24-02-2025, 06:55 AM
পর্ব ১২
জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে স্কু'লের ভেতর একটা সরু গলি দিয়ে পথ দেখাতে দেখাতে স্নানাগারের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। স্নানাগারটি স্কু'লের একদম পিছনে ছিল। স্কু'লের টিচার্সদের ব্যবহারের জন্য। কিন্তু কেউ সেভাবে ব্যবহার করতো না, সেটা সেই জায়গাটাকে দেখলেই বোঝা যায়। ঢালু টিনের ছাদ, খানিক ভগ্ন দরজা দেওয়া এক ছোট্ট কুটিরের মতো।
জাহাঙ্গীর আস্তে করে দরজাটা খুললো। ক্যাঁ কুঁউঃ করে আওয়াজ হয়ে উঠলো। দরজার কব্জাটা মোটামোটি ভাবে দরজাকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো এই যা ভরসা।
"এই যাহঃ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম স্কু'লে কারেন্ট নেই। দাঁড়াও তুমি, আমি টিচার্স রুম থেকে দেশলাই আর মোমবাতি নিয়ে আসছি।"
এই বলে জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে সেই টিনের চালের বাথরুমের সামনে রেখে ফের ফেরৎ গেলো মোমবাতি আনতে। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকতে নন্দিনীর ভয় লাগছিলো। জাহাঙ্গীরকে না চাইতেও নিজের ফোনটা সাথে নিয়ে যেতে হয়েছিল নাহলে সরু করিডোর দিয়ে অন্ধকারে সে যাবে কি করে টিচার্স রুমে। বাথরুমের সামনে ফাঁকা জায়গায় তো তাও চাঁদের আলোয় কিছুটা আলোকিত হচ্ছিলো পরিবেশ।
নন্দিনীই জাহাঙ্গীরকে ফোনটা সাথে নিয়ে যেতে বললো। নন্দিনী বললো তার নিজের ফোনে এখনও কিছুটা চার্জ রয়েছে, সেটা দিয়েই দরকার পড়লে নিজের ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে নেবে সে। আর তাছাড়া চাঁদের আলো তো রয়েইছে, সবচেয়ে বড়ো ফ্ল্যাশ লাইট! তাই নন্দিনীর থেকে অনুমতি নিয়ে জাহাঙ্গীর টিচার্স রুমের দিকে রওনা দিলো।
বেশি দেরী করলো না জাহাঙ্গীর। সে জানে নন্দিনী মুখে না বললেও তার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। মেয়ে মানুষ, যতই অফিসার হয়ে যাক, অন্ধকারে নির্জন জায়গায় একা থাকতে বুকটা কাঁপবেই। নাহলে বাজ পড়ার ভয়ে কেউ বুকে এসে পড়ে। জাহাঙ্গীর তাই মোমবাতি নিয়ে টিচার্স রুমটা তাড়াতাড়ি লক করে বাথরুমের পানে জোরে হাঁটা দিলো। পৌঁছে দেখলো নন্দিনী সেইভাবেই ল'ক্ষী মেয়ের মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেমনটা সে তাকে ছেড়ে গেছিলো।
মোমবাতি জ্বালিয়ে জাহাঙ্গীর প্রথমে বাথরুমে ঢুকলো। চারপাশটা ভালোমতো দেখে নিলো কোনো সাপ-খোপ নেই তো! মোমবাতিটা বাথরুমের ভেন্টিলেটরের উপর হেলান দিয়ে রাখতে চাইলো। কিন্তু ব্যালেন্স পাচ্ছিলো না। তাই মোমবাতি থেকেই মোম গলিয়ে আঁঠার মতো মোমবাতিটার সাথে আটকে ওখানে লম্বভাবে বসিয়ে দেওয়া হলো জাহাঙ্গীর কর্তৃক। গোটা বাথরুম তখন আলোকিত হয়ে উঠলো।
বাথরুমে পড়ে থাকা ঝাঁটা নিজের হাতে তুলে নিলো জাহাঙ্গীর। কল ছেড়ে দিলো, যাতে জল পড়ে প্রথমে মেঝেটা ভিজে যায়। তারপর সেই ঝাঁটা দিয়ে গোটা বাথরুমের মেঝে পরিষ্কার করে জায়গাটাকে স্নানের যোগ্য করে তুললো জাহাঙ্গীর। একটা বালতি উল্টানো ছিল, সাথে মগও। সেই মগ আর বালতিটাও ধুয়ে পরিষ্কার করে দিলো যাতে নন্দিনী স্বচ্ছন্দে বালতিতে জল ভরে মগ দিয়ে স্নান করতে পারে।
জাহাঙ্গীরের তার প্রতি এত কনসার্ন দেখে নন্দিনীর সত্যিই খুব ভালো লাগছিলো। নিজেকে কেমন যেন স্পেশাল ফীল করছিলো সে। সব কাজ সেরে জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে বললো এবার সে বাথরুমে ঢুকতে পারে। বাইরে জাহাঙ্গীর অপেক্ষা করে থাকবে, পাছে যদি নন্দিনীর আর কোনো দরকার পড়ে। নন্দিনী হাসি মুখে জাহাঙ্গীরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করলো, আর জাহাঙ্গীর প্রস্থান করলো।
বাথরুমে ঢুকে নন্দিনী দরজাটা বন্ধ করে দিলো। কিন্তু দরজার ল্যাচ-টা কিছুতেই লাগাতে পারছিলো না। জং ধরে গেছিলো, অনেকদিন ব্যবহার না হওয়ায়। তাও কোনোমতে জোর করে দরজার লকটা নন্দিনী লাগালো। তারপর ধীরে ধীরে এক এক করে নিজের বস্ত্র খুলতে লাগলো। কাপড় খুলে রাখার মতো কোনো হুক বাথরুমে বা বাথরুমের দরজায় ছিলোনা। দরজার উপরে কিছুটা ফাঁকা জায়গা ছিল। তাই নন্দিনী নিজের শাড়ি, সায়া, ব্লাউজ, ব্রা, প্যান্টি, সব এক এক করে খুলে দরজার উপরের দিকে মেলে ঝুলিয়ে রাখলো, অর্ধেক ভেতরে, অর্ধেক বাইরে।
ভেতর থেকে জাহাঙ্গীরকে আওয়াজ দিয়ে নন্দিনী বললো যতক্ষণ না সে বাথরুম থেকে বেরোচ্ছে ততোক্ষণ যেন জাহাঙ্গীর ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট-টা অফ করে রাখে। বাথরুমের ভেতরের মোমবাতির আলোই যথেষ্ট নন্দিনীর জন্য। আসলে নন্দিনী চাইছিলো না ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে জাহাঙ্গীর নন্দিনীর অন্তর্বাস ও কাপড়-চোপড় গুলো দরজা থেকে বাইরের দিকে ঝুলতে দেখুক। নন্দিনীর কাছে এটা খুবই বিব্রতকর বিষয়। কারণ সে জানে জাহাঙ্গীর বাইরেই তার জন্য অপেক্ষা করছে, আর এই অন্ধকার রাত্রে লোডশেডিং-এর সময়ে তাকে চলে যেতেও বলতে পারছে না। সুতরাং জাহাঙ্গীর অন্ধকারেই দাঁড়িয়ে থাকুক যাতে তার ঝুলে থাকা অন্তর্বাস জাহাঙ্গীরের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে।
জাহাঙ্গীর সেইমতো ফোনের ফ্ল্যাশ-লাইট অফ করে দিলো। বাইরে থেকে কোনো আলোর আভা আসতে না দেখে নন্দিনী নিশ্চিত হলো যে জাহাঙ্গীর তার কথা শুনে ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অফ করে দিয়েছে। জাহাঙ্গীরের ব্যবহার খুবই নম্র-ভদ্র লাগছিলো। তাই এখন সে জাহাঙ্গীর কে প্রায় চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারবে বলে তার মনে হচ্ছিলো। এরকম একটা বিশ্বাসযোগ্য মানুষের পাশে থাকা তাকে আরো বেশি রিলিফ দিচ্ছিলো এই প্রতিকূল পরিবেশে।
নন্দিনী তাই এবার নিশ্চিন্ত হয়ে কলের ট্যাপ-টা খুলে বালতি তে জল ভরতে লাগলো। এই ভ্যাপসা গরমে সারাদিন কাটিয়ে অবশেষে গ্রামের শীতল পানি তার গায়ে পড়বে, এবং তার গোটা নগ্ন শরীর সমেত মনটাকেও সতেজ করে তুলবে। এখানে আসা ইস্তক নির্বাচনজনিত কাজকর্মের ফলে যে শুধু তার শরীরের উপর দিয়েই সব ধকল গ্যাছে তা তো নয়। তার পাশাপাশি বাড়ি থেকে ফোনে শাশুড়ির কটু কথা, অনিকেতের অবহেলা, জাহাঙ্গীরের প্রাথমিকভাবে করা একপ্রকার ragging, এসব সংযুক্ত হয়ে তার শরীর মন উভয়কেই একেবারে নাজেহাল করে দিয়েছিলো। Now both of her mind and body needs to be refresh.....
নন্দিনী এবার মগ দিয়ে বালতি থেকে ঠান্ডা জল নিয়ে নিজের উন্মুক্ত শরীরে ঢালতে লাগলো। বাইরে থেকে জাহাঙ্গীর নন্দিনীর শরীর বেয়ে মেঝেতে পতিত হওয়া জলের ছ্যাপ ছ্যাপ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলো। মন তো তার খুবই করছিলো নন্দিনীকে এই অবস্থায় এক পলক দেখার, কিন্তু জো নেই তা করার। তাছাড়া সে তো আগেই নিজের ভাগ্যের হাতে নন্দিনীর প্রতি তার আকর্ষণ-কে সমর্পণ করে দিয়েছে। তার আকর্ষণ যদি খাঁটি হয়, তাহলে নন্দিনী নিজে থেকেই আকর্ষিত হবে তার প্রতি, এটা তার বদ্ধমূল ধারণা।
নন্দিনী একটি সাবানও তার সাথে ক্যারি করেছিল। সেটা এবার সে সারা গায়ে ঘষতে লাগলো, আস্তে আস্তে, কোনো তাড়া নেই এই ভেবে।.... গোটা গায়ে সাবান মাখার পর সে আবার গোটা শরীরে হাকিমপুরের শীতল পানি ঢালতে লাগলো। আহ্হঃ.....কি আরাম!! তার মন করছিলো আনন্দে নেচে উঠতে। খুশিতে সে নিজেই নিজের সাথে জলকেলি করতে লাগলো। ফলে জল এদিক ওদিক ছিটতে লাগলো। সেই জলের কয়েক বড়ো বড়ো ফোঁটা মোমবাতির শিখায় গিয়ে পড়লো। ব্যাস! তারপর বৈজ্ঞানিক কারণেই সেই জলের ফোঁটা গুলি মোমের আগুন নিভিয়ে দিয়ে তাকে নিস্তেজ করে দিলো।
জায়গাটা পূনরায় অন্ধকারে ডুবে গেলো। নন্দিনী তাতে ভয় পেলো প্রচন্ড। কারণ এখন সে সম্পূর্ণ ভাবে নগ্ন। সে চাইলেও দরজা খুলে বেরিয়ে এসে জাহাঙ্গীরের সাহায্য চাইতে পারবে না। উপায় একটাই, আগে গামছা দিয়ে গা মুছে এক এক করে সকল বস্ত্র পরিধান করতে হবে, তারপরই বাথরুম থেকে বেরোনো সম্ভব। জাহাঙ্গীরের সামনে শুধু গামছা পড়েও বেরোতে সে পারবেনা। ভীষণ লজ্জা করবে তার।
কিন্তু সবার আগে তো আলোর দরকার, স্বল্প পরিমাণের হলেও! সেই আলোর সন্ধানে কাছেই দেওয়ালে দুটি ইঁটের ফাঁকে তার গুঁজে রাখা নিজের ফোনটাকে হাতড়াতে শুরু করলো নন্দিনী। পেলো, কিন্তু ততোক্ষণে চার্জের অভাবে ফোনের ব্যাটারী একেবারেই শেষ। ফোন ডেড্!
তবে ভাগ্য ভালো ভেন্টিলেটরের থ্রু দিয়ে চাঁদের প্রাকৃতিক আলো বাথরুমে এসে পড়ছিলো। অগত্যা সেই আলো দিয়েই তখন নন্দিনী দরজার উপর ঝুলে থাকা গামছাটা প্রথমে খুঁজতে লাগলো গা শোকানোর জন্য। হাতড়াতে গিয়ে হাত ফস্কে গামছাটা বাইরের দিকে গিয়ে পড়লো। আগেই বলেছিলাম দরজায় বা বাথরুমের এবড়ো-খেবড়ো দেওয়ালে কোনো হুক না থাকায় নন্দিনীকে দরজার উপরেই নিজের সকল বস্ত্র ও গামছাটা-কে ঝুলিয়ে রাখতে হয়েছিল, এমনভাবে যে অর্ধেক অংশ বাথরুমের ভেতরে থাকবে আর বাকিটা বাইরে।
নন্দিনীর গামছা এখন বাথরুমের ওপারে জাহাঙ্গীরের দিকে পড়ে গিয়েছিলো। নন্দিনী প্যানিক করে জাহাঙ্গীরকে ডাকতে লাগলো। জাহাঙ্গীরও সঙ্গে সঙ্গে সেই ডাকে সাড়া দিলো। জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে নন্দিনীর। সে বললো তার গামছাটা হাত ফস্কে বাথরুমের বাইরে পড়ে গ্যাছে। নন্দিনী অনুরোধ করে বললো যে খুব ভালো হয় যদি জাহাঙ্গীর পূনরায় সেই গামছাটা বাইরের দিক থেকে দরজার উপর দিয়ে অর্ধেক ঢুকিয়ে দেয়। তাহলে নন্দিনী আবার বাথরুমের ভেতর থেকে গামছাটা পেড়ে নিতে পারবে।
এবার এটাই দেখার যে জাহাঙ্গীর নন্দিনীর অনুরোধ রেখে তার গামছা ওইভাবে ফিরিয়ে দেবে নাকি কোনো বদমায়েশি করবে?? উত্তর পরবর্তী পর্বে........
জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে স্কু'লের ভেতর একটা সরু গলি দিয়ে পথ দেখাতে দেখাতে স্নানাগারের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। স্নানাগারটি স্কু'লের একদম পিছনে ছিল। স্কু'লের টিচার্সদের ব্যবহারের জন্য। কিন্তু কেউ সেভাবে ব্যবহার করতো না, সেটা সেই জায়গাটাকে দেখলেই বোঝা যায়। ঢালু টিনের ছাদ, খানিক ভগ্ন দরজা দেওয়া এক ছোট্ট কুটিরের মতো।
জাহাঙ্গীর আস্তে করে দরজাটা খুললো। ক্যাঁ কুঁউঃ করে আওয়াজ হয়ে উঠলো। দরজার কব্জাটা মোটামোটি ভাবে দরজাকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো এই যা ভরসা।
"এই যাহঃ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম স্কু'লে কারেন্ট নেই। দাঁড়াও তুমি, আমি টিচার্স রুম থেকে দেশলাই আর মোমবাতি নিয়ে আসছি।"
এই বলে জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে সেই টিনের চালের বাথরুমের সামনে রেখে ফের ফেরৎ গেলো মোমবাতি আনতে। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকতে নন্দিনীর ভয় লাগছিলো। জাহাঙ্গীরকে না চাইতেও নিজের ফোনটা সাথে নিয়ে যেতে হয়েছিল নাহলে সরু করিডোর দিয়ে অন্ধকারে সে যাবে কি করে টিচার্স রুমে। বাথরুমের সামনে ফাঁকা জায়গায় তো তাও চাঁদের আলোয় কিছুটা আলোকিত হচ্ছিলো পরিবেশ।
নন্দিনীই জাহাঙ্গীরকে ফোনটা সাথে নিয়ে যেতে বললো। নন্দিনী বললো তার নিজের ফোনে এখনও কিছুটা চার্জ রয়েছে, সেটা দিয়েই দরকার পড়লে নিজের ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে নেবে সে। আর তাছাড়া চাঁদের আলো তো রয়েইছে, সবচেয়ে বড়ো ফ্ল্যাশ লাইট! তাই নন্দিনীর থেকে অনুমতি নিয়ে জাহাঙ্গীর টিচার্স রুমের দিকে রওনা দিলো।
বেশি দেরী করলো না জাহাঙ্গীর। সে জানে নন্দিনী মুখে না বললেও তার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। মেয়ে মানুষ, যতই অফিসার হয়ে যাক, অন্ধকারে নির্জন জায়গায় একা থাকতে বুকটা কাঁপবেই। নাহলে বাজ পড়ার ভয়ে কেউ বুকে এসে পড়ে। জাহাঙ্গীর তাই মোমবাতি নিয়ে টিচার্স রুমটা তাড়াতাড়ি লক করে বাথরুমের পানে জোরে হাঁটা দিলো। পৌঁছে দেখলো নন্দিনী সেইভাবেই ল'ক্ষী মেয়ের মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেমনটা সে তাকে ছেড়ে গেছিলো।
মোমবাতি জ্বালিয়ে জাহাঙ্গীর প্রথমে বাথরুমে ঢুকলো। চারপাশটা ভালোমতো দেখে নিলো কোনো সাপ-খোপ নেই তো! মোমবাতিটা বাথরুমের ভেন্টিলেটরের উপর হেলান দিয়ে রাখতে চাইলো। কিন্তু ব্যালেন্স পাচ্ছিলো না। তাই মোমবাতি থেকেই মোম গলিয়ে আঁঠার মতো মোমবাতিটার সাথে আটকে ওখানে লম্বভাবে বসিয়ে দেওয়া হলো জাহাঙ্গীর কর্তৃক। গোটা বাথরুম তখন আলোকিত হয়ে উঠলো।
বাথরুমে পড়ে থাকা ঝাঁটা নিজের হাতে তুলে নিলো জাহাঙ্গীর। কল ছেড়ে দিলো, যাতে জল পড়ে প্রথমে মেঝেটা ভিজে যায়। তারপর সেই ঝাঁটা দিয়ে গোটা বাথরুমের মেঝে পরিষ্কার করে জায়গাটাকে স্নানের যোগ্য করে তুললো জাহাঙ্গীর। একটা বালতি উল্টানো ছিল, সাথে মগও। সেই মগ আর বালতিটাও ধুয়ে পরিষ্কার করে দিলো যাতে নন্দিনী স্বচ্ছন্দে বালতিতে জল ভরে মগ দিয়ে স্নান করতে পারে।
জাহাঙ্গীরের তার প্রতি এত কনসার্ন দেখে নন্দিনীর সত্যিই খুব ভালো লাগছিলো। নিজেকে কেমন যেন স্পেশাল ফীল করছিলো সে। সব কাজ সেরে জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে বললো এবার সে বাথরুমে ঢুকতে পারে। বাইরে জাহাঙ্গীর অপেক্ষা করে থাকবে, পাছে যদি নন্দিনীর আর কোনো দরকার পড়ে। নন্দিনী হাসি মুখে জাহাঙ্গীরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করলো, আর জাহাঙ্গীর প্রস্থান করলো।
বাথরুমে ঢুকে নন্দিনী দরজাটা বন্ধ করে দিলো। কিন্তু দরজার ল্যাচ-টা কিছুতেই লাগাতে পারছিলো না। জং ধরে গেছিলো, অনেকদিন ব্যবহার না হওয়ায়। তাও কোনোমতে জোর করে দরজার লকটা নন্দিনী লাগালো। তারপর ধীরে ধীরে এক এক করে নিজের বস্ত্র খুলতে লাগলো। কাপড় খুলে রাখার মতো কোনো হুক বাথরুমে বা বাথরুমের দরজায় ছিলোনা। দরজার উপরে কিছুটা ফাঁকা জায়গা ছিল। তাই নন্দিনী নিজের শাড়ি, সায়া, ব্লাউজ, ব্রা, প্যান্টি, সব এক এক করে খুলে দরজার উপরের দিকে মেলে ঝুলিয়ে রাখলো, অর্ধেক ভেতরে, অর্ধেক বাইরে।
ভেতর থেকে জাহাঙ্গীরকে আওয়াজ দিয়ে নন্দিনী বললো যতক্ষণ না সে বাথরুম থেকে বেরোচ্ছে ততোক্ষণ যেন জাহাঙ্গীর ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট-টা অফ করে রাখে। বাথরুমের ভেতরের মোমবাতির আলোই যথেষ্ট নন্দিনীর জন্য। আসলে নন্দিনী চাইছিলো না ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে জাহাঙ্গীর নন্দিনীর অন্তর্বাস ও কাপড়-চোপড় গুলো দরজা থেকে বাইরের দিকে ঝুলতে দেখুক। নন্দিনীর কাছে এটা খুবই বিব্রতকর বিষয়। কারণ সে জানে জাহাঙ্গীর বাইরেই তার জন্য অপেক্ষা করছে, আর এই অন্ধকার রাত্রে লোডশেডিং-এর সময়ে তাকে চলে যেতেও বলতে পারছে না। সুতরাং জাহাঙ্গীর অন্ধকারেই দাঁড়িয়ে থাকুক যাতে তার ঝুলে থাকা অন্তর্বাস জাহাঙ্গীরের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে।
জাহাঙ্গীর সেইমতো ফোনের ফ্ল্যাশ-লাইট অফ করে দিলো। বাইরে থেকে কোনো আলোর আভা আসতে না দেখে নন্দিনী নিশ্চিত হলো যে জাহাঙ্গীর তার কথা শুনে ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অফ করে দিয়েছে। জাহাঙ্গীরের ব্যবহার খুবই নম্র-ভদ্র লাগছিলো। তাই এখন সে জাহাঙ্গীর কে প্রায় চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারবে বলে তার মনে হচ্ছিলো। এরকম একটা বিশ্বাসযোগ্য মানুষের পাশে থাকা তাকে আরো বেশি রিলিফ দিচ্ছিলো এই প্রতিকূল পরিবেশে।
নন্দিনী তাই এবার নিশ্চিন্ত হয়ে কলের ট্যাপ-টা খুলে বালতি তে জল ভরতে লাগলো। এই ভ্যাপসা গরমে সারাদিন কাটিয়ে অবশেষে গ্রামের শীতল পানি তার গায়ে পড়বে, এবং তার গোটা নগ্ন শরীর সমেত মনটাকেও সতেজ করে তুলবে। এখানে আসা ইস্তক নির্বাচনজনিত কাজকর্মের ফলে যে শুধু তার শরীরের উপর দিয়েই সব ধকল গ্যাছে তা তো নয়। তার পাশাপাশি বাড়ি থেকে ফোনে শাশুড়ির কটু কথা, অনিকেতের অবহেলা, জাহাঙ্গীরের প্রাথমিকভাবে করা একপ্রকার ragging, এসব সংযুক্ত হয়ে তার শরীর মন উভয়কেই একেবারে নাজেহাল করে দিয়েছিলো। Now both of her mind and body needs to be refresh.....
নন্দিনী এবার মগ দিয়ে বালতি থেকে ঠান্ডা জল নিয়ে নিজের উন্মুক্ত শরীরে ঢালতে লাগলো। বাইরে থেকে জাহাঙ্গীর নন্দিনীর শরীর বেয়ে মেঝেতে পতিত হওয়া জলের ছ্যাপ ছ্যাপ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলো। মন তো তার খুবই করছিলো নন্দিনীকে এই অবস্থায় এক পলক দেখার, কিন্তু জো নেই তা করার। তাছাড়া সে তো আগেই নিজের ভাগ্যের হাতে নন্দিনীর প্রতি তার আকর্ষণ-কে সমর্পণ করে দিয়েছে। তার আকর্ষণ যদি খাঁটি হয়, তাহলে নন্দিনী নিজে থেকেই আকর্ষিত হবে তার প্রতি, এটা তার বদ্ধমূল ধারণা।
নন্দিনী একটি সাবানও তার সাথে ক্যারি করেছিল। সেটা এবার সে সারা গায়ে ঘষতে লাগলো, আস্তে আস্তে, কোনো তাড়া নেই এই ভেবে।.... গোটা গায়ে সাবান মাখার পর সে আবার গোটা শরীরে হাকিমপুরের শীতল পানি ঢালতে লাগলো। আহ্হঃ.....কি আরাম!! তার মন করছিলো আনন্দে নেচে উঠতে। খুশিতে সে নিজেই নিজের সাথে জলকেলি করতে লাগলো। ফলে জল এদিক ওদিক ছিটতে লাগলো। সেই জলের কয়েক বড়ো বড়ো ফোঁটা মোমবাতির শিখায় গিয়ে পড়লো। ব্যাস! তারপর বৈজ্ঞানিক কারণেই সেই জলের ফোঁটা গুলি মোমের আগুন নিভিয়ে দিয়ে তাকে নিস্তেজ করে দিলো।
জায়গাটা পূনরায় অন্ধকারে ডুবে গেলো। নন্দিনী তাতে ভয় পেলো প্রচন্ড। কারণ এখন সে সম্পূর্ণ ভাবে নগ্ন। সে চাইলেও দরজা খুলে বেরিয়ে এসে জাহাঙ্গীরের সাহায্য চাইতে পারবে না। উপায় একটাই, আগে গামছা দিয়ে গা মুছে এক এক করে সকল বস্ত্র পরিধান করতে হবে, তারপরই বাথরুম থেকে বেরোনো সম্ভব। জাহাঙ্গীরের সামনে শুধু গামছা পড়েও বেরোতে সে পারবেনা। ভীষণ লজ্জা করবে তার।
কিন্তু সবার আগে তো আলোর দরকার, স্বল্প পরিমাণের হলেও! সেই আলোর সন্ধানে কাছেই দেওয়ালে দুটি ইঁটের ফাঁকে তার গুঁজে রাখা নিজের ফোনটাকে হাতড়াতে শুরু করলো নন্দিনী। পেলো, কিন্তু ততোক্ষণে চার্জের অভাবে ফোনের ব্যাটারী একেবারেই শেষ। ফোন ডেড্!
তবে ভাগ্য ভালো ভেন্টিলেটরের থ্রু দিয়ে চাঁদের প্রাকৃতিক আলো বাথরুমে এসে পড়ছিলো। অগত্যা সেই আলো দিয়েই তখন নন্দিনী দরজার উপর ঝুলে থাকা গামছাটা প্রথমে খুঁজতে লাগলো গা শোকানোর জন্য। হাতড়াতে গিয়ে হাত ফস্কে গামছাটা বাইরের দিকে গিয়ে পড়লো। আগেই বলেছিলাম দরজায় বা বাথরুমের এবড়ো-খেবড়ো দেওয়ালে কোনো হুক না থাকায় নন্দিনীকে দরজার উপরেই নিজের সকল বস্ত্র ও গামছাটা-কে ঝুলিয়ে রাখতে হয়েছিল, এমনভাবে যে অর্ধেক অংশ বাথরুমের ভেতরে থাকবে আর বাকিটা বাইরে।
নন্দিনীর গামছা এখন বাথরুমের ওপারে জাহাঙ্গীরের দিকে পড়ে গিয়েছিলো। নন্দিনী প্যানিক করে জাহাঙ্গীরকে ডাকতে লাগলো। জাহাঙ্গীরও সঙ্গে সঙ্গে সেই ডাকে সাড়া দিলো। জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে নন্দিনীর। সে বললো তার গামছাটা হাত ফস্কে বাথরুমের বাইরে পড়ে গ্যাছে। নন্দিনী অনুরোধ করে বললো যে খুব ভালো হয় যদি জাহাঙ্গীর পূনরায় সেই গামছাটা বাইরের দিক থেকে দরজার উপর দিয়ে অর্ধেক ঢুকিয়ে দেয়। তাহলে নন্দিনী আবার বাথরুমের ভেতর থেকে গামছাটা পেড়ে নিতে পারবে।
এবার এটাই দেখার যে জাহাঙ্গীর নন্দিনীর অনুরোধ রেখে তার গামছা ওইভাবে ফিরিয়ে দেবে নাকি কোনো বদমায়েশি করবে?? উত্তর পরবর্তী পর্বে........