Thread Rating:
  • 1 Vote(s) - 5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Amar Bon Mira
#2


প্রায় চার বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে নীলয় বাড়ি ছেড়ে এসেছে । আর প্রায় দু বছর পার হচ্ছে মায়ের মৃত্যুর । এর মাঝে ইশান আর নিলয়ের বিজনেস ফুলে ফেঁপে বিশাল আকার ধারন করেছে । দুই বন্ধু সারাদিন সুধু কাজ নিয়ে পরে থাকে । কাজ ছাড়া এরা কিছুই বুঝে না । অথচ নিলয়ের বয়স মাত্র ২৩ আর ইশান ২৪ । এই বয়সের অন্য ছেলেদের দিকে তাকালে সম্পূর্ণ উলটো চিত্র দেখা যাবে । কেউ হয়তো আড্ডা দিয়ে সময় পার করছে , কেউবা প্রেম করে বেড়াচ্ছে । কিন্তু এই দুজনের সেসব দিকে নজর নেই। আসলে ইশান প্রথমে এমন ছিলো না , অনেকটা নিলয়ের পাল্লায় পরেই এমন হয়েছে বলা চলে ।

 
দুই বন্ধুর কর্ম মুখর আর দশটা সাধারন দিনের মত , আজো দুজনে কাজে ব্যাস্ত । নীলয় একটা জরুরী মিটিং করছে এক ফরেন ক্রেতার সাথে । এমন সময় ওর ফোন বেজে ওঠে । সধারনত নীলয় মিটিং এর সময় ফোন বন্ধ রাখে । আজ কেন জানি ভুলে গিয়েছিলো । এসব ব্যাপারে বিদেশি লোক গুলো খুব খুঁতখুঁতে , মুখে বলে না তবে নীলয় বুঝতে পারে ওর সাথে আলাপরত লোকটিও বিরক্ত হয়েছে । তাই নীলয় দ্রুত মোবাইল সুইচ অফ করে “সরি স্যার” বলে আবার আলচনায় মন লাগায় ।
 
ঐ মিটিং শেষ করে নীলয় কে আরো দুটো অনলাইন মিটিং করতে হয় । তারপর দুজন বিদেশি বায়ার কে নিয়ে ফেক্টরি ভিজিটেও যেতে হয় । রাত প্রায় সারে নটায় ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পায় নীলয় । আর ঠিক ঐ সময় ইশান কল করে ওকে । “ কিরে দোস্ত মায়ের জন্মদিন ভুইলা গেলি?” 
 
“ ওহ শিট “ বলে কপালে চাপর মারে নীলয় , তারপর দ্রুত বলে “ বন্ধু আধা ঘন্টার মধ্যে আসতেসি”
 
“ তারাতারি আয় মা ওয়েট করতাসে” বলে ইশান ।
 
তাড়াহুড়োয় আর মোবাইলের কল লিস্টে মিরা নামটা খেয়াল করা হয় না । দ্রুত গোসল সেরে জামাকাপড় পরে ড্রয়ার থেকে জোবায়দা বেগমের জন্য আগে থেকে কিনে রাখা গিফট নিয়ে বেড়িয়ে পরে নীলয় । বেশ রাত হওয়ায় রাস্তা ফাঁকা , তাই দশ মিনিটে পৌঁছে যায় ইশান দের বাড়ি । না  না জন্মদিনের জন্য কোন পার্টি নয় । এই ৪৪ বছর বয়সে এসে কোন পার্টি চায় না জোবায়দা বেগম । দুই ছেলে মেয়ে আর পুত্রতুল্য নীলয়ের জন্য ভালো কিছু রান্না করে সবাই মিলে রাতের খাবার খেতে বসেছেন ।
 
“ সরি আন্টি লেট হয়ে গেলো” ঘরে ঢুকেই দুই কান ধরে বল্লো নীলয় ।
 
“ হু সেইটা তো হবেই , কাজ ছাড়া আর কিছু মাথায় থাকে তোদের?” এই বলে হাতে থাকা চিকেন এর থালা রেখে রান্না ঘরের দিকে রউনা হলেন জোবায়দা আর যেতে যেতে বলতে লাগলেন “ তাও আবার বুড়ি মায়ের জন্মদিন”
 
ততক্ষনে নীলয় জোবায়দার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে , ওনাকে থামিয়ে বলল “ হইসে আমার বুড়ি মাকে আর কাজ করতে হইবো না , আমি ই সব নিয়া আসি। আর এই নাও তোমার গিফট”
 
নীলয়ের হাতে জোবায়দা বেগমের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা , সেটা হচ্ছে জামদানী সাড়ি । আর নিজের প্রিয় জিনিস দেখে বেশ খুশি ই হলেন উনি , হাত দিয়ে নীলয়ের গাল চেপে ধরে বললেন  “ আমারে খুশি করার সব টেকনিক ই তোর জানা আছে নারে শয়তান”
 
এমন সময় ঈশান তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে ,উছতে হাজির হলো , সাথে রিবা ।
 
রিবা হাঁসতে হাঁসতে বলল “ দেখলা মা তোমার দুই ছেলের চেয়ে আমি কত ভালো , সারাদিন তোমার সাথে ছিলাম”
 
“ হু সেটা তো ছিলা , কিন্তু একটা কাজেও হাত লাগাও নাই “ জোবায়দা কপট রাগে মেয়ে কে উদ্দেশ্য করে বলল ।
 
“ আরে সেইটা তো আমি ইচ্ছা করেই করসি , যেন তুমি তোমার জন্মদিনের রান্না একা একা করার আনন্দ নিতে পারো”
 
রিবার কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠলো । বাকি খাবার গুলো ইশান আর নীলয় দুজনে মিলে টেবিলে এনে রাখলো । তাপর তিনজনে মিলে খাওয়া শুরু করলো । খুব হাঁসি তামাশার মাঝে খাওয়া দাওয়া চলছিলো । হঠাত করেই নীলয়ের মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়। একটু আনমনা হয়ে গেলো ও , ভাবতে লাগলো নিজের মায়ের সাথে ও কোনদিন এমন ফ্রি ছিলো না। যদি দ্বিতীয়বার সুযোগ পেতো তাহলে ও নিশ্চয়ই এমন সম্পর্ক তৈরি করতো মায়ের সাথে ।  
 
জোবায়দা বেগমের নজর এরালো না ব্যাপারটা । তবে এই নিয়ে তেমন কিছুই বললেন না উনি , নরম স্বরে ডাকলেন নীলয় কে “নীলয় বাবা”
 
কোমল স্বরে নিজের নাম শুনে নীলয় সম্বিত ফিরে পেলো …… “ জি আন্টি”
 
“বাবা তোর আব্বু কল করেছিলো , তোর সাথে বিশেষ কি যেন দরকার। তুই নাকি কল ধরিস না”
হঠাত করে নীলয়ের মনে পড়লো , মিটিং এর সময় মিরা কয়েক বার কল করেছিলো । মিরা হচ্ছে নীলয়ের ছোট বোন , ওর চেয়ে তিন বছরের ছোট । নীলয় ভাবে , তাইতো মিরা তো এতবার কল করার মানুষ না । হয়তো আব্বুই কথা বলতে চেয়েছিলো । কপালে ভাঁজ পরে নীলয়ের , ভাবে ওর সাথে আব্বুর কি গুরুত্বপূর্ণ এমন কথা । শেষ কথা হয়েছিলো মায়ের মৃত্যুর সময় ।  এখন আবার আব্বুর কি দরকার পড়লো যে ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন । উনি তো সাগরে পরে গেলেও নীলয়ের হেল্প নিতে চাইবেন না।
 
“ এখন তো রাত অনেক হইসে আন্টি , আব্বু মনে হয় শুয়ে পরসে , আমি কালকে সকালে কল করবো” চিন্তিত স্বরে উত্তর দেয় নীলয় । তারপর খাওয়া দাওয়া শেষে বিদায় নিয়ে নিজের ফ্লাটে চলে আসে ও । তারপর বিগত চার বছরের কথা ওর মনে আসতে থাকে ।
 
 
 
চার বছর আগে ,নীলয় , ১৯ বছরের এক উঠতি বয়সের ছেলে । লেখাপড়ায় মোটামুটি , ভালোও না মন্দ ও না । তবে কলেজ শিক্ষক বাবার জন্য ছেলের এমন মিডীওকর স্টুডেন্ট হওয়া বেশ লজ্জাজনক ব্যাপার ছিলো। তাই বাড়িতে এই নিয়ে খিট্মিট লেগেই থাকতো । নিলয়ের বাবা নীলয় কে দু চক্ষে দেখতে পারে না (আপাত দৃষ্টিতে অন্তত তাই মত হতো)। তাই নিলয়ের মত ১৮ এর টগবগে রক্ত ওয়ালা এক নব্য যুবার ওই বাড়িতে থাকা অসহ্য হয়ে  উঠছিল । তাই নীলয় নীরবে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি ছাড়ে ।  
 
সুধু বাড়ি না , একেবারে শহর ছেড়ে দেয় । যোগ দেয় নিলয়ের ই এক বন্ধুর সাথে , বন্ধুর নাম ইশান। বয়সে নিলয়ের চেয়ে বছর দুয়েক বড় । যদিও দুজন একি ক্লাসে পড়তো । হঠাত করে ইশানের পিতার মৃত্যু হলে ইশান নিজ শহরে বাবার বিজনেস দেখার জন্য চলে এসেছিলো বছর খানেক আগেই । তবুও নীলয়ের সাথে যোগাযোগ ছিলো ।
 
বাড়ি ছেড়ে নীলয় ইশানের কাছে এসে হাজির হয় । দাবি জানায় ইশান যেন ওর বিজনেসে যে কোন একটা কাজ ওকে দেয় । প্রথমে ইশান রাজি  হয় না । খুব করে নীলয় কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ি ফেরত পাঠাতে চায় । কিন্তু বন্ধুর দৃঢ় সংকল্প ইশান কে রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য করে । তাই নিজের সহকারি হিশেবেই নীলয় কে নিয়োগ দেয় । ইশান জানে নিলয়ের বিজনেস নিয়ে খুব আগ্রহ । ছাত্র অবস্থায় নীলয় কে টুকিটাকি বিজনেস করতে দেখেছে ও । ইশান জানে নিলয়ের নেগোসিয়েসন ক্ষমতা খুব ভালো । তাই ওর ইচ্ছা কিছুদিন নিজের এসিস্টেন্ট করে রেখে পরে একটা ভালো পজিসেনে নিয়োগ দেবে ।
 
তবে নিলয়ের আপত্তি থাকার পর ও ইশান প্রথম ছয় মাস নীলয় কে নিজ বাড়িতেই রাখে । সেখানেই নিলয়ের সাথে দেখা হয় ইশানের মা জোবায়দা খানমের সাথে । বিচক্ষণ মহিলা জোবায়দা নীলয় কে মাতৃ স্নেহে আশ্রয় দেয় । প্রথমে বাড়ীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য কোন ধরনের চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে নীলয় কে বাধ্য করে বাড়ীর সাথে যোগাযোগ করার ।
 
এক পর্যায়ে নিলয়ের মা এসে নিলয়ের সাথে দেখাও করে যায় । এবং জোবায়দা খানমের পরামর্শে  নীলয় কে কোন চাপ না দিয়ে ওর যা ইচ্ছা করতে দিয়ে , নিজ শহরে ফিরে যায় । ছেলে ভালো আছে এটাই  নিলয়ের মায়ের জন্য যথেষ্ট ছিলো । তাছাড়া ইশানের মা কেও ওনার খুব ভালো লেগেছিলো । মহিলার উপর ভরসা করা যায় ।
 
তবে নীলয় বেশিদিন ঈশানদের বাড়ি থাকেনি । আট মাসের মাথায় একটি মেস বাড়িতে উঠে আসে । ইশান আর জোবায়দাও তেমন একটা আপত্তি করেনি । নিলয়ের উপর ওদের দুজনের ই আস্থা ছিলো। তাই স্বাধীনচেতা নিলয়ের  স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চায়নি । ততদিনে নীলয় ও নিজের দক্ষতায় ইশানের বিজনেসে ভালো অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে । নিজের নেগোসিয়েসন দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েকটি ভালো ডিল হাসিল করে দিয়েছে কম্পানিকে । খুশি হয়ে ইশান নীলয় কে বিজনেস পার্টনার করে নিয়েছে । সত্যি বলতে ইশান বিজনেসের ক্ষেত্রে বেশ সাদামাটা প্রতিভার অধিকারি । কাজ চালিয়ে নেয়ার মত কিন্তু নিলয়ের মত তুখর না । তাই মায়ের সাথে আলোচনা করে নীলয় কে ১৫% শেয়ার দিয়ে দেয় ইশান ।
 
এভাবে বছর দুই ভালই কাটে , এর মাঝে নীলয় একবার বাড়ি থেকেও ঘুরে আসে । কিন্তু নিজের প্রতি  বাবার শীতল আচরনে একটুও পরিবর্তন হয়নি দেখে , অনেকটা হতাশ হয়েই ফিরে আসে । এর  পর আর তেমন যোগাযোগ রাখেনি নীলয় । সুধু মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখতো , কিছু টাকা পাঠাতো ।কিন্তু বাবা আর ছোট বোন নামিরার সাথে তেমন যোগাযোগ রাখতো না । বাড়ি যাওয়া তো দুরের কথা ।   
 
এর পর অবশ্য নীলয় আরো একবার বাড়ি গিয়েছিলো , সেটাওর শেষ যাওয়া । মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে গিয়েছিলো নীলয় । বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক্সিডেন্টে মৃত্যু হয় নিলয়ের মায়ের । খুব ভেঙ্গে পরে নীলয় , তবে ইশান আর জোবায়দা খানমের স্নেহ আর সহজগিতায় আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে । তবে বাড়ীর সাথে এক প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে ।
 
বাবার সাথে হতাশা আর অভিমান থেকে কথা বলে না নীলয় । আর মিরার সাথে খুব প্রয়োজন না হলে কথা বলে না । আগে মিরার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক থাকলেও বাড়ি থেকে চলে আসার পর আর তেমন যোগাযোগ রাখেনি নীলয় । তাই একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে দুই ভাই বোনের মাঝে । তাই দুজনের মাঝে এখন মাসে দুই একবার সুধু সামাজিকতা রক্ষার আলাপ হয় । এই দূরত্ব অবশ্য নীলয় ইচ্ছে করেই তৈরি করেছে । কেন করেছে সেটা সুধু নীলয় ই ভালো জানে । ধিরেধিরে এই আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার যোগাযোগ ও প্রায় বন্ধ হয়ে যায় । এদিকে নীলয় কাজে ব্যাস্ত থাকে অন্য দিকে মিরা এখন বড় হচ্ছে , ওর আলাদা জগত তৈরি হচ্ছে , মিরার আচার আচরন ও পালটে যাচ্ছে , কল করলে বিরক্ত ই হয় । তাই পারিবারিক বন্ধন প্রায় ছিন্ন হয়ে দুটো আলাদা জগত তৈরি হয় একই পরিবারের তিন সদস্যের ।

(প্রথম পোস্ট করার পর দেখি থ্রেড টি দেখা যাচ্ছে না , পরে বুঝলাম আপ্রুভাল এর ব্যাপার সেপার আছে । এর পর থেকে ৫০২ এরর দেখাচ্ছিলো। আজকে দিনের বেলা দেখলাম ঠিক হয়েছে । কিন্তু দিনের বেলা পোস্ট করার পরিবেশ ছিলো না , তাই এখন দিলাম। দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত।) 
Like Reply


Messages In This Thread
Amar Bon Mira - by KK001 - 22-03-2025, 03:16 AM
RE: Amar Bon Mira - by KK001 - 23-03-2025, 11:36 PM
RE: Amar Bon Mira - by buddy12 - 24-03-2025, 09:38 PM
RE: Amar Bon Mira - by KK001 - 25-03-2025, 11:55 PM
RE: Amar Bon Mira - by Raj Pal - 26-03-2025, 12:36 AM
RE: Amar Bon Mira - by KK001 - 27-03-2025, 01:54 AM
RE: Amar Bon Mira - by KK001 - 28-03-2025, 12:45 AM
RE: Amar Bon Mira - by shafiqmd - 29-03-2025, 09:15 PM
RE: Amar Bon Mira - by KK001 - 30-03-2025, 12:19 AM
RE: Amar Bon Mira - by KK001 - Yesterday, 04:04 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)