31-12-2018, 04:14 PM
নিজের ঘরে ঢুকে প্রায় নেচে উঠি আর কি। মন ফুরফুর করছে। বুকের মধ্যে ঢাকের তাল বাজছে। প্রেমের থেকে ভাল নেশা বোধহয় আর নেই। এতক্ষন বুকের মধ্যে একটা যন্ত্রনার পাথর চেপে বসে ছিলো। এখন মনে হচ্ছে চিৎকার করে বলি যে ‘I am in love’ । সত্যি এত তাড়াতাড়ি কোন ঘটনা বিচার করা উচিত না। আমি কি ভুলটাই না করতে বসেছিলাম। মনে মনে ভেবেই নিয়েছিলাম তুলি ফিরে না আসলে, সুদিপা বৌদিকেই টাইম পাস বানিয়ে নেবো। আর যাই হোক, ওর গায়ে তো আর রেন্ডির ছাঁপ নেই।
পাপ্পু ফোনটা তুলিকে দিতেই সেই আধো আধো গলা কিন্তু কি তেজ তার ‘এরকম টোটো করে সারাদিন ঘুরে বেড়াও কেন, কখন থেকে তোমার বাড়িতে ফোন করে চলেছি। সব পয়সা শেষ হয়ে গেলো আমার।‘
‘হ্যাঁ বলে ফেল্*।‘
‘কার সাথে কথা বলছো? আমি তুলি বলছি।‘
‘জানি তো, বল্* না কি বলবি।‘
‘মানে।‘
‘আরে এই তো মার সাথে কথা বললি, মা তো আমার পাশেই আছে’
‘ওঃ আচ্ছা আচ্ছা। বুঝতে পারিনি।‘
মনে মনে বললাম ‘টিউব লাইট।‘
গলার সুর নরম করে তুলি বললো ‘একটু বাইরে আসোনা, প্লিজ, এই ভাবে কথা বলা যায় নাকি?’
‘এখন? কি বলছিস?’ মার দিকে তাকিয়ে দেখলাম এদিকে মন নেই।
‘আসোনা প্লিজ, দুদিন তোমাকে দেখিনি।‘
এরপর কি কেউ রাগ করে থাকতে পারে।
আমি জানি যে মা আপত্তি করবেনা, তবুও মাকে জিঘ্যেস করলাম, ‘মা পাপ্পু ডাকছে বাইরে, আমাদের এক বন্ধু এসেছে, এখুনি চলে যাবে তাই দেখা করার জন্যে।‘
‘যা না। কিন্তু কালকে অফিস আছে খেয়াল রাখিস’ বলে হেসে দিলো।
আমি জানি মা কেন হাসছে। এরকম একবার রাতের বেলা বেরিয়ে আমি আর সুবির দা (মাসিমার ছেলে) এমন আড্ডা দিয়েছি যে কটা বাজে খেয়াল ছিলোনা। টের পেলাম যখন তখন দেখি ভাড়িগুলো বাঁক কাধে জল নিতে এসেছে। সেটা আজও ইতিহাস। আজও আলোচনা হয়, সব জায়গায়। মা আর বাবা তো কান্ড শুনে হেসে লুটোপুটি। তাই এখনো হাসছে মা। আমিও হেসে দিলাম।
এসটিডি বুথের কাছে এসে দেখলাম তুলি আর পাপ্পু দাঁড়িয়ে আছে। তুলির চোখে যেন আলো জলে উঠলো আমাকে দেখে।
‘নাও, তোমার আমানত সামলাও গুরু, আমি চললাম, খিদেই পেট চোঁ চোঁ করছে।‘ বলে পাপ্পু প্রায় হুঁশ করে চলে গেলো।
তুলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন আমাকে কতদিন দেখেনি। আর কতদিন দেখবে না।
আমিও ভালো করে দেখছি ওকে, মন বলছে ‘কি ভাবে না তোমার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম, যদি তুমি জানতে।‘
তুলি কানের পাশ দিয়ে টেনে চুল বেধেছে, হাল্কা রেশমের মত দুএক কুচি চুল, জুলফির মত লাগছে, ফর্সা গালে, কালো রেশমের মত এই চুলের কুচির আলোড়নে, ওকে দারুন লাগছে। একটা ফিটিংস চুড়িদার পরেছে, সেরকম রোগাও লাগছেনা। হয়তো আমার চোখ সয়ে গেছে তাই।
আমার হাত ধরে টেনে বললো ‘চলো না, ঝিলের দিক থেকে ঘুরে আসি।‘
‘না এত রাতে ওদিকে না, চলো তোমাকে বাড়ির সামনে ছেড়ে দিয়ে আসি। কালকে আমার অফিস আছে।‘
‘চলো না, যাবো আর আসবো।‘
‘আর ওদিকে কি আছে? সব তো অন্ধকার।‘
‘চলো না, চলো না’
‘ঠিক আছে দাড়াবো না কিন্তু, ওদিক দিয়েই তোমার বাড়ির দিকে হাঁটা দেবো।‘
আমি আর তুলি হাঁটতে শুরু করলাম, পুজোর হ্যাংওভারে রাস্তা প্রায় জনশুন্য। দু একটা রিক্সা যাচ্ছে এই যা। তুলি যথারিতি আমার হাত জড়িয়ে ধরেছে। ওর একটা মাই আমার পাঁজরে খোঁচা দিচ্ছে, আমাকে অন্যমনস্ক করে তুলছে। কিন্তু আমার জবাব চাই। কেন তুলি এরকম করলো। সবার সামনে এতগুলো ছেলের সাথে এরকম নির্লজ্জ ভাবে নাচানাচি কোরলো।
অক্টোবার মাসের মাঝামাঝি, হাওয়াতে একটা হিমেল ভাব এসেছে। মনে হচ্ছে একটা মোটা গেঞ্জি পরলে ভালো হোতো। তুলি আমার গায়ে লেপ্টে না থাকলেও একদম সেঁটে আছে। ওর শরীরের গরমে বেশ শারিরিক আর মানসিক আরাম হচ্ছে। ফিরে পাওয়া ধন বড় অমুল্য। ওর স্পর্শে আমার তাই মনে হচ্ছে।
সত্যি, একটা সময় আসে মানুষের জীবনে যখন নিজের মত করে কারো সঙ্গ পাওয়ার জন্যে মন আকুলিবিকুলি করে। মনে হয় সেই নিজের লোকের সাথেই নিজের দোষ, গুন, ভালোবাসা, দুঃখ, সুখ, আনন্দ সব ভাগ করে নি। একেই বোধহয় প্রেম বলে, যদিও আমার জীবনে অনেক দেরিতে এসেছে। তবুও সে থাকলে, ফুল ফোঁটে, সে থাকলে চাঁদ ভালো লাগে, কুৎসিতকে সুন্দর লাগে, মানুষ সহনশীল হয়। আর সেই সঙ্গ পেলে, তার থেকে সুখি বোধহয় কেউ হয়না। এই মুহুর্তে আমার নিজেকে মনে হচ্ছে এই পৃথিবীর রাজা, আমার রানিকে নিয়ে নৈশবিহারে বেড়িয়েছি। পথ চলতি অচেনা অজানা অল্প সংখ্যক মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, তাদের চোখে মুখে যেন, বাঃ বেশ সুন্দর জুড়ি তো।
কিন্তু হাবভাব তো দেখাতেই হবে। তাই একটু গম্ভির ভাবেই আছি। তুলি বার বার করে জিঘ্যেস করে চলেছে ‘কি হোল কথা বলছোনা কেন? এত চুপ কেন? রাগ করেছ, এতবার ফোন করেছি বলে?’
ঝিলের কাছে গিয়ে মুখ খুললাম, ‘তুমি এরকম কেন করলে?’
‘কি করলাম?’
‘এই যে ভাসানের দিন...।‘
‘ওঃ আরে দাদা এমন ভাবে ডাক দিলো যে আর আসতে পারলাম না তোমার কাছে’
মানে কি বলতে চাইছে ও , ও সেদিন সুদিপা মাগির সিঁদুর মাখানো খেয়াল করেনি? শুধু ওর দাদা পিছন থেকে ডেকেছে বলে চলে গেলো?
‘মানে দাদা ডাকলো আর তুমি চলে গেলে?’
‘হ্যাঁ।‘
‘আর এইযে এইভাবে সবার সামনে নাচ করলে সেটা কি ভালো দেখালো? তুমি জানোনা যে তোমার নাম এখন আমার সাথে জড়িয়ে গেছে আমার একটা প্রেস্টিজ আছে। তাও মানলাম যদি মেয়েরা মেয়েরা নাচতে, একটা কথা ছিলো, কিন্তু এতোগুলো ছেলের সাথে...এই ভাবে... ‘
আরে আমি কি করবো আমার ইচ্ছে ছিলোনা দাদা এমন করছিলো সিদ্ধি খেয়ে যে কি বলবো, এত খেয়েছে যে ঠিক মত দাড়াতে পারছিলোনা। আমাদের পাড়ায় তো খেয়েছে, তারপর তোমাদের পাড়ায় গিয়ে আবার খেয়েছে।‘
‘কোই, ওকে তো দেখলাম না, তোমাদের পাড়ার ভাসানে?’ গলায় অবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলে বললাম।
‘তুমি দেখেছ আমাকে নাচতে, কই আমি তো খুজছিলাম তোমাকে দেখিনি তো? আমার খুব লজ্জা লাগছিলো জানোতো? বিশেষ করে তুমি আছো সেই ভেবে। দাদাটাও এমন করে...।‘
‘তুমি ক গ্লাস সিদ্ধি খেয়েছিলে যে আমাকে দেখতে পেলেনা, ছ ফুটের হাট্টাকাট্টা জোয়ান ছেলে দাঁড়িয়ে আছি ভিড়ের পিছনে, সবাই দেখলো আর তুমি দেখলে না?’
‘তুমি? তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে?’
‘হ্যাঁ কালো পাঞ্জাবি পরে তোমার মনে পরছেনা? কি খেয়েছিলে সেদিন?’
‘কালো পাঞ্জাবি পরে তো দেখলাম তোমাকে, তারপর তুমি ডাকলে আমাকে, আমি তোমার দিকে আসলাম, দাদার ডাক শুনতে পেলাম, হুরমুর করে আবার চলে গেলাম, তারপর তো নাচ শুরু হয়ে গেল, কোই তুমি কোথায় ছিলে?’
তুলি নিজের মনে মনেই জোরে জোরে আওড়ালো সিকোয়েন্সগুলো। শেষটা আমাকে বেশ জোরেই জিঘ্যেস করলো।
‘তুমি এমন নাচছিলে যে আমাকে খেয়াল করোনি, আমি তোমাদের নাচের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম আর তোমাকে দেখে যাচ্ছিলাম, যে তুমি কেমন নাচো?’
তুলি এবার বেশ লজ্জা পেয়ে গেল। ‘তাই! আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম যে তুমি কি ভাববে, তাই ঠিক করে নাচতেও পারছিলাম না, কিন্তু সেই তুমি আমাকে দেখলে আর আমি তোমাকে দেখতে পেলাম না।‘
‘তা ভাবলেই যখন তো নাচলে কেন? যে তোমাকে জোর করলো তাকে তো দেখতেই পেলাম না?’
‘সেকি? দাদা তো আমার সাথেই নাচছিল, তুমি কি খেয়েছিলে যে দাদাকে দেখতে পেলে না?’
‘কোথায় ছিলো তোমার দাদা?’
“কেন যে অসুর সেজেছিলো?’
যাঃ বোকাচোদা, অসুর তো মুখে রংচং মেখে এমন ছিলো যে চিনবো কি করে, এহেঃ এতো সেমসাইড হয়ে গেলো।
তুলি কিছু চিন্তা করছে বুঝলাম, মুখটা বেশ চিন্তিত লাগছে ‘তুমি...।‘ আবার চিৎকার করে উঠলো ‘এ বাবা! এ বাবা! তাই বলি কে আমাকে এরকম ঝাড়ি মারছে, ভাবছিলাম ভাসান হলে তোমাকে গিয়ে ডেকে আনবো, তুমি সিঁদুর মেখে দাঁড়িয়ে ছিলে তাই না?’
আমি রাস্তাটা দেখে নিলাম, কেউ কোথাও নেই এক ঝটকায় তুলিকে কোলে তুলে নিলাম কোমর পেঁচিয়ে, গালে একটা চুমু খেয়ে বললাম ‘ভালোই নাচিস তো পুচকি’ তুলি লজ্জায় আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
এরপর ওকে বাড়ি পৌছে দিতে দিতে জানতে পারলাম, ও এসেছিলো, ভাসানের পরে আমাদের পাড়ায়, আমাকে জানাতে যে ও মামার বাড়ি যাবে বিজয়া করতে, আমি বাড়ি চলে গেছিলাম। তাই পাপ্পুকে বলে গেছিলো, আর আমার বাড়ির ফোন নম্বর নিয়ে গেছিলো।
পরশুদিন লক্ষ্মীপুজো, তাই আমাকে যেতে বলছে ওদের বাড়ি। ওর মা চায় যে আমি যেন আসি। কি আর করা শাশুড়ির ইচ্ছা, পুর্ন তো করতেই হবে।
পাপ্পু ফোনটা তুলিকে দিতেই সেই আধো আধো গলা কিন্তু কি তেজ তার ‘এরকম টোটো করে সারাদিন ঘুরে বেড়াও কেন, কখন থেকে তোমার বাড়িতে ফোন করে চলেছি। সব পয়সা শেষ হয়ে গেলো আমার।‘
‘হ্যাঁ বলে ফেল্*।‘
‘কার সাথে কথা বলছো? আমি তুলি বলছি।‘
‘জানি তো, বল্* না কি বলবি।‘
‘মানে।‘
‘আরে এই তো মার সাথে কথা বললি, মা তো আমার পাশেই আছে’
‘ওঃ আচ্ছা আচ্ছা। বুঝতে পারিনি।‘
মনে মনে বললাম ‘টিউব লাইট।‘
গলার সুর নরম করে তুলি বললো ‘একটু বাইরে আসোনা, প্লিজ, এই ভাবে কথা বলা যায় নাকি?’
‘এখন? কি বলছিস?’ মার দিকে তাকিয়ে দেখলাম এদিকে মন নেই।
‘আসোনা প্লিজ, দুদিন তোমাকে দেখিনি।‘
এরপর কি কেউ রাগ করে থাকতে পারে।
আমি জানি যে মা আপত্তি করবেনা, তবুও মাকে জিঘ্যেস করলাম, ‘মা পাপ্পু ডাকছে বাইরে, আমাদের এক বন্ধু এসেছে, এখুনি চলে যাবে তাই দেখা করার জন্যে।‘
‘যা না। কিন্তু কালকে অফিস আছে খেয়াল রাখিস’ বলে হেসে দিলো।
আমি জানি মা কেন হাসছে। এরকম একবার রাতের বেলা বেরিয়ে আমি আর সুবির দা (মাসিমার ছেলে) এমন আড্ডা দিয়েছি যে কটা বাজে খেয়াল ছিলোনা। টের পেলাম যখন তখন দেখি ভাড়িগুলো বাঁক কাধে জল নিতে এসেছে। সেটা আজও ইতিহাস। আজও আলোচনা হয়, সব জায়গায়। মা আর বাবা তো কান্ড শুনে হেসে লুটোপুটি। তাই এখনো হাসছে মা। আমিও হেসে দিলাম।
এসটিডি বুথের কাছে এসে দেখলাম তুলি আর পাপ্পু দাঁড়িয়ে আছে। তুলির চোখে যেন আলো জলে উঠলো আমাকে দেখে।
‘নাও, তোমার আমানত সামলাও গুরু, আমি চললাম, খিদেই পেট চোঁ চোঁ করছে।‘ বলে পাপ্পু প্রায় হুঁশ করে চলে গেলো।
তুলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন আমাকে কতদিন দেখেনি। আর কতদিন দেখবে না।
আমিও ভালো করে দেখছি ওকে, মন বলছে ‘কি ভাবে না তোমার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম, যদি তুমি জানতে।‘
তুলি কানের পাশ দিয়ে টেনে চুল বেধেছে, হাল্কা রেশমের মত দুএক কুচি চুল, জুলফির মত লাগছে, ফর্সা গালে, কালো রেশমের মত এই চুলের কুচির আলোড়নে, ওকে দারুন লাগছে। একটা ফিটিংস চুড়িদার পরেছে, সেরকম রোগাও লাগছেনা। হয়তো আমার চোখ সয়ে গেছে তাই।
আমার হাত ধরে টেনে বললো ‘চলো না, ঝিলের দিক থেকে ঘুরে আসি।‘
‘না এত রাতে ওদিকে না, চলো তোমাকে বাড়ির সামনে ছেড়ে দিয়ে আসি। কালকে আমার অফিস আছে।‘
‘চলো না, যাবো আর আসবো।‘
‘আর ওদিকে কি আছে? সব তো অন্ধকার।‘
‘চলো না, চলো না’
‘ঠিক আছে দাড়াবো না কিন্তু, ওদিক দিয়েই তোমার বাড়ির দিকে হাঁটা দেবো।‘
আমি আর তুলি হাঁটতে শুরু করলাম, পুজোর হ্যাংওভারে রাস্তা প্রায় জনশুন্য। দু একটা রিক্সা যাচ্ছে এই যা। তুলি যথারিতি আমার হাত জড়িয়ে ধরেছে। ওর একটা মাই আমার পাঁজরে খোঁচা দিচ্ছে, আমাকে অন্যমনস্ক করে তুলছে। কিন্তু আমার জবাব চাই। কেন তুলি এরকম করলো। সবার সামনে এতগুলো ছেলের সাথে এরকম নির্লজ্জ ভাবে নাচানাচি কোরলো।
অক্টোবার মাসের মাঝামাঝি, হাওয়াতে একটা হিমেল ভাব এসেছে। মনে হচ্ছে একটা মোটা গেঞ্জি পরলে ভালো হোতো। তুলি আমার গায়ে লেপ্টে না থাকলেও একদম সেঁটে আছে। ওর শরীরের গরমে বেশ শারিরিক আর মানসিক আরাম হচ্ছে। ফিরে পাওয়া ধন বড় অমুল্য। ওর স্পর্শে আমার তাই মনে হচ্ছে।
সত্যি, একটা সময় আসে মানুষের জীবনে যখন নিজের মত করে কারো সঙ্গ পাওয়ার জন্যে মন আকুলিবিকুলি করে। মনে হয় সেই নিজের লোকের সাথেই নিজের দোষ, গুন, ভালোবাসা, দুঃখ, সুখ, আনন্দ সব ভাগ করে নি। একেই বোধহয় প্রেম বলে, যদিও আমার জীবনে অনেক দেরিতে এসেছে। তবুও সে থাকলে, ফুল ফোঁটে, সে থাকলে চাঁদ ভালো লাগে, কুৎসিতকে সুন্দর লাগে, মানুষ সহনশীল হয়। আর সেই সঙ্গ পেলে, তার থেকে সুখি বোধহয় কেউ হয়না। এই মুহুর্তে আমার নিজেকে মনে হচ্ছে এই পৃথিবীর রাজা, আমার রানিকে নিয়ে নৈশবিহারে বেড়িয়েছি। পথ চলতি অচেনা অজানা অল্প সংখ্যক মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, তাদের চোখে মুখে যেন, বাঃ বেশ সুন্দর জুড়ি তো।
কিন্তু হাবভাব তো দেখাতেই হবে। তাই একটু গম্ভির ভাবেই আছি। তুলি বার বার করে জিঘ্যেস করে চলেছে ‘কি হোল কথা বলছোনা কেন? এত চুপ কেন? রাগ করেছ, এতবার ফোন করেছি বলে?’
ঝিলের কাছে গিয়ে মুখ খুললাম, ‘তুমি এরকম কেন করলে?’
‘কি করলাম?’
‘এই যে ভাসানের দিন...।‘
‘ওঃ আরে দাদা এমন ভাবে ডাক দিলো যে আর আসতে পারলাম না তোমার কাছে’
মানে কি বলতে চাইছে ও , ও সেদিন সুদিপা মাগির সিঁদুর মাখানো খেয়াল করেনি? শুধু ওর দাদা পিছন থেকে ডেকেছে বলে চলে গেলো?
‘মানে দাদা ডাকলো আর তুমি চলে গেলে?’
‘হ্যাঁ।‘
‘আর এইযে এইভাবে সবার সামনে নাচ করলে সেটা কি ভালো দেখালো? তুমি জানোনা যে তোমার নাম এখন আমার সাথে জড়িয়ে গেছে আমার একটা প্রেস্টিজ আছে। তাও মানলাম যদি মেয়েরা মেয়েরা নাচতে, একটা কথা ছিলো, কিন্তু এতোগুলো ছেলের সাথে...এই ভাবে... ‘
আরে আমি কি করবো আমার ইচ্ছে ছিলোনা দাদা এমন করছিলো সিদ্ধি খেয়ে যে কি বলবো, এত খেয়েছে যে ঠিক মত দাড়াতে পারছিলোনা। আমাদের পাড়ায় তো খেয়েছে, তারপর তোমাদের পাড়ায় গিয়ে আবার খেয়েছে।‘
‘কোই, ওকে তো দেখলাম না, তোমাদের পাড়ার ভাসানে?’ গলায় অবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলে বললাম।
‘তুমি দেখেছ আমাকে নাচতে, কই আমি তো খুজছিলাম তোমাকে দেখিনি তো? আমার খুব লজ্জা লাগছিলো জানোতো? বিশেষ করে তুমি আছো সেই ভেবে। দাদাটাও এমন করে...।‘
‘তুমি ক গ্লাস সিদ্ধি খেয়েছিলে যে আমাকে দেখতে পেলেনা, ছ ফুটের হাট্টাকাট্টা জোয়ান ছেলে দাঁড়িয়ে আছি ভিড়ের পিছনে, সবাই দেখলো আর তুমি দেখলে না?’
‘তুমি? তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে?’
‘হ্যাঁ কালো পাঞ্জাবি পরে তোমার মনে পরছেনা? কি খেয়েছিলে সেদিন?’
‘কালো পাঞ্জাবি পরে তো দেখলাম তোমাকে, তারপর তুমি ডাকলে আমাকে, আমি তোমার দিকে আসলাম, দাদার ডাক শুনতে পেলাম, হুরমুর করে আবার চলে গেলাম, তারপর তো নাচ শুরু হয়ে গেল, কোই তুমি কোথায় ছিলে?’
তুলি নিজের মনে মনেই জোরে জোরে আওড়ালো সিকোয়েন্সগুলো। শেষটা আমাকে বেশ জোরেই জিঘ্যেস করলো।
‘তুমি এমন নাচছিলে যে আমাকে খেয়াল করোনি, আমি তোমাদের নাচের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম আর তোমাকে দেখে যাচ্ছিলাম, যে তুমি কেমন নাচো?’
তুলি এবার বেশ লজ্জা পেয়ে গেল। ‘তাই! আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম যে তুমি কি ভাববে, তাই ঠিক করে নাচতেও পারছিলাম না, কিন্তু সেই তুমি আমাকে দেখলে আর আমি তোমাকে দেখতে পেলাম না।‘
‘তা ভাবলেই যখন তো নাচলে কেন? যে তোমাকে জোর করলো তাকে তো দেখতেই পেলাম না?’
‘সেকি? দাদা তো আমার সাথেই নাচছিল, তুমি কি খেয়েছিলে যে দাদাকে দেখতে পেলে না?’
‘কোথায় ছিলো তোমার দাদা?’
“কেন যে অসুর সেজেছিলো?’
যাঃ বোকাচোদা, অসুর তো মুখে রংচং মেখে এমন ছিলো যে চিনবো কি করে, এহেঃ এতো সেমসাইড হয়ে গেলো।
তুলি কিছু চিন্তা করছে বুঝলাম, মুখটা বেশ চিন্তিত লাগছে ‘তুমি...।‘ আবার চিৎকার করে উঠলো ‘এ বাবা! এ বাবা! তাই বলি কে আমাকে এরকম ঝাড়ি মারছে, ভাবছিলাম ভাসান হলে তোমাকে গিয়ে ডেকে আনবো, তুমি সিঁদুর মেখে দাঁড়িয়ে ছিলে তাই না?’
আমি রাস্তাটা দেখে নিলাম, কেউ কোথাও নেই এক ঝটকায় তুলিকে কোলে তুলে নিলাম কোমর পেঁচিয়ে, গালে একটা চুমু খেয়ে বললাম ‘ভালোই নাচিস তো পুচকি’ তুলি লজ্জায় আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
এরপর ওকে বাড়ি পৌছে দিতে দিতে জানতে পারলাম, ও এসেছিলো, ভাসানের পরে আমাদের পাড়ায়, আমাকে জানাতে যে ও মামার বাড়ি যাবে বিজয়া করতে, আমি বাড়ি চলে গেছিলাম। তাই পাপ্পুকে বলে গেছিলো, আর আমার বাড়ির ফোন নম্বর নিয়ে গেছিলো।
পরশুদিন লক্ষ্মীপুজো, তাই আমাকে যেতে বলছে ওদের বাড়ি। ওর মা চায় যে আমি যেন আসি। কি আর করা শাশুড়ির ইচ্ছা, পুর্ন তো করতেই হবে।