22-02-2025, 05:19 AM
(This post was last modified: 22-02-2025, 06:12 AM by Manali Basu. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
১০
জাহাঙ্গীর নিজের বাড়ি থেকে নন্দিনীর জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলো। জাহাঙ্গীরকে আসতে দেখে রিংকু নন্দিনীর থেকে বিদায় নিলো। যাওয়ার সময় জাহাঙ্গীরকে সালাম ঠুকে রিংকু বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। তারপর যথারীতি "এই রাত তোমার আমার" হয়েগেলো নন্দিনী ও জাহাঙ্গীরের কাছে। জাহাঙ্গীর এসে নন্দিনীকে বললো তার স্ত্রী রুবিনা, তার নন্দিনী ম্যাডামের জন্য খাঁটি নিরামিষ খাবার পাঠিয়েছে। যদিও বর্তমান যুগে ব্রা'হ্মণ পরিবারেও আমিষ আহার গ্রহণ করা হয়, তবু জাহাঙ্গীররা মু'সলিম পরিবার বলেই আরো অধিক যত্ন নিয়ে হি'ন্দু ব্রা'হ্মণ বাড়ির বউয়ের জন্য রাতের খাবার বানিয়েছিলো, যাতে কোনো সন্দেহ না জাগে বিধর্মী বাড়ির খাবার বলে।
"নন্দিনী, আমার বউ রুবিনা তোমার জন্য খাঁটি হি'ন্দু খাবার বানিয়েছে।"
"খাবারের কি কোনো ধর্ম হয় জাহাঙ্গীর? তাছাড়া তুমি তোমার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা বউকে দিয়ে খাঁটালে কেন?"
"তা ঠিক, খাওয়ারের সত্যিই কোনো ধর্ম হয়না, যে অভুক্ত থাকে সেই শুধু বোঝে। তবুও হি'ন্দুদের ঘরে অনেক বাদ বিচার আছে, বিশেষ করে ব্রা'হ্মণ পরিবারে। তাই নিরামিষ খাবারকে আমরা সচরাচর হি'ন্দু খাবার বলি। আর বাই দা ওয়ে, আমার রুবিনা সাত মাস নয়, সে ছয় মাসের পোয়াতি।...."
"আমার রুবিনা?", জাহাঙ্গীরের মুখ থেকে 'আমার রুবিনা' কথাটা শুনে কেন জানি নন্দিনীর মন খুব বিচলিত হয়ে উঠলো। কিন্তু কেন?.... কারণ সকাল থেকে যে লোকটার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে এত attention সে পেয়ে এসেছে, তার মুখে হঠাৎ অন্য আরেক মেয়ের প্রতি এত আপন মনোভাব অনুভব করানোর পরোক্ষ প্রচেষ্টা কিছুটা খারাপ লাগার সঞ্চার ঘটায় বটে। হোক না সেই মেয়ে লোকটার নিজের স্ত্রী, তাতে কি! এই খারাপ লাগার পিছনে কোনো যুক্তি নাই। এ এক যুক্তিহীন খারাপ লাগা, অনৈতিক ও অহেতুক অধিকারবোধ, যা তর্কের দ্বারা সুরাহা নেই।
কিন্তু নন্দিনী সেসব ভাবনা কে আর বেশি আমল না দিয়ে রুবিনার প্রেগনেন্সির প্রসঙ্গ তুলে বললো, "সে সাত মাস হোক বা ছয় মাস, বেশি ফারাক নয়। অন্তঃসত্ত্বা তো নাকি! তাহলে তাকে দিয়ে আমার জন্য রান্না বানালে কেন? আমার খুব খারাপ লাগছে ভেবে, কারণ আমিও তো একজন মা। আর একজন মা হয়ে আরেক হবু মা-কে দিয়ে কেন কাজ করে যন্ত্রণা দেওয়াবো?"
"আমিও রুবিনা কে বলেছিলাম আমিনা রয়েছে যে আমাদের বাড়িতে কাজ করে, এখন আমার বিবি-কে দেখার জন্য চব্বিশ ঘন্টা থাকে, সে রান্না করে দেবে। কিন্তু রুবিনা নাছোড়বান্দা! সে বললো শহর থেকে তোমার প্রিসাডিং অফিসার ম্যাডাম এসছে, তাকে সে-ই নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে। ব্যাস! এত জোর করলো যে আমি আর না করতে পারলাম না।"
"তাও, তোমার বারণ করাই উচিত ছিল।"
"আমার বিবি আরো বললে তার বিয়ে হয়ে আসা ইস্তক এই প্রথম গ্রামের ভোটে কোনো মেয়েছেলে এত বড়ো পোস্ট নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার হয়ে এসছেন, তাকে কিনা ঘরের পরিচারিকা কে দিয়ে রান্না করিয়ে খাওয়াবে। কখনোই না! বাড়ির কর্ত্রী হিসেবে সে-ই একা সব রান্না করে খাওয়াবে। আর বলেছে রান্না কেমন হয়েছে সেটা প্রিসাডিং অফিসার ম্যাডামের কাছে জেনে আমি যেন তাকে জানাই।"
"তুমি কি বললে!! আমি এই গ্রামের প্রথম মহিলা প্রিসাইডিং অফিসার?"
"ইস্স! নন্দিনী তার কথার মধ্যেকার কথা ধরে ফেলেছিলো। ভাগ্গিস সে আর বেশি কিছু বলেনি", মনে মনে ভেবে নিজেকে সাবধান করলো জাহাঙ্গীর।
ইলেকশন প্রটোকল অনুযায়ী সচরাচর কোনো হি'ন্দু বিবাহিতা মহিলাকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জায়গায় ইলেকশন ইনচার্জ করে পাঠানো হয়না, অনেক রকমের জটিলতা এড়ানোর জন্য। কিন্তু জাহাঙ্গীর যে নিজের কানেকশন কাজে লাগিয়ে নন্দিনীকে নিজের গ্রামে পোস্টিং দিয়ে আনিয়েছে, সেটা তো উপরমহল ব্যাতিত আর কোন মহলেই জ্ঞাত ছিলোনা।
"হ্যাঁ। মানে ওই আর কি! এখন তো সরকার নারীদের কে উদ্বুদ্ধ করছে বিভিন্ন বিষয়ে যোগদান বাড়িয়ে। এ রাজ্য থেকে বেশি বেশি সাংসদ মহিলাদের করে পাঠানো হচ্ছে দিল্লিতে। মহিলারা এখন সবচেয়ে বড়ো ভোটব্যাংক এরাজ্যে। সংসদেও তো এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করার কথা ভাবা হচ্ছে। তাই এই নারীঅধিকারের জোয়ারের মধ্যে দিয়ে তুমিও একটা ইতিহাস সৃষ্টি করলে, তাতে ক্ষতি কি।"
এইভাবে জোড়াতাপ্পি দিয়ে কথা বলে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো জাহাঙ্গীর। নাহলে তো পুরো প্লানের মা বোন এক হয়ে যেত, যদি কোনো ভাবে নন্দিনী আন্দাজ করতে পারতো হাকিমপুরে তারা আসাটা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। কোনো একজনের নিখুঁত প্ল্যানমাফিক তার আগমণ ঘটিয়াছে। উল্টে নন্দিনী এটা ভেবে গর্ববোধ করতে লাগলো যে সে প্রথম মহিলা অফিসার হিসেবে এই গ্রামে পদার্পণ করেছে। সে ভাবলো এবার তো আরোই আসবে এই গ্রামে ফিরে ফিরে, ফুলমণি, রুবিনাদের জন্য। তাদেরকে empower করতে। নন্দিনীর মনোবল যেন হঠাৎ করে আকাশ সমান বেড়ে গেছিলো।
"বাহঃ, এটা তো জানতাম না। I feel proud about myself....."
নন্দিনীকে দেখে জাহাঙ্গীর বুঝলো তার মনে কোনো সন্দেহের বীজ নেই, বরং সে নিজেকে নিয়ে উৎফুল্ল হয়ে মেতে উঠেছে। ভালোই! এরকমই থাক সে, সহজ-সরল। তাহলেই জাহাঙ্গীরের জন্য সুবিধা হবে বেশি। জাহাঙ্গীর আর বেশি কথা বাড়ালো না। সে নন্দিনীকে তার সহিত ২নং রুমে যেতে বললো, যেখানে দুপুরে লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানেই তারা ডিনার সারবে।
জাহাঙ্গীরের বউ রুবিনা এলাহী আয়োজন করে পাঠিয়েছিল। রুমালী রুটি, ভেজ তড়কা, মটর পনির, আলু চোখা, বোঁদে, এবং খাওয়ারের পর মুখশুদ্ধি। এত খাবার ও তার পরিমাণ দেখে নন্দিনীর চোখ কপালে উঠলো। সে ভাবলো রুবিনা হয়তো ভুলবশত তার পুরো ইলেকশন টিমের জন্য খাবার পাঠিয়েছে। কিন্তু জাহাঙ্গীর বললো সে আগেই তার স্ত্রীকে বলে দিয়েছিলো যে এই রাতে স্কু'লে নন্দিনী ম্যাডাম ছাড়া আর কেউ থাকবেনা। জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য স্কু'লেই রাত কাটাবে। তাই সব রান্না শুধু নন্দিনী এবং তার জামাই এর জন্য রেঁধে দিয়ে পাঠিয়েছে রুবিনা।
এখানে বলে রাখা ভালো যে মু'সলিম ধর্মাবলম্বী মানুষরা নিজের পত্নীদের যেমন বিবি বলে ডাকে, তেমন তাদের পত্নীরা নিজের স্বামীদের জামাই বলে অভিবাদন করে। হি'ন্দুদের কাছে জামাই এর অর্থ হলো মেয়ের/কন্যার স্বামী, আর মু'সলিম নারীদের ক্ষেত্রে সেই একই শব্দের সমার্থক নিজ স্বামী। সেই কারণে জাহাঙ্গীর রুবিনা কে বিবি বলে, আর রুবিনা জাহাঙ্গীরকে জামাই। বর্ডার এলাকার গ্রাম বলে কিছুটা বাংলাদেশের হাওয়া রয়েছে আকাশে-বাতাসে।
"তুমি যে রুবিনাকে বলে এসছো আজকে আমার সাথে থাকবে, সে কিছু মনে করেনি?"
"মনে করতে যাবে কেন? সে নিজেই আমাকে আরো জোর দিয়ে বললো তোমার যত্নের যেন কোনো ত্রুটি না করি, যা লাগবে তাই যেন তোমার সামনে এনে হাজির করি।"
"এত বিশ্বাস তোমার বউয়ের তোমার উপর? সে জানে দুপুরে তুমি কি করতে যাচ্ছিলে?"
"জানলেও কিছু বলতো না।"
"কেন??"
"কারণ এই গ্রামটা এখনও মান্ধাত্বার আমলের রীতিনীতি মেনে চলে, কি হি'ন্দু কি মু'সলিম, সবাই। কাগজে কলমে শরীয়া আইন না থাকলেও তা মানতে এখানে বাঁধা নেই। তাই এখানকার অনেক মু'সলিম পরিবারেই পুরুষদের একাধিক বিয়ে রয়েছে। আমি শুধু ব্যতিক্রম। তাই স্ত্রীয়ের থেকে খোলা নির্দেশ অনেক আগে থেকেই রয়েছে। তার শুধু আমার প্রতি ভরসাই নয়, অহংকারও রয়েছে। গ্রামের শিক্ষিত সরকারী চাকুরীজীবি শিক্ষক হয়েও এক নারীতেই আসক্ত হয়ে সংসার বেঁধেছি। শত প্রলোভন থাকার সত্ত্বেও। তাই আজ রাতে কোনো ছোটোখাটো ভুল যদি হয়েও যায় তাহলেও রুবিনা কিছু মনে করবে না আমি জানি।"
ছোট খাটো ভুল বলতে সে কি বোঝাতে চাইলো তা নন্দিনী স্পষ্ট অনুধাবন করতে পারলো। ফের একবার সাবধান করে নন্দিনী বললো, "তুমি আবার শুরু করলে জাহাঙ্গীর??"
"কি করলাম আবার??"
"এই ছোটখাটো ভুল বলতে তুমি কি বোঝাতে চাইছো? তাও আবার আজকের রাতে হয়ে যাওয়ার আশংকা করছো সেটা!"
"ওহঃ কিছুনা, একটু মজা করছিলাম। বন্ধু হয়ে বন্ধুর সাথে একটু মজা করতে পারিনা বুঝি? সুস্মিতা আসা ইস্তক দেখেছি তোমার সাথে ক্রমাগত খুঁনসুটি করে গ্যাছে, আর আমি করলেই দোষ!"
"তুমি সকাল থেকে আমার ব্যাপারে এত কিছু খেয়াল করছো? সুস্মিতা কতবার আমাকে tease করে কথা বলেছে, আমি তোমার থেকে অধিক কৌশিক বাবুর উপর কেন ভরসা করেছি, ইলেকশন নিয়ে কতটা টেন্সড আছি, এতকিছু আমার ব্যাপারে খেয়াল করলে কাজ করবে কখন?"
"ওহ কাজ হয়ে যাবে, এইটুকু ভরসা জাহাঙ্গীর রুবেল হাসানের উপর রাখতে পারো। আর বলছো খেয়াল করবো না? আমাদের গেরামের পত্থম মাইয়্যা প্রিসাডিং অফিসার বলে কথা! যত্নের কোনো ত্রুটি রাখতে দেবোনা এই ইতিহাস সৃষ্টিকর্ত্রী নারীর আপ্যায়নে", খুব চালাকির সাথে ঘুরিয়ে কথা বললো জাহাঙ্গীর, যাতে নন্দিনী ওর আসল মোটিভের বিষয় কিছু বুঝতে না পারে।.......
"ঠিক আছে, ঠিক আছে, মানলাম তুমি মজা করছিলে। তবে কালকে সবাই চলে আসলে আবার তুমি আমাকে আপনি বলেই সম্বোধন করবে। নাহলে ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।"
"কেন? একজন বিবাহিত পুরুষ অপর এক বিবাহিতা মহিলার সাথে ক্ষনিকের আলাপে ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনা?"
"আমি সেই কারণে বলছি না। আমি কালকের নির্বাচনে হেড ইনচার্জ, তুমি আমার আন্ডারে কাজ করবে অ্যাস্ আ লোকাল ইনচার্জ। নিজের জুনিয়র আমাকে তুমি করে ডাকবে এটা সবাই দেখলে আমাকে কেউ গুরুত্ব দেবেনা, বিশেষ করে আমার গভর্মেন্টাল পজিশন-টা কে। তাই বলছি আজকে বন্ধুত্বের খাতিরে তুমি করে ডাকছো ঠিক আছে, তবে কালকে নো তুমি, অনলি আপনি। আর নাম ধরে ডাকবে না। হয় শুধু ম্যাডাম বলবে, নাহলে নামের পরে ম্যাডাম বসিয়ে নন্দিনী ম্যাডাম বলে ডাকবে। রিংকুর মতো দিদিমণি বলেও ডাকতে পারো। দিদিমণি ডাকটা শুনতেও খুব ভালো লাগে। মনে হয় কেউ অফুরন্ত সম্মান দিয়ে ডাকছে। মেয়েদের আর কিই বা চাই, ওই সম্মানটা ছাড়া, তা কাজের জায়গায় হোক বা বাড়িতে", একনাগাড়ে বলে গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো নন্দিনী।
"ওকে দিদিমণি, সেরকম হলেও আমিও তোমাকে দিদিমণিই বলে ডাকবো।"
নন্দিনী কিছুটা ভেবে বললো, "না থাক! ম্যাডাম বলবে। নন্দিনী ম্যাডাম। এটা তোমার মুখে শুনতে ভালো লাগে।"
"ওহঃ রিয়েলি। আমার মুখে আর কি কি শুনতে তোমার ভালো লাগে বলো?"
নন্দিনী বুঝলো তার শেষ কথাটা বলা উচিত হয়নি। সে অত কিছু ভেবে বলেনি যে জাহাঙ্গীরের মুখ থেকে নন্দিনী ম্যাডাম ডাকটাই তার বেশি পছন্দ। কিন্তু কে বোঝে কার কথা! জাহাঙ্গীর তো নন্দিনীর রূপে মুগ্ধ হয়ে পুরোপুরিভাবে দিক্পানশূন্য হয়েগেছে। নন্দিনী সরল মনে যাই বলবে তাতেই সে অন্য অর্থ ধরে বসবে। তাই বেশি কথা না বাড়িয়ে নন্দিনী ডিনার-টা সারতে লাগলো। জাহাঙ্গীরও সেই দেখাদেখি খাওয়ারে মনোনিবেশ করলো। সত্যিই রুবিনা খুব ভালো রান্না করেছিলো। আসলে মন থেকে ভালোবেসে কারোর জন্য রান্না করলে সেই খাবার অমৃতসমানই হয়।
খাওয়া দাওয়া সেরে স্কু'ল প্রাঙ্গনের কলপাড়েই নন্দিনী হাত মুখ ধুয়ে নিলো। জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে বললো তাকে এঁটো-কাঁটা (খাবারের উচ্ছিষ্ট) তুলতে হবেনা। জাহাঙ্গীরই সেইসব তুলে যথাস্থানে ফেলে এসে জায়গাটাকে পরিষ্কার করে দেবে। নন্দিনী স্কু'ল প্রাঙ্গনের দালানে একটা টুল নিয়ে বসলো। ভদ্রতার খাতিরে জাহাঙ্গীরের জন্য অপেক্ষা করছিলো, কখন সে সবটা পরিষ্কার করে হাত মুখ ধুয়ে নেবে। এছাড়া তখন খোলা প্রাঙ্গনে দখিনা বাতাস খেলে যাচ্ছিলো যা খাবার পর dessert এর কাজ করে দিচ্ছিলো।
নিজের জন্য ধার্য করা শোয়ার ঘরে না গিয়ে নন্দিনী জাহাঙ্গীরের জন্য টুল পেতে বসে অপেক্ষা করছিলো দেখে জাহাঙ্গীরের খুব ভালো লাগলো বিষয়টা। নন্দিনী মেয়েটাকে যতটা একগুঁয়ে দাম্ভিক বলে তার মনে হয়েছিল হয়তো ততটাও সে নয়। বা হয়তো জাহাঙ্গীরের অতি যত্নেই নন্দিনীর দম্ভের দেওয়াল ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করেছিলো। এই দেওয়াল কতটা ভাঙে এখন শুধু সেটাই দেখার। .......
জাহাঙ্গীর নিজের বাড়ি থেকে নন্দিনীর জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলো। জাহাঙ্গীরকে আসতে দেখে রিংকু নন্দিনীর থেকে বিদায় নিলো। যাওয়ার সময় জাহাঙ্গীরকে সালাম ঠুকে রিংকু বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। তারপর যথারীতি "এই রাত তোমার আমার" হয়েগেলো নন্দিনী ও জাহাঙ্গীরের কাছে। জাহাঙ্গীর এসে নন্দিনীকে বললো তার স্ত্রী রুবিনা, তার নন্দিনী ম্যাডামের জন্য খাঁটি নিরামিষ খাবার পাঠিয়েছে। যদিও বর্তমান যুগে ব্রা'হ্মণ পরিবারেও আমিষ আহার গ্রহণ করা হয়, তবু জাহাঙ্গীররা মু'সলিম পরিবার বলেই আরো অধিক যত্ন নিয়ে হি'ন্দু ব্রা'হ্মণ বাড়ির বউয়ের জন্য রাতের খাবার বানিয়েছিলো, যাতে কোনো সন্দেহ না জাগে বিধর্মী বাড়ির খাবার বলে।
"নন্দিনী, আমার বউ রুবিনা তোমার জন্য খাঁটি হি'ন্দু খাবার বানিয়েছে।"
"খাবারের কি কোনো ধর্ম হয় জাহাঙ্গীর? তাছাড়া তুমি তোমার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা বউকে দিয়ে খাঁটালে কেন?"
"তা ঠিক, খাওয়ারের সত্যিই কোনো ধর্ম হয়না, যে অভুক্ত থাকে সেই শুধু বোঝে। তবুও হি'ন্দুদের ঘরে অনেক বাদ বিচার আছে, বিশেষ করে ব্রা'হ্মণ পরিবারে। তাই নিরামিষ খাবারকে আমরা সচরাচর হি'ন্দু খাবার বলি। আর বাই দা ওয়ে, আমার রুবিনা সাত মাস নয়, সে ছয় মাসের পোয়াতি।...."
"আমার রুবিনা?", জাহাঙ্গীরের মুখ থেকে 'আমার রুবিনা' কথাটা শুনে কেন জানি নন্দিনীর মন খুব বিচলিত হয়ে উঠলো। কিন্তু কেন?.... কারণ সকাল থেকে যে লোকটার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে এত attention সে পেয়ে এসেছে, তার মুখে হঠাৎ অন্য আরেক মেয়ের প্রতি এত আপন মনোভাব অনুভব করানোর পরোক্ষ প্রচেষ্টা কিছুটা খারাপ লাগার সঞ্চার ঘটায় বটে। হোক না সেই মেয়ে লোকটার নিজের স্ত্রী, তাতে কি! এই খারাপ লাগার পিছনে কোনো যুক্তি নাই। এ এক যুক্তিহীন খারাপ লাগা, অনৈতিক ও অহেতুক অধিকারবোধ, যা তর্কের দ্বারা সুরাহা নেই।
কিন্তু নন্দিনী সেসব ভাবনা কে আর বেশি আমল না দিয়ে রুবিনার প্রেগনেন্সির প্রসঙ্গ তুলে বললো, "সে সাত মাস হোক বা ছয় মাস, বেশি ফারাক নয়। অন্তঃসত্ত্বা তো নাকি! তাহলে তাকে দিয়ে আমার জন্য রান্না বানালে কেন? আমার খুব খারাপ লাগছে ভেবে, কারণ আমিও তো একজন মা। আর একজন মা হয়ে আরেক হবু মা-কে দিয়ে কেন কাজ করে যন্ত্রণা দেওয়াবো?"
"আমিও রুবিনা কে বলেছিলাম আমিনা রয়েছে যে আমাদের বাড়িতে কাজ করে, এখন আমার বিবি-কে দেখার জন্য চব্বিশ ঘন্টা থাকে, সে রান্না করে দেবে। কিন্তু রুবিনা নাছোড়বান্দা! সে বললো শহর থেকে তোমার প্রিসাডিং অফিসার ম্যাডাম এসছে, তাকে সে-ই নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে। ব্যাস! এত জোর করলো যে আমি আর না করতে পারলাম না।"
"তাও, তোমার বারণ করাই উচিত ছিল।"
"আমার বিবি আরো বললে তার বিয়ে হয়ে আসা ইস্তক এই প্রথম গ্রামের ভোটে কোনো মেয়েছেলে এত বড়ো পোস্ট নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার হয়ে এসছেন, তাকে কিনা ঘরের পরিচারিকা কে দিয়ে রান্না করিয়ে খাওয়াবে। কখনোই না! বাড়ির কর্ত্রী হিসেবে সে-ই একা সব রান্না করে খাওয়াবে। আর বলেছে রান্না কেমন হয়েছে সেটা প্রিসাডিং অফিসার ম্যাডামের কাছে জেনে আমি যেন তাকে জানাই।"
"তুমি কি বললে!! আমি এই গ্রামের প্রথম মহিলা প্রিসাইডিং অফিসার?"
"ইস্স! নন্দিনী তার কথার মধ্যেকার কথা ধরে ফেলেছিলো। ভাগ্গিস সে আর বেশি কিছু বলেনি", মনে মনে ভেবে নিজেকে সাবধান করলো জাহাঙ্গীর।
ইলেকশন প্রটোকল অনুযায়ী সচরাচর কোনো হি'ন্দু বিবাহিতা মহিলাকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জায়গায় ইলেকশন ইনচার্জ করে পাঠানো হয়না, অনেক রকমের জটিলতা এড়ানোর জন্য। কিন্তু জাহাঙ্গীর যে নিজের কানেকশন কাজে লাগিয়ে নন্দিনীকে নিজের গ্রামে পোস্টিং দিয়ে আনিয়েছে, সেটা তো উপরমহল ব্যাতিত আর কোন মহলেই জ্ঞাত ছিলোনা।
"হ্যাঁ। মানে ওই আর কি! এখন তো সরকার নারীদের কে উদ্বুদ্ধ করছে বিভিন্ন বিষয়ে যোগদান বাড়িয়ে। এ রাজ্য থেকে বেশি বেশি সাংসদ মহিলাদের করে পাঠানো হচ্ছে দিল্লিতে। মহিলারা এখন সবচেয়ে বড়ো ভোটব্যাংক এরাজ্যে। সংসদেও তো এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করার কথা ভাবা হচ্ছে। তাই এই নারীঅধিকারের জোয়ারের মধ্যে দিয়ে তুমিও একটা ইতিহাস সৃষ্টি করলে, তাতে ক্ষতি কি।"
এইভাবে জোড়াতাপ্পি দিয়ে কথা বলে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো জাহাঙ্গীর। নাহলে তো পুরো প্লানের মা বোন এক হয়ে যেত, যদি কোনো ভাবে নন্দিনী আন্দাজ করতে পারতো হাকিমপুরে তারা আসাটা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। কোনো একজনের নিখুঁত প্ল্যানমাফিক তার আগমণ ঘটিয়াছে। উল্টে নন্দিনী এটা ভেবে গর্ববোধ করতে লাগলো যে সে প্রথম মহিলা অফিসার হিসেবে এই গ্রামে পদার্পণ করেছে। সে ভাবলো এবার তো আরোই আসবে এই গ্রামে ফিরে ফিরে, ফুলমণি, রুবিনাদের জন্য। তাদেরকে empower করতে। নন্দিনীর মনোবল যেন হঠাৎ করে আকাশ সমান বেড়ে গেছিলো।
"বাহঃ, এটা তো জানতাম না। I feel proud about myself....."
নন্দিনীকে দেখে জাহাঙ্গীর বুঝলো তার মনে কোনো সন্দেহের বীজ নেই, বরং সে নিজেকে নিয়ে উৎফুল্ল হয়ে মেতে উঠেছে। ভালোই! এরকমই থাক সে, সহজ-সরল। তাহলেই জাহাঙ্গীরের জন্য সুবিধা হবে বেশি। জাহাঙ্গীর আর বেশি কথা বাড়ালো না। সে নন্দিনীকে তার সহিত ২নং রুমে যেতে বললো, যেখানে দুপুরে লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানেই তারা ডিনার সারবে।
জাহাঙ্গীরের বউ রুবিনা এলাহী আয়োজন করে পাঠিয়েছিল। রুমালী রুটি, ভেজ তড়কা, মটর পনির, আলু চোখা, বোঁদে, এবং খাওয়ারের পর মুখশুদ্ধি। এত খাবার ও তার পরিমাণ দেখে নন্দিনীর চোখ কপালে উঠলো। সে ভাবলো রুবিনা হয়তো ভুলবশত তার পুরো ইলেকশন টিমের জন্য খাবার পাঠিয়েছে। কিন্তু জাহাঙ্গীর বললো সে আগেই তার স্ত্রীকে বলে দিয়েছিলো যে এই রাতে স্কু'লে নন্দিনী ম্যাডাম ছাড়া আর কেউ থাকবেনা। জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য স্কু'লেই রাত কাটাবে। তাই সব রান্না শুধু নন্দিনী এবং তার জামাই এর জন্য রেঁধে দিয়ে পাঠিয়েছে রুবিনা।
এখানে বলে রাখা ভালো যে মু'সলিম ধর্মাবলম্বী মানুষরা নিজের পত্নীদের যেমন বিবি বলে ডাকে, তেমন তাদের পত্নীরা নিজের স্বামীদের জামাই বলে অভিবাদন করে। হি'ন্দুদের কাছে জামাই এর অর্থ হলো মেয়ের/কন্যার স্বামী, আর মু'সলিম নারীদের ক্ষেত্রে সেই একই শব্দের সমার্থক নিজ স্বামী। সেই কারণে জাহাঙ্গীর রুবিনা কে বিবি বলে, আর রুবিনা জাহাঙ্গীরকে জামাই। বর্ডার এলাকার গ্রাম বলে কিছুটা বাংলাদেশের হাওয়া রয়েছে আকাশে-বাতাসে।
"তুমি যে রুবিনাকে বলে এসছো আজকে আমার সাথে থাকবে, সে কিছু মনে করেনি?"
"মনে করতে যাবে কেন? সে নিজেই আমাকে আরো জোর দিয়ে বললো তোমার যত্নের যেন কোনো ত্রুটি না করি, যা লাগবে তাই যেন তোমার সামনে এনে হাজির করি।"
"এত বিশ্বাস তোমার বউয়ের তোমার উপর? সে জানে দুপুরে তুমি কি করতে যাচ্ছিলে?"
"জানলেও কিছু বলতো না।"
"কেন??"
"কারণ এই গ্রামটা এখনও মান্ধাত্বার আমলের রীতিনীতি মেনে চলে, কি হি'ন্দু কি মু'সলিম, সবাই। কাগজে কলমে শরীয়া আইন না থাকলেও তা মানতে এখানে বাঁধা নেই। তাই এখানকার অনেক মু'সলিম পরিবারেই পুরুষদের একাধিক বিয়ে রয়েছে। আমি শুধু ব্যতিক্রম। তাই স্ত্রীয়ের থেকে খোলা নির্দেশ অনেক আগে থেকেই রয়েছে। তার শুধু আমার প্রতি ভরসাই নয়, অহংকারও রয়েছে। গ্রামের শিক্ষিত সরকারী চাকুরীজীবি শিক্ষক হয়েও এক নারীতেই আসক্ত হয়ে সংসার বেঁধেছি। শত প্রলোভন থাকার সত্ত্বেও। তাই আজ রাতে কোনো ছোটোখাটো ভুল যদি হয়েও যায় তাহলেও রুবিনা কিছু মনে করবে না আমি জানি।"
ছোট খাটো ভুল বলতে সে কি বোঝাতে চাইলো তা নন্দিনী স্পষ্ট অনুধাবন করতে পারলো। ফের একবার সাবধান করে নন্দিনী বললো, "তুমি আবার শুরু করলে জাহাঙ্গীর??"
"কি করলাম আবার??"
"এই ছোটখাটো ভুল বলতে তুমি কি বোঝাতে চাইছো? তাও আবার আজকের রাতে হয়ে যাওয়ার আশংকা করছো সেটা!"
"ওহঃ কিছুনা, একটু মজা করছিলাম। বন্ধু হয়ে বন্ধুর সাথে একটু মজা করতে পারিনা বুঝি? সুস্মিতা আসা ইস্তক দেখেছি তোমার সাথে ক্রমাগত খুঁনসুটি করে গ্যাছে, আর আমি করলেই দোষ!"
"তুমি সকাল থেকে আমার ব্যাপারে এত কিছু খেয়াল করছো? সুস্মিতা কতবার আমাকে tease করে কথা বলেছে, আমি তোমার থেকে অধিক কৌশিক বাবুর উপর কেন ভরসা করেছি, ইলেকশন নিয়ে কতটা টেন্সড আছি, এতকিছু আমার ব্যাপারে খেয়াল করলে কাজ করবে কখন?"
"ওহ কাজ হয়ে যাবে, এইটুকু ভরসা জাহাঙ্গীর রুবেল হাসানের উপর রাখতে পারো। আর বলছো খেয়াল করবো না? আমাদের গেরামের পত্থম মাইয়্যা প্রিসাডিং অফিসার বলে কথা! যত্নের কোনো ত্রুটি রাখতে দেবোনা এই ইতিহাস সৃষ্টিকর্ত্রী নারীর আপ্যায়নে", খুব চালাকির সাথে ঘুরিয়ে কথা বললো জাহাঙ্গীর, যাতে নন্দিনী ওর আসল মোটিভের বিষয় কিছু বুঝতে না পারে।.......
"ঠিক আছে, ঠিক আছে, মানলাম তুমি মজা করছিলে। তবে কালকে সবাই চলে আসলে আবার তুমি আমাকে আপনি বলেই সম্বোধন করবে। নাহলে ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।"
"কেন? একজন বিবাহিত পুরুষ অপর এক বিবাহিতা মহিলার সাথে ক্ষনিকের আলাপে ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনা?"
"আমি সেই কারণে বলছি না। আমি কালকের নির্বাচনে হেড ইনচার্জ, তুমি আমার আন্ডারে কাজ করবে অ্যাস্ আ লোকাল ইনচার্জ। নিজের জুনিয়র আমাকে তুমি করে ডাকবে এটা সবাই দেখলে আমাকে কেউ গুরুত্ব দেবেনা, বিশেষ করে আমার গভর্মেন্টাল পজিশন-টা কে। তাই বলছি আজকে বন্ধুত্বের খাতিরে তুমি করে ডাকছো ঠিক আছে, তবে কালকে নো তুমি, অনলি আপনি। আর নাম ধরে ডাকবে না। হয় শুধু ম্যাডাম বলবে, নাহলে নামের পরে ম্যাডাম বসিয়ে নন্দিনী ম্যাডাম বলে ডাকবে। রিংকুর মতো দিদিমণি বলেও ডাকতে পারো। দিদিমণি ডাকটা শুনতেও খুব ভালো লাগে। মনে হয় কেউ অফুরন্ত সম্মান দিয়ে ডাকছে। মেয়েদের আর কিই বা চাই, ওই সম্মানটা ছাড়া, তা কাজের জায়গায় হোক বা বাড়িতে", একনাগাড়ে বলে গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো নন্দিনী।
"ওকে দিদিমণি, সেরকম হলেও আমিও তোমাকে দিদিমণিই বলে ডাকবো।"
নন্দিনী কিছুটা ভেবে বললো, "না থাক! ম্যাডাম বলবে। নন্দিনী ম্যাডাম। এটা তোমার মুখে শুনতে ভালো লাগে।"
"ওহঃ রিয়েলি। আমার মুখে আর কি কি শুনতে তোমার ভালো লাগে বলো?"
নন্দিনী বুঝলো তার শেষ কথাটা বলা উচিত হয়নি। সে অত কিছু ভেবে বলেনি যে জাহাঙ্গীরের মুখ থেকে নন্দিনী ম্যাডাম ডাকটাই তার বেশি পছন্দ। কিন্তু কে বোঝে কার কথা! জাহাঙ্গীর তো নন্দিনীর রূপে মুগ্ধ হয়ে পুরোপুরিভাবে দিক্পানশূন্য হয়েগেছে। নন্দিনী সরল মনে যাই বলবে তাতেই সে অন্য অর্থ ধরে বসবে। তাই বেশি কথা না বাড়িয়ে নন্দিনী ডিনার-টা সারতে লাগলো। জাহাঙ্গীরও সেই দেখাদেখি খাওয়ারে মনোনিবেশ করলো। সত্যিই রুবিনা খুব ভালো রান্না করেছিলো। আসলে মন থেকে ভালোবেসে কারোর জন্য রান্না করলে সেই খাবার অমৃতসমানই হয়।
খাওয়া দাওয়া সেরে স্কু'ল প্রাঙ্গনের কলপাড়েই নন্দিনী হাত মুখ ধুয়ে নিলো। জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে বললো তাকে এঁটো-কাঁটা (খাবারের উচ্ছিষ্ট) তুলতে হবেনা। জাহাঙ্গীরই সেইসব তুলে যথাস্থানে ফেলে এসে জায়গাটাকে পরিষ্কার করে দেবে। নন্দিনী স্কু'ল প্রাঙ্গনের দালানে একটা টুল নিয়ে বসলো। ভদ্রতার খাতিরে জাহাঙ্গীরের জন্য অপেক্ষা করছিলো, কখন সে সবটা পরিষ্কার করে হাত মুখ ধুয়ে নেবে। এছাড়া তখন খোলা প্রাঙ্গনে দখিনা বাতাস খেলে যাচ্ছিলো যা খাবার পর dessert এর কাজ করে দিচ্ছিলো।
নিজের জন্য ধার্য করা শোয়ার ঘরে না গিয়ে নন্দিনী জাহাঙ্গীরের জন্য টুল পেতে বসে অপেক্ষা করছিলো দেখে জাহাঙ্গীরের খুব ভালো লাগলো বিষয়টা। নন্দিনী মেয়েটাকে যতটা একগুঁয়ে দাম্ভিক বলে তার মনে হয়েছিল হয়তো ততটাও সে নয়। বা হয়তো জাহাঙ্গীরের অতি যত্নেই নন্দিনীর দম্ভের দেওয়াল ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করেছিলো। এই দেওয়াল কতটা ভাঙে এখন শুধু সেটাই দেখার। .......