31-12-2018, 03:40 PM
২৬।।
‘এই, বললে না তো আমাকে কেমন দেখাচ্ছে!’... ড্রইং রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে পৃথা। গাঢ় নীল রঙের লম্বা প্রায় পায়ের গোছ অবধি ঝোলা কুর্তি পরনে। কুর্তির বুকের কাছে কমলা সুতোর কাজ করা, সামনে তিনটে বোতাম, যার মধ্যে দুটো খোলা রয়েছে, যেখান দিয়ে শরীরের ফর্সা চামড়ার খানিকটা উঁকি মারছে আর তার সাথে গলায় ঝুলতে থাকা সরু সোনার একটা চেন চিকচিক করছে ঘরের আলোয়... চেনের অংশটা গলার দুই পাশ থেকে বাঁক খেয়ে নেমে হারিয়ে গিয়েছে পরনের কুর্তির বুকের আড়ালে। পুরুষ্টু পায়ের সাথে চেপে বসে আছে কুর্তির বুকের ওপরে থাকা নক্সার রঙের সাথে মেলানো কমলা লেগিংস। অবাধ্য চুলগুলোকে একটা ক্লিপ দিয়ে পেছনে আটকানো... প্রসাধন যতসামান্যই... যতটুকু না করলে নয়... ঠোঁটের ওপরে হাল্কা লিপস্টিকের পরশ, আর কপালের ওপরে দুই ভুরু মাঝে ছোট্ট একটা কমলা রঙের টিপ... এতেই যেন কোন এক মোহিনীর মত ড্রইংরুমের মধ্যে ঢুকলো সে... মুগ্ধ দৃষ্টিতে পৃথার দিকে তাকিয়ে থাকে অর্নব... কে বলবে মেয়েটা আজ সকালেও এত অসুস্থ ছিল!
‘ভালো...’ ছোট্ট করে উত্তর দেয় অর্নব।
গলার স্বরে পৃথা বোঝে এখন অর্নব সোফায় বসে তার দিকেই নিশ্চয় তাকিয়ে রয়েছে... ওকে দেখছে ভেবে মনে মনে খুশি হয় সে। কিন্তু অর্নবের উত্তরে মোটেও খুশি হয় না পৃথা, ঠোঁট ওল্টায়... ‘শুধু ভালো? ব্যস?’ মনে মনে আরো কিছু শোনার অপেক্ষা করে সে।
‘সুন্দরীকে যতই প্রশংসা করো না কেন, সে প্রশংসা কুলায় না... সেটা জানো না?’ মৃদু গলায় বলে অর্নব।
‘ইশ... সুন্দরী না ছাই... আমাকে তো পেত্নী বলেছিলে সকালে, ভুলে গেছ?’ গাল ফুলে ওঠে তার।
‘আমি?’ আশ্চর্য হয় অর্নব... ‘আমি আবার কখন তোমায় পেত্নী বললাম? এত সাহস আমার আছে নাকি?’ অর্নবের স্বরে মজা মেখে থাকে।
‘বলোনি? তখন বাথরুমের আমাকে চান করাবার সময় বললেনা আমি পেত্নী? এখন কথা ঘোরানো হচ্ছে না?’ বলতে বলতে এগিয়ে যায় সোফার দিকে... হাত বাড়িয়ে খপ করে হাতের মুঠোয় ধরে নেয় অর্নবের গালের ওপরে থাকা লম্বা দাড়ির খানিকটা... নিয়েই টান মারে একটু... ‘আ...আ...আ...’ ব্যথায় কোঁকিয়ে ওঠে অর্নব... দাড়ি ছেড়ে দিয়ে কোমরে হাত রেখে দাঁড়ায় পৃথা।
‘উফ... কি ডাকাত মেয়ে রে বাবা... এই রকম স্যাডিস্ট জানলে...’ বলতে গিয়ে থমকায় অর্নব।
‘কি? আমি স্যাডিস্ট? বোলতে পারলে?’ অভিমানে গাল ভারী হয় পৃথার।
‘এটাকে স্যাডিসিজম্ ছাড়া আর কি বলবো? হ্যা? এই ভাবে কেউ দাড়ি টানে?’ নিজের গালে হাত বোলাতে বোলাতে উত্তর দেয় অর্নব।
‘বেশ করবো... আমার অর্নবকে নিয়ে আমি যা খুশি তাই করতে পারি... বুঝেছ?’ কোমরে হাত রেখে বাচ্ছা মেয়ের মত শরীর দোলায় সে।
‘তাহলে আমিও বেশ করেছি পেত্নী বলেছি... পেত্নী কে পেত্নী বলবো না তো কি অপ্সরা বলতে হবে?’ রাগায় অর্নব পৃথাকে।
‘ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি... ভূত একটা...’ বলে আবার মুখটা আন্দাজ করে হাত বাড়াতে যায় সে...
তাড়াতাড়ি করে ওর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে ধরে ফেলে অর্নব... ‘এই আর নয়... খুব লেগেছে...’ বলে ওকে একটু টান দেয় সামনের পানে হাতটা ধরেই।
নিজের শরীরটাকে নির্দিধায় এগিয়ে দেয় পৃথা... সোফার আরো কাছে এগিয়ে গিয়ে অর্নবের মাথাটাকে ধরে নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে... বলে, ‘ইশ... সরি সোনা... খুব লেগেছে না...’
পৃথার নরম বুকের ছোয়া পেতেই অর্নব নিজেকে তাড়াতাড়ি ওর বুকের ওপর থেকে সরিয়ে নেয় মাথাটা। পৃথাকে টেনে পাশে সোফায় বসায় ও হাতের মুঠোয় তখন শক্ত করে ধরে রাখে ওর হাতটাকে নিজের হাতের মধ্যে। শরীর এলিয়ে দিয়ে অর্নবের অদৃশ্য কাঁধের ওপরে মাথা রাখে পৃথা... ‘আদর খেতে ইচ্ছা করছে ভিষন...’ ফিসফিসিয়ে বলে অর্নবের কানের মধ্যে।
‘সেটা তো সব সময়ই করে চলেছে... কখন করে না? শুনি?’ হেসে উত্তর দেয় অর্নব।
‘উমমম্, ইচ্ছা করলে আমি কি করবো?’ আদুরে গলার জবাব আসে পৃথার কাছ থেকে।
‘হুম... সে তো বুঝলাম... কিন্তু একটু পরেই তো তোমার কলিগ আসবে ওর বৌকে নিয়ে, তখন?’ হাতটাকে পৃথার পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে টেনে নেয় ওকে নিজের বুকের ওপরে... একটু একটু করে নিজের ওপর থেকে সেল্ফ কন্ট্রোলটা যে অর্নব হারিয়ে ফেলছে তাতে বোঝার বাকি থাকে না আর।
অর্নবের বুকের মধ্যে আরো সেঁদিয়ে যায় পৃথা, গুনগুনিয়ে বলে, ‘আসুক না, যখন আসবে তখন দেখা যাবে...’ আলতো করে মুখটাকে কাত করে রাখে বুকের ওপরে... কানে শোনে না দেখা শরীরের হৃদ্ স্পন্দন... বুকের লোমগুলো আঙুলের ফাঁকে আলতো করে পাকাতে পাকাতে প্রশ্ন করে পৃথা, ‘একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? কিছু মনে করবে না?’
‘কি কথা? আমি জীবিত না মৃত? সেটা?’ মৃদু হেসে প্রশ্ন করে অর্নব ফিরিয়ে।
অর্নবের হাসি অনুভব করে পৃথা, লজ্জা পায় সে, ‘ইশ্, তুমি বুঝলে কি করে আমি কি জিজ্ঞাসা করতে চাইছিলাম?’ বুকের ওপরে আঁচড় কাটতে কাটতে প্রশ্ন করে সে।
‘এত কাছে রয়েছে ছুঁয়ে, আর সেটা বুঝবো না?’ ফের হাসে অর্নব।
‘ইশ্, সব বুঝতে পারে যেন আমার কথা...’ পৃথার গলার স্বরে আদর মিশে যায় আরো... ‘বুঝতেই যদি পারো, তাহলে আরো আগে কেন আমার কাছে ধরা দাও নি? এতদিন একা রেখেছ কেন আমাকে? হুম?’
‘ধরা তো আমি কোনদিনই দিতে চাই নি... তুমি তো জোর করে আমাকে ধরে ফেললে...’ অর্নবেরও যেন গলার স্বর ভারী হয়ে আসে।
‘ইশ্, ধরা না দিয়ে কোথায় যাবে মশাই... এই তিতিরকে না ভালোবেসে থাকতে পারতে?’ আরো যেন ঢুকে যেতে যায় পৃথা অর্নবের বুকের মাঝে।
‘সেই জন্যই তো যখন ওই ভাবে ডাকলে, আর থাকতে পারি নি সরে, এগিয়ে গিয়ে ধরেছিলাম তোমার হাতটা...’ হাতের বেড় আরো ঘন হয় পৃথার কাঁধের ওপরে।
অর্নবের বুকের ওপর থেকে হাতটা তুলে তার গালের ওপরে রাখে পৃথা, আলতো করে হাত বোলায় অর্নবের গালের ওপরে থাকা নরম লম্বা দাড়ির ওপরে, ‘কই, বললে না তো তুমি...’ পৃথার কথা শেষ হবার আগেই দরজায় বেলের শব্দ হয়... চকিতে দুজনে সোজা হয়ে বসে।
‘যাও... তোমার কলিগ এসেছে বোধহয়... আমিও উঠি...’ বলে ওঠার চেষ্টা করে অর্নব।
তাড়াতাড়ি করে অর্নবের বুকের ওপরে হাত রাখে পৃথা, ‘না... না... তুমি যাবে না... এখানেই থাকবে... আমার পাশে...’
‘আরে পাগলী... আমি তো অন্য ঘরেই থাকবো...’ বোঝাবার চেষ্টা করে অর্নব।
‘না... তুমি অন্য ঘরে নয়... এই ঘরেই থাকবে, আমার কাছে...’ আবদার করে পৃথা।
ফের বেল বাজে দরজায়।
‘আরে যাও... ও বেচারা বাইরে অপেক্ষা করছে, দরজাটা খুলে দাও...’ বলে ওঠে অর্নব।
‘আগে তুমি বলো, এই খানেই আমার পাশে থাকবে... যাবে না...’ ফের আবদার করে ওঠে পৃথা।
হাসে অর্নব... ‘আচ্ছা বাবা আচ্ছা... আমি তোমার পাশেই থাকবো... হয়েছে? এবার তো যাও, দরজাটা খুলে দাও...’
‘না, শুধু পাশে নয়... সারাটা’খন আমাকে ছুঁয়ে থাকবে... বলো থাকবে...’ আদুরে গলায় বলে পৃথা।
‘আচ্ছা, তাই হবে... আমি তোমাকে ছুঁয়েই থাকবো... হয়েছে? এবার তো দরজাটা খোলো...’ হাসে অর্নব পৃথার ছেলেমানুষী দেখে।
অর্নবের অদৃশ্য গলাটা জড়িয়ে ধরে পৃথা, না দেখা দাড়ি ভরা গালটায় চুমু খেয়ে হেসে বলে, ‘সোনা আমার...’ বলে উঠে যায় দরজার দিকে... হাত তুলে এতক্ষন অর্নবের বুকের ওপরে মাথাটা ঘসার ফলে ক্লিপের থেকে বেরিয়ে আসা অবাধ্য খুলে আসা চুলগুলোকে ঠিক করতে করতে... অর্নব সোফায় বসে অপলক তাকিয়ে থাকে পৃথার হেঁটে যাওয়ার দিকে, তাকিয়ে তাকে নির্নিমেশ গাঢ় কুর্তির আড়াল থেকে সুস্পষ্ট ফুটে ওঠা উত্তাল নিতম্বের দোলদুলিয়মান ছন্দের পানে... আজ দুপুরেই বাথরুমের চান করার সময় যে ভাবে উদ্দাম হয়ে উঠেছিল মেয়েটা, রাতের বিছানায় কি ঝড় তুলবে সেটা ভাবতেই রক্তচাপ বেড়ে ওঠে অর্নবের।
.
.
দরজার ইয়েল লকটা তুলে পাল্লাটা খুলে ধরে পৃথা, চৌকাঠের ওপারে দাঁড়িয়ে সুশান্ত... দেখে স্মিত হাসে পৃথা, মাথাটা একটু নেড়ে সম্বোধন করে, ‘হাই...’
‘হাই...’ প্রত্যুত্তর আসে সুশান্তর কাছে থেকে... এদিক ওদিক উঁকি মারে পৃথা, কাউকে খোঁজে, তারপর সুশান্তের দিকে ফিরে প্রশ্ন করে, ‘মৌসুমী আসে নি?’ বলতে বলতে পাশে সরে দাঁড়ায় সে... জায়গা করে দেয় সুশান্তকে ঘরে আসার।
ঘরের ভেতরে ঢুকলে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ফিরে দাঁড়ায় পৃথা, ওর হাতে একটা লাল গোলাপের বোকে তুলে দিয়ে হেসে বলে সুশান্ত, ‘গেট ওয়েল সুন, পৃথা...’
সুশান্ত হাত থেকে ফুলের বোকেটা নিতে নিতে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে পৃথা, ‘বাব্বা, একেবারে ফুল দিয়ে উইশ করছো... আরে বাবা সামান্য তো জ্বর হয়েছিল, তার জন্য আবার ফুল আনার কি দরকার ছিল... আমার তো আর বিরাট কিছু হয় নি...’
‘না, তা না...’ অপ্রস্তুত হাসে সুশান্ত।
‘মৌসুমী আসলো না?’ জিজ্ঞাসা করতে করতে এগিয়ে যায় ড্রইংরুমের সেন্টার টেবিলের দিকে, সেখানে ফুলের বোকেটা রেখে ফিরে খালি ওয়ান সিটার সোফার দিকে ইঙ্গিত করে বসতে ইশারা করে বলে, ‘তোমাকে যে বললাম, ওকেও সাথে করে আনতে, খুব ভালো লাগতো ও এলে।’
‘না, মানে আনলাম না...’ ইতস্থত করে সুশান্ত... ‘কেন... আমি... আমি একা এসেছি বলে তোমার খারাপ লাগছে?’ সোফায় বসতে বসতে উত্তর দেয়... চোখদুটো যেন বারেক ঘুরে যায় পৃথার মাথা থেকে পা অবধি... চোখটা বার বার ঘুরে যায় কুর্তির খোলা দুটো বোতামের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া মাখনের মত মসৃন ফর্সা চামড়াটার ওপরে... এত কাছ থেকে এই প্রথম পৃথাকে দেখছে তা নয়, আগেও বহুবার পৃথাকে দেখেছে সে এতটাই বা কেন এর থেকেও অনেক বেশি কাছ থেকে, অফিসে, কাজের ফাঁকে, কিন্তু তখন তাদের আশেপাশে কারুর না কারুর উপস্থিতি সর্বদাই ছিল, কিন্তু আজ এই ফাঁকা ফ্ল্যাটে দেখার গুরুত্বটা যেন অনন্য... চটক ভাঙে পৃথার কথায়...
‘দূর... আমি কি সেই বললাম? তুমি আমার কলিগ তার ওপরে এত ভালো বন্ধুত্ব আমাদের, সেখানে খারাপ লাগালাগির কি আছে আবার?’ নিজেও সুশান্তের উল্টো দিকের সোফায় বসতে বসতে বলে পৃথা... সোফায় বসে ডান পায়ের ওপরে বাঁ পা’টাকে তুলে দেয়... তারপর কুর্তির নীচটাকে তুলে ভালো করে ঢেকে রাখে নিজের সুঠাম পা’খানি... দুই পাশটায় মাথা ঘোরায় বারেক... মনে মনে খোঁজে তার প্রিয়তমকে... কাঁধের ওপরে ছোঁয়া পায় অদৃশ্য হাতের পরশের... উজ্জল হয়ে ওঠে পৃথার মুখটা... ঘাড়টাকে সামান্য কাত করে নিজের গাল ছোঁয়ায় কাঁধের ওপরে থাকা হাতের পীঠে।
‘এখন কেমন ফিল করছো? প্রশ্ন করে সুশান্ত... তারও চোখে যেন ধরা পড়ে পৃথার হটাৎ বেড়ে যাওয়া মুখের ঔজ্জল্য... একটু দ্বিধাগ্রস্থ সে... এটা কি তবে তার উপস্থিতির কারনেই? মনে মনে নিজেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে প্রশ্নের ফাঁকে।
‘অ্যাঁ? কি বলছো?’ সতর্ক হয় পৃথা... এই ভাবে বাইরের লোকের সামনে এতটা ছেলেমানুষী করা উচিত নয় তার।
‘বলছি হাউ ইয়ু আর ফিলিং নাও...’ পুনরাবৃত্তি করে প্রশ্নের সুশান্ত।
‘ওহ! ফাইন... নো প্রবলেম অ্যাটঅল... ডঃ বসাকের অসুধ দারুন কাজ করেছে, একটু যে উইকনেস নেই সেটা বলবো না, তবে মাচ বেটার... প্রণবদা খুব ভালো একজন ডক্টরকে নিয়ে এসেছিল...’ গড়গড় করে বলে পৃথা।
‘প্রনবদা? কে?’ ভুরু কোঁচকায় সুশান্ত।
‘কেন? আমাদের প্রণব কর্মকার...’ উত্তর দেয় পৃথা। মনে মনে নিজেকেই দোষে সে... আরো সতর্ক হওয়া উচিত... এই ভাবে দুম করে প্রণবদা বলে ফেলা মোটেই উচিত হয় নি তার...
‘ওহ! উনি আবার তোমার দাদাও হয়ে গেছেন দেখছি...’ একটু স্লেশাত্মক ভঙ্গিতেই বলে ওঠে সুশান্ত।
‘না, মানে যতই হোক, উনি বয়োজ্যেষ্ঠ তো, তাই না? সেই হিসাবেই দাদা বললাম আর কি...’ তাড়াতাড়ি সামলাবার চেষ্টা করে পরিস্থিতির।
‘তা হটাৎ করে ওনাকেই কেন ফোন করতে গেলে সকালে? আমাকেও তো করতে পারতে? আমি কি আসতাম না?’ গলার স্বরে একটু ক্ষোভ প্রকাশ পায় সুশান্তের।
‘আরে তা তুমি আসবে না কেন, আমি কি জানি না যে তোমাকে ডাকলেই তুমি আসবে, সেটা নয়, আসলে প্রণববাবুর ফার্স্ট লেটার পি আর তোমার ফার্স্ট লেটার এস, তাই বোধহয় জ্বরের ঘোরে আমি পি দেখে প্রণববাবুকেই কল করে দিয়েছিলাম, আসলে তখন কাকে কি করছি সেটা তো আর মনে করে করি নি, সেটাই হয়ত হবে, বুঝেছ!’ পরিস্থিতি আবার সামলাবার চেষ্টায় পৃথা।
‘তার পরেও তো ফোন করতে পারতে, আমি না ফোন করলে তো জানতেও পারতাম না যে তোমার জ্বর হয়েছে...’ সুশান্তর গলায় ক্ষোভ যেন একটু একটু করে বৃদ্ধি পায়।
‘আরে তা নয়... তখন আমার কি অবস্থা বলো... জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে তখন... কি করে জানাবো তোমায়?’ এবার পৃথাও একটু বিরক্ত হয় সুশান্তের এই ধরনের আতিসজ্যে... ইচ্ছা করে ভিষন অর্নবের হাতটাকে টেনে নিজের হাতের মুঠোয় ধরতে, কিন্তু নিজেকে সামলায় অনেক কষ্টে... ঘাড় কাত করে ফের গাল ঠেকায় অর্নবের হাতের পীঠে... মনের মধ্যে তৈরী হওয়া বিরক্তিটা যেন নিমেশে উবে যায় অর্নবের পরশ পেয়ে।
‘যাক, মিঃ সহায় কি বললেন? ওনাকে ইনফর্ম করেছিলে তো?’ কথা ঘোরাবার চেষ্টা করে পৃথা, ওদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কথা টেনে আনে প্রসঙ্গে।
‘আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি ঠিকই...’ গলার ক্ষোভ তখন মেখে রয়েছে বোঝা যায়।
‘দেখো... তুমি এটা যে করবে সেটা বলে দিতে হয় না সুশান্ত... তুমি না থাকলে বলো তো এই ভাবে আমি একা এত বড় একটা শহরে থাকতে পারতাম? পারতাম এত সুন্দর একটা ফ্ল্যাট পেতে?’ মনে মনে নিজের কথার আর একটু প্রসারিত করে ভাবে, ‘পারতাম আমার অর্নবকে পেতে? আমার সোনাটাকে...’
‘আমি তো আমার সবটা দিয়ে তোমায় সাহায্য করতে চাই পৃথা, চাই সবসময় তোমার পাশে থাকতে...’ এবার একটু বিগলিত হয়ে ওঠে সুশান্ত... গলার স্বর গাঢ় হয়।
‘তাই তো তোমার দিকে বন্ধুত্বর হাত বাড়িয়ে রেখেছি... তুমি আছো বলেই না আমি নিশ্চিন্তে আছি...’ বলে আর কথা বাড়ায় না পৃথা, বলে ওঠে, ‘যাক... কি খাবে বলো?’
‘না, না, তুমি আবার কি করবে? তোমার শরীর খারাপ... আমার কিছু চাই না...’ বলে ওঠে সুশান্ত।
‘সেকি বললে হয় নাকি? গৃহস্থের অকল্যাণ হবে না? আজ সত্যিই বেশি কিছু অফার করতেও পারবো না, কিন্তু একটু চা তো করে দিতেই পারি... তাই না?... তুমি বরং একটু বোসো... আমি এক্ষুনি দু-কাপ চা করে নিয়ে আসছি...’ বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় পৃথা।
সুশান্তের চোখটা পৃথার আপদমস্তক শরীরের ওপরে একবার বুলিয়ে যায়... ‘না, না, ছেড়ে দাও না, শুধু শুধু আমার জন্য আবার চা করতে যেতে হবে না...’ মনে মনে চায় যতক্ষন অন্তত রয়েছে সে, শুধু পৃথার সামনেই থাকে... ওই চা করতে যাওয়ার সময়টুকুও চোখের সামনে থেকে হারাতে চায় না যেন।
‘আরে এত কিন্তু কিন্তু করছ কেন? আমরাও তো...’ বলতে গিয়ে থমকায় পৃথায়... তারপর তাড়াতাড়ি নিজেকে শুধরে নিয়ে বলে, ‘মানে, আমিও তো চা খাইনি এখনও... তোমার সাথে খাবো বলেই অপেক্ষা করছিলাম... শুধু শুধু নিজের জন্য চা বানাতে ইচ্ছা করে বলো... তুমি খেলে আমারও তাহলে খাওয়া হয়... এই আর কি...’
‘ওহ!... আমার জন্যই চা না খেয়ে অপেক্ষা করছিলে...’ বেশ খুশির ছোয়া লাগে সুশান্তর গলার স্বরে... ‘করো তাহলে...’
‘এই তো... এক্ষুনি হয়ে যাবে... দু কাপ করতে আর কতক্ষন লাগবে... তুমি ততক্ষন টিভিটা দেখো, আমি চা করে নিয়ে আসি...’ বলে রিমোট টিপে দেওয়ালে লাগানো টিভিটা চালিয়ে দিয়ে রিমোটটা এগিয়ে দেয় সুশান্তের হাতে, তারপর এগিয়ে যায় কিচেনের দিকে।
আলো জ্বেলে কিচেনে ঢুকেই ফিক করে হেসে ফেলে পৃথা... আজ একটা ব্লান্ডার করেই ফেলছিল... সেই বা কি করবে, সর্বক্ষন যদি মাথার মধ্যে অর্নব বসে থাকে, তাহলে তার কি দোষ? নিজেই নিজের পক্ষে সাফাই গায় মনে মনে... হাত বাড়ায় তাকের ওপর থেকে কাপ প্লেট নামাবার জন্য।
হিসাব করে তিন কাপের মত চায়ের জল রেডী করে পৃথা... অর্নবও তো বেচারী খায় নি চা এখনও... মনে মনে ভাবে সে... গ্যাসের বার্নার জ্বালিয়ে চায়ের জল চাপাতে চাপাতে... কাবার্ড খুলে চা, চিনি বের করে রাখে পাশে... দুধ তো নেই, র’টিই বানাতে হবে... জোগাড় করে বিস্কিট, প্লেটের ওপরে সাজায় সুন্দর করে।
ড্রইংরুমে বসে খানিক টিভি চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে এদিক সেদিক তাকায় সুশান্ত... একটা অস্বস্থি হয় যেন তার... কেন জানি তার মনে হয় ঘরে সে ছাড়াও আর কারুর উপস্থিতি সে উপলব্ধি করতে পারছে... মনে মনে ভাবে, ‘বলেছিলাম পৃথাকে এই ফ্ল্যাটটা না নিতে... কি সব শুনেছিলাম এই ফ্ল্যাটের ব্যাপারে... কিন্তু এটাই নেবার জন্য এমন জিদ করল... নাঃ... ভালো লাগছে না...’ ভেবে উঠে দাঁড়ায়... তারপর ধীর পায়ে কিচেনের দিকে এগিয়ে যায়।
কিচেনের মধ্যে পৃথা সেই মুহুর্তে পেছন ফিরে চা করতে ব্যস্ত... নিশব্দে কিচেনের দোড়গোড়ায় গিয়ে দাঁড়ায় সুশান্ত... এক মনে তাকিয়ে থাকে পৃথার কর্মব্যস্ত শরীরটার পানে... মাথার ওপরে চুলগুলো চূড়া করে তুলে রাখার কারণে ঘাড়টা সম্পূর্ন উন্মুক্ত... পরণের গাঢ় নীল কুর্তিটা কাঁধ থেকে সুঠাম পীঠের ওপর দিয়ে ঢাল খেয়ে নেমে গিয়েছে নীচের দিকে... কোমরের কাছ থেকে একটা উত্তাল বাঁক নিয়ে বর্তুল ভারী নিতম্বের ওপরে টাইট হয়ে বসে রয়েছে কুর্তির নীচের অংশটা... এতটাই টাইট যে কিচেনের বৈদ্যুতিক আলো পড়ে কুর্তির আড়ালে থাকা পরনের প্যান্টিটার দুটো রেখা একেবারে সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে কুর্তির কাপড়ের ওপর দিয়ে... দেহের প্রতিটা নড়াচড়ায় যেন নিতম্বটা ছলকে ছলকে উঠছে আপন খেয়ালে... মাঝে মধ্যেই কুর্তিটার পাশের কাপড়ের চেরাটা সরে গিয়ে বেরিয়ে দৃশ্যমন্য করে তুলছে পায়ের সাথে চেপে বসে থাকা লেগিংস মোড়া পুরুষ্টু পায়ের থাই, পায়ের গোছ... নিঃশব্দে আর একটু এগিয়ে দাঁড়ায় সুশান্ত... একেবারে পৃথার পেছনে... এতটাই কাছে যে চোখের সামনে পৃথার ঘাড়ের ওপরে হাল্কা রোঁয়ার রেশ চোখে পড়ে তার... কেমন যেন নদীর ধারার মত সেই লোমের সারিগুলো দুইপাশ থেকে গড়িয়ে এসে নেমে গিয়েছে পীঠের অববাহিকা বেয়ে... সোনার সরু হারটা সেই ঘাড়ের ওপরে আরো জৌলুশ বাড়িয়ে তুলেছে যেন... করে তুলেছে পৃথাকে আরো যৌন আবেদনময়ী। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চোখের সামনে উন্মুক্ত থাকা পৃথার ওইটুকু শরীরের ফর্সা অংশটার দিকে... ওই ঘাড়টুকুই যেন তার শরীরের অঘোষিত বিজ্ঞাপন... দেহের প্রতিটা কোণ আর বাঁকের ছবির।
হটাৎ ঘাড় ঘোরায় পৃথা, ঘুরিয়েই এত কাছে সুশান্তকে দেখে চমকে যায়... ‘একি? তুমি?’
চকিতে সুশান্তও কয়’একপা পিছিয়ে দাঁড়ায় পৃথার থেকে খানিক তফাতে... ‘না, মানে একা ভালো লাগছিল না বসে থাকতে, তাই...’ সাফাই দেয় নিজের উপস্থিতির।
‘ওহ! ভালো করেছ উঠে এসে... এই তো, আমারও চা হয়ে গেছে... শুধু ছাঁকলেই হবে...’ ফের ফিরে নিজের কাজে মনোনিবেশ করে পৃথা...
তিনটে কাপে চা ছেঁকে, দুটো কাপ আর বিস্কিটের প্লেট ট্রের ওপরে রেখে হাতে তুলে ঘোরে সে, ‘চলো... ও ঘরেই যাই...’
‘তিন কাপ করলে?’ একটা কাপ কিচেন স্ল্যাবের ওপরে রেখে দেওয়াটা নজর এড়ায় না সুশান্তর।
‘না, ওই করলাম, একেবারে করে রাখলাম, ইচ্ছা হলে পরে একটু গরম করে নেবো’খন...’ বলতে বলতে সুশান্তকে প্রায় সাথে নিয়েই ড্রইংরুমে ফিরে আসে পৃথা... সেই জানে কেন তৃতীয় কাপ সে রেডি করে রেখে এলো... তার সোনাটার জন্য... ড্রইংরুমে ঢুকে শুধু মুখের ইশারা করে কিচেনের দিকে দেখিয়ে দেয় পৃথা... তার মানে যে বোঝার সে ঠিক বুঝে যাবে।
‘এই, বললে না তো আমাকে কেমন দেখাচ্ছে!’... ড্রইং রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে পৃথা। গাঢ় নীল রঙের লম্বা প্রায় পায়ের গোছ অবধি ঝোলা কুর্তি পরনে। কুর্তির বুকের কাছে কমলা সুতোর কাজ করা, সামনে তিনটে বোতাম, যার মধ্যে দুটো খোলা রয়েছে, যেখান দিয়ে শরীরের ফর্সা চামড়ার খানিকটা উঁকি মারছে আর তার সাথে গলায় ঝুলতে থাকা সরু সোনার একটা চেন চিকচিক করছে ঘরের আলোয়... চেনের অংশটা গলার দুই পাশ থেকে বাঁক খেয়ে নেমে হারিয়ে গিয়েছে পরনের কুর্তির বুকের আড়ালে। পুরুষ্টু পায়ের সাথে চেপে বসে আছে কুর্তির বুকের ওপরে থাকা নক্সার রঙের সাথে মেলানো কমলা লেগিংস। অবাধ্য চুলগুলোকে একটা ক্লিপ দিয়ে পেছনে আটকানো... প্রসাধন যতসামান্যই... যতটুকু না করলে নয়... ঠোঁটের ওপরে হাল্কা লিপস্টিকের পরশ, আর কপালের ওপরে দুই ভুরু মাঝে ছোট্ট একটা কমলা রঙের টিপ... এতেই যেন কোন এক মোহিনীর মত ড্রইংরুমের মধ্যে ঢুকলো সে... মুগ্ধ দৃষ্টিতে পৃথার দিকে তাকিয়ে থাকে অর্নব... কে বলবে মেয়েটা আজ সকালেও এত অসুস্থ ছিল!
‘ভালো...’ ছোট্ট করে উত্তর দেয় অর্নব।
গলার স্বরে পৃথা বোঝে এখন অর্নব সোফায় বসে তার দিকেই নিশ্চয় তাকিয়ে রয়েছে... ওকে দেখছে ভেবে মনে মনে খুশি হয় সে। কিন্তু অর্নবের উত্তরে মোটেও খুশি হয় না পৃথা, ঠোঁট ওল্টায়... ‘শুধু ভালো? ব্যস?’ মনে মনে আরো কিছু শোনার অপেক্ষা করে সে।
‘সুন্দরীকে যতই প্রশংসা করো না কেন, সে প্রশংসা কুলায় না... সেটা জানো না?’ মৃদু গলায় বলে অর্নব।
‘ইশ... সুন্দরী না ছাই... আমাকে তো পেত্নী বলেছিলে সকালে, ভুলে গেছ?’ গাল ফুলে ওঠে তার।
‘আমি?’ আশ্চর্য হয় অর্নব... ‘আমি আবার কখন তোমায় পেত্নী বললাম? এত সাহস আমার আছে নাকি?’ অর্নবের স্বরে মজা মেখে থাকে।
‘বলোনি? তখন বাথরুমের আমাকে চান করাবার সময় বললেনা আমি পেত্নী? এখন কথা ঘোরানো হচ্ছে না?’ বলতে বলতে এগিয়ে যায় সোফার দিকে... হাত বাড়িয়ে খপ করে হাতের মুঠোয় ধরে নেয় অর্নবের গালের ওপরে থাকা লম্বা দাড়ির খানিকটা... নিয়েই টান মারে একটু... ‘আ...আ...আ...’ ব্যথায় কোঁকিয়ে ওঠে অর্নব... দাড়ি ছেড়ে দিয়ে কোমরে হাত রেখে দাঁড়ায় পৃথা।
‘উফ... কি ডাকাত মেয়ে রে বাবা... এই রকম স্যাডিস্ট জানলে...’ বলতে গিয়ে থমকায় অর্নব।
‘কি? আমি স্যাডিস্ট? বোলতে পারলে?’ অভিমানে গাল ভারী হয় পৃথার।
‘এটাকে স্যাডিসিজম্ ছাড়া আর কি বলবো? হ্যা? এই ভাবে কেউ দাড়ি টানে?’ নিজের গালে হাত বোলাতে বোলাতে উত্তর দেয় অর্নব।
‘বেশ করবো... আমার অর্নবকে নিয়ে আমি যা খুশি তাই করতে পারি... বুঝেছ?’ কোমরে হাত রেখে বাচ্ছা মেয়ের মত শরীর দোলায় সে।
‘তাহলে আমিও বেশ করেছি পেত্নী বলেছি... পেত্নী কে পেত্নী বলবো না তো কি অপ্সরা বলতে হবে?’ রাগায় অর্নব পৃথাকে।
‘ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি... ভূত একটা...’ বলে আবার মুখটা আন্দাজ করে হাত বাড়াতে যায় সে...
তাড়াতাড়ি করে ওর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে ধরে ফেলে অর্নব... ‘এই আর নয়... খুব লেগেছে...’ বলে ওকে একটু টান দেয় সামনের পানে হাতটা ধরেই।
নিজের শরীরটাকে নির্দিধায় এগিয়ে দেয় পৃথা... সোফার আরো কাছে এগিয়ে গিয়ে অর্নবের মাথাটাকে ধরে নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে... বলে, ‘ইশ... সরি সোনা... খুব লেগেছে না...’
পৃথার নরম বুকের ছোয়া পেতেই অর্নব নিজেকে তাড়াতাড়ি ওর বুকের ওপর থেকে সরিয়ে নেয় মাথাটা। পৃথাকে টেনে পাশে সোফায় বসায় ও হাতের মুঠোয় তখন শক্ত করে ধরে রাখে ওর হাতটাকে নিজের হাতের মধ্যে। শরীর এলিয়ে দিয়ে অর্নবের অদৃশ্য কাঁধের ওপরে মাথা রাখে পৃথা... ‘আদর খেতে ইচ্ছা করছে ভিষন...’ ফিসফিসিয়ে বলে অর্নবের কানের মধ্যে।
‘সেটা তো সব সময়ই করে চলেছে... কখন করে না? শুনি?’ হেসে উত্তর দেয় অর্নব।
‘উমমম্, ইচ্ছা করলে আমি কি করবো?’ আদুরে গলার জবাব আসে পৃথার কাছ থেকে।
‘হুম... সে তো বুঝলাম... কিন্তু একটু পরেই তো তোমার কলিগ আসবে ওর বৌকে নিয়ে, তখন?’ হাতটাকে পৃথার পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে টেনে নেয় ওকে নিজের বুকের ওপরে... একটু একটু করে নিজের ওপর থেকে সেল্ফ কন্ট্রোলটা যে অর্নব হারিয়ে ফেলছে তাতে বোঝার বাকি থাকে না আর।
অর্নবের বুকের মধ্যে আরো সেঁদিয়ে যায় পৃথা, গুনগুনিয়ে বলে, ‘আসুক না, যখন আসবে তখন দেখা যাবে...’ আলতো করে মুখটাকে কাত করে রাখে বুকের ওপরে... কানে শোনে না দেখা শরীরের হৃদ্ স্পন্দন... বুকের লোমগুলো আঙুলের ফাঁকে আলতো করে পাকাতে পাকাতে প্রশ্ন করে পৃথা, ‘একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? কিছু মনে করবে না?’
‘কি কথা? আমি জীবিত না মৃত? সেটা?’ মৃদু হেসে প্রশ্ন করে অর্নব ফিরিয়ে।
অর্নবের হাসি অনুভব করে পৃথা, লজ্জা পায় সে, ‘ইশ্, তুমি বুঝলে কি করে আমি কি জিজ্ঞাসা করতে চাইছিলাম?’ বুকের ওপরে আঁচড় কাটতে কাটতে প্রশ্ন করে সে।
‘এত কাছে রয়েছে ছুঁয়ে, আর সেটা বুঝবো না?’ ফের হাসে অর্নব।
‘ইশ্, সব বুঝতে পারে যেন আমার কথা...’ পৃথার গলার স্বরে আদর মিশে যায় আরো... ‘বুঝতেই যদি পারো, তাহলে আরো আগে কেন আমার কাছে ধরা দাও নি? এতদিন একা রেখেছ কেন আমাকে? হুম?’
‘ধরা তো আমি কোনদিনই দিতে চাই নি... তুমি তো জোর করে আমাকে ধরে ফেললে...’ অর্নবেরও যেন গলার স্বর ভারী হয়ে আসে।
‘ইশ্, ধরা না দিয়ে কোথায় যাবে মশাই... এই তিতিরকে না ভালোবেসে থাকতে পারতে?’ আরো যেন ঢুকে যেতে যায় পৃথা অর্নবের বুকের মাঝে।
‘সেই জন্যই তো যখন ওই ভাবে ডাকলে, আর থাকতে পারি নি সরে, এগিয়ে গিয়ে ধরেছিলাম তোমার হাতটা...’ হাতের বেড় আরো ঘন হয় পৃথার কাঁধের ওপরে।
অর্নবের বুকের ওপর থেকে হাতটা তুলে তার গালের ওপরে রাখে পৃথা, আলতো করে হাত বোলায় অর্নবের গালের ওপরে থাকা নরম লম্বা দাড়ির ওপরে, ‘কই, বললে না তো তুমি...’ পৃথার কথা শেষ হবার আগেই দরজায় বেলের শব্দ হয়... চকিতে দুজনে সোজা হয়ে বসে।
‘যাও... তোমার কলিগ এসেছে বোধহয়... আমিও উঠি...’ বলে ওঠার চেষ্টা করে অর্নব।
তাড়াতাড়ি করে অর্নবের বুকের ওপরে হাত রাখে পৃথা, ‘না... না... তুমি যাবে না... এখানেই থাকবে... আমার পাশে...’
‘আরে পাগলী... আমি তো অন্য ঘরেই থাকবো...’ বোঝাবার চেষ্টা করে অর্নব।
‘না... তুমি অন্য ঘরে নয়... এই ঘরেই থাকবে, আমার কাছে...’ আবদার করে পৃথা।
ফের বেল বাজে দরজায়।
‘আরে যাও... ও বেচারা বাইরে অপেক্ষা করছে, দরজাটা খুলে দাও...’ বলে ওঠে অর্নব।
‘আগে তুমি বলো, এই খানেই আমার পাশে থাকবে... যাবে না...’ ফের আবদার করে ওঠে পৃথা।
হাসে অর্নব... ‘আচ্ছা বাবা আচ্ছা... আমি তোমার পাশেই থাকবো... হয়েছে? এবার তো যাও, দরজাটা খুলে দাও...’
‘না, শুধু পাশে নয়... সারাটা’খন আমাকে ছুঁয়ে থাকবে... বলো থাকবে...’ আদুরে গলায় বলে পৃথা।
‘আচ্ছা, তাই হবে... আমি তোমাকে ছুঁয়েই থাকবো... হয়েছে? এবার তো দরজাটা খোলো...’ হাসে অর্নব পৃথার ছেলেমানুষী দেখে।
অর্নবের অদৃশ্য গলাটা জড়িয়ে ধরে পৃথা, না দেখা দাড়ি ভরা গালটায় চুমু খেয়ে হেসে বলে, ‘সোনা আমার...’ বলে উঠে যায় দরজার দিকে... হাত তুলে এতক্ষন অর্নবের বুকের ওপরে মাথাটা ঘসার ফলে ক্লিপের থেকে বেরিয়ে আসা অবাধ্য খুলে আসা চুলগুলোকে ঠিক করতে করতে... অর্নব সোফায় বসে অপলক তাকিয়ে থাকে পৃথার হেঁটে যাওয়ার দিকে, তাকিয়ে তাকে নির্নিমেশ গাঢ় কুর্তির আড়াল থেকে সুস্পষ্ট ফুটে ওঠা উত্তাল নিতম্বের দোলদুলিয়মান ছন্দের পানে... আজ দুপুরেই বাথরুমের চান করার সময় যে ভাবে উদ্দাম হয়ে উঠেছিল মেয়েটা, রাতের বিছানায় কি ঝড় তুলবে সেটা ভাবতেই রক্তচাপ বেড়ে ওঠে অর্নবের।
.
.
দরজার ইয়েল লকটা তুলে পাল্লাটা খুলে ধরে পৃথা, চৌকাঠের ওপারে দাঁড়িয়ে সুশান্ত... দেখে স্মিত হাসে পৃথা, মাথাটা একটু নেড়ে সম্বোধন করে, ‘হাই...’
‘হাই...’ প্রত্যুত্তর আসে সুশান্তর কাছে থেকে... এদিক ওদিক উঁকি মারে পৃথা, কাউকে খোঁজে, তারপর সুশান্তের দিকে ফিরে প্রশ্ন করে, ‘মৌসুমী আসে নি?’ বলতে বলতে পাশে সরে দাঁড়ায় সে... জায়গা করে দেয় সুশান্তকে ঘরে আসার।
ঘরের ভেতরে ঢুকলে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ফিরে দাঁড়ায় পৃথা, ওর হাতে একটা লাল গোলাপের বোকে তুলে দিয়ে হেসে বলে সুশান্ত, ‘গেট ওয়েল সুন, পৃথা...’
সুশান্ত হাত থেকে ফুলের বোকেটা নিতে নিতে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে পৃথা, ‘বাব্বা, একেবারে ফুল দিয়ে উইশ করছো... আরে বাবা সামান্য তো জ্বর হয়েছিল, তার জন্য আবার ফুল আনার কি দরকার ছিল... আমার তো আর বিরাট কিছু হয় নি...’
‘না, তা না...’ অপ্রস্তুত হাসে সুশান্ত।
‘মৌসুমী আসলো না?’ জিজ্ঞাসা করতে করতে এগিয়ে যায় ড্রইংরুমের সেন্টার টেবিলের দিকে, সেখানে ফুলের বোকেটা রেখে ফিরে খালি ওয়ান সিটার সোফার দিকে ইঙ্গিত করে বসতে ইশারা করে বলে, ‘তোমাকে যে বললাম, ওকেও সাথে করে আনতে, খুব ভালো লাগতো ও এলে।’
‘না, মানে আনলাম না...’ ইতস্থত করে সুশান্ত... ‘কেন... আমি... আমি একা এসেছি বলে তোমার খারাপ লাগছে?’ সোফায় বসতে বসতে উত্তর দেয়... চোখদুটো যেন বারেক ঘুরে যায় পৃথার মাথা থেকে পা অবধি... চোখটা বার বার ঘুরে যায় কুর্তির খোলা দুটো বোতামের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া মাখনের মত মসৃন ফর্সা চামড়াটার ওপরে... এত কাছ থেকে এই প্রথম পৃথাকে দেখছে তা নয়, আগেও বহুবার পৃথাকে দেখেছে সে এতটাই বা কেন এর থেকেও অনেক বেশি কাছ থেকে, অফিসে, কাজের ফাঁকে, কিন্তু তখন তাদের আশেপাশে কারুর না কারুর উপস্থিতি সর্বদাই ছিল, কিন্তু আজ এই ফাঁকা ফ্ল্যাটে দেখার গুরুত্বটা যেন অনন্য... চটক ভাঙে পৃথার কথায়...
‘দূর... আমি কি সেই বললাম? তুমি আমার কলিগ তার ওপরে এত ভালো বন্ধুত্ব আমাদের, সেখানে খারাপ লাগালাগির কি আছে আবার?’ নিজেও সুশান্তের উল্টো দিকের সোফায় বসতে বসতে বলে পৃথা... সোফায় বসে ডান পায়ের ওপরে বাঁ পা’টাকে তুলে দেয়... তারপর কুর্তির নীচটাকে তুলে ভালো করে ঢেকে রাখে নিজের সুঠাম পা’খানি... দুই পাশটায় মাথা ঘোরায় বারেক... মনে মনে খোঁজে তার প্রিয়তমকে... কাঁধের ওপরে ছোঁয়া পায় অদৃশ্য হাতের পরশের... উজ্জল হয়ে ওঠে পৃথার মুখটা... ঘাড়টাকে সামান্য কাত করে নিজের গাল ছোঁয়ায় কাঁধের ওপরে থাকা হাতের পীঠে।
‘এখন কেমন ফিল করছো? প্রশ্ন করে সুশান্ত... তারও চোখে যেন ধরা পড়ে পৃথার হটাৎ বেড়ে যাওয়া মুখের ঔজ্জল্য... একটু দ্বিধাগ্রস্থ সে... এটা কি তবে তার উপস্থিতির কারনেই? মনে মনে নিজেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে প্রশ্নের ফাঁকে।
‘অ্যাঁ? কি বলছো?’ সতর্ক হয় পৃথা... এই ভাবে বাইরের লোকের সামনে এতটা ছেলেমানুষী করা উচিত নয় তার।
‘বলছি হাউ ইয়ু আর ফিলিং নাও...’ পুনরাবৃত্তি করে প্রশ্নের সুশান্ত।
‘ওহ! ফাইন... নো প্রবলেম অ্যাটঅল... ডঃ বসাকের অসুধ দারুন কাজ করেছে, একটু যে উইকনেস নেই সেটা বলবো না, তবে মাচ বেটার... প্রণবদা খুব ভালো একজন ডক্টরকে নিয়ে এসেছিল...’ গড়গড় করে বলে পৃথা।
‘প্রনবদা? কে?’ ভুরু কোঁচকায় সুশান্ত।
‘কেন? আমাদের প্রণব কর্মকার...’ উত্তর দেয় পৃথা। মনে মনে নিজেকেই দোষে সে... আরো সতর্ক হওয়া উচিত... এই ভাবে দুম করে প্রণবদা বলে ফেলা মোটেই উচিত হয় নি তার...
‘ওহ! উনি আবার তোমার দাদাও হয়ে গেছেন দেখছি...’ একটু স্লেশাত্মক ভঙ্গিতেই বলে ওঠে সুশান্ত।
‘না, মানে যতই হোক, উনি বয়োজ্যেষ্ঠ তো, তাই না? সেই হিসাবেই দাদা বললাম আর কি...’ তাড়াতাড়ি সামলাবার চেষ্টা করে পরিস্থিতির।
‘তা হটাৎ করে ওনাকেই কেন ফোন করতে গেলে সকালে? আমাকেও তো করতে পারতে? আমি কি আসতাম না?’ গলার স্বরে একটু ক্ষোভ প্রকাশ পায় সুশান্তের।
‘আরে তা তুমি আসবে না কেন, আমি কি জানি না যে তোমাকে ডাকলেই তুমি আসবে, সেটা নয়, আসলে প্রণববাবুর ফার্স্ট লেটার পি আর তোমার ফার্স্ট লেটার এস, তাই বোধহয় জ্বরের ঘোরে আমি পি দেখে প্রণববাবুকেই কল করে দিয়েছিলাম, আসলে তখন কাকে কি করছি সেটা তো আর মনে করে করি নি, সেটাই হয়ত হবে, বুঝেছ!’ পরিস্থিতি আবার সামলাবার চেষ্টায় পৃথা।
‘তার পরেও তো ফোন করতে পারতে, আমি না ফোন করলে তো জানতেও পারতাম না যে তোমার জ্বর হয়েছে...’ সুশান্তর গলায় ক্ষোভ যেন একটু একটু করে বৃদ্ধি পায়।
‘আরে তা নয়... তখন আমার কি অবস্থা বলো... জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে তখন... কি করে জানাবো তোমায়?’ এবার পৃথাও একটু বিরক্ত হয় সুশান্তের এই ধরনের আতিসজ্যে... ইচ্ছা করে ভিষন অর্নবের হাতটাকে টেনে নিজের হাতের মুঠোয় ধরতে, কিন্তু নিজেকে সামলায় অনেক কষ্টে... ঘাড় কাত করে ফের গাল ঠেকায় অর্নবের হাতের পীঠে... মনের মধ্যে তৈরী হওয়া বিরক্তিটা যেন নিমেশে উবে যায় অর্নবের পরশ পেয়ে।
‘যাক, মিঃ সহায় কি বললেন? ওনাকে ইনফর্ম করেছিলে তো?’ কথা ঘোরাবার চেষ্টা করে পৃথা, ওদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কথা টেনে আনে প্রসঙ্গে।
‘আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি ঠিকই...’ গলার ক্ষোভ তখন মেখে রয়েছে বোঝা যায়।
‘দেখো... তুমি এটা যে করবে সেটা বলে দিতে হয় না সুশান্ত... তুমি না থাকলে বলো তো এই ভাবে আমি একা এত বড় একটা শহরে থাকতে পারতাম? পারতাম এত সুন্দর একটা ফ্ল্যাট পেতে?’ মনে মনে নিজের কথার আর একটু প্রসারিত করে ভাবে, ‘পারতাম আমার অর্নবকে পেতে? আমার সোনাটাকে...’
‘আমি তো আমার সবটা দিয়ে তোমায় সাহায্য করতে চাই পৃথা, চাই সবসময় তোমার পাশে থাকতে...’ এবার একটু বিগলিত হয়ে ওঠে সুশান্ত... গলার স্বর গাঢ় হয়।
‘তাই তো তোমার দিকে বন্ধুত্বর হাত বাড়িয়ে রেখেছি... তুমি আছো বলেই না আমি নিশ্চিন্তে আছি...’ বলে আর কথা বাড়ায় না পৃথা, বলে ওঠে, ‘যাক... কি খাবে বলো?’
‘না, না, তুমি আবার কি করবে? তোমার শরীর খারাপ... আমার কিছু চাই না...’ বলে ওঠে সুশান্ত।
‘সেকি বললে হয় নাকি? গৃহস্থের অকল্যাণ হবে না? আজ সত্যিই বেশি কিছু অফার করতেও পারবো না, কিন্তু একটু চা তো করে দিতেই পারি... তাই না?... তুমি বরং একটু বোসো... আমি এক্ষুনি দু-কাপ চা করে নিয়ে আসছি...’ বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় পৃথা।
সুশান্তের চোখটা পৃথার আপদমস্তক শরীরের ওপরে একবার বুলিয়ে যায়... ‘না, না, ছেড়ে দাও না, শুধু শুধু আমার জন্য আবার চা করতে যেতে হবে না...’ মনে মনে চায় যতক্ষন অন্তত রয়েছে সে, শুধু পৃথার সামনেই থাকে... ওই চা করতে যাওয়ার সময়টুকুও চোখের সামনে থেকে হারাতে চায় না যেন।
‘আরে এত কিন্তু কিন্তু করছ কেন? আমরাও তো...’ বলতে গিয়ে থমকায় পৃথায়... তারপর তাড়াতাড়ি নিজেকে শুধরে নিয়ে বলে, ‘মানে, আমিও তো চা খাইনি এখনও... তোমার সাথে খাবো বলেই অপেক্ষা করছিলাম... শুধু শুধু নিজের জন্য চা বানাতে ইচ্ছা করে বলো... তুমি খেলে আমারও তাহলে খাওয়া হয়... এই আর কি...’
‘ওহ!... আমার জন্যই চা না খেয়ে অপেক্ষা করছিলে...’ বেশ খুশির ছোয়া লাগে সুশান্তর গলার স্বরে... ‘করো তাহলে...’
‘এই তো... এক্ষুনি হয়ে যাবে... দু কাপ করতে আর কতক্ষন লাগবে... তুমি ততক্ষন টিভিটা দেখো, আমি চা করে নিয়ে আসি...’ বলে রিমোট টিপে দেওয়ালে লাগানো টিভিটা চালিয়ে দিয়ে রিমোটটা এগিয়ে দেয় সুশান্তের হাতে, তারপর এগিয়ে যায় কিচেনের দিকে।
আলো জ্বেলে কিচেনে ঢুকেই ফিক করে হেসে ফেলে পৃথা... আজ একটা ব্লান্ডার করেই ফেলছিল... সেই বা কি করবে, সর্বক্ষন যদি মাথার মধ্যে অর্নব বসে থাকে, তাহলে তার কি দোষ? নিজেই নিজের পক্ষে সাফাই গায় মনে মনে... হাত বাড়ায় তাকের ওপর থেকে কাপ প্লেট নামাবার জন্য।
হিসাব করে তিন কাপের মত চায়ের জল রেডী করে পৃথা... অর্নবও তো বেচারী খায় নি চা এখনও... মনে মনে ভাবে সে... গ্যাসের বার্নার জ্বালিয়ে চায়ের জল চাপাতে চাপাতে... কাবার্ড খুলে চা, চিনি বের করে রাখে পাশে... দুধ তো নেই, র’টিই বানাতে হবে... জোগাড় করে বিস্কিট, প্লেটের ওপরে সাজায় সুন্দর করে।
ড্রইংরুমে বসে খানিক টিভি চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে এদিক সেদিক তাকায় সুশান্ত... একটা অস্বস্থি হয় যেন তার... কেন জানি তার মনে হয় ঘরে সে ছাড়াও আর কারুর উপস্থিতি সে উপলব্ধি করতে পারছে... মনে মনে ভাবে, ‘বলেছিলাম পৃথাকে এই ফ্ল্যাটটা না নিতে... কি সব শুনেছিলাম এই ফ্ল্যাটের ব্যাপারে... কিন্তু এটাই নেবার জন্য এমন জিদ করল... নাঃ... ভালো লাগছে না...’ ভেবে উঠে দাঁড়ায়... তারপর ধীর পায়ে কিচেনের দিকে এগিয়ে যায়।
কিচেনের মধ্যে পৃথা সেই মুহুর্তে পেছন ফিরে চা করতে ব্যস্ত... নিশব্দে কিচেনের দোড়গোড়ায় গিয়ে দাঁড়ায় সুশান্ত... এক মনে তাকিয়ে থাকে পৃথার কর্মব্যস্ত শরীরটার পানে... মাথার ওপরে চুলগুলো চূড়া করে তুলে রাখার কারণে ঘাড়টা সম্পূর্ন উন্মুক্ত... পরণের গাঢ় নীল কুর্তিটা কাঁধ থেকে সুঠাম পীঠের ওপর দিয়ে ঢাল খেয়ে নেমে গিয়েছে নীচের দিকে... কোমরের কাছ থেকে একটা উত্তাল বাঁক নিয়ে বর্তুল ভারী নিতম্বের ওপরে টাইট হয়ে বসে রয়েছে কুর্তির নীচের অংশটা... এতটাই টাইট যে কিচেনের বৈদ্যুতিক আলো পড়ে কুর্তির আড়ালে থাকা পরনের প্যান্টিটার দুটো রেখা একেবারে সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে কুর্তির কাপড়ের ওপর দিয়ে... দেহের প্রতিটা নড়াচড়ায় যেন নিতম্বটা ছলকে ছলকে উঠছে আপন খেয়ালে... মাঝে মধ্যেই কুর্তিটার পাশের কাপড়ের চেরাটা সরে গিয়ে বেরিয়ে দৃশ্যমন্য করে তুলছে পায়ের সাথে চেপে বসে থাকা লেগিংস মোড়া পুরুষ্টু পায়ের থাই, পায়ের গোছ... নিঃশব্দে আর একটু এগিয়ে দাঁড়ায় সুশান্ত... একেবারে পৃথার পেছনে... এতটাই কাছে যে চোখের সামনে পৃথার ঘাড়ের ওপরে হাল্কা রোঁয়ার রেশ চোখে পড়ে তার... কেমন যেন নদীর ধারার মত সেই লোমের সারিগুলো দুইপাশ থেকে গড়িয়ে এসে নেমে গিয়েছে পীঠের অববাহিকা বেয়ে... সোনার সরু হারটা সেই ঘাড়ের ওপরে আরো জৌলুশ বাড়িয়ে তুলেছে যেন... করে তুলেছে পৃথাকে আরো যৌন আবেদনময়ী। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চোখের সামনে উন্মুক্ত থাকা পৃথার ওইটুকু শরীরের ফর্সা অংশটার দিকে... ওই ঘাড়টুকুই যেন তার শরীরের অঘোষিত বিজ্ঞাপন... দেহের প্রতিটা কোণ আর বাঁকের ছবির।
হটাৎ ঘাড় ঘোরায় পৃথা, ঘুরিয়েই এত কাছে সুশান্তকে দেখে চমকে যায়... ‘একি? তুমি?’
চকিতে সুশান্তও কয়’একপা পিছিয়ে দাঁড়ায় পৃথার থেকে খানিক তফাতে... ‘না, মানে একা ভালো লাগছিল না বসে থাকতে, তাই...’ সাফাই দেয় নিজের উপস্থিতির।
‘ওহ! ভালো করেছ উঠে এসে... এই তো, আমারও চা হয়ে গেছে... শুধু ছাঁকলেই হবে...’ ফের ফিরে নিজের কাজে মনোনিবেশ করে পৃথা...
তিনটে কাপে চা ছেঁকে, দুটো কাপ আর বিস্কিটের প্লেট ট্রের ওপরে রেখে হাতে তুলে ঘোরে সে, ‘চলো... ও ঘরেই যাই...’
‘তিন কাপ করলে?’ একটা কাপ কিচেন স্ল্যাবের ওপরে রেখে দেওয়াটা নজর এড়ায় না সুশান্তর।
‘না, ওই করলাম, একেবারে করে রাখলাম, ইচ্ছা হলে পরে একটু গরম করে নেবো’খন...’ বলতে বলতে সুশান্তকে প্রায় সাথে নিয়েই ড্রইংরুমে ফিরে আসে পৃথা... সেই জানে কেন তৃতীয় কাপ সে রেডি করে রেখে এলো... তার সোনাটার জন্য... ড্রইংরুমে ঢুকে শুধু মুখের ইশারা করে কিচেনের দিকে দেখিয়ে দেয় পৃথা... তার মানে যে বোঝার সে ঠিক বুঝে যাবে।