09-02-2025, 11:50 PM
(This post was last modified: 10-02-2025, 02:35 AM by Manali Basu. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
৭
গোটা স্কু'ল বিল্ডিং প্রায় অন্ধকারাচ্ছন। ভেতরে কয়েকটা বাল্ব জ্বলছে বটে, তবে তা সারা স্কু'ল ক্যাম্পাসে প্রভা ছড়াতে ব্যর্থ। নন্দিনী টিচার্স রুমে টেবিলে মাথা নিচু করে বসেছিল। বারবার জাহাঙ্গীরের বলা শেষ কথাটা কানে বাজছিলো -- "আপনার সাথে কি এরকম কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছিল?".... অর্থাৎ নন্দিনী অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন কি তার স্বামী অনিকেত ব্যাভিচারিতা করেছিল তার সাথে? উত্তর আংশিক ইতিবাচক।....
নন্দিনী তখন প্রায় পাঁচ মাসের গর্ভবতী ঠিক যেমন জাহাঙ্গীরের বউ এখন রয়েছে। গুড্ডি পেটে এসছে। অনিকেতের ব্যাংকে নতুন এক মেয়ে ক্লার্ক হিসেবে জয়েন করেছিল। দেখতে সুন্দরী, নাম ইতি সাহা। যেমন নাম তেমনই তার কাম। ঠিক সময়ে নন্দিনী হাল ধরে অনিকেতের রাশ না টানলে সত্যিই ইতি তাদের সম্পর্কে ইতি টেনে দিতো।
প্রথম প্রথম নন্দিনী বিষয়টিকে খুব একটা আমল দেয়নি। ইতিকে অনিকেতের আর চার পাঁচজন কলিগের মতোই দেখতো। কিন্তু ধীরে ধীরে ইতির বাড়িতে আগমণ ঘন ও নিয়মিত হতে লাগলো। নন্দিনী তখন ম্যাটার্নাল লীভে ছিল। এছাড়া ডাক্তারও তাকে বেডরেস্টে থাকতে বলেছিলো, প্রেগনেন্সিতে তার কিছু কমপ্লিকেশন দেখা দিয়েছিলো বলে। কাজের নামে নন্দিনীকে আড়ালে রেখে পাশের ঘরে চলতো অনিকেত ও ইতির গল্পগুজব। যা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হতো। নন্দিনীর শাশুড়ির চোখ তা এড়ায়নি। বাড়িতে নতুন এবং অবৈধ সম্পর্কের আঁচ তিনি পেয়েছিলেন। তাই নিজের বউমাকে প্রথম সাবধানবাণীটা সে-ই দিয়েছিলো। যতই সে বউমার উপর বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তুষ্ট থাকুক না কেন, দিনের শেষে নন্দিনী তাঁর বাড়ির বউ। বাড়ির বউয়ের মর্যাদা ও অগ্রাধিকার অন্য যেকোনো বাইরের মেয়ের থেকে বেশি।
নাহঃ, অনিকেতের সাথে ইতির সম্পর্কটি শারীরিক অবধি পৌঁছয়নি। পরে ইতি ট্রান্সফার নিয়ে দূরে অন্য এক ব্রাঞ্চে চলে যায়। পরে খবর পাওয়া যায় তার বিয়ে হয়েগেছে এক ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের সাথে। প্রথম দিকে অনিকেত ইতিকে ভুলতে না পারলেও, পরবর্তীতে গুড্ডি কোলে আসায় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছেলে স্বামী ও বাবা হিসেবে আরো দায়িত্ব কাঁধে চাপায় ইতি যেন তার স্মৃতির পাতা থেকে মুছে যায় একদম।
টেবিলের উপর মাথা রেখে পুরোনো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে অনুরিমা আনমনা হয়ে পড়েছিল। জাহাঙ্গীর দূর থেকে অনুরিমাকে এভাবে ভাবুক হয়ে বসে থাকতে দেখে নতুন করে আর জ্বালাতন করলো না। মনে মনে সে ভাবলো, এখনও তো পুরো রাত পড়ে রয়েছে! সুস্মিতা দেবীর মতিগতি দেখে বোঝা গ্যাছে সে আজকে আর ফিরছে না। তার বয়ফ্রেন্ড ফিরতে দেবেনা। পুলিশ কর্মীদের অর্ধেক বাহিনীকে সে থানায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। অর্ধেক কর্মী যারা নির্বাচনের প্রটোকলের জন্য রয়ে গেছে, তাদেরকে স্কু'ল প্রেমিসেস এর থেকে দূরে নির্বাচনের জন্য ভোটিং কেন্দ্রের ৫০০ মিটার Area এর মধ্যে যে পুলিশ ছাউনি তৈরী করা হয়েছে, সেখানে পাহাড়া দিতে পাঠিয়ে দিয়েছে। রয়েছে পড়ে শুধু এই মধ্যবয়সী কৌশিক মল্লিক। এঁনাকে ম্যানেজ করতে পারলেই গোল পোস্ট ফাঁকা! না কোনো গোলকিপার থাকবে, না ডিফেন্ডার, না রেফারি। শুধু জাহাঙ্গীর আর নন্দিনী থাকবে, আর ফাঁকা মাঠে তখন খেলা হবে। ফুটবল নাকি ছোঁয়া-ছুঁয়ি?
জাহাঙ্গীর কৌশিকবাবুর কাছে গিয়ে কথা বলতে লাগলো। তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো। কৌশিকবাবু তখন স্কু'লের লনে পায়চারি করছিলো। ওঁনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো আজ রাতটা এই ধ্যার ধ্যারে হাকিমপুরে কাটানোর কোনো ইচ্ছে নেই। পালানোর ফাঁক খুঁজছে। তাই জাহাঙ্গীর শেষ পথের কাঁটা কৌশিক বাবুকে জিজ্ঞাসাই করে বসলো, "আপনার কি কাছে পিঠে কোনো আত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে?"
"হ্যাঁ, ওই বসিরহাট সদরে। আমার শালাবাবুর কাকাশশুড়ের।"
"ওহঃ বাবা, সে তো অনেক দূর সম্পর্ক হয়েগেলো।"
"না তবে আমার সাথে ভালো সম্পর্ক ও যোগাযোগ রয়েছে। ....."
"আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে এখানে রাত কাটানোর ইচ্ছে নেই। শ্যালকের শশুড়বাড়িতেই স্টে করার অদম্য ইচ্ছে!"
"কিছু মনে করবেন না জাহাঙ্গীর বাবু, আপনাদের এই গ্রামটা সত্যি খুব সুন্দর, তবে......."
"তবে সেরকম ফ্যাসিলিটিস নেই তাই তো? পর্যাপ্ত আলো নেই, কাছে-পিঠে সিগারেটের দোকান নেই ইত্যাদি ইত্যাদি....."
"ওই আর কি বোঝেনই তো, গ্রামে থাকার খুব একটা অভ্যাস এখন নেই। বয়স হয়েছে, বাইরের খাবার খেলে একটু আধটু অম্বল হয়ে যায়, কাছে পিঠে সেরকম ওষুধেরও কোনো দোকান দেখছি না....তাই......"
"বুঝি বুঝি, আমি তো আর আজ থেকে নই, আর হাকিমপুর গ্রাম্য বিদ্যালয়ে এই প্রথম ভোটের কেন্দ্র পড়েনি। এর আগেও যারা যারা ভোটের ডিউটি করতে এসেছে তারা সবাই এই একই বাহানা দিয়ে নাক সিঁটকেছে।"
"না মানে আপনাদের গ্রামটা কিন্তু খুব সুন্দর, প্রাকৃতিক শোভা রয়েছে। শুধু একটু প্রত্যন্ত এলাকায় তো, তাই ......"
"কি আর করবো মশাই, একে গ্রাম তার উপর সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। সরকারের কাছে আমাদের দরকার শুধু ভোটেই পরে, সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী কিনা, যাকে দিই একসাথেই দিই, ভোট। তাই আমাদের শুধু উন্নয়ন হয়, উন্নতি নয়।...."
"বেশ বলেছেন তো কথাটা। উন্নয়ন হয়, উন্নতি নয়। সাময়িক ভাতা রয়েছে কিন্তু স্থায়ী কর্মসংস্থান নেই!"
"ছাড়ুন সেসব কথা, আমার কথা যদি মানেন, তাহলে বলি কি এখুনি নন্দিনী ম্যাডামের কাছে যান। গিয়ে বলুন আপনার আত্মীয় সদরে থাকে তাই তিনি যেন আপনাকে আজকের জন্য ছুটি দিয়ে দেন।"
"বললেই কি আর ছুটি দিয়ে দেবেন! এমনিতেও ইলেকশনের আগের দিন নিযুক্ত সংশ্লিষ্ট ইলেকশন অফিসারদের ভোট কেন্দ্রেই থাকতে হয়।"
"তবে প্রিসাডিং অফিসার চাইলে তার ব্যতিক্রম হতে পারে। তাই নন্দিনী ম্যাডামই ছাড় দিতে পারেন আপনাকে। ওঁনাকে বলবেন, আপনার শশুরবাড়ি থেকে ফোন এসেছিলো, আপনার শ্যালক খুব অসুস্থ। সে বউয়ের সাথে কাছেই বসিরহাট সদরে স্থিত কাকাশশুরের বাড়িতে গিয়ে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, বুকে ব্যাথা উঠে এখন সে শয্যা নিয়েছে। সুতরাং ম্যাডাম যেন আজকের রাতে আপনাকে সেখানে গিয়ে থাকার অনুমতি দেয়। ম্যাডামকে আস্বস্ত করবেন যে কালকে সকাল হতেই আপনি আবার ফিরে আসবেন হাকিমপুরে।"
"কিন্তু এই তো বেশ কিছুক্ষণ আগে সুস্মিতা ম্যাডামও বেরিয়ে গেলেন। আমিও যদি যেতে চাই তো ম্যাডাম রাগ করবেন না? সুস্মিতা দেবী কে যেতে দিয়েছেন কারণ হয়তো উনি ম্যাডামের ভালো বন্ধু, একসাথে একই কলেজে পড়ান, তাই স্বজনপোষণ হয়েছে। আমার ক্ষেত্রে কি আর একই রুল apply করবেন উনি? মনে তো হয়না।....."
"দেখুন ম্যাডাম এখন কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে খুব অ্যাৱসেন্ট মাইন্ডেড হয়ে আছেন। এই সুযোগ! সময় করে কথাটা পেড়ে দিন, আপনার আর্জি ঠিক মঞ্জুর হয়ে যাবে।"
"যদি ছুটি পেয়েও যাই তবু কর্তব্যের দিক দিয়ে এটা গাফিলতি হবেনা? নির্বাচনের এত গুরুত্বপূর্ণ সব নথি রয়েছে, ব্যালট পেপার রয়েছে, ব্যালট বক্স, ভোটার লিস্ট সবকিছু আপনি আর ম্যাডাম সামলাবেন কি করে?"
"আরে মশাই ম্যাডাম তো আগে থেকেই আমাদের দুটো টিমে ভাগ করে দিয়েছেন, একটাতে আপনি আর নন্দিনী ম্যাম রয়েছেন, আরেকটা তে আমি আর সুস্মিতা ম্যাম। যেহেতু দুটো ঘরে ভোটিং প্রক্রিয়াটা হবে। তাই সেই অর্থে দুটো টিম থেকে একজন করে থাকলেই যথেষ্ট আজকের জন্য। তাছাড়া আমি তো এখানকার লোকাল লোক। এই গ্রামে অত হিংসে হানাহানি হয়না। কিছু এদিক-ওদিক হলে আমি ঠিক সামলে নেবো। আপনি যান তো, গিয়ে ছুটিটা নিয়ে আসুন।"
ভোলাভালা সরল কৌশিক বাবু সেই মতো টিচার্স রুমে গেলেন নন্দিনীর সাথে কথা বলতে। ঢুকে দেখলেন নন্দিনী টেবিলে মাথা নামিয়ে চোখ বুজে রয়েছেন। নন্দিনী ম্যাডামের কাছে গিয়ে জাহাঙ্গীরের শিখিয়ে দেওয়া বুলি আউড়ে গেলেন। অনিকেত ও ইতির সেই পুরোনো সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে মনমরা হয়ে ওঠা নন্দিনী বেশি সাত পাঁচ না ভেবে কৌশিক বাবু-কে পারমিশন দিয়ে দিলেন শ্যালকের শশুরবাড়ি যাওয়ার।
আসলে কৌশিকবাবু যখন জাহাঙ্গীরের বুদ্ধি প্রয়োগ করে তার শালার মিথ্যে বুক যন্ত্রণার কথা বললেন তখন নন্দিনী আর বেশি প্রশ্ন করে জলঘোলা করলো না। এমনিতেও সে প্রথম থেকেই কৌশিক বাবু-কে সিনিয়র বলে সমীহ করে এসছে, সুস্মিতা বা জাহাঙ্গীরের তুলনায় অনেক বেশি দায়িত্ববান ও ম্যাচিওর্ড ভেবে এসছে। তাই কৌশিকবাবু যখন বলছেন কাল সকাল সকাল ফিরে আসবেন তখন তাঁর কথার উপর আস্থা রাখাই যায় বলে মনে করলো নন্দিনী।
কৌশিক বাবুও নন্দিনীকে বেশি ভাবার সময় না দিয়ে তার কাছ থেকে বিদায় নিলো। যাওয়ার আগে জাহাঙ্গীরকে ধন্যবাদ দিয়ে গেলেন। জাহাঙ্গীরের মনে তো তখন লাড্ডু ফুটছিল। গোটা স্কু'লে তখন সে আর নন্দিনী, সারারাত! ভেবেই উত্তেজনায় জাহাঙ্গীরের রোম খাঁড়া হয়ে যাচ্ছিলো! মনটা তার সত্যিই উৎফুল্ল হয়ে উঠলো তখন।
গোটা স্কু'ল বিল্ডিং প্রায় অন্ধকারাচ্ছন। ভেতরে কয়েকটা বাল্ব জ্বলছে বটে, তবে তা সারা স্কু'ল ক্যাম্পাসে প্রভা ছড়াতে ব্যর্থ। নন্দিনী টিচার্স রুমে টেবিলে মাথা নিচু করে বসেছিল। বারবার জাহাঙ্গীরের বলা শেষ কথাটা কানে বাজছিলো -- "আপনার সাথে কি এরকম কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছিল?".... অর্থাৎ নন্দিনী অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন কি তার স্বামী অনিকেত ব্যাভিচারিতা করেছিল তার সাথে? উত্তর আংশিক ইতিবাচক।....
নন্দিনী তখন প্রায় পাঁচ মাসের গর্ভবতী ঠিক যেমন জাহাঙ্গীরের বউ এখন রয়েছে। গুড্ডি পেটে এসছে। অনিকেতের ব্যাংকে নতুন এক মেয়ে ক্লার্ক হিসেবে জয়েন করেছিল। দেখতে সুন্দরী, নাম ইতি সাহা। যেমন নাম তেমনই তার কাম। ঠিক সময়ে নন্দিনী হাল ধরে অনিকেতের রাশ না টানলে সত্যিই ইতি তাদের সম্পর্কে ইতি টেনে দিতো।
প্রথম প্রথম নন্দিনী বিষয়টিকে খুব একটা আমল দেয়নি। ইতিকে অনিকেতের আর চার পাঁচজন কলিগের মতোই দেখতো। কিন্তু ধীরে ধীরে ইতির বাড়িতে আগমণ ঘন ও নিয়মিত হতে লাগলো। নন্দিনী তখন ম্যাটার্নাল লীভে ছিল। এছাড়া ডাক্তারও তাকে বেডরেস্টে থাকতে বলেছিলো, প্রেগনেন্সিতে তার কিছু কমপ্লিকেশন দেখা দিয়েছিলো বলে। কাজের নামে নন্দিনীকে আড়ালে রেখে পাশের ঘরে চলতো অনিকেত ও ইতির গল্পগুজব। যা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হতো। নন্দিনীর শাশুড়ির চোখ তা এড়ায়নি। বাড়িতে নতুন এবং অবৈধ সম্পর্কের আঁচ তিনি পেয়েছিলেন। তাই নিজের বউমাকে প্রথম সাবধানবাণীটা সে-ই দিয়েছিলো। যতই সে বউমার উপর বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তুষ্ট থাকুক না কেন, দিনের শেষে নন্দিনী তাঁর বাড়ির বউ। বাড়ির বউয়ের মর্যাদা ও অগ্রাধিকার অন্য যেকোনো বাইরের মেয়ের থেকে বেশি।
নাহঃ, অনিকেতের সাথে ইতির সম্পর্কটি শারীরিক অবধি পৌঁছয়নি। পরে ইতি ট্রান্সফার নিয়ে দূরে অন্য এক ব্রাঞ্চে চলে যায়। পরে খবর পাওয়া যায় তার বিয়ে হয়েগেছে এক ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের সাথে। প্রথম দিকে অনিকেত ইতিকে ভুলতে না পারলেও, পরবর্তীতে গুড্ডি কোলে আসায় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছেলে স্বামী ও বাবা হিসেবে আরো দায়িত্ব কাঁধে চাপায় ইতি যেন তার স্মৃতির পাতা থেকে মুছে যায় একদম।
টেবিলের উপর মাথা রেখে পুরোনো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে অনুরিমা আনমনা হয়ে পড়েছিল। জাহাঙ্গীর দূর থেকে অনুরিমাকে এভাবে ভাবুক হয়ে বসে থাকতে দেখে নতুন করে আর জ্বালাতন করলো না। মনে মনে সে ভাবলো, এখনও তো পুরো রাত পড়ে রয়েছে! সুস্মিতা দেবীর মতিগতি দেখে বোঝা গ্যাছে সে আজকে আর ফিরছে না। তার বয়ফ্রেন্ড ফিরতে দেবেনা। পুলিশ কর্মীদের অর্ধেক বাহিনীকে সে থানায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। অর্ধেক কর্মী যারা নির্বাচনের প্রটোকলের জন্য রয়ে গেছে, তাদেরকে স্কু'ল প্রেমিসেস এর থেকে দূরে নির্বাচনের জন্য ভোটিং কেন্দ্রের ৫০০ মিটার Area এর মধ্যে যে পুলিশ ছাউনি তৈরী করা হয়েছে, সেখানে পাহাড়া দিতে পাঠিয়ে দিয়েছে। রয়েছে পড়ে শুধু এই মধ্যবয়সী কৌশিক মল্লিক। এঁনাকে ম্যানেজ করতে পারলেই গোল পোস্ট ফাঁকা! না কোনো গোলকিপার থাকবে, না ডিফেন্ডার, না রেফারি। শুধু জাহাঙ্গীর আর নন্দিনী থাকবে, আর ফাঁকা মাঠে তখন খেলা হবে। ফুটবল নাকি ছোঁয়া-ছুঁয়ি?
জাহাঙ্গীর কৌশিকবাবুর কাছে গিয়ে কথা বলতে লাগলো। তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো। কৌশিকবাবু তখন স্কু'লের লনে পায়চারি করছিলো। ওঁনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো আজ রাতটা এই ধ্যার ধ্যারে হাকিমপুরে কাটানোর কোনো ইচ্ছে নেই। পালানোর ফাঁক খুঁজছে। তাই জাহাঙ্গীর শেষ পথের কাঁটা কৌশিক বাবুকে জিজ্ঞাসাই করে বসলো, "আপনার কি কাছে পিঠে কোনো আত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে?"
"হ্যাঁ, ওই বসিরহাট সদরে। আমার শালাবাবুর কাকাশশুড়ের।"
"ওহঃ বাবা, সে তো অনেক দূর সম্পর্ক হয়েগেলো।"
"না তবে আমার সাথে ভালো সম্পর্ক ও যোগাযোগ রয়েছে। ....."
"আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে এখানে রাত কাটানোর ইচ্ছে নেই। শ্যালকের শশুড়বাড়িতেই স্টে করার অদম্য ইচ্ছে!"
"কিছু মনে করবেন না জাহাঙ্গীর বাবু, আপনাদের এই গ্রামটা সত্যি খুব সুন্দর, তবে......."
"তবে সেরকম ফ্যাসিলিটিস নেই তাই তো? পর্যাপ্ত আলো নেই, কাছে-পিঠে সিগারেটের দোকান নেই ইত্যাদি ইত্যাদি....."
"ওই আর কি বোঝেনই তো, গ্রামে থাকার খুব একটা অভ্যাস এখন নেই। বয়স হয়েছে, বাইরের খাবার খেলে একটু আধটু অম্বল হয়ে যায়, কাছে পিঠে সেরকম ওষুধেরও কোনো দোকান দেখছি না....তাই......"
"বুঝি বুঝি, আমি তো আর আজ থেকে নই, আর হাকিমপুর গ্রাম্য বিদ্যালয়ে এই প্রথম ভোটের কেন্দ্র পড়েনি। এর আগেও যারা যারা ভোটের ডিউটি করতে এসেছে তারা সবাই এই একই বাহানা দিয়ে নাক সিঁটকেছে।"
"না মানে আপনাদের গ্রামটা কিন্তু খুব সুন্দর, প্রাকৃতিক শোভা রয়েছে। শুধু একটু প্রত্যন্ত এলাকায় তো, তাই ......"
"কি আর করবো মশাই, একে গ্রাম তার উপর সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। সরকারের কাছে আমাদের দরকার শুধু ভোটেই পরে, সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী কিনা, যাকে দিই একসাথেই দিই, ভোট। তাই আমাদের শুধু উন্নয়ন হয়, উন্নতি নয়।...."
"বেশ বলেছেন তো কথাটা। উন্নয়ন হয়, উন্নতি নয়। সাময়িক ভাতা রয়েছে কিন্তু স্থায়ী কর্মসংস্থান নেই!"
"ছাড়ুন সেসব কথা, আমার কথা যদি মানেন, তাহলে বলি কি এখুনি নন্দিনী ম্যাডামের কাছে যান। গিয়ে বলুন আপনার আত্মীয় সদরে থাকে তাই তিনি যেন আপনাকে আজকের জন্য ছুটি দিয়ে দেন।"
"বললেই কি আর ছুটি দিয়ে দেবেন! এমনিতেও ইলেকশনের আগের দিন নিযুক্ত সংশ্লিষ্ট ইলেকশন অফিসারদের ভোট কেন্দ্রেই থাকতে হয়।"
"তবে প্রিসাডিং অফিসার চাইলে তার ব্যতিক্রম হতে পারে। তাই নন্দিনী ম্যাডামই ছাড় দিতে পারেন আপনাকে। ওঁনাকে বলবেন, আপনার শশুরবাড়ি থেকে ফোন এসেছিলো, আপনার শ্যালক খুব অসুস্থ। সে বউয়ের সাথে কাছেই বসিরহাট সদরে স্থিত কাকাশশুরের বাড়িতে গিয়ে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, বুকে ব্যাথা উঠে এখন সে শয্যা নিয়েছে। সুতরাং ম্যাডাম যেন আজকের রাতে আপনাকে সেখানে গিয়ে থাকার অনুমতি দেয়। ম্যাডামকে আস্বস্ত করবেন যে কালকে সকাল হতেই আপনি আবার ফিরে আসবেন হাকিমপুরে।"
"কিন্তু এই তো বেশ কিছুক্ষণ আগে সুস্মিতা ম্যাডামও বেরিয়ে গেলেন। আমিও যদি যেতে চাই তো ম্যাডাম রাগ করবেন না? সুস্মিতা দেবী কে যেতে দিয়েছেন কারণ হয়তো উনি ম্যাডামের ভালো বন্ধু, একসাথে একই কলেজে পড়ান, তাই স্বজনপোষণ হয়েছে। আমার ক্ষেত্রে কি আর একই রুল apply করবেন উনি? মনে তো হয়না।....."
"দেখুন ম্যাডাম এখন কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে খুব অ্যাৱসেন্ট মাইন্ডেড হয়ে আছেন। এই সুযোগ! সময় করে কথাটা পেড়ে দিন, আপনার আর্জি ঠিক মঞ্জুর হয়ে যাবে।"
"যদি ছুটি পেয়েও যাই তবু কর্তব্যের দিক দিয়ে এটা গাফিলতি হবেনা? নির্বাচনের এত গুরুত্বপূর্ণ সব নথি রয়েছে, ব্যালট পেপার রয়েছে, ব্যালট বক্স, ভোটার লিস্ট সবকিছু আপনি আর ম্যাডাম সামলাবেন কি করে?"
"আরে মশাই ম্যাডাম তো আগে থেকেই আমাদের দুটো টিমে ভাগ করে দিয়েছেন, একটাতে আপনি আর নন্দিনী ম্যাম রয়েছেন, আরেকটা তে আমি আর সুস্মিতা ম্যাম। যেহেতু দুটো ঘরে ভোটিং প্রক্রিয়াটা হবে। তাই সেই অর্থে দুটো টিম থেকে একজন করে থাকলেই যথেষ্ট আজকের জন্য। তাছাড়া আমি তো এখানকার লোকাল লোক। এই গ্রামে অত হিংসে হানাহানি হয়না। কিছু এদিক-ওদিক হলে আমি ঠিক সামলে নেবো। আপনি যান তো, গিয়ে ছুটিটা নিয়ে আসুন।"
ভোলাভালা সরল কৌশিক বাবু সেই মতো টিচার্স রুমে গেলেন নন্দিনীর সাথে কথা বলতে। ঢুকে দেখলেন নন্দিনী টেবিলে মাথা নামিয়ে চোখ বুজে রয়েছেন। নন্দিনী ম্যাডামের কাছে গিয়ে জাহাঙ্গীরের শিখিয়ে দেওয়া বুলি আউড়ে গেলেন। অনিকেত ও ইতির সেই পুরোনো সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে মনমরা হয়ে ওঠা নন্দিনী বেশি সাত পাঁচ না ভেবে কৌশিক বাবু-কে পারমিশন দিয়ে দিলেন শ্যালকের শশুরবাড়ি যাওয়ার।
আসলে কৌশিকবাবু যখন জাহাঙ্গীরের বুদ্ধি প্রয়োগ করে তার শালার মিথ্যে বুক যন্ত্রণার কথা বললেন তখন নন্দিনী আর বেশি প্রশ্ন করে জলঘোলা করলো না। এমনিতেও সে প্রথম থেকেই কৌশিক বাবু-কে সিনিয়র বলে সমীহ করে এসছে, সুস্মিতা বা জাহাঙ্গীরের তুলনায় অনেক বেশি দায়িত্ববান ও ম্যাচিওর্ড ভেবে এসছে। তাই কৌশিকবাবু যখন বলছেন কাল সকাল সকাল ফিরে আসবেন তখন তাঁর কথার উপর আস্থা রাখাই যায় বলে মনে করলো নন্দিনী।
কৌশিক বাবুও নন্দিনীকে বেশি ভাবার সময় না দিয়ে তার কাছ থেকে বিদায় নিলো। যাওয়ার আগে জাহাঙ্গীরকে ধন্যবাদ দিয়ে গেলেন। জাহাঙ্গীরের মনে তো তখন লাড্ডু ফুটছিল। গোটা স্কু'লে তখন সে আর নন্দিনী, সারারাত! ভেবেই উত্তেজনায় জাহাঙ্গীরের রোম খাঁড়া হয়ে যাচ্ছিলো! মনটা তার সত্যিই উৎফুল্ল হয়ে উঠলো তখন।