31-12-2018, 01:25 PM
২৫।।
খাটের ব্যাকরেস্টে বালিশটা রেখে হেলান দিয়ে বসে পৃথা... ‘আমার গায়ে একটু চাঁদরটা টেনে দেবে?’ অর্নবের উদ্দেশ্যে বলে সে।
অর্নব চাদরটা পৃথার গায়ে টেনে দিতে গিয়ে খেয়াল করে চোখদুটো ফের একটু লালচে হয়ে উঠেছে... দেখে উদবিগ্ন হয়... পৃথার কপালে হাত রেখে বলে ওঠে, ‘দেখছো... তোমার দুষ্টুমীর জন্য ফের মনে হচ্ছে জ্বর আসছে... তখন বারণ করেছিলাম ওই রকম অতক্ষন বাথরুমে আদুর গায়ে না থাকতে...’
অর্নব তার প্রতি এতটা কন্সার্নড দেখে খুশি হয় মনে মনে পৃথা, ম্লান হেসে বলে, ‘আহা... সব দোষ আমার, না? আর বাবুর যে আরামে চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেটার বেলায়?’
‘তুমি দেখেছিলে যে আমার চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কি না? হু?’ ফিরিয়ে প্রশ্ন করে অর্নব।
‘না মশাই... এ সব চোখে দেখতে লাগে না... বোঝা যায়... বুঝেছ?’ হেসে উত্তর দেয় পৃথা।
‘হু, বুঝলাম...’ বলে অর্নব।
‘কি বুঝেছ?’ জিজ্ঞাসা করে পৃথা।
‘বুঝলাম যে আমার তিতির সব থেকে বুদ্ধিমতি... মাথার মধ্যে গিজগিজ করছে রাজ্যের দুষ্টুমী...’ হেসে উত্তর দেয় অর্নব... তারপর বলে, ‘তুমি চুপটি করে শুয়ে থাকো... আমি তোমার খাবারটা নিয়ে আসি... এবার না খেলে অসুধ খেতে দেরী হয়ে যাবে...’ বলে আর দাঁড়ায় না, কিচেনের দিকে চলে যায়... পৃথাও বোঝে ঘরে অর্নব আর নেই, তাই চোখ বন্ধ করে চুপ করে শুয়ে থাকে।
কিছুক্ষন আগেই যেটা ঘটল সেটাই একা বিছানায় চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে পৃথা... তাকে পাঁজাকোলা করে বাথরুম থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বিছানার ওপরে শুইয়ে দিয়েছিল অর্নব... ওর তাকে এই ভাবে সন্তর্পনে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার মধ্যেও যেন অফুরাণ ভালোবাসা মেখে ছিল, ছিল তার প্রতি সতর্কতা, যত্ন আর সেই সাথে প্রগাঢ় ভালোবাসা... কত যত্নে আর সাবধানে ধীরে ধীরে নামিয়ে দিয়েছিল তাকে বিছানায় ও... মনের মধ্যে ভালো লাগাটা যেন আরো বেশি করে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার... কি করেই না ভালো লেগে পারে? সে ভুল করে নি... এটা ঠিক যে প্রথম যখন সে ছবিতে অর্নবকে দেখে, তখন তাকে দেখে যেটা এসেছিল মনের মধ্যে, সেটা ক্ষনিকের মুগ্ধতা, নিছক একটা আকর্ষণ... কিন্তু সেটা কখন যে একটু একটু করে ভালোবাসায় বদলে গেল তা সে নিজেই হয়তো জানে না... সেটা সে প্রথম উপলব্ধি করে যেদিন প্রণববাবুর কাছ থেকে অর্নবের কথা শোনে... অর্নবের ওই পরিণতি শুনে বুকের মধ্যেটায় কেমন ভেঙে চুড়ে গুঁড়িয়ে যাচ্ছিল তার... একটা চাপা কান্না বুকের মধ্যে থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছিল, তাও কার জন্য, না যে লোকটিকে ছবিতে ছাড়া এক লহমার জন্যও কখনও সামনে চোখের দেখাও দেখিনি... সেদিন রাতে প্রণববাবু চলে যাবার পর বিছানায় শুয়ে সারা রাত শুধু কেঁদেছিল সে... একটুকরো খাবারও দাঁতে কাঁটতে পারে নি... মনে হচ্ছিল যেন একটা ভালো লাগা শুরু হবার আগেই ভদ্রলোক এসে টেনে হিঁচড়ে তাকে বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন... হ্যা... সেদিনই ও বুঝেছিল অর্নবকে সত্যি সত্যিই মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছিল, তার ভালোবাসাটা শুধু মাত্র ছবি দেখে মোহো নয়, কিন্তু ভালোবেসেও যে সে ভালোবাসা পেলো না। সব বুঝেও মন তার কিছুতেই মানতে চাইছিল না... কেন জানে না সে, মনের কোথাও, কোন এক কোনায় তার তখনও বিশ্বাস ছিল যে এতটা অভাগী সে হতে পারে না... জীবনে কোনদিন সে কখনও কারুর থেকে এতটুকুও আঘাত পায় নি... ভিষন আদরে বড় হয়েছে... বাড়ীর সকলের নয়নের মণি ছিল... তার বাবা, মা, আত্মীয় সজন, সবাই তিতির বলতে অজ্ঞান... আর সেই পৃথা জীবনে প্রথমবার কারুকে ভালোবাসলো আর সেটা সে এই ভাবে হারালো? এটা হয় না... হতে পারে না... সে যে কারুকে কখনও কোনদিনও জ্ঞাতার্থে আঘাত করে নি... তাহলে ভগবান কেন তাকে এ সাজা দেবে? না, মানতে পারেনি সে... আর পরবর্তি কালে একটু একটু করে উপলব্ধি করতে শুরু করেছিল যে এই ফ্ল্যাটে কারুর উপস্থিতি... প্রথম প্রথম যে একেবারে ভয় পায় নি তা নয়... পেয়েছে... ভিষন ভাবেই পেয়েছে... ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতো সে একা, একদম একা ফ্ল্যাটে থাকতে, কিন্তু মুখে প্রকাশ করতো না। পরে বুঝল যে, যেই থাকুক, সে তার কোন ক্ষতি চায় না। নিশ্চিন্ত হল পৃথা, বরং বলা যেতে পারে, সেটা বোঝার পর থেকে আরো নিশ্চিন্তে থাকতে শুরু করল সে... সে বুঝেছিল তার বিপদে আপদে এই বিদেহীই হতে পারে তার সাহারা। কিন্তু কি করে বুঝল যে এ আর কেউ না, অর্নব? সেটা বুঝতে পারে গতকাল... শুধু বোঝেই না, একেবারে একশ শতাংশ সুনিশ্চিত হয়... অর্নব ছাড়া তার অসুস্থতায় এই ভাবে সেবা আর কেউ করবে না... তার মনের ভালোবাসা যে ততদিনে প্রশারিত হয়ে গিয়েছে অর্নবের মধ্যেও... তাকে না ভালোবেসে থাকতে পারে অর্নব? নাকি না ভালোবেসে থাকা যায়?
‘কি ভাবেই না হুকুম চালাই লোকটার ওপরে... বেশ করি... চালাবো না কেন শুনি? অর্নব আমার, আমার সব... তার ওপরে আমি যেমন খুশি হুকুম চালাবো... ইশ... শুনবে না বললেই হবে নাকি? দেখি কেমন না বলে?’... ভাবে মনে মনে... এ ঘরে ওকে নিয়ে আসার পর ওকে অর্নব বলেছিল তাড়াতাড়ি গায়ে কিছু পড়ে নিতে, নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে... উত্তরে চুপ করে বসেছিল সে বিছানার ওপরে। ওকে এই ভাবে চুপ করে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিল অর্নব, ‘কি হোলো? চুপ করে গেলে যে? বলছি গায়ে কিছু পড়ে নাও... ঠান্ডা লেগে যাবে তো!’
গম্ভীর হয়ে উত্তর দিয়েছিল পৃথা, ‘না এনে দিলে কি করে পড়বো?’
পৃথার কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল অর্নব, ‘ও, হ্যা, তাই তো... তা কি পড়বে?’
‘তুমি যে ভাবে আমাকে দেখতে চাও, সেটাই...’ গলায় গাম্ভীর্য ধরে রেখে উত্তর দিয়েছিল পৃথা।
আলমারী খুলে পৃথার একটা ফ্রেশ গোল গলার গেঞ্জি আর পাতলা ঢলা সর্স্টস্ এনে তুলে ধরে বলেছিল, ‘নাও, এই দুটো পড়ে ফেলো... আমি...’
‘জানো না আমি অসুস্থ... না পড়িয়ে দিলে পড়বো কি করে?’ গম্ভীর গলায় বলেছিল পৃথা, বলেছিল আর মনে মনে উপভোগ করছিল অর্নবের অবস্থার।
‘আ...আমি পড়াবো?’ মৃদু গলায় বলে অর্নব।
‘হুম... আর কে আছে ঘরে? শুনি?’ সোজা সাপটা জবাব আসে পৃথার থেকে।
অর্নবের বুঝতে বাকি থাকে না, পৃথার মাথায় তখনও বদমাইশী গিজগিজ করছে, তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলেছিল, ‘বুঝলাম, তা মহারানীর একটু উঠে দাঁড়ানো হোক...’
তড়াক্ করে লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়েছিল পৃথা বিছানার ওপরে... নিজের সম্পূর্ণ নগ্ন শরীরটাকে অর্নবের চোখের সামনে দোলাতে শুরু করে দিয়েছিলে ডাইনে বাঁয়ে... মুখের ওপরে লেগেছিল বিজয়ীনির হাসি।
অর্নব সেটা দেখে মুচকি হেসেছিল কি না জানে না পৃথা, তার ভালো লেগেছিল কিনা, সেটাও সে বলতে পারবে না হয়তো, কিন্তু ওর এই ধরনের ছেলেমানুষী লোকটা যে ভাবে বর্দাস্ত করে, ওর সব রকম আবদার যে ভাবে মেনে নিচ্ছে, তাতে পৃথা যে মনে মনে ভিষন খুশি, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। গেঞ্জী পড়িয়ে, সর্স্টস্ পড়াবার পর পৃথার ইচ্ছা ছিল একটু আদর করে তার অর্নবকে, কিন্তু সেটা বোধহয় আগেই আন্দাজ করেছিল অর্নব, তাই তাড়াতাড়ি করে তাকে বিছানায় শুইয়ে চাঁদর ঢেকে দিয়ে খাবার আনার বাহানায় পালিয়ে গিয়েছিল কিচেনের দিকে... খিল খিল করে হেসে উঠেছিল পৃথা, অর্নবের ওই ভাবে পালিয়ে যাওয়া দেখে... মনে পড়তেই মিচকি হাসতে থাকে সে।
‘খাবার হাজির...’ অর্নবের গলার স্বরে ছেদ পড়ে পৃথার ভাবনায়... ‘কি ভেবে মিচকি মিচকি হাঁসা হচ্ছে শুনি?’
‘ওহঃ... এনেছ?’ চোখ খুলে তাকায় পৃথা... ‘একি? শুধু আমার এনেছ কেন? তোমার?’ ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে সে, বিছানার ওপরে কাগজ পেতে রেখে তার ওপরে একটা প্লেটে খানিকটা ভাত আর ধোঁয়া উঠতে থাকা মাংসের স্ট্যুএর বাটি দেখে... মনে মনে খুশি হয় কি সুন্দর ভাবে গরম করে তার খাবারটা নিয়ে এসেছে বলে।
‘আর জেদাজেদি করবে না এখন... চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ের মত আগে তুমি খেয়ে নেবে, তারপর আমি খাবো... আমার খাওয়া নিয়ে তোমাকে এখন ভাবতে হবে না... বুঝছ? তোমার খাওয়া হলে অসুধ খেতে হবে, সেটা মাথায় রেখো...’ অর্নবের গলার স্বরে একটা বেশ অভিভাকত্ব মিশে থাকার দরুন আর কথা বাড়ায় না পৃথা... বাধ্য মেয়ে মত মাথা নিচু করে বলে, ‘আচ্ছা, দাও...’
‘দাও আবার কি? দিয়েছি তো... খেতে শুরু করো...’ বলে অর্নব।
ওই ভাবেই চুপ করে বসে থাকে খাটের ওপরে বাবু হয়ে পেছনের বালিশে হেলান দিয়ে... উত্তর দেয় না কোন।
‘কি হলো আবার... খাও...’ তাড়া দেয় পৃথাকে অর্নব।
মুখটা ভার করে বলে পৃথা, ‘আমি খাবো?’
‘হ্যা... তুমিই তো খাবে, আর কে খাবে আবার?’ ঠিক ঠাওর করতে পারে না অর্নব পৃথার কথার।
ফের চুপ করে বসে থাকে পৃথা হাত গুটিয়ে।
তাড়া লাগায় অর্নব, ‘আরে ঠান্ডা হয়ে যাবে তো খাবারটা... খেতে শুরু করো...’
মুখের ভারটাকে ধরে রেখে আদুরে সুরে বলে ওঠে পৃথা, ‘আমি তো অসুস্থ... নিজের হাতে খাবো কি করে?’
‘তিতির... তুমি এতটাও অসুস্থ নও যে নিজের হাতে খেতে পারবে না... এটা কি ঠিক হচ্ছে?’ প্রশ্ন করে অর্নব।
গাল ভারী করে পৃথা বলে, ‘আমার একটু হোক কি বেশী, শরীর খারাপ হলেই মা খাইয়ে দিতো আমাকে... ভাল্লাগে না...’
‘হু... বুঝলাম গাল ভারী করার কারণটা... আদর দিয়ে দিয়ে মেয়েকে কি করেছে বাবা মা, সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে... তা আমাকে এখন কি করতে হবে শুনি? খাইয়ে দিতে হবে, তাই তো?’ বলে ওঠে অর্নব।
ঢকঢক করে ঘাড় নাড়ে পৃথা... তারপর ঘাড় বেঁকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘আমাকে আদর দিয়ে বাবা মা কি করেছে? হু?’
‘রীতিমত প্যাম্পার করেছে... এ ছাড়া আর কি?’ বলে অর্নব... উঠে আসে বিছানায় পৃথার পাশে।
‘ইশ... তুমি জানো না... আমি বাপীর প্রিন্সেস... আর বাপী আমার কিং... বুঝেছ? আর মায়ের কাছে আমি এখনও সেইইইই ছোট্ট তিতির... তুমি জানো?’ বলতে বলতে চোখ চকচক করে ওঠে পৃথার... ‘না বলবো না, লজ্জা করছে...’ গালের ওপরে লালের আভা পড়ে তার।
‘কি? শুনিই না...’ বলে পৃথার পেছনে রাখা বালিশটাকে একটু ঠিক করে দেয় অর্নব...
ভালো করে হেলান দিয়ে বলে পৃথা, ‘তুমি আমাকে খেঁপাবে না তো পরে?’
কপালের ওপরে ঝরে পড়া কিছু চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলে অর্নব, ‘না, খেঁপাবো না, বলো...’
‘হি হি... আমি এখনও বাপী আর মায়ের কাছে রোজ আদর খাই... না... ভুল বললাম, এখন না... এখন তো এখানে চলেই এসেছি... কিন্তু জানো, এখনে আসার আগে অবধি... রোজ... রোজ আদর খেতাম... সকালে ঘুম থেকে উঠে আর রাতে ঘুমাতে যাবার আগে... নয়তো আমার ঘুমই আসতো না... রোজ শুতে যাবার আগে, মা আমার ঘরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দিয়ে, আদর করে দিয়ে গেলে তবে আমি ঘুমাতাম...’ আদুরে গলায় বলে পৃথা।
‘মা ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দিতো মানে?’ প্রশ্ন করে অর্নব।
‘দিতোই তো... আমিতো শুতে যাবার আগে গা ধুতাম, অবস্য শীত কালে গায়ে জল লাগাতাম না, আমি আবার ভিষন শীতকাতুরে... কিন্তু অন্য সময় শুতে যাবার আগে গা ধুয়ে ঘরে এসে, মা, মা, বলে চেঁচাতাম, মা হাতের কাজ ফেলে আগে আমার কাছে আসতো। তারপর আমি চুপ করে বসে থাকতাম, আর মা আমাকে ড্রেস পরিয়ে দিয়ে, বিছানা ঠিক করে শুইয়ে দিত, তারপর আদর করে তবে যেতে পারতো ঘর থেকে। বুঝেছ মোশাই... কেমন আদরে মানুষ আমি?’ বলতে বলতে হেলান দেয় অর্নবের দেহের ওপরে... প্রায় ঢুকে যায় ওর বুকের মধ্যে।
‘হু... সে তো দেখতেই পাচ্ছি... মা বাবার দুলালী...’ বলতে বলতে খাবারের প্লেটটা টেনে নেয় সামনে... পৃথা এক মনে তাকিয়ে দেখে কেমন অদ্ভুত ভাবে না দেখা হাতের সাহায্যে তরকারীর সাথে ভাত মাখা হয়ে যাচ্ছে... তারপর গ্রাস তৈরী হয়ে গেল... প্লেট থেকে হাওয়া ভেসে উঠে এলো তার মুখের সামনে... লক্ষ্মী মেয়ের মত হাঁ করে সে... ভাতের গ্রাসটা ঢুকে যায় তার মুখের মধ্যে।
‘কিন্তু... এখন তো আর সে আদর পাবে না... এখন তাহলে কি হবে তিতিরের?’ ফের গ্রাস তৈরী করতে করতে বলে অর্নব।
‘ইশ... কে বলে পাবো না... তুমি আছো না?’ গোলা পায়রার মত ঘাড় বেঁকায় পৃথা।
‘আমি আছি তো কি?’ ফের আরো একটা গ্রাস তুলে মুখের সামনে ধরে অর্নব।
খাবারটা মুখে পুরে উত্তর দেয় পৃথা, ‘তুমি আদর করবে আমাকে... রোজ... তুমি ঘুম পাড়িয়ে দেবে...’ বলতে বলতে মুখ ঘোরায়... মুখটা গুঁজে দেয় অর্নবের অদৃশ্য লোমশ পেশল বুকের মধ্যে... মুখ ঘসে বুকের লোমের ওপরে...
‘ইশশশ... দেখেছ বদমাইশী... এঁটো মুখটা ঘসে দিল আমার গায়ে... কি পাজি রে বাবা...’ বলে ওঠে অর্নব।
হি হি করে হেসে ওঠে পৃথা নিজের দুষ্টুমীতে... মাথাটাকে বুকের ওপরে কাত করে রেখে খেতে থাকে অর্নবের হাত থেকে সে।
ক্রমশ...
খাটের ব্যাকরেস্টে বালিশটা রেখে হেলান দিয়ে বসে পৃথা... ‘আমার গায়ে একটু চাঁদরটা টেনে দেবে?’ অর্নবের উদ্দেশ্যে বলে সে।
অর্নব চাদরটা পৃথার গায়ে টেনে দিতে গিয়ে খেয়াল করে চোখদুটো ফের একটু লালচে হয়ে উঠেছে... দেখে উদবিগ্ন হয়... পৃথার কপালে হাত রেখে বলে ওঠে, ‘দেখছো... তোমার দুষ্টুমীর জন্য ফের মনে হচ্ছে জ্বর আসছে... তখন বারণ করেছিলাম ওই রকম অতক্ষন বাথরুমে আদুর গায়ে না থাকতে...’
অর্নব তার প্রতি এতটা কন্সার্নড দেখে খুশি হয় মনে মনে পৃথা, ম্লান হেসে বলে, ‘আহা... সব দোষ আমার, না? আর বাবুর যে আরামে চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেটার বেলায়?’
‘তুমি দেখেছিলে যে আমার চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কি না? হু?’ ফিরিয়ে প্রশ্ন করে অর্নব।
‘না মশাই... এ সব চোখে দেখতে লাগে না... বোঝা যায়... বুঝেছ?’ হেসে উত্তর দেয় পৃথা।
‘হু, বুঝলাম...’ বলে অর্নব।
‘কি বুঝেছ?’ জিজ্ঞাসা করে পৃথা।
‘বুঝলাম যে আমার তিতির সব থেকে বুদ্ধিমতি... মাথার মধ্যে গিজগিজ করছে রাজ্যের দুষ্টুমী...’ হেসে উত্তর দেয় অর্নব... তারপর বলে, ‘তুমি চুপটি করে শুয়ে থাকো... আমি তোমার খাবারটা নিয়ে আসি... এবার না খেলে অসুধ খেতে দেরী হয়ে যাবে...’ বলে আর দাঁড়ায় না, কিচেনের দিকে চলে যায়... পৃথাও বোঝে ঘরে অর্নব আর নেই, তাই চোখ বন্ধ করে চুপ করে শুয়ে থাকে।
কিছুক্ষন আগেই যেটা ঘটল সেটাই একা বিছানায় চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে পৃথা... তাকে পাঁজাকোলা করে বাথরুম থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বিছানার ওপরে শুইয়ে দিয়েছিল অর্নব... ওর তাকে এই ভাবে সন্তর্পনে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার মধ্যেও যেন অফুরাণ ভালোবাসা মেখে ছিল, ছিল তার প্রতি সতর্কতা, যত্ন আর সেই সাথে প্রগাঢ় ভালোবাসা... কত যত্নে আর সাবধানে ধীরে ধীরে নামিয়ে দিয়েছিল তাকে বিছানায় ও... মনের মধ্যে ভালো লাগাটা যেন আরো বেশি করে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার... কি করেই না ভালো লেগে পারে? সে ভুল করে নি... এটা ঠিক যে প্রথম যখন সে ছবিতে অর্নবকে দেখে, তখন তাকে দেখে যেটা এসেছিল মনের মধ্যে, সেটা ক্ষনিকের মুগ্ধতা, নিছক একটা আকর্ষণ... কিন্তু সেটা কখন যে একটু একটু করে ভালোবাসায় বদলে গেল তা সে নিজেই হয়তো জানে না... সেটা সে প্রথম উপলব্ধি করে যেদিন প্রণববাবুর কাছ থেকে অর্নবের কথা শোনে... অর্নবের ওই পরিণতি শুনে বুকের মধ্যেটায় কেমন ভেঙে চুড়ে গুঁড়িয়ে যাচ্ছিল তার... একটা চাপা কান্না বুকের মধ্যে থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছিল, তাও কার জন্য, না যে লোকটিকে ছবিতে ছাড়া এক লহমার জন্যও কখনও সামনে চোখের দেখাও দেখিনি... সেদিন রাতে প্রণববাবু চলে যাবার পর বিছানায় শুয়ে সারা রাত শুধু কেঁদেছিল সে... একটুকরো খাবারও দাঁতে কাঁটতে পারে নি... মনে হচ্ছিল যেন একটা ভালো লাগা শুরু হবার আগেই ভদ্রলোক এসে টেনে হিঁচড়ে তাকে বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন... হ্যা... সেদিনই ও বুঝেছিল অর্নবকে সত্যি সত্যিই মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছিল, তার ভালোবাসাটা শুধু মাত্র ছবি দেখে মোহো নয়, কিন্তু ভালোবেসেও যে সে ভালোবাসা পেলো না। সব বুঝেও মন তার কিছুতেই মানতে চাইছিল না... কেন জানে না সে, মনের কোথাও, কোন এক কোনায় তার তখনও বিশ্বাস ছিল যে এতটা অভাগী সে হতে পারে না... জীবনে কোনদিন সে কখনও কারুর থেকে এতটুকুও আঘাত পায় নি... ভিষন আদরে বড় হয়েছে... বাড়ীর সকলের নয়নের মণি ছিল... তার বাবা, মা, আত্মীয় সজন, সবাই তিতির বলতে অজ্ঞান... আর সেই পৃথা জীবনে প্রথমবার কারুকে ভালোবাসলো আর সেটা সে এই ভাবে হারালো? এটা হয় না... হতে পারে না... সে যে কারুকে কখনও কোনদিনও জ্ঞাতার্থে আঘাত করে নি... তাহলে ভগবান কেন তাকে এ সাজা দেবে? না, মানতে পারেনি সে... আর পরবর্তি কালে একটু একটু করে উপলব্ধি করতে শুরু করেছিল যে এই ফ্ল্যাটে কারুর উপস্থিতি... প্রথম প্রথম যে একেবারে ভয় পায় নি তা নয়... পেয়েছে... ভিষন ভাবেই পেয়েছে... ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতো সে একা, একদম একা ফ্ল্যাটে থাকতে, কিন্তু মুখে প্রকাশ করতো না। পরে বুঝল যে, যেই থাকুক, সে তার কোন ক্ষতি চায় না। নিশ্চিন্ত হল পৃথা, বরং বলা যেতে পারে, সেটা বোঝার পর থেকে আরো নিশ্চিন্তে থাকতে শুরু করল সে... সে বুঝেছিল তার বিপদে আপদে এই বিদেহীই হতে পারে তার সাহারা। কিন্তু কি করে বুঝল যে এ আর কেউ না, অর্নব? সেটা বুঝতে পারে গতকাল... শুধু বোঝেই না, একেবারে একশ শতাংশ সুনিশ্চিত হয়... অর্নব ছাড়া তার অসুস্থতায় এই ভাবে সেবা আর কেউ করবে না... তার মনের ভালোবাসা যে ততদিনে প্রশারিত হয়ে গিয়েছে অর্নবের মধ্যেও... তাকে না ভালোবেসে থাকতে পারে অর্নব? নাকি না ভালোবেসে থাকা যায়?
‘কি ভাবেই না হুকুম চালাই লোকটার ওপরে... বেশ করি... চালাবো না কেন শুনি? অর্নব আমার, আমার সব... তার ওপরে আমি যেমন খুশি হুকুম চালাবো... ইশ... শুনবে না বললেই হবে নাকি? দেখি কেমন না বলে?’... ভাবে মনে মনে... এ ঘরে ওকে নিয়ে আসার পর ওকে অর্নব বলেছিল তাড়াতাড়ি গায়ে কিছু পড়ে নিতে, নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে... উত্তরে চুপ করে বসেছিল সে বিছানার ওপরে। ওকে এই ভাবে চুপ করে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিল অর্নব, ‘কি হোলো? চুপ করে গেলে যে? বলছি গায়ে কিছু পড়ে নাও... ঠান্ডা লেগে যাবে তো!’
গম্ভীর হয়ে উত্তর দিয়েছিল পৃথা, ‘না এনে দিলে কি করে পড়বো?’
পৃথার কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল অর্নব, ‘ও, হ্যা, তাই তো... তা কি পড়বে?’
‘তুমি যে ভাবে আমাকে দেখতে চাও, সেটাই...’ গলায় গাম্ভীর্য ধরে রেখে উত্তর দিয়েছিল পৃথা।
আলমারী খুলে পৃথার একটা ফ্রেশ গোল গলার গেঞ্জি আর পাতলা ঢলা সর্স্টস্ এনে তুলে ধরে বলেছিল, ‘নাও, এই দুটো পড়ে ফেলো... আমি...’
‘জানো না আমি অসুস্থ... না পড়িয়ে দিলে পড়বো কি করে?’ গম্ভীর গলায় বলেছিল পৃথা, বলেছিল আর মনে মনে উপভোগ করছিল অর্নবের অবস্থার।
‘আ...আমি পড়াবো?’ মৃদু গলায় বলে অর্নব।
‘হুম... আর কে আছে ঘরে? শুনি?’ সোজা সাপটা জবাব আসে পৃথার থেকে।
অর্নবের বুঝতে বাকি থাকে না, পৃথার মাথায় তখনও বদমাইশী গিজগিজ করছে, তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলেছিল, ‘বুঝলাম, তা মহারানীর একটু উঠে দাঁড়ানো হোক...’
তড়াক্ করে লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়েছিল পৃথা বিছানার ওপরে... নিজের সম্পূর্ণ নগ্ন শরীরটাকে অর্নবের চোখের সামনে দোলাতে শুরু করে দিয়েছিলে ডাইনে বাঁয়ে... মুখের ওপরে লেগেছিল বিজয়ীনির হাসি।
অর্নব সেটা দেখে মুচকি হেসেছিল কি না জানে না পৃথা, তার ভালো লেগেছিল কিনা, সেটাও সে বলতে পারবে না হয়তো, কিন্তু ওর এই ধরনের ছেলেমানুষী লোকটা যে ভাবে বর্দাস্ত করে, ওর সব রকম আবদার যে ভাবে মেনে নিচ্ছে, তাতে পৃথা যে মনে মনে ভিষন খুশি, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। গেঞ্জী পড়িয়ে, সর্স্টস্ পড়াবার পর পৃথার ইচ্ছা ছিল একটু আদর করে তার অর্নবকে, কিন্তু সেটা বোধহয় আগেই আন্দাজ করেছিল অর্নব, তাই তাড়াতাড়ি করে তাকে বিছানায় শুইয়ে চাঁদর ঢেকে দিয়ে খাবার আনার বাহানায় পালিয়ে গিয়েছিল কিচেনের দিকে... খিল খিল করে হেসে উঠেছিল পৃথা, অর্নবের ওই ভাবে পালিয়ে যাওয়া দেখে... মনে পড়তেই মিচকি হাসতে থাকে সে।
‘খাবার হাজির...’ অর্নবের গলার স্বরে ছেদ পড়ে পৃথার ভাবনায়... ‘কি ভেবে মিচকি মিচকি হাঁসা হচ্ছে শুনি?’
‘ওহঃ... এনেছ?’ চোখ খুলে তাকায় পৃথা... ‘একি? শুধু আমার এনেছ কেন? তোমার?’ ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে সে, বিছানার ওপরে কাগজ পেতে রেখে তার ওপরে একটা প্লেটে খানিকটা ভাত আর ধোঁয়া উঠতে থাকা মাংসের স্ট্যুএর বাটি দেখে... মনে মনে খুশি হয় কি সুন্দর ভাবে গরম করে তার খাবারটা নিয়ে এসেছে বলে।
‘আর জেদাজেদি করবে না এখন... চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ের মত আগে তুমি খেয়ে নেবে, তারপর আমি খাবো... আমার খাওয়া নিয়ে তোমাকে এখন ভাবতে হবে না... বুঝছ? তোমার খাওয়া হলে অসুধ খেতে হবে, সেটা মাথায় রেখো...’ অর্নবের গলার স্বরে একটা বেশ অভিভাকত্ব মিশে থাকার দরুন আর কথা বাড়ায় না পৃথা... বাধ্য মেয়ে মত মাথা নিচু করে বলে, ‘আচ্ছা, দাও...’
‘দাও আবার কি? দিয়েছি তো... খেতে শুরু করো...’ বলে অর্নব।
ওই ভাবেই চুপ করে বসে থাকে খাটের ওপরে বাবু হয়ে পেছনের বালিশে হেলান দিয়ে... উত্তর দেয় না কোন।
‘কি হলো আবার... খাও...’ তাড়া দেয় পৃথাকে অর্নব।
মুখটা ভার করে বলে পৃথা, ‘আমি খাবো?’
‘হ্যা... তুমিই তো খাবে, আর কে খাবে আবার?’ ঠিক ঠাওর করতে পারে না অর্নব পৃথার কথার।
ফের চুপ করে বসে থাকে পৃথা হাত গুটিয়ে।
তাড়া লাগায় অর্নব, ‘আরে ঠান্ডা হয়ে যাবে তো খাবারটা... খেতে শুরু করো...’
মুখের ভারটাকে ধরে রেখে আদুরে সুরে বলে ওঠে পৃথা, ‘আমি তো অসুস্থ... নিজের হাতে খাবো কি করে?’
‘তিতির... তুমি এতটাও অসুস্থ নও যে নিজের হাতে খেতে পারবে না... এটা কি ঠিক হচ্ছে?’ প্রশ্ন করে অর্নব।
গাল ভারী করে পৃথা বলে, ‘আমার একটু হোক কি বেশী, শরীর খারাপ হলেই মা খাইয়ে দিতো আমাকে... ভাল্লাগে না...’
‘হু... বুঝলাম গাল ভারী করার কারণটা... আদর দিয়ে দিয়ে মেয়েকে কি করেছে বাবা মা, সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে... তা আমাকে এখন কি করতে হবে শুনি? খাইয়ে দিতে হবে, তাই তো?’ বলে ওঠে অর্নব।
ঢকঢক করে ঘাড় নাড়ে পৃথা... তারপর ঘাড় বেঁকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘আমাকে আদর দিয়ে বাবা মা কি করেছে? হু?’
‘রীতিমত প্যাম্পার করেছে... এ ছাড়া আর কি?’ বলে অর্নব... উঠে আসে বিছানায় পৃথার পাশে।
‘ইশ... তুমি জানো না... আমি বাপীর প্রিন্সেস... আর বাপী আমার কিং... বুঝেছ? আর মায়ের কাছে আমি এখনও সেইইইই ছোট্ট তিতির... তুমি জানো?’ বলতে বলতে চোখ চকচক করে ওঠে পৃথার... ‘না বলবো না, লজ্জা করছে...’ গালের ওপরে লালের আভা পড়ে তার।
‘কি? শুনিই না...’ বলে পৃথার পেছনে রাখা বালিশটাকে একটু ঠিক করে দেয় অর্নব...
ভালো করে হেলান দিয়ে বলে পৃথা, ‘তুমি আমাকে খেঁপাবে না তো পরে?’
কপালের ওপরে ঝরে পড়া কিছু চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলে অর্নব, ‘না, খেঁপাবো না, বলো...’
‘হি হি... আমি এখনও বাপী আর মায়ের কাছে রোজ আদর খাই... না... ভুল বললাম, এখন না... এখন তো এখানে চলেই এসেছি... কিন্তু জানো, এখনে আসার আগে অবধি... রোজ... রোজ আদর খেতাম... সকালে ঘুম থেকে উঠে আর রাতে ঘুমাতে যাবার আগে... নয়তো আমার ঘুমই আসতো না... রোজ শুতে যাবার আগে, মা আমার ঘরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দিয়ে, আদর করে দিয়ে গেলে তবে আমি ঘুমাতাম...’ আদুরে গলায় বলে পৃথা।
‘মা ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দিতো মানে?’ প্রশ্ন করে অর্নব।
‘দিতোই তো... আমিতো শুতে যাবার আগে গা ধুতাম, অবস্য শীত কালে গায়ে জল লাগাতাম না, আমি আবার ভিষন শীতকাতুরে... কিন্তু অন্য সময় শুতে যাবার আগে গা ধুয়ে ঘরে এসে, মা, মা, বলে চেঁচাতাম, মা হাতের কাজ ফেলে আগে আমার কাছে আসতো। তারপর আমি চুপ করে বসে থাকতাম, আর মা আমাকে ড্রেস পরিয়ে দিয়ে, বিছানা ঠিক করে শুইয়ে দিত, তারপর আদর করে তবে যেতে পারতো ঘর থেকে। বুঝেছ মোশাই... কেমন আদরে মানুষ আমি?’ বলতে বলতে হেলান দেয় অর্নবের দেহের ওপরে... প্রায় ঢুকে যায় ওর বুকের মধ্যে।
‘হু... সে তো দেখতেই পাচ্ছি... মা বাবার দুলালী...’ বলতে বলতে খাবারের প্লেটটা টেনে নেয় সামনে... পৃথা এক মনে তাকিয়ে দেখে কেমন অদ্ভুত ভাবে না দেখা হাতের সাহায্যে তরকারীর সাথে ভাত মাখা হয়ে যাচ্ছে... তারপর গ্রাস তৈরী হয়ে গেল... প্লেট থেকে হাওয়া ভেসে উঠে এলো তার মুখের সামনে... লক্ষ্মী মেয়ের মত হাঁ করে সে... ভাতের গ্রাসটা ঢুকে যায় তার মুখের মধ্যে।
‘কিন্তু... এখন তো আর সে আদর পাবে না... এখন তাহলে কি হবে তিতিরের?’ ফের গ্রাস তৈরী করতে করতে বলে অর্নব।
‘ইশ... কে বলে পাবো না... তুমি আছো না?’ গোলা পায়রার মত ঘাড় বেঁকায় পৃথা।
‘আমি আছি তো কি?’ ফের আরো একটা গ্রাস তুলে মুখের সামনে ধরে অর্নব।
খাবারটা মুখে পুরে উত্তর দেয় পৃথা, ‘তুমি আদর করবে আমাকে... রোজ... তুমি ঘুম পাড়িয়ে দেবে...’ বলতে বলতে মুখ ঘোরায়... মুখটা গুঁজে দেয় অর্নবের অদৃশ্য লোমশ পেশল বুকের মধ্যে... মুখ ঘসে বুকের লোমের ওপরে...
‘ইশশশ... দেখেছ বদমাইশী... এঁটো মুখটা ঘসে দিল আমার গায়ে... কি পাজি রে বাবা...’ বলে ওঠে অর্নব।
হি হি করে হেসে ওঠে পৃথা নিজের দুষ্টুমীতে... মাথাটাকে বুকের ওপরে কাত করে রেখে খেতে থাকে অর্নবের হাত থেকে সে।
ক্রমশ...