31-12-2018, 04:15 PM
মা দেখলাম ভাল করে আমাকে খেয়াল করছে, এত মাঁঞ্জা দিয়ে কোথায় চললাম, বোঝার চেষ্টা করছে। চোখে মুখে একটু কৌতুক। মানে বুঝতে পারছে যে ছেলে কিছু ঘটিয়েছে। আয়না দিয়ে দেখছি যে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, সাথে মুচকি মুচকি হাসি। মায়ের চোখ কি আর এড়ানো যায়?
আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি হোলো এরকম করে কি দেখছো?’
‘দেখবোনা? তুই যা পরিপাটি হয়ে ঘুরছিস আজকাল, দেখতে তো হবেই নিজের সন্তান বলে কথা।‘ একটু ব্যাঙ্গাত্মক টোন। বুঝলাম ধরা পরে গেছি।
‘তা কোথায় নিমন্ত্রন?’
‘এই তো একটা বন্ধুর বাড়িতে।‘
‘আমি চিনিনা সেই বন্ধুকে? তাহলে কি সেদিন রাতে যে এসেছিলো?’
একদম মাথায় বন্দুক ধরেছে মা।
‘না যে আরেকটু হলে ফোন করে করে ফোনটা খারাপ করে দিতো।‘
আর কি লুকোবো বললাম ‘দুজন একই।‘
‘কে সেই মহারানী যে আপনার মত নিরস বস্তুতে আগ্রহ দেখালো?’
‘নিরস কেন?’
‘বাহঃ, আমাকেই জিজ্ঞেস করছিস তুই নিরস কেন?’
‘তুমিই তো বলছো, তোমাকেই তো জিজ্ঞেস করবো।‘
‘ও আমি একাই বলি, আর কেউ, মানে সে বলেনি?’
‘না তো।‘
‘বয়েস কত?’
‘1st ইয়ারে পরছে’
‘তাই বুঝতে পারেনি তোকে।‘
‘দুদিন যাক তোকে বুঝতে পারলে, টাটা করে চলে যাবে’
‘কেন এরকম বলছো?’
‘বলবো না? তোর সব কটা বন্ধু দেখি হই হই করে, কত গল্প করে আর তুই সবসময় গোমড়া মুখে বসে থাকিস দেখি। যেন তোর চারটে মেয়ে আছে, বিয়ে দিতে হবে।‘
আমি মার গলা জড়িয়ে ধরলাম ‘তুমি না, কোথায় আমার প্রসংশা করবে যে তোমার ছেলে এলাকার বেতাজ বাদশা, আমি গম্ভির থাকি বলেই ওরা হইচই করতে পারে, আর তুমি আমার নিন্দা করছো।‘
মা আমার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো ‘সবাই তোর ঘারে বন্দুক রাখবে আর তুই এগিয়ে যাবি, আর নিজের বদনাম করবি। তোর বন্ধুরা কেউ ক্ষতিকর না আমি জানি, কিন্তু নিজের ভালোটা পাগলেও বোঝে। যেমন তোর বাবা, তেমন তুই হয়েছিস একই রকম বাউন্ডূলে। কবে পাড়ার গলিতে বোম ফেলেছে, আর পুলিশের হাত থেকে কি ভাবে পালিয়ে বেচেছে সেই গল্প এখনো করে। নেহাত সরকারি চাকরি পেয়ে গেছিলো তাই। আরে বাবা পুরুষ মানুষ এরকম ব্যোঁমভোলা হলে হয় নাকি। আরে কোথায় ভাল চাকড়ি বাকড়ি খুজবি, তা না, পাড়া, ক্লাব এসব করে ভালো ভালো সুযোগ ছেড়ে দিলি। দেখ্* সুজোগ যখন আসে তখন তোকে যাচাই করতে আসে যে তুই কত উপযোগী, যদি তুই সুযোগ না নিস, তাহলে পরে আর পাবিনা। তখন শুধু গল্পই করতে পারবি যে আমি এখানে চান্স পেয়েছিলাম, ওখানে আমার ডাক এসেছিলো, ব্যাস। আর লোকে তোর কথা শুনতে শুনতে ভাববে যে এর আর অন্য কিছু বলার নেই। একটা সময় পরে বন্ধু বান্ধব সবাই যে যার রাস্তা দেখে নেবে, আর তোর যোগ্যতা থাকা স্বতেও তুই পরে থাকবি এখানে। আরে তোর সামনে সারা পৃথিবী পরে রয়েছে, ঘুরে তো দেখ ভালো না লাগলে এই বাড়ি, এই সব, কিছু তো তোরই। আমাদের যা সম্পত্তি আছে তাতে তোর জীবনে সেরকম কিছু না করলেও চলে, তা বলে পুরুষ মানুষ হয়ে এরকম জীবনযাপন করবি ?’
‘তুমি কি চাও আমি তোমাদের থেকে দূরে চলে যাই?’
‘কোন মা বাবাই তা চায় না, কিন্তু তাতে যদি তোর ভালো হয় তাহলে আমরা বুকে পাথর চাঁপা দিয়ে সেটা হাসিমুখে মেনে নেবো।‘
‘কিন্তু মা আমার তো তোমাদের ছাড়া থাকতে ভাল লাগবেনা। আমি ভাবতেও পারিনা যে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না।‘
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মা বলে উঠলো ‘ আরে একদিন তো আমাদের সবাইকে যেতে হবে এই পৃথিবী থেকে তখন কি করবি?’
আমি মার কোলে মুখ গুজে দিলাম। মনটা ভার হয়ে গেল। অপ্রিয় হলেও সত্যি কথা।
‘যা যা তোর দেরি হচ্ছে। তোর জন্যে অপেক্ষা করছে হয়তো ওরা।‘
‘তোমরা কোথাও যাবেনা?’
‘কোথায় যাবো?’
‘না কেঊ নিমন্ত্রন করেনি, লক্ষ্মীপুজোর?’
‘ধুর লক্ষিপুজোর আবার নিমন্ত্রন হয় নাকি? ইচ্ছে হলেই তো এখানে সেখানে যাওয়া যায়।‘
‘তাহলে যাও না কোথাও ঘুরে আসো না?’
‘ধুর, তুই যা না। আমাকে নিয়ে পরেছিস কেন?’
‘তোমরা কি করে পারো বলোতো। এতো বড় বাড়িতে দুজন ভুতের মত বসে থাকো, বাইরে এত আলো, সবাই কত আনন্দ করছে আর তুমি আর বাবা সবসময় বাড়িতে, এত বড় পুজো গেলো, তাও শুধু অঞ্জলি আর বরণ করতে গেলে। আরে কোথাও না যাও পাড়ার পুজোর প্যান্ডেলে গিয়ে তো বসতে পারতে।‘
‘আরে আমরা অনেক করেছি আমাদের সময়, এখন আর শরীর মন চলেনা রে, আর তুই তো আনন্দ করছিস, তোকে দেখেই আমাদের সুখ রে, সারা জীবন তো সময় পায়নি, এখন আমি আর তোর বাবা মিলে দুই বুড়োবুড়ি জমিয়ে প্রেম করছি। বুড়ো হলে বুঝবি এই বয়েসে কেন মানুষ নিস্তরঙ্গ জীবন চায়। তুই এবার যা, নাহলে বাচ্চা মেয়েটা রাগ করবে, আবার পয়সা খরচা করে ফোন করতে চলে আসবে।‘
আমি হেসে দিলাম।
তুলিদের বাড়ির গলিতে ঢুকতেই দেখি তুলি পায়চারি করছে, লালপার সাদা শাড়ী পরেছে, বেশ লক্ষ্মী লক্ষ্মী লাগছে।
কাছে পৌছুতেই হাত ধরে টানতে শুরু করলো।
‘কি হোলো এত দেরি? আমার কত বান্ধবি এসেছে জানো, তোমাকে দেখবে বলে’ রাগত স্বরে বললো তুলি।
মজা করে বললাম ‘কেন আমি কি জোকার নাকি সবাইকে দেখাবে?’
‘ধুর চলোতো? মনামি চলে যাবে বলছে তখন থেকে, ওর খুব দেমাক, ওর বয়ফ্রেণ্ড নাকি দারুন দেখতে?’
‘তোমাদের সব বন্ধুরা কি ছোটবেলা থেকেই প্রেম করে?’
আর উত্তর না দিয়ে জোরালো একটা খামচিতে আমার প্রান প্রায় বের করে দিলো।
তুলির মা আমাকে দেখে হেসে বললো ‘ওঃ এসে গেছো। তুলি প্রায় কাঁদতে বসে গেছিলো’
আমিও হেসে দিলাম। আজকে বেশ ভালো লাগছে তো উনাকে, লালপাড় সাদা শাড়ী, কনুই অবধি লাল ব্লাঊজ, সাথে কপালে বড় সিঁদুরের টিপ, সাথে চন্দন,কাজল আরো কিসবের টিপ। খাটাখাঁটনির দৌলতে মাথার চুল একটু উস্কোখুস্কো। উনার চোখের মনি দেখলাম হাল্কা বাদামি, মানে একটু কটা। এতদিন ভাল করে খেয়াল করিনি, চুলগুলো হাল্কা ঢেউ খেলানো ঢেউ খেলানো, কাঁধের নিচে অজত্নে ঝুলছে, যদিও ক্লিপ দিয়ে বাঁধার চেষ্টা করেছেন, তাও ছোট হওয়ার দরুন, খুব একটা শাসন করে উঠতে পারেন নি। তাই এলোমেলো হয়ে উনার মুখশ্রীর চারপাশে ঘিরে ধরেছে। বেশ সুন্দর একটা মাতৃরুপ, লক্ষ্মীরুপ। মনের মধ্যে আবার এলো, এই মহিলার কি সত্যিই এত বদনাম।
‘এই তুলি যাওকে ঠাকুর ঘরে নিয়ে যা প্রনাম করিয়ে নিয়ে আয়।‘
আমি বুঝলাম তুলির মা সব জেনে গেছে আমার আর তুলির ব্যাপারে। থাক্*, আজ না হয় কাল তো জানতোই। শাঁক দিয়ে মাছ ঢেকে কি লাভ। তুলি কি বাজির খাওয়ারটা পেয়েছে? জিজ্ঞেস করতে হবে।
বাহঃ বেশ বড় ঠাকুর ঘর তো, কি সুন্দর আলপনা দেওয়া। ধুঁপের গন্ধে ঘর মোঁ মোঁ করছে। পুজো হয়ে গেছে দেখছি। দেবির সামনে ভোগ দেওয়া রয়েছে সঙ্গে ভাজা ভুজি, পায়েস, চাটনি, আরো কত কি।
তুলির দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করলাম ‘কে করেছে এতকিছু?’
‘আমি আর মা। কেন?’
‘এই এত কিছু তুমি আর তোমার মা মিলে করেছো?’
‘হ্যাঁ। কাল রাত থেকে জেগে আছি কত কি করলাম, নাড়ু বানালাম, সব্জি কাটলাম আরো কত কি?’
‘এই আলপনাটা কে দিয়েছে?’
‘মা একে দিয়েছে, আমি ভিতরের গুলো করেছি? চলো চলো তাড়াতাড়ি প্রনাম করে চলো।‘
মন ভরে গেলো একটা ভালো লাগায়। মন বলছে যে এত ভালো আলপনা দিতে পারে, যে এত নিষ্ঠা ভরে গৃহলক্ষ্মীর আরাধনা করে, সে নিশ্চয় পরপুরুষের তলায় শুয়ে পা ফাঁক করতে পারেনা।
আমি একহাত কপালে ঠেকিয়ে প্রনাম করলাম দাঁড়িয়ে দাড়িয়েই।
‘এই ভাবে প্রনাম করে?’
আমি তুলির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি ভাবে করে?’
‘আরে নিচু হয়ে প্রনাম করতে হয়, এই ভাবে করলে লক্ষ্মী রাগ করে’
‘বাব্বাঃ এত জানো তুমি?’
‘হ্যাঁ, ', বাড়ির মেয়ে হয়ে যানবো না। আর তুমিও তো ব্রাহ্মন, তুমি জানো না?’
‘আরে আমার পৈতেই নেই, আমার পদবিতে আমি ', হলেও আসলে আমি ম্লেচ্ছ। আমি গরুর মাংসও খাই।‘
‘ইস্*। ছিঃ ছিঃ লক্ষ্মী ঠাকুরের সামনে দাড়িয়ে কি বলছো তুমি।‘ তুলির চোখমুখ হতাশা দেখতে পেলাম।
কথা না বাড়িয়ে আমি নিচু হয়ে বসে মাথা ঠেকিয়ে দিলাম মাটিতে প্রনাম করার জন্যে, একটা জিনিস শিখেছি যে কারো বিশ্বাসে আঘাত করতে নেই। জীবনে কোনদিন প্রনাম করিনি এইভাবে। তবু মন বললো করি আর কিছু চাই। মনে মনে লক্ষিদেবিকে বললাম, ‘মা, তুমি ধনদৌলতের দেবী, সে সব আমার কিছু চায়না, কিন্তু এই মেয়েটাকে কোনোদিন কষ্ট দিয়ো না। রুক্ষ এই দুনিয়াই ওকে কোনদিন একা করে দিয়ো না, ওর ভালো কোরো।‘
‘চলো চলো ওরা সব অপেক্ষা করছে।‘ তুলি আমাকে তাড়া দিলো।
তুলিদের বাড়িটা বেশ পুরোন, কিন্তু মেন্টেন্ড। অনেক যায়গা নিয়ে ওদের বাড়ি। আসলে ওদের যৌথ পরিবার ছিলো, ওর বাবা সব থেকে বড় ভাই, কাকারা সবাইই বাইরে থাকে।
লম্বা একটা বারান্দা ফেলে একটা ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। চিৎকারে কান পাতা দায়, খান দশেক মেয়ে বসে আছে, আমার ঘেমে যাওয়ার যোগার। একসাথে এতো মেয়ে জানিনা কি ভাবে সামলাবো।
সবাই হৈ হৈ করে উঠলো। সবাই বেশ ইম্প্রেসড হয়ে আমাকে দেখছে। একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। দু একটা মেয়ের মুখ চেনা আমার। রাস্তায় দেখেছি।
একটা মেয়েকে দেখলাম বেশ মুখকালো করে বসে আছে, তুলি পরিচয় করিয়ে দিলো, মনামি।
বুঝলাম মনামি তুলির কাছে হেড়ে গেছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘কি ম্যাডাম, চিন্তিত মনে হচ্ছে?’
ম্লান হেসে আমাকে বললো ‘ না অনেক দেরি হয়ে গেছে, মাসির বাড়ি যেতে হবে তো, মা বলেছিলো তাড়াতাড়ি ফিরতে, খুব বঁকা খাবো।‘
মেয়েটাকে তুলামুলক পরিনত লাগলো, আমিও হেসে ভদ্রতা দেখিয়ে বললাম ‘সরি, একটু দেরি হয়ে গেলো’
ধীরে ধীরে তুলির বন্ধুরা চলে গেলো। জীবনে প্রথম এরকম পরিস্থিতিতে পরলাম, আর এরকম শব্দদুষন অনুভব করলাম। একটা জোকস্* শুনেছিলাম যে সেরা মিথ্যে কথা হোলো যে কেউ দুটো মেয়েকে দেখেছে চুপ করে থাকতে।
তুলি আর আমি একা হয়ে গেলাম ঘরে, তুলি বেরিয়ে বাইরের দিকে দেখে নিয়ে এসে সোজা আমার কোলে উঠে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো। আমার ভয় লাগছে, আর ওর চোখে মুখে খুশি উপছে পরছে, ‘মনামির মুখটা দেখলে কেমন প্যাচার মত হয়ে গেছে।‘ উচ্ছাসের কারনটা বুঝতে পারলাম।
‘তুমি কি আমাকে দেখতে ভাল বলে ঝাড়ি মারতে?’
‘যাঃ। তুমি কত ভালো ছেলে, ভাল চাকরি কর, তাছাড়া তুমি সবার থেকে আলাদা।’
‘সেতো ঠিক আছে কিন্তু এসব প্রতিযোগিতা কেন? এ দেখতে ভালো, ও দেখতে কালো?’
‘আমি তো করিনি, মনামিই করতো, ওর কাছে সবারটা খারাপ আর ওরটাই ভালো। ওর অনেক গল্প আছে জানো না তুমি, পরে বলবো।‘
‘ঠিক আছে পরে বোলো, এখন কি এই ভাবে বসে থাকবে?’
তুলি বোধহয় বুঝতে পারলো ও কি ভাবে বসে আছে একেবারে আমার গলা জড়িয়ে দু পা দিয়ে আমার কোমর পেচিয়ে ধরেছে। শাড়ী গুঁটিয়ে হাঁটু দেখা যাচ্ছে। নিজেই লজ্জা পেয়ে নেমে যাওয়ার আগে আমার গালে একটা চুমু খেয়ে বললো ‘ কাউকে পছন্দ হয়ে যায়নি তো, ওই মেয়েগুলোর মধ্যে?’ বিশুদ্ধ মেয়েলি প্রশ্ন, ধীরে ধীরে শোনা অভ্যেস হয়ে যাবে।
এবার তুলিদের বসার ঘরে নিয়ে চলল আমাকে। সেটা আরেক প্রান্তে। একবার সিঁড়ি দিয়ে উঠলাম, একবার নামলাম, আবার একটা বারান্দা পেরোলাম, তারপর বসার ঘরে পৌছুলাম।
সাত আঁটজন লোকবসে আছে।
এক ভদ্রলোক দেখলাম তদারকি করছে সবার, তুলির মা শালপাতায় খিচুরি, আর অন্যান্য প্রসাদ তুলে দিচ্ছে, ভদ্রলোক অনবরত নির্দেশ দিয়ে চলেছে। বেশ কর্কশ গলার স্বর। বুঝলাম তুলির বাবা। বুকটা দুরু দুরু করছে।
সেই ভদ্রলোক ঘুরে দারাতেই আমার মাথার ওপর যেন ছাঁদ ভেঙ্গে পরলো। একে রামে রক্ষে নেই তারওপর সুগ্রীব দোসর। শালা তুলির সাথে আমার দেখাটা কোন লগ্নে হয়েছিলো কি জানি। এই তো বিশ্বের জালি মাল। এক নম্বরের চিটিংবাজ, মাগিবাজ। শালা এদের পুরো ফ্যামিলিই কি দুগগি নাকি। স্বপন নাম মালটার। এরকম দেবা হলে দেবীর আর দোষ কি? আর পর তো পর আমার ভাগ্যেই পরলো। এই বোকাচোদা কে আমাদের পাপ্পুরা একবার কেঁলিয়েছিলো। আমি ছিলাম না, অফিসে ছিলাম। পরে এসে সব শুনেছি। আমাদের পাড়াতে একটা সদ্য বিধবা মহিলা ভাড়া থাকতো, তার বারিওয়ালার থেকে পয়সা খেয়ে মস্তানি করতে এসেছিলো আর মালপত্র ভাঙচুর করেছিলো। পাপ্পুরা বাড়িওয়ালা আর এই মালটাকে রাস্তায় ফেলে আচ্ছা করে দিয়েছিলো। একটা রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত, সেটাকে মাঝে মাঝে পোষ্টারে দেখা যায়।
তুলি সেই ভদ্রলোকের হাত ধরে টান দিয়ে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আমি তো চিনিই এও আমাকে চেনে। বিন্দুমাত্র সৌজন্য দেখালো না। তুলিকে বকা দিয়ে বললো ‘এখন বিরক্ত করিস না দেখছিস তো ব্যাস্ত আছি’ সাথে আমাকেও ভালো করে মেপে নিলো। আমি তাও ভদ্রতা করে হাত তুলে নমস্কার দেখালাম। তার উত্তর তো দূর, পোঁদ ঘুরিয়ে বালের ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করলো। তুলির কি বুঝলো কি জানি একটু মেঘের ছাপ দেখলাম মুখে। তাহলে কি অদ্যই শেষ রজনী।
এরপর আরেক ভদ্রলোক ইনিও মুখ চেনা। একটু আলাদা বসে আছেন। বেশ লম্বা চওড়া, সুপুরুষ চেহারা। আমাকে দেখে পাসের চেয়ারে বসার ইঙ্গিত করলো। আমি গিয়ে উনার পাশে বসলাম।
‘তুমি বরুনদার ছেলে তো?’
‘হ্যাঁ’ আমি উত্তর দিলাম।
‘ওহঃ অনেক বড় হয়ে গেছো তো।‘ এরকম কথা কেউ বললে খুব অস্বস্তি হয়। তবু ভদ্রলোকের কথাবার্তা এত ভালো যে শুনতে ভালো লাগে।
উনি আবার বললেন ‘আমাকে চিনতে পারবে না। আগে তোমাদের বাড়িতে খুব যাতায়াত ছিলো আমার। তুমি তখন ছোট ছিলে। বরুনদাকে, বৌদিকে জিজ্ঞেস কোরো রবিনের কথা।‘ বুঝলাম উনার নাম রবিন।
আবার বললেন ‘বরুনদা কি এখনো সেরকম মাথা গরম করেন।‘
আমি হেসে বললাম ‘আমার সাথে তো কোনদিন মাথা গরম করেনি বা মার সাথেও করতে দেখিনি। কি করে বলবো।‘
উনিও হেসে বললেন ‘আরে তোমার মা সবসময় চিন্তাতে থাকতেন, কি হয় কি হয় এতো মাথা গরম ছিলো। একবার দু পাড়ার ফুটবল খেলা নিয়ে কি গন্ডোগোল যে বেঁধেছিলো, সেই সময় বরুনদার মুর্তি দেখেছিলাম।‘
‘হ্যাঁ। আমি মার মুখে শুনেছি এরকম অনেক গল্প’
‘আমরা একসাথে নকশাল করতাম, বরুনদাকে দেখে সব ভয়ডর উবে যেত ... এরকম অকুতোভয় কাউকে আমি কোনদিন দেখিনি।‘
আমি হাসলাম শুধু।
‘আমি আর বরুনদা একবার একসাথে পালিয়ে দেওঘর চলে গেছিলাম, এখানে আমাদের কয়েকজনের নাম পুলিশের হিটলিস্টে উঠে গেছিলো, এনকাউণ্টারের অর্ডার এসে গেছিলো।‘
তুলির মা বসে থাকা সবার হাতে একটা করে প্লেটে ফলপ্রসাদ দিতে দিতে আমার উদ্দেশ্যে বললো ‘অভি এবার শুনবে কোথায় বোঁম মেরেছিলো, কোথায় বোঁম বাধতো, তারপর পাশে পুলিশের গুলিতে মৃত বন্ধুর লাশ নিয়ে বসেছিলো।‘
আমি বুঝলামনা আমন্ত্রিত অথিতির উদ্দেশ্যে এরকম ভাবে কথা বলছেন কেন উনি।
ওই ভদ্রলোক সামান্য লজ্জিত হয়ে বললেন ‘তোমরা সেসব দিন দেখনি তাই বুঝতে পারবেনা যে কি ভাবে আমাদের কেটেছিলো সেদিনগুলো’
তুলি যেন কোথায় ছিলো হঠাত হই হই করে এসে পরলো ‘দাও মা আমাকে দাও আমি দিয়ে দিচ্ছি।‘
ওর বাবা বলে উঠলো ‘থাক থাক আর কাজ করে কাজ বাড়াতে হবে না।‘
একিরে বাবা, কোথায় বাবা মা মেয়েদের এই ধরনের অনুষ্ঠানে এগিয়ে দেয়, যাতে সামাজিকতা শেখে তা না তাও এরকম ... রুক্ষ ভাবে বলা এতলোকের সামনে।
তুলির মুখটা ক্ষনিকের জন্যে কালো হয়ে গেলেও আবার রোঁদের ঘনঘটা ফিরে এলো। আমাকে দেখে।
আমার সামনে এসে আমার পাসে বসা সেই ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললো ‘বাবা, অভিদার সাথে পরিচয় হয়েছে। খুব সিরিয়াস ছেলে একদম বক বক আর ইয়ার্কি ফাজলামি পছন্দ করে না।‘
কি বললো তুলি? বাবা। ঠিক শুনলাম তো। বাবা বললো। তাহলে এই বোকাচোদা টা কে?
তুলির মা আমার খুব প্রশংসা করলো আমার খাওয়া দেখে ‘তোমাকে খাইয়ে ভাল লাগলো, এতো পরিষ্কার করে খেলে যে দেখে মন ভরে যায়।‘
ওই স্বপন নামের লোকটা দেখলাম তাড়াতাড়ি ফেটে গেল। এত কাপ্তেনি করছিলো কেন কে জানে? আর এদের সাথে কি সম্পর্ক?
তুলির বাবা তো বেশ ভালো মানুষ, আমার মার কথায় “ব্যোমভোলা” ধরনের লোক। এই সরলতার সুজোগই সবাই নিচ্ছে সেটা ভাল করেই বোঝা যাচ্ছে।
কিছুক্ষন পরে আরেক চরিত্রের আগমন। সেই বহুপ্রতীক্ষিত রনি। যার সন্মন্ধে পাপ্পু কুমোরটুলিতে বলেছিলো। সিল্কের একটা শার্ট পরে আছে চকরাবকরা, দেখেই বোঝা যায় যে বরলোকের বখে যাওয়া ছেলে। একটু আগেও গুঁটখা চিবোচ্ছিলো যে সেটা বোঝা যাচ্ছে। রঙ করা চুল, মুখটা দেখলে মনে হয় ঠাঁটিয়ে একটা চড় মারি, এমন বিদঘুটে দেখতে। হাতে গাড়ির চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে ঢুকলো। দেখনদারি ব্যাপার স্যাপার। আমি মনে মনে ভাবছি যে আমি যদি বাবার পয়সায় ফুটানি দেখাতাম আর এর মত কায়দাবাজি করতাম তাহলে কি না হোত।
কিন্তু ছেলেটার একটা গুন আছে সেটা বুঝলাম, বেশ হাসি মুখ আর জলি। আমিই শালা পারিনা খেজুর করতে, যেটা মানুষ পটানোর একটা গুরুত্বপুর্ন গুন, বিশেষ করে মেয়েদের।
মাথাটা গরম হয়ে গেলো যখন তুলি দেখলাম ওকে দেখে হই হই করে উঠলো। আর শালা দেখছি, তুলির বাবাকে দাদা আর মাকে বৌদি ডাকে। আমার থেকে ছোট কিংবা আমার বয়েসি হবে, এতো বয়স্ক লোককে দাদা ডাকছে।
ঢুকেই সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ‘শুভ বিজয়া।‘
তুলির মা দেখলাম একটু অভিমানের সুরেই রনিকে উদ্দেশ্য করে তুলিকে বললো ‘ওকে বল, আমরা ভাসানের পরেই বিজয়া শেষ করে ফেলেছি।‘
রনি ঠেঁসটা বুঝে বললো ‘আরে বৌদি এত রাগ করলে চলবে, এইতো আজকেই ফিরলাম বম্বে থেকে, আউটডোর লোকেশান দেখে এলাম, দুপুরে নামলাম আর সোজা তোমাদের বাড়ি।‘
ওঃ শালা এখানে এখন শুটিঙের গল্প ফাঁদবে বুঝতে পেরেছি।
তারপর তুলির দিকে তাকিয়ে বললো ‘কিরে বিজয়ার কোলাকুলি করবি না?’
তুলি? কোলাকুলি। সেকিরে?
তুলিও ন্যাকামি করে বললো ‘মিষ্টি তো আনতে পারতে, তাহলে কোলাকুলি করতাম।‘
তুলি কি সত্যি বলছে মন থেকে, না শুধু ফ্লার্ট, ফ্লার্টই বা করবে কেন?
তুলি রনির হাত ধরে টান দিয়ে আমার দিকে নিয়ে এলো, তুলির বাবা রনির দিকে খেয়াল না করে আমার সাথে বকবক করে যাচ্ছিলো, তুলি ওর বাবাকে থামিয়ে দিয়ে আমাকে বললো ‘অভিদা, এইযে রনিদা, টালিগঞ্জে থাকে।‘
আমি হেসে হাত বাড়িয়ে দিলাম ‘হ্যালো।‘
রনিও হাত বারিয়ে দিলো চোখেমুখে একটা কৌতুক। ফিসফিস করে আমাকে বলল ‘দাদা বলে ডাকে নাকি?’
আমি হেসে দিলাম, তুলি বুঝতে পারলো যে ওকে খোঁড়াক করা হোলো, ‘কি বললে কি বলছো তোমরা?’ বলে রনির হাত ধরে ঝাকাতে শুরু করলো। আমি অবাক হয়ে দেখলাম তুলিকে। এই মুহুর্তে তুলিকে দেখলে মনে হবে যে ও রনির সাথে প্রেম করে। গায়ের মধ্যে প্রায় ঢুকে গেছে, দেখলাম রনিকে খামচিও দিয়ে দিলো। আমি জানতাম এটা শুধু আমাকেই করে, তাহলে আমার আর অন্য কারোর মধ্যে কি তফাত রইলো।
রনি কায়দা করে আর্তনাদ করে উঠলো ‘আউচ!!’ শালা পেটে গুঁতোলে a, b, c, d বেরবে নাকি সন্দেহ, আর খামচি খেয়ে আউচ মারাচ্ছে। ঝাঁট জ্বলে যায়, এরকম কায়দাবাজি দেখে।
রনি এবার তুলির মার উদ্দেশ্যে বললো ‘বৌদি কতদিন বলেছি ওকে নখ কাটতে বলবে, নাহলে আমাকে বলবে আমি আমাদের মেকাপ গ্রুপের একটা মেয়েকে পাঠিয়ে দেবো, ও এসে তোমার মেয়ের নখ কেটে দিয়ে যাবে।‘
শালা শোনাচ্ছে আমাকে যে তুলির সাথে ওর কিরকম রিলেশান। আমাকে খাঁর খাওয়াচ্ছে। বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি কি বোকাচোদার মত এগুলো শুনে যাবো না সহ্য করবো। তুলি এরকম ক্যালানে হলে তো আমাকে নতুন করে ভাবতে হবে।
তুলির মা রনির জন্যে প্রসাদ বাড়তে বাড়তে বলে উঠলো ‘সেটা তোমাদের কাকা ভাইজির ব্যাপার, আমাকে জড়িয়ো না।‘
শালা কাকা। এই তো তুলি ওকে রনিদা বলে ডাকল। ও কি তুলিকে ভাইজির নজরে দেখে? পুরো ফ্যামিলিটাই স্ক্রু ঢিলা মালে ভর্তি। তুলির সাথে এসব ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলতে হবে।
রনি বেশিক্ষন ওখানে ছিলোনা , ভাও দেখিয়ে বলে গেলো কোন হোটেলে নাকি কোন সিনামার গল্প নিয়ে আলোচনা করতে যাবে। শালা কোন মাগি লাগাতে যাবে তা না বলে...।
আমিও বেরিয়ে এলাম তুলি আমাকে খানিকটা এগিয়ে দিতে এলো।
তুলির মুখটা খুব খুশি খুশি লাগছে, রনির প্রভাবে নাকি, আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে ভাবতে ভাবতে, গম্ভির ভাবে হাঁটছি আর ভাবছি এসব কিভাবে সামলাবো।
তুলির খিমচিতে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি চোখে মুখে খুশি উপচে পরছে, আমার আরো মাথা গরম হয়ে গেলো, চিৎকার করে নাহলেও দাঁতে দাঁত চেপে বললাম ‘কি ব্যাপার টা কি? সব সময় এরকম করো কেন? মানুষের মনমেজাজ কি সবসময় এক থাকে?’
তুলি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, যেন আমাকে প্রথম দেখছে। চোখ মুখ থেকে উচ্ছাস উধাও।
আমার হাত ছেড়ে দিলো। আমিও একটু প্রমাদ গুনলাম। একটু বেশী হয়ে গেলো কি?
আমি হার না মেনে তুলিকে বললাম ‘যাও বাড়ি ঢুকে যাও, আমি আমার মত চলে যাবো।‘
তুলি আমার হাত ছেড়ে দিলো। আর বললো ‘আমি কোথায় যাবো তোমাকে বলে দিতে হবেনা। তোমার মাকে বলে দিয়ো আমি অন্যদিন আসবো।‘ বলে পিছন ফিরে ঘুরে হনহন করে হাঁটা দিলো।
‘মানে?’ আমি খপ করে পিছন থেকে গিয়ে ওর হাত টেনে ধরলাম।
‘লাগেনা আমার?’ চিৎকার করে বলল তুলি। বুঝতে পারলাম শোধ নিচ্ছে।
‘তুমি কি মার সাথে কথা বলেছো?’
‘হ্যাঁ, কি করবো তুমি আসতে এতো দেরি করছিলে, আমি তোমার মা ফোন তুলেছে বলে চুপ করে কেটে দিতে যাবো, তখন তোমার মা বলে উঠলো অভি তোদের বাড়িতে গেছে। আমি কি করবো তাই কথা বললাম। আমাকে তো আসতে বলেছিলো। কিন্তু এখন আমি আর যাবোনা। তুমি বলে দিও।’
‘কেন?’
‘ভালো লাগছে না তাই।‘
‘আর মা তোমার জন্যে অপেক্ষা করে থাকবে? সেই বেলা?’
একটু চুপ করে থেকে বললো ‘আমি ফোন করে বলে দেবো কিছু একটা। তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা।‘
আমারও মাথাটা গরম হয়ে গেলো ‘মন খারাপ তাই না, রনি চলে গেলো বলে?’
তুলি আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো, বুঝতে চেষ্টা করছে যে আমি কি বোললাম।
আমিও ঘুরে গিয়ে হন হন করে হাঁটা দিলাম।
মাথা চরচর করছে। এরকম অবুঝ হলে আমার পক্ষে সম্পর্ক রাখা সত্যি কঠিন। এই সেদিন মাসিমা দেখলো, কত আদর দিলো ওকে, আর রাতের বেলা ধেঁই ধেঁই করে নাচতে শুরু করলো। আজ মা ওর সাথে কথা বললো, আর আমার সামনেই আরেকটা ছেলের গায়ে ঢলাঢলি শুরু করলো। তুলি কি কিছুই বোঝেনা? চোদাচুদিটা তো ভালোই করলো। বোঝেনা কি করে হয়? ও যে এখন একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছে, সেই সম্পর্কের প্রতি ওর একটা দায়িত্ব আছে সেটা তো ওকে বুঝতে হবে। সব কি বলে বলে দিতে হবে। হতাশ লাগছে আমার।
আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি হোলো এরকম করে কি দেখছো?’
‘দেখবোনা? তুই যা পরিপাটি হয়ে ঘুরছিস আজকাল, দেখতে তো হবেই নিজের সন্তান বলে কথা।‘ একটু ব্যাঙ্গাত্মক টোন। বুঝলাম ধরা পরে গেছি।
‘তা কোথায় নিমন্ত্রন?’
‘এই তো একটা বন্ধুর বাড়িতে।‘
‘আমি চিনিনা সেই বন্ধুকে? তাহলে কি সেদিন রাতে যে এসেছিলো?’
একদম মাথায় বন্দুক ধরেছে মা।
‘না যে আরেকটু হলে ফোন করে করে ফোনটা খারাপ করে দিতো।‘
আর কি লুকোবো বললাম ‘দুজন একই।‘
‘কে সেই মহারানী যে আপনার মত নিরস বস্তুতে আগ্রহ দেখালো?’
‘নিরস কেন?’
‘বাহঃ, আমাকেই জিজ্ঞেস করছিস তুই নিরস কেন?’
‘তুমিই তো বলছো, তোমাকেই তো জিজ্ঞেস করবো।‘
‘ও আমি একাই বলি, আর কেউ, মানে সে বলেনি?’
‘না তো।‘
‘বয়েস কত?’
‘1st ইয়ারে পরছে’
‘তাই বুঝতে পারেনি তোকে।‘
‘দুদিন যাক তোকে বুঝতে পারলে, টাটা করে চলে যাবে’
‘কেন এরকম বলছো?’
‘বলবো না? তোর সব কটা বন্ধু দেখি হই হই করে, কত গল্প করে আর তুই সবসময় গোমড়া মুখে বসে থাকিস দেখি। যেন তোর চারটে মেয়ে আছে, বিয়ে দিতে হবে।‘
আমি মার গলা জড়িয়ে ধরলাম ‘তুমি না, কোথায় আমার প্রসংশা করবে যে তোমার ছেলে এলাকার বেতাজ বাদশা, আমি গম্ভির থাকি বলেই ওরা হইচই করতে পারে, আর তুমি আমার নিন্দা করছো।‘
মা আমার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো ‘সবাই তোর ঘারে বন্দুক রাখবে আর তুই এগিয়ে যাবি, আর নিজের বদনাম করবি। তোর বন্ধুরা কেউ ক্ষতিকর না আমি জানি, কিন্তু নিজের ভালোটা পাগলেও বোঝে। যেমন তোর বাবা, তেমন তুই হয়েছিস একই রকম বাউন্ডূলে। কবে পাড়ার গলিতে বোম ফেলেছে, আর পুলিশের হাত থেকে কি ভাবে পালিয়ে বেচেছে সেই গল্প এখনো করে। নেহাত সরকারি চাকরি পেয়ে গেছিলো তাই। আরে বাবা পুরুষ মানুষ এরকম ব্যোঁমভোলা হলে হয় নাকি। আরে কোথায় ভাল চাকড়ি বাকড়ি খুজবি, তা না, পাড়া, ক্লাব এসব করে ভালো ভালো সুযোগ ছেড়ে দিলি। দেখ্* সুজোগ যখন আসে তখন তোকে যাচাই করতে আসে যে তুই কত উপযোগী, যদি তুই সুযোগ না নিস, তাহলে পরে আর পাবিনা। তখন শুধু গল্পই করতে পারবি যে আমি এখানে চান্স পেয়েছিলাম, ওখানে আমার ডাক এসেছিলো, ব্যাস। আর লোকে তোর কথা শুনতে শুনতে ভাববে যে এর আর অন্য কিছু বলার নেই। একটা সময় পরে বন্ধু বান্ধব সবাই যে যার রাস্তা দেখে নেবে, আর তোর যোগ্যতা থাকা স্বতেও তুই পরে থাকবি এখানে। আরে তোর সামনে সারা পৃথিবী পরে রয়েছে, ঘুরে তো দেখ ভালো না লাগলে এই বাড়ি, এই সব, কিছু তো তোরই। আমাদের যা সম্পত্তি আছে তাতে তোর জীবনে সেরকম কিছু না করলেও চলে, তা বলে পুরুষ মানুষ হয়ে এরকম জীবনযাপন করবি ?’
‘তুমি কি চাও আমি তোমাদের থেকে দূরে চলে যাই?’
‘কোন মা বাবাই তা চায় না, কিন্তু তাতে যদি তোর ভালো হয় তাহলে আমরা বুকে পাথর চাঁপা দিয়ে সেটা হাসিমুখে মেনে নেবো।‘
‘কিন্তু মা আমার তো তোমাদের ছাড়া থাকতে ভাল লাগবেনা। আমি ভাবতেও পারিনা যে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না।‘
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মা বলে উঠলো ‘ আরে একদিন তো আমাদের সবাইকে যেতে হবে এই পৃথিবী থেকে তখন কি করবি?’
আমি মার কোলে মুখ গুজে দিলাম। মনটা ভার হয়ে গেল। অপ্রিয় হলেও সত্যি কথা।
‘যা যা তোর দেরি হচ্ছে। তোর জন্যে অপেক্ষা করছে হয়তো ওরা।‘
‘তোমরা কোথাও যাবেনা?’
‘কোথায় যাবো?’
‘না কেঊ নিমন্ত্রন করেনি, লক্ষ্মীপুজোর?’
‘ধুর লক্ষিপুজোর আবার নিমন্ত্রন হয় নাকি? ইচ্ছে হলেই তো এখানে সেখানে যাওয়া যায়।‘
‘তাহলে যাও না কোথাও ঘুরে আসো না?’
‘ধুর, তুই যা না। আমাকে নিয়ে পরেছিস কেন?’
‘তোমরা কি করে পারো বলোতো। এতো বড় বাড়িতে দুজন ভুতের মত বসে থাকো, বাইরে এত আলো, সবাই কত আনন্দ করছে আর তুমি আর বাবা সবসময় বাড়িতে, এত বড় পুজো গেলো, তাও শুধু অঞ্জলি আর বরণ করতে গেলে। আরে কোথাও না যাও পাড়ার পুজোর প্যান্ডেলে গিয়ে তো বসতে পারতে।‘
‘আরে আমরা অনেক করেছি আমাদের সময়, এখন আর শরীর মন চলেনা রে, আর তুই তো আনন্দ করছিস, তোকে দেখেই আমাদের সুখ রে, সারা জীবন তো সময় পায়নি, এখন আমি আর তোর বাবা মিলে দুই বুড়োবুড়ি জমিয়ে প্রেম করছি। বুড়ো হলে বুঝবি এই বয়েসে কেন মানুষ নিস্তরঙ্গ জীবন চায়। তুই এবার যা, নাহলে বাচ্চা মেয়েটা রাগ করবে, আবার পয়সা খরচা করে ফোন করতে চলে আসবে।‘
আমি হেসে দিলাম।
তুলিদের বাড়ির গলিতে ঢুকতেই দেখি তুলি পায়চারি করছে, লালপার সাদা শাড়ী পরেছে, বেশ লক্ষ্মী লক্ষ্মী লাগছে।
কাছে পৌছুতেই হাত ধরে টানতে শুরু করলো।
‘কি হোলো এত দেরি? আমার কত বান্ধবি এসেছে জানো, তোমাকে দেখবে বলে’ রাগত স্বরে বললো তুলি।
মজা করে বললাম ‘কেন আমি কি জোকার নাকি সবাইকে দেখাবে?’
‘ধুর চলোতো? মনামি চলে যাবে বলছে তখন থেকে, ওর খুব দেমাক, ওর বয়ফ্রেণ্ড নাকি দারুন দেখতে?’
‘তোমাদের সব বন্ধুরা কি ছোটবেলা থেকেই প্রেম করে?’
আর উত্তর না দিয়ে জোরালো একটা খামচিতে আমার প্রান প্রায় বের করে দিলো।
তুলির মা আমাকে দেখে হেসে বললো ‘ওঃ এসে গেছো। তুলি প্রায় কাঁদতে বসে গেছিলো’
আমিও হেসে দিলাম। আজকে বেশ ভালো লাগছে তো উনাকে, লালপাড় সাদা শাড়ী, কনুই অবধি লাল ব্লাঊজ, সাথে কপালে বড় সিঁদুরের টিপ, সাথে চন্দন,কাজল আরো কিসবের টিপ। খাটাখাঁটনির দৌলতে মাথার চুল একটু উস্কোখুস্কো। উনার চোখের মনি দেখলাম হাল্কা বাদামি, মানে একটু কটা। এতদিন ভাল করে খেয়াল করিনি, চুলগুলো হাল্কা ঢেউ খেলানো ঢেউ খেলানো, কাঁধের নিচে অজত্নে ঝুলছে, যদিও ক্লিপ দিয়ে বাঁধার চেষ্টা করেছেন, তাও ছোট হওয়ার দরুন, খুব একটা শাসন করে উঠতে পারেন নি। তাই এলোমেলো হয়ে উনার মুখশ্রীর চারপাশে ঘিরে ধরেছে। বেশ সুন্দর একটা মাতৃরুপ, লক্ষ্মীরুপ। মনের মধ্যে আবার এলো, এই মহিলার কি সত্যিই এত বদনাম।
‘এই তুলি যাওকে ঠাকুর ঘরে নিয়ে যা প্রনাম করিয়ে নিয়ে আয়।‘
আমি বুঝলাম তুলির মা সব জেনে গেছে আমার আর তুলির ব্যাপারে। থাক্*, আজ না হয় কাল তো জানতোই। শাঁক দিয়ে মাছ ঢেকে কি লাভ। তুলি কি বাজির খাওয়ারটা পেয়েছে? জিজ্ঞেস করতে হবে।
বাহঃ বেশ বড় ঠাকুর ঘর তো, কি সুন্দর আলপনা দেওয়া। ধুঁপের গন্ধে ঘর মোঁ মোঁ করছে। পুজো হয়ে গেছে দেখছি। দেবির সামনে ভোগ দেওয়া রয়েছে সঙ্গে ভাজা ভুজি, পায়েস, চাটনি, আরো কত কি।
তুলির দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করলাম ‘কে করেছে এতকিছু?’
‘আমি আর মা। কেন?’
‘এই এত কিছু তুমি আর তোমার মা মিলে করেছো?’
‘হ্যাঁ। কাল রাত থেকে জেগে আছি কত কি করলাম, নাড়ু বানালাম, সব্জি কাটলাম আরো কত কি?’
‘এই আলপনাটা কে দিয়েছে?’
‘মা একে দিয়েছে, আমি ভিতরের গুলো করেছি? চলো চলো তাড়াতাড়ি প্রনাম করে চলো।‘
মন ভরে গেলো একটা ভালো লাগায়। মন বলছে যে এত ভালো আলপনা দিতে পারে, যে এত নিষ্ঠা ভরে গৃহলক্ষ্মীর আরাধনা করে, সে নিশ্চয় পরপুরুষের তলায় শুয়ে পা ফাঁক করতে পারেনা।
আমি একহাত কপালে ঠেকিয়ে প্রনাম করলাম দাঁড়িয়ে দাড়িয়েই।
‘এই ভাবে প্রনাম করে?’
আমি তুলির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি ভাবে করে?’
‘আরে নিচু হয়ে প্রনাম করতে হয়, এই ভাবে করলে লক্ষ্মী রাগ করে’
‘বাব্বাঃ এত জানো তুমি?’
‘হ্যাঁ, ', বাড়ির মেয়ে হয়ে যানবো না। আর তুমিও তো ব্রাহ্মন, তুমি জানো না?’
‘আরে আমার পৈতেই নেই, আমার পদবিতে আমি ', হলেও আসলে আমি ম্লেচ্ছ। আমি গরুর মাংসও খাই।‘
‘ইস্*। ছিঃ ছিঃ লক্ষ্মী ঠাকুরের সামনে দাড়িয়ে কি বলছো তুমি।‘ তুলির চোখমুখ হতাশা দেখতে পেলাম।
কথা না বাড়িয়ে আমি নিচু হয়ে বসে মাথা ঠেকিয়ে দিলাম মাটিতে প্রনাম করার জন্যে, একটা জিনিস শিখেছি যে কারো বিশ্বাসে আঘাত করতে নেই। জীবনে কোনদিন প্রনাম করিনি এইভাবে। তবু মন বললো করি আর কিছু চাই। মনে মনে লক্ষিদেবিকে বললাম, ‘মা, তুমি ধনদৌলতের দেবী, সে সব আমার কিছু চায়না, কিন্তু এই মেয়েটাকে কোনোদিন কষ্ট দিয়ো না। রুক্ষ এই দুনিয়াই ওকে কোনদিন একা করে দিয়ো না, ওর ভালো কোরো।‘
‘চলো চলো ওরা সব অপেক্ষা করছে।‘ তুলি আমাকে তাড়া দিলো।
তুলিদের বাড়িটা বেশ পুরোন, কিন্তু মেন্টেন্ড। অনেক যায়গা নিয়ে ওদের বাড়ি। আসলে ওদের যৌথ পরিবার ছিলো, ওর বাবা সব থেকে বড় ভাই, কাকারা সবাইই বাইরে থাকে।
লম্বা একটা বারান্দা ফেলে একটা ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। চিৎকারে কান পাতা দায়, খান দশেক মেয়ে বসে আছে, আমার ঘেমে যাওয়ার যোগার। একসাথে এতো মেয়ে জানিনা কি ভাবে সামলাবো।
সবাই হৈ হৈ করে উঠলো। সবাই বেশ ইম্প্রেসড হয়ে আমাকে দেখছে। একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। দু একটা মেয়ের মুখ চেনা আমার। রাস্তায় দেখেছি।
একটা মেয়েকে দেখলাম বেশ মুখকালো করে বসে আছে, তুলি পরিচয় করিয়ে দিলো, মনামি।
বুঝলাম মনামি তুলির কাছে হেড়ে গেছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘কি ম্যাডাম, চিন্তিত মনে হচ্ছে?’
ম্লান হেসে আমাকে বললো ‘ না অনেক দেরি হয়ে গেছে, মাসির বাড়ি যেতে হবে তো, মা বলেছিলো তাড়াতাড়ি ফিরতে, খুব বঁকা খাবো।‘
মেয়েটাকে তুলামুলক পরিনত লাগলো, আমিও হেসে ভদ্রতা দেখিয়ে বললাম ‘সরি, একটু দেরি হয়ে গেলো’
ধীরে ধীরে তুলির বন্ধুরা চলে গেলো। জীবনে প্রথম এরকম পরিস্থিতিতে পরলাম, আর এরকম শব্দদুষন অনুভব করলাম। একটা জোকস্* শুনেছিলাম যে সেরা মিথ্যে কথা হোলো যে কেউ দুটো মেয়েকে দেখেছে চুপ করে থাকতে।
তুলি আর আমি একা হয়ে গেলাম ঘরে, তুলি বেরিয়ে বাইরের দিকে দেখে নিয়ে এসে সোজা আমার কোলে উঠে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো। আমার ভয় লাগছে, আর ওর চোখে মুখে খুশি উপছে পরছে, ‘মনামির মুখটা দেখলে কেমন প্যাচার মত হয়ে গেছে।‘ উচ্ছাসের কারনটা বুঝতে পারলাম।
‘তুমি কি আমাকে দেখতে ভাল বলে ঝাড়ি মারতে?’
‘যাঃ। তুমি কত ভালো ছেলে, ভাল চাকরি কর, তাছাড়া তুমি সবার থেকে আলাদা।’
‘সেতো ঠিক আছে কিন্তু এসব প্রতিযোগিতা কেন? এ দেখতে ভালো, ও দেখতে কালো?’
‘আমি তো করিনি, মনামিই করতো, ওর কাছে সবারটা খারাপ আর ওরটাই ভালো। ওর অনেক গল্প আছে জানো না তুমি, পরে বলবো।‘
‘ঠিক আছে পরে বোলো, এখন কি এই ভাবে বসে থাকবে?’
তুলি বোধহয় বুঝতে পারলো ও কি ভাবে বসে আছে একেবারে আমার গলা জড়িয়ে দু পা দিয়ে আমার কোমর পেচিয়ে ধরেছে। শাড়ী গুঁটিয়ে হাঁটু দেখা যাচ্ছে। নিজেই লজ্জা পেয়ে নেমে যাওয়ার আগে আমার গালে একটা চুমু খেয়ে বললো ‘ কাউকে পছন্দ হয়ে যায়নি তো, ওই মেয়েগুলোর মধ্যে?’ বিশুদ্ধ মেয়েলি প্রশ্ন, ধীরে ধীরে শোনা অভ্যেস হয়ে যাবে।
এবার তুলিদের বসার ঘরে নিয়ে চলল আমাকে। সেটা আরেক প্রান্তে। একবার সিঁড়ি দিয়ে উঠলাম, একবার নামলাম, আবার একটা বারান্দা পেরোলাম, তারপর বসার ঘরে পৌছুলাম।
সাত আঁটজন লোকবসে আছে।
এক ভদ্রলোক দেখলাম তদারকি করছে সবার, তুলির মা শালপাতায় খিচুরি, আর অন্যান্য প্রসাদ তুলে দিচ্ছে, ভদ্রলোক অনবরত নির্দেশ দিয়ে চলেছে। বেশ কর্কশ গলার স্বর। বুঝলাম তুলির বাবা। বুকটা দুরু দুরু করছে।
সেই ভদ্রলোক ঘুরে দারাতেই আমার মাথার ওপর যেন ছাঁদ ভেঙ্গে পরলো। একে রামে রক্ষে নেই তারওপর সুগ্রীব দোসর। শালা তুলির সাথে আমার দেখাটা কোন লগ্নে হয়েছিলো কি জানি। এই তো বিশ্বের জালি মাল। এক নম্বরের চিটিংবাজ, মাগিবাজ। শালা এদের পুরো ফ্যামিলিই কি দুগগি নাকি। স্বপন নাম মালটার। এরকম দেবা হলে দেবীর আর দোষ কি? আর পর তো পর আমার ভাগ্যেই পরলো। এই বোকাচোদা কে আমাদের পাপ্পুরা একবার কেঁলিয়েছিলো। আমি ছিলাম না, অফিসে ছিলাম। পরে এসে সব শুনেছি। আমাদের পাড়াতে একটা সদ্য বিধবা মহিলা ভাড়া থাকতো, তার বারিওয়ালার থেকে পয়সা খেয়ে মস্তানি করতে এসেছিলো আর মালপত্র ভাঙচুর করেছিলো। পাপ্পুরা বাড়িওয়ালা আর এই মালটাকে রাস্তায় ফেলে আচ্ছা করে দিয়েছিলো। একটা রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত, সেটাকে মাঝে মাঝে পোষ্টারে দেখা যায়।
তুলি সেই ভদ্রলোকের হাত ধরে টান দিয়ে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আমি তো চিনিই এও আমাকে চেনে। বিন্দুমাত্র সৌজন্য দেখালো না। তুলিকে বকা দিয়ে বললো ‘এখন বিরক্ত করিস না দেখছিস তো ব্যাস্ত আছি’ সাথে আমাকেও ভালো করে মেপে নিলো। আমি তাও ভদ্রতা করে হাত তুলে নমস্কার দেখালাম। তার উত্তর তো দূর, পোঁদ ঘুরিয়ে বালের ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করলো। তুলির কি বুঝলো কি জানি একটু মেঘের ছাপ দেখলাম মুখে। তাহলে কি অদ্যই শেষ রজনী।
এরপর আরেক ভদ্রলোক ইনিও মুখ চেনা। একটু আলাদা বসে আছেন। বেশ লম্বা চওড়া, সুপুরুষ চেহারা। আমাকে দেখে পাসের চেয়ারে বসার ইঙ্গিত করলো। আমি গিয়ে উনার পাশে বসলাম।
‘তুমি বরুনদার ছেলে তো?’
‘হ্যাঁ’ আমি উত্তর দিলাম।
‘ওহঃ অনেক বড় হয়ে গেছো তো।‘ এরকম কথা কেউ বললে খুব অস্বস্তি হয়। তবু ভদ্রলোকের কথাবার্তা এত ভালো যে শুনতে ভালো লাগে।
উনি আবার বললেন ‘আমাকে চিনতে পারবে না। আগে তোমাদের বাড়িতে খুব যাতায়াত ছিলো আমার। তুমি তখন ছোট ছিলে। বরুনদাকে, বৌদিকে জিজ্ঞেস কোরো রবিনের কথা।‘ বুঝলাম উনার নাম রবিন।
আবার বললেন ‘বরুনদা কি এখনো সেরকম মাথা গরম করেন।‘
আমি হেসে বললাম ‘আমার সাথে তো কোনদিন মাথা গরম করেনি বা মার সাথেও করতে দেখিনি। কি করে বলবো।‘
উনিও হেসে বললেন ‘আরে তোমার মা সবসময় চিন্তাতে থাকতেন, কি হয় কি হয় এতো মাথা গরম ছিলো। একবার দু পাড়ার ফুটবল খেলা নিয়ে কি গন্ডোগোল যে বেঁধেছিলো, সেই সময় বরুনদার মুর্তি দেখেছিলাম।‘
‘হ্যাঁ। আমি মার মুখে শুনেছি এরকম অনেক গল্প’
‘আমরা একসাথে নকশাল করতাম, বরুনদাকে দেখে সব ভয়ডর উবে যেত ... এরকম অকুতোভয় কাউকে আমি কোনদিন দেখিনি।‘
আমি হাসলাম শুধু।
‘আমি আর বরুনদা একবার একসাথে পালিয়ে দেওঘর চলে গেছিলাম, এখানে আমাদের কয়েকজনের নাম পুলিশের হিটলিস্টে উঠে গেছিলো, এনকাউণ্টারের অর্ডার এসে গেছিলো।‘
তুলির মা বসে থাকা সবার হাতে একটা করে প্লেটে ফলপ্রসাদ দিতে দিতে আমার উদ্দেশ্যে বললো ‘অভি এবার শুনবে কোথায় বোঁম মেরেছিলো, কোথায় বোঁম বাধতো, তারপর পাশে পুলিশের গুলিতে মৃত বন্ধুর লাশ নিয়ে বসেছিলো।‘
আমি বুঝলামনা আমন্ত্রিত অথিতির উদ্দেশ্যে এরকম ভাবে কথা বলছেন কেন উনি।
ওই ভদ্রলোক সামান্য লজ্জিত হয়ে বললেন ‘তোমরা সেসব দিন দেখনি তাই বুঝতে পারবেনা যে কি ভাবে আমাদের কেটেছিলো সেদিনগুলো’
তুলি যেন কোথায় ছিলো হঠাত হই হই করে এসে পরলো ‘দাও মা আমাকে দাও আমি দিয়ে দিচ্ছি।‘
ওর বাবা বলে উঠলো ‘থাক থাক আর কাজ করে কাজ বাড়াতে হবে না।‘
একিরে বাবা, কোথায় বাবা মা মেয়েদের এই ধরনের অনুষ্ঠানে এগিয়ে দেয়, যাতে সামাজিকতা শেখে তা না তাও এরকম ... রুক্ষ ভাবে বলা এতলোকের সামনে।
তুলির মুখটা ক্ষনিকের জন্যে কালো হয়ে গেলেও আবার রোঁদের ঘনঘটা ফিরে এলো। আমাকে দেখে।
আমার সামনে এসে আমার পাসে বসা সেই ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললো ‘বাবা, অভিদার সাথে পরিচয় হয়েছে। খুব সিরিয়াস ছেলে একদম বক বক আর ইয়ার্কি ফাজলামি পছন্দ করে না।‘
কি বললো তুলি? বাবা। ঠিক শুনলাম তো। বাবা বললো। তাহলে এই বোকাচোদা টা কে?
তুলির মা আমার খুব প্রশংসা করলো আমার খাওয়া দেখে ‘তোমাকে খাইয়ে ভাল লাগলো, এতো পরিষ্কার করে খেলে যে দেখে মন ভরে যায়।‘
ওই স্বপন নামের লোকটা দেখলাম তাড়াতাড়ি ফেটে গেল। এত কাপ্তেনি করছিলো কেন কে জানে? আর এদের সাথে কি সম্পর্ক?
তুলির বাবা তো বেশ ভালো মানুষ, আমার মার কথায় “ব্যোমভোলা” ধরনের লোক। এই সরলতার সুজোগই সবাই নিচ্ছে সেটা ভাল করেই বোঝা যাচ্ছে।
কিছুক্ষন পরে আরেক চরিত্রের আগমন। সেই বহুপ্রতীক্ষিত রনি। যার সন্মন্ধে পাপ্পু কুমোরটুলিতে বলেছিলো। সিল্কের একটা শার্ট পরে আছে চকরাবকরা, দেখেই বোঝা যায় যে বরলোকের বখে যাওয়া ছেলে। একটু আগেও গুঁটখা চিবোচ্ছিলো যে সেটা বোঝা যাচ্ছে। রঙ করা চুল, মুখটা দেখলে মনে হয় ঠাঁটিয়ে একটা চড় মারি, এমন বিদঘুটে দেখতে। হাতে গাড়ির চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে ঢুকলো। দেখনদারি ব্যাপার স্যাপার। আমি মনে মনে ভাবছি যে আমি যদি বাবার পয়সায় ফুটানি দেখাতাম আর এর মত কায়দাবাজি করতাম তাহলে কি না হোত।
কিন্তু ছেলেটার একটা গুন আছে সেটা বুঝলাম, বেশ হাসি মুখ আর জলি। আমিই শালা পারিনা খেজুর করতে, যেটা মানুষ পটানোর একটা গুরুত্বপুর্ন গুন, বিশেষ করে মেয়েদের।
মাথাটা গরম হয়ে গেলো যখন তুলি দেখলাম ওকে দেখে হই হই করে উঠলো। আর শালা দেখছি, তুলির বাবাকে দাদা আর মাকে বৌদি ডাকে। আমার থেকে ছোট কিংবা আমার বয়েসি হবে, এতো বয়স্ক লোককে দাদা ডাকছে।
ঢুকেই সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ‘শুভ বিজয়া।‘
তুলির মা দেখলাম একটু অভিমানের সুরেই রনিকে উদ্দেশ্য করে তুলিকে বললো ‘ওকে বল, আমরা ভাসানের পরেই বিজয়া শেষ করে ফেলেছি।‘
রনি ঠেঁসটা বুঝে বললো ‘আরে বৌদি এত রাগ করলে চলবে, এইতো আজকেই ফিরলাম বম্বে থেকে, আউটডোর লোকেশান দেখে এলাম, দুপুরে নামলাম আর সোজা তোমাদের বাড়ি।‘
ওঃ শালা এখানে এখন শুটিঙের গল্প ফাঁদবে বুঝতে পেরেছি।
তারপর তুলির দিকে তাকিয়ে বললো ‘কিরে বিজয়ার কোলাকুলি করবি না?’
তুলি? কোলাকুলি। সেকিরে?
তুলিও ন্যাকামি করে বললো ‘মিষ্টি তো আনতে পারতে, তাহলে কোলাকুলি করতাম।‘
তুলি কি সত্যি বলছে মন থেকে, না শুধু ফ্লার্ট, ফ্লার্টই বা করবে কেন?
তুলি রনির হাত ধরে টান দিয়ে আমার দিকে নিয়ে এলো, তুলির বাবা রনির দিকে খেয়াল না করে আমার সাথে বকবক করে যাচ্ছিলো, তুলি ওর বাবাকে থামিয়ে দিয়ে আমাকে বললো ‘অভিদা, এইযে রনিদা, টালিগঞ্জে থাকে।‘
আমি হেসে হাত বাড়িয়ে দিলাম ‘হ্যালো।‘
রনিও হাত বারিয়ে দিলো চোখেমুখে একটা কৌতুক। ফিসফিস করে আমাকে বলল ‘দাদা বলে ডাকে নাকি?’
আমি হেসে দিলাম, তুলি বুঝতে পারলো যে ওকে খোঁড়াক করা হোলো, ‘কি বললে কি বলছো তোমরা?’ বলে রনির হাত ধরে ঝাকাতে শুরু করলো। আমি অবাক হয়ে দেখলাম তুলিকে। এই মুহুর্তে তুলিকে দেখলে মনে হবে যে ও রনির সাথে প্রেম করে। গায়ের মধ্যে প্রায় ঢুকে গেছে, দেখলাম রনিকে খামচিও দিয়ে দিলো। আমি জানতাম এটা শুধু আমাকেই করে, তাহলে আমার আর অন্য কারোর মধ্যে কি তফাত রইলো।
রনি কায়দা করে আর্তনাদ করে উঠলো ‘আউচ!!’ শালা পেটে গুঁতোলে a, b, c, d বেরবে নাকি সন্দেহ, আর খামচি খেয়ে আউচ মারাচ্ছে। ঝাঁট জ্বলে যায়, এরকম কায়দাবাজি দেখে।
রনি এবার তুলির মার উদ্দেশ্যে বললো ‘বৌদি কতদিন বলেছি ওকে নখ কাটতে বলবে, নাহলে আমাকে বলবে আমি আমাদের মেকাপ গ্রুপের একটা মেয়েকে পাঠিয়ে দেবো, ও এসে তোমার মেয়ের নখ কেটে দিয়ে যাবে।‘
শালা শোনাচ্ছে আমাকে যে তুলির সাথে ওর কিরকম রিলেশান। আমাকে খাঁর খাওয়াচ্ছে। বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি কি বোকাচোদার মত এগুলো শুনে যাবো না সহ্য করবো। তুলি এরকম ক্যালানে হলে তো আমাকে নতুন করে ভাবতে হবে।
তুলির মা রনির জন্যে প্রসাদ বাড়তে বাড়তে বলে উঠলো ‘সেটা তোমাদের কাকা ভাইজির ব্যাপার, আমাকে জড়িয়ো না।‘
শালা কাকা। এই তো তুলি ওকে রনিদা বলে ডাকল। ও কি তুলিকে ভাইজির নজরে দেখে? পুরো ফ্যামিলিটাই স্ক্রু ঢিলা মালে ভর্তি। তুলির সাথে এসব ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলতে হবে।
রনি বেশিক্ষন ওখানে ছিলোনা , ভাও দেখিয়ে বলে গেলো কোন হোটেলে নাকি কোন সিনামার গল্প নিয়ে আলোচনা করতে যাবে। শালা কোন মাগি লাগাতে যাবে তা না বলে...।
আমিও বেরিয়ে এলাম তুলি আমাকে খানিকটা এগিয়ে দিতে এলো।
তুলির মুখটা খুব খুশি খুশি লাগছে, রনির প্রভাবে নাকি, আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে ভাবতে ভাবতে, গম্ভির ভাবে হাঁটছি আর ভাবছি এসব কিভাবে সামলাবো।
তুলির খিমচিতে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি চোখে মুখে খুশি উপচে পরছে, আমার আরো মাথা গরম হয়ে গেলো, চিৎকার করে নাহলেও দাঁতে দাঁত চেপে বললাম ‘কি ব্যাপার টা কি? সব সময় এরকম করো কেন? মানুষের মনমেজাজ কি সবসময় এক থাকে?’
তুলি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, যেন আমাকে প্রথম দেখছে। চোখ মুখ থেকে উচ্ছাস উধাও।
আমার হাত ছেড়ে দিলো। আমিও একটু প্রমাদ গুনলাম। একটু বেশী হয়ে গেলো কি?
আমি হার না মেনে তুলিকে বললাম ‘যাও বাড়ি ঢুকে যাও, আমি আমার মত চলে যাবো।‘
তুলি আমার হাত ছেড়ে দিলো। আর বললো ‘আমি কোথায় যাবো তোমাকে বলে দিতে হবেনা। তোমার মাকে বলে দিয়ো আমি অন্যদিন আসবো।‘ বলে পিছন ফিরে ঘুরে হনহন করে হাঁটা দিলো।
‘মানে?’ আমি খপ করে পিছন থেকে গিয়ে ওর হাত টেনে ধরলাম।
‘লাগেনা আমার?’ চিৎকার করে বলল তুলি। বুঝতে পারলাম শোধ নিচ্ছে।
‘তুমি কি মার সাথে কথা বলেছো?’
‘হ্যাঁ, কি করবো তুমি আসতে এতো দেরি করছিলে, আমি তোমার মা ফোন তুলেছে বলে চুপ করে কেটে দিতে যাবো, তখন তোমার মা বলে উঠলো অভি তোদের বাড়িতে গেছে। আমি কি করবো তাই কথা বললাম। আমাকে তো আসতে বলেছিলো। কিন্তু এখন আমি আর যাবোনা। তুমি বলে দিও।’
‘কেন?’
‘ভালো লাগছে না তাই।‘
‘আর মা তোমার জন্যে অপেক্ষা করে থাকবে? সেই বেলা?’
একটু চুপ করে থেকে বললো ‘আমি ফোন করে বলে দেবো কিছু একটা। তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা।‘
আমারও মাথাটা গরম হয়ে গেলো ‘মন খারাপ তাই না, রনি চলে গেলো বলে?’
তুলি আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো, বুঝতে চেষ্টা করছে যে আমি কি বোললাম।
আমিও ঘুরে গিয়ে হন হন করে হাঁটা দিলাম।
মাথা চরচর করছে। এরকম অবুঝ হলে আমার পক্ষে সম্পর্ক রাখা সত্যি কঠিন। এই সেদিন মাসিমা দেখলো, কত আদর দিলো ওকে, আর রাতের বেলা ধেঁই ধেঁই করে নাচতে শুরু করলো। আজ মা ওর সাথে কথা বললো, আর আমার সামনেই আরেকটা ছেলের গায়ে ঢলাঢলি শুরু করলো। তুলি কি কিছুই বোঝেনা? চোদাচুদিটা তো ভালোই করলো। বোঝেনা কি করে হয়? ও যে এখন একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছে, সেই সম্পর্কের প্রতি ওর একটা দায়িত্ব আছে সেটা তো ওকে বুঝতে হবে। সব কি বলে বলে দিতে হবে। হতাশ লাগছে আমার।