04-03-2025, 11:33 PM
সপ্তম অধ্যায়: নিস্তব্ধতার মাঝে ফিসফিসানি
ভোরের প্রথম আলো যখন ঘরে প্রবেশ করল, শুভর চোখ তখনও খোলা। রাতের ঘটনাগুলো তার মাথার ভেতরে একটা দুঃস্বপ্নের মতো ঘুরপাক খাচ্ছিল। আকরাম… সে কেন ওভাবে মায়ের ঘরের দরজায় হাত রেখেছিল? শুভ নিশ্চিত, সে যা দেখেছে তা কোনো স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো—যখন সে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিয়েছিল, তখন করিডোর ফাঁকা ছিল!
তাহলে আকরাম কোথায় গেল?
শুভ এক ঝটকায় উঠে বসলো। মনে হচ্ছিল, রাতের আতঙ্ক যেন এখনও তার সাথে লেপ্টে আছে। বাইরে তখন সকাল নামছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো—চারপাশের পরিবেশ কেমন যেন ভারী লাগছিল। সাধারণত সকালে গ্রামের চারপাশে পাখির কিচিরমিচির শোনা যায়, কিন্তু আজ যেন সবকিছু স্তব্ধ!
নিস্তব্ধতা…
একটা চাপা অনুভূতি শুভর বুকের ভেতর দপদপ করছে।
প্রকৃতির অস্বাভাবিকতা
শুভ জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালো। আশেপাশে গাছপালার ডাল নড়ছে না, বাতাস নেই, অথচ একটা অদ্ভুত গন্ধ বাতাসে ভাসছে।
হঠাৎ, কোথাও থেকে একটা কুকুরের কর্কশ চিৎকার শোনা গেল!
শুভ গা শিউরে উঠল। সেটা একটা সাধারণ ডাক ছিল না, বরং কেমন যেন আতঙ্কে ভরা, যেন কোনো ভয়ানক কিছু দেখে সে ভয় পেয়ে গেছে।
আর তখনই শুভ শুনতে পেল…
গাছের ডালে বসে থাকা কয়েকটা কাক একসাথে বিকটভাবে ডাকা শুরু করল।
কাঁ… কাঁ… কাঁ…
তাদের স্বর স্বাভাবিক ছিল না, বরং যেন কোনো ভৌতিক শিসের মতো শোনাচ্ছিল।
শুভর মনে হলো, তারা যেন ওকে কিছু বলতে চাইছে!
ঠিক তখনই পাশের ঘরে একটা শব্দ হলো।
“উফফ…!”
তার মা!
মীনার অস্বস্তি ও আতঙ্ক
শুভ ছুটে গেল মায়ের ঘরের দিকে। দরজা হালকা খোলা ছিল। সে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখল—মীনা খাটের পাশে বসে আছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
— “মা, তুমি ঠিক আছো?” শুভ ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে ঢুকল।
মীনা ধীর কণ্ঠে বলল, “আমি… ঠিক নেই, শুভ। আমার কেমন যেন লাগছে।”
— “কেন? কী হয়েছে?”
মীনা চোখ বন্ধ করে বলল, “রাতে… আমি ঘুমাতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল কেউ আমার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমার বুক ধড়ফড় করছিল… এমনকি মনে হচ্ছিল, আমার গায়ে কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে!”
শুভর শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। সে নিশ্চিত, এটা কেবল মায়ের কল্পনা নয়।
— “তুমি কারো ছায়া দেখেছ?” শুভ ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করল।
মীনা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর বলল, “না, ছায়া না… কিন্তু একটা অদ্ভুত গন্ধ এসেছিল! কেমন যেন পচা জল আর ঘামের গন্ধ…”
শুভ হতভম্ব হয়ে গেল। ঠিক একই গন্ধ সে আগের রাতে অনুভব করেছিল!
— “তুমি বাবা কে বলেছ?”
— “না! বললে সে আমায় পাগল ভাববে।” মীনার গলা কাঁপছিল। “তোর বাবা এসব বিশ্বাস করে না, শুভ… সে এসব শুনতে চাইবে না।”
শুভ চুপ করে গেল। সে জানে, বাবা এসব পাত্তা দেবে না। কিন্তু মায়ের ভয়টা এখন সত্যি মনে হচ্ছে।
এটা কি আকরাম? নাকি কুয়োর অভিশাপই ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে?
আকরামের অদ্ভুত আচরণ
সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই একসাথে বসেছিল। রঞ্জিত স্বাভাবিকভাবে খবরের কাগজ পড়ছিল, কিন্তু শুভ লক্ষ্য করল, মায়ের মুখে একটা স্পষ্ট অস্বস্তির ছাপ।
আর আকরাম?
সে খুব স্বাভাবিকভাবেই সব কাজ করছে, কিন্তু মাঝে মাঝে শুভর চোখে পড়ল—সে মায়ের দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে, যেন তার শরীরের প্রতিটি বাঁক চুপচাপ মেপে নিচ্ছে!
শুভর মুঠি শক্ত হয়ে গেল। এই লোকটা দিন দিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে!
ঠিক তখনই আকরাম কথা বলল,
— “বৌদি, তোমার শরীরটা কেমন যেন দেখাচ্ছে। ঠিক আছো তো?”
শুভ কেঁপে উঠল। আকরামের গলায় এক অদ্ভুত মোলায়েম ভাব, কিন্তু তার চোখ… সেই ভয়ংকর লালচে দৃষ্টি, যেখানে কেবল একটাই অনুভূতি জ্বলজ্বল করছে—একটা বিকৃত লালসা!
মীনা এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল, তারপর মাথা নিচু করে বলল, “হ্যাঁ, ঠিক আছি।”
আকরাম এক চিলতে হাসি দিল, তারপর বলল,
— “তোমার জন্য বিশেষ পানীয় বানিয়েছি, একবার খেয়ে দেখো… শরীর ঠিক হয়ে যাবে।”
মীনা ধাক্কা খাওয়ার মতো চমকে উঠল।
শুভর মনে হলো, এটা কোনো সাধারণ কেয়ারিং কথা নয়, বরং একটা গভীর ইঙ্গিত।
রঞ্জিত কাগজ সরিয়ে বলল,
— “আহ, এত কিছু লাগবে না! বউ একটু দুর্বল লাগছে, বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।”
আকরাম হাসল।
কিন্তু সেই হাসিতে শুভর গা ছমছম করে উঠল।
এই বাড়িতে কিছু একটা খুব ভয়ংকর ঘটতে চলেছে… এবং সেটা হয়তো আজ রাতেই!
(চলবে…)
ভোরের প্রথম আলো যখন ঘরে প্রবেশ করল, শুভর চোখ তখনও খোলা। রাতের ঘটনাগুলো তার মাথার ভেতরে একটা দুঃস্বপ্নের মতো ঘুরপাক খাচ্ছিল। আকরাম… সে কেন ওভাবে মায়ের ঘরের দরজায় হাত রেখেছিল? শুভ নিশ্চিত, সে যা দেখেছে তা কোনো স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো—যখন সে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিয়েছিল, তখন করিডোর ফাঁকা ছিল!
তাহলে আকরাম কোথায় গেল?
শুভ এক ঝটকায় উঠে বসলো। মনে হচ্ছিল, রাতের আতঙ্ক যেন এখনও তার সাথে লেপ্টে আছে। বাইরে তখন সকাল নামছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো—চারপাশের পরিবেশ কেমন যেন ভারী লাগছিল। সাধারণত সকালে গ্রামের চারপাশে পাখির কিচিরমিচির শোনা যায়, কিন্তু আজ যেন সবকিছু স্তব্ধ!
নিস্তব্ধতা…
একটা চাপা অনুভূতি শুভর বুকের ভেতর দপদপ করছে।
প্রকৃতির অস্বাভাবিকতা
শুভ জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালো। আশেপাশে গাছপালার ডাল নড়ছে না, বাতাস নেই, অথচ একটা অদ্ভুত গন্ধ বাতাসে ভাসছে।
হঠাৎ, কোথাও থেকে একটা কুকুরের কর্কশ চিৎকার শোনা গেল!
শুভ গা শিউরে উঠল। সেটা একটা সাধারণ ডাক ছিল না, বরং কেমন যেন আতঙ্কে ভরা, যেন কোনো ভয়ানক কিছু দেখে সে ভয় পেয়ে গেছে।
আর তখনই শুভ শুনতে পেল…
গাছের ডালে বসে থাকা কয়েকটা কাক একসাথে বিকটভাবে ডাকা শুরু করল।
কাঁ… কাঁ… কাঁ…
তাদের স্বর স্বাভাবিক ছিল না, বরং যেন কোনো ভৌতিক শিসের মতো শোনাচ্ছিল।
শুভর মনে হলো, তারা যেন ওকে কিছু বলতে চাইছে!
ঠিক তখনই পাশের ঘরে একটা শব্দ হলো।
“উফফ…!”
তার মা!
মীনার অস্বস্তি ও আতঙ্ক
শুভ ছুটে গেল মায়ের ঘরের দিকে। দরজা হালকা খোলা ছিল। সে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখল—মীনা খাটের পাশে বসে আছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
— “মা, তুমি ঠিক আছো?” শুভ ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে ঢুকল।
মীনা ধীর কণ্ঠে বলল, “আমি… ঠিক নেই, শুভ। আমার কেমন যেন লাগছে।”
— “কেন? কী হয়েছে?”
মীনা চোখ বন্ধ করে বলল, “রাতে… আমি ঘুমাতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল কেউ আমার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমার বুক ধড়ফড় করছিল… এমনকি মনে হচ্ছিল, আমার গায়ে কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে!”
শুভর শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। সে নিশ্চিত, এটা কেবল মায়ের কল্পনা নয়।
— “তুমি কারো ছায়া দেখেছ?” শুভ ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করল।
মীনা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর বলল, “না, ছায়া না… কিন্তু একটা অদ্ভুত গন্ধ এসেছিল! কেমন যেন পচা জল আর ঘামের গন্ধ…”
শুভ হতভম্ব হয়ে গেল। ঠিক একই গন্ধ সে আগের রাতে অনুভব করেছিল!
— “তুমি বাবা কে বলেছ?”
— “না! বললে সে আমায় পাগল ভাববে।” মীনার গলা কাঁপছিল। “তোর বাবা এসব বিশ্বাস করে না, শুভ… সে এসব শুনতে চাইবে না।”
শুভ চুপ করে গেল। সে জানে, বাবা এসব পাত্তা দেবে না। কিন্তু মায়ের ভয়টা এখন সত্যি মনে হচ্ছে।
এটা কি আকরাম? নাকি কুয়োর অভিশাপই ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে?
আকরামের অদ্ভুত আচরণ
সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই একসাথে বসেছিল। রঞ্জিত স্বাভাবিকভাবে খবরের কাগজ পড়ছিল, কিন্তু শুভ লক্ষ্য করল, মায়ের মুখে একটা স্পষ্ট অস্বস্তির ছাপ।
আর আকরাম?
সে খুব স্বাভাবিকভাবেই সব কাজ করছে, কিন্তু মাঝে মাঝে শুভর চোখে পড়ল—সে মায়ের দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে, যেন তার শরীরের প্রতিটি বাঁক চুপচাপ মেপে নিচ্ছে!
শুভর মুঠি শক্ত হয়ে গেল। এই লোকটা দিন দিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে!
ঠিক তখনই আকরাম কথা বলল,
— “বৌদি, তোমার শরীরটা কেমন যেন দেখাচ্ছে। ঠিক আছো তো?”
শুভ কেঁপে উঠল। আকরামের গলায় এক অদ্ভুত মোলায়েম ভাব, কিন্তু তার চোখ… সেই ভয়ংকর লালচে দৃষ্টি, যেখানে কেবল একটাই অনুভূতি জ্বলজ্বল করছে—একটা বিকৃত লালসা!
মীনা এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল, তারপর মাথা নিচু করে বলল, “হ্যাঁ, ঠিক আছি।”
আকরাম এক চিলতে হাসি দিল, তারপর বলল,
— “তোমার জন্য বিশেষ পানীয় বানিয়েছি, একবার খেয়ে দেখো… শরীর ঠিক হয়ে যাবে।”
মীনা ধাক্কা খাওয়ার মতো চমকে উঠল।
শুভর মনে হলো, এটা কোনো সাধারণ কেয়ারিং কথা নয়, বরং একটা গভীর ইঙ্গিত।
রঞ্জিত কাগজ সরিয়ে বলল,
— “আহ, এত কিছু লাগবে না! বউ একটু দুর্বল লাগছে, বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।”
আকরাম হাসল।
কিন্তু সেই হাসিতে শুভর গা ছমছম করে উঠল।
এই বাড়িতে কিছু একটা খুব ভয়ংকর ঘটতে চলেছে… এবং সেটা হয়তো আজ রাতেই!
(চলবে…)