05-02-2025, 11:12 PM
ধরফর করে ঘুম থেকে উঠলো অনন্যা,। চোখের সামনে গত রাতের থানার দুঃসহ সৃতি গুলো ভেসে উঠছে । দম বন্ধ হয়ে আসছে , অনেক চিন্তা আকিবুকি দিচ্ছে মনে। পাপা আসলে কিভাবে মুখ দেখাবে? ফুপ্পি , নিজের কাজিন দের সামনে কিভাবে দাঁড়াবে ? কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে , কিন্তু কি লাভ , কাঁদতে কাঁদতেই তো ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। দুনিয়াটা সংকীর্ণ লাগছে, সব মানুষ্ কে খুব পর মনে হচ্ছে , চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে আমি কোন দোষ করি নি। আসলেই কি , আমি দোষ করি নি ? সুমনের সাথে যে প্রতারনা করেছি সে হিসেবে তো আমার শাস্তি কমই হয়েছে ?
নিলা যখন বাসা থেকে সকালে বের হয়েছিলো তখনও সুমন ঘুম থেকে উঠে নি। বাসায় ফিরে নিলা দেখলো সুমন চলে গিয়েছে। ছেলেটার জন্য এখনও খারাপ লাগছে নিলার। রাতে আর সরি বলা হয়ে উঠে নি। নিলার আপু নিলাকে দেখে বললো, নিলা,ঐ রুম টা গুছিয়ে ফেলতো , আমি বাবুকে খাওয়াচ্ছি…………
নিলা বিছানা গুছানোর সময় বালিশের পাশে একটি হাত ঘড়ি দেখতে পেলো। ঘড়ি টা হাতে নিয়ে গিয়ে আপুকে বললো , আপু এটা কি ভাইয়ার ঘড়ি ?
না তো , সুমনের হয়তো, ফেলে রেখে গিয়েছে……….
ওমা, এখন এটা ফেরত দিব কিভাবে ?
দিতেই যদি হয় তাহলে খুঁজে বের কর…….
এই ঢাকা শহরে আমি উনাকে কোথায় খুঁজে পাবো ?
হয়েছে , আর খুঁজতে হবে না, খেয়ে মেডিকেলে যা…………
বাসায় এসে দুইদিন বিশ্রাম নিলো সুমন। পরের দিনই কাজে বের হতে চেয়েছিল কিন্তু শরীর সায় দেয় নি। টিউশনি গুলোও করতে পারে নি । দিনের টাকা কেটে রাখবে তারা। এখন সুমনের কাছে প্রতি টা টাকা খুব মুল্যবান। তাই আজ শরীর টা ক্লান্ত থাকার পরেও সাইকেল নিয়ে ফুড ডেলিভারিতে বের হয়ে গেল সুমন। দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে একটা সস্তা হোটেল খুঁজতে লাগলো সুমন। হটাৎ পিছন থেকে একটা মেয়ে বললো , এক্স কিউজ মি , সুমন পিছনে তাকিয়ে দেখলো * পরা এক মেয়ে। সাদা গাউন দেখে বুঝলো মেডিকেলের ছাত্রী। কিন্তু তাকে কেন ডাকবে এই মেয়ে?
চিনতে পেরেছেন ?
জ্বী না, সরি আপনার মুখ ঢাকা তো তাই চিনলেও এখন বুঝতে পারছি না আসলে?
আমি নিলা, ঐদিন আপনি যেই বাসায় অসুস্থ হলেন আমি ঐ বাসার,…………
ওহ , হ্যাঁ । ধন্যবাদ , সেদিন আপনাদের অনেক কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলাম…………
সুমনের কথা শুনে খারাপ লাগে নিলার। সেদিন তার জন্যই সুমন অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। অথচ সুমন এখন বলছে সেই নাকি তাদের কে কষ্ট দিয়েছে। নিলা ব্যাগ থেকে ঘড়ি বের করে বললো , এটা মনে হয় আপনার। বাসায় ফেলে এসেছিলেন…………
সুমন ধন্যবাদ বলে ঘড়িটা নিয়ে বললো, আচ্ছা এখন আসি………
সুমন চলে যাচ্ছিলো তখনই নিলার মনে হলো আজও সরি বলা হয় নি , তাই পিছন পিছন দৌড়ে গিয়ে বললো , এই যে শুনছেন, সুমন পিছন ফিরে তাকালো। নিলা বললো, বলছি এখন তো দুপুর। চলুন না এক জায়গায় বসে লাঞ্চ করি…………
সুমনের এমনিতেই মেয়েটার উপরে রাগ ছিলো, শুধু নিলা না , সমস্ত নারী জাতীর উপরেই এখন তার রাগ। তাই নিলার খাওয়ার অফার শুনে রেগে গেল সুমন। কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো, আপনাদের বড়লোকদের সমস্যা কি জানেন ? আপনারা সবাইকে করুনা করতে চান, করুনা করে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে চান। এখন আমাকে একবার খাইয়ে সব কিছু থেকে দায়মুক্তি নিয়ে নিতে চাচ্ছেন।
সুমনের কথা গুলো মাথা নিচু করে শুনলো নিলা। নিলার উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে যেতে লাগলো সুমন। নিলা আবার পেছন পেছন গিয়ে বললো, এই যে শুনুন, আমি সেদিন পড়াশোনা করছিলাম । পরিক্ষা ছিলো সকালে একটা । তাই আমি নিচে নামতে পারি নি । আমি আসলে বুঝতে পারি নি, আমি মাফ চাচ্ছি আপনার কাছে। আসলে জানি আমি যে মাফ চাইলেও আমার ভুল বা অপরাধ কোনোটাই মুছে যাবে না। তবুও আপনার সাথে যে অন্যায় করেছি সে জন্য আমার উপর আপনার ক্ষোভ আছে। যদি আপনি কখোনো মাফ করতে পারেন সে জন্য মাফ চেয়ে রাখলাম । আর সত্যি বলতে আমি আপনার উপর করুনা করবো, এই ক্ষমতা আমার নেই। আর আমি বড়লোক না…………
আপাদমস্তক *য় ঢাকা একটা মেয়ের এমন আকুতি শুনে সুমনের মনে হলো মেয়েটার সাথে এভাবে কথা বলা উচিত হয় নি তার। সুমন বললো , আরে তেমন কিছু না , আপনার উপর আমার কোন ক্ষোভ নেই। এমনি একটু মেজাজ গরম তো , তাই । সরি , চলুন লাঞ্চ করি।
খাওয়ার সময় মুখের * খুললো নিলা । সেদিন ঘুম ভাঙার পর নিলাকে এক ঝলক দেখার পর সুমনের কাছে কিছু মনে হয় নি । কিন্তু আজ ভালো করে দেখে বুঝলো , নিলার চেহারায় অন্যরকম একটা কিছু আছে। মেয়েটার মুখে কোন মেক আপ তো নেইই এমন কি ঠোঁটেও লিপস্টিক এর ছোঁয়া নেই। মেয়েটার মধ্যে শহুরে কোন লেশ মাত্র নেই। সবকিছু মিলে ওর আপুর সাথে কোন মিল নেই। ভালো লাগলেও চোখ সরিয়ে নিল সুমন । মেয়েদের প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই । চোখ সরিয়ে এক লোকমা মুখে নিতেই নিলার ফোন বেজে উঠলো। সিম্পফোনি বাটন ফোনের অপরিচির হয়ে যাওয়া পরিচিত রিংটোন কানে আসলো সুমনের । নিলা একটা ছোট ফোন বের করলো ব্যাগ থেকে । কল রিসিভ করে কানে নিয়ে আবার যখন কথা বলার সময় মুখের সামনে ফোন আনতে লাগলো নিলা। সুমন বুঝলো ফোনের কন্ডিশন ভালো নেই । নিলা ফোন কেটে মুচকি হেসে বললো , কি, বড়লোক মানুষের হাতে ভাঙা মোবাইল দেখে অবাক হলেন ?
না , এমন কিছু না.........
আসলে আপনি যেমন ভাবছেন বিষয় টা এমন না। আমি আপুর আপন বোন না । আবার কাজিন ও না । গ্রামের ছোট বোন বলতে পারেন। এমন কি মেডিকেলে চান্স পাওয়ার আগে আমাকে চিনতোও না আপু। আমার পরিবারের আসলে সামর্থ নেই আমাকে ঢাকায় রেখে মেডিকেলে পড়াবে। হটাৎ একদিন বাড়িতে আপু এসে বললো আমার দায়িত্ব নাকি উনি নিবেন। তাই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছি । আসলে ঐ দিন কেন যে আপনাকে সিড়ি দিয়ে উঠতে বললাম...............
সেটা নিয়ে আর কথা না বলাই ভালো। শরীর এখনও দুর্বল, আপনি আমাকে একটা ফ্রি পেসক্রিপশন করে দেন। শোধ বোধ হয়ে যাবে...............
ফিক করে হেসে দিলো নিলা । সুমন তাকিয়ে থাকলো নিলার দিকে, কিন্তু পরক্ষনেই চোখ সরিয়ে নিল সুমন।
আচ্ছা , লিখে দিচ্ছি । এই যে নেন...............
এগুলো খেলে আবার অসুস্থ হয়ে যাব না তো ? না এখনো পাশ করে বের হন নি তাই বললাম......... অনেক দিন পর কারো সাথে স্বাভাকিক ভাবে কথা বলছে সুমন।
ওহ , তাহলে এখন এগুলো খেয়ে নিন। যদি অসুস্থ হয়ে যান তাহলে পাশ করে বের হওয়ার পর আরেকবার ফ্রি পেসক্রিপ করে দিব নে............
আচ্ছা , এখন উঠি। দেরি হয়ে যাচ্ছে............
আচ্ছা, বলে বিল দিতে গেল নিলা। সুমন বললো বিল দিয়েন না। আমার ডেলিভারি এপে ডিসকাউন্ট কুপন আছে।
আচ্ছা, তাহলে আমি আপনার বিকাশে টাকা দিয়ে দিচ্ছি।ওখান থেকে আপনি বিল দিন......... আর খাওয়ার অফার তো আমিই করেছি সুতরাং বিল আমিই দিব.........
দিন, আমার কাছে এমনিতেও টাকা নেই......
বিকাশ নাম্বার টা দিন .........
০১৬………………
রাতে পড়তে বসে কিছুতেই মন বসছে না নিলার। তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ টা তার কয়েক দিন যাবৎ ভালো লাগছে না। এই কয় দিন না হয় অনুশোচনায় পড়াশোনায় মন বসে নি । কিন্তু আজ তো সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে , তবুও ছেলেটার কথা মনে পড়ছে কেন ? নিলা ছোট খুকি না। সে বুঝতেছে ছেলেটাকে তার ভালো লেগে গিয়েছে। এমন কেন হচ্ছে ? তার আপু তো তাকে টাকা পয়সা খরচ করে ঢাকায় প্রেম করতে আনেন নি। আপু শুনলে অবশ্যই রাগ করবে, পরিক্ষা চলছে , আর সে পড়ালেখা না করে কোন না কোন ছেলের কথা ভাবছে ! ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো, এত রাতে কে ফোন করলো !
হ্যালো কে বলছেন ?
ওষুধের নাম লিখে দিলেন কিন্তু কখন কোন টা খেতে হবে সেটা তো লিখে দিলেন না ……………
বই টা বন্ধ করে দিয়ে ব্যালকনিতে আসলো নিলা। একটা খেলেই হলো , এগুলো খালি পেটেও খাওয়া যায়…………
আচ্ছা, তাহলে রাখি …………
শুনুন , এখনো শরীর খারাপ লাগছে ? আর নাম্বার পেলেন কোথায় আমার………
কোনটার উত্তর দিব আগে ?
আচ্ছা কেমন আছেন সেটাই আগে বলুন………….
ভালো, কি করছিলেন ?
পড়ছিলাম……… পরিক্ষা চলছে ………
ওহ তাহলে পড়ুন। রাখি………
বই খোলার আগে কিছুক্ষন কলম কামড়ালো নিলা……
নিলা যখন বাসা থেকে সকালে বের হয়েছিলো তখনও সুমন ঘুম থেকে উঠে নি। বাসায় ফিরে নিলা দেখলো সুমন চলে গিয়েছে। ছেলেটার জন্য এখনও খারাপ লাগছে নিলার। রাতে আর সরি বলা হয়ে উঠে নি। নিলার আপু নিলাকে দেখে বললো, নিলা,ঐ রুম টা গুছিয়ে ফেলতো , আমি বাবুকে খাওয়াচ্ছি…………
নিলা বিছানা গুছানোর সময় বালিশের পাশে একটি হাত ঘড়ি দেখতে পেলো। ঘড়ি টা হাতে নিয়ে গিয়ে আপুকে বললো , আপু এটা কি ভাইয়ার ঘড়ি ?
না তো , সুমনের হয়তো, ফেলে রেখে গিয়েছে……….
ওমা, এখন এটা ফেরত দিব কিভাবে ?
দিতেই যদি হয় তাহলে খুঁজে বের কর…….
এই ঢাকা শহরে আমি উনাকে কোথায় খুঁজে পাবো ?
হয়েছে , আর খুঁজতে হবে না, খেয়ে মেডিকেলে যা…………
বাসায় এসে দুইদিন বিশ্রাম নিলো সুমন। পরের দিনই কাজে বের হতে চেয়েছিল কিন্তু শরীর সায় দেয় নি। টিউশনি গুলোও করতে পারে নি । দিনের টাকা কেটে রাখবে তারা। এখন সুমনের কাছে প্রতি টা টাকা খুব মুল্যবান। তাই আজ শরীর টা ক্লান্ত থাকার পরেও সাইকেল নিয়ে ফুড ডেলিভারিতে বের হয়ে গেল সুমন। দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে একটা সস্তা হোটেল খুঁজতে লাগলো সুমন। হটাৎ পিছন থেকে একটা মেয়ে বললো , এক্স কিউজ মি , সুমন পিছনে তাকিয়ে দেখলো * পরা এক মেয়ে। সাদা গাউন দেখে বুঝলো মেডিকেলের ছাত্রী। কিন্তু তাকে কেন ডাকবে এই মেয়ে?
চিনতে পেরেছেন ?
জ্বী না, সরি আপনার মুখ ঢাকা তো তাই চিনলেও এখন বুঝতে পারছি না আসলে?
আমি নিলা, ঐদিন আপনি যেই বাসায় অসুস্থ হলেন আমি ঐ বাসার,…………
ওহ , হ্যাঁ । ধন্যবাদ , সেদিন আপনাদের অনেক কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলাম…………
সুমনের কথা শুনে খারাপ লাগে নিলার। সেদিন তার জন্যই সুমন অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। অথচ সুমন এখন বলছে সেই নাকি তাদের কে কষ্ট দিয়েছে। নিলা ব্যাগ থেকে ঘড়ি বের করে বললো , এটা মনে হয় আপনার। বাসায় ফেলে এসেছিলেন…………
সুমন ধন্যবাদ বলে ঘড়িটা নিয়ে বললো, আচ্ছা এখন আসি………
সুমন চলে যাচ্ছিলো তখনই নিলার মনে হলো আজও সরি বলা হয় নি , তাই পিছন পিছন দৌড়ে গিয়ে বললো , এই যে শুনছেন, সুমন পিছন ফিরে তাকালো। নিলা বললো, বলছি এখন তো দুপুর। চলুন না এক জায়গায় বসে লাঞ্চ করি…………
সুমনের এমনিতেই মেয়েটার উপরে রাগ ছিলো, শুধু নিলা না , সমস্ত নারী জাতীর উপরেই এখন তার রাগ। তাই নিলার খাওয়ার অফার শুনে রেগে গেল সুমন। কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো, আপনাদের বড়লোকদের সমস্যা কি জানেন ? আপনারা সবাইকে করুনা করতে চান, করুনা করে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে চান। এখন আমাকে একবার খাইয়ে সব কিছু থেকে দায়মুক্তি নিয়ে নিতে চাচ্ছেন।
সুমনের কথা গুলো মাথা নিচু করে শুনলো নিলা। নিলার উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে যেতে লাগলো সুমন। নিলা আবার পেছন পেছন গিয়ে বললো, এই যে শুনুন, আমি সেদিন পড়াশোনা করছিলাম । পরিক্ষা ছিলো সকালে একটা । তাই আমি নিচে নামতে পারি নি । আমি আসলে বুঝতে পারি নি, আমি মাফ চাচ্ছি আপনার কাছে। আসলে জানি আমি যে মাফ চাইলেও আমার ভুল বা অপরাধ কোনোটাই মুছে যাবে না। তবুও আপনার সাথে যে অন্যায় করেছি সে জন্য আমার উপর আপনার ক্ষোভ আছে। যদি আপনি কখোনো মাফ করতে পারেন সে জন্য মাফ চেয়ে রাখলাম । আর সত্যি বলতে আমি আপনার উপর করুনা করবো, এই ক্ষমতা আমার নেই। আর আমি বড়লোক না…………
আপাদমস্তক *য় ঢাকা একটা মেয়ের এমন আকুতি শুনে সুমনের মনে হলো মেয়েটার সাথে এভাবে কথা বলা উচিত হয় নি তার। সুমন বললো , আরে তেমন কিছু না , আপনার উপর আমার কোন ক্ষোভ নেই। এমনি একটু মেজাজ গরম তো , তাই । সরি , চলুন লাঞ্চ করি।
খাওয়ার সময় মুখের * খুললো নিলা । সেদিন ঘুম ভাঙার পর নিলাকে এক ঝলক দেখার পর সুমনের কাছে কিছু মনে হয় নি । কিন্তু আজ ভালো করে দেখে বুঝলো , নিলার চেহারায় অন্যরকম একটা কিছু আছে। মেয়েটার মুখে কোন মেক আপ তো নেইই এমন কি ঠোঁটেও লিপস্টিক এর ছোঁয়া নেই। মেয়েটার মধ্যে শহুরে কোন লেশ মাত্র নেই। সবকিছু মিলে ওর আপুর সাথে কোন মিল নেই। ভালো লাগলেও চোখ সরিয়ে নিল সুমন । মেয়েদের প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই । চোখ সরিয়ে এক লোকমা মুখে নিতেই নিলার ফোন বেজে উঠলো। সিম্পফোনি বাটন ফোনের অপরিচির হয়ে যাওয়া পরিচিত রিংটোন কানে আসলো সুমনের । নিলা একটা ছোট ফোন বের করলো ব্যাগ থেকে । কল রিসিভ করে কানে নিয়ে আবার যখন কথা বলার সময় মুখের সামনে ফোন আনতে লাগলো নিলা। সুমন বুঝলো ফোনের কন্ডিশন ভালো নেই । নিলা ফোন কেটে মুচকি হেসে বললো , কি, বড়লোক মানুষের হাতে ভাঙা মোবাইল দেখে অবাক হলেন ?
না , এমন কিছু না.........
আসলে আপনি যেমন ভাবছেন বিষয় টা এমন না। আমি আপুর আপন বোন না । আবার কাজিন ও না । গ্রামের ছোট বোন বলতে পারেন। এমন কি মেডিকেলে চান্স পাওয়ার আগে আমাকে চিনতোও না আপু। আমার পরিবারের আসলে সামর্থ নেই আমাকে ঢাকায় রেখে মেডিকেলে পড়াবে। হটাৎ একদিন বাড়িতে আপু এসে বললো আমার দায়িত্ব নাকি উনি নিবেন। তাই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছি । আসলে ঐ দিন কেন যে আপনাকে সিড়ি দিয়ে উঠতে বললাম...............
সেটা নিয়ে আর কথা না বলাই ভালো। শরীর এখনও দুর্বল, আপনি আমাকে একটা ফ্রি পেসক্রিপশন করে দেন। শোধ বোধ হয়ে যাবে...............
ফিক করে হেসে দিলো নিলা । সুমন তাকিয়ে থাকলো নিলার দিকে, কিন্তু পরক্ষনেই চোখ সরিয়ে নিল সুমন।
আচ্ছা , লিখে দিচ্ছি । এই যে নেন...............
এগুলো খেলে আবার অসুস্থ হয়ে যাব না তো ? না এখনো পাশ করে বের হন নি তাই বললাম......... অনেক দিন পর কারো সাথে স্বাভাকিক ভাবে কথা বলছে সুমন।
ওহ , তাহলে এখন এগুলো খেয়ে নিন। যদি অসুস্থ হয়ে যান তাহলে পাশ করে বের হওয়ার পর আরেকবার ফ্রি পেসক্রিপ করে দিব নে............
আচ্ছা , এখন উঠি। দেরি হয়ে যাচ্ছে............
আচ্ছা, বলে বিল দিতে গেল নিলা। সুমন বললো বিল দিয়েন না। আমার ডেলিভারি এপে ডিসকাউন্ট কুপন আছে।
আচ্ছা, তাহলে আমি আপনার বিকাশে টাকা দিয়ে দিচ্ছি।ওখান থেকে আপনি বিল দিন......... আর খাওয়ার অফার তো আমিই করেছি সুতরাং বিল আমিই দিব.........
দিন, আমার কাছে এমনিতেও টাকা নেই......
বিকাশ নাম্বার টা দিন .........
০১৬………………
রাতে পড়তে বসে কিছুতেই মন বসছে না নিলার। তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ টা তার কয়েক দিন যাবৎ ভালো লাগছে না। এই কয় দিন না হয় অনুশোচনায় পড়াশোনায় মন বসে নি । কিন্তু আজ তো সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে , তবুও ছেলেটার কথা মনে পড়ছে কেন ? নিলা ছোট খুকি না। সে বুঝতেছে ছেলেটাকে তার ভালো লেগে গিয়েছে। এমন কেন হচ্ছে ? তার আপু তো তাকে টাকা পয়সা খরচ করে ঢাকায় প্রেম করতে আনেন নি। আপু শুনলে অবশ্যই রাগ করবে, পরিক্ষা চলছে , আর সে পড়ালেখা না করে কোন না কোন ছেলের কথা ভাবছে ! ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো, এত রাতে কে ফোন করলো !
হ্যালো কে বলছেন ?
ওষুধের নাম লিখে দিলেন কিন্তু কখন কোন টা খেতে হবে সেটা তো লিখে দিলেন না ……………
বই টা বন্ধ করে দিয়ে ব্যালকনিতে আসলো নিলা। একটা খেলেই হলো , এগুলো খালি পেটেও খাওয়া যায়…………
আচ্ছা, তাহলে রাখি …………
শুনুন , এখনো শরীর খারাপ লাগছে ? আর নাম্বার পেলেন কোথায় আমার………
কোনটার উত্তর দিব আগে ?
আচ্ছা কেমন আছেন সেটাই আগে বলুন………….
ভালো, কি করছিলেন ?
পড়ছিলাম……… পরিক্ষা চলছে ………
ওহ তাহলে পড়ুন। রাখি………
বই খোলার আগে কিছুক্ষন কলম কামড়ালো নিলা……