Thread Rating:
  • 2 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic আমার পছন্দের ছোট গল্প গুলো ( অনেক আছে)
#5
গল্পঃ- সারপ্রাইজ। 

লেখাঃ- সাইফুল ইসলাম সজীব


আমার ছাত্রী ক্লাস নাইনে পড়ে। আজকে সে হঠাৎ করে বললো, " স্যার আপনি কি আমাদের বাসায় আসার আগে কান্না করছেন? চোখ দেখে মনে হয় যেন অনেক কান্না করেছেন। " 

আমি লজ্জিত হলাম, নিজেকে সামলে নিয়ে খুব আস্তে করে বললাম " আজকে আমি আসি, কাল বেশি সময় নিয়ে পড়াবো, কিছু মনে করো না। " 

- একটা কথা বলবো স্যার? 

- বলো। 

- আপুকে কি এখনো বলতে পারেননি যে আপনি তাকে ভালোবাসেন? 

- আমি তোমাকে অনেকবার বলেছি যে আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলবে না। শিক্ষক হিসেবে যদি অপছন্দ হয় তাহলে বলে দিবে কিন্তু অসম্মান করবে না। 

- আপনি শুধু শুধু রাগ করেন, আপনি নিজেই কিন্তু তার কথা বলেছেন আমাকে। তাছাড়া মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে সে কি আপনাকে শুধু বন্ধু মনে করে নাকি অন্যকিছু? 

কথা না বাড়িয়ে রূপাদের বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম, আজকে কোনকিছুই ভালো লাগবে না। তাড়াতাড়ি মেসে গিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে তাছাড়া উপায় নেই। চারদিন ধরে আফরিনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, নাম্বার বন্ধ, ফেসবুকে আসে না, বাসার সামনে গিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রই আবার ফিরে আসি কিন্তু দেখা হচ্ছে না। হঠাৎ করে এভাবে কোনদিন সে হারিয়ে যায় নাই বলে বেশি টেনশন হচ্ছে। 

- মেসে ফিরতেই আমার রুমমেট বললো, কিরে তুই কোথায় রে? আফরিন এসেছিল, তোর জন্য অপেক্ষা করছিল তারপর একটা গিফটের প্যাকেট রেখে চলে গেছে। 

আমি তাড়াতাড়ি করে বিছানায় বসে আফরিনের দেওয়া গিফট বের করলাম। প্যাকিং খুলে দেখি সেখানে একটা টকটকে লাল পাঞ্জাবি আর একটা সাদা পাজামা রয়েছে। কিছুক্ষণ পাঞ্জাবির দিকে তাকিয়ে রইলাম, ভাবলাম " আমার জন্য অপেক্ষা করছিল কিন্তু কল করেনি কেন? আবার নতুন পাজামা পাঞ্জাবি দিয়ে যাবার রহস্য কি? " 

প্যাকেটের নিচে একটা লাল চিরকুট। আফরিনের হাতের লেখা সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না, কিন্তু কিসের জন্য এটা? কিছু না ভেবেই পড়তে শুরু করলাম, 

" হুট করেই বাবা বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে তাই যোগাযোগ রাখতে পারি নাই। বিয়ের শপিং করতে করতে আর বাসার সবকিছু গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছি। যেটুকু সময় পাওয়া যায় সেটুকু সময় আবার হবুবরের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তুমি তো আমার খুব ভালো বন্ধু তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও তোমাকে ভুলতে পারবো না। গতকাল শপিং করতে গিয়ে তোমার জন্য পাঞ্জাবি কিনলাম, এটা পরে তুমি আমার বিয়েতে আসবে। তোমার তো একটা পাঞ্জাবি আছে, কিন্তু সেটা পরে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবার দরকার নেই। আগামীকাল দুপুর বেলা "আপ্যায়ন কমিউনিটি সেন্টারে" আমার বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। তুমি কিন্তু সেখানে অবশ্যই যাবে, বিষয় কার্ড দেইনি কারণ কিছু কিছু স্পেশাল মানুষ থাকে যাদেরকে নিমন্ত্রণপত্র দিয়ে আসতে বলতে হয় না। আসবে কিন্তু। "

" আফরিন। " 

চিরকুট পড়ে সমস্ত শরীর স্তব্ধ হয়ে গেল, এতদিন ধরে যাকে ভালোবাসলাম সে কালকে অন্যের হয়ে যাবে? কিন্তু তার দোষ কোথায়, আমি তো তাকে কোনদিন ভালোবাসি বলিনি। অনেকবার বলবো বলেও বলা হয়নি, ভেবেছিলাম সেও আমাকে ভালোবাসে কারণ আফরিনের কোন বয়ফ্রেন্ড ছিল না। 

পরিচয় হয়েছিল বিকাশের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে, সেই থেকে শুরু। সেদিন দুজনেই যখন সিরিয়াল ধরে অপেক্ষা করছিলাম তখন বারবার আমি তার দিকে তাকিয়েছি। মিনিট পাঁচেক পরে সেও বুঝতে পেরেছে, তবুও আমি তাকাতাম আর তার চোখে চোখ পড়তো। এভাবেই প্রায় আধা ঘণ্টা পরে সে সিরিয়াল পেল, নিজের কাজ শেষ করে বের হয়ে গেল আমি তখনও সিরিয়াল ধরে অপেক্ষা করছি, সে চলে যাবার পরে আফসোস করলাম ইস যদি পিছনে পিছনে যেতাম? পরক্ষণে চিন্তা করলাম " পিছনে গিয়ে কি হতো? " 

আমার বের হতে আরও কুড়ি মিনিট লাগলো, কিন্তু আশ্চর্য হলাম কারণ নিচে নেমেই দেখি সে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই সে আমার সামনে এসে বললো, 

- কেমন আছেন? 

আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম, তারপর আস্তে করে বললাম, 

- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন? 

- ভালো, ভিতরে বসে তখন আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছিলেন? 

- কিছু না। 

- তাহলে শুধু শুধু কেউ কারো দিকে তাকিয়ে রয় নাকি? 

- হ্যাঁ আমি তাকিয়ে থাকি। 

- কেন? 

- জানি না। 

- তারমানে মেয়ে দেখলেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে তাই না? 

- না তাই না, আপনার সামনের চুলগুলো দেখে ভালো লেগেছে। 

- হাহাহা, যাবেন কোথায়? 

- খালিশপুর, পৌরসভার মোড়। 

- বাহহ, আমিও মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পর্যন্ত যাবো তাহলে চলেন একসঙ্গে যাওয়া যাক। 

এটাই সেই পরিচয়, তারপর থেকে পরিচিত হতে হতে বন্ধু আর আপনি থেকে তুমি। আমার মেসের এক বড়ভাই সবসময় বলতেন " ভালো একটা মেয়ে বন্ধু থাকলে নাকি গার্লফ্রেন্ডের দরকার হয় না। কিন্তু ভয়ের বিষয় হচ্ছে, বন্ধু থেকে একসময় প্রেম হয়ে যাবে, তখন যদি সেই প্রেম পূর্নতা না পায় তাহলে তার বেদনা ভয়ঙ্কর। " 

হুমায়ুন আহমেদ বলে গেছেন " একটা ছেলে আর একটা মেয়ে অবশ্যই বন্ধু হতে পারে কিন্তু তারা একসময় প্রেমে পড়বেই। হয়তো সারাজীবনের জন্য নয়তো ক্ষনিকের জন্য, হয়তো দুজনেই বা যেকোনো একজন। কিন্তু প্রেমে তারা পড়বেই। " 

(২)

রাত আটটা বেজে গেছে, আমি আফরিনদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। নাম্বার বন্ধ না হলে কল দিয়ে বের হতে বলতাম কিন্তু তাকে কিছু বলার উপায় নেই। বাড়িটা মরিচ বাতি জ্বালিয়ে সাজানো হয়েছে, সকাল বেলা যখন আসলাম তখন তো ছিল না। মনে হয় তার পরেই সবকিছু লাগানো হয়েছে, রাস্তা দিয়ে যে যাচ্ছে সেই বুঝতে পারছে এটা একটা বিয়ে বাড়ি। রাস্তার পাশে ছোট একটা দোকান আছে, সেখানে একটি মহিলা শুধু চা সিগারেট বিক্রি করে। আশেপাশে আর কোন দোকান নেই, তবে এখানে কাস্টমার ও কম। আমি সেখানে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম 

- আন্টি এ বাড়িতে কারো বিয়ে হচ্ছে নাকি? " 

- হ বাজান, আফরিনের বিয়ে। 

- আমি চুপ করে রইলাম। 

আধা ঘণ্টা পরে হঠাৎ মোবাইলে কল এলো, বের করে দেখি আফরিন কল করেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে বললাম, 

- কেমন আছো? 

- ভালো আছি, কিন্তু তুমি আমাদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছ কেন? তোমার রুমমেট তোমাকে কিছু দেয় নাই? 

- হ্যাঁ দিয়েছে আর সেজন্যই তোমার কাছে ছুটে এসেছি, তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে। 

- কি কথা? আর যদি কিছু বলার থাকে তাহলে সেটা পরে বলিও, কারণ বাড়ি ভর্তি মেহমান আছে আর তারা সবাই কি ভাববে? 

- পরে বলতে পারবো না, আজকেই বলতে হবে নাহলে আর কোনদিন বলা হবে না। 

- বাড়ি ভর্তি মেহমান সজীব, আমি এখন কীভাবে তোমার সঙ্গে কথা বলবো। আচ্ছা ঠিক আছে, যা বলার তাড়াতাড়ি বলো আমি শুনছি। 

- মোবাইলে না, তুমি কি একটু আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবে? সামনাসামনি বলতে চাই। 

- পাগল হয়ে গেছ? অসুস্থ তুমি? 

- প্লিজ আফরিন প্লিজ প্লিজ প্লিজ। 

- আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি বাসার মধ্যে ঢুকে সোজা ছাদে উঠে যাবে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে তুমি আমার বন্ধু সেটা বলবে। আমি ছাদে যাচ্ছি। 

ডিসেম্বর মাসের কনকনে ঠান্ডা, বাসা থেকে বের হবার সময় শীতের কোন কাপড় আনিনি। পরনে যে গেঞ্জি ছিল সেটা পরেই এসেছি কিন্তু ছাদে দাঁড়িয়ে শীতে কাঁপুনি উঠে গেছে। এদিকে মনের মধ্যে ভয়ও লাগছে কারণ এভাবে কারো সঙ্গে কথা বা দেখা করার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। 

- শীতের কাপড় কোই? 

চমকে উঠলাম, হঠাৎ করে আফরিন কথা বলাতে ধাক্কা খেয়ে পিছনে ফিরে তাকালাম। 

- কি বলছি তোমাকে? শীতের কাপড় কোই? 

- মনে ছিল না, তাড়াহুড়ো করে বের হলাম নাহলে তো নিয়ে আসতাম। 

আফরিন তার গায়ের চাদরটা খুলে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, 

- ধরো। 

- কিন্তু তুমি? 

- আমার সুয়েটার আছে গায়ে, আর তাড়াতাড়ি বলো কি বলবে তুমি? 

আমি চাদর জড়িয়ে আবছা আলোয় চকচকে আফরিনের চোখে তাকিয়ে রইলাম। 

- কি হয়েছে বলো না কেন? 

- তোমার কি সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে যাবে? 

- আজব মানুষ তুমি, বাড়ির পরিবেশ দেখে কি বুঝতে পারো না এটা বিয়ে বাড়ি? 

- বুঝতে পারছি কিন্তু মনকে বোঝাতে পারি না। 

- মানে? 

- আমি তোমাকে ভালোবাসি আফরিন, বিশ্বাস করো প্রচন্ড ভালোবাসি। কিন্তু কোনদিন বলিনি কারণ আমাদের সম্পর্কটা শুধু বন্ধুর মতো ছিল না তাই এটাকে অনেক কিছু ভাবতাম। 

- সজীব...! আগামীকাল আমার বিয়ে আর তুমি এখন আমাকে ভালোবাসার কথা বল? তোমার কি সামান্য জ্ঞান নেই? 

- বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ছাড়া হয়তো বাঁচতে পারবো ঠিকই কিন্তু ভালো থাকতে পারবো না কোনদিন। আমার জীবনের দৈনিক প্রতিটি কাজে তুমি মিশে গেছ, সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত তুমি মিশে আছ। 

- একজন ভালো বন্ধু হিসেবে আমার যতটা করা দরকার আমি করেছি সজীব, কিন্তু সেটা তোমার কাছে অন্যরকম অনুভূতি কেন? তুমি একজন অগোছালো মানুষ ছিলে তোমাকে সেই জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছি। তোমার জীবন এমন করে সাজিয়ে দিয়েছি যাতে অন্য দশটা ছেলে তোমাকে দেখে তোমার মতো চলতে চায়। 

- তুমি চলে গেলে আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে, আফরিন প্লিজ তুমি আমার জীবনে চলে আসো। তুমি ছাড়া আমাকে কেউ এমন করে বুঝবে না, তুমি তো সবকিছু বুঝো। 

- সজীব, বিয়ের সবকিছুই ঠিক আর মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনের এখানে সম্মান জড়িত। তোমার হাত ধরে এই নিস্তব্ধ রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে পারি কিন্তু সেটা হবে স্বার্থপরতা। 

- আমি চুপচাপ। 

- তুমি আমাকে ভালোবাসো তাহলে আগে বলনি কেন? আমি তোমাকে নিয়ে নতুন করে চিন্তা করে দেখতাম, বাবার কাছে বলতাম। 

- আমি চুপচাপ। 

- এখন এসব পাগলের মতো কথা বন্ধ করে তুমি চুপচাপ মেসে গিয়ে ঘুমাও। দুপুর বেলা পাঞ্জাবি পাজামা পরে বিয়ের অনুষ্ঠানে এসো, আমার সঙ্গে তখন দেখা হবে। 

- আমি চুপচাপ কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পরছে। 

- আমি তাহলে গেলাম, প্রচুর লোকজন বাড়িতে, কে কখন ছাদে আসবে তখন আবার আরেকটা কেলেঙ্কারি। 

আফরিন হাঁটা শুরু করেছে আর আমি তাকে পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর তাকে ঘুরিয়ে সামনে থেকে বুকের সঙ্গে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম, 

- তুমি একটা বার ভেবে দেখ। 

মিনিট পাঁচেক সেভাবেই জড়িয়ে ধরে ছিলাম, তারপর আফরিন আস্তে আস্তে আমাকে ছাড়িয়ে দিয়ে বললো, 

- নিজেকে শক্ত করো আর আমার দিকটা একটু ভেবে দেখো, জড়িয়ে ধরছো তাতে কিছু মনে করি নাই। এবার ভদ্র ছেলের মতো মেসে গিয়ে খেয়ে তারপর ঘুমাও, মেসে কি রান্না হয়েছে? 
নাকি আমি খাবার দিয়ে দেবো? 

- থাক দরকার নেই। 

- বাড়িতে মেহমান তাই গরুর মাংস আছে, তুমি বরং অপেক্ষা করো আমি একটা বাটিতে করে নিয়ে আসি। বিয়ের পরে তো আর কোনদিন এই আফরিনের খাবার খেতে পারবা না। আজকেই শেষ খাবার নিয়ে যাও, কেমন? 

আমি চোখ মুছে দাঁড়িয়ে রইলাম, আফরিন নিচে চলে গেছে। কিছুক্ষণ পরই ছাদে এসে আমার হাতে বাটি ধরিয়ে দিয়ে বললো, 

- এই নিয়ে কতটা বাটি তোমার কাছে গেল তার হিসাব নেই। তুমি কোনদিনই বাটি ফেরত দাও না তাই সবসময় আমাকে বাটি কিনতে হয়। 

- কিন্তু খালি বাটি ফেরত দিতে লজ্জা করে তাই দেওয়া হয় আফরিন। 

- সমস্যা নেই, এখন তুমি যাও তাহলে আর চাদর ভালো করে জড়িয়ে নাও নাহলে ঠান্ডা লাগবে। 

(৩) 

কিছুতেই ঘুম পাচ্ছে না। 
রাত পোহালে প্রিয় মানুষটা অন্য কারো সঙ্গে নতুন করে জীবন শুরু করবে। খুব সকালে উঠে কেউ কল দিয়ে ফজরের নামাজ পড়তে বলবে না, কেউ আর বলবে না যে নামাজ পড়ে পাঞ্জাবি টুপি পড়া অবস্থায় আমার বাসার সামনে আসো, সকাল বেলা হাঁটা খুব ভালো। মেসের মধ্যে খাবার রান্না না হলে কেউ আর বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসে আমাকে দেবে না। শপিংয়ে গেলে আর সে হয়তো আমাকে সঙ্গে নেবার জন্য খুঁজবে না। তার মন খারাপ হলে কোনদিন বলবে না " চলো আজকে রূপসা সেতু থেকে ঘুরে আসি "। 

আমি গ্রামের বাড়িতে গেলে বারবার কল দিয়ে কেউ কবে ফিরবো সেটা জিজ্ঞেস করবে না। সে বলবে না তোমাকে বড্ড মিস করি তুমি তাড়াতাড়ি শহরে আসো। নাকি গ্রামে গিয়ে চাচাতো মামাতো বোনের প্রেমে পড়ছো? খবরদার খবরদার তাহলে কিন্তু একদম ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবো বলে দিলাম। 

কখনো ভাবিনি প্রতিদিন নিয়ম করে এসব যত্ন একদিন বদলে যাবে। কিন্তু গত চারদিন ধরে যখন সে যোগাযোগ করে নাই তখনই বুঝতে পেরেছি যে আমার ভাবনার মধ্যে কোথাও একটা বিশাল ভুল হয়ে গেছে। নাহলে যিনি চারদিন ধরে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সে আগামী চার মাস, চার বছর কিংবা চার যুগ অনায়সে পার করবে। 

জীবন নিয়ে আমি গভীর ভাবনার মধ্যে পরলাম কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে। বহুদূর এসে যখন নিজের গন্তব্য ভিন্ন জানতে পারি তখন এতটা পথ হতাশায় ডোবাচ্ছে। তবুও মনের মধ্যে একটাই প্রশান্তি আসে কারণ তাকে বিয়ের আগেই বলতে পেরেছি। কিছু কিছু মানুষ জীবনে চাইলে তাকে পাওয়া যায় না, পাওয়ার জন্য ভাগ্য দরকার।

বেশি কিছু দরকার নেই, জীবনে একটা গোছানো মানুষ দরকার, যার সঙ্গে মন খারাপের গল্প মুখ দিয়ে বলতে হবে না। অভিনয় করে গাধার মত
হাসতে থাকলেও যে ঠিকই বুঝে ফেলবে হাসিটা মিথ্যা। আমার সবার স্বপ্ন ও ইচ্ছে গুলো বড্ড বেশি অবাধ্য, ঘুম এলেও মাঝে মাঝে ঘুমাতে ইচ্ছে করে না, ভাবতে ভালো লাগে। 

এমন একটা জীবন সঙ্গী দরকার, যার একটু শীতল কণ্ঠ শোনার জন্য তোমার হৃদয়ে বারবার সেতার বাজায়। তার স্পর্শে তোমার শরীরে নাড়া দেয় কোন এক ফাগুনের প্রথম ছোঁয়া। 

প্রিয় সেই মানুষের অপেক্ষায় হয়তো আমি মন খারাপ করে অপেক্ষা করছি পৃথিবীর কোন এক নির্জন প্রান্তে। 
নিষ্ঠুর পৃথিবী কারো "দরকার" বুঝে না, মনের আবেগ বুঝতে চায় না। যদি বুঝত তাহলে সত্যি যারা ভালোবাসে তারা কখনো হতাশ হয়ে চোখের পানি মুছে রাত্রি কাটাতো না। 

(৪) 

মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল, ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি আফরিন কল করেছে। রিসিভ করার আগে সময় দেখে অবাক হলাম কারণ দুপুর সাড়ে বারোটা পেরিয়ে গেছে। 

- কোথায় তুমি? 

- ঘুমাচ্ছি। 

- কিহহহ? মেহমানরা সবাই আসতে শুরু করেছে আর তুমি এখনো ঘুমে? তাড়াতাড়ি উঠে গোসল করে পাজামা পাঞ্জাবি পরে কুড়ি মিনিটের মধ্যে কমিউনিটি সেন্টারে আসবা। নাহলে কিন্তু জীবনে আর কোনদিন এই আফরিনের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না তুমি। 

কল কেটে গেল, গতকাল রাতে সারারাত ঘুমাতে পারি নাই তাই সকাল বেলা ফজরের অনেক পরে ঘুমিয়েছি। বিছানা থেকে উঠে গোসল করতে গেলাম, কিছুক্ষণ কাঁদলাম। তারপর গোসল করে এসে রুমে প্রবেশ করে তৈরি হলাম। মেসের সবাই প্রেমিকার বিয়ে খেতে যাচ্ছি বলে ঠাট্টা করতে লাগলো, জীবন বড়ো রহস্যময়। 

কুড়ি মিনিটের পরিবর্তে বত্রিশ মিনিটে কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত হলাম। আমার সঙ্গে কার্ড নেই, কেউ জিজ্ঞেস করলে আফরিনের বন্ধু বলে যদি পরিচয় দেই তাতেই হবে। কিছুক্ষণ চারিদিকে ঘুরলাম, বরকনে বসার যায়গা এখনো ফাঁকা হয়ে আছে। সেখানে বড় বড় করে লেখা আছে শুভ বিবাহ " আফরিন তামান্না + জুনায়েদ ফয়সাল "

হঠাৎ করে পিছন থেকে আফরিন বলে উঠলো, 

- বাহহ অসাধারণ লাগছে। 

আমি পিছনে ফিরে তাকালাম, আফরিনকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। তার পরনে লাল একটা শাড়ি এবং সেটা আমার পাঞ্জাবির সঙ্গে ম্যাচিং করা কালার। সাধারণত কাপল ড্রেস এভাবে দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু আমরা কি কাপল? 

- অবাক হচ্ছ? 

- হ্যাঁ। 

- ভাবছো আমার বিয়ে আর আমি তোমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলি তাও আবার কনের সাজে সজ্জিত না হয়ে। 

- হ্যাঁ। 

- তোমার কি মনে আছে, আমাদের বাসার যিনি বাড়িওয়ালা তার মেয়ের নামও আফরিন? 

- চমকে গেলাম, তবুও বললাম হ্যাঁ। 

- আজকে সেই আফরিন আপুর বিয়ে, আর তুমি আমি সবাই এখানকার মেহমান। 

- মানে? 

- খুবই সহজ, তোমার কাছ থেকে ভালোবাসার কথা শোনার জন্য সপ্তাহ খানিক ধরে আমার দীর্ঘ পরিকল্পনা। ক্ষমা করে দাও প্লিজ, গতকাল রাতে তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি। আমি কিন্তু সত্যি সত্যি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নাই কিন্তু আজকের এই মুহুর্ত দেখার বড্ড লোভ ছিল। 

- তাহলে আমি তোমাকে পাচ্ছি? 

- পাচ্ছি মানে? একটা বছর ধরে যে মানুষটাকে একটু একটু করে পুরোটাই নিজের মতো সাজিয়ে নিলাম সেই মানুষটাকে আরেকজনের জন্য রেখে আমি কোথায় যাবো? 

- জানি না। 

- তুমি বড্ড বোকা গো সজীব মিয়া, তোমার প্রতি আমার অনেক অভিমান গো। আচ্ছা বাদ দাও তো এখন চলো তোমার সঙ্গে সবকিছু ঘুরে দেখবো। 

- চলো। 

- চারিদিকে অনেক ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তুমি আমার হাত ধরবে নাকি আমি তোমার হাত ধরবো, বলে দাও। তাহলে সবাই বুঝতে পেরে যাবে যে আমার সিট ফাঁকা নেই হিহিহিহি। 

- তোমার আত্মীয় স্বজনরা আছে তারপর নিশ্চয়ই বাসার অনেকেই আছে, যদি কেউ দেখে? 

- আমি কি তোমার মতো নাকি?

- মানে? 

- এই অনুষ্ঠানে আমার যত পরিচিত মানুষ আছে তারা সবাই জানে যে " আফরিনের একটা ভিতু ও বোকাসোকা বয়ফ্রেন্ড আছে, সেই মানুষটার নাম সজীব। বোকাসোকা হলেও সে অনেক ভালো, যার সঙ্গে চোখ বন্ধ করে আফরিন বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেবে। " 

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, আফরিনের চোখের মধ্যে নিজের চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চারিদিকে কত মানুষ কিন্তু তবুও কোন খেয়াল নেই আমার, সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যে সারারাত ঘুমাতে পারি নাই বলে দিনের বেলা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি। 

কিন্তু না, এটা বাস্তব। আফরিন আমার হাত ধরে হাঁটতে লাগলো, একটু পরে একটা লোকের সমানে গিয়ে বললো, 

- বাবা ওর নাম সজীব, যে লোকটা তোমার এই পাগলি মেয়েকে মনে মনে অনেক ভালোবাসে সেই সজীব। 

আমি আরও বেশি অবাক হয়ে গেলাম, আঙ্কেল আমার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে আবার গল্প করতে লাগলো। আফরিন তখন ও থামছে না, ঘুরে ঘুরে পরিচিত অনেকের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। 

- হঠাৎ করে বললাম, আমাকে গতকাল রাতে যদি বলতে তাহলে কি হতো? 

- হিহিহি, তাহলে যে তুমি সারারাত জেগে ছিলে সেই জেগে থাকা হতো না। আমি তো তোমার সঙ্গে খেতে বসবো তারপর তুমি খাবার সময় ঘুমে যবুথবু হবে আর আমি তোমার প্লেট থেকে মাংস চুরি করবো। 

বরের গাড়ি প্রবেশ করলো, সবাই সেদিকে চলে গেল, আফরিন তখন আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো, 

" শুনছো, আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে এমনি করে তুমি একদিন আমাকে নিতে আসবে। তারপর আমিও তিনবার কবুল বলে তোমার সঙ্গে চলে যাবো, আর পাশে রবো জীবনের শেষ সূর্যাস্ত দেখার জন্য। " 

- আমি বললাম, তোমার কাছ থেকে পাওয়া অনেক কিছুর মধ্যে তুমি আজ যেটা দিলে সেটা তোমার তরফ থেকে " সারপ্রাইজ "। 

সমাপ্ত। 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 4 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আমার পছন্দের ছোট গল্প গুলো ( অনেক আছে) - by Bangla Golpo - 07-03-2025, 09:54 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)