31-12-2018, 04:13 PM
নবমির ধকলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো। মণ্ডপে পৌছুলাম প্রায় সারে এগারোটা, মার হাতে বানানো লুচি আর তরকারি খেয়ে।
জানি হই হই পরে যাবে আমি না থাকলে। তবুও একটু হেলতে দুলতেই মন্ডপে পৌছুলাম। সব কি আমার দায়িত্ব নাকি। অনেকে তো ধুতি পাঞ্জাবি পরে বোউ নিয়ে এসে কেতা মারে, বৌকে দেখায় যেন উনি না থাকলে পুজোই হোতোনা, আর ঘন্টায় ঘন্টায় ফোঁকটাই চা খাওয়া। সারা বছর দেখা নেই আর পুজর এই কদিন কাপ্টেনি করতে আসে। যদিও আমাদের জানে সবাই। বেশী গাঁঢপেয়াজি করলে সাইডে ডেকে নিয়ে গিয়ে এমন খিস্তি করে দেব বয়স নির্বিশেষে যে আর কোনদিন পেয়াজি করবেনা কোথাও।
সেরকমই এক সিনিয়র দাদা, হাবলু দা, আমি ঢুকতে ঢুকতেই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কিরে কিছু ব্যাবস্থা হয়নি আর তুই এখন ঢুকছিস। চোখ ফেলে দেখে নিলাম, হ্যাঁ ঠিক ওর বৌ চেয়ার গরম করছে আর হাতে মাটির ভাঁড়।
আমার চোখমুখ দেখেই সেই দাদা একটু দমে গেল। জানে, আমি যুক্তি দিতে দিতেই হাতা গোটাতে থাকি।
কোমড়ে হাত দিয়ে জিঘ্যেস করলাম ‘কি কি কাজ আছে বলোতো?’ আমি তো জানি হেক্কা নেওয়ার জন্যে ও বলে ফেলেছে। কিন্তু কিছুই জানেনা। গতবছর বিয়ে হয়েছে তাই বৌকে একটু কেতা দেখাতে গেছে আর কি।
দেখলাম আমার দাঁড়িয়ে পরা দেখে, প্যান্ডেল থেকে আমাদের আর জুনিয়র ব্যাচের ছেলেরা এগিয়ে আসছে, কোন ঝামেলার আশঙ্কায়, আর উল্টোদিক দিয়ে আমাদের সিনিয়র ব্যাচের ছেলেরা। বুঝে গেছে যে মালটা কিছু করে বসেছে আমার সাথে। নাহলে আমি এরকম চোখমুখ করে দাড়াই না।
‘কি হোলো কি কি কাজ আছে বললে না।‘ গলার স্বরে যারা কাঁইকিচির করছিলো সব থমকে গেলো।
‘না মানে ...’
‘মানে কি?’ হুঙ্কার দিয়ে ঊঠলাম আমি। ঘুম থেকে উঠে আসার দরুন গলাটা ভার হয়ে আছে, আসেপাশে গম গম করে উঠলো।
ওর বন্ধুরা তাড়াতাড়ি ওকে সরিয়ে নিয়ে গেলো। তাই বারাবারি হোলো না। আমারও মাথা গরম হলেও ইচ্ছে ছিলোনা যে অযাচিত কিছু হোক। এসে প্যান্ডেলে বসলাম।
এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি তুলি বসে আছে। একটা সুন্দর শাড়ী পরেছে, হাতে রঙ্গিন কাঁচের চুড়ি। মুহুর্তের মধ্যে রাগ জল হয়ে গেলো। খোলা চুলে ওকে দেখতে দারুন লাগছে। শুধু মনে হচ্ছে কপালে, সিঁথিতে একটু লাল রঙ হলে ভালো হোতো। ইস আমার মা যদি দেখত তাহলে এখান থেকেই ওকে নিয়ে চলে যেত।
চোখে অবিস্বাস ফুঁটিয়ে তুলে তুলি আমাকে জিঘ্যেস করলো ‘তোমাকে সবাই ভয় পায়?’
শুনে পাপ্পু আর বাকি সবাই হো হো করে কি হাসি। এমন কি ওর এই অবোধ প্রশ্নে পারার অনেক মহিলা, যারা প্যাণ্ডেলের ভিতরে ছিল তারাও হেসে উঠলো।
তুলি সবার হাসি দেখে অবাক হয়ে গেলো, যেন ওই কথা বলা চোখ দিয়ে বলতে চাইছে হাসির কি আছে।
আমার গালে খোঁচা খোঁচা দারি, একদিনের না কামানো, সবুজ সবুজ হয়ে উঠেছে, ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো পেডেস্টেল ফ্যানের হাওয়াই উরে উরে আরো উস্কোখুস্কো লাগছে, সাথে একটা ফেড জিন্স আর কালো রঙের গোল গলা গেঞ্জি পরেছি। আর তুলিকে মনে হচ্ছে, সদ্য ফোঁটা এক ফুল। ডাগর ডাগর চোখ, সাথে লাল ব্লাউজ আর সারিতে ও যেন আলো বাড়িয়ে দিয়েছে প্যান্ডেলের। মনে মনে ভাবছি শালা বাদরের গলায় মুক্তোর মালা একেই বলে।
এবার এক কেলো হোলো। পাপ্পু হাঁটে হাড়ি ভেঙ্গে দিলো, ‘গুরু এরকম জুটি আমি আর দেখিনি।‘ বলে আমাকে আর তুলিকে পাশাপাশি দাড় করিয়ে দিলো। যাহ্* শালা। এত সিনিয়র লোক জন আসছে যাচ্ছে তার মাঝে।
আর পাড়ার এক মাসিমা এসে তুলির গাল টিপে আদর করে দিয়ে বোললো ‘তুই তো খুব চাঁদপনা মেয়েরে’। তারপর পাপ্পুর পিঠে একটা কিল মেরে বললো ‘এতদিনে একটা কাজের কাজ করেছিস, এই বাউন্ডুলেটার জন্যে ভালো শিকল জোগার করেছিস।‘ মণ্ডপে ঊপস্থিত পাড়ার সব মহিলাই যেন আহ্লাদে আটখানা, পারলে তখুনি আমাদের বিয়ে দিয়ে দেয়, কেউ পারলে বাড়িতে খবর দেয়, কেউ মাকে ডাকতে যায়। বাংলা সিনেমার সিন চলছে যেন। যত্তসব। আমি আর কি করবো ক্যালানের মত হাসি ছাড়া। কিন্তু মনের মধ্যে খুসির ফল্গু নদি বয়ে চলেছে। বুক ভরে গেছে তুলির প্রশংসায়। গর্বও হচ্ছে এই সরল সুন্দর মেয়েটাকে জীবনে পেয়ে।
তুলি নিচু হয়ে মাসিমার পায়ে হাত দিয়ে নমস্কার করলো। ‘আরে রে রে কি করিস মা। বিজয়া হোক তারপর করতি। এখন তোকে কিভাবে মিষ্টি খাওয়াই বলতো। বাড়িতে তো কেউ নেই যে এনে দেবে রে মা।‘
এসব ব্যাপারে পাপ্পু সিদ্ধহস্ত। মাসিমার থেকে ২০০ টাকা নিয়ে চললো মিষ্টি আনতে। লজ্জায় আমি মাটিতে মিশে যাই আর কি।
মাসিমা এবার বসেই পরলো আমাদের মাঝখানে। মাসিমার ছেলে আমাদের সিনিয়র বহুদিন বাইরে থেকেছে, পাঞ্জাবি মেয়ে বিয়ে করেছে। আমরাই মাসিমার খেয়াল রাখতাম। কোন দরকার হলে আমাদের ডাকতো মাসিমা।
তুলির হাতটা ধরে বললেন ‘এরকম চেহারা কেন? মা খেতে দেয়না?’
এরপর প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে তুলির খাওয়ারের ফিরিস্তি শুনলাম মানে কি খায় আর কি না খায়। তাতে না খাওয়ার সংখ্যা প্রচুর। এরপর দম নেওয়ার জন্যে থামলো তুলি আর আমি দেখলাম মাসিমা চোখ গোল গোল করে তুলিকে দেখছে। আবার ওর গাল টিপে বললো ‘ এত বাছাবাছি করে খাসনা, সব খাবি, তোর গায়ে মাংস লাগলে তোকে সুচিত্রা সেনের থেকে ভালো লাগবে, তোর যা হাইট, তোকে পাঞ্জাবি মেয়েদের মত লাগবে। আমার বৌমা থাকলে তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতাম, কি সুন্দর লাগতো তোরা দুটোতে পাশাপাশি বসে থাকলে।‘
সত্যি, খুব সুন্দরি রিতু বৌদি। পাঞ্জাবি হলে কি হবে, দারুন বাংলা বলে। সেরকম হাসিখুশি সবসময়। আমার সাথে খুব ভালো রিলেশান, শুধু আমার সাথে না আমাদের সবার সাথে। কেউ উনাকে কু নজরে দেখেনা, উনার চারিত্রিক গুন এমনই। এমন অনেক হয়েছে, দাদার সাথে আমরা মাল খেয়েছি, রিতু বৌদিও দু পেগ খেয়েছে আমাদের সাথে। আমার পিছনে খুব লাগে, বলে উনার কোন বোন থাকলে ঠিক আমার সাথে লটকে দিত। পাপ্পুতো চোদাচুদি নিয়েও টিপস নেয়। কিন্তু পাপ্পুও বউদিকে খুব সন্মান করে। আসলে উনার চার্মটাই এরকম।
এখন নেই ওরা, বিদেশে ঘুরতে গেছে। সেই কালিপুজোর সময় আসবে।
মিষ্টি এসে গেছে, বাইরে একটা হই হই হচ্ছে শুনে তাকিয়ে দেখি, পাপ্পু বাইরে যারা বসে আছে তাদেরও মিষ্টি বিলি করছে। শালা, ফোকট কা মাল দড়িয়া মে ডাল। আরে শালা এতো যার সাথে এই বাওয়াল হোলো তাকে খাইয়ে দিচ্ছে। সে আবার পাপ্পুর সাথে এদিকেই আসছে। উফঃ পাপ্পু পারেও।
সে এসে আমার সাথে হাত মিলিয়ে বললো ‘কংগ্র্যাচুলেশান, ভালো খবর শুনলাম?’
মনে মনে ভাবলাম একটু আগে যে ঠাঁপ খেলে ভুলে গেলে, মুখে শধু হাসলাম।
বুঝলাম লুন্ঠিত প্রেস্টিজ উদ্ধার করতে এসেছে তাই বললো ‘খুব ঝগড়ুটে হয়েছিস তো তুই, দাড়া তোর বাবার সাথে দেখা হোক বলছি যে তোর কত মাথা গরম।‘ যেন আমার বাবার বয়েসি, আমার বাবা ওর বন্ধু। বলেই দেখনা কি হয়।
আমি আর কি করি, হাত বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে ‘ সরি কিছু মনে কোরো না।‘
‘আরে না না, তুই তো ছোট ভাইয়ের মত, এরকম কত ঝগড়া হয়। তোরা তখন ছোট তোদের মনে নেই একবার তো সে কি গণ্ডগোল, একদল বলছে ভাসান হবে বাবুঘাট একদল বলছে পাড়ার ঝিলেই দিতে হবে। তারপর সেকি গণ্ডগোল। আমরা কয়েকজন মিলে সামলালাম।‘
মুখ দিয়ে খিস্তি বেরিয়ে যেত অন্য সময়, কিন্তু পাপ্পুটার জন্যে...। শালা ভাট দিচ্ছে এবার দাঁত কেলিয়ে শুনতে হবে, এ মাল দুনিয়ার সব থেকে কেলানে মালেদের মধ্যে পরে। আবার ঝামেলা সামলানোর গল্প দিচ্ছে, নেহাত ওর গ্রুপের কেউ নেই তাই নির্দিধায় ঢপিয়ে যাচ্ছে। আমার সব মনে আছে কি হয়েছিল আর কেন হয়েছিল।
এরপর দাদা দাদা হাবভাব করে আমাকে জিঘ্যেস করলো ‘বৌদির সাথে আলাপ হয়েছে? তোকে তো বিয়েতে দেখেছি বলে মনে পরে না।‘
দেখবে কি করে সেদিন তো মালের ফোঁয়ারা ছুটছিলো আমার ঘরে, গেলাম কোথায় তোমার বিয়েতে। মুখে লজ্জার ভাব ফুটিয়ে তুলে বললাম ‘না তো যেতে পারিনি সেদিন, অফিস থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেছিলো’
‘চল তাহলে এখন পরিচয় করবি’
কি আর করা গেলাম এক বছরের পুরানো বউয়ের সাথে আলাপ করতে। আসলে একটু আগে বউয়ের সামনেই সব হোলো তো তাই লুন্ঠিত সন্মান পুনঃরোদ্ধারের চেষ্টা করছে সেটা আমি ভালোই বুঝতে পারছি। যাই হোক আমার তো কোন আপত্তি নেই।
‘এই যে, আমাদের পাড়ার উঠতি হিরো, অভি।’
বৌটা বেশ ডবকা, আমাকে দেখে হুরমুর করে উঠে দারালো আর তাতে বসার চেয়ারটা পিছনে উলটে পরলো।
আমি নমস্কারের ভঙ্গি করলাম হাসি মুখে, ভিতরে ভিতরে ঝাঁট জ্বলে যাচ্ছে। ‘ভালো আছেন পুজো কেমন কাঁটলো।‘
মেয়েদের যা স্বভাব হয় ঠিক তাই। গরগর করে পঞ্চমির রাত থেকে ধারাবিবরণি দিতে শুরু করে দিলো, আর আমিও হাসি মুখে শুনে গেলাম। কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম, এমাল খাপের মাল। খাপে পরলে ঠিক দিয়ে দেবে, যে ভাবে দেখছে আমার দিকে। এসব ব্যাপারে আমার থেকে ভাল কেউ বলতে পারবেনা। নাঃ পাপ্পুর সামনে এর কথা আলোচনায় কোরবো না, নাহলে এই ক্যালানেটার সংসার ভাঙ্গবে।
ভিতর থেকে ডাক চলে এল। আমি ‘আসছি’ বলে চলে যাচ্ছি তখন সুদিপা বৌদি মানে যার সাথে পরিচয় হোলো বলে উঠলো ‘একদিন এসো’ ঘুরে হেসে ভদ্রতা দেখাতে গিয়ে দেখি এই সেই ক্ষুদার্ত নজর।
একটু এগোতেই আবার, ‘আজকে ভাসানে থাকবে তো’। আবার উত্তর না দিয়ে ঘুরে হাসলাম। ওর বর বলছে ‘অভি ছারা ভাসানই হবেনা।‘
ভিতরে গিয়ে দেখি মাসিমা তুলির শরীর সাস্থ্য নিয়ে এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। আমি একটা চেয়ার টেনে বসলাম। পাপ্পু আমার কানে কানে বললো ‘এত চিন্তা করার কিছু নেই, বিয়ের পরে ইউরিয়া সাঁর পরলে ঠিক হয়ে যাবে।‘
শালা, বোকাচোদা, এত বাঁজখেয়ি গলা যে আস্তে বলতেও আশেপাশের কয়েকজন শুনে ফেললো, যদিও সবই আমার বন্ধু। তবুও।
মাসিমা শুনতে পেলো কিনা জানিনা, কিন্তু বলে উঠলেন ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ বিয়ের পরে মেয়েদের শরীর সাস্থ্য ভালো হয়ে যায়, সেই আশায় বসে থাক্*।‘
পাপ্পু দেখলাম টুক করে উঠে চলে গেলো।
ঠাকুর, গাড়িতে লোড হয়ে গেছে। আজকে আর তামাক সেবন বা সিদ্ধি না। মাথা ঠিক রাখতে হবে। অনেক মেয়ে, মহিলা যায় আমাদের ভাসানে, প্রসেশান করে। ঠিক আঁটটার সময় বেরোই আমরা। হাতে দের ঘণ্টা। তুলিদের পাড়ার ভাসান ও আজকে ওরাও একই জায়গায় ভাসান দেবে, তুলি আর তুলির মাও ওদের ভাসানে যাবে।
আমাদের ঠেক বসে পরলো, গড়ে সাত আঁট পেগ সবাই।
আমাদের প্রসেশান শুরু হয়ে গেছে। একটা এম্বাসেডর থেকে সবাইকে আন্তরিক প্রিতি ও শুভেচ্ছা দিচ্ছে, উৎসবের দিনে শান্তি সৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন করা হচ্ছে। আমাদের ভাসান কোথায় কোথায় ঘুরবে তা বলে দেওয়া হচ্ছে। মনিমালার ড্রামের আওয়াজ, ব্যাঞ্জোর পোঁ পাঁ ঢাকের দুমদাম মিল্যে বেশ ভালোই ধুমকি ধরে গেলো। কিন্তু ঐ যে মাথায় কিছু হয়না। তাই আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে তত্বাবধানে ব্যাস্ত হয়ে পরলাম। এর মাঝেই খেয়াল করছি একটা কেউ আমাকে একদৃষ্টে জুলজুল করে দেখে চলেছে। সকালবেলার সেই সুদিপা বৌদি।
দেখবেনা কেন? আজকে আমি বেরনোর সময় আমার মাও আমার গায়ে থু থু করে দিয়েছে যাতে নজর না লাগে। আমিও মাঞ্জা দিয়েছি, তুলির সাথে ভাসানে দেখা হবে বলে। কালো একটা সিল্কের শেরওয়ানি পরেছি, একটা বিখ্যাত . দর্জির দোকান থেকে বানানো। শুধু ওপরের টা, প্যান্ট কিন্তু সেই চটা জিন্স। তাতেই যা বুঝছি, আর বলে নিজের ঢাঁক বাজাবো না।
জানি হই হই পরে যাবে আমি না থাকলে। তবুও একটু হেলতে দুলতেই মন্ডপে পৌছুলাম। সব কি আমার দায়িত্ব নাকি। অনেকে তো ধুতি পাঞ্জাবি পরে বোউ নিয়ে এসে কেতা মারে, বৌকে দেখায় যেন উনি না থাকলে পুজোই হোতোনা, আর ঘন্টায় ঘন্টায় ফোঁকটাই চা খাওয়া। সারা বছর দেখা নেই আর পুজর এই কদিন কাপ্টেনি করতে আসে। যদিও আমাদের জানে সবাই। বেশী গাঁঢপেয়াজি করলে সাইডে ডেকে নিয়ে গিয়ে এমন খিস্তি করে দেব বয়স নির্বিশেষে যে আর কোনদিন পেয়াজি করবেনা কোথাও।
সেরকমই এক সিনিয়র দাদা, হাবলু দা, আমি ঢুকতে ঢুকতেই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কিরে কিছু ব্যাবস্থা হয়নি আর তুই এখন ঢুকছিস। চোখ ফেলে দেখে নিলাম, হ্যাঁ ঠিক ওর বৌ চেয়ার গরম করছে আর হাতে মাটির ভাঁড়।
আমার চোখমুখ দেখেই সেই দাদা একটু দমে গেল। জানে, আমি যুক্তি দিতে দিতেই হাতা গোটাতে থাকি।
কোমড়ে হাত দিয়ে জিঘ্যেস করলাম ‘কি কি কাজ আছে বলোতো?’ আমি তো জানি হেক্কা নেওয়ার জন্যে ও বলে ফেলেছে। কিন্তু কিছুই জানেনা। গতবছর বিয়ে হয়েছে তাই বৌকে একটু কেতা দেখাতে গেছে আর কি।
দেখলাম আমার দাঁড়িয়ে পরা দেখে, প্যান্ডেল থেকে আমাদের আর জুনিয়র ব্যাচের ছেলেরা এগিয়ে আসছে, কোন ঝামেলার আশঙ্কায়, আর উল্টোদিক দিয়ে আমাদের সিনিয়র ব্যাচের ছেলেরা। বুঝে গেছে যে মালটা কিছু করে বসেছে আমার সাথে। নাহলে আমি এরকম চোখমুখ করে দাড়াই না।
‘কি হোলো কি কি কাজ আছে বললে না।‘ গলার স্বরে যারা কাঁইকিচির করছিলো সব থমকে গেলো।
‘না মানে ...’
‘মানে কি?’ হুঙ্কার দিয়ে ঊঠলাম আমি। ঘুম থেকে উঠে আসার দরুন গলাটা ভার হয়ে আছে, আসেপাশে গম গম করে উঠলো।
ওর বন্ধুরা তাড়াতাড়ি ওকে সরিয়ে নিয়ে গেলো। তাই বারাবারি হোলো না। আমারও মাথা গরম হলেও ইচ্ছে ছিলোনা যে অযাচিত কিছু হোক। এসে প্যান্ডেলে বসলাম।
এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি তুলি বসে আছে। একটা সুন্দর শাড়ী পরেছে, হাতে রঙ্গিন কাঁচের চুড়ি। মুহুর্তের মধ্যে রাগ জল হয়ে গেলো। খোলা চুলে ওকে দেখতে দারুন লাগছে। শুধু মনে হচ্ছে কপালে, সিঁথিতে একটু লাল রঙ হলে ভালো হোতো। ইস আমার মা যদি দেখত তাহলে এখান থেকেই ওকে নিয়ে চলে যেত।
চোখে অবিস্বাস ফুঁটিয়ে তুলে তুলি আমাকে জিঘ্যেস করলো ‘তোমাকে সবাই ভয় পায়?’
শুনে পাপ্পু আর বাকি সবাই হো হো করে কি হাসি। এমন কি ওর এই অবোধ প্রশ্নে পারার অনেক মহিলা, যারা প্যাণ্ডেলের ভিতরে ছিল তারাও হেসে উঠলো।
তুলি সবার হাসি দেখে অবাক হয়ে গেলো, যেন ওই কথা বলা চোখ দিয়ে বলতে চাইছে হাসির কি আছে।
আমার গালে খোঁচা খোঁচা দারি, একদিনের না কামানো, সবুজ সবুজ হয়ে উঠেছে, ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো পেডেস্টেল ফ্যানের হাওয়াই উরে উরে আরো উস্কোখুস্কো লাগছে, সাথে একটা ফেড জিন্স আর কালো রঙের গোল গলা গেঞ্জি পরেছি। আর তুলিকে মনে হচ্ছে, সদ্য ফোঁটা এক ফুল। ডাগর ডাগর চোখ, সাথে লাল ব্লাউজ আর সারিতে ও যেন আলো বাড়িয়ে দিয়েছে প্যান্ডেলের। মনে মনে ভাবছি শালা বাদরের গলায় মুক্তোর মালা একেই বলে।
এবার এক কেলো হোলো। পাপ্পু হাঁটে হাড়ি ভেঙ্গে দিলো, ‘গুরু এরকম জুটি আমি আর দেখিনি।‘ বলে আমাকে আর তুলিকে পাশাপাশি দাড় করিয়ে দিলো। যাহ্* শালা। এত সিনিয়র লোক জন আসছে যাচ্ছে তার মাঝে।
আর পাড়ার এক মাসিমা এসে তুলির গাল টিপে আদর করে দিয়ে বোললো ‘তুই তো খুব চাঁদপনা মেয়েরে’। তারপর পাপ্পুর পিঠে একটা কিল মেরে বললো ‘এতদিনে একটা কাজের কাজ করেছিস, এই বাউন্ডুলেটার জন্যে ভালো শিকল জোগার করেছিস।‘ মণ্ডপে ঊপস্থিত পাড়ার সব মহিলাই যেন আহ্লাদে আটখানা, পারলে তখুনি আমাদের বিয়ে দিয়ে দেয়, কেউ পারলে বাড়িতে খবর দেয়, কেউ মাকে ডাকতে যায়। বাংলা সিনেমার সিন চলছে যেন। যত্তসব। আমি আর কি করবো ক্যালানের মত হাসি ছাড়া। কিন্তু মনের মধ্যে খুসির ফল্গু নদি বয়ে চলেছে। বুক ভরে গেছে তুলির প্রশংসায়। গর্বও হচ্ছে এই সরল সুন্দর মেয়েটাকে জীবনে পেয়ে।
তুলি নিচু হয়ে মাসিমার পায়ে হাত দিয়ে নমস্কার করলো। ‘আরে রে রে কি করিস মা। বিজয়া হোক তারপর করতি। এখন তোকে কিভাবে মিষ্টি খাওয়াই বলতো। বাড়িতে তো কেউ নেই যে এনে দেবে রে মা।‘
এসব ব্যাপারে পাপ্পু সিদ্ধহস্ত। মাসিমার থেকে ২০০ টাকা নিয়ে চললো মিষ্টি আনতে। লজ্জায় আমি মাটিতে মিশে যাই আর কি।
মাসিমা এবার বসেই পরলো আমাদের মাঝখানে। মাসিমার ছেলে আমাদের সিনিয়র বহুদিন বাইরে থেকেছে, পাঞ্জাবি মেয়ে বিয়ে করেছে। আমরাই মাসিমার খেয়াল রাখতাম। কোন দরকার হলে আমাদের ডাকতো মাসিমা।
তুলির হাতটা ধরে বললেন ‘এরকম চেহারা কেন? মা খেতে দেয়না?’
এরপর প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে তুলির খাওয়ারের ফিরিস্তি শুনলাম মানে কি খায় আর কি না খায়। তাতে না খাওয়ার সংখ্যা প্রচুর। এরপর দম নেওয়ার জন্যে থামলো তুলি আর আমি দেখলাম মাসিমা চোখ গোল গোল করে তুলিকে দেখছে। আবার ওর গাল টিপে বললো ‘ এত বাছাবাছি করে খাসনা, সব খাবি, তোর গায়ে মাংস লাগলে তোকে সুচিত্রা সেনের থেকে ভালো লাগবে, তোর যা হাইট, তোকে পাঞ্জাবি মেয়েদের মত লাগবে। আমার বৌমা থাকলে তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতাম, কি সুন্দর লাগতো তোরা দুটোতে পাশাপাশি বসে থাকলে।‘
সত্যি, খুব সুন্দরি রিতু বৌদি। পাঞ্জাবি হলে কি হবে, দারুন বাংলা বলে। সেরকম হাসিখুশি সবসময়। আমার সাথে খুব ভালো রিলেশান, শুধু আমার সাথে না আমাদের সবার সাথে। কেউ উনাকে কু নজরে দেখেনা, উনার চারিত্রিক গুন এমনই। এমন অনেক হয়েছে, দাদার সাথে আমরা মাল খেয়েছি, রিতু বৌদিও দু পেগ খেয়েছে আমাদের সাথে। আমার পিছনে খুব লাগে, বলে উনার কোন বোন থাকলে ঠিক আমার সাথে লটকে দিত। পাপ্পুতো চোদাচুদি নিয়েও টিপস নেয়। কিন্তু পাপ্পুও বউদিকে খুব সন্মান করে। আসলে উনার চার্মটাই এরকম।
এখন নেই ওরা, বিদেশে ঘুরতে গেছে। সেই কালিপুজোর সময় আসবে।
মিষ্টি এসে গেছে, বাইরে একটা হই হই হচ্ছে শুনে তাকিয়ে দেখি, পাপ্পু বাইরে যারা বসে আছে তাদেরও মিষ্টি বিলি করছে। শালা, ফোকট কা মাল দড়িয়া মে ডাল। আরে শালা এতো যার সাথে এই বাওয়াল হোলো তাকে খাইয়ে দিচ্ছে। সে আবার পাপ্পুর সাথে এদিকেই আসছে। উফঃ পাপ্পু পারেও।
সে এসে আমার সাথে হাত মিলিয়ে বললো ‘কংগ্র্যাচুলেশান, ভালো খবর শুনলাম?’
মনে মনে ভাবলাম একটু আগে যে ঠাঁপ খেলে ভুলে গেলে, মুখে শধু হাসলাম।
বুঝলাম লুন্ঠিত প্রেস্টিজ উদ্ধার করতে এসেছে তাই বললো ‘খুব ঝগড়ুটে হয়েছিস তো তুই, দাড়া তোর বাবার সাথে দেখা হোক বলছি যে তোর কত মাথা গরম।‘ যেন আমার বাবার বয়েসি, আমার বাবা ওর বন্ধু। বলেই দেখনা কি হয়।
আমি আর কি করি, হাত বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে ‘ সরি কিছু মনে কোরো না।‘
‘আরে না না, তুই তো ছোট ভাইয়ের মত, এরকম কত ঝগড়া হয়। তোরা তখন ছোট তোদের মনে নেই একবার তো সে কি গণ্ডগোল, একদল বলছে ভাসান হবে বাবুঘাট একদল বলছে পাড়ার ঝিলেই দিতে হবে। তারপর সেকি গণ্ডগোল। আমরা কয়েকজন মিলে সামলালাম।‘
মুখ দিয়ে খিস্তি বেরিয়ে যেত অন্য সময়, কিন্তু পাপ্পুটার জন্যে...। শালা ভাট দিচ্ছে এবার দাঁত কেলিয়ে শুনতে হবে, এ মাল দুনিয়ার সব থেকে কেলানে মালেদের মধ্যে পরে। আবার ঝামেলা সামলানোর গল্প দিচ্ছে, নেহাত ওর গ্রুপের কেউ নেই তাই নির্দিধায় ঢপিয়ে যাচ্ছে। আমার সব মনে আছে কি হয়েছিল আর কেন হয়েছিল।
এরপর দাদা দাদা হাবভাব করে আমাকে জিঘ্যেস করলো ‘বৌদির সাথে আলাপ হয়েছে? তোকে তো বিয়েতে দেখেছি বলে মনে পরে না।‘
দেখবে কি করে সেদিন তো মালের ফোঁয়ারা ছুটছিলো আমার ঘরে, গেলাম কোথায় তোমার বিয়েতে। মুখে লজ্জার ভাব ফুটিয়ে তুলে বললাম ‘না তো যেতে পারিনি সেদিন, অফিস থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেছিলো’
‘চল তাহলে এখন পরিচয় করবি’
কি আর করা গেলাম এক বছরের পুরানো বউয়ের সাথে আলাপ করতে। আসলে একটু আগে বউয়ের সামনেই সব হোলো তো তাই লুন্ঠিত সন্মান পুনঃরোদ্ধারের চেষ্টা করছে সেটা আমি ভালোই বুঝতে পারছি। যাই হোক আমার তো কোন আপত্তি নেই।
‘এই যে, আমাদের পাড়ার উঠতি হিরো, অভি।’
বৌটা বেশ ডবকা, আমাকে দেখে হুরমুর করে উঠে দারালো আর তাতে বসার চেয়ারটা পিছনে উলটে পরলো।
আমি নমস্কারের ভঙ্গি করলাম হাসি মুখে, ভিতরে ভিতরে ঝাঁট জ্বলে যাচ্ছে। ‘ভালো আছেন পুজো কেমন কাঁটলো।‘
মেয়েদের যা স্বভাব হয় ঠিক তাই। গরগর করে পঞ্চমির রাত থেকে ধারাবিবরণি দিতে শুরু করে দিলো, আর আমিও হাসি মুখে শুনে গেলাম। কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম, এমাল খাপের মাল। খাপে পরলে ঠিক দিয়ে দেবে, যে ভাবে দেখছে আমার দিকে। এসব ব্যাপারে আমার থেকে ভাল কেউ বলতে পারবেনা। নাঃ পাপ্পুর সামনে এর কথা আলোচনায় কোরবো না, নাহলে এই ক্যালানেটার সংসার ভাঙ্গবে।
ভিতর থেকে ডাক চলে এল। আমি ‘আসছি’ বলে চলে যাচ্ছি তখন সুদিপা বৌদি মানে যার সাথে পরিচয় হোলো বলে উঠলো ‘একদিন এসো’ ঘুরে হেসে ভদ্রতা দেখাতে গিয়ে দেখি এই সেই ক্ষুদার্ত নজর।
একটু এগোতেই আবার, ‘আজকে ভাসানে থাকবে তো’। আবার উত্তর না দিয়ে ঘুরে হাসলাম। ওর বর বলছে ‘অভি ছারা ভাসানই হবেনা।‘
ভিতরে গিয়ে দেখি মাসিমা তুলির শরীর সাস্থ্য নিয়ে এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। আমি একটা চেয়ার টেনে বসলাম। পাপ্পু আমার কানে কানে বললো ‘এত চিন্তা করার কিছু নেই, বিয়ের পরে ইউরিয়া সাঁর পরলে ঠিক হয়ে যাবে।‘
শালা, বোকাচোদা, এত বাঁজখেয়ি গলা যে আস্তে বলতেও আশেপাশের কয়েকজন শুনে ফেললো, যদিও সবই আমার বন্ধু। তবুও।
মাসিমা শুনতে পেলো কিনা জানিনা, কিন্তু বলে উঠলেন ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ বিয়ের পরে মেয়েদের শরীর সাস্থ্য ভালো হয়ে যায়, সেই আশায় বসে থাক্*।‘
পাপ্পু দেখলাম টুক করে উঠে চলে গেলো।
ঠাকুর, গাড়িতে লোড হয়ে গেছে। আজকে আর তামাক সেবন বা সিদ্ধি না। মাথা ঠিক রাখতে হবে। অনেক মেয়ে, মহিলা যায় আমাদের ভাসানে, প্রসেশান করে। ঠিক আঁটটার সময় বেরোই আমরা। হাতে দের ঘণ্টা। তুলিদের পাড়ার ভাসান ও আজকে ওরাও একই জায়গায় ভাসান দেবে, তুলি আর তুলির মাও ওদের ভাসানে যাবে।
আমাদের ঠেক বসে পরলো, গড়ে সাত আঁট পেগ সবাই।
আমাদের প্রসেশান শুরু হয়ে গেছে। একটা এম্বাসেডর থেকে সবাইকে আন্তরিক প্রিতি ও শুভেচ্ছা দিচ্ছে, উৎসবের দিনে শান্তি সৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন করা হচ্ছে। আমাদের ভাসান কোথায় কোথায় ঘুরবে তা বলে দেওয়া হচ্ছে। মনিমালার ড্রামের আওয়াজ, ব্যাঞ্জোর পোঁ পাঁ ঢাকের দুমদাম মিল্যে বেশ ভালোই ধুমকি ধরে গেলো। কিন্তু ঐ যে মাথায় কিছু হয়না। তাই আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে তত্বাবধানে ব্যাস্ত হয়ে পরলাম। এর মাঝেই খেয়াল করছি একটা কেউ আমাকে একদৃষ্টে জুলজুল করে দেখে চলেছে। সকালবেলার সেই সুদিপা বৌদি।
দেখবেনা কেন? আজকে আমি বেরনোর সময় আমার মাও আমার গায়ে থু থু করে দিয়েছে যাতে নজর না লাগে। আমিও মাঞ্জা দিয়েছি, তুলির সাথে ভাসানে দেখা হবে বলে। কালো একটা সিল্কের শেরওয়ানি পরেছি, একটা বিখ্যাত . দর্জির দোকান থেকে বানানো। শুধু ওপরের টা, প্যান্ট কিন্তু সেই চটা জিন্স। তাতেই যা বুঝছি, আর বলে নিজের ঢাঁক বাজাবো না।