Thread Rating:
  • 3 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller সাজু ভাই সিরিজ নম্বর -০৬ (গল্প কাপ ঠান্ডা কফি)
#3
 পর্বঃ-০৩
সাজু ভাই সিরিজ

সাব্বির এক দৃষ্টিতে লাল শাড়ি পরা গলাকাটা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু আগেই সে নিজের হাতে তাকে পানি খাইয়েছে, তাকে এখান থেকে হাসপাতালে নেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অথচ তার অগোচরে কেউ একজন মেয়েটাকে খুন করে ফেলেছে। 

সাব্বিরের ভাবনা ঘুরে গেল, সে কৌতূহল নিয়ে চারিদিকে খুঁজতে লাগলো। তার সামনে মৃত্যু এই মেয়েটার নাম সে জানে না, মুখটা দেখে কেমন অদ্ভুত লাগছে। সাব্বির এক এক করে সবগুলো রুমের মধ্যে অনুসন্ধান করতে লাগলো। 

প্রায় ২০ মিনিট পেরিয়ে গেল। তারপরই সাব্বির একটা গম্ভীর কণ্ঠ শুনতে পেল। কেউ একজন খুবই বিরক্ত গলায় বললো, 

- এতো সময় নিচ্ছ কেন? তোমাকে যা বলা হয়েছে সেটা করো তাড়াতাড়ি। 

চমকে গেল সাব্বির। সে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে আস্তে বললো, 

- কে আপনি? 

আর কোনো শব্দ পাওয়া গেল না। মিনিট খানিক পরে একটা শব্দ হলো তবে সেটা তার মোবাইলের রিংটোন। 

- হ্যাঁ বাবা বলো। 

- কিরে তুই এখনো ওখানে কেন? নিজের জীবন টা এখন শেষ করতে চাস নাকি? 

- আমার খুব ভয় করছে বাবা। আমি এটা করতে পারবো না মনে হয়, আমি এখনই এখান থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। 

- পাগল নাকি তুই? নিচে গাড়ি পার্কিং করা আছে, লাশটা নিয়ে বের হয়ে গাড়িতে উঠলেই সমস্যার সমাপ্তি। 

- আমি পারবো না বাবা। 

এতটুকু বলেই সাব্বির সেই রাতে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে, নিজের বাবার সঙ্গে দেখা না করে সে তার এক বন্ধুর কাছে গিয়ে ওঠে। সেই বাড়িতে তারপর কি হয়েছে সাব্বির কিছু জানে না। 

★★

জানালা দিয়ে লাল টিশার্ট পরা লোকটার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করছে সাজু ভাই। লোকটা দুবার সে দেখতে পাচ্ছে, আগেরবার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পায়নি কিন্তু এখন বেশ ভালো করে দেখা যাচ্ছে। 

- হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন? 

পুতুল নামের মেয়েটা এতক্ষণ ধরে কলে আছে সেটা মনেই ছিল না সাজুর। 

- আমি আপনার সঙ্গে পরে কথা বলবো। 

এ কথা বলেই কলটা কেটে দিয়ে সাজু ভাই তার মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে জুম করে লোকটার ছবি তুলে নিলো। স্পষ্ট করেই কিছু ছবি তুলে নিয়ে সেটাই বারবার দেখছিল। এমন সময় রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো তার আন্টি, মানে সাজু এখন যাদের বাসায় আছে। 

- এই নে সাজু। 

- কি আন্টি? 

- তোর পছন্দের " এক কাপ ঠান্ডা কফি "। 

- আমি কিন্তু আগে কফি খেতাম না আন্টি, কিন্তু অপারেশন হবার পরে কেমন রুচি পরিবর্তন হয়ে গেছে। অনেক কিছু ভালো লাগে না। 

- তোর বাবা কল করেছিল, তারপর গ্রামের বাড়ি থেকে তোর দাদি কল দিলো। 

- বাহহ সবার কতো চিন্তা তাই না? 

- তোর দাদি বলছিল, কবে গ্রামের বাড়িতে যাবি সেটা তাকে জানাতে। তবে আমি বলেছি সাজু আরো কিছুদিন থাকুক, এখানে তো তার কোনো সমস্যা নেই। 

- আর মনে থাকতে পারবো না আন্টি, মংলায় একটা বিয়ে বাড়িতে কাজি সাহেব খুন হয়েছে। হয়তো সেখানে চলে যাবো। 

- বলিস কি, বিয়ে বাড়িতে খুন? 

- পাত্রীকে ও কিডন্যাপ করা হয়েছে। সবাই ধারণা করছে মেয়ের আগের বয়ফ্রেন্ড এসব করেছে। আবার পুলিশের ধারণা, পাত্রের বড় দুলাভাই সবকিছুর জন্য দায়ী। 

- তারপর? 

- আমি বেশি কিছু জানি না, সারারাত ঘুমাতে পারিনি এখন ঘুমাবো। বিকেলে সবটা জেনে তারপর জানাবো আপনাকে। আমার ঘুম ভাঙ্গার আগ পর্যন্ত কেউ দরজা ধাক্কা দিবেন না। 

- ঠিক আছে ঘুমা তাহলে। 

মহিলা চলে গেল। সাজু চুপচাপ বসে রইল তার বিছানায়। এই মহিলা সাজুে মায়ের চাচাতো বোন, সাজুর মা ও ইনি এরা একই দিনে জন্মগ্রহণ করেছেন। একসঙ্গে বড় হয়েছেন ছোটবেলা থেকে। অথচ সাজুর মা বাইশ বছর আগে কবরে ঠাঁই করে নিয়েছেন আর ইনি এখনো দিব্যি। 
জীবন আসলেই কিছু না, কে কখন পৃথিবী থেকে চলে যায় কেউ জানে না। 
বয়সের হিসেবে সজীব সাজুর চেয়ে আট মাসের ছোট ছিল। কত ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অথচ সেই বন্ধু কদিন আগে চলে গেছে না ফেরার দেশে। এ জীবনে আর কখনো দেখা হবে না, এতদিনে শরীরের মাংস হয়তো পঁচে গিয়ে মাটিতে মিশে গেছে। 

একসঙ্গে দুটো ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিলো সাজু ভাই, কারণ তাকে ঘুমাতে হবে। মৃত ব্যক্তিদের কথা ভাবতে গেলেই পরিচিত মুখগুলো সবসময় সামনে ভাসতে থাকে। এইতো দুদিন আগে যে কাজি সাহেবের মৃত্যু হয়েছে সে হয়তো জানতো না এটাই তার জীবনের শেষ বিয়ে বাড়ির যাত্রা। জানলে হয়তো তিনি বাড়ি থেকে বের হতেন না, আগামী মুহূর্তে আমাদের কি হবে আমরা কেউ জানি না। 

★★★

ডাকবাংলো মোড়ের কাছে একটা রেস্টুরেন্টের কর্নারে বসে আছে সাজু ভাই ও বদিউল আলম রিংকু।

- রিংকু সাহেব বললেন, যার সঙ্গে আমার শালার বিয়ে হবার কথা ছিল সেই মেয়েকে এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই বলাবলি করছে মেয়েটা তো বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। 

- মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড ছিল? 

- লোকমুখে শুনেছি, যেহেতু আমার উপর একটা সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে তাই খোঁজ নিতে হচ্ছে ভাই। 

সাজু বুঝতে পেরেছে লোকটা নিজেকে বাঁচাতে এসব তথ্য যোগাড় করে। হয়তো অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁড় করাতে পারলে সে রেহাই পাবে। 

- আপনি কি কাজ করেন? 

- বেসরকারি একটা ব্যাংকে চাকরি করি। একবার ভেবে দেখুন, যদি মামলা খাই তাহলে বেসরকারি চাকরি নিয়ে কতো ঝামেলা হবে। 

- আমি ওই গ্রামের মধ্যে যাবো। তবে তার আগে আপনার স্ত্রীর ছোটভাইয়ের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। সে কি খুলনায়? 

- হ্যাঁ আমার শালা এখন খুলনায়। 

- প্লিজ বারবার শালা শালা করবেন না, আমার কাছে কেমন গালি গালি মনে হয়। এবার বলুন সে কোথায় আছে? তার নাম আনিসুল ইসলাম তাই না? 

- জ্বি, সে এখন বাসাতেই আছে আপনি চাইলে আমি তাকে এখানে আসতে বলবো। 

- দরকার নেই, আমার বাইক আছে আপনি আর আমি দুজন মিলে চলে যাবো। 

- ঠিক আছে চলুন। 

বিয়ের সেই পাত্র আনিসুল ইসলামকে পাওয়া গেল না, তার মোবাইল বন্ধ। বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় যেন চলে গেছে। তার নাম্বার নিজের মোবাইলে সেভ করে সাজু ভাই বাসা থেকে বের হয়ে গেল। 

বাসা থেকে বের হয়েই নিজের বাইক নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে গেল। খুলনার পর্ব শেষ, এখন তাকে যেতে হবে মংলা। অবশ্য সেখানে গিয়ে প্রথমে দারোগা সাহেবের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে। 

★★

দারোগা সাহেবের মুখ হাসিখুশি। খুলনা থেকে আসার আগেই সাজুর আগমনের কথা তিনি জানতে পেরেছেন। সাজুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, 

- কেমন আছেন ভাই? 

- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনাকে অনেক রাত পর্যন্ত আটকে রাখলাম। বাইক নিয়ে আসতেও এতটা দেরি হবে বুঝতে পারিনি। 

- সমস্যা নেই, তাছাড়া বিয়ে বাড়িতে ওই ঘটনার পর থেকে থানায় থাকি বেশিরভাগ। আমার বাসা এখান থেকে কাছেই। 

- কাজি সাহেবের লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসতে কতদিন লাগবে? 

- বেশিদিন লাগবে না। 

- আমি যদি এখন গ্রামের বাড়িতে যেতে চাই তাহলে কি আপনি আমার সঙ্গে যেতে পারবেন? 

- আসলে গ্রামের রাস্তা খুব খারাপ, তাছাড়া এমন রাতের আঁধারে না যাওয়া ভালো হবে। কালকে সকালে উঠে আমরা গেলে ভালো হবে। 

- গ্রামের নাম কি? 

- কুসুমপুর। 

সাজুর মোবাইল বেজে উঠলো। দারোগার সামনে বসে মোবাইল বের করে দেখে ঢাকা থেকে সাইফুল ইসলাম কল দিয়েছে। মোবাইল রিসিভ করে সে দারোগার সামনে থেকে উঠে গেল। দারোগা একটা মুচকি হাসি দিয়ে মনে মনে বললো, " প্রেমে মরা জলে ডুবে না " 

থানার বাইরে বেরিয়ে সাজু ভাই অবাক হয়ে গেল, সকালে আর দুপুরে খুলনা শহরে দেখা সেই লাল টিশার্ট পরা লোকটা দাঁড়িয়ে ছিল। তবে সে এখন সাদা একটা শার্ট পরিধান করে আছে, হয়তো ভাবেনি সাজু ভাই এতো তাড়াতাড়ি বের হবে। সাজুকে দেখেই লোকটা দ্রুত হাঁটা শুরু করে। 

- কেমন আছেন সাইফুল ভাই? 

- জ্বি ভাই ভালো তবে বেশ চিন্তিত। 

- কি হয়েছে? আর আপনার কণ্ঠ এমন অদ্ভুত লাগছে কেন? 

- আমার মামার বাসা উত্তর বাড্ডা জানেন তো? 

- হ্যাঁ জানি। 

- এখানে একটা এপার্টমেন্টে ফাঁকা ফ্ল্যাটের মধ্যে এক মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে। সেই মেয়ে বিয়ের সাজগোছ অবস্থায় ছিল৷ 

- তারপর কি হলো? 

- ড্রইং রুমের ফ্লোরে মেয়েটার লাশ পড়ে ছিল। উপর তলার এক ভাড়াটিয়া হঠাৎ করে এই ফ্ল্যাট থেকে একটা ছেলেকে দ্রুত বেড়িয়ে যেতে দেখে। তারপর কৌতূহল নিয়ে খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে তাকিয়ে লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। 

- সবকিছু পুলিশের দখলে? 

- জ্বি ভাই। তবে আসল ঘটনা অন্য কোথায়। আর সেটা নাহলে আমি আপনাকে কল দিতাম না। 

- কিরকম? 

- পুলিশ ওই বাসায় সবকিছু চেক করেছে। আমি আমার এক সাংবাদিক বন্ধুর সাথে সেই থানায় গিয়ে দেখা করেছিলাম। পুলিশ যা কিছু উদ্ধার করেছে তারমধ্যে একটা ছেলের ছবি আছে। 

- সেই ভাড়াটিয়াকে ওই ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করুক যে এটাই সেই ছেলে নাকি। 

- এটা সেই ছেলে না। 

- ওহ্ আচ্ছা। 

- সাজু ভাই..? 

- বলেন। 

- ছবিটা আপনার, যে ছবিটা পাওয়া গেছে সেটা আপনার ছবি। আমি নিজের হাতে ভালো করে দেখেছি ওটা আপনার ছবি ছিল। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার ছবি কেন এই ফ্ল্যাটের মধ্যে পাওয়া যাবে? 

চলবে... [ কেমন লেগেছে জানাবেন। ]

লেখাঃ- 
মোঃ সাইফুল ইসলাম। 

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সাজু ভাই সিরিজ নম্বর -০৬ (গল্প কাপ ঠান্ডা কফি) - by Bangla Golpo - 09-02-2025, 03:18 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)