Thread Rating:
  • 47 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
এক মুঠো খোলা আকাশ
#69


"হে ভগবান! আমার বাড়ির বউ কোন এক প্রত্যন্ত গ্রামে একা সারারাত কাটাবে! লোকে কি বলবে? কি দরকার এরকম ডিউটি করার?"

"মা, আমি একা কোথায়, সুস্মিতাও তো থাকবে আমার সাথে!"

"সুস্মিতা কই? ওর সাথে কথা বলাও।...."

"দিচ্ছি মা, ও তো এখানেই ছিল। দাঁড়াও, খুঁজছি।" .....

ফোনের ওপার থেকে শাশুড়ি মায়ের আদেশ মেনে সে সুস্মিতাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগলো। শাশুড়ি ফোন তখনও কাটেনি। জেদ ধরেছিলো আগে বউমার স্কু'লের কলিগ সুস্মিতার সাথে কথা বলে মনকে আস্বস্ত করবেন তারপর ক্ষান্ত হবেন।

সন্ধ্যে নেমেছিলো। শহরের মতো রাস্তায় লাইট নেই, অনেক দূরত্বে এক একটা বাড়ি। জনঘনত্ব নেহাতই কম। চারদিক থম মেরে আছে। সাধেই নন্দিনীর শাশুড়ি এতটা বিচলিত হচ্ছিলোনা! সে জানে এরকম গোধূলিলগ্নে অঁজ পাড়াগাঁয়ে কিরকম নির্জনতা বিরাজ করে। গা ছিমছিম করার মতো পরিস্থিতি হয়। আর এরকম একটা সময়ে এরকম একটা স্থানে তার বাড়ির বউ ডিউটিতে আছে! ভালোমন্দ কিছু হয়েগেলে জানার বা তৎক্ষণাৎ যাওয়ার উপায়ও থাকবেনা।

নন্দিনী সুস্মিতাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলো না। অথচ এইসময়েই তার ওকে খুব বেশি দরকার নিজের শাশুড়িকে আস্বস্ত করতে, যে সে নিরাপদে রয়েছে। জাহাঙ্গীর-কে সামনে পেয়ে অগত্যা তাকেই সুস্মিতার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলো। সে বললো সুস্মিতা নাকি কিছুক্ষণ আগেই একটা ছেলের সাথে বাইকে করে চলে গ্যাছে। জাহাঙ্গীর খেয়াল করেছে এটা সেই ছেলে যার সাথে সুস্মিতা ম্যাডাম সকালে এখানে এসেছিলেন। কাউকে তার পরিচয় না দিলেও হাবভাব এমন ছিল যেন সেই ছেলেটাই তার স্বামী। কিন্তু বিচক্ষণ ও চৌকশ বুদ্ধি সম্পন্ন জাহাঙ্গীরের বুঝতে সময় লাগেনি যে এই ছোকরা আর যাই হোক ত্রিশোর্ধ্ব সুস্মিতার স্বামী হতে পারেনা। তবুও সে কিছু বলেনি, কারণ তার টার্গেট নন্দিনী, সুস্মিতা নয়।

[Image: Supurna-Malakar-Biography.jpg]
নন্দিনী

জাহাঙ্গীরের কানেকশন অনেক দূর অবধি রয়েছে। উপরমহলের অনেকের সাথে তার rapport আছে। ট্রেনিং এর সময় থেকেই তার নজর ছিল নন্দিনীর উপর। ইলেকশনের ট্রেনিং-এ নন্দিনীকে দেখা ইস্তক ফিদা হয়েগেছিলো জাহাঙ্গীর। উপরমহলে অনেক কানেকশন লাগিয়ে সে-ই কায়েদা করে বড়ো কর্তাদের বলে কয়ে নন্দিনী-কে তার স্কু'লে প্রিসাইডিং অফিসার করিয়ে নিয়ে আনতে পেরেছে। অনেক বড়ো মাপের খিলাড়ি এই জাহাঙ্গীর রুবেল হাসান! নাহলে এত কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষিকা-কে কেউ প্রিসাইডিং অফিসারের মতো গুরু দায়িত্ব দেয়! নন্দিনীর প্রিসাইডিং অফিসার পদে এই নিয়োগ সুস্মিতাকেও অবাক করে দিয়েছিলো, সাথে জেলাসও!

------------------

"কি! সুস্মিতা চলে গেছে? আমাকে না বলে?"

"উনি তো বললেন আপনার কাছ থেকে আগেই পারমিশন নেওয়া হয়ে গ্যাছে। আপনি টিচার্স রুমে একটু রেস্ট নিচ্ছিলেন দেখে আপনাকে ডিস্টার্ব না করে বেড়িয়ে গেছেন।"

"কখন আসবে কিছু বলে গেছে?"

"না, সেরকম তো কিছু বলেনি। আমি ভাবলাম আপনাকে হয়তো সব বলে গ্যাছে, তাই আর আগ বাড়িয়ে আমিও জিজ্ঞেস করিনি।"

ফোনের ওপার থেকে শাশুড়ি মা সব শুনছিলেন। তিনি তো রেগে একেবারে আগুন! বউমার একমাত্র মহিলা সঙ্গিনী এখন তার সাথে নেই? তাহলে বউমা-কে এখন দেখবে কে?

ফোনের ওপার থেকে শাশুড়ি মায়ের বকাবকি শুরু হলো। নন্দিনী যতই তার শাশুড়িকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলো সুস্মিতা চলে আসবে, আর আসলেই তেনার সাথে কথা বলিয়ে দেবে, ততই অনিকেতের মা আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছিলো। আদেশ করছিলো সত্বর যেন সে সব কাজ ফেলে কলকাতা ফিরে আসে। নন্দিনী জানতো তা কিছুতেই সম্ভব নয়। শাশুড়ি যতই তাকে বিষোদ্গার করুক, তিরস্কার করুক না কেন, সে সরকারী উর্ধ্বতন কর্তাদের কাছে বিরাগভাজন হতে পারবে না। তারা হয়তো অনেক বিশ্বাস ও আস্থা রেখে নন্দিনীকে প্রিসাইডিং অফিসার বানিয়েছেন। নন্দিনী তো আর জানতো না এসব আসলে জাহাঙ্গীরের কৃপায় হয়েছে। তার নিজ স্বার্থ আছে নন্দিনীকে কাছে পাওয়ার সেই কারণেই এত আয়োজন।

জাহাঙ্গীর যখন দেখলো নন্দিনী ফোনে কাকে একজন মা বলে সম্বোধন করে বারবার বোঝানোর চেস্টা করছে তার পক্ষে এখন এই গ্রাম ছেড়ে কলকাতা ফেরা সম্ভব নয়, তখন সে আর কিছু না ভেবে চট করে নন্দিনীর কান থেকে ফোনটা নিয়ে বললো, "মাসিমা নমস্কার! আমি এই গ্রামের ভূগোলের টিচার। আপনি মনে হয় অনেক চিন্তিত রয়েছেন নিজের মেয়েকে নিয়ে, তাই না? কিন্তু চিন্তা করবেন না, ম্যাডামের দেখভাল করার দায়িত্ব আমাদের সবার। তিনি এই গ্রামের অতিথি, আর আমরা হাকিমপুরবাসী অতিথিকে মাথায় করে রাখি। তাই সুস্মিতা ম্যাডাম কখন আসবে বা না আসবে সেই নিয়ে একদম চিন্তা করতে যাবেন না। আমরা তো আছি। লোকাল টিচার্স, পুলিশ, সকলে! আপনার মেয়ে আমাদের কড়া নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যেই রয়েছে, প্রিসাডিং অফিসার বলে কথা! কিচ্ছু হবেনা ওনার, আমরা গ্রামবাসিরা কিছু হতে দেবোনা। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন, কেমন!"

এক নাগাড়ে বলে গেলো জাহাঙ্গীর। কিন্তু এমনভাবে বললো যে নন্দিনীর শাশুড়ি আর মুখে রা কাটতে পারলো না। নন্দিনীর ফোনে বারবার মা সম্বোধনে জাহাঙ্গীর ভেবেছিলো সে তার মায়ের সাথে কথা বলছে। এছাড়া সে এটাও আবিষ্কার করেছিল যে ফোনের ওপারের মানুষটি নন্দিনীর থাকা খাওয়া নিরাপত্তা নিয়ে বেশ চিন্তিত। সাধারণত বাঙালি রক্ষণশীল পরিবারে শাশুড়িদের তার নিজ বউমাদের নিয়ে এত কনসার্ন দেখা যায়না। তাই শাশুড়ির বদলে তাকে মা ভেবে বসে নেওয়াটা অস্বাভাবিক মোটেই ছিলোনা। জাহাঙ্গীরের শুধু ভয় ছিল, পাছে নন্দিনী চাপের কাছে নতি স্বীকার করে গ্রাম ছেড়ে যেতে মন না বানিয়ে ফেলে। তাহলে এত কষ্ট, প্ল্যানিং সবকিছুর উপর জল বয়ে যেত! তাই সে নিজে উদ্যোগ নিয়ে ফোনের ওপারের মহিলাকে কনভিন্স করলো গ্রামের পরিস্থিতি নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে।

তারপর নন্দিনীর শাশুড়ি নন্দিনীর সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দেওয়ার পর, নন্দিনী প্রথমে তো জাহাঙ্গীরকে ধন্যবাদ জানালো তার শাশুড়িমা কে বোঝানোর জন্য। ঠিক পরমুহূর্তেই সে জাহাঙ্গীরকে চার্জ করতে লাগলো তাকে না বলে তার ফোনটা হাত থেকে কেন কেড়ে নিয়েছিল সেই নিয়ে। নন্দিনী জাহাঙ্গীরকে একটু ম্যানার্স ফলো করতে নির্দেশ দিলো। জাহাঙ্গীরের বারংবার এই সীমা লঙ্ঘন করাটা তার মোটেই ভালো লাগছিলো না। যদিও এইবার জাহাঙ্গীর তার উপকারই করেছে, তাও। সে অন্তত নন্দিনীকে একবার সচেতন করতে পারতো ফোনটা নেয়ার আগে। এটা যেন ঠিক কেড়ে নেওয়া হলো ফোনটা! আজ জাহাঙ্গীর আর নন্দিনীর মধ্যে যত কান্ড সব নন্দিনীর এই ফোনটাকে ঘিরেই যেন হচ্ছিলো। কি আশ্চর্য ব্যাপার!

"আমি জানি ম্যাডাম, আমি একের পর এক ভুল করে যাচ্ছি আপনার সাথে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমার ইনটেনশন খারাপ নয়।"

"ইনটেনশন খারাপ নয়? তাহলে দুপুর বেলা আমায় একা পেয়ে ওরকম কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন কেন?"

"ভুল হয়েগেছে। সত্যি বলতে আপনার মতো সুন্দরী মেয়ে আমি আগে একটিও দেখিনি। সেই ট্রেনিং এর সময় থেকে আমি আপনার সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ! আমরা গ্রামের মানুষ, শহুরে দের মতো অত এনিয়ে বিনিয়ে কথা বলতে পারিনা। কাউকে ভালো লাগলে নিজের ফিলিংস কন্ট্রোল করতে না পেরে এমন কিছু কথা বলে বসি যা হয়তো আপাতদৃষ্টিতে খারাপ মনে হতে পারে। আমার বলা কথা গুলোই যদি কোনো শহুরে স্মার্ট হ্যান্ডসাম বাবু বলতো ইংরেজিতে like I will not do anything without your permission, but if your kindness pouring on this admirer of you then we will may have some fun together.... এইভাবে বললে সেটা হয়ে যেত ফ্লার্টিং। আর আমি পাতি বাংলায় নিজের সীমা লঙ্ঘন করলে সেটা মোলেশটেশন? আমি বলছিনা আমার প্রস্তাবটা কুরুচি সম্পন্ন নয়, ভুল মানুষমাত্রই হয়, আমিও করেছি ভুল। কিন্তু তার এত বড়ো সাজা হতে পারেনা!"

"কি সাজা? কি এমন শাস্তি দিয়েছি আমি আপনাকে?"

"এই যে সব ব্যাপারে আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। একদিকে মানছেন আমি আপনার মা কে কনভিন্স করে আপনার বাড়ি ফেরাটা আটকালাম, অপরদিকে আপনিই আবার তখন থেকে আমাকে বকে যাচ্ছেন, একজন শিক্ষিকা হয়ে অপর শিক্ষককে ম্যানার্স শিখতে বলছেন। এগুলো কি শুনতে ভালো লাগে বলুন? হ্যাঁ, আমি আপনাকে লাইক করি, তাতে অন্যায় কি। মানুষের মন যেকোনো কারোর উপরই আসতে পারে, তাতে তো কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। কিন্তু আপনি যদি আমাকে নিজের কাছে ঘেঁষতে না দেন, তাহলে আমার মুখে বলাই সার। কাজে আমি এমন কিচ্ছু করবো না যাতে শুধু আমার জাত নয়, আমার গ্রামেরও নাম খারাপ হয়।"

অবশেষে জাহাঙ্গীরের আবেগভরা কথায় নন্দিনীও কনভিন্সড হলো যে লোকটা ঝোঁকের বসে তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে ফেলেছিলো ঠিকই, কিন্তু লোকটা নিতান্তই হার্মলেস, ভরসাযোগ্য। তাই নন্দিনী স্বাভাবিক হয়ে মুখে একটা আলতো হাসি নিয়ে বললো, "বাই দা ওয়ে যার সাথে কথা বললেন, সে আমার মা নন, আমার শাশুড়ি মা।"

"ওহঃ তাই!! তা শাশুড়ি মা কি মা হয়না? ওঁনার কথা শুনে মনে হচ্ছিলো উনি আপনার প্রতি খুব কনসার্ন, ঠিক আমার মতো...."

"আপনার মতো? আপনি আমার প্রতি এত কনসার্ন কেন?"

"ওই যে বললাম, I like you.. I don't need any validation for that.. এটা একান্তই আমার নিজস্ব ফিলিংস। এতে আপনাকে participate না করলেও হবে।"

"আপনি বিয়ে করেননি?"

"কেন জিজ্ঞেস করছেন? যেহেতু আমি আপনার সাথে ফ্লার্ট করছি তাই? এমনিতেও আমার ধ'র্মে চারটে বিয়ে অ্যালাউড! তাই বিবাহিত হলেও কাউকে পটিয়ে আবার বিয়ে করে ঘরে তুলতে মানা নেই। হা হা হা হা!!....."

"খুব বাজে জোক! সবসময়ে গ্রামের মানুষ বলে আমাকে যা তা বলে পার পাবেন না আপনি, এটা মনে রাখবেন। একজন অন্য ধ'র্মের বিবাহিতা মেয়েকে পূনরায় বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন? এটা কুপ্রস্তাব নয়? নাকি এতেও village card খেলবেন? বলবেন গ্রামের মানুষ বলে সোজা কথা সোজা ভাবে বলে দিচ্ছেন? পরস্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ রাখা কোনো ধ'র্মেই জায়েজ নয়, কোথাও মান্য নয়, তা সে শহর হোক বা গ্রাম, এটা মানবেন তো?"

জাহাঙ্গীর বুঝলো নন্দিনী এত সহজ পাত্রী নয়। খুব সমঝে কথা বলতে হবে এবার থেকে, যদি সে সত্যিই চায় এই সুন্দরী অপ্সরার যৌবনের একটু স্বাধ নিতে। সেই কারণে জাহাঙ্গীর ফের মেক আপ দেওয়ার জন্য বললো, "না না, আমি ওভাবে বলতে চাইনি। হালকা ফুলকা ইয়ার্কি মারতে গেলাম, আপনি মাইন্ড করে বসলেন। যাই হোক, আমি বিবাহিত। বাড়িতে বউ রয়েছে, ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।"

"ওহঃ! Congratulations! তা এইজন্য আপনার মন বহির্গামী হয়েছে? বাইরের পানে ছুঁকছুঁক করছে। ঘরে যেহেতু বউ ভালোবাসা দিতে পাচ্ছেনা, তাই তৃষ্ঞার্ত কাকের মতো বাইরে পানি খুঁজছেন, তেষ্টা মেটাতে! শুনেছি এইসময়ে স্বামীদের মন উচাটন হয়ে ওঠে, স্ত্রীয়ের শরীর না পেয়ে।"

"এভাবে কেন বলছেন? আপনার সাথেও কি এরকম কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছিল?"

"কিই??........ নাহঃ, না না ...... কিছু না ...... কিচ্ছু হয়নি..... কিচ্ছু না......."

বলেই নন্দিনী অন্যমনস্ক হয়ে পিছনে ঘুরে জোরে পা চালিয়ে টিচার্স রুমের দিকে হাঁটা দিতে লাগলো। যেন কোনো এক রহস্য গোপনের নিবিড় চেষ্টা তার মধ্যে। জাহাঙ্গীর বুঝতে পারলো না ঠিক কি হলো নন্দিনীর? হঠাৎ আবার কি সে অফেন্ড হয়েগেলো? হায় আ'ল্লাহ! তুমি মেয়েমানুষকে এত জটিল কেন বানিয়েছো??
[+] 12 users Like Manali Basu's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: এক মুঠো খোলা আকাশ - by Manali Basu - 08-02-2025, 05:09 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)