Thread Rating:
  • 43 Vote(s) - 2.6 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller অন্তরের বন্ধন- তমালের গোয়েন্দা গল্প
বন্দনা বেরিয়ে যাবার পরে তমাল আরও একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ডায়েরিটা খুললো। ছোট্ট একটা নীল রঙের ডায়েরি, বিশেষত্বহীন। মাত্র কয়েকটা পাতায় কিছু তারিখ আর সংখ্যা লেখা। বোঝাই যায়, বিশেষ কোনো হিসাব রাখার জন্য ডায়েরিটা কেনা হয়েছে।


প্রথম তিন পাতার পরেই শেষ হয়ে গেলো ডায়েরির লেখা। তারপরে সব সাদা পাতা। তমাল অলস ভাবে উলটে যেতে লাগলো ডায়েরিটা। মাঝামাঝি যায়গায় একটা আন্ডারলাইন করা তারিখ দেখতে পেলো। আবার শেষের দুপাতায় সেই তারিখ আর সংখ্যা।

একবার পুরো ডায়েরি উলটে পালটে দেখে তমাল আবার প্রথম পাতার চলে এলো। এবারে মন দিয়ে দেখতে লাগলো লেখা গুলো। প্রথম তারিখটা প্রায় আড়াই বছর আগের। পাশের সংখ্যাটাও বেশ বড়সড়। তার পর থেকে প্রায় প্রতি মাসের এন্ট্রি আছে ডায়েরিতে। 

দেখতে দেখতে প্রথমে তমালের ভুরু দুটো কুঁচকে উঠলো। তারপরেই তার মুখ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো একটা বিজয়ীর হাসি। আস্তে আস্তে কুয়াশা কেটে যাচ্ছে তমালের মনের। অনেক কিছুই বুঝতে পারছে তমাল। তারিখের পাশের সংখ্যাগুলো যে টাকার পরিমান, সেটা বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধিমান হবার প্রয়োজন হয়না। আর রাজীব এই ডায়েরিতে লুকোছাপাও তেমন করেনি।

তছরুপ যে হয়েছে, তার স্পষ্ট প্রমাণ এই তথ্য। শুধু তাই নয়, সেটা হয়েছেও একটা নিয়মিত ছন্দে, অর্থাৎ হয় তছরুপকারী খুব তাড়াহুড়ো করে বড় দাও মারার চেষ্টা করেনি, অথবা সে কোনো চক্রান্তের শিকার হয়েছে। তাকে ব্ল্যাকমেল করে প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। 

মাঝের তারিখটাও বেশ পুরানো, বছর তিনেক আগের। কি আছে তারিখটার ভিতরে? কেন সেটা বিশেষভাবে আলাদা করে লেখা হয়েছে? ভাবতে ভাবতে তারিখটা মনে গেঁথে নিলো তমাল। শেষের দুপাতায় ও একই ভাবে প্রতিমাসে টাকা সরানো হয়েছে। 

হঠাৎ তমালের মনে একটা প্রশ্ন মাথাচাড়া দিতেই সে প্রথম পাতাগুলোতে ফিরে এলো। শেষের দিকের কয়েকটা তারিখ দেখে নিয়ে আবার শেষ পাতায় এলো। আবার ভুরু কুঁচকে উঠলো তমালের। প্রথম সিরিজ থেমে গিয়ে দ্বিতীয় সিরিজ শুরু হয়নি, বরং দুটোই একসাথে চলেছে।

তমাল বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজলো। তার মনে আসা দুটো থিওরি নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো। তারপরে একটা চিন্তাকে বাদ দিয়ে সমস্ত যুক্তি তাকে একটাই সম্ভাবনার দিকে নির্দেশ করতে লাগলো। ব্ল্যাকমেল! কারণ যদি তছরুপ হতো, তাহলে একই সময়ের দুটো এন্ট্রি থাকতো না খাতায়। দুটো মিলিয়ে একটাই অংক হতো। আলাদা আলাদা করে লেখা মানে দুজন আলাদা মানুষকে দেওয়া হয়েছে টাকা। কেন?

ব্ল্যালমেইলার কি দুজন? নাকি ব্ল্যাকমেইলারের সাহস এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে? গভীর চিন্তায় ডুবে গেলো তমাল। কাকে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে? আবার সেই তিনজনের নাম মনে এলো। মধুছন্দা দেবী,  রাহুল, এবং অদিতি.. কারণ ব্ল্যাকমেইলার তাদেরই টার্গেট করে যাদের টাকা মেটানোর ক্ষমতা আছে। এবং সেটা আছে এই তিনজনের। তারা তিনজনই প্রত্যক্ষ ভাবে মুখার্জি বাড়ির বিষয় সম্পত্তির সাথে যুক্ত। মৌপিয়ার সে সুযোগ নেই, এবং বন্দনা এই বাড়ির আশ্রিতা। তাদের ব্ল্যাকমেইল করে কোনো লাভ নেই। কিন্তু কি এমন গোপন কথা থাকতে পারে তাদের?

তমাল এক একজনকে নিয়ে ভাবতে লাগলো। প্রথমেই বেছে নিলো মধুছন্দা দেবীকে। তাকে ব্ল্যাকমেল করার সুযোগ কতোটুকু? তার একটা কালো অতীত আছে, এবং অনেকগুলো ধূসর অধ্যায় আছে। কাউকে কোনো প্রশ্ন না করেই টাকাপয়সা ব্যবহার করার সুযোগ রাহুলের পরে তারই সবচেয়ে বেশি। সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু সেটা নিন্দনীয় হলেও ওপেন সিক্রেট, সবাই জানে। সেটা নিয়ে ব্ল্যাকমেল করার সুযোগ নেই। তবে মৌপিয়া একটা তথ্য দিয়েছে যে মধুছন্দা দেবী তার বাবা এবং সুলতা পিসির অবৈধ সন্তান বলে একটা কথা হাওয়ায় ভাসে। এটা লুকিয়ে রাখতেই কি এই ষড়যন্ত্র?

তমাল আস্তে আস্তে মাথা নাড়লো দুপাশে। বড় লোকের বাড়িতে এরকম বদনাম আকছার শোনা যায়। আর এখন মধুছন্দা দেবীর যা প্রতিপত্তি, তাতে এ বিষয়ে কেউ প্রশ্ন তুলে কতোটা সুবিধা আদায় করতে পারবে সন্দেহ আছে। আর স্পষ্ট কোনো প্রমাণও নেই। নাকি আছে? কেউ এই ঘটনার স্পষ্ট প্রমাণ হাতে পেলে ব্ল্যাকমেল করতেই পারে। প্রথমত মর্যাদাহানির ভয়, দ্বিতীয়ত সম্পত্তি সম্পর্কিত জটিলতা আসতে পারে। 


প্রশ্ন হলো, এই ঘটনা জানার মতো লোকজন ক'জন আছে এই বাড়িতে? সুলতা পিসি আর ঘনশ্যাম। সুলতাপিসি নিজে এই কথা এই বয়সে শিকার করবে বলে মনে হয়না। তাছাডা তমাল নিজে সুলতাপিসির সাথে কথা বলে তাকে ব্ল্যাকমেইলার বলেও ভাবতে পারছে না। তার এখন টাকার দরকার নেই, দরকার একটা নিরাপদ, নিশ্চিন্ত আশ্রয়, যা এই বাড়িতেই সে পাচ্ছে। তাহলে খামোখা সেটা নষ্ট করতে যাবে কেন?

বাকী রইলো ঘনশ্যাম। সেও এই বাড়িতে চাকরিতে পুনর্বহাল হয়েছে। এই পারিবারিক কেচ্ছা রটিয়ে তার লাভ কি? তাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দিলেই তো সমস্যা মিটে যায়। বাইরে এসব রটিয়ে তেমন কোনো লাভ হবে না। তাহলে তাকে মাসে মাসে টাকা দেবার কি দরকার?

মৌপিয়া বা অদিতি করতে পারে কি কাজটা? নিজের প্রশ্নে নিজেই হেসে ফেললো তমাল। নিজেকে একটা বিচ্ছিরি গালাগালি দিয়ে আবার ভাবনাকে যুক্তিপূর্ণ পথে ফিরিয়ে আনলো তমাল।

এ ছাড়া মধুছন্দা দেবীকে যে তার বাবা ত্যাজ্য করেছিলেন, এই তথ্যটাও ব্ল্যাকমেলিং এর জন্য আদর্শ। যদি সেটা কাগজে কলমে হয়ে থাকে তাহলে মুখার্জি বাড়ির সম্পত্তিতে মধুছন্দা দেবীর ভাগ থাকে না। এই খবর তার জন্য অশনিসংকেতই বটে।

এবারে সে মন দিলো রাহুলের দিকে। অনেকদিন বাড়ির বাইরে ছিলো সে। তার ব্যাঙ্গালোরের ছাত্রজীবন নিয়ে প্রায় কিছুই জানেনা তমাল। সেখানে কোনো গুরুতর গোপন বিষয়ে জড়িয়েছিলো কিনা তাও জানে না তমাল। তা ছাড়া ব্ল্যাকমেল করার জন্য রাহুল সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো। সমস্ত ব্যবসা এখন সেই সামলায়। ব্যবসায়িক লেনদেনও তার হাত দিয়েই হয়। যখন খুশি কয়েক লক্ষ্য টাকা সরিয়ে নিলেও কেউ প্রশ্ন করবে না তাকে।

যদি ধরেও নেওয়া যায় তার কোনো গোপন অতীত আছে, তাহলে তাকে ব্ল্যাকমেল করার লোক দু'জন। রিনি এবং রাজীব। রিনি অরোরা তাকে ব্যাঙ্গালোর থেকে চেনে। কোনো কেলেংকারি থেকে থাকলে তার পক্ষেই সেটা জানা সবচেয়ে সহজ। আর রাজীব রিনির প্রণয়ী, সুতরাং দুজনে মিলে ব্ল্যাকমেল করতেই পারে। দুটো আলাদা এন্ট্রি কি সেজন্যই? রাজীবের সাথে রিনির সম্পর্ক যাতে জানাজানি না হয়, তাই কি আলাদা আলাদা ভাবে ব্ল্যাকমেল করছে দুজনে?

তৃতীয় সম্ভাবনা হলো অদিতি। কিছুদিন হলো সে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিয়েছে। গার্গীর সাথে একদিন কথায় কথায় জেনেছিলো অদিতিদের অনেক দোকান এবং বাড়ি ভাড়া দেওয়া আছে বাজারে। সেগুলো থেকেও একটা বিশাল আয় হয়। আর সেই টাকা নাকি অদিতির নামেই জমা হয়। তার বাবা এই ব্যবস্থা করে গেছে। তার মানে গোপন করার মতো কিছু যদি অদিতির থাকে, তাহলে ব্ল্যাকমেইলারকে টাকা দেবার মতো ক্ষমতাও অদিতির আছে। কিন্তু সেই হিসাব কি রাজীবের পক্ষে জানা সম্ভব? নাকি রাজীব নিজেই ব্ল্যাকমেল করছিলো? রাজীব নিজেও তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। সেখানেও অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের মতো অনেক গোপন লজ্জাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে । 

মধুছন্দা দেবীর সমস্যাগুলোর সাথে রাজীব হত্যা চেষ্টা মেলে না। রাজীবকে সরিয়ে দিয়ে তার কি লাভ? বরং টাকা দিয়ে মিটিয়ে নেওয়াই সহজ।

অদিতির অবশ্য কারণ আছে। এই বয়সে পারিবারিক এবং নিজের সম্মান বাঁচাতে সে মরিয়া হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু তাই বলে খুন! এখন খুনের চেষ্টা বললেও ছুরিটা একটু এদিক হলে এটা খুনই হতো। খাপে খাপে মেলাতে গিয়ে যুক্তিগুলো একটু যেন অসামঞ্জস্যপূর্ণ লাগলো তমালের। তবুও সে বাতিল করলো না তাদের।

সবচেয়ে বেশি সুযোগ হলো রাহুলের। তার বয়স, শারীরিক সক্ষমতা,খুনের চেষ্টার স্থান এবং খুনের হাতিয়ার, সব দিক থেকেই সুবিধাজনক জায়গায় আছে রাহুল। যদি কিছু গোপনীয় থেকেই থাকে রাহুলের তাহলে রিনি বা রাজীবই সরাসরি জড়িয়ে পড়ে তাতে। ধাঁধার টুকরো গুলো অনেক সহজ ভাবে মেলে রাহুলের খাপে। রাহুল রগচটা মানুষ, নিজেকে কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচাতে ঝোঁকের মাথায় কারো পিঠে ছুরি বসিয়ে দেওয়া অসম্ভব নয়।

আবার সিগারেট জ্বালালো তমাল। ঘুরে ফিরে সেই রাহুলেই এসে মিলছে সব সূত্র। কিন্তু বিরূদ্ধ প্রমাণও তো তার পক্ষে। তমাল মন থেকে মেনে নিতে পারছে না এই খুনের চেষ্টায় রাহুল জড়িত। এতোদিনের গোয়েন্দা জীবনের গাট-ফিলিংও তাকে রাহুল থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তবু সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিলোনা তাকে তমাল। তবে আজ একবার রাহুলের সাথে কথা বলতেই হবে, ঠিক করলো তমাল।

ঠিক তখনি তমালের মোবাইলে একটা ইমেইল নোটিফিকেশন এলো। জি-মেইল খুলে দেখলো সুদর্শন পাঠিয়েছে। কল ডিটেইল লিস্ট। প্রায় দশ বারো পাতা। তমাল আবার উঠে এলো চারতলায়। কম্পিউটার চালু করে প্রিন্ট-আউট বের করে নিলো। তারপর নেমে এলো নিজের ঘরে। কাগজ গুলোর উপর চোখ বোলাচ্ছিলো, তখনি এলো মদনের ফোন।

অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে গেলো মদন। তমাল তাকে বাঁধা না দিয়ে চুপচাপ শুনে গেলো। তারপরে বললো, শোনো মদন, আমি তোমার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাচ্ছি। তুমি কাছাকাছি কোনো হোটেলে থেকে যতোটা পারো তথ্য যোগাড় করো। আর হ্যাঁ, ড্রাইভারের সাথে ভাব জমিয়ে নাও। একটু মালের ঠেকে নিয়ে গিয়ে ভালো করে খানা-পিনা করাও, দেখবে কতো খবর তার কাছে।.... ঠিক আছে, দরকার হলে জানিও... হুম, আমিও জানাবো। বাই...

ফোনটা সবেমাত্র রেখেছে, দরজায় নক্‌ হলো। চায়ের কাপ হাতে ভিতরে ঢুকলো বন্দনা। এর মধ্যেই স্নান করে জামা কাপড় বদলে নিয়েছে সে। তমাল হেসে তার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিতে নিতে বললো, সে কি, তুমি নিয়ে এলে? আমি তো ভাবলাম ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গেছো? 

বন্দনা, প্রথমে একটু লজ্জা পেলেও সামলে নিয়ে কটাক্ষ করে বললো, কিছু কিছু পরিশ্রম শরীর মনকে চাঙ্গা করে তোলে, জানো না? অনেকদিন ধরে যা খুঁজছিলে, সেটা হঠাৎ পেয়ে গেলে আনন্দে ঘুম চলে যায়, বলেই হাসতে লাগলো সে।

তমাল বললো, কাপড় জামা কি খুব ভিজে গেছিলো নাকি, যে বদলে একেবারে স্নান করে হাজির? বন্দনা বললো, নিজেই তো ভিজিয়েছো, জানো না? তার উপর শেষে যে পরিমান শ্যাম্পু ঢাললে, স্নান না করে উপায় আছে!

দেখি সব কিছু শুকিয়েছে কি না... বলেই হাত বাড়ালো তমাল বন্দনার দিকে। বন্দনা লাফ দিয়ে সরে গেলো একটু দূরে, তারপর ভুরু তুলে বললো, অ্যাঁই.. না... এখন আর দুষ্টুমি কোরোনা প্লিজ। আবার ভিজে গেলে বিপদে পড়বো। এখন মায়ের কাছে যেতে হবে, অনেক কাজ বাকী।

তমাল হাত গুটিয়ে নিয়ে হাসতে হাসতে চায়ে চুমুক দিতে লাগলো। বন্দনাকে বললো, বোসো। বন্দনা তমালের কোমরের কাছে বিছানার উপরে বসলো। মাত্র কয়েক ঘন্টায় যেন বদলে গেছে মেয়েটা। তাকে এখন পূর্ণ যুবতী মনে হচ্ছে। শান্ত, স্নিগ্ধ এবং মার্জিত। সদ্য স্নান করে আসায় শরীর থেকে একটা সুগন্ধ ভেসে আসছে তমালের নাকে। 


তমাল প্রশ্ন করলো, রাহুল কখন ফেরে? বন্দনা বললো, ঠিক নেই, বেশিরভাগ দিনে এই সময়ে ফেরে, আবার মাঝে মাঝে বেশ রাত হয়।

- তুমি রাজীবের ডায়েরিটা খুলে দেখেছো?

- হ্যাঁ, দেখেছি।

- তোমাকে দেখতে নিষেধ করেনি রাজীব?

- কই, না তো? 

- দেখে কি মনে হলো তোমার? মানে কিছু তারিখ আর সংখ্যা লেখা, এটা যে আমার কাছে জরুরী হতে পারে, এমন কেন মনে হলো?

- তুমি কম্পিউটারে কিছু খুঁজছিলে। ওই কম্পিউটারে হিসাবই আছে। আর আছে কিছু..... বাদ দাও, তো ডায়েরিতে যা লেখা আছে তা টাকার হিসাব, কোনো লেনদেন আর তার তারিখ সম্ভবত। আমার কাছে যখন রাখতে দিয়েছিলো, তখন আমার কিছু মনে হয়নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তুমি এগুলোই খুঁজছিলে। 

- হুম, ঠিক বলেছো, আমি এগুলোই খুঁজছিলাম, ধন্যবাদ। তা আর কি ছিলো কম্পিউটারে হিসাব ছাড়া?

- কিছু না, বাদ দাও

- বলো না, আর কি ছিলো?

- আর ছিলো অসংখ্য ব্লু ফিল্ম। আমাকে ঘরে ডেকে ওগুলো চালিয়ে দেখতো। খুব উত্তেজিত হয়ে পড়তাম। কিন্তু তারপরে আর সেই উত্তেজনা কমানোর ক্ষমতা ছিলোনা ওর। তবু ওগুলো দেখা চাই ই চাই তার প্রতিবার। 

- ও আচ্ছা, বুঝলাম। তোমাকে একটা প্রশ্ন সরাসরি করতে পারি বন্দনা?

- হ্যাঁ, বলো না?

- রাজীবকে কি তুমিই ছুরি মেরেছিলে এই রাগে?

প্রশ্নটা শুনে একটু গম্ভীর হয়ে গেলো বন্দনা। তারপর সোজা তমালের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, না তমালদা, আমি ছুরি মারিনি। তোমারও কি মনে হয় আমি এ কাজ করতে পারি?

- না, আমার মনে হয় না। হলে প্রশ্নটা তোমাকে করতাম না আমি। এখানে যেটা ঘটেছে, তার সূত্রপাত অনেক আগে শুরু হয়েছে বলে আমার ধারণা। তুমি এই নাটকের একদম শেষ দৃশ্যে এসেছো। তোমার এই নাটকের গতি পরিবর্তনের সুযোগ কম। 

- ধন্যবাদ তমাল দা। অন্তত কেউ তো একজন আমাকে মানুষ মনে করে বিশ্বাস করলো!

- এতোটা নিশ্চিন্ত হয়োনা, তোমাকে নিরপরাধ ঘোষণা করিনি কিন্তু। তবে তুমিই সবচেয়ে নীচুতে আছো সন্দেহের তালিকায়। 

- সেটাই যথেষ্ট। রাজীবদার সাথে আমার মনের সম্পর্ক তৈরি হবার সুযোগই হয়নি। তোমাকে বলতে বাঁধা নেই, আমি অদিতিদির সাথে তার ঘনিষ্ঠতা দেখে ঈর্ষা বোধ করতাম। শরীরের তাড়নায় তার সাথে জড়িয়ে পড়ি। সে আমাকে যে কোনোদিন ধোঁকা দিতে পারে এটা আমি জানতাম, তার চরিত্রই এরকম। তাই আগে থেকেই তৈরি ছিলাম। তার সব মেয়েদের প্রতি লোভ দেখে সেইজন্য নতুন করে রাগ হয়নি যে তাকে খুন করার চেষ্টা করবো।

- আমিও তাই ভেবেছি। কিন্তু ডায়েরিটা রাজীব তোমাকেই রাখতে দিলো কেন? অন্য কারো কাছে রাখতে পারতো, কিংবা নিজে নিয়ে যেতে পারতো। সেটা না করে তোমার কাছেই রাখলো কেন?

- কারণ নিজেকে আর আমাকে সে একই গোত্রের মনে করে। মানে দুজনই এই বাড়ির কেউ না, বাইরের লোক। যে গোপন খবর সে যোগাড় করছে, তা এই বাড়ির ব্যাপারেই হবে নিশ্চিত। তাহলে সে এই বাড়ির কাউকে বিশ্বাস করবে কিভাবে? আর তারিখ দেখে মনে হয়, সে প্রতি মাসেই দু একবার খবর পায়, আর ডায়েরিতে লেখে। সেই কারণে ডায়েরিটা কাছাকাছিই রাখতে চায় সে।

তমাল বন্দনার বিশ্লেষণ শুনে মুগ্ধ বিস্ময়ে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলো। মানুষের বুদ্ধি এবং তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ ক্ষমতা একটা জন্মগত গুন। শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান বা পরিবেশ সেই ক্ষমতা নষ্ট করতে পারেনা, বন্দনা তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। 

- তোমাকে যতো দেখছি, অবাক হয়ে যাচ্ছি। তোমাকে একটা প্রস্তাব দিতে পারি আমি। তুমি আশাকরি বুঝতে পারছো এই বাড়িতে আমি কেন এসেছি? এখানে একটা গভীর ষড়যন্ত্র এবং সেটা ধামাচাপা দেবার খেলা চলছে। আমাকে সেটা সমাধান করতে হবে। আমার একজন সহকারী চাই, কারণ আমার যে আসল সহকারী সে এখানে নেই। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে বন্দনা?

- অবশ্যই করবো তমালদা। নিজেকে তো ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে প্রস্তাব শুনে। কি করতে হবে আমাকে?


- ভালো করে ভেবে উত্তর দাও বন্দনা। কি ষড়যন্ত্র চলছে আমি এখনো পরিস্কার করে বুঝতে পারিনি। কিন্তু এমনও হতে পারে রহস্য উন্মোচনের পরে তোমার অস্তিত্বের সংকট দেখা দিতে পারে। তখন কি করবে?

- তা যদি দেয়, সে তো আমি সাহায্য না করলেও দেবে তমাল দা, তাই না? আমি সাহায্য না করলেও তো সত্যিটা বদলে যাবে না? তাহলে সাহায্য করতে অসুবিধা কোথায়? 

- সাবাস! তোমাকেই আমার দরকার বন্দনা। কি করতে হবে আমি সময় মতো বলে দেবো তোমাকে। বেশি কিছু হয়তো দরকার হবে না, তবু এই বাড়ির একজনকে আমার হয়তো দরকার হবে মাঝে মাঝে। সেই কাজে তুমি এখন থেকে আমার সহকারী গুপ্তচর। 

- এই কাজের জন্য আমি পারিশ্রমিক কি পাবো?

- কি চাও তুমি?

- আজ দুপুরে যা দিয়েছো, তা আর কয়েকবার পেলেই আর কিছু চাই না...

বলেই মুখ টিপে হাসলো বন্দনা। তমাল ও হাসতে হাসতে হাত বাড়িয়ে তার বুকে হাত দিয়ে বললো, বেশ, এই তোমার মাই টিপে শপথ করছি, যা চাও, তাই পাবে।

বন্দনা, তড়াক্‌ করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, অসভ্য! এখন আবার শুরু করলে  সামলাতে পারবো না। আমি তো অগ্রীম চাইনি, সময় মতো দিও। এখন যাই, মায়ের ওষুধের সময় হয়ে গেছে।

তমাল বললো, বেশ, যাও। শুধু রাহুল ফিরলে আমাকে একটু জানিও।

আরও ঘন্টা খানেক পরে বন্দনা এসে জানিয়ে গেলো রাহুল ফিরেছে। তাড়াহুড়ো করলো না তমাল। রাহুলকে ফ্রেশ হতে যথেষ্ট সময় দিলো। তারপর ধীরে সুস্থে নেমে এসে নক্‌ করলো রাহুলের দরজায়।

দরজা খুলেই ভুরু কুঁচকে তাকালো রাহুল। সেই বিরক্তি মাখানো গলায় জিজ্ঞাসা করলো, কি চাই? তমাল নিজেকে শান্ত রাখলো। একটু হেসে বললো, যদি ঘরের ভিতরে আসতে দেন, তাহলে জানাতে পারি কি চাই। রাহুল অনিচ্ছা সত্ত্বেও দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে তমালকে জায়গা করে দিলো ভিতরে আসার। 

ভিতরে ঢুকে তমাল দেখলো সুন্দর করে গোছানো বাহুল্যবর্জিত ছিমছাম ঘরটা। সে এগিয়ে গিয়ে সোফায় বসলো। রাহুল কিন্তু গম্ভীর মুখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। তমালের সাথে জমিয়ে আড্ডা মারার ইচ্ছা যে তার মোটেও নেই সেটা তার মুখের অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট ফুটে রয়েছে।

তমাল ঠিক উলটো আচরণ করলো। শরীরটা আরও খানিকটা এলিয়ে দিয়ে বোঝালো, তার জলদি এঘর থেকে যাবার ইচ্ছা নেই। তারপর বললো, আচ্ছা রাহুল বাবু, আমাকে আপনার এতো অপছন্দ কেন?

রাহুল ঝাঁঝিয়ে উঠে বললো, পছন্দ করার কয়েকটা কারণ বলুন শুনি?

-ধরুন আপনার বিরুদ্ধে যে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে, সেটা থেকে মুক্তি দিতে পারি আমি।

- মুক্তি দিতে পারেন, নাকি সেটাকে পাকা পোক্ত করতে পারেন, যাতে যাবৎ জীবনের বদলে মৃত্যু দন্ড হতে পারে?

হেসে ফেললো তমাল। বললো খুনের চেষ্টায় মৃত্যু দন্ড হয়না রাহুল বাবু, বিশেষ করে যদি প্রত্যক্ষদর্শী কেউ না থাকে। সারকমস্টেনশিয়াল এভিডেন্সের ভিত্তিতে মৃত্যু দন্ড দেওয়া কঠিন। আর আমি যখন জানি যে কাজটা আপনি করেননি, তাহলে অভিযোগ পোক্ত করার প্রশ্নই ওঠেনা।
Tiger
[+] 4 users Like kingsuk-tomal's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অন্তরের বন্ধন- তমালের গোয়েন্দা গল্প - by kingsuk-tomal - 06-02-2025, 12:30 PM



Users browsing this thread: Sbpb25, 1 Guest(s)