Thread Rating:
  • 47 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
এক মুঠো খোলা আকাশ
#91
পর্ব ৮

নন্দিনী অনিকেত-কে ফোন করলো। বেশ কিছুক্ষণ বেজে যাওয়ার পর সে ধরলো। সামান্য কিছু কথা হলো তাদের মধ্যে। নন্দিনী জিজ্ঞেস করলো অনিকেত বাড়ি ফিরেছে কিনা। অনিকেত আমতা আমতা করতেই নন্দিনী বুঝলো এখনও মহারাজার বাড়িতে আগমণ ঘটেনি। তাহলে গুড্ডির কথা কাকে জিজ্ঞেস করবে? শাশুড়ি মা যা কথা শোনালো তাকে, তারপর মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করার সাহস পায়নি সে। ভেবেছিলো অনিকেতকে ফোন করে গুড্ডিটার খোঁজ নেবে। কিন্তু কোথায়? বাবু তো এখনও বাড়িই ফেরেনি। যদিও নন্দিনী জানে গুড্ডি তার ঠাকুমা-ঠাকুর্দা কাছে নিরাপদেই আছে, তাও সে মা তো।

অফিস থেকে দেরী করে বাড়ি ফেরাটা আজকের নয়, বহু পুরোনো স্বভাব অনিকেতের। বিয়ের পর থেকে দেখে আসছে নন্দিনী। বাড়িতে এত সুন্দরী বউ থাকতেও মন টেকেনা, মন খালি বহির্গামী। বন্ধুদের সাথে আড্ডা তার লেগেই থাকে। নন্দিনী বুঝতে পেরেছে আজও অনিকেত বন্ধুদের সাথেই রয়েছে, যা ফোনের ওপার থেকে হই-হুল্লোড়ের আওয়াজ শুনেই আন্দাজ করা যাচ্ছে।

অনিকেতের যেন তেন প্রকারণে ফোন রাখার একটা প্রচ্ছন্ন তাড়া নন্দিনী অনুভব করতে পারছিলো অনিকেতের কথার মধ্যে। অথচ নন্দিনী চাইছিলো এই সময়টা অনিকেত ওর সাথে কিছুটা কথা বলুক। সে তো আর বেশি কিছু চায়না। শুধু চায় একটু সময় অনিকেতের কাছ থেকে, কথা বলার জন্য, একসাথে কাটানোর জন্য। এটাও কি স্ত্রী হিসেবে অনেক বেশি চাওয়া হয়ে যায় অনিকেতের কাছে? মনে মনে নিজেই নিজের কাছে প্রশ্নটা রাখলো নন্দিনী।

অনিকেত কথা বলতে ইন্টারেস্টেড নেই দেখে নন্দিনীও আর জোর করলো না। রাখছি বলে ফোনটা কেটে দিলো। বোঝাই যাচ্ছিলো নন্দিনী খুব অসন্তুষ্ট, রেগে আছে অনিকেতের উপর। কিন্তু রাগলেও বা কি হবে! অনিকেতের কি তাতে কিছু যায় আসে? আসেনা। অনিকেতের উপর অভিমান করা যেন ভস্মে ঘি ঢালার মতো। নন্দিনী মাঝে মাঝে ভাবে সুস্মিতা হয়তো ঠিকই করে অন্য ছেলেকে মন দিয়ে। যতই সে পরকীয়া বিষয়টিকে ভালো চোখে না দেখুক, কিন্তু কতটা অবহেলিত হলে একটি বিবাহিতা মেয়ে পরকীয়া নামক নিষিদ্ধ কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারে, সেটা অনিকেতের মতো স্বামীদের দেখলেই বোঝা যায়। অনিকেত সত্যিই লাকি, যে সে নন্দিনীর মতো একজন স্ত্রীকে পেয়েছে। আপাতত তো সে অন্য পথ মাড়ায়নি। সুস্মিতা হলে হয়তো কবেই কোনো এক অংকিত বা জাহাঙ্গীরকে ধরে অনিকেতকে ডিভোর্স দিয়ে পালিয়ে যেত নিজের প্রেমিকের সাথে।

কিন্তু এক মিনিট, অঙ্কিতের সাথে সে জাহাঙ্গীরের নামটা কেন ভাবলো? ফের নন্দিনী নিজেকে প্রশ্ন করলো! জাহাঙ্গীর কার প্রেমিক? তার? ছিঃ! কখনোই না। তবে একটা কথা তো মানতে হবে, হাকিমপুরে আসা ইস্তক জাহাঙ্গীর যেন তাকে চোখে হারাচ্ছে! এর ৫ শতাংশ নজরবন্দী যদি সে অনিকেতের দ্বারা হতে পারতো তাহলে তার জীবনটা বর্তে যেত। কি আর করা যাবে! বলেনা কান কাঁদে সোনার জন্য, আর সোনা কাঁদে কানের জন্য। যে ইম্পর্টেন্স নন্দিনী অনিকেতের কাছে চেয়ে চেয়েও পায়না, তা সে জাহাঙ্গীরের কাছে পেয়েও স্বেচ্ছায় হেলায় হারিয়ে দিচ্ছে!

এখানে আরো একটি বাংলা প্রবাদ যথার্থ হয়, "গেঁয়ো যোগী ভিখ পায়না".... যে গ্রামে সে রয়েছে সেখানকার বেশ মান্নিগন্নি লোক জাহাঙ্গীর রুবেল হাসান নন্দিনীর এক ঝলক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে, অথচ নন্দিনী ফোনে ডায়াল করছে সুদূর কলকাতাস্থিত অনিকেত চ্যাটার্জি-কে। না চাইতেও বারবার তাই অনিকেতের সাথে জাহাঙ্গীরের তুলনা তার মন টেনে আনছে। কারণ এক দিকে সবুজাভ উর্বর জমি, তো আরেকদিকে অনুর্বর শুষ্ক মরুভূমি। কিন্তু সেই মরুভূমিটাই তার আপন, উর্বর মৃত্তিকাটা নয়। যার কাছে ভালোবাসা চায় সে দেয়না, আর যে তার জীবনে কোনো জায়গা রাখেনা সে কোনো এক্সপেকটেশন ছাড়াই তার প্রতি ভালোবাসা বিলিয়ে যাচ্ছে।

নন্দিনী তাই একবার জাহাঙ্গীরকে খুঁজলো। কি করছে সে সেই বিষয়ে কৌতূহল হলো তার। তাই টিচার্স রুম থেকে বেরিয়ে স্কু'ল প্রেমিসেসে এলো। বেশি খুঁজতেও হলো না। কিছুটা দূরেই চাতক পাখির মতো তার দিকে চেয়ে দাঁড়িয়েছিল জাহাঙ্গীর। সেই সিচুয়েশনে নিজের স্বামীর কাছ থেকে অবহেলিত হওয়ায় নন্দিনীর মনে কিছুটা হলেও জাহাঙ্গীরের জন্য মায়া জন্মালো। জাহাঙ্গীরের এই আপাত নিরামিষ এডমীরেশনের মধ্যে আর কোনো খাদ খুঁজে পেলোনা নন্দিনী। এগিয়ে গেলো সে জাহাঙ্গীরের দিকে কথা বলার জন্য। কারণ স্কু'লে তখন সে ছাড়া কথা বলার মতো কেউ নেইও।

[Image: 66178795-2747390835332818-7956510762191552512-n.jpg]
বিয়ের পূর্বে কলেজপড়ুয়া নন্দিনীর খোলামেলা জীবন, যখন শশুড়বাড়ির অহেতুক বিধিনিষেধ আরোপিত হয়নি

নন্দিনীকে আসতে দেখে জাহাঙ্গীরের ভেতরটা ধুক্পুক ধুক্পুক করতে লাগলো! অত বড়ো দুঃসাহসী লোকটারও এরকম সুন্দরী অপ্সরা-কে কোনো কারণ ছাড়া অপ্রত্যাশিতভাবে তার পানে এগোতে দেখে হাত পা নার্ভাসে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো!

জাহাঙ্গীরের কাছে গিয়ে নন্দিনী জিজ্ঞেস করলো, "আচ্ছা, সুস্মিতা ম্যাডাম ঠিক কখন বেড়িয়েছেন?"

"এই তো বিকেল চারটে নাগাদ! আপনি তখন একটা টিচার্স রুমে মেঝেতে মাদুর পেতে রেস্ট নিচ্ছিলেন। রিংকুই মনে হয় ব্যবস্থাটা করে দিয়েছিলো।"

"হ্যাঁ, রিংকু ছেলেটা খুব ভালো।"

"আর আমি?"

"মানে?"

"নাহঃ, কিছু না।"

"যাই হোক, সুস্মিতা ঠিক কার সাথে গেছিলো? মানে লোকটাকে দেখেছেন?"

"হ্যাঁ তো, উনি ওঁনার লাভারের সাথে চলে গেলেন।"

"কি, আপনি কিভাবে জানলেন যে..... যে এসেছিল সে ওর ইয়ে হয়...... মানে....."

"সেটা আপনিও জানেন। তাই জন্য তো সুস্মিতা দেবীর প্রেমিকের কথা আমার মুখ থেকে শুনেই আপনি fumble করতে শুরু করে দিলেন। ভয় পাচ্ছেন, পাছে এই কথা যদি আমি পাঁচ কান করে দিই। ভয় নেই, সেই ধরণের মানুষ আমি নই। এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারেন।....."

"আপনি এতটা সিওর হলেন কি করে যে আমি সুস্মিতার অ্যাফেয়ার এর ব্যাপারে জানি?"

"প্রথমত সুস্মিতা দেবী এখানে আসা ইস্তক নিজেই বলেছে আপনি নাকি তাঁর বেস্ট ফ্রেন্ড হন। বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার দরুন এইটুকু সিক্রেট আপনি জানবেন না? তা কখনও হয়না। তাছাড়া একজন সৎ চরিত্রবতী নারীর প্রধান লক্ষন কি হয়ে থাকে জানেন? তাঁরা কখনও মিথ্যে বলতে পারেনা, বললেও সেটা তাদের মুখমন্ডলের আবহাওয়ায় ধরা পড়ে যায়, যেমন আপনি। এই যে সুস্মিতার বয়ফ্রেন্ড এর কথাটা শুনে আপনি তোতলিয়ে গেলেন, এটাই জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ আপনার সুস্মিতার অ্যাফেয়ারের ব্যাপারে অবগত হওয়ার।"

"আর আপনি এটা জানলেন কি করে যে সুস্মিতার অ্যাফেয়ার চলছে? যে এসছিল ওকে নিতে সে ওর লাভার, হাসবেন্ড নয়, সেটা কি করে বুঝলেন? আমার fumble রিঅ্যাকশন তো এখন দেখলেন, তখন বুঝলেন কি করে যখন সুস্মিতা অঙ্কিতের সাথে বাইকে করে চলে গেলো?"

"ওহঃ তো ছেলেটার নাম অঙ্কিত!"

নন্দিনী দাঁতে জীভ কাটলো। কি দরকার ছিল অঙ্কিতের নামটা নেওয়ার? নিজেই নিজেকে দুষলো। সুস্মিতা যদি জানতে পারে আমি ওর বয়ফ্রেন্ডের নাম জাহাঙ্গীরকে মুখ ফস্কে বলে দিয়েছি তখন ও কিনা কি ভাববে তার সম্পর্কে! বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে! তাই কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে নন্দিনী বললো, "হাঁ, ওর নাম অঙ্কিত। কিন্তু এই কথাটা কাউকে না বললেই ভালো হয়। সুস্মিতাও যাতে জানতে না পারে আমি আপনাকে অঙ্কিতের নামটা বলেছি। এইটুকু গোপনীয়তা কি আপনার কাছ থেকে এক্সপেক্ট করতে পারি না?"

"গোপনীয়তা??.... হ্যাঁ, তা এক্সপেক্ট করতেই পারেন। তবে একটা শর্তে......"

"আপনারা পুরুষমানুষেরা নিঃশর্তে কোনো মেয়ের কথা রাখতে পারেননা না? সবসময়ে কোনো না কোনো ফন্দী এঁটেই চলেন ভেতর ভেতর!"

"আরে আগে শর্তটা তো শুনেনিন। পনিরের থেকেও নিরামিষ শর্ত এটা। তা না শুনেই হি'ন্দু মু'সলিম নির্বিশেষে সকল পুরুষজাতিকে তিরস্কার করতে শুরু করে দিলেন!....."

নন্দিনী অনেক ভেবে চিন্তে বললো, "আচ্ছা ঠিক আছে, বলুন কি আপনার নিরামিষ শর্ত?"

"কিছুই না, আমার সাথে তোমাকে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে হবে। একদম নির্ভেজাল নিরামিষ বন্ধুত্ব, পনিরের মতো। আর এখন থেকে নো আপনি, ওনলি তুমি! কারণ বন্ধুত্বে আপনি মানায় না, বড়ো বেলার বন্ধুত্বে তুই করে সম্বোধনও মানায় না। অগত্যা তুমি। ....ওকে ??"

"ঠিক আছে, তবে শুধু বন্ধু, তার বেশি কিচ্ছু নয়।"

"আমি রাজি নন্দিনী।"

জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে নাম ধরে ডাকতে শুরু করলো। নন্দিনী কিছুটা বিব্রত বোধ করলো তাতে, তবু সে কিছু বললো না। ভাবলো তাদের এই বন্ধুত্বের স্থায়িত্বই বা ক'দিন! আজ আর কাল, তারপর সে নিজ বাসায় ফিরে যাবে, স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করবে, আর জাহাঙ্গীরও এখানে যেমন দিব্যি ছিল তেমনই থাকবে। ফোন নাম্বার আদান-প্রদান যদি করতেও হয়, তবুও সে কলকাতা ফিরে জাহাঙ্গীরের কোনো বৈদ্যুতিন বার্তার জবাব দেবেনা। মুছে দেবে এই লোকটাকে তার স্মৃতি থেকে। তবে এই দু'দিনের বন্ধুত্বের খাতিরে যদি জাহাঙ্গীর নিজের জান প্রাণ লড়িয়ে তাকে নির্বাচনের ডিউটিতে সাহায্য করে তবে সেই সাহায্য নিতে ক্ষতি কি? সে তো আর জাহাঙ্গীরকে কোনোভাবে প্রলোভিত করবে না। জাহাঙ্গীরের সাথে দু'দিনের জন্য একটা নিরামিষ নির্ভেজাল বন্ধুত্ব করে গ্রামের পঞ্চায়েত নির্বাচনটাকে সহজভাবে উতরে দেবে। ব্যাস! এতে অন্যায়ের কিছু নেই।

কথায় কথায় জাহাঙ্গীরও নন্দিনীকে তার নাম ধরে ডাকতে অনুরোধ করলো। নন্দিনী তাতে রাজিও হয়েগেলো। নিরামিষ বন্ধুত্ব বলে কথা। যদিও জাহাঙ্গীর সেটাকে কতটা নিরামিষ রাখতে পারবে সেটা ছিল লাখ টাকার প্রশ্ন। মু'সলমান ঘরের ছেলে, তার কি নিরামিষ আহারে পেট ভরে? কে জানে!

"তুমি বললে না তো জাহাঙ্গীর, অঙ্কিতকে সুস্মিতার বয়ফ্রেন্ড মনে হলো কেন তোমার?"

নন্দিনীর মুখে তার প্রতি তুমি ডাকটা শুনে জাহাঙ্গীরের মনে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। ইচ্ছে করছিলো যেন নন্দিনীর দিকে আজন্ম চেয়ে থাকে সে আর এই তুমি ডাকটা ক্রমাগত শুনতে থাকে। গায়ের রোম খাঁড়া হয়ে উঠছিলো জাহাঙ্গীরের।

"কি হলো, বলো? কি করে বুঝলে ওদের অ্যাফেয়ারের বিষয়টা?", নন্দিনী আবার জিজ্ঞেস করলো জাহাঙ্গীরকে।

"আমি ওদের দুজনকে একসাথে দেখেই তা বুঝতে পেরেছি। একজন ত্রিশোর্ধ মহিলার বর তো আর ২০-২৫ বয়সী ছোকরা হবেনা। এটা কমন সেন্স! তার উপর কিছু মাইন্ড করো না সুস্মিতাকে দেখেও বোঝা যায় যে সে কিছুটা বাচাল গোছের মেয়ে, তোমার বান্ধবী হয়েও একেবারে তোমার বিপরীত ঘরানার মেয়ে!"

"তাই বলে আমাকে নিয়ে এরূপ কোনো মনোভাব মনে পোষণ করে বসো না যেন।"

"না না, তুমি একদম আলাদা। সবার থেকে আলাদা। বললাম না তুমি আর সুস্মিতা হরিহর আত্মার মতো বন্ধু হলেও দুজনের মধ্যেকার পার্থক্য আকাশ-পাতাল!"

"হুমঃ, বুঝলাম। চড়ের এফেক্টটা এখনও রয়েছে..... তাই আমার সম্পর্কে এত ভালো ভালো কথা বলা হচ্ছে", মজার ছলে নন্দিনী বলে উঠলো।

"কি যে বলেন ম্যাডাম, সেই কৃতকর্মের জন্য আমি যেমন তোমার কাছ থেকে চড় খেয়েছি, তেমনই সেই ঘটনার জন্য আমি ভীষণ লজ্জাও বোধ করেছি।"

"ঠিক আছে, ঠিক আছে, তাহলে ওসব কথা এখন বাদ দাও। আমাকে বলো রাতে থাকার কিরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে? তুমি বাড়ি যাবেনা? আমার টিমের সবাই তো কোনো না কোনো বাহানা দিয়ে বেরিয়ে গ্যাছে, তুমিই বা কেন পড়ে রয়েছো? তোমার তো আবার এই গ্রামেই বাড়ি, পারমিশন দিলাম যাও চলে যাও। থাকতে হবেনা কাউকে", মুখে বললেও নন্দিনী মনে মনে চাইছিলো জাহাঙ্গীর থেকে যাক, ফর দা সেফটি রিজেন।

নন্দিনীর সত্যিই ভয় লাগছিলো একা রাতে এত বড়ো স্কু'ল বিল্ডিং-এ থাকতে। জাহাঙ্গীর লোকাল লোক। নন্দিনী নিজেই দেখেছে শাসক দলের ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম থেকে শুরু করে পুলিশ সুপার সুবীর ভুতোড়িয়া সবাই ওকে সমঝে চলে। মনে মনে নন্দিনী জানে এই জাহাঙ্গীর লোকটার নিশ্চিত খুব দাপট রয়েছে তাঁর নিজের গ্রামে। তাই সে থাকলে নন্দিনী সত্যিই নিরাপদ ফীল করবে রাতে। কিন্তু মুখ ফুটে বলার জো নেই তার। পাছে সুস্মিতার মতো তাকেও যদি জাহাঙ্গীর সেই একই ক্যাটেগরিতে ফেলে দেয়, জাহাঙ্গীরের চোখে যাকে বলে বাচাল মেয়েদের ঘরানা! নন্দিনী জাহাঙ্গীরকে যতটুকু চিনেছিলো তার মনে হয়েছিল সে যতই পারমিশন দিক না কেন জাহাঙ্গীর ওকে একা ফেলে যাবেনা। তবুও সে জাহাঙ্গীরকে বাড়ি চলে যেতে বললো যাতে সে নিজেকে নন্দিনীর কাছে অপরিহার্য বলে মনে না করে।

জাহাঙ্গীর বললো, "না নন্দিনী, সেটা কক্ষনো সম্ভব নয়। তুমি বললেও আমি এখান থেকে কোত্থাও নড়ছি না। তুমি আমার গ্রামের অতিথি, তার উপর আমারই স্কু'লে প্রিসাইডিং অফিসার হয়ে এসেছো। তোমাকে আমি বন্ধু বলে মেনেছি। তোমাকে একা ফেলে যাই কি করে? আমার বোধ বুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে! মনে নেই তোমার শাশুড়িমা-কে আমি কি কথা দিয়েছি? জাহাঙ্গীর রুবেল হাসান কখনো নিজের কথার খেলাপ করেনা। তোমার নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন আমার!"

নন্দিনী জাহাঙ্গীরকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করলো। বোঝার চেষ্টা করছিলো জাহাঙ্গীরের বলা কথাগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ। কারণ নন্দিনী বুঝে পাচ্ছিলো না, তার এটা ভেবে আস্বস্ত থাকা উচিত যে এত বড়ো স্কু'লে জাহাঙ্গীর থেকে যেতে চাইছে তাকে কেবল সঙ্গ দেওয়ার জন্য! তাকে নিরাপত্তা দিতে? নাকি দুপুরে ঘটে যাওয়া অনভিপ্রেত ঘটনা অর্থাৎ নন্দিনীর ঠাঁস করে জাহাঙ্গীরের গালে চড় বসিয়ে দেওয়ার প্রতিশোধ নেওয়ার সুপ্ত ইচ্ছে নিয়েই কি জাহাঙ্গীর থেকে যেতে চাইছে? কোনটা? ওইসব বন্ধুত্ব, দায়িত্ববোধ কি সব বাহানা? মুখে যাই বলুক, মনে মনে নন্দিনী এত সহজে জাহাঙ্গীরকে বিশ্বাস করবে না বলেই প্রাথমিকভাবে ঠিক করে রেখেছিল।

তখন স্কু'ল প্রাঙ্গনে সর্বস্তরে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করছিলো। তার মধ্যে থেকে জাহাঙ্গীরের মুখটা কিরকম যেন নিষ্পাপ কিন্তু মায়াবী লাগছিলো নন্দিনীর। জাহাঙ্গীরের হাবভাব দেখে নন্দিনী বোঝার চেষ্টা করছিলো বটে জাহাঙ্গীরের মনের ভেতরে কি চলছে সেটা জানার। কিন্তু কিছুই উদ্ঘাটন করতে পারছিলোনা সে। সিন্ধু সভ্যতার লিপির থেকেও কঠিন ছিল জাহাঙ্গীরের চোখের ভাষা পড়া! রহস্যের আরেকনাম যেন হয়ে উঠেছিল জাহাঙ্গীর রুবেল হাসান!

গোটা স্কু'লে সেই অর্থে শুধু নন্দিনী আর জাহাঙ্গীরই তো রয়েছিল। তাই আর কোনো উপায় না দেখে, না না করেও নন্দিনীর কেন জানিনা জাহাঙ্গীরকে বিশ্বাস করতে খুব ইচ্ছে করলো। দুপুরে এত নাটক হওয়ার পরও। বারবার তার মনে হলো জাহাঙ্গীর যা বলছে তা হয়তো সত্যি মন থেকে বলছে। সে হয়তো সত্যিই নন্দিনীর পাশে থাকার জন্যই স্কু'লে এই রাতটা থেকে যেতে চাইছে। নন্দিনী ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলো জাহাঙ্গীর যেন কোনো কু'মতলবে তার সাথে স্টে করার প্ল্যান না করে। 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: এক মুঠো খোলা আকাশ - by Manali Basu - 13-02-2025, 07:54 PM



Users browsing this thread: anik baran, 5 Guest(s)