধে। প্রতক্ষ ভাবে আমার দোষ না হলেও, আমার তো চিলের পিছনে দৌড়নর আগে ভাবা উচিত ছিলো চিল মানুষের কান নিতে পারেনা।
সুদিপার কথা অনেক চিন্তা করেছি এই কদিনে। কেন এরকম করলো। আমাকেই টার্গেট করলো কেন? ওর ব্যাক্তিগত পছন্দ হলে বুঝতাম যে এরকম কথাবার্তার যুক্তি আছে। যে আমাকে তুলির সন্মন্ধে মন বিষিয়ে দিয়ে ওর দিকে টেনে নেওয়া। যেটা নাড়ি চরিত্রসুলভ মানসিকতা। কিন্তু নিজের বরের দর্শকাম চরিতার্থ করার জন্যে কেন আমার পিছনে পরে গেলো। আর সত্যি বলতে ও তুলিকে না দেখেও ওর সন্মন্ধে এত কথা জানলো কি করে? সুদিপার সাথে তো প্রথম পরিচয় সেই দশমির দিনে আর চারদিনের মধ্যে এতকিছু... আমি ভেবে কুল করতে পারছিনা। ও যে আমাকে ভুল বোঝাতে চাইছিলো সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কিন্তু কেন মেদিনীপুর, সেই শ্যামল আর প্রকাশ, কেন টুলটুলির ঘটনা তুলির ওপর দিয়ে চালিয়ে দিলো? ইচ্ছাকৃত না নিজের কাছেও ভুল তথ্য থাকার দরুন। এই উত্তর কেউ আমাকে দিতে পারবেনা। যে দিতে পারতো সে আর ফিরে আসবেনা আমার উত্তর দিতে।
দিন সাতেক কেটে গেলো এই ভাবে। নিরুত্তাপ জীবনযাপন, আর প্রতিদিন তুলিদের বাড়িতে ঢূঁ মারা কিছুক্ষনের জন্যে।
জানিনা কি যে সময় চলছে আমার, অমাবস্যার কালো রাত যেন আমার পিছু ছারছেই না।
অফিস্* ফেরতা একদিন প্ল্যান করলাম যে বাড়িতে গিয়ে স্নান করে তুলিদের বাড়ি যাবো, পরের দিন রবিবার তাই দেরি করে ফিরলেও সেরকম অসুবিধে নেই। বাড়িতে ঢুকেই শুনতে পারলাম, সুবিরদা অনেকবার খুজে গেছে আমাকে, আমি ফিরলেই দেখা করতে বলেছে। আজই ফিরেছে ওরা। নিশ্চয় ভালো মাল এনেছে বিদেশ থেকে। কোনোরকমে মুখহাত ধুয়েই দৌড় দিলাম সুবিরদার বাড়িতে।
আমাকে দেখেই রিতু বৌদি হইহই করে উঠলো, ‘কিরে পুজোই নতুন মাল তুলে নাকি কাউকে পাত্তাই দিচ্ছিস নারে?’
সুবিরদা জানে বোউদি আসতে আসতে কি না কি বলতে শুরু করবে তাই তড়িঘড়ি রিতু বৌদিকে চুপ করিয়ে আমাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো।
‘চল চল থানায় যেতে হবে অনেক বড় কেস হয়েছে’ সুবির দা বেশ উদ্বিগ্ন মুখে আমাকে বলল।
‘আবার কি হোলো? এই তো সেদিন একটা কেস হোলো আজ আবার কি?’ আমি অবাক হয়ে সুবিরদাকে জিজ্ঞেস্য করলাম।
‘আরে সেই কেসটা নিয়েই তো, পোষ্টমর্টেমে অনেক কিছু বেরিয়েছে। কবির আমাকে ফোন করে বলেছে তোকে নিয়ে যেতে?’ চল ও দশটার পরে চলে যাবে, আর কথা বলতে পারবিনা।
‘আরে তুমি তো আজ এলে আর আজই এই লাফড়ায় জড়িয়ে ফেললে।’
‘আরে আগে চল, দেখ কে লাফড়ায় পরেছে’
‘মানে?’
‘মানে, কবির বলবে, তুই যাবি কি বল?’
সুবিরদার বাবার ভিন্টেজ ইয়েজদি বাইকটা বের করে সজোরে কিক্* করে স্টার্ট দিলো, আমি পিছনে চেপে বসলাম। এদের বাড়ির এই জিনিসটা আমার বেশ ভালো লাগে, পুরোনো জিনিস জমানোর বা সংগ্রহ করার বিষয়টা। এদের গ্যারেজে প্রায় তিন চারটে ভিন্টেজ গাড়ি আছে। মেশোমশায় বেঁচে থাকতে মাঝেই মাঝেই পুরোন গাড়ির রেসে নাম দিতো আর জিততোও। সুবিরদাও গাড়িগুলো বেশ ভালোবাসে। এই ইয়েজদি বাইক্*টা শুনেছি খোঁদ ইংল্যান্ড থেকে আনা।
‘আরে শালা, এরকম মেয়েছেলের মত চেপে ধরেছিস কেন? রিতুর ওপর খাঁড় খেয়ে আছিস নাকি যে এখন আমার টং করে ছেড়ে দিবি আর রাতে আমি গিয়ে গরম মেটাবো, বেচারি প্রায় বারো ঘণ্টা ফ্লাই করেছে।’
‘আরে বহুত ঠাণ্ডা তাই তোমার আড়ালে নিজেকে ঢাকছিস্*।’
‘এই হয় বেটাছেলে মেয়েছেলের চক্করে পরলে এই হয় শরীরের গর্মি সব উধাও হয়ে যায়।’
‘তোমার আর বৌদির মুখের ভাষা সত্যি মাঝে মাঝে মনে হয়...।’
‘কি মনে হয়, যে ড্রেনের পাশে দাড়িয়ে আছিস্*?’
‘ধুর তুমি চালাও তো, কথা বলতে বলতে কাকে ভিড়িয়ে দেবে, ভাবালাম কোথায় মাল খেতে ডাকছো ফুলকপির পাকোড়া দিয়ে, তা না মাঝরাতে থানায় চল...।’
‘আরে কেসটা কি বলতো? এই হাবলু শালা ঝুলে পড়লো কি করে নিজের বোউকে মেরে?’
‘জানিনা তোমার বন্ধু বলতে পারবে? তাই জলদী চলো। ফিরে তোমার বাড়ীতে গিয়ে কফি খাবো।’
আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে থানায় পৌছে গেলাম, কবিরদা আমাদের আঁড় চোখে দেখে বসতে বললো।
এই থানাটা একটু নির্জন জায়গায়, রাস্তা থেকে নেমে একটু দূরে। সামনে দুএকটা চায়ের দোকান, এগুলোতে ডিমটোস্ট, ঘুগনি, আলুরদম আর রাতের বেলা থানার কর্মিদের জন্যে ভাতটাতও পাওয়া যায়।
কিছুক্ষন বসে বুঝলাম এর থেকে চিরিয়াখানাও ভাল। কেউ চুল্লু খেয়ে লকাপে বাওয়াল করছে, তো একদল কলেজ অভিভাবিকা মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু বস্তির ছেলেকে ধরে এনেছে, আবার একদিকে বাড়িওয়ালা এসে ভাড়াটের নামে নালিশ জানাচ্ছে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা এই চাকরির সেটা বোঝায় যাচ্ছে। কবিরদা বারবার করে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। নিশ্চয় কলেজের বন্ধুর সামনে লজ্জায় পরছে তাই।
সুবিরদা কবিরদাকে কি যেন ইশারা করে আমাকে নিয়ে বাইরে চলে এলো।
বাইরের দোকানে দুটো চায়ের অর্ডার দিলাম। এই জায়গাটা বেশ ঠাণ্ডা, ফাঁকা বলেই বোধহয়। আর কয়েকদিন পরেই কালিপুজো, থানার সাদা টিউবের আলোতে শ্যামাপোকা উড়তে দেখে খেয়াল পরে যায়। হাতে গরম কাঁচের গ্লাস ধরে বেশ আরাম লাগছে। একটু কফিও মিশিয়েছে। যাকে বলে চাফি। আমার একটু টেনশান্* হচ্ছেনা তা নয়। কিন্তু আমি জানি যে আমি কোন অন্যায় করিনি, আর কবিরদা নিশ্চয় আমাকে বিশ্বাস করবে। পুলিশের লোক, নিশ্চয় মানুষ চেনেন।
আরো দুবার চাফি খেয়ে নিলাম, সুবিরদা ইওরোপ টুরের গল্প শোনাচ্ছে। সুইডেনের কোন হোটেলে স্ট্রিপ টিজ দেখেছে, তারপর রিতুকে রাতে কনিয়াক খাইয়ে ওরকম নাচিয়েছে। মানে মুখে কোনো ট্যাক্স নেই যাকে বলে। হয়তো থানায় না এসে এদের বাড়িতে গেলে রিতু বৌদি গল্প করতো যে কি ভাবে নেচে নেচে ল্যাংটো হয়েছে। সত্যি বলছি আমার পাপী মন, সেই দৃশ্য ভেবে প্যাণ্টের মধ্যে হাল্কা আন্দোলনও হোচ্ছে। মিশ্র অনুভুতির দরুন সেটা প্রকট হয়ে উঠছে না।
কবিরদা বেরিয়ে এলো। একদম জ্যাকেট পরে, ঢিক ঢিক করে একটা এনফিল্ড বাইকে করে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালো। প্রথমে বুঝতে পারিনি। ভাল করে খেয়াল করে বুঝলাম যে কবিরদা। ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলেছে। ডিউটি শেষ, তাই।
তারপর দুই বন্ধুর খিস্তির কি ফোয়ারা। এতদিন পরে দেখা আর ছারে নাকি সুযোগ। আমি যে সামনে আছি ওরা পাত্তাই দিলোনা। প্রায় পাঁচ মিনিট একে অন্যকে বাপবাপান্ত করার পর যেন দম নেওয়ার জন্যে থামল।
আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে কবিরদা বলে উঠলো, ‘এই সুবির তোর এই ভাই তো বেশ গুণধর রে? ভালো তো ফেঁসেছিস ভাইটি।’
আমার বুক দূর দূর করতে শুরু করলো কোনোরকমে বলতে পারলাম ‘ক ক্কি হয়েছে?’
‘কি হয়েছে না রে বাল্*, কি করেছিস সেটা বল? সেদিন তো ভালোই প্রসাদ খাওয়ার গল্প দিলি, তুই কি ভাবলি পুলিশ এত চোদু?’
আমার গলা পুরো চোক হয়ে গেলো, ধরা পরে গেলাম হয়তো, পুলিশে ঠিক ছুয়ে দিলো। মনে মনে দেখতে পাচ্ছি কাল পাড়াতে ঢি ঢি পরে গেছে সুদিপাদের মৃত্যুকান্ডে আমার হাত আছে বলে, আমার মা বাবার, পরিবারের সন্মানের কি হবে ভাবতে গলা বুজে এলো, হাতের পাতা ঠাণ্ডা হয়ে কনকন করছে, এই সামান্য ঠাণ্ডাতেও মনে হয় ঠকঠক করে কাঁপছি।
সুবিরদাও সিরিয়াস হয়ে গেলো, ‘কি হয়েছে রে কবির?’ জিজ্ঞেস করলো কবিরদাকে, কিন্তু চোখ আমার দিকে, চোখে কেমন অবিশ্বাস।
‘চল চল বাইক চালিয়ে আমার পিছে পিছে আয়’ কবিরদা বুলেটটা স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে গেলো। সুবিরদা চুপচাপ কবিরদাকে ফলো করলো, আমিও চুপ করে রইলাম, প্রায় দশ মিনিট পরে একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম সবাই। কবিরদা গেট খুলে ভিতরে আসতে বললো আমাদের। এটা কবিরদার ব্যাচেলর লাইফের ভাড়াবাড়ি, এখনো ভাড়া ছারেনি। বাড়ি না ফিরে গেলে এখানেই থেকে যায় সমস্ত সুযোগ সুবিধে আছে, খাওয়ার দাওয়ার বলে দিলে দিয়ে যায়। আর পুলিশের লোক যেখানে, সবাই তো একটু তেল মারবেই। বাড়ির ভিতর ঢুকে বেশ আরাম লাগছে। বেশ গরম আছে ভিতরটা। বাইরে যেন কনকন করছে। বাইকের হাওয়াতে আরো বেশী ঠান্ডা লাগছিলো যেন। দাঁতে দাঁত চেপে ছিলাম। এতক্ষনে দাঁতকপাটি সামলানো গেলো। বুকের ধুকপুকানিটা রয়েছে।
কবিরদা আমাদের বস্তে বলে নিজে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। সুবিরদা ঘুরে ঘুরে কবিরদার ঘর দেখতে শুরু করলো আর আমি উত্তেজনা চেপে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি। সুবিরদা আমার সাথে কোনো কথা বলছেনা। সেটা আমার সব থেকে খারাপ লাগছে। আমিতো কোনো দোষ করিনি। কটা ছেলে আমার মত এরকম সুযোগ ছেড়ে দিত? আজকে যদি সেরকম পরিস্থিতি হয় তো আমি সেই প্রশ্ন এদের সামনে রাখবো।
মিনিট দশেক পরে কবিরদা একটা ট্রেতে ধোঁয়া ওঠা কফি আর ছোট ছোট নিমকি বিস্কিট নিয়ে এলো আমাদের জন্যে।
কফিতে চুমুক দিয়ে সুবিরদার দিকে তাকিয়ে কবিরদা বললো ‘এই ভক্ত তোর পরিচিত আর কেসটা আমি ডিল করছি বলে, সাহেব এখনো আমাদের সাথে কফি খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।’
সুবিরদা গম্ভির ভাবে বললো ‘কি হয়েছে একটু খোলসা করে বল, ওকে তো এতদিন ধরে চিনি, এরকম কোন কেসে ও প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত তা ভাবতে অসুবিধে হচ্ছে। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি আম্নুশ আমি ভুল চিনিনা, কিন্তু সব কিছুরই ব্যাতিক্রম আছে তাই তুই খুলে বল, ও হয়তো এরকম সুযোগ আর পাবেনা নিজের দোষগুন স্বিকার করার।’
একটু খোঁচা থাকলেও বুঝলাম সুবিরদার জায়গায় আমি থাকলে আমার প্রতিক্রিয়াও একই হোতো।
‘বাবু তুই তো আমাকে সেদিন সত্যি কথা বলিসনি?’ কবিরদা আমার দিকে তাকিয়ে একটা সিগেরেট ঠোঁটে ঝুলিয়ে বললো।
‘হ্যাঁ বলিনি তো। কি করে বলবো? এরকম কথা কি বলা যায় দুম করে? তারওপর তুমি পুলিশ সে যতই সুবিরদার বন্ধু হও।’ আমি অলআউট এটাকে গেলাম। জানি মিথ্যে কথা বলে কিছু লাভ হবেনা।
‘এবার ভাইটি আমার বলতো কি কি হয়েছিলো সেদিন?’ কবিরদা একটা টু ইন ওয়ানের রেকর্ডিং বোতাম টিপে বললো।‘
আমি ঘাবড়ে গেলাম ‘মানে তুমি কি অফিসিয়ালি জিজ্ঞেস করছো?’
‘গেলো তো বিচি শুকিয়ে? আরে এই চিন্টু মালগুলো নিয়ে যত সমস্যা। আরে বাল এগুলো আমি পরে রিউইণ্ড করে শুনবো, তোর জন্যে এত খাটবো রে বাল, নাহলে বয়ে গেছিলো কফি খাইয়ে জেরা করতে,ল সোজা ঢুকিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করতাম। এরকম কেস আমার জীবনে প্রথম, আর তোকে বলি কোলকাতা পুলিশের তরফ থেকে ক্রাইম সাইকোলোজি নিয়ে আমি কাজ করছি, তো এই কেসটাতে আমার একাডেমিক ইন্টারেস্ট অনেক, ধরপাকরের থেকেও।’
সুবিরদা কবিরদার থেকে কাউণ্টার চেয়ে ফুঁকতে শুরু করলো।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে কবিরদাকে সেই দশমির দিন হাবলুদার সাথে ঝামেলা, তারপর সুদিপার আমাকে সিঁদুর মাখানো থেকে ওর বাড়ি থেকে চলে আসার সব গল্প বললাম।
আমি থামতে দেখলাম সব চুপ। কবিরদা কয়েকটা যায়গা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ঠিক সেই সময়ের যখন হাবলুদা পাশের ঘরে ঘুমোচ্ছে(?) আর সুদিপা নিজেকে বিবস্ত্র করছে আমার সাথে সেক্স করবে বলে। অনেক বার অনেক রকম প্রশ্ন করলো। কপালে বেশ ভাঁজ পরেছে দেখলাম।
সুবিরদা এবার হাল্কা চালে বলে উঠলো ‘শালা লাগিয়ে আসলেই ভালো করতি, মস্তিও হোতো আর কেসও হোতো। তুই শালা যুধিষ্ঠিরই রয়ে গেলি।’ বুঝলাম সুবিরদা ফর্মে
সত্যি বলতে এতদিনে সত্যি ঘটনাগুলো কাউকে বলতে পেরে আমার বেশ হাল্কা লাগছে, আর মনে হোচ্ছে যে অপাত্রে দান হয়নি, তাই হাল্কা চালে বললাম ‘কিছু না করেই এত কেস্*, করলে কি হোতো?’
কবিরদা কিছু না বলে উঠে গেলো। একটা ভিডিও ক্যাসেট নিয়ে এলো। প্লেয়ারে সেটা চালিয়ে দিলো, সুবিরদার উদ্দেশ্যে বললো ‘ভাইয়ের কির্তি দেখে লজ্জা পাসনা, অনেক দামি ক্যামেরাতে তোলা নাইট মোডে।’
এদিক ওদিক করে যখন চালু হোলো স্ক্রিনে দেখে প্রথমে বুঝতে পারিনি, তারপর সুদিপার সেই শেষ কথাগুলো শুনে বুঝতে পারছি যে এটা সুদিপাদের বাড়িতে সেই মুহুর্তের ঘটনা। “নির্ভয়ে করবে, কোন ভয় পাবেনা, আমার সেফ পিরিওড চলছে। আজ পুজো বলে ওষূধ খেয়েছি পিছোনোর জন্যে। আর ওর কথা চিন্তা কোরোনা।”
আমি অবাক হয়ে কবিরদার দিকে তাকালাম, কবিরদা দেখলাম নির্লিপ্ত। সুবিরদা সামনের দিকে ঝুকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে শুরু করলো সেটা। আমার খুব লজ্জা লাগছে, আবার ভয়ও লাগছে, ভিডিও যদি বিকৃত করা হয়।
ধীরে ধীরে সেই লজ্জার মুহুর্ত ভেসে এলো পর্দায়। আমি সোফার ওপরে অবশ হয়ে বসে আছি, সুদিপা আমার পুরুষাঙ্গ হাতে নিয়ে তার স্তুতি করে চলেছে, আরে বাবা, অনেকক্ষন ধরে তো চলছে, লজ্জায় মুখ দেখাতে না পাড়ার মত কেস্*। আবার সুবিরদা উৎসুক ভাবে সেটা দেখছে। ইস রিতু বৌদিকে নিশ্চয় গিয়ে বলবে। কাল থেকে অফিস ফেরতা অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতে হবে। এদের বাড়ির মুখোমুখি হোলেই তো কেস্*।
এরপর সেই আমার দৌড়ে বেরিয়ে যাওয়া, আর সুদিপার উলঙ্গ শরিরটা দরজা দাপাচ্ছে, দরজা খুলে দেওয়ার জন্যে। কি চিল চিৎকার করেছিলো, কিন্তু একি কাকে চর মারছে, এতো হাবলুদা না, হাবলুদার গলা অন্যদিক থেকে আসছে। আমি কি ঠিক দেখছি? পাপ্পু না, সুদিপা পাপ্পুকে চর মারছে। পাপ্পু ওখানে ছিলো? কি করে? কেন? আমার আগে থেকেই ছিলো? তাহলে ও আমাকে আর সুদিপাকে দেখেছে?