23-02-2025, 05:56 AM
১১
"তুমি কোথায় শোবে?", হাত মুখ ধুয়ে আসা জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসা করলো নন্দিনী।
"এই তো করিডোরেই, তোমার রুমের বাইরেই।"
"মাটিতেই?"
"হ্যাঁ, আর কি করা যাবে। তাছাড়া বাইরে বেশ ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। তাই চিন্তা নেই....."
"কিন্তু শোয়ার ব্যবস্থা?"
"সেটাও রয়েছে। রিংকু আমার জন্যও চাদর, বালিশ, তোষক সব দিয়ে গ্যাছে, টিচার্স রুমে রাখা আছে।"
তার জন্য রিংকুর শোয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথাটা সে আগেই নন্দিনীকে বলতে পারতো কিন্তু বলেনি এটা দেখার জন্য যে নন্দিনী তার প্রতি কিছুটা হলেও কনসার্ন কিনা, হোক না তা শুধু একজন সহকর্মী হিসেবেই, তাতে কি। .....
"ওহঃ, তাহলে চিন্তা কি..... নিজের শোয়ার ব্যবস্থাটা করে নিও। আমি এখন একটু আমার ঘরটাতে যাচ্ছি, বাই!", বলেই নন্দিনী পিছন ফিরে জাহাঙ্গীরকে পিঠ দেখিয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। খাবার পরে তাদের কথোপকথন নন্দিনী যে এত তাড়াতাড়ি শেষ করে দেবে সেটা জাহাঙ্গীর আন্দাজ করতে পারেনি। তবুও সে নন্দিনীকে জোর করে আটকালো না। ভাবলো এবার থেকে যা হবে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই হোক। দেখাই যাক না কিসমতে কি লেখা আছে।
জাহাঙ্গীরের নিজের কিসমতের উপর পুরো ভরসা ছিল। কলকাতা থেকে এত দূর যখন সে নন্দিনীকে ফন্দী এঁটে নিয়ে আনতে পেরেছে, তখন তার ধীর বিশ্বাস নন্দিনী নিজে থেকে একটা না একটা সময়ে ওর বুকে এসে পড়বেই। কিছু না করে তো নন্দিনী চ্যাটার্জি কে বাড়ি ফিরতে দেওয়া যাবেনা।
এই ভেবে জাহাঙ্গীর পিছন থেকে নন্দিনীর উদ্দেশ্যে বললো, "কিছু দরকার পড়লে, ডাকবে আমায়। আমি তোমার দরজার বাইরেই থাকবো, তোষক পেতে বসে।"
নন্দিনী কিছু না বলে পিছনে ফিরে না তাকিয়েই শুধু মাথাটা ইতিবাচকভাবে নাড়িয়ে নীরবে এই "নিরামিষ প্রস্তাবে" সম্মতি প্রদান করে নিজের ঘরে ঢুকে গেলো। ঢুকে দোর দিয়ে দিলো। যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। ভাবলো একবার অনিকেতকে ফোন করে খোঁজ নিয়ে দেখবে সে বাড়ি ফিরেছে কিনা, তাহলে গুড্ডির ব্যাপারে জানতে চাইবে একটু। সেইমতো কল দিলো নিজের স্বামীকে। অনেকক্ষণ বেজে যাওয়ার পর প্রথমে ফোনটা কেটে গেলো, দ্বিতীয়বার করায় তখন ধরলো অনিকেত।
"হ্যাঁ বলো, নন্দিনী! কি খবর ওখানাকার?"
"এখানে সব ঠিক আছে। খাওয়া দাওয়া হয়েগেছে আমার। তুমি বলো, বাড়ি ফিরেছো?"
"এই মানে..... এখনও.....", অনিকেত কে আমতা আমতা করতে শুনে নন্দিনী রেগে গিয়ে বললো, "এখনও বাড়ি ঢোকোনি?? আমি বাড়ি নেই বলে হাতির পাঁচ পা দেখেছো? ওদিকে বাড়িতে আমার মেয়েটা কেমন আছে আমায় ছেড়ে, কে জানে!!"
"তুমি তাহলে মা-কে ফোন করে জেনে নাও না!"
"তুমি পাগল হয়েছো? বিকেলে একবার মা কে ফোন করেছিলাম, একরাশ কথা শুনিয়ে দিলো আমায় হাকিমপুরে আসা নিয়ে। আর তুমি বলছো আবার কোনো কারণ ছাড়া ঝাড় খেতে তোমার মা কে কল দেবো?"
"না.. মানে.. মা যা বলে আমাদের ভালোর জন্যই তো বলে....."
"আমার এত ভালো কি আমি তাকে চাইতে বলেছি? আর তাছাড়া আমি তো লুকিয়ে চুরিয়ে ব্যক্তিগত কোনো কারণে আসিনি। প্রশাসনিক কাজে সরকারের কাছ থেকে দায়িত্ব পেয়েই অনেক আগে থেকে বাড়িতে বলে কয়ে পারমিশন নিয়েই এসেছি। তবুও কেন বারংবার আমাকে কথা শুনতে হবে তোমার মায়ের কাছ থেকে? কিসের এত সমস্যা ওঁনার আমাকে নিয়ে তুমি বলতে পারো অনি??"
"আচ্ছা আচ্ছা, বুঝেছি। তুমি অতো রেগে যাচ্ছ কেন? জানোই তো মায়ের স্বভাব। এখন যেখানে আছো, সেখানে শান্তিতে থাকো, মন দিয়ে কাজ করো। গুড্ডিকে মা ঠিক সামলে নেবে, তুমি অতো চিন্তা করোনা মেয়েটাকে নিয়ে।"
"চিনতে করতে হয় অনি, কারণ আমি মা। তাছাড়া তুমি কি করছো? তোমার কোনো দায়িত্ব নেই, স্বামী হিসেবে, বাবা হিসেবে? শুধু বউয়ের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বন্ধুদের সাথে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ালেই সব কাজ শেষ?"
"আহাঃ, ব্যাপারটা তা নয়। তুমি ঠিক বুঝছো না....."
"তুমি বুঝছো না, তোমরা কেউ আমায় বোঝো না , আর বুঝতেও হবেনা। আমার জীবনটা ছাড়খাড় হয়েগেলো তোমাদের বাড়িতে বিয়ে করে আসার পর", এই বলে রাগে অভিমানে কাঁদতে কাঁদতে নন্দিনী ফোনটা অনিকেতের মুখের উপর কেটে দিলো। তারপর ফোনটা কে তোষকের এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো। ক্রন্দনের আওয়াজ যাতে জাহাঙ্গীরের কান অবধি না পৌঁছয় সেই কারণেই বালিশে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো আগামীকালের হাকিমপুর গ্রাম্য বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার নন্দিনী চ্যাটার্জি। একটি মেয়েকে ঘরে বাইরে না জানি কত ঝড় যে সামলাতে হয়, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হলো নন্দিনী।
কিছুক্ষণ পর নন্দিনী ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞেস করলো স্কু'লে স্নান করার মতো কোনো বাথরুম রয়েছে কিনা। একে তো গ্রাম, তার উপর এটা একটা স্কু'ল। স্কু'লে সাধারণত শৌচাগার অর্থাৎ টয়লেট থাকে, স্নানাগার অর্থাৎ বাথরুম নয়। তাই নন্দিনী জানতে চাইছিলো মলমূত্র ত্যাগ করার শৌচাগার নয় বরং গা ধোয়ার কোনো স্নানাগার আছে কিনা এখানে। গরম খুব পড়েছে, তার উপর নন্দিনী অনিকেতের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য কষ্ট পেয়ে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করেছে। She needs to be fresh....
জাহাঙ্গীর বললো রয়েছে, তবে ভঙ্গুর অবস্থায়। তার উপর লাইটের ব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কম পাওয়ারের বাল্ব। বলতে না বলতেই কারেন্ট চলে গেলো! মেঘ গর্জন করে উঠলো। হঠাৎ মেঘের গর্জনে নন্দিনী খুব ভয় পেয়ে গেলো। কিছু না ভেবেই সে ভয়ে জাহাঙ্গীরকে জড়িয়ে ধরলো। জাহাঙ্গীর যেন বুকের ভেতরে চাঁদকে পেলো। নন্দিনী তো চাঁদের মতোই সুন্দর, শুধু কলঙ্কটা নেই, সেটাও না লেগে যায় জাহাঙ্গীরের দোহায়।
জাহাঙ্গীর অতি আদরে নন্দিনীকে জড়িয়ে ধরলো। স্বামীর কাছ থেকে বিরহ পেয়ে নন্দিনী যেন একপ্রকার ভুলেই গেছিলো সে কার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ পর যখন নন্দিনীর রিয়েলাইজেশন হলো সে জাহাঙ্গীরের পুরুষালী বুকে আশ্রয় পেয়েছে, তৎক্ষণাৎ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে গেলো।
নন্দিনী খুব অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গেছিলো। সে জাহাঙ্গীরের সাথে চোখে চোখ মেলাতে পারছিলোনা লজ্জায়। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে সে নিজের চুল ঠিক করতে লাগলো। জাহাঙ্গীরও খানিকটা লজ্জা পেয়েছিলো বটে। সে তো আগেই নিজের কিসমতের উপর সব ছেড়ে দিয়েছিল। যা হবে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই হবে, নাহলে নয়। ভাগ্যে থাকলে নন্দিনী নিজে তার বুকে এসে জড়িয়ে ধরবে। আর হলোও ঠিক তাই। কিসমত সত্যিই জাহাঙ্গীরের সাথ দিলো। উর্দুতে একটা প্রবাদ আছেনা, "আ'ল্লাহ মেহেরবান তো গাধা পাহেলওয়ান".......
দুজনে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত নীরবতার পরিবেশ বিরাজ করছিলো। বেশ কয়েকবার মেঘ গর্জন করলো আবার। কিন্তু নন্দিনী আর জাহাঙ্গীরের বুকে এলো না। তাই জাহাঙ্গীর সেই নীরবতা ভঙ্গ করে নন্দিনীর স্নানাগারের যাওয়ার কথাটা তুললো। জাহাঙ্গীর তার স্নানাগারে যাওয়ার পথপ্রদর্শক হতে চাইলো।
নন্দিনী কোনো প্রত্যুত্তর না দিয়ে ঘরে গিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে রাতে পড়ার কুর্তি, পাজামা, গা মোছার গামছা, ও গায়ের ময়লা ঘষার একটা সাবান নিলো, যা সে কলকাতা থেকে নিয়ে এসেছে। সেই সকাল থেকে এক শাড়ি পড়ে রয়েছে। দুপুরে ঘেমে নেয়ে তার শরীর প্রচন্ড অস্বস্তিতে রয়েছে। Her body needs some fresh cool water to ease......
নন্দিনী নিজের সাজ সরঞ্জাম নিয়ে ঘর থেকে বেরোলো। জাহাঙ্গীর ওর জন্য দরজার বাইরেই অপেক্ষা করছিলো অধীর আগ্রহে। সে নন্দিনীর রুমের বাইরেই নিজের বিছানা পেতে ছিল। মাত্র একটা দরজাই তাদের শোয়ার জায়গাকে আলাদা করে রেখেছে। মাথার ছাদ অবশ্য এক ছিল। স্কু'লের রুমের বাইরেই করিডোরে তো শুয়েছিল সে। জাহাঙ্গীরের সুপ্ত বাসনা তো এই ছিল যে ভেঙে যাক দরজা উড়ে যাক ছাদ, শুধু থাকি তুমি আমি এই সারারাত।
নন্দিনীকে দেখে জাহাঙ্গীর উঠে দাঁড়ালো আবার। সে নন্দিনীকে পথ দেখানোর জন্য পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশলাইট জ্বালালো। নন্দিনী বললো তার ফোনের লাইটেই সে যেতে পারবে। ঘরের মধ্যে নিজের ফোনের ফ্ল্যাশলাইটেই সে ব্যাগ থেকে জামাকাপড় গামছা সাবান সব বার করে এনেছে। তাই সেই লাইটেই করিডোরে যেতে তার কোনো অসুবিধা হবেনা। এই বলে সে শুধু জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে স্নানাগারের যাওয়ার রাস্তাটা জানতে চাইলো, তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলো না। কিন্তু এখানেও জাহাঙ্গীরের কিসমত তাকে সাথে দিলো।
নিজের কথা শেষ করে যখন নন্দিনী নিজের ফোনের দিকে তাকালো তখন নজর পড়লো তার ব্যাটারি লাইফ-লাইনের দাগ গুলোর উপর। লাল হয়ে রয়েছে, মাত্র একটি দাগ রয়েছে, অর্থাৎ ব্যাটারি প্রচন্ড পরিমাণে লো, যেকোনো সময়েই অফ হয়ে যেতে পারে ফোন। হাকিমপুরে আসা ইস্তক তার ফোন সে চার্জে দেয়নি। দিতে ভুলে গ্যাছে, আর তারই খেসারৎ তাকে দিতে হচ্ছে এখন।
অগ্যতা কোনো উপায় নেই। জাহাঙ্গীরকে তার সাথে যেতেই হবে শুধু সঙ্গ দিতে নয়, পথপ্রদর্শক হতেও, যেটা সে আগেই হতে চেয়েছিলো। জাহাঙ্গীর এবার পকেট থেকে ফোনটা বার করলো। ফোনে ফ্ল্যাশ-লাইটটা অন করলো। তার ফোনের ফ্ল্যাশলাইটের তীব্রতা নন্দিনীর ফোনের থেকে অধিক ছিল। হঠাৎ করে অন্ধকারাছন্ন পরিবেশটা যেন আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো।
এবার জাহাঙ্গীরের দেখানো পথে নন্দিনী হাঁটতে লাগলো, না না দার্শনিক দিক দিয়ে নয়, স্কু'ল করিডোর দিয়ে স্নানাগারে যাওয়ার জন্য। নন্দিনী আগে আগে জাহাঙ্গীর পিছনে পিছনে, ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে নিজের প্রেমিকার রাস্তা সুগম করতে করতে। .....
"তুমি কোথায় শোবে?", হাত মুখ ধুয়ে আসা জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসা করলো নন্দিনী।
"এই তো করিডোরেই, তোমার রুমের বাইরেই।"
"মাটিতেই?"
"হ্যাঁ, আর কি করা যাবে। তাছাড়া বাইরে বেশ ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। তাই চিন্তা নেই....."
"কিন্তু শোয়ার ব্যবস্থা?"
"সেটাও রয়েছে। রিংকু আমার জন্যও চাদর, বালিশ, তোষক সব দিয়ে গ্যাছে, টিচার্স রুমে রাখা আছে।"
তার জন্য রিংকুর শোয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথাটা সে আগেই নন্দিনীকে বলতে পারতো কিন্তু বলেনি এটা দেখার জন্য যে নন্দিনী তার প্রতি কিছুটা হলেও কনসার্ন কিনা, হোক না তা শুধু একজন সহকর্মী হিসেবেই, তাতে কি। .....
"ওহঃ, তাহলে চিন্তা কি..... নিজের শোয়ার ব্যবস্থাটা করে নিও। আমি এখন একটু আমার ঘরটাতে যাচ্ছি, বাই!", বলেই নন্দিনী পিছন ফিরে জাহাঙ্গীরকে পিঠ দেখিয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। খাবার পরে তাদের কথোপকথন নন্দিনী যে এত তাড়াতাড়ি শেষ করে দেবে সেটা জাহাঙ্গীর আন্দাজ করতে পারেনি। তবুও সে নন্দিনীকে জোর করে আটকালো না। ভাবলো এবার থেকে যা হবে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই হোক। দেখাই যাক না কিসমতে কি লেখা আছে।
জাহাঙ্গীরের নিজের কিসমতের উপর পুরো ভরসা ছিল। কলকাতা থেকে এত দূর যখন সে নন্দিনীকে ফন্দী এঁটে নিয়ে আনতে পেরেছে, তখন তার ধীর বিশ্বাস নন্দিনী নিজে থেকে একটা না একটা সময়ে ওর বুকে এসে পড়বেই। কিছু না করে তো নন্দিনী চ্যাটার্জি কে বাড়ি ফিরতে দেওয়া যাবেনা।
এই ভেবে জাহাঙ্গীর পিছন থেকে নন্দিনীর উদ্দেশ্যে বললো, "কিছু দরকার পড়লে, ডাকবে আমায়। আমি তোমার দরজার বাইরেই থাকবো, তোষক পেতে বসে।"
নন্দিনী কিছু না বলে পিছনে ফিরে না তাকিয়েই শুধু মাথাটা ইতিবাচকভাবে নাড়িয়ে নীরবে এই "নিরামিষ প্রস্তাবে" সম্মতি প্রদান করে নিজের ঘরে ঢুকে গেলো। ঢুকে দোর দিয়ে দিলো। যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। ভাবলো একবার অনিকেতকে ফোন করে খোঁজ নিয়ে দেখবে সে বাড়ি ফিরেছে কিনা, তাহলে গুড্ডির ব্যাপারে জানতে চাইবে একটু। সেইমতো কল দিলো নিজের স্বামীকে। অনেকক্ষণ বেজে যাওয়ার পর প্রথমে ফোনটা কেটে গেলো, দ্বিতীয়বার করায় তখন ধরলো অনিকেত।
"হ্যাঁ বলো, নন্দিনী! কি খবর ওখানাকার?"
"এখানে সব ঠিক আছে। খাওয়া দাওয়া হয়েগেছে আমার। তুমি বলো, বাড়ি ফিরেছো?"
"এই মানে..... এখনও.....", অনিকেত কে আমতা আমতা করতে শুনে নন্দিনী রেগে গিয়ে বললো, "এখনও বাড়ি ঢোকোনি?? আমি বাড়ি নেই বলে হাতির পাঁচ পা দেখেছো? ওদিকে বাড়িতে আমার মেয়েটা কেমন আছে আমায় ছেড়ে, কে জানে!!"
"তুমি তাহলে মা-কে ফোন করে জেনে নাও না!"
"তুমি পাগল হয়েছো? বিকেলে একবার মা কে ফোন করেছিলাম, একরাশ কথা শুনিয়ে দিলো আমায় হাকিমপুরে আসা নিয়ে। আর তুমি বলছো আবার কোনো কারণ ছাড়া ঝাড় খেতে তোমার মা কে কল দেবো?"
"না.. মানে.. মা যা বলে আমাদের ভালোর জন্যই তো বলে....."
"আমার এত ভালো কি আমি তাকে চাইতে বলেছি? আর তাছাড়া আমি তো লুকিয়ে চুরিয়ে ব্যক্তিগত কোনো কারণে আসিনি। প্রশাসনিক কাজে সরকারের কাছ থেকে দায়িত্ব পেয়েই অনেক আগে থেকে বাড়িতে বলে কয়ে পারমিশন নিয়েই এসেছি। তবুও কেন বারংবার আমাকে কথা শুনতে হবে তোমার মায়ের কাছ থেকে? কিসের এত সমস্যা ওঁনার আমাকে নিয়ে তুমি বলতে পারো অনি??"
"আচ্ছা আচ্ছা, বুঝেছি। তুমি অতো রেগে যাচ্ছ কেন? জানোই তো মায়ের স্বভাব। এখন যেখানে আছো, সেখানে শান্তিতে থাকো, মন দিয়ে কাজ করো। গুড্ডিকে মা ঠিক সামলে নেবে, তুমি অতো চিন্তা করোনা মেয়েটাকে নিয়ে।"
"চিনতে করতে হয় অনি, কারণ আমি মা। তাছাড়া তুমি কি করছো? তোমার কোনো দায়িত্ব নেই, স্বামী হিসেবে, বাবা হিসেবে? শুধু বউয়ের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বন্ধুদের সাথে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ালেই সব কাজ শেষ?"
"আহাঃ, ব্যাপারটা তা নয়। তুমি ঠিক বুঝছো না....."
"তুমি বুঝছো না, তোমরা কেউ আমায় বোঝো না , আর বুঝতেও হবেনা। আমার জীবনটা ছাড়খাড় হয়েগেলো তোমাদের বাড়িতে বিয়ে করে আসার পর", এই বলে রাগে অভিমানে কাঁদতে কাঁদতে নন্দিনী ফোনটা অনিকেতের মুখের উপর কেটে দিলো। তারপর ফোনটা কে তোষকের এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো। ক্রন্দনের আওয়াজ যাতে জাহাঙ্গীরের কান অবধি না পৌঁছয় সেই কারণেই বালিশে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো আগামীকালের হাকিমপুর গ্রাম্য বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার নন্দিনী চ্যাটার্জি। একটি মেয়েকে ঘরে বাইরে না জানি কত ঝড় যে সামলাতে হয়, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হলো নন্দিনী।
কিছুক্ষণ পর নন্দিনী ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞেস করলো স্কু'লে স্নান করার মতো কোনো বাথরুম রয়েছে কিনা। একে তো গ্রাম, তার উপর এটা একটা স্কু'ল। স্কু'লে সাধারণত শৌচাগার অর্থাৎ টয়লেট থাকে, স্নানাগার অর্থাৎ বাথরুম নয়। তাই নন্দিনী জানতে চাইছিলো মলমূত্র ত্যাগ করার শৌচাগার নয় বরং গা ধোয়ার কোনো স্নানাগার আছে কিনা এখানে। গরম খুব পড়েছে, তার উপর নন্দিনী অনিকেতের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য কষ্ট পেয়ে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করেছে। She needs to be fresh....
জাহাঙ্গীর বললো রয়েছে, তবে ভঙ্গুর অবস্থায়। তার উপর লাইটের ব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কম পাওয়ারের বাল্ব। বলতে না বলতেই কারেন্ট চলে গেলো! মেঘ গর্জন করে উঠলো। হঠাৎ মেঘের গর্জনে নন্দিনী খুব ভয় পেয়ে গেলো। কিছু না ভেবেই সে ভয়ে জাহাঙ্গীরকে জড়িয়ে ধরলো। জাহাঙ্গীর যেন বুকের ভেতরে চাঁদকে পেলো। নন্দিনী তো চাঁদের মতোই সুন্দর, শুধু কলঙ্কটা নেই, সেটাও না লেগে যায় জাহাঙ্গীরের দোহায়।
জাহাঙ্গীর অতি আদরে নন্দিনীকে জড়িয়ে ধরলো। স্বামীর কাছ থেকে বিরহ পেয়ে নন্দিনী যেন একপ্রকার ভুলেই গেছিলো সে কার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ পর যখন নন্দিনীর রিয়েলাইজেশন হলো সে জাহাঙ্গীরের পুরুষালী বুকে আশ্রয় পেয়েছে, তৎক্ষণাৎ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে গেলো।
নন্দিনী খুব অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গেছিলো। সে জাহাঙ্গীরের সাথে চোখে চোখ মেলাতে পারছিলোনা লজ্জায়। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে সে নিজের চুল ঠিক করতে লাগলো। জাহাঙ্গীরও খানিকটা লজ্জা পেয়েছিলো বটে। সে তো আগেই নিজের কিসমতের উপর সব ছেড়ে দিয়েছিল। যা হবে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই হবে, নাহলে নয়। ভাগ্যে থাকলে নন্দিনী নিজে তার বুকে এসে জড়িয়ে ধরবে। আর হলোও ঠিক তাই। কিসমত সত্যিই জাহাঙ্গীরের সাথ দিলো। উর্দুতে একটা প্রবাদ আছেনা, "আ'ল্লাহ মেহেরবান তো গাধা পাহেলওয়ান".......
দুজনে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত নীরবতার পরিবেশ বিরাজ করছিলো। বেশ কয়েকবার মেঘ গর্জন করলো আবার। কিন্তু নন্দিনী আর জাহাঙ্গীরের বুকে এলো না। তাই জাহাঙ্গীর সেই নীরবতা ভঙ্গ করে নন্দিনীর স্নানাগারের যাওয়ার কথাটা তুললো। জাহাঙ্গীর তার স্নানাগারে যাওয়ার পথপ্রদর্শক হতে চাইলো।
নন্দিনী কোনো প্রত্যুত্তর না দিয়ে ঘরে গিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে রাতে পড়ার কুর্তি, পাজামা, গা মোছার গামছা, ও গায়ের ময়লা ঘষার একটা সাবান নিলো, যা সে কলকাতা থেকে নিয়ে এসেছে। সেই সকাল থেকে এক শাড়ি পড়ে রয়েছে। দুপুরে ঘেমে নেয়ে তার শরীর প্রচন্ড অস্বস্তিতে রয়েছে। Her body needs some fresh cool water to ease......
নন্দিনী নিজের সাজ সরঞ্জাম নিয়ে ঘর থেকে বেরোলো। জাহাঙ্গীর ওর জন্য দরজার বাইরেই অপেক্ষা করছিলো অধীর আগ্রহে। সে নন্দিনীর রুমের বাইরেই নিজের বিছানা পেতে ছিল। মাত্র একটা দরজাই তাদের শোয়ার জায়গাকে আলাদা করে রেখেছে। মাথার ছাদ অবশ্য এক ছিল। স্কু'লের রুমের বাইরেই করিডোরে তো শুয়েছিল সে। জাহাঙ্গীরের সুপ্ত বাসনা তো এই ছিল যে ভেঙে যাক দরজা উড়ে যাক ছাদ, শুধু থাকি তুমি আমি এই সারারাত।
নন্দিনীকে দেখে জাহাঙ্গীর উঠে দাঁড়ালো আবার। সে নন্দিনীকে পথ দেখানোর জন্য পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশলাইট জ্বালালো। নন্দিনী বললো তার ফোনের লাইটেই সে যেতে পারবে। ঘরের মধ্যে নিজের ফোনের ফ্ল্যাশলাইটেই সে ব্যাগ থেকে জামাকাপড় গামছা সাবান সব বার করে এনেছে। তাই সেই লাইটেই করিডোরে যেতে তার কোনো অসুবিধা হবেনা। এই বলে সে শুধু জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে স্নানাগারের যাওয়ার রাস্তাটা জানতে চাইলো, তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলো না। কিন্তু এখানেও জাহাঙ্গীরের কিসমত তাকে সাথে দিলো।
নিজের কথা শেষ করে যখন নন্দিনী নিজের ফোনের দিকে তাকালো তখন নজর পড়লো তার ব্যাটারি লাইফ-লাইনের দাগ গুলোর উপর। লাল হয়ে রয়েছে, মাত্র একটি দাগ রয়েছে, অর্থাৎ ব্যাটারি প্রচন্ড পরিমাণে লো, যেকোনো সময়েই অফ হয়ে যেতে পারে ফোন। হাকিমপুরে আসা ইস্তক তার ফোন সে চার্জে দেয়নি। দিতে ভুলে গ্যাছে, আর তারই খেসারৎ তাকে দিতে হচ্ছে এখন।
অগ্যতা কোনো উপায় নেই। জাহাঙ্গীরকে তার সাথে যেতেই হবে শুধু সঙ্গ দিতে নয়, পথপ্রদর্শক হতেও, যেটা সে আগেই হতে চেয়েছিলো। জাহাঙ্গীর এবার পকেট থেকে ফোনটা বার করলো। ফোনে ফ্ল্যাশ-লাইটটা অন করলো। তার ফোনের ফ্ল্যাশলাইটের তীব্রতা নন্দিনীর ফোনের থেকে অধিক ছিল। হঠাৎ করে অন্ধকারাছন্ন পরিবেশটা যেন আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো।
এবার জাহাঙ্গীরের দেখানো পথে নন্দিনী হাঁটতে লাগলো, না না দার্শনিক দিক দিয়ে নয়, স্কু'ল করিডোর দিয়ে স্নানাগারে যাওয়ার জন্য। নন্দিনী আগে আগে জাহাঙ্গীর পিছনে পিছনে, ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে নিজের প্রেমিকার রাস্তা সুগম করতে করতে। .....